শাফিন আপনি একা নন; আমরা আছি! জেগে আছি!!


বন্য হাতিটি দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে বিবিসির খবর! আর বন্য হাতি যেখানে দুর্বল সেখানে সবল বঙ্গবাসী নিশ্চয় প্রমোদে ব্যস্ত? কি বলেন, ভাইসব!  আমি অন্তত তাই মনে করি!

আমরা অবশ্য বন্যা নিয়া কথা কইতে পারুম না। কারণ হৈলো- এ জলটা নেমে এসেছে দীপিকা, সানি লিয়ন, ক্যাটরিনা আফা আর  খান সাবদের  তল থেকে। সে তলের জলে অতলে হারাইলেও আমাদের কইতে হবে-- যে -- বন্যা এক উপকারি জিনিস। এর মাধ্যমে প্রচুর পলি আসে। সেই পলিতে জমি ভরে উব্বর হয়। সেই উব্বর জমিতে ভারতীয় শিল্পীরা প্রতি মাসে কনসার্ট করতে আসে।


তো, তা যাই হোক। ইনডিয়ার  যৌনতার পাপি জলের চলে তলিয়ে যাওয়া উত্তরবঙ্গ আর   ছলনার জলে ডুবতে যাওয়া সুন্দরবন নিয়ে ভাবনার ভ্রিত্রে আরেক ঘটনা!

মাইলস ব্যান্ডের সাথে 'ফসিলস'  ব্যান্ড গাইবে না। পড়তি জনপ্রিয়তার গানের দলটা রাজনৈতিক-বাণিজ্য কৌশল নিলো।  তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কলকাতায় আজাদি কনসার্টে  মাইলসের সাথে এক মঞ্চে উঠবে না বলে ঘোষনা করলো। আয়োজকদের কাপড় খুলে গেলো। মাইলস বলে দিলো-- এ ক্যাচাল করে তারা সেখানে গাইতে যাবে না। (খবর বিবিসি বাংলা'র)

 তাদের বহু  মত-দাস আছে বঙ্গে। স্বেচ্ছায় বিবেক বন্ধক রেখে বঙ্গে ইনডিয়া পাকিস্তানের দালালি করা লোকের অভাব নেই।
 কথায় আছে -- ভাত ছিটালে কাউয়ার অভাব হয় না। বিষয়টা এ পর্যন্ত ভালো ছিল।
কিন্তু সানি লিওন আর ক্যাটরিনা থাকলে  ইনডিয়ান-সমর্থক তরুণ প্রজন্মের অভাব হয় না। এটা এখন প্রমাণিত সত্য!

 হায় আল্লাহ আমার কি হবে! যদি ইনডিয়া পাশে না থাকে। চুদির ভাই টাইটের এ রকম কিউট  নুলা কথা শুনবেন আপনি। আমিও শুনি। পাকিস্তান গত হইছে। ইনডিয়ার আগ্রাসন চলতাছে।  আমাদের এ সব মানতে বাধ্য করছে, অনেকে। স্বজ্ঞানে।

 শাফিনকে কাঠগড়ায় খারা করানো হইছে, তার ইনডিয়া বিদ্বেষের অভিযোগে।  আমি তন্ন তন্ন করে তার ফেসবুক পেজটা খুঁজে দেখলাম, কিন্তু ইনডিয়া বিদ্বেষ , ইনডিয়াকে আক্রমণ করে তার কোন বক্তব্য পেলাম না। আমি অবশ্য চর্মচক্ষে দেখেছি, যারা অন্তরচক্ষু দিয়ে মাথার চুল দেখে  নুনুর বাল গুণে থাকেন, তাদের কথা আলাদা।

আন্দাজ করি-- বেগম জিয়ার সাথে শাফিনের দেখা করাটাই কাল হয়েছে।  এর আগে ন্যান্সিও একই রকম সমস্যায় পড়েছিলেন। খালেদা জিয়ার বক্তব্য সমর্থন করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়া, সে কী হয়রানি তার!  পুলিশি তাকে হয়রানি করেছিল।  আর সকরারি দল পারলে তাকে চৌরাস্তায় এনে  ন্যাংটো করে অবস্থা। অবশ্য তার চরিত্র নিয়ে ব্যাপক যন্তর মন্তর করেছিল, তারা।

