একটি ভাত ভোজের কল্পিত সংলাপ

: চা লন ; ভাতের বন্দোবস্ত আছে ।
: না, মানে আমি রাতে ভাত খাই না ।

: তা না খান ; বাইরে গিয়া কইবেন ভাত খাইতে আইছিলাম।
: আইচ্ছা ।

: সংবিধান লইয়া আপনি একটা আওয়াজ দিছেন । কামডা কী ঠিক অইলো !
: যা শইত্য কইছি; ভুল কিছু তো কই নাই ।

: না , সব ঠিক আছে। কিন্তু সংবিধান তো কালো বিড়ালের কাছে ইজারা আছে । ইজারা থাকা কিছু লইয়া ইজারাদারর অনুমতি ছাড়া কথা কওন কী ঠিক !
: হুমমম । সবই তো ইজারা । তাই বইলা আমারে 'কম কথা' কইবার নির্দেশ দিলো ! এইডা কি ঠিক অইলো ।
: না , মানে । কথা বলা তো আপনার কাজ না । বাণী দেওয়াও আপনার কাজ না ।

: আমার তাইলে কাজ কি ?
: কাজ হৈলো কালো বিড়ালজাতীয় লোকজন যা বলবে; শুনবেন ।।

: ও আচ্ছা । ঠিক আছে ।
কিন্তু একটা কথা ; আমাদের বিভাগটা তো স্বাধীন ।
: আহা স্বাধীন বলে কিছু নাই । সবই অধীন । ভাত নেন।

: না, রুটি খাবো ।

: আয়োজন আছে । ওই বাবুজীকে রুটি দে ।

।।দায়মুক্তি ।।~~~এটি কল্পিত সংলাপ । কারো সাথে মিললে কাকতাল মাত্র~~~ ।।

আন্ডার কন্সট্রাকশন :: নারীর চোখে নারীর কামনা!

রুবাইয়াত এর আগেও একটি সিনামা বানিয়েছেন--- 'মেহেরজান'। তর্কের কারণে সেটি বাতিল করেছিল-সরকার। কারণ ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত সিনামায়  বাঙালির নারী পাকিস্তানি প্রেমিক। তবে ওই সিনামায় সমকামিতার গল্পটা নতুন করে দর্শকের চোখের সামনে বুলিয়ে নিয়েছিল রুবাইয়াত।

আন্ডার কন্সট্রাকশন সিনামাটিকে এক্সপেরিমন্টোল ধাঁছের সিনামা মনে হয়েছে।  এখানে নারীর ভিন্ন রুপ এবং কামনা -বাসনা উঠে এসেছে নারীর চোখে। এটাই একমাত্র সাফল্য বলা যেতে পারে। তবে কিছু বিষয় এখানে একটু ভিন্ন!

বুড়ো মহিলার রেডি হওয়া মানে ব্রা'য়ের ফিতা ঠিক করা নয়! সিনামাটিতে রয়ার মা'কে আমরা দেখি জামাই আসছে- তাই রেডি হতে গিয়ে  ব্রা'র ফিতা ঠিক করছেন!  কেউ হয়্ত বলবেন, তাহলে কি যৌবনবতীর ব্রা'র ফিতা ঠিক করাটা দরকার ছিল? তাও মনে করি না। প্রাসঙ্গিতক নাহলে যে কারো ব্রা'র ফিতা ঠিক করার দৃশ্যায়ন অশোভনীয় ।

সিনামাটিতে পেন্টির অবস্থান তুলে ধরতেও দেখি! এটিও রুবাইয়াত যে ধরণের সিনামা নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হতে চান--- তার সাথে যায় না! ---যদিও সিনামায় যৌনতা একটি কম অনুষঙ্গ। সেটি বিবেচনা করলে ইমতিয়াজের সাথে একাকীত্ব শেয়ার করার চিত্রায়ন দুর্দান্ত হয়েছে!

যেখানে ইমতিয়াজ আর রয়ার আলাপের ফাঁকে হাত মুঠােয় পুরে নেয়ার দৃশ্যায়ন--- অনন্য।  এমনকি ঠোঁটের ওপর হাত বুলিয়ে যাওয়াটাও! রয়ার কামাবেগ; এগিয়ে আসা--- ইমতয়িাজের চাহনি --- চিত্রায়ন অপূর্ব!  

সিনামাটির স্পিরিট যদি হয় কিছু এলেবেলে ভাবনা --- তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু  চলচ্চিত্রের  একটা  বার্তা থাকার কথা--- সে বার্তা বিভ্রান্তির! এখানে কি বলতে চাওয়া হয়েছে সেটিও  ক্লিয়ার না!

নায়িকারা বেশ্যা?
বাচ্চা ফয়দা আর পালন করা নারীর একমাত্র কাজ না?
স্বাবলম্বী নারীর গল্প বলতে চেয়েছেন পরিচালক!
নাকি একটা জীবনে উপরে ওঠার জন্য একটা ব্রেকই সফলতার চূড়ান্ত --- সেটি বোঝাতে চেয়েছেন!

খোলাসে হয়নি! অনেকে বলতে পারেন-- মহাপণ্ডিত দেখি--- সিনামাটি পুরস্কার জিতে এসেছে। আপনি এসেছেন, এটা নিয়ে আলাপ করতে! হতে পারে। তবে পণ্ডিতি নয়; দর্শক হিসাবে এটা আমার নিজস্ব বিশ্লেষণ মাত্র!

নায়িকাদের মানুষ কি মনে করে? --- বেশ্যা-- বার্তাটা সিনামায় মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা থাকলেও সিনামাটি রয়া'র একাকীত্ব আর  ইমতিয়াজ চরিত্র রূপায়নকারী একাকার হওয়া রাতটা এ বার্তাকে  উড়িয়ে দিতে পারে না। সে রাতে সাজগোজটাও! রক্ত করবীর নন্দিনী সেখানে লাল টকটকে শাড়িতে একাকীত্বের বয়ানে হাজির হয়--- ভিন্ন  আবহে।

রবীন্দ্রনাথের রক্ত করবী নাটকটির ফরমেট ভাঙাগড়া নিয়ে সিনামার কাহিনী--- যেখানে রক্তমাংসের সমকালীন এক নন্দিনীকে আবিষ্কার করতে চাইছেন পরিচালক---- সে নন্দিনী নতুন ফরমেটে দাঁড়াবে-- যে নাটকটি  ইউরোপে বছর খানেক প্রদর্শণীতে অংশ নিবে।  রক্ত করবীর নন্দিনী চরিত্র কে করবে? রয়া নাকি মেহজাবিন! এ নিয়ে মনসত্ত্বাতিক দ্বন্ধটাও তুলে আনা হয়েছে!

১২ বছর ধরে নন্দিনী চরিত্র করা তরুণী রয়া ৩৩ বছর বয়সে এসে--- এ সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না। তার এ ব্রেকটা অনেক বড় পাওয়া! তবে এখানে রয়াকে একটা গালিও দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে রয়া সেলফিস! তার বরই বলছে এ কথা!  সেলফিস বটে!

কারণ আমরা রয়া চরিত্রকে সিনামায় দেখি নাটকের ব্রেকের জন্য  ইমতিয়াজের জন্য অপেক্ষা, সঙ্গ দেওয়া এবং  সন্তান নেবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার মত ঘটনাগুলো। এ টুকুও হয়ত ঠিক আছে---

সিনামাটি বলছে--- নারীর কাজ কেবল বাচ্চা ফয়দা করা আর লালন করা নয়। দ্বি-মত মোটেও করছি না। নারী বহু কাজ করতে পারে। করছেন। এতে আমাদের উৎসাহও দিই।

নারীর প্রতি নারীর আচরণ এখানে একটা ভিন্নতা এবং দ্বি-মুখিতা চোখে লাগে। অসুস্থ মা-কে রয়া বলছে ---- 'আমি তোমার মেয়ে না! তুমি আমার কাছে চলো। ভাইয়ার কাছে যাওয়ার আগের ক'টা দিন তুমি আমার কাছে থাকবা।'  এমন আবেগম ময় কথামালায় যে মেয়ে তার মাকে ভাসিয়ে নিতে চায় --- সে একই মেয়েকে আমরা দেখি মায়ের চিকিৎসার  সময় পাশে থাকার জন্য বিদেশ পাড়ি জমাতে অনাগ্রহ! কারণ রক্ত করবী ইউরোপের মঞ্চে যাবে--- এর পরিচালনার ভার তার হাতে।

পরিচালনাই সবচেয়ে  বড় প্রয়োরিটি। একমাত্র কর্তব্য ইমতিয়াজের প্রজেক্ট সাকসেস করা!  এটাই  কী  সিনামার  মূল  কথা ; হতে পারে-- জীবনের অনন্য সুযোগ ! সে সুযোগ হাত ছাড়া হলে একটা জীবন বৃথা!  নাকি কামাবেগ!

এমন স্বার্থপরতার ভেতরও  বিপরীত চিত্র একই নারী মধ্যে ---কাজের মেয়ে ময়নাকে দেখে বস্তি থেকে ফেরৎ আসার সময় তার চোখে! সে পানি কী তাকে ছেড়ে আসার কষ্ট! না , নিজের  ভেতরের চাপা অতৃপ্তি !

মজার  বেপার হলো  রয়াকে এমন একটা জায়গা থেকে থিয়েটারকর্মী হিসাবে দেখি; যেটি  সমাজে বিরল --- সাধারণত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপাটে স্থপতির বউ --- থিয়েটার করেন কি-না সেটাও একটা প্রশ্ন!

সিনামায়  রয়া'র মাকে দেখা যায় কোনো এক নায়িকাকে নিয়ে ভেগে গেলেও তার স্বামীপ্রেম কমেনি। তার ভাবনা- ফিরে আসবে স্বামী!

মায়ের কাছে মেয়ের যুক্তি  বাবা নায়িকা নিয়ে ভেগে গেছে মানে--- মনে করার কারণ নেই --- নায়িকারা বেশ্যা!

রয়া-কে আমরা তাই ভেগে না গিয়ে বরের ফ্লাটেই পর পুরুষ সঙ্গ উপভোগে দেখি ; হয়ত ! যাকে উপরে ওঠার সিঁড়ি হিসাবে দেখছে রয়া!

অন্যদিকে ময়না। রয়া'র গৃহকর্মী।  লিফটম্যানের সাথে বিয়ে পূর্ব যৌনানন্দে সন্তান সম্ভবা ! পরে বিয়ে করে সংসারী হওয়া ময়নার সামনে কেবল সামনের দিনগুলোয়  তার সন্তানের উজ্জ্বল দিন।
তার স্বাবলম্বী হওয়ার ভাবনাটাও এখানে উল্লেখ করার মত--- রয়া যখন ময়ানাকে ফেরৎ আসতে বলল-- তার সোজা উত্তর সারা জীবন কী মাইনষের বাড়িতে কাম কইরা খামু! নিজের একটা সংসার তার চাই!

-- কিন্তু রয়া-- যে সমাজের প্রথাগত ছক ভাঙ্গতে চায়--- তাকে আমরা দেখি ভিন্ন আঙ্গিকে--- কাজের মেয়ে চলে যাওয়ার পর বর কনে মিলে মামা নুডলস চিবোচ্ছে।  বর বলছে--- ময়না চলে গেছে আরেকটা কাজের মেয়ে দেখ! এটাকে অবশ্য পুরুষতন্ত্রের আদেশি বয়ান  বলা যেতে পারে।

একই সাথে দেখা যাচ্ছে রয়া পরিবারের জন্য সময় বের করতে পারছে না। কিন্তু একটা ব্রেকের আশায় ইমতিয়াজের জন্য তার নিজেকে উজাড় করে দেয়া!  রান্না উৎসব!

ইমতিয়াজ অনাবাসি বাংলাদেশি--- তার বাংলাদেশে এসে হোটেলে থাকাটা তাকে কষ্ট দেয়। একাকী মুহুর্ত তাকে ছুঁয়ে যায়। কিন্তু বরের সাথে ঠাণ্ডা সঙ্ঘাতটা চলতে থাকে--- এমনকি  সকালে বরের তৈরি করে দেয়া  চা টাও  টয়লেটে ফ্লাশ করে দেয়া মেয়েটাকে আমরা দেখি---আলোছায়ার খেলার মাঝে  একাকীত্ব নিয়ে গল্প জুড়ে কাছাকাছি আসতে । ইমতিয়াজ --- তার ঠোঁট স্পর্শ করছে। হাতটা পুরে নিচ্ছে মুঠোয়। রয়া এগিয়ে আসে কাছে। এখানে কি বার্তা!

বরের যৌনশক্তির ওপর আস্থা রাখতে পারছে না এই নারী! নাকি একটা ব্রেকের জন্য তাকে  উজাড় করে দিতে হচ্ছে!  সে নিয়ে  শঙ্কা থাকতে পারে !

 তাহলে তার মায়ের বক্তব্য কি ঠিক? সমাজ নায়িকাদের মনে করে বেশ্যা!

আমরা রয়াকে সিনামায় দেখি বর নির্ভর।---বরের কেটে রাখা চেকে তার হাত খরচের যোগান। নন্দন তত্ত্বের চর্চাকে যদি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই ধরে নিই--- তারপরেও মনে হবে  নন্দন যদি জীবনকে অ-আনন্দিত করে--- সেটা বর্জনই শ্রেয়!

তাই রয়াকে তার মায়ের খোঁটাও শুনতে হয়--- পরের টাকায় ফুটানি মারি না। নিজে রোজগার করে চলি।  সত্যি তাই। রয়া'র মা পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্মসংস্থান করেছেন। তাদের হাতের কাজে পণ্য বিক্রি থেকে প্রাপ্ত আয়ের একটা অংশ দিয়েই চলে তার।  রয়া'র মায়ের মধ্যেই আমরা একটা পূর্ণ নারী চরিত্রকে দেখি।

রয়া-কে যে জায়গায় বসিয়ে পরিচালক সমাজকে ভেবেছেন  --- সেটি বিক্ষিপ্ত ভাবনার। কোনো একটা রেখায় তা মিলে না। মানুষের জীবন বিক্ষিপ্ত হলেও একটা লাইনে এসে দাঁড়ায় কখনো কখনো। তবে ব্যতিক্রম  থাকতে পারে। সে ব্যতিক্রম নিয়েও সিনামা হতে পারে। তবে  সেটা সার্বজনীন সিনামা কি-না ? প্রশ্ন থাকে!

রয়া'র এক্সপেরিমেন্টে রবীন্দ্রনাথের নন্দিনী গার্মেন্টকর্মী হিসাবেই ধরা দেয়--- নতুন এক্সপেরিমেন্টে! নিশ্চিতভাবে এটাকে সমর্থন  করি ।  সব বাধা বিপত্তির ভেতর থেকে যে এক রক্তোজ্জ্বল  ফুলের  আলো--- সেটি নিঃসন্দেহে প্রশংসা ও আনন্দের। সমাজের বিবর্তনেও রবীন্দ্রনাথ সার্বজনীন সেটিও আমরা এখানে আওড়াতে দেখি--- তবে এক্সপেরিমেন্টকে উড়িয়ে দিতে চাই না। এটা ম্যাচিউর লেভেলে গেলে ভালো হতো।

 মঞ্চের এ গল্পের সাথে রানা প্লাজার ধ্বসকে কানেক্ট করা হয়েছে। তবে সেটি কোনো পরিণত বার্তা দিতে পারেনি।

পশ্চিমবঙ্গের নচিকেতা কিম্বা বাংলাদেশি ব্যান্ড শির্পী মাকসুদও রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে এর আগে এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। রীবন্দ্র মৌলবাদীরা তাদের ক্ষোভ ঝেড়েছেন। তবে কিছু এক্সপেরিমেন্ট দরকার আছে-- সেটি হয়ত রক্ত করবীর মূল ম্যাসেজ হতো পারতো--- সেটি না হয়ে  রয়ার ভেতরে  চাপা কষ্ট--- বিত্ত ভাঙতে গিয়ে নিজেই পুরনো বৃত্তে বন্দী এবং  একেবারেই খাপছাড়া এক গল্পের ভেতর লুকিয়ে গেলো সিনামাটি! 

সমালোচনা করার সময় তেল দেয়ার বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিৎ!

এরশাদের কোটি সমালোচক আছে। আমি নিজেও তার কট্টর সমালোচক। তবে একটা বিষয় আমার কাছে মনে হয়--- আমরা তাকে নানা ভাবে বাছ বিচার করি।
কিন্তু তার অসহায়ত্বের জায়গাটা অনুভব করি না। একটা মানুষকে কতটা পুলসিরাতের উপ্রে রাখলে সে বার বার কথা পাল্টায়। বুড়া বয়সে লোকটা জেলে যেতে চায় না। এটাই তার মত পাল্টানোর একমাত্র কারণ বলেই আন্দাজ করি।
কারণ আমাদের স্বৈরাচারী রাজনীতি স্বৈরাচারী এরশাদকে জুজুর ভয়ে রাখছে। বিচার করে ল্যাঠা চুকাতে কেউ চায় না। না বিম্পি না আম্লীগ। সবাই লাল দালানের আতঙ্কে রেখে স্বার্থ হাসিল করে। সুতো ধরে টান দিলেই তো কেল্লা ফতেহ!
অনেক বয়োজ্যষ্ঠ সম্বাদিককে তার সমালোচনা করতে দেখি--- তাদেরকে কাউকে স্বচক্ষে দেখেছি সামনে পড়লে স্যার স্যার বলে গলে পড়েন। বলেন, স্যার আপনার সময় অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন বাংলাদেশে হয়েছে--- তার আর কোনো সরকারের সময় হয়নি। সত্য ঘটনা। কিন্তু সমালোচনা করার সময় তেল দেয়ার বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিৎ!