আত্মহত্যার জন্য তাগাদা দিয়েছে সংসদীয় কমিটি!

আত্মহত্যার জন্য তাগাদা দিয়েছে সংসদীয় কমিটি! চমকানোর কিছু নেই; ঘটনা সত্যি। রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ এগেয়ে নেয়ার জন্য  তারা এ তাগাদা দেয় বরে খবর বেরিয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনে দশম জাতীয় সংসদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র ১৬তম বৈঠকে এই তাগিদ দেয়া হয়। এতে কমিটির সভাপতি মো: তাজুল ইসলামের সভাপতিত্ব করেন। (সূত্র: প্রিয় ডট কম)

রামপালে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে কত রকমের ক্ষতি হবে তা নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। বার বারই বলা হচ্ছে  বিদ্যুৎ আমাদের দরকার আছে তাই বলে আমরা আত্মহত্যা করতে পারি না।

সুন্দরবন আমাদের একটাই। হাজার বছর ধরে ভাটি বাঙলার সুরক্ষা করে আসছে এই সুন্দরবন। তার কোলেই কেন এ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানাতে হবে; তা নিয়ে আমরা কেন ভাবছি না।  এটাও একটা বিস্ময়ের ব্যাপার।

ভারত এ প্রকল্পের সহযোগি বলে কারো কারো বিরোধিতার দিকে সরকারের ইঙ্গিত আছে। তর্কের খাতিরে আমরা যদি এটাকে ঠিক বলেও মানি; তাহলেও কি প্রশ্ন আসে না---ভারত কি এমন একটা উদ্যোগ তার  সুন্দরবন অংশের কোথাও নেবে। নেবে না। নিশ্চিত করেই বলছি নেবে না।

ভারত কত ক্রিটিকালি সব কিছু চিন্তা করে--- একটা উদহারণ দেই--- নিজের দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমাতে  তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে সেভেন সিস্টারে  বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ আমদানি করতে চুক্তি করেছে বাংলাদেশের সাথে। কিন্তু নিজ দেশের নিরাপত্তা রক্ষীদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র না পাওয়ায় এখনো জলের দামে কেনা ব্যান্ডউইথ তারা নিতে পারছে না।

বাংলাদেশের কোনো নিরাপত্তা বাহিনী কি ব্যান্ডউইথের কারণে আমাদের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে এমন একটা কোশ্চেন করেছেন। করেননি। করলে হয়ত তাদের আমরা বেকুব বলাতাম!  ভারতরে নিরাপত্তা রক্ষিরা ঠিকই কিন্তু এটা নিয়ে গবেষণা করছে।

ভারতকে ফাইবার টেনে আমরা আগরতলায় ব্যান্ডউইথ দিয়ে আসবো--- তাও কম দামে। তা নিয়ে পর্যন্ত আলোচনা মানা। সেখানেও ভারত গড়িমসি করছে।

সেখানে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের  রক্ষাকবচ; প্রাকৃতিক দূর্যোগের কালে আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু---- সুন্দরবনকে হত্যার এ কৌশল এমনি এমনি নিয়েছে ভারত? এ প্রশ্নটা  আসতে পারে।

রামপাল ছাড়া কি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানানোর জন্য আর জায়গা নাই। খুলনার অন্য কোথাও কি নেই। পারলে  উত্তর বঙ্গে গিয়ে আরেকটা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানান?  ফারাক্কা বাঁধ আর গজল ডোবায় তিস্তার পানি আটকে রেখে তো পুরা উত্তরবঙ্গ মরুভূমি বানিয়ে ফেলেছেন। তো সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে পারে না; তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। হতে পারে না। কারণ হলো নদীর সব পানি আটকে নদী মেরে দিয়েছেন মনমহন, শন মহন আর মোডি কাকুরা। তা কাঁচামাল নেবেন কেমনে। রাস্তারও তেরটা বেজে আছে।

 তো রামপাল।

 ফারাক্কার প্রভাবে এমনিতেই সুন্দরবনের শিরা উপশিরার নদী গুলোর পানি নোনতা হয়ে আছে। বাড়তে আছে নোনতার আধিপত্য। তার ওপর এখানে ট্রলার চলবে, কাঁচামাল আসবে, ছাই উড়বে আর  সুন্দরবন ধীরে ধীরে আক্রান্ত হবে ক্যান্সারে। মরে যাবে চোখের সামনে। কিছু নরাধম সে জমি দখল করে ঘের বানাবে।

পরিবেশবাদিদের প্রতিবাদের মুখে সরকারের অধিদপ্তর ---ইনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ) প্রতিবেদন দিয়েছে। সে অনুযায়ী ১৩২০ মেগাওয়াটের এ প্রকল্পের জন্য বছরে ৪৭ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা পোড়ানো হবে।

যেখানে ১ টন কয়লা পুড়লে ২ দশমিক ৮৬ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়। সেই হিসাবে এই প্রকল্প ৮০ শতাংশ লোড ফ্যাক্টরে উৎপাদন করলেও বছরে ১ কোটি ৮ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হবে। যদিও সরকারের প্রতিবেদনে সুপার ক্রিটিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহার করায় উদ্যোক্তাদের হিসাব মতেই, ৭৯ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে বাকি কার্বন ফ্লাই অ্যাশে যোগ হবে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে।

উদ্যোক্তাদের হিসাব সঠিক বলে ধরে নেয়া  হলেও প্রশ্ন থা্কছে--- ৭৯ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড কী কম ক্ষতিকর! যত উঁচু চিমনিই ব্যবহার করা হোক না কেন বাতাসের চেয়ে ভারী এই গ্যাস তো এই দেশেই ফিরে আসবে, ফিরে আসবে সুন্দরবনের বুকে।

বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাই-অক্সাইড (বছরে ৫১ হাজার ৮৩০ টন) ও ৮৫ টন বিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (বছরে ৩১ হাজার ২৫ টন) নির্গত হবে। বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত গ্যাস সুন্দরবনের বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব বর্তমান ঘনত্বের তুলনায় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়ে গোটা সুন্দরবন ধ্বংস করবে--- তারপরেও সন্দেহ জাগে!


হুমম । আসেন আত্মহত্যা করি।

তাজিয়া মিছিলে বোমা:: মানবতাবিরোধী এ অপরাধের বিচার হতে হবে !

ভারাক্রান্ত মন---তাজিয়ায় বোমা পড়েছে। আম্লীগ ক্ষমতায় আসলে বোমার সংস্কৃতির বিস্তৃতি--- এমন অভিযো্গ পুরনাে। ১৯৯৬ সালে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে দলটি ক্ষমতার দেখা পায়--- সঙ্গী গোলাম আযম;নিজামী;মুজাহিদ।  সে সময় সিনেমা হল থেকে  শ্রেণী শত্রু খতমের ডাকে সম্মিলিত মঞ্চেও বোমা পড়ে। উদিচী, রমনা বটমূল থেকে--- পল্টন--- সবখানে মুড়ি মুড়কির মত বোম ফুটে।

১৯৯৮ সালের দিকে  রাষ্ট্রের খরচায় বের হওয়া পুস্তিকায় জানান দেয়া হয়, জঙ্গীর চাষবাষ হচ্ছে। আম্লীগ জঙ্গি খতম করতে সহায়তা চায়। ক্ষমতায় টিকে থাকার সহায়তা! এর মধ্যেও ২০০১ সালে মানুষ তাদের বিদায় জানায়!

সময় বদলাতে থাকে। ২০০৭  মঈন-ফখররা  ক্ষমতায় আসে। জঙ্গির আওয়াজটা তখন কমে আসে। বিম্পির শেষ অমলে ধরা বাংলাভাই ও শায়খ রহমানের ফাঁসি হয়।  তারপর ২০০৯ । ক্ষমতার পালাবদল। আম্লীগ ও তার সহ-মিত্ররা ক্ষমতায়।  সব ভালোই চলছিল! ৫ জানুয়ারী ২০১৪। বিপুল ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় মানুষ জঙ্গবিরোধী রায় দেয় বলে ঘোষণা দেয় সরকার বাহাদুর।

 ২০১৫। বয়স হচ্ছে আমাদেরও। আছে ৫৭ ধারা। আছে ভোট নয়; উন্নয়ন নিয়ে বিদেশীদের আগ্রহের মন্ত্র। এ সবে আমাদের কিচ্ছু যায় আসে না।

ভোট দিয়া কি করমু;  নিরাপত্তাটা জরুরী। তাই ৫ জানুয়ারি কেন আরো কিছু হলেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই। জঙ্গী নির্মূল হলেই আমরা তুষ্ট-সন্তুষ্ট!  আশায় ছিলাম জঙ্গী নির্মূল হবে। এই ট্যাবলেটটা আর মানুষের জীবন-জীবিকা-ভোট-নিরাপত্তা বিপন্ন করবে না। সে আশায় গুঁড়ে বালি!

বাংলাদেশে জঙ্গিতে ভরপুর। সে শঙ্কা উড়িয়ে দেবার মত নয়। মনমহন বাবুর বিশেষ দূত হিসাবে ২০১৩ সালের শেষে সুজাতা আপা আসলেন। এরশাদ কাকুর সাথে দেখা করে কইলেন--- সমর্থন দিন। নইলে জঙ্গিরা ক্ষমতায় আসবে।

 ভালো কথা।  সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হলে--- কাকুর স্থান সিএমএইচ। কাকুর উপদেষ্টা লন্ডনে।  আর বিনা ভোটে  প্রায় অর্ধেক লোক এমপি বন গিয়া।

তাতে আমার মত আম পাবলিকের আপত্তি নাই।   দেশ তো আমার একার না। সবার যদি সয়--- আমার সইবে না কেরে। আমি কোন...।

সে যাউক গা--- পয়লা বৈশাখ আইলো--- টিএসসিতে কামুক কু--নরাধমরা নারীর শরীর নিয়া ছিনিমিনি খেললো।  দাড়ি তত্ত্ব আবিষ্কার হলো। চূড়ান্ত বিচারে এর কোনো ফল হলো না। ছাত্রলীগের কতিপয় 'নরাধম' আটক হয়েছে!

নারীবাদীরা ক্লান্ত--- অবসরে আছেন।  আসলে তাদের তো বয়স হয়েছে। আর কত চিল্লাবে।  তাছাড়া আম্লীগ একটা প্রগতিশীল সরকার। তাদের কোনোভাবেই ঘাটানো উচিৎ হবে না।


ভালো---

 অক্টোবর মাসে শোর উঠলো পশ্চিমে--- বঙ্গদেশে আইএস।  সরকার নাকচ করলো। এতদিন আমরা জনগণ যা বলতাম, সরকবার তাই বললো--- এখানে জঙ্গি নাই। এ ভাটি বাংলায় জঙ্গির চাষ সম্ভব না। যার পর নাই খুশী হলাম-- সরকার বাহাদুর  জণগণের হৃদ স্পন্দ শুনতে পাচ্ছেন !

তবুও ইউএস'র দূত বার্ণিকাট বললো--- আইএস আছে । দমনে সহায়তা দিতে চায় তার সরকার! তাকে সাপোর্ট করলো আমাদের নিরাপত্তা রক্ষীরা। কারণ তারাও তো সমস্যায়! সরকার বাহাদুরের ঘোষনার আগেই  নিরাপত্তা রক্ষীরা  কয়েকজনকে আইএস বলে মামলা ঠুঁকে দিয়েছে।

