ইন দ্য নেম অফ পলিটিক্যাল পার্টি ‘ধর্ষণ বরদাশত করবে না’

  ছবি অন্তর্জাল থেকে নেয়া 

 


বিভৎস ধর্ষণ-দৃশ্য-সঙ্কট বর্ণনার জন্য এ লেখা নয়।  এর উদ্দেশ্য আমার মনে ভেতর জমা থাকা কিছু কথা বলা। নারীর সম্মান, নারীর অধিকার এবং তেতুল নিয়ে বিস্তর আলাপ আমরা শুনি।  শুনি- এ জন্য বলছি, কারণ আমাদের সবার বয়স হচ্ছে, আমরা শুনি এবং শোনাতে পছন্দ করি বলেই।

 আমাদের উচিত শোনা ও শোনানো না। মানানো। আমরা  মানাতে পারছি না। এ ব্যর্থতার দায় আমরা এড়াতে পারি না।  সরকার হিসাবে, সমাজ হিসাবে, নাগরিক হিসাবে, বাবা মা হিসাবে --- এ ব্যর্থতার দায় আমাদের নিতেই হবে।

এলাকার নাম না করেই বলছি-- দেশের আনাচে কানাচে যে হারে ধর্ষণ হচ্ছে; এ সব সমস্যা সমাধানে আমাদের করণীয় কি হতে পারে, সেটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। আমরা কি করেছি? সেটি নিয়ে আলোচনা নেই। মানে- আমাদের রাষ্ট্র এর জন্য উদাহরণ দেবার মত কী ধরণের শাস্তি আরোপ করেছে, তা আমাদের সামনে নেই। ঘটনা ঘটলে আমরা হই চই করি। তারপর থেমে যাই। আমাদের সামনে এত এত ইস্যু আসে;  এ সব তখন চাপা পড়ে যায়। আর ডিজিটাল যামানায় এতদ্রুত আবেগ  এবং ক্ষোভ  বাড়ে আবার একই সাথে প্রশমিত হয়ে যায় যে,  এটা নিয়ে নীতি নির্ধারকদের কারো প্রচুর ভাবনারও প্রয়োজন পড়ে না।

২০০০ সালে মিলিয়েনিয়াম  উদযাপনে দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক নারী লাঞ্চনা নিয়ে আমরা  নানা রকমের তর্ক বিতর্ক শুনেছি। তারপর ওই ঘটনার ফলাফল-- রাতের বেলার কোন উৎসবে নারীর ঘরের বাইরে আসা বন্ধ হয়েছে।
   
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পয়লা বৈশাখে রাজু স্মৃতি ভাস্কর্যের সামনে একাধিক বড় কুকর্মের খবর  আমরা জানি । তার সন্ধ্যার দিকের। সেটি নিয়ে বিস্তর আলাপ-তদন্ত হয়েছে।  সেটিও আমরা জানি। কিন্তু ফলাফল শূণ্য।  

এ রকম আরো অনেক রকম  ঘটনার কথা আমরা জানি। আমরা সব বলি না।  বান্দরবানের আলি কদম থেকে সিলেট নগর কিম্বা রাজধানী ঢাকা--- কোথাও নিরাপদ নন নারী। অনিরাপদ জীবন মেনে নিয়েই তাদের দিন চলছে। তাদের পরিবারও বিপর্যস্ত  হচ্ছে।  

নারীবাদী নেতা নেত্রী এবং শাসক দল নিজেও নারীবাদী হিসাবে নানাভাবে  নিজেদের রূপায়িত করেন। এটা নিয়ে আমার মনের ভেতর কোন কষ্ট না। কষ্ট কেবল নারীর  জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতা সমানতালে শাসক এবং নাগরিক সবার।  
 এর জন্য  কি করা যেতে পারে বা পারতো--- সে বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত একটু বলি; এর সাথে আপনাদের দ্বিমত থাকতে পারে। আমি সে মতামতকেও শ্রদ্ধা করি---


শুভ পর্যটন; শুভ পর্যটন দিবস

=


পর্যটন কর্মী হিসাবে আমি কাজ করি বছর ২১ হবে।  নিজের মত করেই করি। এর মধ্যে কিছুকাল পর্যটনের 'নেতাগিরি'ও করেছি। তবে এবারই প্রথম একটা মহামারি কালে বিশ্ব পর্যটন দিবস দেখছি। এ সময়ে যার  থিম ধরা হয়েছে- ট্যুরিজম অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট। বাংলায় যাকে বলা হচ্ছে- 'গ্রামীণ উন্নয়নে পর্যটন'।

 পেক কাদা মাখামাখির মেঠোপথ, বৃষ্টি ভেজা কাক-শালিকের ওড়াওড়ি, ঘোলা জলে জোছনা উপভোগের গ্রাম আমাদের। ঋতুভেদে পর্যটনের যে বৈচিত্র; সেটি এই বাংলায় সবচে বেশি। সেই দিক বিবেচনায় আমরা  গ্রামীণ পর্যটনে এগিয়ে থাকবার কথা। 'থাকবার কথা' এ জন্য বলছি--- আমরা আসলে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে নেই।

আমাদের দেশের মানুষের জীবনযাত্রা- গ্রামে, গঞ্জে মানুষের জীবনাচরণ, সংস্কৃতি, হাট বাজার, হস্ত শিল্প, কৃষি; পিঠাপুলি আর আপ্যায়ন---এ সব পর্যটনের দামি পণ্য। যদিও আমাদের অনেকের কাছেই এটা খুবই আজগুবি শোনাবে।  তবুও এটাই সত্য।  অস্ট্রলিয়াতে গ্রামীণ জীবন উপভোগ করা সবচেয়ে ব্যয় বহুল পর্যটন। নিউজিল্যান্ডেও তাই।  

