সুখ অসুখের গল্প ৮ : কিছু সতর্কতা আপনার চিকিৎসাকে সহজ করবে।
ইনডিয়া মানে সব ভালো ডাক্তার তা কিন্তু নয়। আপনাকে সেখানে যাওয়ার আগে সতর্কতার সাথে ডাক্তার এবং হসপিটাল সিলেক্ট করতে হবে। কলকাতা অনেকটা দালার ঠাঁসা। আর হেলথ টুরিজমের নামে আপনাকে অনেক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এবং এ সব ক্ষেত্রে শুরুতেই বলবে, স্যার আমরা আপনাকে ফ্রি কন্সালটেশন দিচ্ছি। পরে বলবে, স্যার আপনাকে সেবা দেওয়ার জন্য ১০০ ডলার ফি দিতে হবে। তাও বলবে ঘটনার শেষে!
সুতরাং আপনি যদি কোন ইনডিয়ান এজেন্টের সাথে জানতে কথা বলে থাকেন, তাহলে আগেই সার্ভিস ফি'র বিষয়টি জেনে নিন। তারপর আলাপ করুণ। আমি নিজে ইনটেক্সরে সাথে কথা বলেছিলাম। তারা প্রথমে জানালো আমাকে কোন টাকা গুনতে হবে না। পরে ্তাদের আরেকজন আলাপকালে বললো, স্যার সার্ভিস শেষে আপনাকে ১শ ডলার পে করতে হবে! তারপর আমি আর ও মুখো হইনি!
তবে আপনি একটু চোখকান খোলা রাখলে নিজেই নিজের কাজটি করে ফেলতে পারেন। এখন অনলাইনের যুগ, আপনি চাইলে সব কিছুই দেশে বসেই সেরে নিতে পারেন।
আপনি যদি শখে শখে ডাক্তার দেখাতে না চান, তাহলে আপনার বাংলাদেশের ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র থাকার কথা। এবং টেস্টের রিপোর্টও। আপনি টেস্টের রিপোর্ট পাঠাতে পারেন, হসপিটালে। কর্পোরেট হসপিটাল, মানে টাকা পয়সা কামাই করার হসপিটালে বিদেশিদের সার্ভিস দেওয়ার জন্য আলাদা ডিপার্টমেন্টই আছে। এর নাম ইন্টারন্যশনাল পেশেন্ট ম্যানেজম্যান্ট, বা কারো লাউঞ্জ কারো সার্ভিস এ সব নামে থাকে। আপনি যে হসপিটালে যাচ্ছেন, তার ওয়েবসাইটে গেলেই এর লিঙ্ক পাবেন। লাইভ চ্যাট অপশনও আছে। সেখানে মেইল করুণ। তবে এটা ইংরেজিতেই করতে হবে।
নিজে ইংরেজি না জানলে, পরিচিত কারো সহায়তা নিতে পারেন। মেইল করলে আপনি সবচে দ্রুত রেসপন্স পাবেন এ্পলো, রিলায়েন্স, আম্বানি , লীলাবতি হসপিটালের। তবে পাবলিক বা দাতব্য হসপিটালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহায়ক সিএমসি ভেলর। এখানকার খরচও কম। হসপিটালটি আপনার মেইলের ভিত্তিতে খরচ এর হিসাবসহ জানিয়ে দিবে। আপনি আপনার মেডিকেল রিপোর্ট পাঠিয়ে দিলে তারা রিভিউ করে ট্রিটমেন্টপ্ল্যান মেইল করে দিবে।
এ জন্য অবশ্যই আপনাদের নির্দিষ্ট ডাক্তার বা ডিপার্টমেন্টে মেইল পাঠাতে হবে। যেমন নিউরো লজির জন্য নিউরো ওয়ান বা নিউরো টুতে আপনি আপনার সমস্যা অনুযায়ী ডকুমেন্ট পাঠালে তারা আপনাকে ডিটেইল জানাবে। সেখানে চিকিৎসার জন্য কেমন সময় লাগবে তাও জানিয়ে দেবে।
দিল্লি এইমস হসপিটাল ইনডিয়ার নম্বর ওয়ান হসপিটাল। সেখানেও এখন বিদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রাইভেটের মত ঝটপট চাওয়া মাত্র সেবা পাওয়া যাবে না। কিছুটা সময় নিতে হবে। সেখানে চাইলে আপনি কেবিনও নিতে পারবেন। ইনডিয়ার দ্বিতীয় বেস্ট হসপিটাল চণ্ডিগড় পোস্ট গ্রাজুয়েট হসপিটাল। সেখানে আপনাকে সরাসরি গিয়ে তারপর ডাক্তারের সিরিয়াল দিতে হবে। তবে দিল্লি এইমসে আপনি ইনডিয়া পৌছেই সিরিয়াল দিতে পারবেন। সে জন্য আপনার একটিভ ইনডিয়ান মোবাইল সংযোগ লাগবে।
সিএমসি ভেলোরে ডাক্তার দেখানোর জন্য প্রাইভেট ও নরমাল দু রকম সিস্টেমই আছে। প্রাইভেটে দেখাতে ৬০০ রুপি লাগে। পাবলিকে ২০০ রুপি। আরো কমেও আউটডোরে দেখানো সম্ভব।
আর এপোলো টাইপের হসপিটালে দেখাতে ডাক্তার ভেদে ১০০০ থেকে ১২০০ রুপি খচর করতে হবে। তবে মনে রাখবেন এপোলো টাইপের হসপিটালে টেস্টের খরচ বেশি। এ ক্ষেত্রে আপনি চাইলে আপনার কি কি টেস্টের প্রয়োজন হতে পারে তা একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে আইসিডিডিআরবি'র মহাখালী থেকে টেস্টগুলো করিয়ে নিতে পারেন। রাখবেন, তারা বঙ্গীয় ব্রাক্ষণ ডাক্তার নন যে, যেখানে তার কমিশন আছে সেখান থেকে টেস্ট করা হবে। আপনার টেস্ট থাকলেই হলো! তবে কিছু টেস্ট আপনাকে হয়ত নতুন করে করাতে হতে পারে।
জেনে রাখুন, বড় হসপিটালগুলো অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করানো হার খুবই কম! এটা তারা খুব ভালো মানুষ বলে নয়, এটা ইনডিয়ার আর্থ সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে। কারণ ইনডিয়ানরা খরচের ব্যাপারে খুবই সতর্ক। তাই মন চাইলো আর টেস্ট দিলো, সেটা করে ডাক্তারের চেম্বারে হুমড়ি খেয়ে পড়বে এমনটা নয়।
মাস তিনেক ধরে ইনডিয়ার হসপিটাল গুলোর খবর নিছিলাম। সে অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আপনি যদি কেবল চেক আপ এবং ডাক্তার দেখাতে চান , সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য দিল্লি এপোলো বেস্ট অপশন। কম টাকায় প্রাইভেট চিকিৎসার জন্য সিএমসি। এর বাইরে মুম্বাইয়ের আম্বানি হসপিটাল ভালো। ব্যাঙ্গালোরের দেবীশেঠির হসপিটালরের কথা সবাই জানেন । কিন্তু মিস্টার শেঠিকে আপনি কলকাকতায়ও দেখাতে পারেন। কারণে তার হসপিটালের যাত্রা কিন্তু কলকাতায়। এবং রবীন্দ্র নাথের নামে একটা ট্রাস্ট এটি পরিচালনা করে থাকে বলে শুনেছি।
কোন রকমের দ্বিধা- না করে যে কোন বিষয়ে ডাক্তারের সাথেই কথা বলুন। কোন রকমের সমস্যা হবে না। এটা বঙ্গীয় ডাক্তার নয় যে, বিরক্ত হবেন। তার সিরিয়াল দেয়া লোকটা দেখিয়ে বলরেন, ওর সাথে আলাপ করুন।ডোক্তাররা মেইলের পাশপাশি হোয়াটসঅ্যাপে খুব স্বচ্ছন্দবোধ করেন!
ইনডিয়ার হসপিটালে গেলে আপনার এক বাংলাভাষি গাইড দরকার হতে পারে। কর্পোরেট হসপিটালে আপনি বিনাপয়সায় এ সেবা পাবেন। পাবলিক হসপিটালের জন্য কিছু টাকা দিলে আপনি এ রকম কাউকে পেয়ে যেতে পারে। সেটা টাকা ২০০ থেকে ৩০০ রুপির বেশি নয়।
আমি বলছি না তারা তাদের দেশের রোগীদের সাথে তারা এ রকম অনন্য ব্যবহার করেন। তবে বাইরের রোগীদের তারা বিশেষ যত্ন নিয়ে দেখেন। কারণ তারা চান দেশটাকে রেমিটেন্স আসুক এবং তাদের সুনাম ছড়িয়ে যাক। তাদের সুনামের কারণে কিন্তু এখন ঢাকায় এপোলো, স্কয়ারে বেশ কয়েকজন ইনডিয়ান ডাক্তার নিয়মিত রোগী দেখছেন। আমরা যাচ্ছিও।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন