সাত মার্চ, বন্দুকযুদ্ধ ও একজন বঙ্গবন্ধু

টেপ রিকর্ডার বাজিয়ে আমি অবাক এবং বিস্মাভিভূত হয়ে এক মহান রাজনীতিকের দরাজ কণ্ঠের বক্তব্য শুনেছি। তিনি বঙ্গবন্ধু ।  তার অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দুরদর্শিতার কারণে তার প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা।

জাতি হিসাবে আমাদের অহঙ্কার তার মত একজন রাজনীতিবিদের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন দেশ রচনার সুযোগ আমরা পেয়েছি।

কিন্তু আমরা কি তার কথা গুলো অনুসরণ করি। তিনি সারাজীবন যা আমাদের বলেছেন, তার সবই অনুসরণযোগ্য।  এটা দল হিসাবে কেবল আম্লীগ চর্চা করবে তা নয়, সবারই এর চর্চা থাকাটা জরুরী।
আজ ৭ মার্চ। রাজধাণীর যে প্রান্তেই যাচ্ছিলাম, সেখানে কানে আসছিল... ভায়েরা আমার..। উদার দিল এক মহান নেতার  ভালোবাসার সম্বোধন।

স্বাধীনতা অর্জনের এতগুলো বছর পরে যখন আমরা তার বক্তব্য শুনছি, উদ্দীপ্ত হচ্ছি। সে সময় তার নিজের দলের সরকার ক্ষমতায়। কিন্তু তারা দেশের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে, কঠিন ও ভয়াবহভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।

শাহবাগ থেকে বাসায় ফিরছিলাম, কানে বাজছিলো বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা... 'কী পেলাম আমরা? জামার পয়সা দিয়ে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্র“র আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরীব-দুঃখী নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে- তার বুকের ওপরে হচ্ছে গুলি। আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু- আমরা বাঙালীরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি তখনই তারা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ' (বক্তৃতার শব্দমালা ঠিক রাখার জন্য ইউকির হেল্প নিছি) ।

কথাটা খুবই প্রাসঙ্গিক এবং এখনো সত্য। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বন্দুকযুদ্ধ চলছে। আমার মনে হয় সরকার একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারেন- সেটি হলো কাকে বাঁচিয়ে রাখা হবে, আর কাকে এরশাদের মত  মানসিকভাবে  বিপর্যস্ত করতে হবে আর কাদের মেরে ফেলতে হবে তার জণ্য মাবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান  ড. মিজান কিম্বা সিইসি রকিবের জন্য  উচ্চ স্তরের  গৃহপালিত লোক দিয়ে একটা কমিশন করতে পারেন। তারা চূড়ান্ত রিপোর্ট বানানোর পর  তা দ্রুত কার্যকর করে জাতিকে আতঙ্ক মুক্ত করবেন!

তাহলে যেটা হয় তাহলো আইন ব্যবসায়ীদের থাবা আর  বিচারপতিদের পেছনে সরকারি খরচা বাঁচে। এত টাই হয়তো বাঁচবে যে, একটা পদ্মা সেতু হতে পারে!!!

বঙ্গবন্ধু আমাদের ক্ষমা করুণ, আমরা আপনার কথামালা চর্চা করতে পারছি না।  পারবো বলেও মনে হয় না।  আমরা এখন ক্ষমতায় অন্ধ! ক্ষমা করুণ বঙ্গবন্ধু।

ফেসবুক: কামকলা ও কামাগুন!

