সুখ অসুখের গল্প:: ৫:: হলি সাইট, ধর্মীয় পর্যটন।




 সুখ অসুখের গল্প:: ৫:: হলি সাইট, ধর্মীয় পর্যটন।


প্রচণ্ড গরম। জুম্মার নামাজ পড়ার জন্য দিল্লি জুমা্ মসজিদে যাচ্ছি। আমরা যদিও বড় মসজিদকে জামে মসজিদ বলি, এখানে দিল্লির সবচে বড় মসজিদের নাম জুমা মসজিদ।  কয়েকশ বছরের পুরনো মসজিদ।  যে সময় মসজিদ  তৈরি হয়, সে সময়  বিদ্যুতের এত অগ্রগতি ছিল না। তাই সহজেই যে প্রকৃতির আলো বাতাস  আসা যাওযা করতে পারে, সে ভাবেই তৈরি করা। এর নিমাণ শৈলিও মোগল স্থাপত্য নকশায়।

জুম্মার দিন মসজিদের তিন গেট দিয়ে কয়েজ হাজার  মুসল্লী নামাজে সমবেত হন।

আমরা নামজ পড়ার পর মেহরাবের কাছে পৌঁছালাম। আব্বা বলছিলেন,  যেখানে ইমাম সাহেব দাঁড়ান, তার ঠিক পেছেন মোগল সম্রাটরা নামাজ পড়তেন। এ মসজিদ তৈরির সময়  মোগল সম্রাটের ঘোষণা ছিল- যিনি আছর নামাজের সুন্নত কাজা করেননি এমন লোক  মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করবেন।

এ রকম অনেক  অজানা তথ্য জানতে জানতে মসজিদ ঘুরে দেখছিলাম। মসজিদের উন্মুক্ত স্থানে ওজু করার জন্য একটি পুকুর। এর চারপাশে ওজু করার ব্যবস্থা। প্রচণ্ড রোদ থেকে মুসল্লিদের স্বস্তির জন্য টাঙ্গানো হয় সামিয়ানা।

 দিল্লি জামে মসজিদে আমরা  বেশ কিছুটা সময় কাটালাম।  গরমে পুড়তে পুড়তে তিনটি গেটই ঘুরে এসে বের হওয়ার সময় জানলাম শাহ ওয়ালী মুহাদ্দেসে দেহলভীর  সমাধি মসজিদের কাছে। মিনিট কুড়ির পথ। আব্বা আর আমি দুজনে একটা অটোতে চড়লাম, পৌঁচালাম  পাঞ্চ পীর মসজিদে। মসজিদটি  খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।  কারণ পাঞ্চ পীর মসজিদের কোনো নিশানা নেই।

এটা অনেকটা কলোনীর মত জায়গার পাশে একটা কবরস্থানের মত এলাকা্। এখানেই ওলামায়ে জমিয়তে হিন্দের অফিস। সেটি পার হয়ে গেলে একটি কওমী মাদরাসা। তারপর একটা মসজিদ। মসজিদের পাশে একটা ঘরে শাহ  ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভীর সমাধি। সাথে তার পীর ও তার সন্তানের সমাধিও সেখানে। ইনডিয়াতে ইংরেজ তা্ড়ানোর আন্দোলনে তিনি অগ্র সেনানী ছিলেন।

আব্বার জীবনের একটি  সুপ্ত ইচ্ছা ছিল শাহ ওয়ালীউল্লাহর সমাধিতে আসা। সে ইচ্ছা পূরণ ও শাহ ওয়ালীউল্লাহ রহ: কবর জেয়ারতের পর এমনটাই জানালেন।

জেয়ারতের পর আমরা বের হচ্ছি, তার সমাধিতে খুব কম লোকের আনা গোনা।  তবে যারা আসছেন, অনেকক্ষণ ধরে থাকছেন।

বের হতে হতে আব্বার কাছে শাহ ওয়ালীউল্লাহর  জীবন থেকে না রকমের কথা শুনছিলাম, তার মেধা,জীবন এবং ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশে তাঁর ভূমিকা্  সম্পর্কে।