শহুরে জীবনে অভ্যস্ত অথবা শহুরে জীবনের দুর্নিবার সুখের সন্ধান মেলে--- এ ভাবনা মাথায় রেখে আমাদের সমাজ ব্যবস্থার ভেতরে ভেতরে যে বদলটা হয়েছে, সেটি আসলে সঠিক এবং  গঠনমূলক বদল নয়। গ্রাম ও  শহরের মেলবন্ধনটা এখানো জরুরী। সে দিকটা উপেক্ষিত। এর পেছনে বহু কারণও নিশ্চয় আছে।

আজকের বিশ্ব পর্যটন দিবসের পর আবার গ্রাম নিয়ে আলোচনা সে অর্থে জমবে না। তবে এ কথা আমি আরো এক দশক আগেও বহু জায়গায় বলেছি। এখনো বলছি---আমাদের মূল প্রডাক্ট গ্রাম এবং গ্রামের মানুষ। বিদেশিরা এটা দেখতেই এখানে আসতে পারেন। এ দেশের মানুষের সারল্য, বিপদের সময়ও হাত নেড়ে অভিভাবদ কিংবা বন্যায় ডুবে যাওয়া ঘরের উপর বসে হাসতে পারে--- আমাদের গ্রাম বাংলার মানুষ।  অকপটে বলতে পারে, এক খিলি পান খান। নেন একটু সরবত খান।

এমনকি অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের কাছেও গ্রাম আকর্ষণীয় হবে। এর কিছুটা অবশ্য আমরা উপভোগ করি বহু বছর থেকে। তার একটি বিরিশিরি । অন্যটি পার্বত্য চট্টগ্রাম।  যড়িও ঠিক গ্রাম নয়, পাহাড় এবং জনগোষ্ঠী মিলিয়ে আমাদের একটা সমন্বতি পর্যটন সেখানে।  তবে এর বাইরেও বিশাল জগত রয়েছে গ্রামের।


                                  গোধূলী-- নোয়াখালীর একটি গ্রাম থেকে তোলা ছবি
 


গ্রাম বাংলার কতশত রকমের বৈচিত্র; সেটি কেবল  ঢাকা থেকে দু পা ফেলে বের হলেই সহজে উপভোগ করা সম্ভব।  একেকটা গ্রামের মানুষের খাদ্য একেক রকম। একেক রকম তাদের গান বাজনা।  ধর্ম চর্চা। কৃষি।  ফসল তোলার  গান।  উৎসব। এ সবই গ্রামীণ পর্যটনের অংশ।

আমরা এ পণ্যকে সাজাতে পারি নানাভাবে। সাজানো হচ্ছেও। কমিউনিটি ট্যুরিজমের ডেভেলমন্টে হবে। সামনে এটি অনেকদূর যাবে। দেশের প্রথম গ্রামীণ পর্যটনের ভিতটা তৈরি হয়েছির লাউচাপড়ায়। এখন সেটি ভিন্ন স্থানে ছড়েয়ে যাচ্ছে। এটাকে আরো  অর্গানাইজ করতে হবে। পর্যটকের নিরাপত্তা, উৎসব-প্রকৃতি উপভোগের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য এবং এ খাতে বিনিয়োগ আগ্রহ বাড়াতে  উদ্যোগ নিতে হবে। এ উদ্যোগ সরকারি বেসরকারি  দু'খাতেই হতে পারে।

 আমার ব্যক্তিগত মত- সরকার পৃষ্ঠপোষক হোক। বেসরকারি লোকরাই ব্যবসাটা চালাক। তাহলে  এ খাতে সফলতা আসবে।    

 ওয়াল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম  কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) হিসাব বলছে, ২০১৮ সালে  দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৩ দশমিক ৯ শতাংশ অবদান পর্যটন খাতের। ২০১৯ সালে এটি কিছু বাড়লে এ মহামারিকালে এটি কমছে।  তবে গ্রামীণ পর্যটন ঘুরে দাঁড়ালে এখাতের অবদান জাতীয় কর্মসংস্থান  এবং মোট দেশজ উৎপাদনে বাড়বে--- এট নিশ্চিত করেই বলা যায়।  

সংস্থাটি বলছে, মহামারিকালে পর্যটন খাতে সারা বিশ্বে  সাড়ে ৭ কোটি মানুষ চাকরি হারাবে। লোকসান হবে ২ ট্রিলিয়ন ডলার।

জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা  জানাচ্ছে, চলতি বছরই পর্যটন আবার পুরোপুরি চালু হলে তিনটি দৃশ্য দেখা যাবে। ১. জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও পর্যটনে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে ৬১ কোটি পর্যটক পাওয়া যাবে। ২. নিষেধাজ্ঞা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থকলে  পর্যটক পাওয়া যাবে ৪০ কোটি।  নিষেধাজ্ঞা ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকলে পর্যটক পাওয়া যাবে  ৩২ কোটি।

আশার কথা হলো ইতোমেধ্যে বহু দেশে পর্যটনের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে।  বাংলাদেশও এটি সহসা তুলে না নিলেও গ্রামীণ পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিতে একটা বড় ধরণের পরিবর্তন আনা সম্ভব। এ কারণে সম্ভব যে মানুষের অভ্যন্তরীন ঘোরাঘুরি উপর ইতোমধ্যে সরকতার নিষেধাজ্ঞা  তুলে নিয়েছে। 

                                          পাহাড়-- বান্দরবান । ছবি সংগ্রহ করা। 



শুভ পর্যটন। শুভ পর্যটন দিবস।