আমার বিশ্বদ্যিালয়ের সম্ভ্রম লুট হয়ে যায়!

আমি সেই উজ্জ্বল  রিপোর্টারদের মুখগুলো কল্পনা করি আর হাসি---ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস-অহঙ্কার- লুণ্ঠন করা বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের  পাপ লুকাতে তারা কতটা ব্যস্ত। তাদের অনেকেই এখন গণমাধ্যম-নিউজ ম্যানেজার।

আবার তাদের কেউ  জ্ঞান বিতরণ করেন এখানে ওখানে। অনেকে মাস্টর এবং  আমলা। সবাই এখন-- আছি, টিকে আছি-- আমি টিকতে চাই! এতেই মগ্ন।

আমরা সবাই টিকে আছি। আর দিনে দুপুরে আমার বিশ্বদ্যিালয়ের সম্ভ্রম লুট হয়ে যায়। প্রশ্নপত্র বিক্রি হয়, সেটি কিনে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয়, অথর্বরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, রাজনীতি করে এরা শিক্ষকও হবে! --- আর আমরা একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর--- ।

এত বড় একটা কেলেঙ্কারির পরেও কারো পদত্যাগের আওয়াজ ওঠে না। কেউ নিজ থেকে নৈতিক  দায়িত্ববোধ থেকে সরেও দাঁড়ান না। কী অদ্ভূত এবং ষণ্ডামির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে সময়!

এ ভাবেই প্রতিদিন লুট হয়ে যাওয়া আমার স্বপ্ন- রাজনীতির কাছে-  মাথা নোয়াতে নোয়াতে মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে  গেছে--- তখনো অসহায়ভাবে চেয়ে দেখে ক্যাম্পাস-- সে সব বিশ্ববিদ্যালয় রিপাের্টাররা তখনো নতুন যুক্তি খাড়া করায়--- লিখে কি হবে। বলেও কিছু হবে না।

অথচ এরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভিসিকে বলেছিল ' জানোয়ার'। এরাই  একজন শিক্ষককে বলেছিল 'হামাস'। এরাই একজন শিক্ষিকাকে বলেছিল 'ডাইনি'।  ভালো করেই এরা জানে। এরা  শিক্ষক সমিতিতে দলীয় কুস্তিকে বাহবা দিয়েছে। এরাই  প্রগতির কথা বলে ক্যাম্পাসে নুইসেন্সকে জায়েজ ঘোষনা করতে বাধ্য করেছে। আর এখন এভাবে  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা লুট হয়ে যায়, প্রশাসন নীরব হয়ে থাকে, তাকেও সমর্থন করে যায়, নিয়তই যায়।


আমি জানি এ লেখা আমার সাথে তাদের দূরত্বকে দীর্ঘতর করবে। তাতে কি--- তবুও আমি সত্যের পক্ষে ছিলাম, আছি এবং থাকবো--- এটাই আমার জীবনের এক এবং একমাত্র অবলম্বন। সব তকমা সয়ে আমি ছিলাম অন্যায়ের বিপক্ষে-- আছি-- জেগে আছি।

আমাদের একবার মানুষ ভাবো-- প্লিজ-- একবার



বর্মার ষণ্ডা রক্ষির গুলিতে নিহত শিশু! ছবি ফেসবুক থেকে নেয়া!


আমাদের একবার মানুষ ভাবো-- প্লিজ-- একবার
আমরাও মানুষের মত জন্মেছি---মায়ের পেটে...

আতঙ্কিত রাত কেটেছে মায়ের... দৌড়ে পালিয়েছে পুরো পরিবার
মায়ের পেটে, মায়ের কোলে আমরাও পালিয়েছি...

জন্ম-ভাগ্য আমাদের রাখাইন রাজ্যে নিয়েছে!
কোন হাত ছিল না আমার! তবুও ... বুকে পিঠে গুলি...
বহু মানুষের রক্ত বয়ে নাফ নদী মিশে যায়

তোমরা তখনো.. তখনো আমাদের মানুষ ভাবতে পারো না!

ইচ্ছে করে তো আমরা জন্মাইনি! এখানে...
আমাদের একবার মানুষ ভাবো! প্লিজ, একবার! একবার!!

