বালিকা বয়সে যৌন নিপীড়ন এবং দেবী!




                                    ছবি জয়ার ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া।

রানুর বয়স কত? মানে জয়া আহসান।  দেবী সিনামার কেন্দ্রীয় চরিত্র। স্ক্রিণে  তাকে তেইশের বেশি বলা যাবে না B-)। কখনো সখনো সেটি ৩৩ পর্যন্ত নেয়া যেতে পারে ;) । রানু, হুমায়ূন আহমেদের  ভৌতিক উপন্যাসের প্রথম  কেন্দ্রীয় ভাবনা, এটি এবার  বড় পর্দায়  হাজির করেছেন জয়া।

বালিকা বয়সে যৌন নিপীড়ন একটা মেয়েকে তার কল্পনা জগতে কত রকমের রহস্যময় সাইকোলজির ভেতর দিয়ে নিয়ে যায়- হুমায়ুন আহমেদ, কিংবদন্তীর কথা শিল্পী এটাই মেলে ধরেছিলেন তার দেবী উপন্যাসে। সেটিই পর্দায় হাজির করেছে সি-তে সিনেমা। 

জীবনের জটিল সমাধান সূত্র যে সব সাইকো থেরাপিস্ট বা সাইকোলজিস্টের কাছে, তারাও অনেক সময় সেটি ব্যাখ্যা করতে পারেন না।  যেমন রানুর  ট্রান্সফরমেশনটা  মিসির আলী ব্যাখ্যা করতে পারেননি।  এমন ব্যাখ্যাতীত বিষয়গুলো ধরে সিনেমা বাংলাদেশে মনে করার মত সময়ে হয়েছে বলে জানি না।

দেবী- সে অভাবটা পূরণ করেছে। তবে এখানে আরো সাসপেনশন, বক্তব্যের তীক্ষ্ণতা দরকার ছিল, যেখানে চিত্র নাট্যকারের সফলতা নিয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্নটা দেয়া যেতেই পারে!

প্রযোজক হিসাবে দেবী-  জয়ার প্রথম প্রযোজনা।  অভিনেত্রী হিসাবে ভৌতিক সিনামায়ও তার এটা প্রথম বড় পর্দার আসা, যদি আমার স্মৃতি  বঙ্গীয় ইলেকশনের মত  আমাকে প্রতারিত না করে, তাহলে এটাই সহীহ কথা।

জয়ার পর্দার শরীরে রূপবতী নায়িকা যে ছাপ  হুমায়ুন তার ছবিতে আঁকেন তা ছিল, পুরো মাত্রায় ছিল। তাই এ দিকটা সফলভাবে চিত্রায়িত। ভৌাতিক ঘটনাটাও একইভাবে এসেছে।  তবে শেষ দিকে ক্লাইমেক্স বলতে  সিনামার ছকে যেটাকে বোঝানো হয়, সেটি হুমায়ূন আহমেদের দেবী বইতে থাকলেও সিনামায় সেটি প্রচ্ছন্নভাবে আসেনি।

মিসির আলীর ঘটনার গভীরে যাবার চেষ্টা এবং রানুর তাঁকে প্রথাগতভাবে চমকে দেয়ার ভাবনাটা ছিল এখানে উল্লেখযোগ্য।
চঞ্চল চৌধুরী মিসির আলী হিসাবে দশে ৬ দেয়া যেতে পারে। এটা আমার ব্যক্তিগত মত। কারণ  হুমায়ুন যে রকম এক মিসির আলীকে পাঠকের সামনে হাজির করেছেন, সেটি  পর্দায় তুলে আনার ক্ষেত্রে আমাদের অত্যন্ত দক্ষ এ অভিনেতা চঞ্চল  দেবীতে পুরোপুরি সফল!- এ কথা আমার মত ছোট দর্শক বলতে পারবে না।

গল্পটা বইয়ের মতই। চিত্রনাট্যকারের এখানে বাড়তি কোন কারিশমা নেই। বরং  মিসির আলী গুটগুটে অন্ধকার বাড়িতে এটা আলোর হাতছানি  ছিল। এটা হবার কথা নয়। তবুও হয়েছে।

