সুখ অসুখের গল্প -২ :: ভিসা তেলেসমাতি!





ভিসা পাওয়ার উপায় নিয়ে ভাবছিলাম। জীবনে এতবার ইনডিয়া গেছি, কখনো ভিসা নিয়ে ভাবিনি। এবারই ভাবনা।  কারণ একজন ভিসা এজেন্ট আমাদের জানালেন , ভিসাপ্রার্থীর দাঁড়ি আর সৌদি আরবের ভিসা থাকাটা মহাপাপ। গো হত্যার চেও বড় পাপ। বিষয়টা মাথায় ধরলো না।

মোডি কাকু ও মনমোহন দাদার মুখেও কিন্তু দাড়ি আছে।  মোডি কাকুর দাড়ি আবার বঙ্গীয় হুজুরদের স্টাইলে। তাহলে সমস্যা হবে কেন? প্রথমে বিষয়টাকে মনে হয়েছে ভিসা এজেন্টের চালাকি। কিন্তু বাস্তবে এর প্রমাণও মিলল।  শঙ্করে একজন ভিসা এজেন্টকে ফরম পূরণ করে সব কাগজপত্র সমেত প্রদা্ন করলাম।  সময় নিয়েছে ৫ দিন। টাকা নিবে দুটি ভিসার জন্য ১২ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু মিস্টার বলদ তিন তিন ঘুরিয়ে বললেন, আপনাকেই জমা দিতে হবে, আপনি  পাসপোর্ট ও ফরম জমা দিয়ে আমাদের  ডেলিভারি স্লিপ দিলে আমরা ভিসা করিয়ে দেব।

আমার মনে হলো কাজটা যদি আমি নিজেই করি তাহলে এজেন্ট কেন?

 প্রথম দিন আমাদের অফিস সহকারি শাহ আলমকে বললাম, তোমার বাসা যেহেতু  বাড্ডা , সকাল সকাল এসে লাইনে খাড়াও। আমি এসে জয়েন দেবো।  শাহ  আলম একজন সিরিয়াল ভাড়াটের নাম্বার দিলো। ৫০০ টাকা দিয়ে সিরিয়াল দিয়ে প্রবেশ করলাম।  ভেতরে গিয়ে একজন বললেন, শুধু আমার পাসপোর্টে ডলার এনডোরস করলে হবে না। আব্বারটাও করতে হবে। ভেতরেই স্টেট ব্যাংক অব ইনডিয়ার একজন লোক বসেন।  তিনি বাংলাদেশে মোডি কাকুর প্রতিনিধি। তার সাথে দেখা করতে গেলে সবাইকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন।

আমাকে এনডোরসমেন্টের কথা শুনে বসতে বললেন। এর মধ্যে ভিসা না হওয়া দু একজন আসছেন। একজন বয়ষ্ক লোক আসলেন। তাঁকেও ধেই ধেই করে তাড়ালেন। যেন কুকুর তাড়াচ্ছেন। তবুও...

জানালাম আমার পাসপোর্টে বহু ডলার এনডোরস করা আছে, ব্যাংক স্টেম্যান্টও আছে। তারপরেও আব্বার পাসপোর্টে এনডোরস করতে হবে? বললেন, হবে। একটা ফরম পূরণ করতে হবে। বললাম,  আব্বার সই তো আমি দিতে পারবো। তিনি আমাকে একটা সাদা কাগজ আর কলম দিলেন, প্রাকটিস করার জন্য।  অপরাগতা প্রকাশ করায় বিরক্ত হয়ে বললেন, আপনার যতি ক্রেডিট কার্ড থাকে তাহলে সেটি নিজের জন্য, আর ব্যাংক স্ট্যাটম্যান্ট আব্বার পাসপোর্টের সাথে জমা দিতে ।  তাই দিতে গেলাম।

এবার ফরম চেক করা 'মহারাজ' ভুল বের করলেন। প্রিভিয়াস ন্যাশনালিটি লিখিনি। এটা কি করবেন? বললাম, কি করতে হবে বলুন। বললেন, প্রতি ফরমে ৩০০ টাকা করে জরিমানা দিয়ে জমা দিন। তা্ই করলাম। বেরিয়ে এসে ভাবছিলাম ভিসাটা হয়ে যাবে। ফি দিলাম আবার  জরিমানাও। কিন্তু ৭২ ঘণ্টা পরে এম্বাসির দরজায় গিয়ে দেখলাম ভিসা হয়নি।


 কেন হয়নি? কারণ দেখাতে চান না।
 আবার সেই স্টেট ব্যাংক অব ইনডিয়ার  কর্মকর্তার কাছে গেলাম, কারণ জানতে। তিনি শুধালেন, ওহে বঙ্গীয় মফিজ, চারবার পর্যন্ত ফেরৎ যাইতে পারে! ব্যাপার না। আবার জমা দাও।


 দ্বিতীয়বার আবার জমা করলাম।  এবার আবাবার পাসপোর্টেও এনপে=ডারস করলাম ব্যাঙ্ক অব ষিলন থেকে।  সে কাগজ সমেত জমা দিলাম।
 আবারো ফেরৎ। এবার জানতে পারলাম আব্বার দাড়ি আর আমার সৌদি আরবের ভিসাই সমস্যা!  কস কি মমিন অবস্থা। মধ্যপ্রাচ্যে শেখদের '...চুষে' চলা ইনডিয়ানদের কাছে সৌ্দির ভিসা সমস্যা!

 মেনে নিলাম। আব্বাকে বল্লাম সিঙ্গাপুর নয়, থাইল্যান্ড! কিন্তু ইনডিয়া না হলে আব্বা যাবেন না।

আব্বার শরীর খারাপ হতে শুরু করেছে।  তাই আবার ঢাকায় নিউরোলজীর ডাক্তার আজহারুল হক সরকারকে দেখানো হলাে। সাকুল্যে ১১ খান ওষুধ লিখেছেন জনাব।  সে ওষুধ আব্বা খাওয়াও শুরু করলেন। আব্বাকে ঢাকায় বসিয়ে রেখে  এক দালালের শরণাপন্ন হলাম। ১৩ হাজার ২০০ টাকা রফা। সেও ফেল। টাকা নিয়ে পালালো। এ সবের মধ্যে অগ্রজ সম্বাদিক মুজিব ভাই বললেন, জমা দিয়ে মাসুদ ভাইকে জানাতে। তিনি  সহযোগিতার হাত বাড়ালেন।

তৃতীয়বারের মত পাসপোর্ট জমা দিয়ে ভিসা হাতে পেলাম জুনের প্রথম সপ্তহে।  মাসুদ ভাইকে অসীম কৃতজ্ঞতা। আমরা মানবজমিনের বড় ভাই। বহু পুরনো কূটনৈতিক রিপোর্টার।

ভিসা পাওয়ার পর আব্বাকে জানালাম, বললেন ঈদের পরে যাবেন।  তবে আব্বার শরীর খারাপ হতে থাকলে রোজার মধ্যে আমরা উড়েছি।









সুখ অসুখের গল্প-১ :: বঙ্গীয় চিকিৎসকরা সবাই সুলতান সুলেমান!




' আব্বাকে চিকৎিসার জন্য ইনডিয়া নিতে চাই, কই নিমু?'
এমন প্রশ্ন বহুজনকে করেছি। ইন্টারনেটে গেঁটে অনেক তথ্য হাসিল করেছি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে  সহায়তা করেছে দিল্লি এপোলো। তাদের চিকিৎসকের ডেটাবেস এবং  সহযোগিতা আমাকে সেখানে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

এপোলোর উপরে আস্থাহীন ছিলাম আমি। তবে চেন্নাই এপোলোর একটা মেইল আমার ধারণা বদলে দিলো। তারা আব্বার এমআরআই রিপোর্ট দেখে জানালো, এ চিকিৎসার জন্য এ মুহুর্তে তাদের ডাক্তার নেই। সত্যি অভিভুত হলাম। এ রকম রিপ্লে আর কোথা থেকে পাইনি।

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল মেডিকেল,  থাইল্যান্ডের মিশনারি হসপিটালেও মেইল করেছিলাম। রিপ্লে ভালো ছিল। চেন্নাই এপোলো গিয়েছিলেন সহকর্মী সৌরভ দা' তার কিছু পরামর্শও পেলাম।  আব্বা সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ড যেতে অনিচ্ছুক।  তাই বাধ্য হয়ে ইনডিয়া যাওয়ার আয়োজন।