আর আজকাল তো ধর্মীয় কেতাব জঙ্গি গ্রন্থে রূপান্তর হয়েছে---

আমাদের  কিশোর বেলায় নিষিদ্ধ বই বলতে রসময় গুপ্ত; সচিত্র কামসূত্র, সবিতা ভাবি কমিকস।  এখন নিষিদ্ধ বই বলতে ধর্মীয় বই পুস্তক।  এ সব অনেক উস্কানিমূলক। লেখকের নাম ধরেও উস্কানিমূলক ধরা হয়।  এ রকম একটা বিতিকিচ্ছিরি অবস্থার মধ্যে যাচ্ছে সময়---।

--- আসল কথাটা বলে নিই বছর ৪শ হলো এ বঙ্গ দেশের।  এখানে কোনোদিন তাজিয়া মিছিলে বোমা পড়েছে;সশস্ত্র সঙ্ঘাত হয়েছে--- আল্লাহর কমস আমি শুনিনি।  হোসেনি দালানের পাশেই আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম এক বছর কেটেছে। বহুবার গিয়েছি। কখনো মনে হয়নি এ মানুষগুলো অশান্তি চান!শিয়া মতাবলম্বীদের উপর কারো ক্ষোভ আছে! তাও মনে হয়নি।

শিয়া-সুন্নী, আহমদিয়াদের নিয়ে বকশিবাজার। এখানে সম্প্রীতি ছিল সব সময়।  এখনো আছে। কিন্তু তাজিয়া--- নবী সা: এর নাতিদের হত্যার শোক ঘিরে মাতম---  নবী প্রেমিকদের এ শোকায়োজনে হামলা--- স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।

মুসলিমদের ভেতর সংকীর্ণতার চাষবাস! কারা বলছে- তুমি সুন্নী, তুমি শিয়া, তুমি আহলে হাদিস , তুমি সালাফি, তুমি ওয়াবি--- আমি নিশ্চিত করে বলি এবং বিশ্বাস করি---  আমরা সবাই মুসলিম। মুসলমানের রক্ত অহিংস। মুসলমানরা কখনোই কারো ওপর হামলা করতে পারে না। হামলা করে না। হামলার ইতিহাস নাই।

তাহলে কেউ বলবেন-- বিন লাদেন, জাওহারি তারা কে? তারা কুরআনের বর্ণনা মানলে  মুমিন-মুসলিম নয়।  মুসলিম কখনো  হত্যা--রক্তপাত --- সহিংসতায় বিশ্বাস করে না। প্রাকটিসও করে না। যারা ইসলামের নামে ধর্মের নামে এ সব করে তাদের ইসলাম নিজের বলে কবুল করে না।

কেবল নাম মুসলিমের হলে তো মুসলিম হওয়া যায় না।

'কুরআন বিশ্বাসীদের জন্য পথ নির্দেশক'--- কুরআনেই এ কথা বলা হয়েছে। যারা বিশ্বাসী নয় তাদের জন্য এ নিয়ে আলাপ নেই। তাই মুসলিম হওয়ার প্রথম কথা হলো  আল্লাহ, তার নবী সা: , ফেরেশতা; শেষ বিচার ও জান্নাত এবং জাহান্নামে বিশ্বাস স্থাপন  করতে হবে।

শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের এ শোকের মাতম --- তাজিয়ায় হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটা কোনোভাবেই মানুষের কাজ  করতে পারে না।

 আমরা পাকিস্তান নই, আফগান নই, ইরাক নই, সিরিয়া নই--- কিন্তু আমরা সে পথে হাঁটছি। আমাদের এখন এ সব দেশের সাথেই তুলনা করা হচ্ছে।

এ ভাটি বাংলায় বেড়ে ওঠার মানুষের মন  মনন এবং মেধা কুপথে চচির্চত নয়। খুব অল্প কিছু ব্যতিক্রম থাকতে পারে। ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ নয়। তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলায় অপরাধীদের ধরে শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরী। এটা মানবতাবিরোধী ঘৃণ্য অপরাধ। এ অপরাধের বিচার হতে হবে।