সন্তান নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা মা বাবাকে জ্ঞান দেয়ার আগে- আরেকবার ভাবুন


আইএস ইসুতে ব্যাপক হারে মা বাবাকে জ্ঞান দিচ্ছেন অনেকে। বলি জনাব, জনাবা- নিজের চরকায় তেল দেন ।
মা বাবার ব্যস্ততা বা সন্তানদের সময় দিতে না পারার কারণ একটাই, পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা। ভোগ প্রতিযোগিতাই এখানে মুখ্য । তো ভোগ করতে হলে তো ব্যস্ত থাকতেই হবে । 

স্কুল ফিসের উপর ভ্যাট বসাবেন , দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণহীন থাকবে, কৃষক তার ফসলের সঠিক মুল্য পাবেন না, সিনেমা হল তুলে দেবেন, মসজিদে-মন্দিরে-গির্জায় গেলে তাচ্ছিল্য করবেন, খেলার মাঠ দখল করে রাজনীতি করবেন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ক্যাডার নিয়োগ দিবেন, বাস-রেলের ভাড়া বাড়বেন, বিদেশি নায়িকা এনে নাচাবেন, গ্যাস, পানি, কারেন্টের দাম বাড়াবেন ---

আর মা বাবাদের তুলে কথা বলবেন, তা ত চলতে পারে না ।

সুখ অসুখের গল্প ৮ : কিছু সতর্কতা আপনার চিকিৎসাকে সহজ করবে।



সুখ অসুখের গল্প ৮ : কিছু সতর্কতা আপনার চিকিৎসাকে সহজ করবে।

ইনডিয়া মানে সব ভালো ডাক্তার তা কিন্তু নয়। আপনাকে সেখানে যাওয়ার আগে সতর্কতার সাথে ডাক্তার এবং হসপিটাল সিলেক্ট করতে হবে। কলকাতা অনেকটা দালার ঠাঁসা। আর হেলথ টুরিজমের নামে আপনাকে অনেক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এবং এ সব ক্ষেত্রে শুরুতেই বলবে, স্যার আমরা আপনাকে ফ্রি কন্সালটেশন দিচ্ছি। পরে বলবে, স্যার আপনাকে সেবা দেওয়ার জন্য ১০০ ডলার ফি দিতে হবে। তাও বলবে ঘটনার শেষে!

সুতরাং আপনি যদি কোন ইনডিয়ান এজেন্টের সাথে জানতে  কথা বলে থাকেন, তাহলে আগেই সার্ভিস ফি'র বিষয়টি জেনে নিন। তারপর  আলাপ করুণ। আমি নিজে ইনটেক্সরে সাথে কথা বলেছিলাম। তারা প্রথমে জানালো আমাকে কোন টাকা গুনতে হবে না। পরে ্তাদের আরেকজন আলাপকালে বললো, স্যার সার্ভিস শেষে আপনাকে ১শ ডলার পে করতে হবে! তারপর আমি আর ও মুখো হইনি!

 তবে আপনি একটু চোখকান খোলা রাখলে নিজেই নিজের কাজটি করে ফেলতে পারেন।  এখন অনলাইনের যুগ, আপনি চাইলে সব কিছুই দেশে বসেই সেরে নিতে পারেন।

 আপনি যদি শখে শখে ডাক্তার দেখাতে না চান, তাহলে আপনার বাংলাদেশের ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র থাকার কথা। এবং  টেস্টের রিপোর্টও। আপনি টেস্টের রিপোর্ট পাঠাতে পারেন, হসপিটালে। কর্পোরেট হসপিটাল, মানে টাকা পয়সা কামাই করার হসপিটালে বিদেশিদের সার্ভিস দেওয়ার জন্য আলাদা ডিপার্টমেন্টই আছে। এর নাম ইন্টারন্যশনাল পেশেন্ট ম্যানেজম্যান্ট, বা কারো  লাউঞ্জ কারো সার্ভিস এ সব নামে থাকে। আপনি যে হসপিটালে যাচ্ছেন, তার ওয়েবসাইটে গেলেই এর লিঙ্ক পাবেন। লাইভ চ্যাট অপশনও আছে।  সেখানে মেইল করুণ। তবে এটা ইংরেজিতেই করতে হবে।