নাফের জলে ডুবে মরে যাওয়া আমাকে দেখো--
আমি রোহিঙ্গা! আমিও মানুষ ছিলাম!

নিজেই নিজের জন্য যে পৃথিবী সে সাজিয়েছে... সেখানেও ... দীর্ঘশ্বাস!

শহরে রাত নেমে এলে বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে, এখন যেতে হবে, ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দিতে--
সেই ইচ্ছা এখন আর হয় না, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মত--  তাহলে কাটিয়ে দেয়া যেত, রাত বিরাত- বহুরাত না ঘুমিয়েই-- সে তো কাটিয়েছে! এখন পারে না।

হয়ে ওঠে না, শরীর কুলায় না, চোখের পাতায় নেমে আসে রাজ্যের ক্লান্তি... নির্ভার হতে একটা ঘুম তার দরকার-- সেটিও হয় না!

 দুঃস্বপ্ন, জেগে থাকা কষ্ট তার মাথার ভেতর ঘুরে ফিরে আসে--

 ভালই কাটছিলো, শৈশবের দিনগুলো... সে সব ফিরে পেতে ইচ্ছে করে.. পারে না

 অথচ এক  সময় ভাবনায় ছিল-- যত দ্রুত সম্ভব, বড় হতে হবে! বড় হলে সংসার হবে, সন্তান- জীবন

তার সবই হয়েছে! সুখ  হয়নি, সুখ সে চায়ও নি! চেয়েছে ঝামেলাহীন একটা জীবন-- তাও হয়নি। শরীরের উপর শরীর থুয়ে নিজেকে আরেকবার দেখে নেয় সে...

উত্তরের বাতাস বইছে, শীত ঝেঁকে বসেনি নগরে.. শীত যায়.. বসন্ত আসে..গ্রীষ্ম... বর্ষা.. তার জীবনের সেই একই হাল...
তবুও তার বাঁচার প্রচণ্ড রকমের লোভ-
সেই লোভে, পাপে .. পাকে নিজে ডুবতে থাকে.. এবং এভাবে জীবন ক্ষয়ে যায়...

একেকটা রাত নিয়ে আসে তার কাছে জীবনের প্রচণ্ড  কষ্ট--- সীমাহীন উৎসবহীনতায় ডুবে থাকে একেকটা দিন।
তবুও সন্তানের মুখের উপর চোখে রেখে ভাবে- এ জীবন; এ জনম- এ টিকে থাকা -- সবই স্বার্থক!

একেকটা সকাল, একেকটা ভোর ওদের গালের উপর দুপুরের কড়কড়ে রোদ্দুরের মতই উচ্ছ্বল আনন্দ নিয়ে আসে! আসবে! এমন ভাবনাগুলোও যখন তার মিথ্যে হয়ে যায়!
তখনো সে ভাবে... আরেকটি নতুন দিন আসবে.. পরিচ্ছন্ন.. সাজানো ... সুন্দর .. উচ্ছ্বল আনন্দে মগ্ন!

আসে না, তাতেও কষ্ট নেই তার !! তবুও ... কিছু একটা নেই ... কিছু একটার অপেক্ষা করে জীবনের কয়েকটা দশক... হাঙরের বুকে গেছে... তবুও টিকে থাকার লড়াই। টিকে থাকা ... টিকতে চাওয়া --- জীবনের প্রতি এত মমতা তার কবে জন্মেছে ... নিজেরই মনে নেই!

জীবনের প্রতি এত মমতা... মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে... নিজেকে আবিষ্কার করছে টিকটিকির মত... আবিষ্কার করছে হাঁসের মত... পাতি হাঁস কিম্বা ভোরের খোয়াড়ে হুঙ্কার দেয়া মোরগের মত...
তবুও বাঁচতে... টিকতে নিরন্তর লড়ে যাওয়া!
কী অদ্ভূত...কী অদ্ভূত...
এমন তো হবার কথা ছিল না!

নিজেই নিজের জন্য যে পৃথিবী সে সাজিয়েছে.. সেখানেও ... দীর্ঘশ্বাস!
ভাবনা-- সবার সব হয় না। অনেক কিছু হয় না । তাহলে মেনে নাও! মানিয়ে নাও!
এভাবে.. মিশে যাচ্ছে .. মিলিয়ে যাচ্ছে...! নিজের সব টুকু!