অভূতপূর্ব কোন ঘটনা এখন আর আমাদের আলোড়িত করে না। একটা ভয় চেপে ধরে। কালো 'ত্যানা' দিয়ে চোখ পেছানো লোকের ভয়। ভয় 'রাজাকার' তকমার। এ সব উপেক্ষা করে কিশোররা রাস্তায় যে নেমেছে, তাদের সাহসের কাছে মাথা নুয়ে আসে। তাদের বাবা মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা। কারণ সন্তান সবার কাছেই শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। সেই শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি-সন্তানদের অন্যায় নীরবে সয়ে যাওয়ার বদলে প্রতিবাদে ফেটে পড়ায় বাধা দেননি। এমন সবল হৃদয়ের মানুষরাই আমাদের এখন প্রেরণা।
দুর্ভোগে অনেকে পড়েছেন। আমিও পড়েছি। আমার সন্তানরাও। তারপরে এ আন্দোলন মাসের পর মাস চললেও কসম, আমি বিরক্ত হবো না। অন্যায্য দাবি তো তারা করছে না। সবার জন্য, সব দলে মতের মানুষের জন্যই তারা বলছে- রাস্তা নিরাপদ হোক। সেটি চালকদের জন্যও দরকার। যারা মানুষ পিষে মারে। সে সব পিশাচ নরকের কীটদের জন্যও নিরাপদ রাস্তা দরকার, যারা মানুষ মেরে ফেলা কীটদের সুরক্ষা করে- তাদের জন্যও।
আমার বছর আঠারোর নগরজীবনে দেখা সবচেয়ে সুশৃঙ্খল, পরিচ্ছন্ন আন্দোলন যদি বলি, তাহলে এ কিশোরদের আন্দোলন। সিরাতুল মুসতাকিমে কোন চালকের ভয় নাই। মানে লাইসেন্স আছে, গাড়ি চালান। উল্টো রাস্তায় যাচ্ছেন না। তাহলে আপনাকে কেউ ঠেকাবে না। এ রকম নিয়ম তো সরকারই বাস্তবায়ন করতে পারেনি। অথচ সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য রাষ্ট্র কি-না করেছে।
দু'টো কিশোর-কিশোরীকে 'জাবালে নূর' বাস পিষে মেরে ফেলার পর বহু কুৎসিত মানুষের মন্তব্য আমরা শুনেছি। সন্তানসম বাচ্চারা রাস্তায় নেমে আসার পর কোন কোন ইশকুল কলেজ অভিভাবকদের চাপে রেখেছে এমন খবরও পড়েছি। তবুও এসব বাচ্চারা রাস্তায় আছে। একেবারেই ভিন্ন এক মডেলে। অনন্য সে মডেল। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৭ বছরের সবচেয়ে বড় যে সব অর্জন, তার মধ্যে এ সব কিশোরের আন্দোলন অনন্য। ইতিহাস যদি পেশি শক্তির তল্পিবাহক না হয়, তাহলে এ আন্দোলন তার নিজ মহিমায় উজ্জ্বল থাকবে।
এ কিশোর-কিশোরীরা, যারা প্রতিদিন মায়ের হাতে বানানো টিফিন আর বাসার ফুটানো পানি বোতল ভরে ইশকুল-কলেজে আসে- সে সব বাচ্চারা রাস্তায়, বৃষ্টিতে ভিজে 'নিরাপদ সড়ক' আন্দোলন করছে। এর বাইরে কিছু না। তবুও লাঠিঅলারা তাদের উপর লাঠি চার্জ করেছে। বাচ্চাদের রক্তমাখা শার্টে আর মুখের ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরেছে।
অথচ এ বাচ্চারা একটি স্থায়ী সঙ্কট সমাধানের জন্য রাষ্ট্রের প্রতি তাদের নিবেদন জানাচ্ছে। এখানে সক্ষম রাজনীতি, অক্ষম রাজনীতির কোনটাই নাই। এ সব বাচ্চারা কোন দলেরও নয়। তবুও এরা কটাক্ষের মধ্যে পড়ছে।
তবুও অক্ষম এই যুবাদের ক্ষমা করো তোমরা। নিরাপদ সড়কের আন্দোলন থেকে পেছনে ফিরো না। তোমাদের জয় হোক বা না হোক ইতিহাস তোমাদের স্মরণ করবে ভালোবাসায়। শুভ হোক নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন।