হুররাম সুলতান আশেকান পরিষদ




এখনো হুররাম সুলতান আশেকান পরিষদ হয় নাই ;) আহারে.. বেচারি... দীপ্ত টিভির খবর খুঁজতাছে। নিশ্চিত মামুন ভাই ব্রান্ড প্রমোটর। দীপ্ত খবরের লিঙ্ক (https://youtu.be/awaBh1BHpD0) ।
দীপ্ত টিভির টিআরপি আর পরিচিত বাড়াতে মামুনুর রশীদ কাজ করছেন। এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, নইলে বেচারা বাংলা নাটকের মানোন্নয়নে মন না দিয়ে সেই   রাস্তায় মিছিল করতেছেন।
প্রতিবাদের অনন্য সংস্কৃতি মঞ্চ--- পথ নাটক... মঞ্চ নাটক ... পালা নাটক... সব থুইয়া মিছিলে নামছেন। সরকার বাহাদুরের সাথে লেয়াজো করতে করতে আর পথ নাটক মঞ্চ নাটক  নিয়ে আগাইতে পারেন নাই।  তাই  এখন কাম লইছেন --  ব্রান্ড প্রমোটরের কাম। কত রকমের  ব্রান্ড প্রমোশন আইডিয়া যে আছে, জগতে... !!
তবে  আশেকানদের বলি,  দেশীয় টিভি-অনুষ্ঠান নির্মাতাদের কষ্টটাও উপলব্ধি করতে হবে। ইনডিয়ার গুণ্ডা আগ্রাসন আর  বিদেশী সিরিয়ালের থাবা থামাতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে সত্যি করে বলছি...  শিল্পটা টিকবে না।
ভালো বলে সব বাইরেরটা দেখবেন তা কিন্তু হয় না, জনাব।
নিজের একটা আত্ম পরিচয়, আত্ম অহঙ্কার  আত্ম মর্যাদার  বিষয় আছে! সে বিষয়টাই আসল।  ভালো সিরিয়াল ভালো নাটক তৈরিতে সরকারকে পৃষ্ঠপোষকত হতে হবে।  আর্ট ফিলিম বাদ দিয়া কমার্শিয়াল ফিলিমের দিকে নজর রাখতে হবে। কারণ ব্যবসা.. বিনোদন একসাথে না চললে... কোন  কিছুই টেকে না। 

অজ্ঞাতনামা: চেনা সমাজের চেনা গল্প

'আমি ক্রিতদাস নই, মানুষ!'--- ঘোষণা দিয়ে গানে গানে সিনেমাটির শুরু হলেও চলমান প্রবাস-কর্মসংস্থানের নামে মানুষের জীবন কিনে নেয়া চক্রের ঘেরটোপে হারানো মানব জীবনের গল্প--- অজ্ঞাতনামা। 

তৌকির আহমেদ দক্ষ অভিনেতা। দক্ষ পরিচালকও বটে। কিন্তু এ রকম একটি জীবন ঘনিষ্ঠ-বাস্তব ভিত্তিক কাহিনী 'অজ্ঞাতনামা' সিনেমার চিত্রনাট্যে হাজির করেছেন, সেটি নিঃসন্দেহে কেবল প্রশংসা নয়, সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতার একটা ভালো উদাহরণ হিসাবে মূল্যায়ন করতে হবে। 

নরীর শরীরের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ পুরুষ মাত্রই অনূভব করে থাকেন... সাধু-সন্নাসীরা ব্যতিক্রম। সিনেমাটিতে সেটিও এসেছে পরিশীলিতভাবে। 

মাত্র ২ হাজার টাকায় জাল পাসপোর্টের মামলা থেকে রেহাই পাওয়া দালাল রমজান এখানে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী। কারণ সিনেমাটি জ্ঞান বিতরণের বদলে বাস্তব অবস্থাই দৃশ্যমান । বিশ্লেষণধর্মী বয়ান। 

বাস্তবেও মানব পাচারকারী- প্রবাসী কর্মী পাঠানো প্রতারক দালাল চক্র খুবই শক্তিশালী এবং তারা সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থাকে... রমজান এখানে সেই চরিত্র।  অত্যন্ত সফলতার সাথে চিত্রিত। 

হাতে সোনালী-রূপালী রঙ্গের ঘড়ি,  সাইকেলে টুংটাং শব্দ তুলে গ্রামের রাস্তা- যে বালকরা দাবড়ে বেড়ায়..., বিদ্যুৎহীন গ্রামে ব্যাটারি দিয়ে টেলিভিশন চালিয়ে যে বালিকারা আকাশ থেকে পাওয়া  অনুষ্ঠান উপভোগ করে... যাদের পুকুরে কচুরি ফেনার মত ভাসে শ্যাম্পুর দুধসাদা ফেনা ...তাদের প্রবাসী স্বজনরা কেমন আছেন?  সেটি তাদের প্রায় সবারই ভাবনায় নেই! 

মাস শেষে টাকা আসে দেশে... সে টাকা আনার  হুন্ডি, মানি ট্রান্সফার এজেন্সী  কিম্বা ব্যাংকগুলো মেলা করে... মানুষ বিক্রির লোকের সে সব দেখিয়ে নতুন কাউকে পাঠিয়ে দেওয়ার ধান্ধা করে... এভাবেই চলে প্রবাস-চাকুরী-জীবন চক্র। 

রিজার্ভ বাড়ে...কল্যাণ মন্ত্রী হয়... কিন্তু আধপ্লেট ভাত, দিনভর কাজ আর নেতিয়ে আসা শরীরটা টেনে তুলে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর দায়িত্ব কার? রাষ্ট্র! পরিবার নাকি অন্য কারো! নাকি তার নিজেরই! সেটিও, অজানা!! 

অজ্ঞাতনামা সিনেমার গল্পটা  আমাদের প্রতিদিনের দেখা ঘটনারই একটা ! রমজান দাললের খপ্পরে পড়ে বসত বাড়ি মহাজনের কাছে বন্ধক রেখে গলা কাটা পাসপোর্টে আরব আমিরাত পাড়ি জমায় আছির উদ্দিন প্রামাণিক। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর তার লাশ দেশে পাঠানো হয়.... পাসপোর্টের নামানুসারে... আছিরের লাশ আসে শেখ আবদুল ওয়াহাব প্রামাণিকের নামে... সে লাশ গ্রহণ করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রকের ফোন যায় থানায়। সুকগাছা গ্রামে মধ্যরাতে সে খবর নিয়ে যায় পুলিশ। 

... জালাল মেম্বারকে সাথে নিয়ে শেখ আবদুল হাকিমের বাড়ি যায় থানার ওসি ও ডিউটি অফিসার... জানা যায়, শেখ আবদুল ওয়াহাব এখন ইতালীতে।  
ইতালী যাওয়ার সময় ওয়াহাবের পুরনো পাসপোর্টটা রেখে দেয় রমজান দালাল। সেই পাসপোর্টে গলা কাটা ছবি লাগিয়ে  রমজান দালাল আছির উদ্দিন প্রামাণিককে পাঠিয়েছে আজমানে। মারা গেছে আছিরই! 

নিজের বসত ভিটে বন্ধক বাকি ছিল... সেটিও মহাজনের কব্জায় দিয়ে একজন পিতা ছুটে চলেন লাশ গ্রহণের জন্য .. সে লাশ আনা হয়... লাশের গোসলের সময় আবিষ্কার হয়, লোকটি আছিরও নয়। তাহলে... সে লাশ কার? ধারণা করা হয় সাউথ ইনডিয়ান। 

আছিরের বাবার ইচ্ছা সাউথ ইনডিয়ান লাশটা লাশের বাবা মায়ের কাছে ফেরৎ পাঠানো দরকার।  ওসি কুদ্দুস সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে। ডিউটি অফিসার ফরহাদকে সিভিল ড্রেসে লাশ নিয়ে রমজানদের সাথে ঢাকায় পাঠানো হয়।সরকারি অফিসে অফিসে ঘুরতে থকেন কেফায়েত , পুলিশের এসআই ফরহাদ এবং দলাল রমজান। লাশ ফেরৎ পাঠানো কার দায়িত্বে পড়ে? সবাই নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যায়! 

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, ডিএমসি হয়ে এয়ারপোর্ট... লস্ট এন্ড ফাউন্ড ডিপার্টমেন্টে অভিযোগ করার বানী শুনে অবশেষে ওসি কুদ্দুসের ফোন... আছির সত্যি মারা গেছে। তাকে আমিরাতেরবাংলাদেশ দূতাবাস কনফার্ম করে। কিন্তু লাশের চেহারা বোঝা না যাওয়ার কারণে এ লাশটি বাংলাদেশে...কেফায়েত প্রামাণিক নিজের সন্তানের লাশের মতই অজ্ঞাতনামা লোকের লাশটি নিয়ে সুকগাছায় ফেরৎ আসেন। সেখানেই তার দাফন হয়... কেফায়েত প্রামাণিকের সংলাপ... 'একটা মানুষের বড় পরিচয় হলো- সে মানুষ, সৎকারের অধিকার তো তার আছে।'

এটাই সিনেমার কহিনী!

সিনেমাটিতে দালালের বহুরূপ উঠে এসেছে... বিউটি বিদেশ যেতে চায়--- নানার ভাষায় 'পোড়া কপাইল্লা মেয়ে'... এ মেয়ের জন্মের পর দিনই তার বাবা মারা গেছে। বিউটির ছেলের জন্মের এক বছর পর স্বামী। তাই বিদেশ গিয়ে সে পরিবারে অভাব -চাহিদা মেটাতে চায়। লাগবে তিন লাখ টাকা। পুরুষের কাছে এ টাকার জন্য দালালের পরামর্শ- জমি জিরাত মহাজনের কাছে বন্ধক রেখে টাকা আনা! তবে বিউটির জন্য ছাড় তার... পাঠাবে... বিনিময়ে.. বাধা পড়ে বিউটি! কিন্তু একটা পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আটকা পড়ে তার ভিসা ... দালাল রমজান আছিরের বউ করে বিউটিকে বিদেশ পাঠানোর বন্দবোস্ত করবে বলে আশা দেয়। সে আশা পূরন পর্যন্ত বাধা বিউটি! 

নারীরে চোখে দালাল পুলিশ সবই সমান! সবাই তাকে লুটে... তার শরীরের উপর চোখ রেখে কাজ করে দেবে বলে আশ্বাস দেয় এবং বাস্তবতাও অনেকটা এ রকমই!! 

থানার ডিউটি অফিসার ফরহাদ যখন বিউটিকে বলে আমি তোমাকে চাই... তখন বিউটির সংলাপ দুর্দান্ত সত্যটা তুলে আনে---''..মাগনা কেউ কিছু করে?... এই যে আমি তোমার কাছে গেলাম (পুলিশ) ক্লিয়ারেন্সের জন্য... তুমি কি দিছ... কেউ দেয় না ... আগে কিলিয়ারেন্স নিয়া আস... তারপর আমারে পাবা...'' 

ফরহাদ মুখে যদিও বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু বাস্তবেও তো সেই ক্লিয়ারেন্স নিয়ে আসো... বিছানায় তা হস্তান্তর করে... কিন্তু বিউটির আর বিদেশ যাওয়া হয়না। কারণ এ ফাঁকেই জানা যায় আছির উদ্দিন প্রামাণিক মারা গেছে... 

