গ্রাফ সূত্র: প্রথম আলো
জগতে এত লোক থাকতে থাকলে আমাকেই কেন লিখতে হবে? এ প্রশ্ন আমার পরিমণ্ডলের মানুষের! কিন্তু নিজেকে আটকাতে পারি না। তাই লিখছি!
সকালে কানটা গরম হয়ে গেলো-- -কারণ একটা খবর। সাত বছরে আত্মসাৎ ৩০ হাজার কোটি টাকা। বিচার হয়নি। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলি- এ টাকা কেউ কারো পকেট থেকে দেবেন না, রাষ্ট্রের এ জনগণ যারা কালো ধোঁয়া গিলে, উটের পেছনে ছুটে, থালা বাসন পরিষ্কার করে-- তাদের উপর দিয়েই যাবে।
আগে অবশ্য এ সব বুঝতাম না। এখন বুঝি, রাষ্ট্র মাথা পিছু আয়ের হিসাব দ্যায়, কিন্তু ঋণের হিসাব দেয় না। দিনে দিনে শুনি আমাদের শির দাঁড়া খাড়া হচ্ছে, সে খাড়া হওয়া শির দাঁড়া যে লক হয়ে যাচ্ছে , সেটা বোধ করি আমরা বুঝতে শুরু করেছি। তিরিশ হাজার টাকা তো দৃশ্যমান, আরো কত হাজার টাকা গিললো লুটেরারা সেটির হিসাব নাই। অথবা আাছে, আমি-আমরা জানি না।
মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে বাংলাদেশের বিকাশ, কিম্বা মর্জিনা ওরফে কাজের বেটি যে আমাদের এশিয়ান অর্থণীতির উদিয়মান টাইগার বলতেন--- প্রথম দিকে আমি এটা বিশ্বাস করতাম না। বিশ্বাস করুণ আসলেই করতাম না। কারণ আমার জীবন যাত্রার মান বিশ্ববিদ্যালয় হল লাইফে যা ছিল, তার চে কিঞ্চতি বেড়েছে। কোনো কোন ক্ষেত্রে কমেছেও, কিন্তু দেশ মধ্যম আয়ে পৌঁছে গেছে, এটা আমার কাছে মনে হয়নি, কারণ এখনো তো নগরে যৌনকর্মীর আয়ের পঞ্চাশ শতাংশ রাজনৈতিক নেতা আর শৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের পকেটে যায়।
পকেটে ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে মানুষকে হয়রানি করার খবর তো পড়েছি ক'দিন আগেও! ক'টা টাকার জন্য আমাদের নিরাপতা্তা রক্ষীরা এ হয়রানিটা করে থাকেন বলে অভিযোগ! সেখানে এটা আমার বিশ্বাস হবে কেমনে?
তবে এখন বিশ্বাস হচ্ছে, মাত্র তিরিশ হাজার কোটি টাকা লুটেছে। এ আর এমন কি টাকা। আমরা তো পদ্মা সেতু বানাচ্ছি। বছরের পর বছর ধরে আমাদের তৈরি হচ্ছে ফ্লাইওভার। ঈদের সময় মহাসড়ক ঠিক করার জন্য সেটি কসরত-হরিলুট, বর্ষা মওসুমে রাস্তায় কেটে আবার ঢালাই করি এবং গলিপথ চিরে ঢুকাচ্ছি প্লাস্টিকের পাইপ!
উড়াল সেতুর নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে, নকশা বদল হচ্ছে, নিম্ন মানের মাল জমা হচ্ছে, লোহা লক্কর পড়ে মানুষের মগজ ছিটকে বেরিয়ে যাচ্ছে--- আমাদের বুকে বালি বাসা বাঁধছে, ইনহেলা আর অ্যাজমার ওষুধ কিনতে কিনতে মানুষের কষ্ট আরো বাড়ছে--- তবুও জীবন মান নির্ধারণের সব সূচেক নাকি আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। শুনে শান্তি!
রাষ্ট্র কে পরিচালনা করবে, বা কারা কি করবে এটা একান্ত উপরস্তরের ভাবনা। আমরা যারা নিঁচু স্তরে আছি, তাদের শঙ্কা হয়রানি নিয়ে। আমরা হয়রানির শিকার হতে পারি না! তবুও তাে তাই হচ্ছে। বাড়ছে মূল্য সংযোগ করের আওতা, সম্পূরক শুল্ক, আয় কর। কমছে জীবনের দাম। ২০ হাজার টাকায় তো শেষ পর্যন্ত কুমিল্লা জেলা প্রশাসন জীবনের মূল্য নির্ধারণ করেছে, তনুর পরিবারকে একটা চেক দিয়েছে। আর ধর্ষণের জন্য এক খণ্ড জমি।
এত লুটের ভিড়ে জীবনটাই সবচে সস্তা। সব মানুষের জীবনই সস্তা! আজ যারা ক্ষমতায় আছেন, যারা ক্ষমতার বাইরে আছেন, সবার কাছেই গরিব মানুষের , অসহায় মানুষের , অরাজতৈকি মানুষের জীবনের মূল্য তু্চ্ছ। একটা জীবন কেড়ে নেয়ার পর যে ভাবে মানুষকে দ্বিধা-বিভক্ত দেখি। তাতে চোখ বুঝলেই এনিমেল প্লানেটের সে সব হিংস্র সিরিজের মত মনে হয়, যেখানে জন্তুরা খবুলে তুলছে অন্য জন্তুর শরীর।
মাঝে মাঝে মনে হয়--- আমি উপযুক্ত নই এ উন্নতির সাথে তাল মেলাতে! আমাকে পালাতে হবে। অবশ্যই! কিন্তু কোথায় পালাবো!। আমি যে এ দেশটাকে ভালোবাসি । আমাকে এখানে থাকতে হবে।।।