ধর্ম, চাপাতি,গুম এবং শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি!

কৈফিয়ত :: ব্যক্তিগতভাবে আমি ধর্মাশ্রয়ী। ধর্মকে  আমি আমার জীবনের মূল ভাবনার মধ্যে রাখি, যদিও এর প্রতিপালন আমার পক্ষে সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না কিম্বা কখনো কখনো ধর্ম অনুমোদন করে না, এমন কাজও আমি করি। তারপরেও আমি ধর্মকে আশ্রয় করে বেড়ে উঠেছি। এটাই আমার জীবনের একমাত্র ভরসা। 

 হাল আমলে চাপাতি, নাস্তিক, মুক্তমনা এ সব টাইপের শব্দের উদ্ভব এবং বিকাশ ধরে এ দেশে জঙ্গি, জঙ্গি প্রশ্রয় নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে।

আমাদের দেশে ইসলাম ধর্ম নিয়ে আলোচনা করলে  শিক্ষিত ও প্রগতিশীল মানুষের প্রায় সবাই এটাকে জমাত ইসলামের সাথে মিলিয়ে ফেলেন। সে জন্যই হয়ত ইসলাম ধর্মের কোনো অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র ধর্মানুসরী 'সুশীল'রা স্বস্তি পান না।

 ধর্মকে নানা রকমের আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি এবং করিও! রাষ্ট্র প্রধান 'মদিনা সনদ' অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে জড়িত অন্তত দশজন লোককে বার করা যাবে না, যারা মদিনা সনদের মর্ম  উপলব্ধি করতে পারেন!

 এটা তাদের দোষ নয়! এ ত্রুটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার।

আমরা ছোট বেলায় পড়তাম.. 'সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি/ সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।' এখন পড়ি---'  জনি জনি ইয়েস পাপা/ ইটিং শুগার / নো পাপ/ টেলিং লাই/ নো পাপা/ ওপেন ইওর মাউথ  হাহ্হা হা! '

 সুতরাং এ যে বাঙালিয়ানার মধ্যেও একটা তফাৎ তৈরি হয়েছে, সেটি আমাদের সমাজের প্রথাগত  সংস্কৃতির ভিতও ভেঙ্গে দিয়েছে। তাহলে আমাদের করণীয় কি? সে সম্পর্কে আমরা কেউ একমত নয়! কারণ আমরা সবাই নিজেকে সব জান্তা মনে করে বসে আছি! একেক জন একেক রকমের থিওরি দিচ্ছি।

 অনেককে দেয়া যায় এখন ধর্মের জন্য মরাকান্না করছেন, ধর্ম উদ্ধারে খুন করার কিম্বা খুনিদের সমর্থন করছেন? কিন্তু এরা ইসলাম ধর্মের মূল মর্মবাণী থেকে দূরে আছেন। সেই মর্মবানী নজরুল বা রবীন্দ্রনাথের মত স্বশিক্ষিত লোক সবাই নন যে, তারা নিজ দায়িত্বে জেনে নিবেন। জেনে নিবেন না বলেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা! এ ধরণের আত্মঘাতি মগজের সুষম ব্যবহারের জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধর্মানুরাগী ও নৈতিকতার সাথে সাজানো জরুরী ।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা চারধারায় বিভক্ত। এ বিভক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার সিলেবাস প্রণয়ণ করেছেন কারা? কারা এটি মডারেশন করছেন, সে দিকে তাকালেই সহজেই বোঝা যাবে বেকরাত্ব বৃদ্ধি, নন্দতত্ত্বরে চর্চা হ্রাস এবং ধর্মকে উপেক্ষার কারণে সমাজে আজ জঙ্গী, আম্রিকার আগ্রাসনের শঙ্কা এভং ইনডিয়ার ঝেঁকে বসে যাওয়ার  কারণ!

 ছোট বেলায় আমরা জানতাম, আম গাছে কলম করলে বরই ধরে। এটা সাময়িক।  কিন্তু আম খেতে হলে বরই খেতে হলে বরই গাছই লাগাতে হবে।
আমরা যুদি সুশিক্ষিত, সৎ এবং দেশ প্রেমিক শ্রমনিষ্ঠ  মানব সম্পদ গড়তে চাই, তাহলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়াতেই নজর দিতে হবে।