শেষ দৃশ্যে আসলে নীলুই রানু হবার কথা ছিল। সেটি হয়নি। কারণ এখানে একটা  কাহিনীগত ট্রান্সফরমেশন ছিল মূল গল্পে।  কাহিনী ঠিক রাখলে  মানুষ বদলায়নি সিনামা।  এটা বড় ত্রুটি।  কারণ আমার মতে এ গল্পের মূল স্রোত যৌন নিপীড়ন।   সেখান থেকেই একটা অতি প্রাকৃতিক বিষয় রানুর ভেতর চলে আসে। এটার যদিও  বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, তবুও এটা তো সমাজে আছে। সেই সমাজের গল্পটাই সমাজের মত করে  বলার ঢংটা হুমায়ূন ঠিক রাখলেও চিত্রনাট্য সে সাক্ষ্য দিচ্ছে না।

তবুও একথা সঠিক এবং সত্য জয়ার  প্রথম প্রযোজনার সিনামাটি দেখলে টাকা উশুল হবে। যদিও সিনামায় তার স্বামী চরিত্র আনিসের অভিনয় অত্যন্ত  ম্যারমেরা। তারপরেও।  ভালো লাগবে। অন্তত যারা হুমায়ূন পড়ে বড় হয়েছেন, তাদের জন্য জয়ার সি-তে সিনামার প্রযোজনা ভালো লাগবে। পরিচালনা করেছে অনম বিশ্বাস। অভিনয় করেছে জয়া, চঞ্চল ছাড়াও শবনম ফারিয়া, অনিমেষ আইচ এবং আরো  অনেকে। সিনামাটির জনসংযোগ কনটেন্ট সহযোগি ছিল ইম্প্যাক্ট পিআর।   
                                                    ছবির পোস্টার, জয়ার ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া

অভিন্ন কলরেটের অভিজ্ঞতা কেমন?




ছবি আন্তর্জাল থেকে নেয়া

বাজারে প্রতিযোগি তৈরিতে সফল হতে না পারার পর   টেলিকম রেগুলেটর  বিটিআরসি একটা জায়গায় এসে অভিন্ন কলরেট করার যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে, এতে  অনেক গ্রাহকই আহত হয়েছেন। আবার খুশীও হয়েছেন অনেকে।

ব্যক্তিগতভাবে আমি এর প্রভাব আঁচ করতে পারিনি। কারণ আমি একটি  অপারেটরের বান্ডেল প্যাক ইউজার। ৪৯১ টাকায় ৬০০ মিনিট টক টাইম, ১০০ এসএসএম আর ৪ জিবি ইন্টারনেট পাই। এটা দিয়েই আমার মাস চলে যায়। অভিন্ন কলরেটের প্রভাব এই প্যাকেজে নাই।

তবে অসুবিধাও হয়েছে অনেকের। আমার আম্মা যেটি, বলছিলেন- তিনি গ্রামীণফোনের  ১০৯ টাকার প্যাকেজ খরিদ করতেন।  এতে বেশ সুবিধাই ছিল । এখন তার খরচা বাড়িয়েছে অপারেটরটি। তাই ১০৯ টাকায়  কাজ হচ্ছে না। এ প্যাকও নেই।

আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যরাও  এফএনএফ সুবিধা উপভোগ করতেন, সেটি এখন আর নাই।  এতে তাদের খরচ বেড়েছে। 

রেগুলেটর  সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে  এ দিকটা মাথায়  রাখছে বলে মনে হয় না।  যদি রেগুলেটর ইন্টারকানেকশন ফি রাখতে পারে, তাহলে তার এফএনএফ সুবিধাটাও জায়েজ করে দিতে পারতো। এটা না করার কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে।

আমরা লক্ষ্য করেছি, তুলনামূলক বাজার ব্যবস্থায় অপারেটররা নিজেদের মধ্যে এফএনএফরে বাইরে ভিন্ন অপারেটরেও এফএনএফ সুবিধা দিচ্ছিলো। বাজারে একটা ভেতরে ভেতরে প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছিল। তবে একথা সত্য  টেলিকম বাজারে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড শুরু থেকেই ছিল না। না থাকার সে দায়টা কার? সেটিও  নির্ণয় করা দরকার।

রেগুলেটরকে উদ্ধৃত করে খবরের কাগজগুলোর বয়ানে বলা হচ্ছে, বহু প্যাকেজে বিভ্রান্ত গ্রাহককে একটা সহজ সমাধানে নিয়ে এসেছে,  অভিন্ন কলরেট। এর সাথে আমার দ্বিমত নই।

