মান্না ছাড়া বাংলা সিনেমার দর্শকের ৮ বছর!





নয়াক মান্না নেই, আজ আট বছর। মনে হলো, এই তো সে দিন। দেখতে দেখতে সময় চলে যাচ্ছে। তার মারা যাওয়ার দিন শহরে যানজট লেগে গেছিল। যারা বলেন, বাংলা সিনামার দর্শক নেই। জনপ্রিয় নায়ক নেই; মান্না তার ব্যতিক্রম। মান্নাকে শ্রদ্ধা জানানোর দিন শহরজুড়ে হাজার হাজার মানুষের শোক মিছিল দেখেছিল ---এই নগরের মানুষ। 

২০০০ সালের দিকে মান্না ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয়। সে সময় প্রিয়মুখ নামের পাক্ষিকে কাজ করি। তার একটা সাক্ষাৎকারের জন্য কাকরাইলের অফিসে গেছিলাম। এখনো মনে পড়ে সেই দুপুর---দু রুমের অফিসের সামনের রুমে বসে আছি। মান্না ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই একজন চোখ বড় বড় করে তাকালেন, আমার দিকে। বললেন, কি বিষয়! 

তার ধারণা আমি নায়ক হওয়ার ধান্ধায় এসেছি। তাই ভুল ভাঙ্গিয়ে দিতে জানালাম, সাংবাদিক। উনি বললেন, বসেন। ভাইজান ব্যস্ত আছেন। কিছুক্ষণ পর আবার তাড়া দিলাম। উনি উঠে গিয়ে বললেন। মান্না ভাইয়ের ডাক পড়লো। ভেতরে যেতেই বললেন, তোমারে বসায়া রাখছে। আমি খুবই সরি। শুরুতেই আপন করে নেয়ার একটা ক্ষমতা তার আছে। আমি মুগ্ধ হলাম। 

বিশাল দেহি মান্না ভাই। বসে আছেন বিশাল একটা চেয়ারে। সামনে বসে থাকা দুজন কে বিদায় করে দিযে বলল, 'ছোডু ভাই তুমি কই পড়।' জানালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। কথায় কথায় অনেক কথা হলো। জানালেন কি সংগ্রাম করে তাকে জনপ্রিয় মান্না হতে হয়েছেন। বললেন, পরিচালকরা আমাকে নিতে চাইত না। এখন নেয়ার জন্য পেছনে পেছনে ঘোরে। জীবনে সবখানেই তুমি প্রতিষ্ঠা পেতে বেগ পাইবা। কিন্তু প্রতিষ্ঠা পাইলে তর তর করে খালি উপরে উঠবা। কিন্তু আমাদের মত নায়কদের একটা সমস্যা আছে। সেটা হলো দর্শক না চাইলে আমি কিন্তু জিরো। 

ঢাকা কলেজে পড়তেন মান্না। সে সময়কার স্মৃতি চারণ করলেন। সিনেমা শিল্পটা যে নিম্ন মানের দিকে ধাবিত হচ্ছে, সেটি তিনি সেই ২০০০ সালেই বলেছিলেন। বললেন, এখানে সবাই টাকা কামাই করতে আসে। কেউ ভালো সিনেমা বানাইতে চায় না, ছোডু ভাই। আবার আর্ট ফিল্ম বানায় যারা ওরা সিনেমা বানায় পুরস্কারের সিনেমা। আমপাবলিকের সিনেমা কেউ বানাইতে চায় না। নিজের সিনেমা নিয়েও বললেন। বললেন, ভালো সিনেমা বানাইতে চাই, পাবলিকের সাপোর্টও আছে। কিন্তু মাঝে মধ্যে মিডিয়া সে ভাবে সাপোর্ট দেয় না। 

নিজের এলাকার বন্ধুদের নিয়ে গল্প শোনালেন। অনেকের নামও বলেছিলেন, এখন তাদের নাম মনে পড়ছে না। বললেন, গ্রামে গেলে বন্ধুরা তাকে আপনি করে বলে। এতেই তার আপত্তি। তাই ওদের ওপর রাগ করেন। তবুও গ্রামে যান। এলাকাতে একটা হসপিটাল করার ইচ্ছের কথা জানিযেছিলেন। শেষ পর্যন্ত এটি করা হয়নি। তবে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন প্রচুর। এটাই বা কয়জনের ভাগ্যে জোটে। হঠাৎ করেই মান্না ভাই মারা গেছেন আট বছর আগে, ২০০৮ সালের এই দিনে! 

তার সাথে গল্প করে বের হওয়ার সময় বললেন, সময় পাইলে চইলা আইসো। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ে কেউ তো সিনেমা সাংবাদিক হয় না। তুমি কেন হইলা সেই গল্প শুনমু নে। সময় নিয়া ফোন দিয়া আইসো। আমি বের হলাম তার রুম থেকে। চা ও মিষ্টি খাইয়ে ছেড়ে দেয়ার আগে বার বার তার সাথে দুপুরে খেতে বলছিলেন। বিনয়ী মান্নাকে সিনেমার পর্দার মান্নার সাথে মেলানো ঢের কঠিন। বিদায়। মান্না ভাই, যেখানেই আছেন, ভালো থাকুন।

পাহাড়ে সেনা তর্ক !!