ফেসবুকের পাতায় অনেকের অনেক রকম ছবি দেখি। এক সময় বাংলা সিনেমার পোস্টমর্টেম লিখতাম। এখন সেটা করা হয় না। ফেসবুকের ছবি নিয়া ক'টা কথা বাধ্য হয়ে লিখছি।  বিষয়টা আমার কাছে সুরুচির মনে হয়নি বলে বলা।

সাধারণত কামকলা, কামাগুন এবং নারীর ঝলসানো রূপের বন্দনা করা কবি-সাহিত্যিকরে অভাব নাই। তার ওপর এ সব নিয়ে অনেক পুস্তক রচিত হয়েছে।

আমার পড়া এ রকম পুস্তিকার মধ্যে সবচেয়ে নোংরা  গল্প হলো-সৈয়দ শাসুল হকের বাজার সুন্দুরী। মহান মুক্তিযুদ্ধের ফাঁকে ফাঁকে যোদ্ধাদের হাতে পাওয়া এক কিশোরীকে নিয়ে সেই গল্প। নোংরা মানোবৃত্তির এ গল্পটা শিল্পগুণ বর্জিত।

তবে একই লেখকের বাবর আলি খারাপ না। যদিও বাবর আলা নাকি সৈয়দ হক নিজেই, এমন অভিযোগ আমার নয়, প্রমাণ সহ হাজির করেছিলেন তসলিমা নাসরীন। তার একটা বইয়ে।

কামকলা ও কামাগুন নিয়ে আল মাহমুদও কম যান না। তার জলবেশ্যা এবং পানকৌড়ির রক্ত মুগ্ধ করার মত। তবে পাতার শিহরণ আমাকে টানতে পারেনি। সেখানে গৃহকর্মীর শরেরে বর্ণণাটা এক্কেবারেই নোংরা!

এ সব কথা কেন বলছি, বলছি আগে গল্পে পড়তাম, সিনেমায় দেখতাম, এখন ফেসবুকে দেখি।   অনেকের ছবি দেখা যায়। এ সব ছবি কোন অংশে বাংলা সিনেমার  অশ্লীলতার অভিযোগে অভিযুক্ত  নায়িকা বা নায়কদের চেয়ে কম নয়।

মাসখানেক আগে আমার  হোমে একটা পিকচার হাজির,  তাকে আমি চিনি। তিনি একজন রক্ষনশীল চিকিৎসক। কিন্তু থাইল্যান্ডে গিয়ে হাফ প্যান্ট পরে ছবি তুলে সেটি আবার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।  একই ভদ্র-বিবাহিত বালিকার  আরেকটি ছবি দেখলাম তার বর-প্রেমিককে চুমু খাচ্ছেন। সেই ছবি পোস্ট করতে।

তা না হয় মানলাম, তিনি কর্পোরেট চিকিৎসক, বড় লোকের কন্যা, তাদের কালচারটা এমন হয়ে থাকতে পারে।

কিন্তু স্কুৃল মাস্টারের কন্যার পিঠ উদোম করা ছবিটাও কি মানতে হবে। হিন্দি সিনেমার নায়িকার মত পোস দেয়া এমন ছবি না হয় মানলামই। কলেজ পড়ুয়া মেয়ের বয় ফ্রেন্ডের সাথে রাত পোশাকের ছবিটিও ভালো লাগবে? কিম্বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকার গলার হার, কানের দুল, বাহু কিম্বা আরো কিছুৃ দেখানোর প্রবণতা কি মানতে হবে!

তবে এ সব অভ্যস্ততার ব্যাপার বলে অনেকে মানেন। মানতে চান। আবার অনেকে এ সবকে ভয় পান। এটা নিয়ে কথা বললে, পাছে লোকে জামায়াত বা হেফাজত বলে। আমার সেই ভয় টা নাই।

আমি ব্যাক্তিগতভাবে  কিছু বিষয় গোপন রাখার পক্ষে, অন্তত ফেসবুকের মত বাজারে তোলার পক্ষে নই। এটা আমি না চাইলেও উঠবে। তবে যারা ওঠান তাদের চোখে যদি লেকাটা পড়ে এবং তারা সচেতন হন তাহলে  খুবই কুশি হবো।

আমার খুশি হবার চেয়ে আপনার নিরাপত্তাটা জরুরী।  ফেসবুকে বাংলাদেশের মেয়েদের নিয়ে মাঝে মধ্যে কিছু পেজ চোখে পড়ে, যেখানে ফেসবুকে এ সব ছবি  আপ করা হয়, বিকৃত বর্ণণায়।

কেউ না খেয়ে নেই, কিন্তু কীভাবে খাচ্ছেন!