তবে খরচাটা আরেকটু কমানো দরকার ছিল। এটি যদি ফ্লোর প্রাইস ৫০ পয়সা না করে আরেকটু কমানো যেত। ৩০ পয়সা বা ৪০ পয়সা তাহলে ঠিক  সুবিধা হতো।  সেটি সুবিধাটা কিন্তু রেগুলেটর এখনো নিশ্চিত করতে পারে।

রেগুলেটরের যুক্তি অবশ্য আমি নাকচ করি না। তারা বলত চাইছে, আমরা  যে বক্তব্য পাচ্ছি সেটি কেবল ২৫ পয়সা মিনিটে কথা বলা নিয়ে। কিন্তু অফনেট কল করার জন্য যে  এক টাকা বা তারো বেশি  চার্জ করা হতো, সেটি কিন্তু কেউ বলছেন না। আমরা বাজার অ্যাসেস করে এক সুষম  কলরেট ঠিক করেছি। গ্রাহকরা সহসা এর উপকার সম্পর্কে বলবেন।

অভিন্ন কলরেটর পক্ষে থাকা অপারেটরদের যুক্তি অভিন্ন কলরেট চালুর আগে  অপারেটর ভেদে অন-নেট কলের মিনিট প্রতি গড় মূল্য ৩৫ থেকে ৫৩ পয়সা। অফ-নেটের ক্ষেত্রে  মিনিট প্রতি ৮৫ পয়সা থেকে  ১ টাকা। সব অপারেটরের গড় কলরেট বিবেচনায় আনলে অন-নেটের গড় মূল্য মিনিট প্রতি ৪৯ পয়সা এবং অফ-নেটে ৯১ পয়সা।

বাজার প্রতিযোগিতায়  নিজস্ব ব্যবসায়িক কৌশলের অংশ হিসাবে প্রত্যেক অপারেটরের ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেজ দিতো।  যেমন কোন প্যাকেজে অন-নেট কলের মিনিট প্রতি মূল্য ৫০ থেকে ৬০ পয়সার উপরে। আবার কোন প্যাকেজে অফ-নেট কলের মিনিট প্রতি মূল্য ১ টাকা ২০ পয়সা থেকে  ১ টাকা ৪০ পয়সার উপরে। অর্থ্যাৎ অন-নেট ও অফ-নেট কলের মূল্য পার্থক্য থাকার কারণেই এই রকম প্যাকেজ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। এতে করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অফ-নেট কলের মিনিট প্রতি মূল্য অন-নেট কলের মিনিট প্রতি মূল্যের প্রায় ৩ গুণ।

একজন সাধারণ গ্রাহকের জন্য এই ধরণের মোবাইলফোন সেবা ব্যবহার করা কঠিন।  এর ফলে দেখা যায়, আমরা গ্রাহকরা সব সময় অন-নেট কল করতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন। গড়ে প্রতি মিনিট কলের জন্য গ্রাহকের খরচ হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ পয়সা।   অন-নেট এবং অফ-নেট নির্বিশেষে কলের একক মূল্য মিনিট প্রতি ৫০ পয়সা নির্ধারণ করায়  বর্তমান বাজারের গড় অন-নেট মূল্য থেকে কম এবং অফ-নেট কলের মূল্য থেকে আরো অনেক কম।

বিটিআরসি বলছে অভিন্ন কলরেটর চালুর আগে  একজন গ্রাহক তার ১০ টি কলের ৮ টি  করতেন অন-নেটে। বাকি ২ টি অফ-নেটে। এই অন-নেট কলের আধিক্য হওয়ার একমাত্র কারণ হল, অন-নেট ও অফ-নেট কলের মূল্য পার্থক্য। একক মূল্য নির্ধারণ করা হলে অন-নেট ও অফ-নেট উভয় ধরণের কলেরই মিনিট প্রতি মূল্য কমেছে।

 যা-ই হোক না কেন প্রযুক্তি সেবা মূল্য  নির্ধারণে  সরকারকে আরো যাচাই করা উচিৎ। যাতে করে বাজার প্রতিযোগিতার সুফল গ্রাহক পেতে পারে।