সাজেক ভ্যালি--- পর্যটন সুবিধা নিশ্চিত করেছে সেনা সদস্যরা। 


পাহাড় কিম্বা সমতলের মানুষ --- আমরা সবাই বাংলাদেশী। এটাই আমাদের আত্ম পরিচয়।  ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিগতভাবে আমাদের মধ্যে ভিন্নতা আছে, বৈচিত্র আছে ; এটাই আমাদের দেশের সৌন্দর্য।  এ বিশ্বাস কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সবারই আছে যে, আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিজয় অর্জন করেছি--- সমতার সমাজ-রাষ্ট্র নির্মাণ করতে।  সে লক্ষ্যেই সব শ্রেণীপেশার মানুষ যুথবদ্ধ ।

তবুও সময় অসময়ে জাতিগত বিষয়কে সামনে রেখে সন্দেহ! এটা নিয়ে বিস্তর আলাপের জায়গা থাকতে পারে। কিন্তু দেশের এক দশমাংশ আয়াতনের পাহাড়ি জনপদে সেনা উপস্থিতি নিয়ে পাহাড়ি নেতাদের মধ্যে উষ্মা আছে। কথিত পাহাডি প্রেমিকরাও উদ্বিগ্ন । এ উষ্মা বা উদ্বেগের কারণ কেউ খোলাসা করেন না। সেখানে অপােরেশন উত্তরণ চলছে বলে যে প্রসঙ্গ সন্তু লারমারা উদ্ধৃত করে থাকেন, সেটি কী কার্যকর? আমার দেখা মতে কার্যকর নয়। তবুও পাহাড়ে সেনা উপস্থিতি নিয়ে বাঁকা প্রশ্ন দুঃখজনক।

বলে রাখি,  ব্যক্তিভাবে আমি সব ধরণের নিপীড়নের বিপক্ষে। সেটি যে কোনো বাহিনীরই। কিন্তু দেশের সামরিক নীতি,  নিরাপত্তা আয়োজনকে প্রশ্ন করতে পারি না। কিছু বিষয় তো এমন যেটা সরলীকরণ করা যায় না। 

স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব  প্রতিরক্ষা বাহিনীর।  সে জন্য কোথায় ঘাঁটি গাঁড়তে হবে, সেটি নির্ধারণ করার দায়িত্বটা  রাজনৈতিকের চেয়ে সামরক নীতির অংশ বলেই মানি। সে হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থাকবে কিনা--- সে সিদ্ধান্তটা আসলে সামরিক কৌশল ঠিক করা লোকদের উপরই ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। 

কিন্তু যারা প্রতিনিয়মত পাহাড়ে সেনা নিয়ে উসখুশ করেন, তারা আসলে কী বোঝাতে চান--- সেটি পরিষ্কার নয়। 

দুর্গম পাহাড়ি জনপদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে  সরকার যে কোনো ধরণের বাহিনীর  সহায়তা নিতে পারে এবং সেটিই যৌক্তিক। কিন্তু  পাহাড়ে সেনা উপস্থতি  কেন থাকবে না!  এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা কি?

সেনা সদস্যরা পাহাড়ে কী করেন--- তাদের না থাকার কারণ কি হতে পারে? এ সব প্রশ্ন  সেখানকার সাধারণ পাহাড়িদের নেই বললেই চলে।  তবে এটা নিয়ে বেশি সোচ্চার বেদিশেী ফান্ড প্রাপ্তরা। বিশেষত বেসরকারি সংস্থা ও নামকাওয়াস্তে গবেষক--- যাদের বেশির ভাগই একটা ইস্যু ধরে রেখে আলোচনায় থাকতে চান।

এক কল্পনা চাকমা অপহরণ অভিযোগ বাদে  উল্লেখ করার মত গুরুতর অভিযোগও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নেই!  বরং সম্প্রীতি রক্ষা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন আর  অপরাধ দমনে তারা সেখানে  বহু বছর ধরেই কাজ করছেন;  এটা সবারই জানান।  অপহরিত বহুমানুষকে উদ্ধারে সেনাবাহিনী সফল হয়েছে।

পাহাড়ি নেতাদের কারো কারো অভিযোগ--- সেনা বাহিনী পাহাড়ে বাঙালিদের  সহায়তা করে! এ অভিযোগ যারা করেন, তাদের নিয়ে বাঙালিদের মনবেতর জীবন যাপন পরিদর্শন করলে-- এ অভিযোগ টিকবেনা ; আমি নিশ্চত করেই এটা বলছি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।

পাহাড়ি জনপদ আর সমতলের মধ্যে তফাৎটা কারো অজানা নয়। মায়নমারের সাথে আমাদের কয়েক দফা সীমান্ত সঙ্ঘাত হয়ে গেছে। দিন দিন সে ঝুঁকি বাড়ছে। সেভেন সিস্টারের সাথে আমারে সীমান্ত আছে। খাগড়াছড়িতে অর্ধশতাধিক কিলোমিটার সীমান্ত অরক্ষিত।এ রকম প্রেক্ষাপটে পাহাড়ে সেনা উপস্থিতি না থাকা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য প্রচণ্ড হুমকি।
তারপরেও চুক্তি মেনে ১৯৯৭ সালের পর থেকে নিয়মতই অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এটি রাষ্ট্র বেশ ঝুঁকি নিয়েই করছে; এতেও পাহাড়ি মানুষ নিয়ে ব্যবসা করা লোকরা অসন্তুষ্ট! এ অসন্তুষ্টি হয়তো তাদের ব্যক্তিগত সুবিধা হচ্ছে; সেটি দেশর নিরাপত্তাকে হুমকি রেখে---
পাহাড়ি ও বাঙালি দু'টো জাতি সত্ত্বা আলাদা হলেও জাতীয়তা অভিন্ন। রাজনৈতিকভাবেই দু'টো জাতি সত্ত্বার সঙ্কট নিয়ে আলোচনা  অব্যাহত রেখে, আস্থার সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে সমস্যার  সমাধান করতে হবে।  বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, সেনা বিরোধীতা আর বাঙালি-পাহাড়ি বিরোধ জিইয়ে রেখে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়!

খবরের কাগজে ১১ ফেব্রুয়ারি  জানলাম---পার্বত্য চুক্তির অংশ হিসাবে  ইতোমধ্যে ২৩২টি অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প থেকে  ১১৯টি ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ১০ ফেব্রুয়ারি সংসদকে জানিয়েছেন, শান্তি চুক্তির আলোকে মোতায়েনরত সেনাবাহিনীর সব অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ছয়টি গ্যারিসন--- দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, রুমা ও আলীকদমে প্রত্যাবর্তনের বিধান রয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, গ্যারিসনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নও চলমান।  রুমা গ্যারিসনের ৯৯৭ একর ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। গ্যারিসনসমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্পন্ন করে সময়োচিতভাবে অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের মাধ্যমে মোতায়েনরত সেনাবাহিনীকে নির্দিষ্ট গ্যারিসনসমূহে প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে।

লাইফ সাপোর্টে কবি রফিক আজাদ





''ভুল করে অন্ধ গলি-ঘুঁজি পার হয়ে, যদি এই
আঁধার প্রকোষ্ঠে আসো
দেখবে উবুড় হয়ে বাংলার এই মানচিত্রে
মুখ থুবড়ে প'ড়ে আছে চলি্লশ বছর. . .
আমার তৃষ্ণার্ত ঠোঁট ঠেকে আছে
পদ্মার ওপর
এবং আমার দু'চোখের অবিরল ধারা বয়ে গিয়ে
কানায়-কানায় ভ'রে দিচ্ছে সব ক'টি শুষ্ক নদী,
এবং দেখতে পাবে
শ্যামল শস্যের মাঠ
আমার বুকের নিচে আগলে রেখেছি. . .''

আমাকে খুঁজো না বৃথা ।।  রফিক আজাদ।



অগুনতি মানুষ প্রেম-ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছে যেই নগরে, সেই নগরের বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে এখন লাইফ সাপোর্টে আত্মসম্মান জাগানিয়া কবি রফিক আজাদ। ।

মানুষের কষ্ট-বঞ্চনা নিয়ে মাথা উঁচু করে কথা বলা দ্রোহের কবি-  রফিক আজাদের ফিরে আসার অপেক্ষায় আমরা!  ফিরে আসুন প্রিয় কবি।

১৪ জানুয়ারী  রাত সাড়ে ১০টার দিকে রফিক আজাদের ‘ব্রেইন স্ট্রোক’ হয়। পরে তাকে প্রথমে বারডেম হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে রাত আড়াইটার দিকে নেওয়া হয় আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানকার আইসিইউতে রাখা হয় তাকে।

১৫ জানুয়ারী বিকাল ৩টার দিকে রফিক আজাদকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল।হয় তাকে।

১৯৪১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার গুণী গ্রামের এক অভিজাত পরিবারে জন্ম রফিক আজাদের। তিনি ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর করে কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষকতায়।

রফিক আজাদ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ‘উত্তরাধিকার’র নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন ১৯৭২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত। এরপর কাজ করেছেন বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন, উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে।


''....অবশেষে যথাক্রমে খাবো : গাছপালা, নদী-নালা
গ্রাম-গঞ্জ, ফুটপাত, নর্দমার জলের প্রপাত
চলাচলকারী পথচারী, নিতম্ব প্রধান নারী
উড্ডীন পতাকাসহ খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর গাড়ী
আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেলনা নয় আজ
ভাত দে হারামজাদা,
তা না হলে মানচিত্র খাবো।''

ভাত দে হারামজাদা।। রফিক আজাদ।