'না খেয়ে কেউ থাকছে না।' কথাটা অনেকদিন ধরে শুনছি। কিন্তু কীভাবে খাচ্ছে মানুষ। সে খবরটা কি আমরা কেউ নিয়ে থাকি! নাগরিক হিসাবে আমরা আমাদের যাপিত জীবনের ক্ষুধার কষ্ট অনেকটা কমিয়ে এনেছি। এটা নিয়ে দ্বিমত করার কিছু নাই।
এর কৃতিত্বটা কার। সরকারের? এনজিও এর। আমি এটা মানতে চাইনি কখনো, এখনো না। আমাদের দেশের মানুষ নিজেদের চেষ্টায় এগিয়েছে। সামনেও এগুবে।
এখানে রাজনীতি বরং একটা বড় বাধা। রাজনীতিকর গুণ্ডা পোষেন, তাদের জন্য যে চান্দা ওঠে তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শোধ করতে হয় আম জনতাকে।
তবুও মানুষ অদম্য। মানুষের এই এগিয়ে যাওয়াটাকে আমি সম্মান করি। ধারণ করি এবং নিজেও চেষ্টা করি।
ক্ষুধার জ্বালা মেটানোর জন্য অনেকে অনেক রকম পথ বেছে নেন। একজন মানুষের যে রকম বেতন কড়ি পাওয়ার কথা সে রকম পান না। আবার পেলেও আবার কেউ স্বভাবগতভাবে আরো পাবার লোভে সমাজে একটা ভারসাম্যহীনতা তৈরি করেন।
চূড়ান্ত বিচারে সৎ মানুষরাই এগিয়ে থাকেন। সে সততা কেবল কথার নয় কাজের সততা। তবে সমাজের ভারসাম্যহীন প্রতিযোগিতা সততার সাথে চলা মানুষের জীবন যাপনকে কঠিন করে তুলেছে।
সাভারের একটা মেয়ে সেলাইয়ের কাজ করে। যে টাকা সে পায় তা দিয়ে সংসার চলে না। সবার মত তার মনেও আকু পাকু করে ভালো ব্র্যান্ডের লিপস্টিক, ক্রিম মাখার। একটা কারুকাজ করা জামা পড়ার শখ তারো। কিন্তু বাবা মা নিয়ে যেখানে খাবার জোটানোর সংগ্রাম, খাবার জোটেনা ঠিকমত, সেখানে সে অসহায়। কেবল তিন বেলা খাবার নিশ্চিত করতে মেয়েটা লড়ে, ইচ্ছের বিরুদ্ধে লড়ে।
নেটওয়ার্কে ধরা পড়ে মেয়েটা। অথবা ধরা দেয়। সপ্তাহে একদিন করে খদ্দের সামলায়। তার শরীরের স্বাদ নিতে ছোটেন উঠতি পয়সাঅলারা।
তাদের একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- ক্যান এ সব করো। সোজা সাপ্টা উত্তর নগরে দু মুঠো খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য।
মতিয়া আপা এভাবে না খাওয়ার জন্যবিক্রি হয়ে যাওয়া নারীর সংখ্যা কম নয়। সমাজতন্ত্র এক সময় আপনার প্রচার মন্ত্র ছিল। এখন কি আছে। সমাজতন্ত্র মানুষকে মানবিক করে। কিন্তু আপনি কৃষি মন্ত্রী, আপনি বলছেন, মানুষ না খেযে থাকছে না। এ ভাবে কারো কারো শরীর বেচে খাবার যোগাড় করাকে কি বলে। আমি জানি না।
কেবল পৃথিবীর আদিম পেশা বলে আমরা এটাকে কবুল করি। কিন্তু এ মানুষগুলোর জন্য আমরা ভাবি না। যারা অভাবে এবং স্বভাবে এ সঙ্কট সময় পার করছেন। তাদের পাশে দাঁড়ান। কারো দরকার ভাত, কারো চিকিৎসা। বলছি না কালই সব মানুষের সমস্যা সমাধান করে ফেলবেন। শুরুটা করেন না। বদলাবে সবাই।