ঐশীকে ফাঁসি দিয়ে আদালত সঠিক খুনি সনাক্ত করতে পেরেছেন ?

ঐশীর ফাঁসি আইনিভাবেই রায় হয়েছে; যেহেতু আমি একজন দূর্বল চিত্তের মানুষ; হাই প্রেসারের ওষুধ খাই এবং টেনশন ফ্রি থাকার জন্যও আমার ওষুধ লাগে--- সেহেতু  এ রায় বা বিচার বিভাগ বা সরকার বাহাদুরকে উদ্দেশ্য করে আমার কিছু বলার নেই।
আমার ব্যক্তিগত বিবেচনায়--- ঘটনাটি সিনেমেটিক। আমার সিনামার ওস্তাদ জিকো ভাই এবং তানভির মোকাম্মেল ভাই---দু'জনেই বলছিলেন-- সিনেমা এমন কিছু দেখাতে চায় যা বাস্তবের চেয়ে বেশি। কিন্তু ঐশীর রায়টা দেখার পর তারা তাদের এ বার্তা প্রত্যাহার করবেন--!
ঐশীকে  যদি খুনিও মনে করি ; তারপরেও এ ফাঁসির দণ্ড এবং এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। এ প্রশ্ন আমি করছি না। তবে গণমাধ্যমের  কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ঐশীর মত ইংরেজি মাধ্যম পড়ুয়া একটা মেয়ে; যার গায়ের রং ফর্শা;  কৈশোরোত্তীর্ণ শরীরে প্যান্ট কেন? এ রকমের আজগুবি গল্প আমরা পড়েছি--- খবরে দেখেছি। কখনো কখনো খবরগুলোকে মনে হয়েছে ফিকশন।
মিডিয়া আজকাল বিরাট এক বিনো্দন। এ বিনোদন মাধ্যমে মজদুর হিসাবে আমিও আছি। তাই মিডিয়াকে আক্রমণ করলে আমার মন খারাপ হয়। তবে মিডিয়া যে অনৈতিকভাবে  ক্লিক, বিক্রি আর টিআরপি বাড়ানোর জন্য  কিছু গল্প তৈরি করে; সেটাকে উড়িয়ে দিতে পারছি না।  এমনকি কাকে কাকের মাংস না খেলেও মিডিয়া মিডিয়ারকর্মীদের মাংস খায়। এটা নিশ্চিতভাবে সাগর-রনি হত্যাকাণ্ডের পর লক্ষ্য করা গেছে।
ঐশী মেয়েটাকে কেন ফাঁসি দেয়া হয়েছে? এটার উত্তর সে তার বাবা মা কে খুন করেছে। বাবা মা কে খুন করা চাট্টিখানি ব্যাপার না। এ ব্যাপার টা তার ভেতরে যারা যোগান দিয়েছে; তাদের কি কোনো বিচার হয়েছে। আইন বলবে-- আমরা তা দেখি না। তাহলে কে দেখবে?  সৃষ্টিকর্তা।  হতে পারে।
-- আইন অন্ধ। আসলে আইন অন্ধ। নইলে বদি বাবা জামিনে থাকে? বাবার অনেক ক্ষমতা-- সেটা আমরা জানি।  তার চালান করা  বাবা গিলে লক্ষ লক্ষ তরুণ অপরাধী।
 টেকনাফ থেকে এক সময় লবণ আসতো--- বিদেশ থেকে এখন লবন আসে। টেকনাফ হয়েে আমাদের জন্য মায়ানমার থেকে আসে রোহিঙ্গা আর ইয়াবা।
 ইয়াবাকে পুলাপাইন আবার বাবা কয়। আসলেই বাবা। বদি বাবার আমদানি করা জিনিস তো বাবাই। যে সব সরকারি কর্মকর্তা আপনাকে আমাকে পেলে চোখ রাঙায় এমন বহু কর্মবকর্তাকে বদি থাপড়াইছে বলে খবরেই পড়ছি। কি হইছে।  কিছুই না। কারণ আইন তো ঘটনাস্থলে হাজির ছিল না। তাছাড়া আইন বানায় কারা বদি, লিটন এ রকম আরো বহু এমপি।
আমরা যখন ঢাকায় আসি ১৯৯৮ সালে-- সে সময় ডাইলে কথা শুনছি; ডাইল পাঠাতো দাদারা। গরুর গোশত হারাম কিন্তু ডাইল হালাল। বাংলাদেশ ব্যাপক চাহিদার ভিত্তিতে সীমান্তের ওপারে বহু  ডাইল কারখানা গড়ে ওঠে।
তারপর ইয়াবা আসছে--- শুনছি। বদি বাবা এটাকে শিল্পে পরিণত করেছে। এ শিল্পকে ঘিরে করে খাচ্ছে জেলে, নৌকা চালক, রাজনীতিক, পুলিশ, আমলা , কামলা আরো অনেকে।
রাস্তা নিরাপত্তা  চেকিংয়ের কালে কারো পকেটে ইচ্ছে হলে ইয়াবা  ঢুকিয়ে  হয়রানির অভিযোগ  উড়িয়ে দেওয়া যায় না।  তবে যারা এ সব  করে টাকা ইনকাম করেন; পরিবার পরিজন লালন করেন-- সে পরিবার পরিজন  কিন্তু আপনার জীবনে কাজে লাগার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
 এ লেখা যদি কোনো পুলিশ ভাই পড়ে থাকেন--- দয়া করে ক্ষমা করবেন। ইয়াবা ঢুকিয়ে দেয়া লোক যেমন আছে তেমনি বাচ্চার স্কুলের টিফিন কিনতে নিজের দু;চারটে সিগ্রেট আর পান  খাওয়ার টাকাও অনেকে বাঁচিয়ে রাখেন।
আপনাদের  দোষ দিই না--- নষ্টের মূল্যে অর্থ-- মানে টাকা। বিত্তবাসনা মানুষকে নৈতিকভাবে দেউলিয়া করছে। এ বাসনা যারা ত্যাগ করতে পেরেছেন; তারা সত্যিকারের জীবন লাভ করেছেন--- সম্ভবত। কেউ চাকুরী নেবার জন্য ;বিনিয়োগ; করেছেন। কারো আবার বিনিয়োগ না করলে রাজনৈতিক কৃতজ্ঞতা  প্রকাশের ব্যাপার আছে। আবার কারো  আমার গোড়াতেই সমস্যা-- উপরি আয় না হলে চলে না।
 ঐশীর কথা বলছিলাম--- ওর জায়গায় যদি একটা ছেলে হতো তাহলে এ হুল্লোড় হতো না। সমাজে মেয়েরা সুবিধা পায় আবার অসুবিধায়ও পড়ে। যেমন ধরেন--- একটা মেয়ে হলে একটা চাকুরি পাওয়া সহজ হয়।  আবার একটা মেয়ে হলে তাকে অরুচিকর গল্প ফেঁদে হেনস্তা করাটাও সহজ।

বলছি না-- ঐশী নির্দোষ। কিন্তু তার সাথে আর কারো দোষ ছিল না-- ভাবতে পারছি না। অন্তত আমাদের মত ক্ষুদ্র --- সীমিত জ্ঞানের মানুষের এ ভাবনা অসম্ভব। যারা বিস্তর জ্ঞান রাখেন -- যারা জ্ঞানের সমুদ্রে হাবুডুবু খান তারা হয়ত ভাবতে পারেন। ঐশীকে ফাঁসি দিয়ে আদালত সঠিক খুনি সনাক্ত করতে পেরেছেন ?  প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই গেলো।

আর যারা শত শত ঐশী বানাচ্ছে-- এখনো প্রতি সেকেন্ডে; প্রতি মুহুর্তে  তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে! কারণ তাদের ;প্রতাপ;তাদের বিত্ত; তাদের উপেরর আশীর্বাদ অত্যন্ত দৃঢ়। অসহায় আমরা। তরুণ প্রজন্ম---ইয়াবা বাবা ডাইল খেয়ে মরে গেলে কি আর বেঁচে থাকলে কি!
 তবে আমাদের নিজেদের উদ্যোগেই সচেতনতার মাত্রাটা বাড়ানো খুব দরকার। পরিজনকে বুঝুন, সময় দিন এবং  এগিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।

শিক্ষক: উপেক্ষা ও উপহাস!

উপেক্ষা করতে পারাটাও এক ধরণের সাহসের ব্যাপার। সে সাহস সরকারি দলের আছে। শীর্ষ থেকে নিম্ন সব পদের লোকই গণমানুষের আশা আকাঙ্খাকে উপেক্ষা করছে-- উপহাস করছে। মানুষ সেটি অসহায়ভাবে দেখছে--- ভাবছে এ দিন কবে ফুরাবে। সে ফুরানোর জন্য অন্য কারো ক্ষমতায় আসার দরকার--- তার চেয়ে বড় কথা ক্ষমতাবানদের শুভ বুদ্ধির উদয় হওয়া দরকার। 

কারণ নিশ্চিতভাবে এদেশের সব মানুষ ' হিজরত ' করবেন না । এখানেই থাকবেন। থাকবেন বলেই আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য রাষ্ট্র তৈরি করার সবারই দায়িত্বের মধ্যে পড়ে--- যে যেখানেই আছেন; সেখান থেকে এর চেষ্টা হতে পারে। এ জন্য বিশিষ্ট উদ্যোগের দরকার আছে--- তবে সেটি না হলে যে কাজ মোটেও এগুবে না--- তা বিশ্বাস করতে চাই না। 

'শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড'--- ছোটবেলায় পড়েছি। বড় হওয়ার পর দেখছি এটা ভুল! কারণ মেরুদণ্ড  যদি শিক্ষাই হবে--- তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের  সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে রাজনীতি করা লোকেরা শিক্ষকদের নিয়ে তাচ্ছিল্য করেন কীভাবে। তারা  কীভাবে বলেন-- অনেক পেয়েছেন; এবার থামেন। তিন চার জায়গায় পড়ান , সব কামাইয়ের খবর আছে। কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস করে টাকা কামান। চাকুরীর দেওয়ার নাম করে হাতিয়ে নেন লাল লাখ কোটি কোটি টাকা।  

তিন চার জায়গায় পড়ানোর শিক্ষক আসলেই আছে--- এটা মিথ্যা নয়। তবে সেটি কত সংখ্যক ; সেটাই একটা বড় প্রশ্ন। সে প্রশ্নটাই আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু এটা নিয়ে কথা ভাবার লোকটি এখন শিক্ষামন্ত্রী। যিনি অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান কলাম লেখক--- তবে সরকারের বাইরে থেকে জ্ঞান বিতরণ আর ভেতরে থেকে বাস্তবায়নের তফাৎটা তিনি এখন বুঝছেন হয়ত!

প্রশ্নপত্র ফাঁসের কলঙ্ক তার কপালে চকচক করছে। এ চককে কলঙ্ক আমাদের মেরুদণ্ড তৈরিটাকে আরো পিছিয়ে দিচ্ছে।  জাতি কিছু মেরুদণ্ড হীন কর্পোরেট দাস পাচ্ছে--- কিছু অনুগত সম্বাদিকও পাচ্ছে। কর্পোরেট দাসরা দেশের স্বার্থের চেয়ে সাময়িক প্রাপ্তিতে উত্তেজিত। আর সম্বাদিকরা ---- একটা কঠিন স্বপ্ন নিয়ে  বাম রাজনীতিকদের মত জীবন শুরু করে মাঝপথে জীবন বাস্তবতায় থমকে থাকেন; মাথা নুয়ে কথা বলেন।  রাজনীতিকদের অুনগত হন আর  সত্য প্রকাশে ভীরু হয়ে পড়েন। বলে কী লাভ জাতীয় বয়ান তাদের  মুখে। 

তবে দু ক্ষেত্রেই কিছু ব্যতিক্রম তো আছে। না হলে আমরা টিকে আছি  কীভাবে। 


 একটি সুপার স্টোরে  আজ সকালে একটা ছোটদের গল্পের বই পড়ছিলাম-- তাতে  পিতা তার মৃত্যুর আগে  তিনপুত্রকে ডাকলেন।  প্রথমজনকে আটার কল। দ্বিতীয়জনকে গাধা এবং শেষ জনকে  বিড়াল উপহার দিলেন--- বিড়াল পেয়ে বেদনাহত  ছোট পুত্র। ভাবছিলেন তিনি এ বিড়াল দিয়ে কী করবেন? বিড়াল তাকে বুদ্ধি বাতলে  রাজকন্যার সাথে বিয়ের বন্দোবস্ত করে দিল--- সে এক বিরাট ইতিহাস বটে। 

এ সব রূপকথার গল্প এখন সত্য! কখনো কখনো অতি সত্য।  কারণ জগত চলছে 'চালাকি'তে। সে চালাকি করে কে কত উপরে উঠবে সেদিকেই নজর। 

এতে দোষের কিছু  আছে বলে আমি সেটার দাবি করতে চাচ্ছি না। 

আমার কষ্টের জায়গাটা ভিন্ন। শিক্ষকদের বেতন আর আমলাদের বেতনের মধ্যে একটা ফারাক থাকছে। এতে শিক্ষকরা মর্মাহত।  প্রাথমিক শিক্ষকরা দেখলাম রাস্তায় ঘুরছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  দুই শিক্ষক পিতা তাদের সন্তান হারিয়ে কাঁদছেন।  একজন বলছেন, 'বিচার চাই না। '  তার এ প্রতিবাদের ভাষাও বুঝতে পারেনি আমাদের অক্ষম রাজনীতি। 

আমরা সবাই বলছি--- এ অস্বাভাবিক কি হে।

নগর পুড়লে কি দেবালয় এড়ায়! এড়ায় না। তবে আমরা বিশ্বাস করতে চাই না; নগর পুড়ছে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই শিক্ষকরা তার প্রাপ্য সম্মান পাবেন। 

সেটা যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন। 

বছর কয়েক আগে খাগড়াছড়ির  লক্ষীছড়ির এক চা দোকানের কোনায় বসে কথা হচ্ছিল--- দশরথ চাকমার সাথে। লম্বাটে চোয়ল আর তীক্ষ্ণ চোখ। হাসতে হাসতে বললেন-- দা্দা ছেলেপুলেকে পড়িয়ে চাকুরী দিয়ে দেন; অশান্তি থাকবে না।   এরশাদ সরকারের সময় উপজেলায় চেয়ারম্যান ছিলেন দশরথ। বললেন--- ঠিক মত পড়াতে পারিনি বলে আমার ছেলে এখন গাড়ি চালিয়ে জীবিকা অর্জন করছে। তবে আমি তাকে সুশিক্ষা দেবার চেষ্টা করেছি--- 'শ্রম দিয়ে খাও।' শ্রম না দিয়েও অনেক উপার্জনের ব্যবস্থা আছে। 

আমি আমার সন্তানদের সেটা  উপেক্ষা করতে শিখিয়েছি। 

দশরথরা দেশের আনাচে কানাছে আছেন; তাদের জাগিয়ে দিন--- শিক্ষকদের সম্মানটা দিন। নৈতিক শিক্ষা; অন্যায় অবিচার নিয়ে প্রাণ খুলে কথা বলতে দিন তাহলে চাপাতি, বন্দুক , পেট্রোলবোমা আর রক্তারক্তির অবসান হবে।  

আসুন আজ যে শিশু পৃথিবীতে এসেছে তার তরে আমরা একটা সাজানো বাগান রচনা করি। আমরা যেন নতুন প্রজন্মের কাছে না শুনতে হয় তোমরা সব লুটেছো; তার মাশুল দিচ্ছি আমরা। শুভ হোক সবার প্রতিক্ষণ।