ভিন্ন মত, ভিন্ন  দৃষ্টিভঙ্গিকে সহ্য করার মত এক দমন দিল আমাদের আল্লায় দেয় নাই। তাই ছ্যাঁত করে উঠি সবাই।  বাংলাদেশের পক্ষে কথা বললে- এটা কারো না কারো বিপক্ষে যাবে ।  তিরিশ লাখ বা তারো বেশি মানুষ যদি ভাবতো-- আমাদের মত-- আমার কি হবে? তালে এ দেশ স্বাধীন হতো না।

তাই তাদের রক্তের সাথে ঈমানের সাথে থাকতে চাইলে, তাকে ভারত বিদ্বেষি, পাকিস্তান বিদ্বেষি, আম্রিকা বিদ্বেষি, ইসরাইল বিদ্বেষি, রাশিয়া বিদ্বেষি, তুরস্ক বিদ্বেষি--- এ রকম নানা তকমা সইতে হবে।  শাফিন সেটি সইছেন।

 কথা একটা- শাফিন আপনি একা নন।  আমরা আছি!! জেগে আছি।  জলবন্টন নিয়ে বছরের পর প্রতারণা সয়ে যাচ্ছি, সীমান্তে হত্যা সইছি, জঙ্গিবাদের অভিশাপ সইছি, মাদকের বাজার সইছি, শিল্পী বিনিময়ের নামে  নিজের সংস্কৃতি বিসর্জন দিছি-- বাকি কিছু নাই। তবুও আপনারা যারা আছেন, মাথা উঁচা কইরা কথা কইবেন। আছি। পাশে আছি।  


এই চাটা রাজনৈতিক প্রজন্ম লইয়া জাতি কি করিবে?

ইন্ডিয়ান দিদিদের খসানো জল চাটারা কই! উত্তর বঙ্গে জলে ডুবাই দিছে ইনডিয়া । অগো জল যৌবনের পাপ আমাদের গরিব, নিরীহ মানুষের উপর ছাইরা দিয়ে মজা দোখতাছে!
অগো দৈত্য সুলভ, সব চারখার করে দেয়া মানসিকতার প্রতিক বুনো হাতি বাঁচাতে বিশেষজ্ঞ আসছে বলে, বিবিসি বাংলার গতকালের খবর ।
তা মানুষ যে ডুবে আছে, তাদের উদ্ধার কেমনে হবে ? সে বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞ আসছে, শুনি ।
শুকনো মওসুমে জল আটকে উত্তরবঙ্গ মরুভূমি করে রাখা সব ক'টা গেট খুলে দিয়ে আমাদের উদ্ধার করছে , ইনডিয়া, তাই না! আসেন তালিয়া বাজাই । সানি লিওন লিখে গুগল করি । যৌবল জ্বালান তো বড় জ্বালা । মানুষ থাকলেই কি, আর না থাকলে কি !
ইন্ডিয়ান আধিপত্যবাদ , বঙ্গীয় মানুষের উপর জলজ অনাচার, মাদক, জঙ্গি, পণ্য আর সীমান্তে মানুষ খুন করে- তারা আমাদের সৎ প্রতিবেশী! তাদের মন খারাপ করলে আপনি ব্যান ! এই আমাদের চাটা রাজনীতি ।
এ চাটা রাজনৈতিক প্রজন্ম লইয়া জাতি কি করিবে?

জল থামাতে জলের আয়োজন!


                              পাঞ্জাবী ট্রডিশনাল ড্রিংকস! সবাই জলের মত খায়!