 রোদের উত্তাপ বাড়ছে। আমাদের গন্তব্য কুতুব মিনার। পাঞ্চপীর মসজিদ থেকে এর দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। আমরা অটোতে আসলাম। কুতুব মিনারে এস আব্বা অস্থির। হাঁপিয়ে গেলেন। এত লম্বা জার্ণি শেষে আমরা মিনারের অভ্যন্তরে ঢুকতে যাবো, দেখি টিকেট লাগে।

টিকেট কাটতে গিয়ে দেখি ইনডিয়াদের জন্য ৩০ রুপি আর  ফরেনারদের জন্য ৫০০ রুপি।  কাউন্টারে টাকা দিলে আমাকে তিরিশ রুপির দুটা টিকিট দিলো।  ভাবলাম, ফরেনার পরিচয় দিয়ে ৫০০ রুপি খরচ করব, পরে মনে হলো--- আমি তো পরিচয় লুকাইনি, তাহলে  বাড়তি টাকা গুনতে যাব কোন দুঃখে। ২০০৬-০৭ এ একবার সিদ্ধান্ত হলো ইনডিয়া তার দেশের  পর্যটন স্পটের জন্য সার্কের আলাদা ফিস ঠিক করবে।  তবে সেটির আর চূড়ান্ত করেনি। বঙ্গীয় মোছলমানদের থেকে যতটাকা চুষে নেয়া যায়, ততই লাভ!

কারণ পরিসংখ্যান বলছে, ইনডিয়ার  রেমিটেন্স আহরণের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ। অথচ তারা সৌদি বাশশার সাথে সমীহ করে কখা বলে। আর আমাদের বঙ্গীয় মুসলমানদের হয়রানি করে। গরীব বলে হয়ত। কিন্তু আমরা গরীব হলেও তাদের জিডিপিতে বড় ধরণের অবদান রাখছি, সেটা তারা ভুলে যায়।

সে যাক কুতুব মিনারের অভ্যন্তরে ইমাম হামজার সমাধি ও  আ'লাই দরজা পরিদর্শন, মিনার এলাকা ঘুরে মোঘল মসজিদে আছরের নামাজ পড়লাম।  কিছুটা সময় বসে  আব্বা আর আমি বের হলাম। প্রচণ্ড ক্লান্ত আব্বা। ফের একটা অটো ধরে চলে এলাম হোটেলে। সে সাথে ইনডিয়ান  হলি সাইট ভ্রমণের সমাপ্তি!  

সুখ অসুখের গল্প : ৪:: নিজামউদ্দিন আউলিয়া আর মির্যা গালিবের মাজারে একদিন।




সুখ অসুখের গল্প : ৪:: নিজামউদ্দিন আউলিয়া আর মির্যা গালিবের মাজারে একদিন।

ডাক্তারের কাছ থেকে 'অপারেশন লাগবে না'- সিদ্ধান্তের পর  হাতে অনেকটা সময় পাওয়া গেলো। এ সময়টা আব্বার তার শিক্ষাজীবনের প্রিয় কিছু নায়কের কবর জিয়ারতে যেতে চান। আমাকে এমনটা্ই বললেন।

আমি দিল্লি বেশ কয়েকবার আসলেও দিল্লি জামে মসজিদ আর কারিম'স রেস্টুরেন্ট ছাড়া অন্য  ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যাওয়া হয়নি। তাই চিনতে বেশ সমস্যা হচ্ছিলো।

দিল্লি এপোলোর পেশেন্ট লাউঞ্জের পশ্চিম মাথায় একটা  নামাজের জায়গা আছে। সেখানকার ইমামকে আব্বা খুঁজে বের করলেন।  তাঁর কাছেই তিনি শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী, মির্যা গালিব আর  নিজামউদ্দিন আউলিয়ার সমাধি সম্পর্কে  জানতে চান? এমন প্রশ্ন করতে ইমাম সাহেব কিছুটা বিস্ময় নিয়ে তাকালেন। পরে আব্বার পরিচয় জানতে পেরে তিনি  সব কিছুর সঠিক ঠিকানা সংগ্রহ করে দিলেন।

প্রথম দিন ১৬ জুন, আব্বার ফিজিওথেরাপি শেষ করে ইমাম সাহেবের  ঠিক করে দেওয়া  টেক্সি করে গেলাম নিজাম উদ্দিন  রহ: এর সমাধি ও খিলজি মসজিদে। সারিতা বিহার থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার। গাড়ি থেকে নেমে অনেক দূর হেঁটে আমরা পৌছালাম  নিজামউদ্দিন আউলিয়ার  সমাধিতে!

পথে পথে মাজারে দেয়ার জন্য ফুল, ক্যালিগ্রাফি সমেত সবুজ কাপড় আর লোবান-মোমবাতি বিক্রি হচ্ছিলো। যেমনটা হিন্দি সিনামায় দেখা মেলে।  বহু পুণ্যার্খী সেখানে এসেছেন। ধর্ম-বর্ণ-বিচার নেই।

আব্বার সাথে যাওয়ার পর আমার গাইডের দরকার পড়লো না। নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মা'রেফাতের  বিষয়ে বিস্তারিত শুনছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম, এটা জেনে যে, আধ্যাত্মিক শক্তিও  মোগল সম্রাজের বিকাশে বড় ভূমিকা রেখেছিল।

ভেতরে ঢুকলে  মানুষের কিছু আচরণকে যে কারো  খারাপ লাগবে। আব্বা বিরক্তি প্রকাশ করছেন।  কিন্তু এটা তো সত্য যে, এখানে আমাদের কিছু করণীয় নেই।

 তার মতে, এখানে যারা পুণার্থী তাঁদের প্রায় সবাই ধর্ম অবমাননা করছেন। নিজামউদ্দিন আউলিয়ারা যে জন্য ধর্ম ও মুসলামনের সম্রাজ্য বিস্তারে পরিশ্রম করেছেন, তারা তার বিপরীতে চলছেন।

তবে এটাও সত্য যে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারে  বঙ্গীয় মাজারের মত সিজদায় পড়ে থাকার সুযোগ নেই।  নামাজ পড়ার জন্য  মো্গল আমলের খিলজি মসজিদ আছে।

নিজাম উদ্দিন আ্উলিয়ার  মাজারের  পুরো আঙ্গিনা আমরা ঘুরে দেখলাম,  খিলজি মসজিদেও যাওয়া হলো। মোগল আমলে অন্য সব মসজিদের মতই লাল ইটের গাঁথুনি অনন্য এক মসজিদ। অসাধারণ স্থাপত্য নকশা যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

 সমাধিতে ফুল আর সবুজ কাপড় বিছানো এখানে যেন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। আমাদের খালি হাত আর  ঘুরতে দেখে অনেকে বিস্ময়ে বিস্ফোরিত চোখে তাকাচ্ছেন।

 নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার সমাধি জিয়ারতের পর আমরা বেরিয়ে আসলাম।

 বাইরে প্রচণ্ড রোদ্দুর। গেটের বাইরে আসতে তাবলীগ জমাতের মারকাজ।  তার একটু আগেই মির্যা গালিব একাডেমি। আব্বার চোখ পড়তেই এগিয়ে গেলেন। গালিবের   সমাধি কোথায়? জানতে চাইতে দেখিয়ে দিলেন, সেখানকার একজন ।  সমাধধি প্রাসঙ্গে উন্মুক্ত মঞ্চ। মঞ্চের সামনে খোলা মাঠ। সেখানে কিশোররা ক্রিকেট খেলছে।  তাদের  কাছ থেকে  সমাধির ঠিকানা জানতে চাইলে  তারা সিকিউরিটি গার্ডকে দেখিয়ে দিল। গার্ড তালা খুলে আমাদের নিয়ে গেলেন সমাধিতে।

 আব্বা বলছিলেন,  মির্যা গালিব  কেবল মুসলিম জাগরণের কবিই নন, তিনি একজন দার্শনিকও। তার বহু কবিতা আব্বা জানেন। সেখান থেকেও কিছু কবিতার পটভূমি আমাকে জানালেন। এটা একেবারেই আমার প্রথমবার জানা।

 আব্বা কিছুটা আক্ষেপ করেই বললেন, মির্যা গালিব সম্পর্কে আমাদের অনেকেই জানেন না। আর আমরা যেহেতু উর্দু জানি না, তাই মির্যা গালিবের কবিতা বোঝা মুশকিল।

 আমি ব্যক্তিগতভাবে  ভূপেন হাজারিকার গান 'আমি এক যাযাবর' এ প্রথম মির্যা গালিবের  নাম শুনেছি। এ টুকুই!

 মির্যা গালিবের মাজার  এলাকা খুবই সুরক্ষিত এবং পরিচ্ছন্ন। আব্বা  মির্যা গালিবের  সমাধি জেয়ারত করলেন।  বললেন, জীবনে আর কখনো হয়ত আসা হবে না। তাই  দেখে  গেলাম।

আমরা বেরিয়ে আসছি।   পরে গালিব একাডেমি থেকে আব্বা একটা কবিতা সঙ্কলন কিনলেন।  স্মৃতি হিসাবে সংরক্ষিত থাকরেব। কারণ আব্বা ছাড়া আমরা কেউ উর্দু পড়তে পারি না! সুতরাং এটি স্মৃতিতে চলে যাবে!। তবে গালিবের কিছু কবিতা ইংরেজি ভাষায় রয়েছে।  এর একটা সংকলন  পাওয়া যাবে। সেটি থেকে কিছু কবিতা পাঠ করার চেষ্টা করছি।

 একটি অনন্য অভিজ্ঞতা আর অসাধারণ  দিন কাটলো আমাদের। আব্বা মাজার ও মাজার ঘিরে মানুষের যে সব  কর্মকাণ্ড এ সবের প্রচণ্ড বিরোধী হবার কারণে, একজন পর্যটনকর্মী হিসাবেও আমি যখনই যে নগরে গেছি খুব বিখ্যাত কোন মাজার না হলে সেখানে আমরা যাওয়া হয়নি।

তবে নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজারের যাবার পর মনে হযেছে, সব মাজারে যাওয়া উচিৎ এবং এখানেও মানুষের আচরণ -অসহায়ত্ব দেখার একটা সুযোগ আছে।   যেহেতু আমি মানুষ  ও তাদের আচরণ  দেখতে পছন্দ করি এবং সেটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকি,তাই এ সব জায়গায় না যাওয়াটা আমার একটা ভুল ছিল।

কেউ কেউ মাজারে যাওয়াকে শিরক মনে করেন।  অন্য শিরক করছে, আপনি বা আমি যাচ্ছি কেন?  আমি ব্যক্তিগতভাবে  মাজারে যাওয়ার বিরোধি নই। এবং ছোট ভাই হিরো আমাকে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের পর আমি যে টুকু পড়েছি, তাতে মা্জারে যেতে বাধা আছে এমন কোন তথ্য ধর্মীয় বিধি নিষেধ পাইনি। বরং আমার মনে হয়েছে, আমরা এ সব জায়গা এড়িযে যাবার কারণে, কিছু ভণ্ড, ধান্ধাবাজ আর ভয়ঙ্কর রকমের অপরাধীরা মাজারকে তাদের দখলে নিয়ে অপকর্ম করছে। এ সব অপকর্ম থেকে মনিষীদের মাজারকে মুক্ত করার জন্য আমাদের মাজার পূজারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।

 আর এটা তো সত্য মৃত ব্যক্তি  অসহায়। তাঁর কারো জন্য কিছু করার থাকে না। 

সুখ অসুখের গল্প-৩ : কুখ্যাত ডাকাত বনাম-ডাক্তার!


