পাহাড়ের জিইয়ে রাখা সমস্যা ও গণমাধ্যম

 পাহাড়ে সঙ্কট নিয়ে  সবচেয়ে সরব যে সব গণমাধ্যম --তারা দু'ভাগে বিভক্ত। একভাগ  পাহাড়িদের 'আদিবাসী' হিসাবে চেনে। তারা মনে করে, সেখানকার বাঙালিদের 'কুত্তাপেটা' করে বের করে দেয়া উচিৎ।

আরেকভাগ মনে করে, পাহাড়ে বাঙালিরা থাকবে। পারলে কিছু করিস।

এ দু'ভাগের মাঝামাঝি কোনো ভাগ থাকতে পারে।  তবে তারা খুবই সীমিত। সেটা হয়ত আমার অজ্ঞতার কারণে জানা হয়নি।

তবে কিছু ব্যক্তি সম্বাদিক আছেন যারা মনে করেন, পাহাড়ের জিইয়ে রাখা সমস্যার একটা আশু সমাধান জরুরী। তাদের মধ্যে আমি কয়েকজনকে চিনি। এর মধ্যে একজনকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে মনে রাখি- তিনি মাসুমুর রহমান খলিলী। তার বক্তব্যটা খুব পরিষ্কার।

তিনি আমাকে বহুবার বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম রাষ্ট্রেরই অংশ। তাই এখানে  কাউকে প্রশ্রয় দেয়া বা বিতাড়ন নয়। যে যার অধিকার বুঝে নিয়ে বসবাস করবেন। সন্ত্রাসীরা তাদের জিম্মি করে কোনো খারাপ কাজ করবে না। এটাই চাওয়া ।

তার কথায়, তুমি তাদের বাদ দিয়ে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। সবার সম্মলিত অংশগ্রহণই পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে।

আরেকজনের সাথে আমার কিছুটা দ্বিমত থাকলেও তার বিশ্লেষণ মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। তিনি ফরহাদ মজহার। তার মতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য।  কনফেডারেশন ফরমেট বহুকাল থাকতে পারে না।

মজহার ভাই  বলছেন, রাষ্ট্র কার সাথে চুক্তি করেছে?  এ চুক্তির কারণেই কনফেডারেশনের স্বীকৃতি মিলেছে।

এ সবই  তাদের নিজস্ব মত। তবে আমি মনে করি পাহাড়ে ভূমির একটা সমাধান করা গেলে, বেকারত্ব গোছানো গেলে এবং সন্ত্রাসীদের বিদেশি ফান্ডিং বন্ধ করা গেলে সেখানে একটা শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

এত বড় ভূমিকা দিলাম একটা কারণে। সেটি হলো সমতলের কিছু সম্বাদিক, গবেষক, এনজিও দোকানদার---সুবিধাবঞ্চিত পলিটিক্যাল পার্টির খুচরো লিডাররা  নিজেদের খুবই মানবিক এবং নীতিনির্ধারক হিসাবে তুলে রাষ্ট্রের সাথে সাংঘর্ষিক অবস্থান নিয়ে থাকেন। আমার ব্যাক্তিগ বুঝ বিবেচনা এবং চাওয়া পাওয়া সব সময় গণমানুষের পালস অনুধাবন করতে পারবে, এটা বোঝা খুবই মুশকিল।  যদি মুশকিল না হতো, তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবে  সুখী জাতি হতে পারতাম।

বাংলাদেশের সবচেয়ে আমলযোগ্য পত্রিকা এবং যেটি আমি আমার  কষ্টার্জিত অর্থের  বিনিময়ে খরিদ করি--- সে খবরের কাগজ আজকে (১৭ আগস্ট ২০১৫) বলছে, তারা 'আদিবাসী' বলতে নিরীহ কাউকে বোঝাননি।  তারা এও বলছেন, তারা পাহাড়ের মানুষদের আদিবাসী বলছেন, সংবিধান যাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে থাকে।