প্রতিদিনকার খাবার, তবে একটু আয়েশি।  খাবারের সাথে ঘি, ভাজা জিরা, কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজের টুকরো সামনে আনলে জিভে জল না আসে পারে। সে জল থামানোর জন্য আবার জলের আয়োজন।   ছাতু আর লাচ্ছি। হেলদি লাচ্ছি, অল্প মিষ্টিতে ঘুঁটে দেয়া হবে আপনার সামনে। কাঁচামরিচের চায়ের মত কাঁচা মরিচ ডোবানো ছাতু। এ সব পাঞ্জাবী খাবারে আলাপ। 

ভারতের পাঞ্জাব নগরের রমণীদের সুনাম আছে। শেষ বিকালে অস্তমায়ন সূর্যের রঙ নাকি ছুঁয়ে থাকে কিশোরী-তরুণীর মুখ। সে  নগরের খাবারের সুনাম ছড়িয়েছে ইনডিয়ায়। বিশেষত সাউথ ইনডিয়াজুড়েই তো এর সুনাম। বঙ্গেও এর সুনাম আছে। পর্যটক হিসাবে আমরা যারা সিমলায়-মানালী ঢুকি, তাদের একবার  পাঞ্জাব থামতে হয়। ডাল মাখানিতে নান ডুবিয়ে খেতে খেতে অনেকেরই মনে হয়েছে- আহা! অমৃত! 

সে খবার এবার রাজধানি ঢাকায়ও আসলো।  তবে সায়েবি কায়দায়। লা মেরিডিয়ানে  গেছিলাম, সোমবার।  লিফটের ১৬ নম্বর বোতাম টিপলে চোখের সামনে একটা পাঞ্জাবী যুগল-ট্রাকের উপর! সেটা থেকে একটু সামনে এগোলে সাদা কুর্তা আর লাল ট্রাউজার পরা, মাথায় পাগড়ি দেয়া  তরুণ, এগিয়ে ধরে কাঁচা মরিচ চুবানো মাঠা জাতীয় পানীয়ের গ্লাস।



পানীয় পরিবেশন প্রস্তুতি!

হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ছিলো সাজানো সব পাঞ্জাবী খাবার। তবে এত খাবার পাঞ্জাবে একসাথে দেখিনি। রেস্টুরেন্টে আমার মত কাল্লুর কাছে খাবারের অর্ডার নিতে ২০০২ সালে বিকালে যে তরুণি এসেছিল, চোখ কচলে তাকে দেখেছি আগে! তারপর খাবারের অর্ডার করে একগ্লাস পানি খেলাম! 
সেই খাবার অনেকদিন পর আবার খেলাম পাঁচতারকা হোটেলের রেস্টুরেন্টে! 
খাবারের টেবিলটা সাজানো- একটা বাটিতে চামচ তিন ঘি, তিন পিস পোড়ানো মুরগি, একবাটি ভেড়ার খুরার সুপ! এক বাটি ডাল মাখানি। দু চামচের মত পোড়ানো জিরা গুঁড়া, পেঁয়াজ, লেবু আর কাঁচামরিচ জমা করা একটা বাটি। আনা হলো- তিন পদের রুটি। 

                                        খাবার সাজানো হলো টেবিলে!

জিভের জল সামলানো কঠিন। 
সে কঠিনকে আরো কঠিন করে দিলে ফুডলাউঞ্জে গুর্দে কাপুরি নাল কিমা কলিজা। সে রকম খাবার। গরুর কলিজার সাথে গুর্দার কিমা মিক্সড করে রান্না করা খাবারের সাথে নান- আহ! কত দিনপর গালে পুরলাম। 
                                         নাল কিমা কলিজা, জল আটকাতে পারছি না!
খাবারের ফাঁকে ইনডিয়ান শেফ শমসের সাথে কথা। বললেন, মুরগি, ভেড়ার খুরার সুপ, রুটি আর ঘি মাখিয়ে খেযে নেওয়ায় তাদের রেওয়াজ। 
ভেড়ার খুরার সুপটাকে তার অর্গানিক বলে। কারণ এর সাথে দেয়া সব কিছুই লোকাল। 
একটা রেসিপিও জেনে নেয়া গেলো তার কাছ থেকে--KHARODEY DA RAS (এটার উচ্চারণ কি হবে? খারুদি দা রাস!) সে নাম যাই হোক খাবারটা সিরাম! 