ইনডিয়া যাওয়ার জন্য প্রয়োজনে অর্থনৈতিক প্রস্তুতি আগেই ছিল। আব্বা নিজেই নিজের চিকিৎসার সব ব্যয়ভার আমার একাউন্টে জমা করিয়েছেন। তবুও আমি কিছু হাতে রাখলাম।

ওড়ার জন্য প্রস্তুতির ফাঁকে কয়েকটা এয়ারলাইন্সে খোঁজ নেয়া হলো, জানা গেলে জেট-ই বেস্ট। অনটাইম ফ্লাইট। ওয়াকার ভাই জানালেন, গুগলের একটা সাইট থেকে টিকিট কেনা যাচ্ছে, সাশ্রয়ী মূল্যে।

তবে শেষ পর্যন্ত সেখানে না গিয়ে আমার পুরনো সুহৃদ সুমন ভাইয়ের কাছ থেকেই টিকিট নিলাশ। কারণ আব্বার টাইম আর হসপিটালিটির ব্যাপারে সেনসেটিভ !

আল্লাহর নামে বাপ বেটা উড়াল দিলাম রোজার শুরুর দিকে সকাল ১০ টা ১০ এর ফ্লাইটে।
ভাবছিলাম, উড়ালের সাথে সাথে ভিসা বিষয়ক জেরা সমাপ্ত!

না ঠিক তা হলো না! একটা হুজুর মানুষ এয়ারে চড়ে দিল্লি ঢোকে কেমনে? তাকে সহজে ঢুকতে দেওয়া ঠিক হবে না ধরে নিয়ে জেরা করার জরুরী মনে হলো ইমগ্রেশন কর্মকর্তার।

সাড়ে ১২ টায় দিল্লি এয়ারপোর্টে নামার পর ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার কোশ্চেন! ভিসার জন্য ৩ বার এপ্লাই করছিলেন ক্যান? অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু পারলাম না।

জন্মগতভাবে মাথা গরম! আপনাদের এম্বাসি তো কইছিলো ৪ বার পর্যন্ত এপ্লাই করা জায়েজ!
কর্তা ব্যক্তি উঠে পড়লেন, বড় কর্তাকে ডেকে আনলেন। তিনি ভিসা দেখে বললেন, ঠিক আছে ছেড়ে দেন। লোক কইলকাতার। তাই বাংলায় কথা কইলো।

এ ফাঁকে আরেকজন বাংলােদেীশ একই রকম কোশ্চৈন শেষ পরে ওপারে গিয়েছেন, তিনি উকি দিয়ে বললেন, দাড়ি টুপি দেখলেই উনাদের সমস্যা! এটা একটা ফাউজলামি।

আমি মৃদু হেসে উনার বক্তব্যকে সমর্থন করলাম।

এ দিকে হসপিটাল থেকে আমাদের রিসিভ করতে আসা যুবরাজ বিরক্তি নিয়ে ঘুরছে। বলল, ইমিগ্রেশন ব্যাটারা এমনই! লাগেজ টেনে এনে হসপিটালের ভাড়া করা গাড়ি করে সরাসরি চলে এলাম ইন্টারন্যাশনাল পেশেন্ট লাউঞ্জে (আইপিএল)।

ডাক্তার আগে থেকে ওরা সেট করে রেখেছে। নাম সুধীর কুমার তেয়াগি। ওরা উচ্চারণ করে 'ছুদির তেয়াগি'। দিল্লি এপোলোর ব্যস্ত নিউরো ও স্পাইন সার্জন। তার সাথে অপারেশন থিয়োটারের পাশের চেম্বার মোলাকাত হলো।

আব্বার এমআরআই রিপোর্টটা রট লাইটের ওপরে ফালাইয়া দেখলেন। বললেন, মাথায় কোনো সমস্যা নাই। মেরুদণ্ডে সমস্যা আছে।

'অপারেশন দরকার নাই!'- ঘোষণাও দিলেন সুধীর। বললেন, তবে ফিজিও থেরাপি লাগবে। ৫ দিনের ওষুধ ও ৫ দিনের ফিজিও থেরাপি পরামর্শ দিলেন।

বল্লাম, আরেকবার টেস্ট করে দেখন যাইবো! বললেন, না, শুধু শুধু টাকা খরচ করবেন কেন?
আব্বা খুব খুশী, কারণ ডাক্তার তাকে পুরো বিষয়টা ব্রিফ করলেন, বললেন, আপনার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

আর এ রিপোর্ট দেখে, ইবনে সিনার কুখ্যাত নিউরোলজিস্ট ডাকাত আবদুল হাই প্রেসক্রিপশনে লিখেছেন তাকে ইমিডিয়েটলি হসপিটালে ভর্তি করার জন্য। তার নাকি ম্যাসিভ স্ট্রোক হয়েছে! আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাহকে এ রকম এক কুখ্যাত জানোয়ারের হাত থেকে রক্ষা করেছেন-আমীন।

আর ল্যাব এইডের আরেক কুখ্যাত ডাকাত সিরাজুল হক বলেছিলেন, স্পাইনের ডিস্কের মাঝখান থেকে জেল বেরিয়ে যাচ্ছে! তাই ব্যথা হচ্ছে।

তাও ঠিক নয়।

আর আজহারুল হক ওরফে রংপুরীয় বলদ নিউরোলজিস্টরে কথা আর কি বলবো!

তবে আজহার ও সিরাজুল হককে আব্বা অনেক বড় ডাকাত বলেই জানলেন। সুধীর বাবুর ওষুধ খাওয়ার পর আব্বাকে বল্লাম, দেশের এত বড় বড় ডাক্তার দেখাইলেন, তারা তো বড় সমস্যা কইছে। চলেন , ডাক্তার ভিপি সিং-কে দেখাই।

ভিপি সিংও এপালোর নিউরো সার্জন। সুধীর বাবুর চে বয়সে বড়ো। অভিজ।ঞাতায়ও। বাংলাদেশেও দু চারবার এসেছেন নিউরোসার্জারি জ্ঞান বিতরণ করতে!

আইপিএল এ সনিতাকে বিষয়টা জানালাম। হেসে ও বলল, ফাও টাকা খরচ করবা কেন? বল্লাম, আব্বার সন্তুষ্টি!

পরে ভিপি সিংয়ের দরবারে গেলাম ৪র্থ দিন। তিনি আব্বার বসের পরিচিত। ভালো করে দেখে বললেন, সুধীর বাবু ভালো দেখেছেন। তিনি যা বলেছেন, তাই। আপনাকে ব্যায়াম করতে হবে। এটাই চিকিৎসা!

সে চিকিৎসা নিয়ে আমরা ফিরতে চাইলাম।

সুধীর বাবুকে আব্বার প্রোস্টেট সংক্রান্ত সমস্যার কথা জানালে, তিনি ডাক্তার অংশুমান আগারওয়ালকে দেখাতে বললেন। সুধীর বাবুর রেফারেন্স তাই খুব যত্ন করে দেখে জানালেন, ' আপনার আর টেস্ট করার কাজ নেই। ভালো আছেন। ৪ মাস পরে টেস্ট করে মেইল করে দিয়েন। আমি আবার দেখে দেব।'

আমরা তবুও বললাম বাংলাদেশে ইনফেকশনের একটা রিপোর্ট আছে। সুতরাং আরেকবার চেক করা দরকার। আমাদের অনুরোধেই পুরনো রিপোর্ট থেকে ৪ টি করতে দিলেন। বললেন, আমি জানি সব ঠিক আছে। আপনারা চাইছেন বলে টেস্ট দিলাম। এটার জন্য টেস্টের দরকার ছিল না!

তবুও আমরা টেস্ট করলাম। রেজাল্ট-- সব ঠিক আছে।

বাংলাদেশে ই্ওরোলজির ডাক্তার সালাম ,ডাক্তার জাহিদ ও ডাক্তার নিনান চাকোর পরামর্শই অংশুমান ঠিক রাখলেন। কোনো ওষুধ নয়। অবজারভেশন!