ফরীদিরা হারিয়ে যায়; আলোচনার বাইরে থাকে। এটাই যেনো রীতি। অথচ হুমায়ূন ফরীদি মারা গেলেন মাত্র বছর চার আগে। ২০১২ সালের ফাগুনের প্রথম দিনে।
বাংলা সিনামা, মঞ্চ ও টিভি নাটকে তার যে অবদান; সেটি আমরা মনে করতে চাই না। অথবা চাই কিন্তু সময় পাই না। আমরা কেবল আমাদের শিল্পী, নির্মাতাদের অথর্ব বলে গালি দিই। কিন্তু যা্রা 'থর্ব' কিম্বা গুণি ছিলেন তারা মরে গেলে, বুড়িয়ে গেলে আমরা তাদের ভুলে যাই।
ফরিদী ভাইয়ের সাথে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল। কথা হয়েছিল একবার; বেশি কথা বলা চলে। ধানমণ্ডির হারমনি স্পা'তে একটা নাটকের শুটিং ওপেন হবে; সেটা কভার করতে গেছিলাম।
অনেক লোকজন আসবেন; বিশেষ করে শিল্পীরা-যারা ব্যস্ত। ফরিদী ভাই আগেই এসে বসেছিলেন। সে সুবাদে একটু একটু করেআলাপ। একেবারে সাদাসিদে ফরীদি। পায়ে চটি স্যান্ডেল, গায়ে হাফ শার্ট আর নরমাল প্যান্ট চাপিয়ে চলে এসেছেন।
আমিও একই রকম সাজ পছন্দ করি; এ ধরণের সাজের লোকদের সমস্যা-যারা এদের চেনেন না; তারা মনে করে কামলা গোছের কোনো লোক এসে পড়েছেন বুঝি। আর নব্য শহুরে মানুষের কাছে এটা এক ধরণের অসভ্যতাও বটে।
ফরীদি- বাংলাদেশের নাটকের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া মানুষদের একজন। সেলিম আল দীন, আসকার ইবনে শাইখ , আবদুল্লাহ আল মামুনরা যখন স্বাধীনতা উত্তরকারে বাংলাদেশের নাটককে টেনে তুলছিলেন- সে সময় ফরীদিদের আবির্ভাব। অর্থনীতিতে পড়েও নাটকের জন্য - অভিনয়কে তিনি আপন করে নিয়েছিলেন।
হুমায়ূন ফরিদী ---হারমিন স্পা'য় সেদিন আমাকে বলেছিলেন- তুমি যে কাজ করো; সেটাকে ভালো না বাসলে বড় হতে পারবে না।
এখন আমার মনে হচ্ছে আমরা যদি একজন মানুষের ভালোবেসে করে যাওয়া কাজের মূল্যায়ন করতে না পারি; তাহলে সামনের দিনে আরো অনেক ফরীদি হবার কথা থাকলেও হবে না।
উপমহাদেশ থেকে শিল্পী-যন্ত্রী-নাচিয়ে-অভিনেতা-অভিনেত্রী এনে আমাদের চলতে হবে। ফাইভ স্টার হোটেল থেকে জন্মদিনের পার্টিতে যে রকম এখন তারা আসছেন। সামনে তাদের আগমন হয়তো এতটাই হবে যে, আমাদের নিজের বলে আর কিছু থাকবে না।
ফরীদি ভাই- ভালো থাকুন। আপনার আত্মা অনন্ত যাত্রায় শান্তিতে থাকুক।