 চিকিৎসার ব্যাপারে আব্বা একটু ভিন্ন। তার  সমস্যা, কেন তিনি এ সব ওষুধ খাবেন তা তাঁকে জানতে হবে। বাংলাদেশের ডাক্তাররা এতে প্রচণ্ড রকমের বিরক্ত হন। ল্যাব এইডের নিউরোলজির ডাক্তার সিরাজুল হক এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তার সিরিয়ার দেয়া  'মফিজ'রকে দেখিয়ে দিলেন।

আব্বা এতে প্রচণ্ড বিরক্ত হয়েছেন।

মার্চ মাসে তাই সিদ্ধান্ত , আব্বা চিকিৎসার জন্য ভারত যাবেন। দু কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হযেছে। এক. তাঁর দুজন চিকিৎসক একই এমআরআই রিপোর্ট দেখে দু রকম পরামর্শ দিয়েছেন। দুই. চিকিৎসকরা সবাই সুলতান সুলেমান।  তাদের কাজকর্ম করতে হয় আর্দালিদের। এটা আব্বা পছন্দ করেননি।

তাই খোঁজ খবর নিচ্ছিলাম। সবাই সিএমসি, ভ্যালোরের পরামর্শ দিলেন।  ইন্টারনেটে খোঁজ খবর, এসি নেইলসনের জরিপ  এসব দেখে আমরা সিমএসিকে পছন্দও করলাম। কিন্তু সিএমসি আমাদের রিপ্লে করলো কমপক্ষে  তিন সপ্তাহ সময় নিয়ে যেতে হবে। এত সময় আব্বার পক্ষে দেওয়া অসম্ভব। আমারো একই হাল।

 সুতরাং এপোলো বেস্ট অপশন।

প্রক্রিয়া শুরুর আগে সেখানে মেইল পাঠানো হলো। তারা  রিপোর্ট দেখে জানালেন, ৫ থেকে ৭ দিনের জন্য যেতে হবে। তবে আমরা হাতে আরো ২ দিন বেশি সময় নিয়ে ৯ দিনের জন্য উড়বো বলে প্রস্তুতি শুরু করলাম।

আব্বার পাসপোর্ট  করতে দাঁড়ালেন ফেব্রুয়ারিতে। হাতে পেলেন মার্চে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ভিসার জন্য সব রেডি করেছি, দেখি আমার পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাসের চেয়ে দিন দশেক কম আছে।  এবার নিজের পাসপোর্ট রিনিউ করতে দৌড়ালাম। ৬ হাজার  টাক সাথে ১৫ শতাংশ আবুল মাল দিয়ে  পাসপোর্ট রিনিউ করে আবেদন করতে যাবো, তখন বিভ্রান্তি শুরু।


ফেসবুক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট ও পোস্ট প্রাইভেসি নির্ধারণে সতর্ক থাকুন।


একটা অপহরণ চক্র সম্পর্কে আমার এক বন্ধু জানালো। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এ সৈনিক অপহৃত হয়েছিল বছর খানেক আগে। যারা তাকে অপহরণ করেছে, তার কাছে পণ আদায় করেছে, তাকে হেনস্তা করেছে, তাদের কয়েকজনের লিঙ্ক আমাকে পাঠালো ইনবক্সে।

অপহরণকারী চক্রের কয়েকজনের প্রোফাইলে গিয়ে দেখলাম-- আমার বড়ভাই, বন্ধু ও অনুজদের অনেকেই তাদের মিউচুয়াল ফ্রেন্ড। এ সব মিউচুয়াল ফ্রেন্ডের অনেকেই আমার ক্যাম্পাস রিপোর্টিংয়ের সময়কার বিরোধীদল, বর্তমানে সরকার দলের; আর সে সময়কার সরকারি দল বর্তমানের বিরোধী দলের সুহৃদ।

আঁতকে উঠলাম। আমি নিশ্চিত এঁরা তাদের চেনেন না। না চিনেই এরা তাদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছেন। কারণ এদের ওয়ালে অনেক অমৃত বচন-পোস্ট আছে।

প্রিয় সুহৃদ
দয়া করে অচেনা-অজানা কারো  ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করবেন না। ছবি পোস্টে প্রাইভেসি ঠিক করে নিন। সতর্ক থাকুন।  রাস্তাঘাটে সময় বাঁচানোর জন্য প্রাইভেট বা মাইক্রোবাসে উঠে পড়বেন না।  পথ চলতে চলতে ফোন টিপাটিপির জন্য নিরিবিলি জায়গায় যাবেন না্। সতর্ক থাকুন, নিরাপদে থাকুন। শুভ কাকমনা।