ল্যাম্ব ট্রটার্স নিয়ে সিদ্ধ করে পানির সাথে আদা, রসুন, ধইন্নার গোটা, কুচি করে কাটা পেঁয়াজ দিয়ে রান্না শুরু করে দিলেই হলো। 
এটার নিয়ম নাকি এ রকম---একটি পাতিলে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি লাল হওয়া পর্যন্ত আগুনে পোড়াতে হবে। ভেড়ার পা এবং আদা রসুন বাটা দই ঝাঁটা এবং পেঁয়াজ পেস্ট ভেড়ার গোশতের সাথে যোগ করতে হবে। লিগানের সাথে শুকনো মসলা মিশিয়ে রান্না চলাকালেই ভেড়ার গোশত ঢেকে দিতে হবে। রান্না হয়ে গেলে সস মিশিয়ে আদার কুচি দিয়ে পরিবেশন। 
                                      ঢোকার আগেই!!

উত্তরবঙ্গে গিয়ে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানান না!

পারলে উত্তর বঙ্গে গিয়ে  তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানান না! ফারাক্কা বাঁধ আর গজল ডোবায় তিস্তার পানি আটকে রেখে তো পুরা উত্তরবঙ্গ মরুভূমি বানিয়ে ফেলেছেন। তো সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে পারে না; তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। হতে পারে না। কারণ হলো নদীর সব পানি আটকে নদী মেরে দিয়েছেন মনমহন, শন মহন আর মোডি কাকুরা। তা কাঁচামাল নেবেন কেমনে। রাস্তারও তেরটা বেজে আছে।

তো রামপাল।

ফারাক্কার প্রভাবে এমনিতেই সুন্দরবনের শিরা উপশিরার নদী গুলোর পানি নোনতা হয়ে আছে। বাড়তে আছে নোনতার আধিপত্য। তার ওপর এখানে ট্রলার চলবে, কাঁচামাল আসবে, ছাই উড়বে আর সুন্দরবন ধীরে ধীরে আক্রান্ত হবে ক্যান্সারে। মরে যাবে চোখের সামনে। কিছু নরাধম সে জমি দখল করে ঘের বানাবে। 

পরিবেশবাদিদের প্রতিবাদের মুখে সরকারের অধিদপ্তর ---ইনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ) প্রতিবেদন দিয়েছে। সে অনুযায়ী ১৩২০ মেগাওয়াটের এ প্রকল্পের জন্য বছরে ৪৭ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা পোড়ানো হবে।

যেখানে ১ টন কয়লা পুড়লে ২ দশমিক ৮৬ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়। সেই হিসাবে এই প্রকল্প ৮০ শতাংশ লোড ফ্যাক্টরে উৎপাদন করলেও বছরে ১ কোটি ৮ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হবে। যদিও সরকারের প্রতিবেদনে সুপার ক্রিটিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহার করায় উদ্যোক্তাদের হিসাব মতেই, ৭৯ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে বাকি কার্বন ফ্লাই অ্যাশে যোগ হবে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে।

উদ্যোক্তাদের হিসাব সঠিক বলে ধরে নেয়া হলেও প্রশ্ন থা্কছে--- ৭৯ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড কী কম ক্ষতিকর! যত উঁচু চিমনিই ব্যবহার করা হোক না কেন বাতাসের চেয়ে ভারী এই গ্যাস তো এই দেশেই ফিরে আসবে, ফিরে আসবে সুন্দরবনের বুকে।

বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাই-অক্সাইড (বছরে ৫১ হাজার ৮৩০ টন) ও ৮৫ টন বিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (বছরে ৩১ হাজার ২৫ টন) নির্গত হবে। বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত গ্যাস সুন্দরবনের বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব বর্তমান ঘনত্বের তুলনায় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়ে গোটা সুন্দরবন ধ্বংস করবে--- তারপরেও সন্দেহ জাগে!