 আমরা সব ধর্ম, ধর্মাচার এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবো, এতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু  সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়াও একটি সহনশীল জাতি গঠনে মুসলিম বালক বালিকাদের  সহনশীল-নৈতিক-সৎ এবং প্রগতিশীল সমাজ ব্যবস্থা এবং ধর্মের বানী তাদের মনের ভেতরে গেঁথে দিয়ে উগ্র পন্থা মোকাবেলার কোনো উদ্যোগ  কোন সরকারই নেয়নি। নেবেও না। কারণ আমাদের কর্মকৌশল, পরিকল্পনা নির্ধারিত হয় আম্রিকা ও প্রতিবেশি দেশের কথা মাথায় রেখে। সুতরাং এখানে  এটা আশা করা মুশকিল যে, আমরা একটা সহনশীল সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি।

 অনেকে যুক্তি দেবেন, ধর্ম নিজের ব্যাপার । আবার বাঙলায় একটা প্রবাদ আছে-- আপনি ঠিক তো দুনিয়া ঠিক। এ সব কিন্তু আসলে কথার কথা।  নিজে ঠিক হওয়ার পাশাপাশি সমাজ ঠিক করার দায়িত্ব আমাদের আছে।

 পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষা ব্যবস্থা ঘিরে যে নৈরাজ্য চলছে, সেটি বলে বোঝানো মুশকিল।  এ খতা সত্যি স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার  ভিশনটা ঠিক করতে পারিনি। পারলে এ দুর্দশা হতো না।

আমি ব্যক্তিগতভাবে  নৈতিক শিক্ষার  প্রতি অনুরক্ত। একই সাথে সবার মাঝে পর্যটন নেশা ছড়িয়ে দেওয়ার পক্ষপাতি। মানুষকে তার সীমা এবং অন্যের অধিকার সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে কেউ কোন শিক্ষা দেন না। না পরিবার, না বিদ্যায়তন না  সমাজ-সংস্কৃতি! (কিছূ ব্যতিক্রম ছাড়া) । বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজগুলো রাজনীতি চর্চা! সেখানে সহনশীলতা আশা করা বোকামি।

 এ লেখাটার কারণ একটাই  ধর্ম, নৈতিক শিক্ষা বহু আগেই  পাঠ্যপুস্তক থেকে বিদায় করা হয়েছে। সেটি আপনি মাদরাসা বলেন, স্কুল বলেন আর কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়! সবখানে।   আমরা আসলে একজন শিক্ষার্থীর কাছে কি বার্তা, কি লক্ষ্য নিয়ে তার বড় হতে হবে, সেটি সেট করতে ব্যর্থ হয়েছি।

ধর্ম সম্পর্কে আমাদের উদাসীনতা বরাবরই আছে। কিন্তু আবার একটু বয়স হলে আমরা সবাই (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) চাই আমাদের সন্তান যেন ধর্মকর্ম করে। যখন আমরা চাই, তখন আর কিছু করার থাকে না। এ থাকে নার জায়গা কিন্তু অনেকেই উপলব্ধি করছেন, কিন্তু সেটি  বাস্তবায়নে কেউ কাজ শুরু না করে কীভাবে নব প্রজন্মকে আরো অস্থিরতায় ফেলে দেয়া যায় তা নিয়ে কাজ করছেন।  এতে করে জঙ্গি রাষ্ট্রের তকমা পেয়ে যেতে যাচ্ছি।

 চাপাতি অথবা গুম
 চলছে এখন ধুম!

 এ ধুম চলা বন্ধ করতে হবে। এ জন্য গণমাধ্যম, স্বঘোষিত সুশীলদেরও ভূমিকা আছে। আর ইসলামকে জমাত ইসলাম থেকে আলাদা করে একটা ধর্ম হিসাবে বিবেচনা করলে অর্ধেক সমাধান হয়ে যায়!

পাঠ্যপুস্তক থেকে   ড. কাজি দীন মুহম্মদরে 'বিনয় নম্রতা'র মত প্রবন্ধও উঠে গেছে। আর গতকাল বুধবার ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী সংবাদ সম্মেলন করে যে সব তথ্য তুলে ধরেছেন, সে গুলো খুবই উদ্বেগের।  এটা অবশ্যই আমার ব্যক্তিগত মতামত।

 নেজামী  বলছেন,' দ্বিতীয় শ্রেণিতে আগে পড়ানো হতো ‘সবাই মিলে করি কাজ’ শিরোনামে  সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহানবীর(সা.) সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত। তৃতীয় শ্রেণির বইয়ে  ইসলামের প্রথম খলিফা ‘খলিফা হযরত আবু বকর’ শিরোনামের সংক্ষিপ্ত জীবনী। চতুর্থ শ্রেণিতে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর জীবনী পড়ানোর ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু নতুন শিক্ষানীতির অধীনে প্রণীত পাঠ্য বই থেকে মহানবীর(সা.) এবং ইসলামের প্রথম ও দ্বিতীয় খলিফার জীবনী বাদ দেওয়া হয়েছে। '

তার তথ্যানুসারে , 'পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্য বই থেকে মহানবীর(সা.) জীবনী, কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ শীর্ষক কবিতা, ‘শহীদ তিতুমীর’ নামক একটি জীবনীর বদলে সংযুক্ত করা হয়েছে হুমায়ূন আজাদ লিখিত ‘বই’ নামক একটি কবিতা, যা পবিত্র কোরআন বিরোধী বলে পরিচিত।'

তিনি বলেন, ' ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ধর্মীয় শিক্ষণীয় ঘটণা সম্বলিত ড. শহীদউল্লাহর ‘সততার পুরস্কার’ নামক একটি লেখা, কায়কোবাদের লেখা ‘প্রার্থনা’ কবিতা বাদ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা  হয়েছে দেবী দূর্গার প্রশংসা সম্বলিত কবিতা ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ এবং লাল গরুটা নামক ছোট গল্প, যা গরুকে দেবতার আসনে বসানো হয়েছে।  একই শ্রেণিতে পাঠ্য ’নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ নামক একটি ভ্রমণ কাহিনীর বদলে ‘রাঁচির ভ্রমণ কাহিনী’  প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির  বই থেকে ’মরু ভাস্কর’ নামক শেষ নবীর(সা.) জীবন চরিত বাদ দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে পাঠা বলী দেওয়ার নিয়ম-কানুন সম্বলিত ‘লালু’ নামক একটি গল্প। অষ্টম শ্রেণি থেকে ‘বাবরের মহত্ব’ ও বেগম সুফিয়া কামালের লেখা ‘প্রার্থনা’ কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে সংযোজন করা হয়েছে ‘রামায়ণের সংক্ষিপ্ত কাহিনী’। নবম-দশম শ্রেণির জন্যে লিখিত বই থেকে কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’, কবি আলাওলের ‘হামদ’ ও আবদুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’   ‘জীবন বিনিময়’ কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে একই শ্রেণির বইয়ে দেবী অন্নপূর্ণার প্রশংসা সম্বলিত মঙ্গল কাব্য ‘আমার সন্তান’, ‘সাকোটা দুলছে’ ও রাধা-কৃষ্ণের লীলা কীর্তন ‘সুখের লাগিয়া’ প্রভৃতি কবিতা  সংযোজন  করা হয়েছে।‘সাকোটা দুলছে’ কবিতাটিতে ৪৭-এর ভারত বিভক্তিকে হেয় করা হয়েছে।  তাছাড়া ভারতের পর্যটন স্পট পালামৌ-এর ভ্রমণ কাহিনী এবং বাউলদের যৌনাচার সম্বলিত ‘সময় গেলে সাধন হবেনা’ নামক বইটি  নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্য-পুস্তক হিসেবে সংযোজন করা হয়েছে। উপরন্তু, প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে পাঠ্য করা হয়েছে যৌন শিক্ষার বই ‘নিজেকে জানুন’।'

 তাহলে আপনি ফেসবুকে লেকচার দিবেন, টিভি সেট গরম করে ফেলবেন, মাইকে ফূঁ দিবেন আর বলবেন সবাই 'মানুষ হও'। কেমনে। এ ধরণের কাজ তো উগ্রপন্থার প্রচারকারীদের  সহযোগিতা করছে। সুতরাং সময় থাকতে আমাদের সাবধান হওয়াটা জরুরী।

স্বেচ্ছায় অধীন কিম্বা আয়ত্বে বঙ্গীয় সংবাদমাধ্যম !


প্রেস ফ্রিডম ডে [3 May] নামে একটা দিবস বাংলাদেশে উদযাপিত হলো- ভালো লাগলো শুনে। মুক্ত গণমাধ্যম নিয়েও  কথা হয়েছে। হচ্ছে। হবে। মাশাআল্লাহ, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি!

বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ কতটা, তার সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারণা নেই! কারণ এখনো আমি কোনো অনলাইন, অফলাইনের সম্পাদক হতে পারি নাই। কিম্বা কর্তা সাইজে যেতে পারি নাই। যাওয়ার কোনো 'আশঙ্কাও' নেই!

তবে  এটা তো জানি সেলফ সেন্সরশিপ এখানে বহু আগে থেকে প্রচলিত। এখানে সম্বাদিকরা স্বেচ্ছায়, স্ব-উদ্যোগে অন্যের পারপাস সার্ভ করতে খুবই পছন্দ করেন!  যদি ক্ষমতাবানদের  'নেক' নজর মিলে! এই একটাই আশা!

আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ---বাংলাদেশের সবচেয়ে নিগৃহিত দু'টি  প্রাণি আছে! একটি সম্বাদিক! আরেকটি বাসা বাড়ির কাজের লোক! এদের  বশে আনা কঠিন কিন্তু পেটে এদের ক্ষুধা। অনিরাপদ জীবন, এক দিক থেকে ইসলামিক জীবনও বলা চলে। ইসলাম ধর্ম অনুসারে আজকে নিয়ে ভাবো, ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য, পয়সা মজুদ করে অন্যকে কষ্ট দিও না! এর দু'প্রাণিকুল এটা মানতে বাধ্য! কারণ তার তো দিনে আনা দিনে খাওয়া!। অবশ্য কিছূ পেটি বুর্জোয়া  সম্বাদিক এখন সমাজে আছেন। তাদের কথা না বলি। আম সম্বাদিকের কথাই ধরে এ পর্যবেক্ষণটা দিলাম!

 সে যাই হোক, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও রেডিও'র স্বায়ত্ত্বশাসনের জন্য একটা কমিশন হয়েছিল, আসাফ উদ দৌলা এ কমিশনের প্রধান ছিলেন। সম্ভবত ১৯৯৬ কিম্বা ৯৭ সালের দিকের ঘটনা, এ কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলছিলেন, তিনি যে প্রতিবেদন বানিয়েছেন, সেটি অবশিষ্ট নাই। তার স্বপ্রজাতির আমলার এটাকে  কাটছাঁট করে  স্বায়ত্ত্বশাসনের বদলে 'আয়ত্ত্বশাসন'  এর এন্তেজাম করেছে।

' আয়ত্ত্বশাসন' শব্দটা খুব মনে ধরেছে আমার। অসাধারণ। বঙ্গীয় শব্দ ভাণ্ডারে এক অনন্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন। ভাবলে আজো চমৎকৃত হই। এবং আরো ভালো লাগে পরে আসাফ উদ দৌলার সাথে কথা বলেছিলাম, তার কথাটা খুব পরিষ্কার,  এখানে প্রেস ফ্রিডম বলে কিছু নেই।

 যার বিপক্ষে যাবে, সে বয়কট করবে! নিশ্চিতভাবে অনেকেরই জানা আছে আম্লীগ সভানেত্রী বিম্পির ২০০১ থেকে ২০০৬ এর আমলে লাইসেন্স দেওয়া টিভি চ্যানেলকে তার  অনুষ্ঠান কভার করতে দিতেন না।   সে সময় ওই সব টিভি চ্যানেলৈর সম্বাদকর্মীরা প্যান্ডেলের বাইরে  মাইকের সামনে তাদের ' বুম' রেখে সাউন্ড বাইট সংগ্রহ করতেন!

 এটাকেও অত্যন্ত সম্মান করি, আমি। কারণ  আম্লীগ এটা শেষ পর্যন্ত টেনে নিতে পেরেছে, যে শক্তি বিম্পির নেই। বিম্পি- জমাতের লোকজন সব সময় একটা অপরাধী ভাব নিয়ে থাকে। মনে হচ্ছে, আহা রে কি বললেম জনাব অসন্তুষ্ট হবে। তাই সন্তুষ্ট করার একটা ভাবনা। কোনো অবস্থানে কঠোরভাবে  থাকতে পারে না।

 বলছিলাম,  গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা।  গণমাধ্যম স্বাধীন এ কথা সরকারের মন্ত্রী, তথ্য মন্ত্রী সবাই বলেন এবং  সেটা এখন বললে, অনেকটা কৌতুকের সৃষ্টি করে। কারণ  বিপরীত মতের পত্রিকা সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত,  দিনকাল তো বন্ধ হয়নি, এ দাবি তো সরকার করছে!  এবং এ দাবি মিথ্যাও নয়। তাহলে আমরা প্রেস ফ্রিডম আছে, এটা আপতত চোখে মেনে নিতে পারি!

কিন্তু বাস্তবতা কি তাই!  আমরা সম্বাদিকরাও  গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাই। আমি চোখ বন্ধ করে বল্লাম, চাই না। একই সাথে দায়িত্বশীল সম্বাদিকতাও চাই না। কসম করে বলছি , চাই না! যদি চাইতাম তাহলে এ দেশে একের পর এক লুট, আর খুনের বিষয়ে আমরা কেউ-ই এতটা নিশ্চুপ আর ডে ইভেন্ট হিসাবে কভার করে চুপ থাকতাম না! এর ফলো আপ রিপোর্ট হতো, কারা এর পেছনে জড়ি এবং তাদের বিচারে সরকারকে গণমাধ্যম বাধ্য করতে পারতো!