খবরের কাগজটির বক্তব্য  অনুযায়ী সংবিধান যা বলছে, তারা তা বলছেন না। তারা  বিপরীতটা বলেছেন। যেটা রাষ্ট্র স্বীকার করে না। এবং তাদের চাহিদা মাফিক শব্দটি  যে অযৌক্তিক তা প্রধানমন্ত্রী নিজেই ব্যাখ্যা করেছেন, ২০১১ সালে। সংবাদ সম্মেলন ডেকেই তিনি বলেছিলেন, পাহাড়ি মানেই আদিবাসী নয়।

ব্যাক্তিগতভাবে আমি আম্লীগের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সমালোচক এবং তাদের সমর্থকও নই। তবে কিছু জায়গা আছে যেখানে আমি আম্লীগ বিশেষ করে দলটির সভানেত্রী  শেখ হাসিনার প্রতি প্রচণ্ড রকমের অনুরক্ত। বিশেষ করে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার প্রচেষ্টা মনে রাখতে হবে--- সে আমরা যে দলকে সমর্থন করি না কেন।

সাধারণত  গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় একটা নীতি থাকে।  সেটির প্রতিফলন হয়ে থাকে সম্পাদকীয় বিভাগে। এখন খবরের কাগজটির  আজকের ক্লারিফিকেশনকে সঠিক ধরলে-- তারা এর প্রকাশ রিপোর্টেও করছে।  রাষ্ট্রের নির্দেশনা এখানে উপেক্ষত।  সেটা তারা করতেই পারেন এবং তা দেখার জন্য রাষ্ট্রের লোকজন আছেন।

আমার ব্যাক্তিগত মত হলো-- আমরা বলে থাকি  তথ্য ভিত্তিক নির্মোহ ঘটনার বয়ানই সংবাদ। অন্তত আমার কাছে তাই। তাহলে  সেখানেকোনো গণমাধ্যমের স্ব-উদ্যোগে কোনো জাতি গোষ্ঠীর পরিচয় নির্ধারণ করা কতটা  সমর্থনযোগ্য এবং দায়িত্বশীলতার প্রমাণ সে বিষয়ে আমার জ্ঞান শূণ্য।

খবরের কাগজটি প্রথম দিনই  রিপোর্টে বড় গণ্ডোগোল পাকিয়েছে। বলেছে গুলিতে মারা যাওয়া 'আদিবাসী'রা  ইউপিডিএফ ও জেএসএস (এম এন লারমা) সদস্য। এ তথ্য তারা ভালো করেই জানেন, পাহাড়ে কখনোই  এ দু'টো ধারা এক সাথে মেশেনা।  মেশেনা মানে এক সাথে কোনো আস্তানা গড়ে না। দাবি অভিন্ন হতে পারে।  কিন্তু এক সাথে ট্রেনিং বা সশস্ত্র কর্মকাণ্ড্ এখনো শুরু করেনি। এটা আমি অনেকটা নিশ্চিত হয়ে বলছি।

খবরের কাগজটির  রিপোর্টারদের যে দু'জন--- তারা পাহাড়ি। তাদের সাথে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকার কথা। কারণ এক দশকেরো বেশি সময় ধরে তারা সেখানে সম্বাদিকতা করছেন। কিন্তু খবরটিতে  নিরাপত্তা রক্ষীর বরাতে  ইউপিডিএফ ও জেএসএস  সদস্য মারা যাবার  তথ্য উল্লেখ করার পর--- বড়াদমের বাসিন্দা বিনয়জ্যোতি চাকমার উদ্ধৃতি দিয়ে ওই খবরেই বলা হচ্ছে ,  তারা সন্ত্রাসী। ওরা এসে  অস্ত্র দেখিয়ে বলেছিল, তাদের থাকতে দিতে হবে।

.... কিন্তু আজকের কাগজটির ব্যাখ্যা আমার কাছে খুবই শিশুসুলভ মনে হয়েছে। তাই এ লেখাটার অবতারণা করলাম।  এ সুযোগে বলে রাখি পাহাড়ে যারা সম্বাদিকতা করেন তারা খুবই দায়িত্বশীল। আমি তাদের শ্রদ্ধা করি।

কোন মন্তব্য নেই: