'আমাকে যেন ভুলে না যাও...’







দিলখোলা বুলবুল ভাই। হাসতেন প্রাণখুলে। কথা বলতেন মন খুলে। সুরকার হিসাবে নন্দিত। গাইতেনও। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল- বাংলাগানের কিংবদন্তীর সুরকার।  তাঁর সাথে প্রথম সরাসরি আলাপ পরিচয় ২০০৫  সালে। ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁছে বাংলাদেশ- শিরোনামে একটি প্রতিযোগিতায় তিনি বিচারক ছিলেন। সে কারণেই তার সাথে আলাপ হতো বেশি।

প্রথমবারের প্রতিযোগিতার অডিশন রাউন্ড কভার করতে ঢাকার কয়েকজন সহকর্মীর সাথে আমিও  ঢাকার বাইরে  চট্টগ্রাম, খুলনা, ফরিদপুর, সিলেট, ময়নসিংহ-সহ বেশ কয়েকটি জায়গা গিয়েছিলাম। নিউজের খাতিরেই বুলবুল ভাইয়ের সাথে কথা হতো।  অডিশন রাউন্ড কভার শেষে তার সাথে আলাপ-আড্ডা জমতো। তাঁর সাথে সন্তান সামিরওথাকত। সে সময় সামির শিশু। অডিশন নেয়ার ফাঁকে বুলবুল ভাই সামিরকে বেশ সময়ও দিতেন। 

নতুন এক বুলবুল ভাইকে আবিষ্কার করি সে সময়। সম্পর্কটা খুব পোক্ত না হলেও  টেকসই ছিল। ২০০৫ থেকে টানা প্রতিযোগিতাটি কভার করেছি। একই প্রতিযোগিতার রিপোর্টের খাতিরে তার সাথে বাবার বার নানা প্রসঙ্গে আলাপ হতো। সাঁইজির গানের ভক্ত ছিলেন বুলবুল ভাই। শেকড়ের গানের প্রতি তাঁর প্রচণ্ড টান ছিল। সুযোগ পেলে পুরনো দিনের গান, গানের আয়োজনের প্রসঙ্গ তুলতেন। 

২০১১ সালের পর খবরের কাগজে কর্মস্থল বদলের পর গান নিয়ে খুব একটা আলোচনা হতো না।  এর মধ্যে গত বছর জানলাম বুলবুল ভাই অসুস্থ।  হৃদরোগে আক্রান্ত গানের বুলবুল। মনটা খারাপ হয়েছিল, হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়েই ফিরেছিলেন তিনি,সে খবরও ছিল। কিন্তু শেষতক তিনি  আমাদের ছেড়েই গেলেন।

সব মানুষ মারা যাবে। এটাই সৃষ্টিকর্তার নিয়ম। তবুও বুলবুল ভাইদের এত দ্রুত চলে যাওয়াটা কষ্ট দিচ্ছে। সমাজে গানের নামে যাচ্ছে তাইয়ের সময়েও বুলবুল ভাই তাঁর নীতিতে  অটল ছিলেন। কথিত আধুনিকতার জোয়ারে গা ভাসাননি। এটা কম কথা নয়। সামাজিক মাধ্যমে 'বুস্ট' করে কেনা জনপ্রিয়তার সময়ও তিনি স্বতন্ত্র ছিলেন। বলেছেন, গানের কথা, ভালো গান করার জন্য নতুনদের প্রেরণা জুগিয়েছেন সব সময়।

হৃদরোগ রোগ তাঁকে ছাড়োনি। কাজেও তিনি অনুপুস্থিত ।  ব্যস্ত নগরে তাই হয়ত অনেকেই তারঁ খবর নেননি। সে জন্যই হয়ত ২ জানুয়ারি তিনি ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করেছেন, লিখেছেন 'আমাকে যেন ভুলে না যাও... তাই একটা ছবি পোস্ট করে মুখটা মনে করিয়ে দিলাম।’ -----কী নির্মম সত্য বুলবুল ভাই, আমাদের মনে করিয়ে দেয়ার দিনকুড়ি পরে তিনি নিজেই আমাদের ভুলে চলে গেলেন। পরকালীন জীবন কল্যাণকর হোক বুলবুল ভাই। 

কিংবদন্তীর মৃত্যু নেই। এ কেবল লোকান্তর। পরকালীন জীবন মঙ্গলময় হোক প্রিয় আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। আপনার সঙ্গীত, সুর, বাংলা গানের সমৃদ্ধি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দেবে-।