আমার দেশ পত্রিকার উপর খগড় নেমে আসার পর আমাদের দেশের  'প্রগতিশীল' সম্বাদিক গোষ্ঠী তো হাত তালি দিয়েছে! দেন নি! দিয়েছেন। দিগন্ত টিভি বন্ধ হওয়ার পর সবাই বলেছেন, বাপু ঠ্যালা বোঝ!  ইসলামিক টিভির মত নিরীহ টিভি চ্যানেল বন্ধ করার পরও গণমাধ্যমের কর্মীদের একাংশ উল্লাস প্রকাশ করেছেন।  ইটিভির চ্যায়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের পরও আমরা বহুলোককে দেখেছি  উল্লাস করতে!

বাকি গুলো কবে বন্ধ হবে? সে জন্যও অপেক্ষা করেছেন দিনের পর দিন। আর  বিপরীত মতের এখনো তেলা পোকার মত টিকে থাকা  গণমাধ্যমগুলোকে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে, এবং এ সব কাগজে চাকুরী করা কিছু সরকারপন্থী কীভাবে ফায়দা লুটছে, সেটাও আমরা কম বেশি জানি! সেই যাই হোক,  দুনিয়া কা মজা লোটটো দুনিয়া তোমারি হ্যায় এর বিশ্বাসী লোকের তো ভাব হবে না, এটা জানা কথা!

 তবে গণমাধ্যম  চাপের বাইরেও স্বউদ্যোগে বহু খবর 'টুইস্ট' করে থাকে। এটা জেনেই করে। সরকারের নজরে পড়ার জন্য। যেমনটা  একটা ইসু বাংলাদেশে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, সেটি হলো ড. ইউনূস। লোকটাকে তুলো ধুনো করতে পারলে কিছু সম্বাদিক এতটা আন্দ পান, যেটি হয় তিনি তার  প্রেমিকার সাথে প্রথম সাক্ষাতেও লাভ করেন নি।

 মজার ব্যাপার হলো এরা আবার আপনাকে নৈতিক সম্বাদিকার   সবকও দিবনে। কিন্তু অসত্য, বিকৃত খবর ছাপানোর পর তার প্রতিবাদ ছাপতে পারবে না। কারণ  তআহলে আবার না ক্ষমতাবানদের 'বদ' নজরে পড়ে যান।

 অনেকে বলবেন, ড. ইউনূসকে লাত্থি মেরে বের করে দেওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংক ভালো চলছে! দ্বিমত করছি না। কিন্তু  কার সেট আপে চলছে?

 গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন ও সরকারের করায়ত্বে আনার জন্য বহু ফন্দি ফিকির তো হলো, কিন্তু পর্ষদ নির্বাচন আজ পর্যন্ত করতে পারেননি!

 অনেক সম্বাদিক মনে করেন,  ইউনূস দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন। কিন্তু এটা মনে করা পর্যন্ত তার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।

আর এ দেশের গণমাধ্যমে সবার সমান অধিকার একটা স্বাপ্নিক ঘটনা। এখানে বিদেশে টাকা পাচারের  প্রমাণিত রিপোর্টকে  লেখা হয় 'কথিত'। আর শোনা যাওয়ার রিপোর্টকে বলা হয়, 'অভিযোগ' । কথিত ও অভিযুক্ত শব্দ দু'টোর তফাৎ নিশ্চিতভাবেই আছে।  এদেশে ক্ষমতাবানের  সন্তান হলে  সাচ্চা লোক, ক্ষমতাহীনের ছেলে-মেয়ে হলে  অসম্ভব নিম্ন মানের লোক।

 বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের অধীনতা কিম্বা আয়ত্বে থাকাটা অনেকটা স্বেচ্ছায়। জবরদস্তিমূলক এটা বলা যাবে না। কারণ  সরকার জবরদস্তি করে না, শুধু ফিতা ধরে টান দেয়, মাহফুজ আনাম, মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান হওয়ার চেয়ে বউ পোলাপাইন নিয়ে টিকে থাকাই শ্রেয়।

ফাঁকে ডিজিটাল স্বাধীনতা, সেলফি তোলেন, জ্ঞান বিতরণ করেন এবং  সরকারি প্রতিপক্ষের গুষ্টি উদ্ধার করেন, আপনার চে আর প্রগতিশীল  কে হতে পারে! জনাব ভালো থাকেন, প্রেস ফ্রিডম ডে'র শুভেচ্ছা!