সিনেমাটি সমাজে বিদ্যমান মিথকে চ্যালেঞ্জ করেনি। সম্ভবত একটা চলমান সময়ের চিত্র আঁকতে চেয়েছেন তৌকির। যেখানে মিথ মিথই। অন্তত পোড়া কোপাইল্লা হিসাবে নানার স্বীকৃতি দিয়ে বলা সংলাপ এখানে প্রমাণিত--বিউটি পোড়া কপাইল্লা। নিজের বাপ স্বামীর পর যার বউ হয়ে বিদেশ পাড়ি জমাতে চেয়েছে সেও মারা গেছে...! 

সিনেমাটিতে গানের ব্যবহারও অসাধারণ... সন্তানের জন্য কেফায়েত প্রমাণিকের বুকের ভেতরে আর্তনাদ --- '
''আমার সোনা জাদুর মুখ/ জগতের সবচেয়ে সুন্দরআমার সোনা জাদুর কথা/ জগতের সবচেয়ে মধুর ... ক্ষমা কইরা দিও বাজান ক্ষমা কইরা দিও/ কেমন কইরা তোমার দেহ মাটি চাপা দেবে!!''

কিম্বা টাইটেল সং 'অজ্ঞাতনামা' গানটিও তুলে এনেছে প্রবাসের যন্ত্রণা কাতর সময়ে প্রতিচ্ছবি। 

সিনেমাটি এ সমাজ রাষ্ট্র এবং সামাজিক অর্থনীতির ভেতর নষ্ট লোকেরা কীভাবে টিকে থাকে, সেটা খুব চসমৎকার ভাবে তুলে এনেছেন তৌকির। বলেছেন, কষ্টের এক অনবদ্য গল্প। 
কেফায়েত প্রমাণিকের চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবুর অভিনয় এতটাই বাস্তবত যে, যে কারো দেখা অঘটনের শিকার মানুষের সাথে এর অমিল পাওয়া যাবে না। রমজানের অভিনয়টা একটা বেশি সিনেমেটিক মনে হয়েছে... দালালরা এতটা প্রতিভ থাকেন না, অন্তত পুলিশের সামনে।

অস্বীকার! অসম্মান।




গতবছরও বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসে ইনডিয়ান আর্মির ভ্যারিফাইড ফেসবুকে পেজে  আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে  ইন্দো পাক ওয়ার ৭১ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। চলতি বছরও একই ঘটনা।  একই হ্যাশট্যাগ (#IndoPakWar71) । 
পাকিস্তানের মত ইনডিয়াও যদি আমাদের মুক্তি সংগ্রামী মানুষ, দু'লাখ বা তারো বেশির নারীর সম্ভ্রম, তিরিশ কিম্বা তারো বেশি লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ন্যায্যতা অস্বীকার করে, তাহলে আমরা অসম্মান বোধ করি।  কারণ মুক্তির সংগ্রামে তারা আমাদের বন্ধু ছিল। তারা আমাদের প্রতি হাত বাড়িয়েছিল। আমাদের লাখ লাখ  শরণার্থীর প্রতি তাদের সহায়তার হাত প্রসারিত ছিল। 
সেই দেশের এ অস্বীকারের অসম্মান বইবার মত জাতি আমরা ছিলাম না। এটা নিশ্চিত। এখন সম্ভবত আমরা তাতেও রাজি! নইলে এত বড় একটা ঘটনার কোন প্রতিবাদ হয় না। রাষ্ট্র তো প্রতিবাদ করেই না! কোন রাজনৈতিক দলও।  এমনকি সংবাদ মাধ্যমও।  অথচ বহু সম্বাদিক দেশের চেয়ে কোন কোন সময় তার আদর্শিক নেতাদের বড় করে দেখেন, তারাও তাদের নেতাদের   কৃতিত্ব লুট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করেও প্রতিবাদ-আওয়াজ তোলেন না। প্রতিবাদ করেন না। সবাই কেবল চেতনার ফেরি করেন, সে চেতনার কিসের? নিজের স্বার্থ উদ্ধারের!!  আফসোস।