 নিজে ইংরেজি না জানলে, পরিচিত কারো সহায়তা নিতে পারেন।  মেইল করলে আপনি সবচে দ্রুত রেসপন্স পাবেন এ্পলো, রিলায়েন্স, আম্বানি , লীলাবতি হসপিটালের। তবে পাবলিক বা দাতব্য হসপিটালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহায়ক সিএমসি ভেলর। এখানকার খরচও কম। হসপিটালটি আপনার মেইলের ভিত্তিতে খরচ এর  হিসাবসহ জানিয়ে দিবে।  আপনি আপনার  মেডিকেল রিপোর্ট পাঠিয়ে দিলে তারা রিভিউ করে  ট্রিটমেন্টপ্ল্যান মেইল করে দিবে।

 এ জন্য অবশ্যই আপনাদের নির্দিষ্ট ডাক্তার বা ডিপার্টমেন্টে মেইল পাঠাতে হবে। যেমন নিউরো লজির জন্য  নিউরো ওয়ান  বা নিউরো টুতে আপনি  আপনার সমস্যা অনুযায়ী ডকুমেন্ট পাঠালে তারা আপনাকে ডিটেইল জানাবে।  সেখানে চিকিৎসার জন্য  কেমন সময় লাগবে তাও জানিয়ে দেবে।

দিল্লি এইমস হসপিটাল ইনডিয়ার নম্বর ওয়ান হসপিটাল। সেখানেও এখন বিদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রাইভেটের মত ঝটপট চাওয়া মাত্র সেবা পাওয়া যাবে না। কিছুটা সময় নিতে হবে। সেখানে চাইলে  আপনি কেবিনও নিতে পারবেন।  ইনডিয়ার দ্বিতীয় বেস্ট হসপিটাল চণ্ডিগড় পোস্ট গ্রাজুয়েট হসপিটাল। সেখানে আপনাকে সরাসরি গিয়ে তারপর ডাক্তারের সিরিয়াল দিতে হবে। তবে দিল্লি এইমসে আপনি ইনডিয়া পৌছেই সিরিয়াল দিতে পারবেন। সে জন্য আপনার একটিভ ইনডিয়ান মোবাইল সংযোগ লাগবে।

সিএমসি ভেলোরে ডাক্তার দেখানোর জন্য প্রাইভেট ও  নরমাল দু রকম সিস্টেমই আছে। প্রাইভেটে দেখাতে ৬০০ রুপি লাগে। পাবলিকে ২০০ রুপি।  আরো কমেও আউটডোরে দেখানো সম্ভব।

আর এপোলো টাইপের হসপিটালে দেখাতে ডাক্তার ভেদে ১০০০ থেকে ১২০০ রুপি খচর করতে হবে। তবে মনে রাখবেন এপোলো টাইপের হসপিটালে  টেস্টের খরচ বেশি। এ ক্ষেত্রে আপনি চাইলে আপনার কি কি টেস্টের প্রয়োজন হতে পারে তা একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে আইসিডিডিআরবি'র  মহাখালী থেকে টেস্টগুলো করিয়ে নিতে পারেন। রাখবেন, তারা বঙ্গীয় ব্রাক্ষণ ডাক্তার নন যে, যেখানে তার কমিশন আছে সেখান থেকে টেস্ট করা হবে। আপনার টেস্ট থাকলেই হলো! তবে কিছু টেস্ট আপনাকে হয়ত নতুন করে করাতে হতে পারে।

জেনে রাখুন, বড় হসপিটালগুলো অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করানো হার খুবই কম! এটা তারা খুব ভালো মানুষ বলে নয়, এটা ইনডিয়ার আর্থ সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে।  কারণ ইনডিয়ানরা খরচের ব্যাপারে খুবই  সতর্ক। তাই মন চাইলো আর টেস্ট দিলো, সেটা করে ডাক্তারের চেম্বারে হুমড়ি খেয়ে পড়বে এমনটা নয়।

 মাস তিনেক ধরে ইনডিয়ার হসপিটাল গুলোর খবর নিছিলাম। সে অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আপনি যদি কেবল চেক আপ এবং ডাক্তার দেখাতে চান , সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য দিল্লি এপোলো বেস্ট অপশন। কম টাকায় প্রাইভেট চিকিৎসার জন্য সিএমসি।  এর বাইরে মুম্বাইয়ের আম্বানি হসপিটাল ভালো।  ব্যাঙ্গালোরের  দেবীশেঠির হসপিটালরের কথা সবাই জানেন । কিন্তু মিস্টার শেঠিকে আপনি কলকাকতায়ও দেখাতে পারেন। কারণে তার হসপিটালের যাত্রা কিন্তু কলকাতায়। এবং রবীন্দ্র নাথের নামে একটা ট্রাস্ট এটি পরিচালনা করে থাকে বলে শুনেছি।

 কোন রকমের দ্বিধা- না করে যে কোন বিষয়ে ডাক্তারের সাথেই কথা বলুন। কোন রকমের সমস্যা হবে না। এটা বঙ্গীয় ডাক্তার নয় যে, বিরক্ত হবেন। তার সিরিয়াল দেয়া লোকটা দেখিয়ে বলরেন, ওর সাথে আলাপ করুন।ডোক্তাররা মেইলের পাশপাশি হোয়াটসঅ্যাপে খুব স্বচ্ছন্দবোধ করেন!

 ইনডিয়ার হসপিটালে গেলে আপনার এক বাংলাভাষি গাইড দরকার হতে পারে। কর্পোরেট হসপিটালে আপনি বিনাপয়সায় এ সেবা পাবেন। পাবলিক হসপিটালের জন্য কিছু টাকা দিলে আপনি এ রকম কাউকে পেয়ে যেতে পারে।  সেটা টাকা  ২০০ থেকে ৩০০ রুপির বেশি নয়।

আমি বলছি না তারা তাদের দেশের রোগীদের সাথে তারা এ রকম অনন্য ব্যবহার করেন। তবে বাইরের রোগীদের তারা বিশেষ যত্ন নিয়ে দেখেন। কারণ তারা চান দেশটাকে রেমিটেন্স আসুক এবং তাদের সুনাম ছড়িয়ে যাক। তাদের সুনামের কারণে কিন্তু এখন ঢাকায় এপোলো, স্কয়ারে বেশ কয়েকজন ইনডিয়ান ডাক্তার নিয়মিত রোগী দেখছেন।  আমরা যাচ্ছিও।

সুখ অসুখের গল্প ৭ :: আমাদেরও রোগীবান্ধব ডাক্তার আছেন!

 সুখ অসুখের গল্প ৭ :: আমাদেরও রোগীবান্ধব ডাক্তার আছেন!

নিশ্চিত করে বলছি, আমাদের অত্যন্ত মেধাবী এবং রোগী বান্ধব ডাক্তার আছেন। খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন। তবে তাঁদের পর্যন্ত পৌছানো অনেক দুরহ হয়, কখনো কখনো। নিউরোলজির জন্য ডাক্তার কাজী দীন মোহাম্মদের কথা বলতে হবে। তাঁর কাছে পৌছাতে তিন মাসের মত সময় লাগে। তবে তাঁর রোগী দেখে দ্রুততার সাথে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভালো পরামর্শ দিতে পারেন।

আমি যখন উচচ রক্তচাপ নিয়ে বিপাকে ছিলাম, তার শরণাপন্ন হলাম।  তিনি আমাকে কোনো রকমের টেস্ট ছাড়াই ওষুধের  দিলেন। এর আগে বেশ কয়েকমাস ধরেই আমি  হাইব্লডাপ্রেসার নিয়ে বিপদে ছিলাম। এই, হুটহাট প্রেসার বেড়ে যাওয়ার একটা ভয়ঙ্কার ব্যাপার ছিল।

 দীন মোহাম্মদ স্যারের অধীনে আমি বছর দু চিকিৎসা নেয়ার পর তার সাথে  ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরে তার সাথে দেখা করা কঠিন হয়ে গেলে, আব্বার ডাক্তার বরেণ চক্রবর্তীর শরণাপ্ন্ হলাম।

 বরেণ দা, আমার দেখা অসাধারণ ডাক্তার।  তিনি মনযোগ দিয়ে রোগীর কথা শোনেন। পায়ে হাত দিয়ে অন্তত পালসটা দেখেন। যেটা অন্য ডাক্তারদের অনেকেই করতে চান না।

 ইন্টারনাল মেডিসিনের ডাক্তার বরেণ চক্রবর্তী, ওষুধও  রয়ে সয়ে  লিখেন। এবং রোগীদের তিনি ফোনেও সময় দেন। দরকার হলে ওষুধ পরিবর্তন করেও দেন।  গত চার বছরে আমাকে দুবার কিছু টেস্ট করতে দিয়েছেন।

বরেণ দা এক সময় দিনে ১৫ জন রোগী দেখতেন।  এখন কর্পোরেট হসপিটালে বসার কারণে এ সংখা চারগুণ হয়েছে।  তবে তার একটা  গুণ হলো- অত্যন্ত যত্ন করে রোগী দেখেন। আমি এবার আব্বার সাথে ইনডিয়ায়  যাওয়ার পর তাঁর চিকিৎসার  কাগজপত্র এপোলোর অমিত মিত্তালকে দেখালাম। তিনি বরেণ দা'র চিকিৎসাটা ঠিক রাখলেন। তবে দুটো টেস্ট দিয়ে বল্লেন,  টেস্টের রিপোর্টটা যেন বরেণ দাকে দেখাই এবং চাইলে অমিতকেও আমি এটা পাঠাতে পারি।

ডাক্তার মুরতুজা খায়েরও রোগীবান্ধব।  রেসপেরেটরি মেডিসিনের এ চিকিৎসক মূলত বসেন একটি বড় কর্পোরেট হসপিটালে। রোগী দেখেন নির্ভারভাবে। তার সবচে যে বিষয়টা ভালো, সেটি হলো তিনি রোগীর কথা শোনেন এবং ওষুধগুলো তিনি কেন দিচ্ছেন, জানতে চাইলে ব্রিফ করেন। আরেকটা বিষয় হলো, তিনি ওষুধের জেনেরিক নাম লিখে থাকেন।  এতে করে আপনি যেখানেই যান, আপনার ওষুধ কিনতে কোন সমস্যা হবে না।

যেহেতু বক্ষব্যাধি একটা ক্রনিক ডিজিস, এর ওষুধ যে কোন সময় কেনার দরকার পড়তে পারে। মিস্টার খায়েরের এন্টিবায়োটিক বাতিক নেই। তবে তার বিদেশি ওষুধের প্রতি দূর্বলতা আছে। আমি গ্রিন উইচে একবার এক বিলেতি চিকিৎসককে তাঁর প্রেসক্রিপনি দেখিয়েছিলাম, তিনি দেখে বললেন, ভালো ডায়গনসিস করেছে। ওষুধও ঠিক আছে।

রেসপেরেটরি মেডিসিনের আরেকজন চিকিৎসক আলি আহসানও বেশ ভালো। তার চিকিৎসাও  প্রশংসা করার মত। আমি শুরুর দিকে তার রোগী ছিলাম। তবে তার চেম্বার ভয়াবহ ভিড়ের কারণে এখন যাই না।  ফুসফুসের একটি টেস্ট তিনি ১৬০০ টাকায় চেম্বার একজন জুনিয়র ডাক্তারের সহায়তায় করিয়ে নেন।  এ্কই টেস্ট বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শ তিনেক টাকার মধ্যে করা সম্ভব। আমি এখন তাই করি।

 রিউম্যাটিক ফিভারে অসাধারণ ডাক্তার নজরুল ইসলাম।  একজন চিকিৎসক কতটা ভরসা দিতে পারেন, তা জানতে একবার তার দপ্তরে যেতে হবে।  টেস্ট ? ,দরকার না হলে কখনোই না।  আমার ছোট বোনের একবার  রিউমিটিক ফিভারের কথা জানালো স্থানীয় ডাক্তার। পরে তার দপ্তরে হাজির হলাম। ওষুধ তো দিলেনই না। কোনো টেস্টই নয়।  দিলেন কেবল দু'টা ব্যায়াম। এটা কেবল দেশের বাইরে দেখেছি।

মেডিসিনের ডাক্তার মধ্যে আমাদের পরিবারের সবারই পছন্দ ডাক্তার আইয়ুব আলী চৌধুরী। ভদ্রলোক বদলেছেন, এখন অনেক। ২০০২ সালে আব্বার  ডেঙ্গু হয়েছিল।  নোয়াখালীর ডাক্তাররা ধরতে পারেননি। ঢাকা থেকে  হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের একজন  সহকারি অধ্যাপক  নোয়াখালীর প্রাইমে যেতেন, তাঁর কাছে নিলে বললেন, ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এখনই হসপিটাইলাইজ করুন।

পরে ঢাকায় আনার পর তাঁর ডেঙ্গু ধরা পড়লো। চারদিনের ট্রিটমেন্ট করলেন ডাক্তার আইয়ুব আলী চৌধুরী ।  মিস্টার চৌধুরী সে সময়কার  চিকিৎসা আর এখনকার মধ্যে ফারাক আছে। এখন তিনি দিনে ৬০ জন রোগী দেখেন চেম্বারে। হসপিটাল তো আছেই!  তবুও আমরা এখনো মেডিসিন বলতে তাঁকে বুঝি। তার একটা বড় কারণ তিনি  ওষুধের পরিমাণ টা কম দেন।  এন্টিবায়যোটিক এবং ভিটামিন ওষুধ প্রীতি তার নেই।  অপ্রায়োজনীয় টেস্টও না।

গাইনোকলজির জন্য বস ডাক্তার জাকিউর রহমান। তাঁর ডাক্তারি দেশি ডাক্তারদের সাথে যায় না। মিস্টার রহমান রোগীকে কমপক্ষে ১৫ মিনিট সময় দেন। এবং মানবিক ডাক্তার বলতে যা বোঝায়, তিনি তাই! তার কাছে ওষুধের চেয়ে  বিকল্প পদ্ধতি- ব্যায়াম, ডায়েটই উপযুক্ত ওষুধ।

শিশু ডাক্তারদের মধ্যে অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী।  তাঁকে দেখছি অন্তত ৭ বছর ধরে।  রোগীর মায়েদের অভিযোগ তিনি সময় দিয়ে রোগী দেখেন না। তার ওষুধ কাজ করতে বেশ সময় লাগে।  কিন্তু আমার তা মনে হয়নি। যদিও তার হিস্টরি লিখেন একজন। আর তিনি ফাইনাল দেখেন। তবে তার  রোগ নির্ণয় ও ওষুধ নির্বাচন খুবই চমৎকার। এন্টিবায়োটিক তিনি একটা শিশুর উপর কখন প্রয়োগ করবেন, সেটা ভালো বোঝেন।  আর সাধারণ ওষুধের বদলে আর্য়ুবেদিক ওষুধেই তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। সাথে ওষুধ না খাইয়ে কীভাকে রোগ সরানো যায় তাও বলে দেন।   এ রকম শিশু ডাক্তার আমার চোখে কম পড়েছে।  মায়েরা  গুঁড়ো দুধ খাওয়ার জন্য জানতে চাইলে, বেশ বিরক্ত হন।

 সার্জারি ডাক্তার ফিরোজ কাদিরকে মনে পড়ছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটভাই নুরুল ইসলাম আকাশের টানা ৮ ঘণ্টা  অপারেশন করেছিলেন তিনি। ঢাকা মেডিকেলের  অপারেশন থিয়েটার পুরো একটা নির্ঘুম রাত কাটানোর পরেও তার মুখে হাসি ছিল, বলছিলেন, অপারেশন ভালোভাবে করতে পেরেছি।  চার্জ?  ওটা না শুনলেও চলবে।

 সার্জারি ডাক্তারদের এ রকম, অসাধারণ  দেখার সুযোগ  সবার হয় না।  তবে ছোটভাই আকাশ বাঁচেনি। আইনসইউতে থাকার সময় তার  জণ্ডিস ধরা পড়ে এবং মারা যায় ছেলেটি।

ডাক্তার মোবিন খান। লিভারের জন্য  বস ।   রোগীকে দেখেন দেড় থেকে দু মিনিট। কিন্তু তার স্মৃতিশক্তি কতটা প্রখর তার একটা বর্ণণা দিই। একজন রোগীকে আমি ২০০৩ সালে তার চেম্বারে নিয়ে গেছিলাম। ২০০৭ সালে ওই রোগীকে আবার নিয়ে গেলে,তিনি মুখস্তই বলে দিলেন তাকে কি চিকিৎসা দেওয়া হয়েছির এবং এখন কি দিতে হবে। আমার একটা বিজনেস কার্ড এগিয়ে দিতে বললেন, আপনারা একটা কার্ড আমার কাছে আছে। এবং সেটি  যে আছে তা রোগীর  রেফারেন্স বুক উল্টে দেখালেন। বললেন, লং টার্ম চিকিৎসা লাগবে রোগীর। ভালো হয়ে যাবে।

রোগীকে তিনি যা ঘটনা তা বলে দিতে পছন্দ করেন। যদিও খারাপ অবস্থা সম্পর্কে রোগীকে বলা ঠিক নয় বলে আমরা মনে করি। তার কথা ভিন্ন, রোগীর অবস্থা তার জানা উচিৎ।

ইউরোলজি ডাক্তারদের মধ্যে ডাক্তার সালামকে এক নম্বর ধরা হয়। এবং আসলে বেটা এক নম্বর। আপনি যার  প্রেসক্রিপশনই নিয়ে যান না কেন, তিনি সে চিকিৎসকে সম্মান দিয়ে কথা বলেন। তবে টেস্টের ব্যাপারে তার সমস্যা আছে। আব্বাকে  নিয়ে গেছিলাম। ১ দিন আগে স্কয়ারে টেস্ট করা হযেছিল। বললেন, আবার করেন। কমফোর্টেই করেন। করলাম। রেজাল্ট একই।  পরে বললেন, ওষুধ লাগবে না। চারমাস পর আবার চেক করানোর নির্দেশনা দিলেন।  একই রকম  কথা অবশ্য ইনডিয়ান ডাক্তারও বলেছেন।

 ডাক্তার জাহিদ সম্ভবত একমাত্র ডাক্তার যিনি রোগীর সঙ্গ উপভোগ করেন। আব্বাকে নিয়ে তার চেম্বারে যতবারই গেছি, কমপেক্ষ তিরিশ মিনিট সময় দিয়েছেন।  পরে জানলাম, অন্য রোগীদেরও তিনি একই রকম সময় দিয়ে থাকেন।

 সাইফুল ইসলাম অত্যন্ত দক্ষ ডেন্টাল সার্জন। রোগ ণির্ণয় করতে পারেন সহজে। তারচে সহজে তিনি বড় অপারেশন করেন, হাসি মুখে। খরচও অত্যন্ত কম। ইসলামি ব্যাংক হসপিটালের শাহজাহান পুর ব্রাঞ্চে বসেন তিনি। ভিসিট তিনশ টাকার কম। রিপোর্ট দেখাতে টাকা লাগে না।  একমাসের  মধ্যে  আবার সাক্ষাৎ দেখানোও মাগনা।

আম্মার দাঁতের ইনফেকশন হলো ২০০২ সালে। বঙ্গবন্ধু হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগে আমার ডিপার্টমেন্টের ম্যাডামের হাজব্যান্ড বিভাগীয় প্রধান। নিয়ে গেলে অত্যন্ত যত্ন করে দেখলেন। কিন্তু মূল সমস্যা বার করতে পারেননি। পরে নিয়ে গেলাম, সাইফুল ইসলামের কাছে। তুলনা রহিত চিকিৎসা।

 দাঁতের আরেকজন ডাক্তারে কথা মনে পড়ছে। নোয়াখলীতে বসেন। ডাক্তার বিএল নাগ।  তার চেম্বারে ৯৩ সালে গেছিলাম। আমার  দাঁত ভেঙ্গে গেছিল। তিনি বললেন, দাঁত ফিলআপ করতে টাকা লাগবে ৪০০। আমার কাছে তখন শ দুশ টাকা ছিল।  আমি বললাম, তাহলে পরে আসবো। কিন্তু তিনি চিকিৎসা করলেন, বাকিতে। পরে যখন টাকা ফেরৎ দিতে গেলাম, যেন-আসমান থেকে পড়লেন।  খুশী হয়ে আমার মাড়ির দুটো দাঁত মাগনা ফিলআপ করে দিলেন। আমার সামনের মেরামত করা দাঁড় ৯৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ভালো  আছে। কৃতজ্ঞতা, বিএল নাগ।

বাংলাদেশের আউটডোরেও অসাধারণ কিছু চিকিৎসকের দেখা মিলবে। তবে এটা দেখবেন খুব কম। তবে আছে। বঙ্গবন্ধুর আউটডোরে বসেন ডাক্তার নাহিদ। মেডিসিনের ডাক্তার। অত্যন্ত বিনয়ী এবং অল্টারনেটিভি মেডিসিন এবং ব্যায়ামেই তিনি রোগীকে ভরসা দিতে চান।

বঙ্গবন্ধুতে চর্মরোগ ডিপার্টমেন্টটাও দারুণ। আউটডোরের ডাক্তাররা  চর্মরোগ ভালোভাবেই বিচার করে ওষুধ দিতে জানেন। এটা আমার ও আমাদেে বন্ধুদের অনেকেই পরিক্ষীত।

 আমাদের এ রকম বহু চিকিৎসক আছেন। কিন্তু কিছু শঠ, তঞ্চক,ভণ্ড, লোভী চিকিৎসকের কারণে সে সব আলোতে আসে না।  কারণ চিকিৎসকরা এখন আর মানুষরে সাথে যে ব্যবহার করেন , কতাঁদের যে আচরণ এবং মানুষ ঠকানোর প্রবণতা তা  ভালো চিকিৎসকদের সফলতাকেও ঢেকে দেয়।