দয়া করে শিক্ষকদের কিছু দিতে না পারেন--- কটাক্ষ করবেন না

সবার জীবনের লক্ষ্য নিশ্চিতভাবে  সচিব হওয়া নয়। বিত্তবাসনা থাকলে রাজ্জাক স্যার ৯ শ টাকা মাইনের দিল্লির ভার্সিটির চাকুরীর অফার পায়ে ঠেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আড়াইশ টাকায় পড়াতে আসতেন না।

আচ্ছা এ রকম একজন সচিবের নাম কি মনে করা যাবে? যিনি কেবল দেশের আমলাতন্ত্রের আমূল পরিবর্তন করার স্বপ্নে বিত্তবাসনা ত্যাগ করেছেন। প্রশ্ন থাকল--- উত্তর জানা থাকলে আওয়াজ দিবেন। প্লিজ।

রাজ্জাক স্যারের সংখ্যা কম; কিন্তু একটি স্বাধীন সত্ত্বা যে আমরা পেয়েছি-- তার পেছনে এ মাস্টরদের অবদান কোনোভাবেই উড়িয়ে দেবার মত নয়। যাদের ঘিরে সরকার রা্জনৈতিক ফায়দাও তুলে নিয়েছে-- তাদের মধ্যেও মাস্টর অনেক।

 বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে শত্রুরা আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেবার পর স্বাধীনতা উত্তরকালে অধীন বুদ্ধিজীবি বৃত্তির যে বিকাশ সেটাকে স্বীকার করে নিয়েই বলছি--- এরপরেও কিছু শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবি অবশিষ্ট আছেন, যারা অন্ধকারে আলো দেখাতে পারেন। পেরেছেন বলেই আমরা এখনো অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াই সে সব আলোর পথযা্ত্রীদের।

সরদার ফজলুল করিম, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যাররা এখনো আমাদের নির্লোভ আলোর পথিকৃত হয়ে আছেন। সিরাজুল ইসলাম স্যার বেঁচে আছেন। সরদার স্যার মারা গেছেন। কিন্তু আমরা হয়ত হাতে গুণি, গুণে বলি আমাদের এঁরা আছেন। আমরা কি এ রকম কোনো সচিবের নাম করতে পারি যারা মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছেন।

হয়ত পারবো--- সেটার জন্য সার্চ ইঞ্জিন গুগলের সহায়তা নিতে হবে।

আমার অবশ্য এ রকম একজনের নাম মনে পড়ছে--- আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া।  হয়ত আরো কেউ থেকে থাকবেন।  যাকারিয়া নৃ ও প্রত্নতত্ত্ব বিশ্লেষক--গবেষক।

 তবে আমলা কবি পাবেন। কিছু কবি নিশ্চয় ভালো হবে হয়ত।

শিক্ষকরা কী করেন? সমাজ-মানবিকতা ও ননন্দতত্ত্ব আর প্রযুক্তির প্রসারের  ধারণাগুলো তৈরি ও বাস্তবায়ন তো তারাই করেন বলে তারা শিক্ষক। দলান্ধ-দলকানা- লেজুড়বৃত্তির শিক্ষক সব কালেই ছিল, এখনো আছে-- সামনেও থাকবে।

সমাজের সবস্তরের ইন্সটিটিউটশনাল ভিত ভেঙ্গ দেবার পর সরকার যখন কটাক্ষ করে বলেন---'বিসিএস' দিয়ে সচিব হয়ে যান। সচিব হওয়াটা খুব কঠিন বলে ধরে নিয়েছে সরকার। ভাগ্যিস বলেনি  চাকুরী ছেড়ে মিছিলে চলে আসেন, ক্যাডার হয়ে যান-- ভালো ইকনাম হবে।

শিক্ষকরা সমাজে আলোর পথযাত্রী। এটা মহান পেশা। এমন নানাবিদ কথা বলে এ পেশার মানুষকে অনুগ্রহ দেখানোর লোকের অভাব নেই। এত সম্মান! তারপরেও টাকা চাইবার কথা নয় তাদের?--- টাকা তো কেবল  সচিবদের দরকার। পুলিশের দরকার।  রাজনীতিকের দরকার।

শিক্ষকরা রোজা রাখবে আর শিক্ষার্থী পড়াবে --- জীবনের ব্রত যেহেতু তার জ্ঞান বিতরণে করা তাই জ্ঞানের মত এত  মহান বিষয়ের মূল্য নির্ধারণ করা অত্যন্ত বাজে কাজ।  তাই এমনটা হয়।

বিম্পি সরকার যখন ২০০১ সালে সরকারে আসে। সে সময় সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শিক্ষা বিষয়ক গোলটেবিলে--- সে সময়কার শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী  এর কাছাকাছি কথা বলেছিলেন। ' শিক্ষকদের অনেক সম্মান। সমাজের প্রতি দায়। তাই তাদের মাইনে বড় কথা নয়। '

এমাজ স্যার ছিলেন সে অনুষ্ঠানে--- তিনি বলেছিলেন--- শিক্ষকের চাহিদা নেই; বা থাকতে নেই বা থাকা উচিৎ নয় বলে সমাজ নির্ধারণ করলেও--- শিক্ষকের যে সংসার পরিবার পরিজন আছে সেটি ভুলে গেলে চলবে না। শিক্ষক ভিন গ্রহের মানূষ নয়। তার পরিবার পরিজন এ সমাজেই থাকে। সুতরাং সমাজের যে চাহিদা তৈরি হয়, তার সাথে বিস্তর ফারাক হতাশা তৈরি করতে পারে এবং করেও বটে।

 কথাটা মনে ধরেছে। আমি নিজেও তাই মনে করি।

বাংলাদেশ তো ভিয়েতনাম নয় যে, সরকারের নির্দেশে সবাই দোতলা বাড়ি বানাবে-- তার উপরের ছাদ হবে টালির। সবাই প্রায় একই রকমের মোটর বাইকে চড়বে।  এখানকার রাস্তায় জাগুয়ার চলে, নিশান চলে---সেখানে শিক্ষকরা গাড়ি চড়তে না পারেন একটা  বিআরটিসির সিটিং সার্ভিসে চড়ার মত মাইনে পাবেন না! তা কি করে হয়।

 এখানে স্কয়ার,  এ্যাপোলো , ইউনাইটেড হসপিটালে  চিকিৎসা না করান অন্তত বাংলাদেশ মেডিকেলে চিকিৎসা করানোর মত সামর্থ তার থাকা উচিৎ। রাষ্ট্র কি এটা উপলব্ধি করবে না।

রাষ্ট্র যদি কেবল কিছু প্রাইভেট পড়ানো শিক্ষকের আয় মিলিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেয় কিম্বা কিছু শিক্ষকের প্রাইভেট ভার্সিটি পড়ানোর  হিসাব নিকাশ করে বলেন-- জিহ্বা লম্বা হয়ে গ্যাছে। তাতে মন ভারাক্রান্ত হয়।

আম্লীগ সরকার সব সময় বলে আসছে তারা শিক্ষা বান্ধব সরকার। তারা এটাও উপলব্ধি করবেন বা করছেনও বটে যে  যারা সচিব হচ্ছে আমলা পুলিশ হচ্ছে-- তারা কিন্তু এই  সচিব হওয়ার জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার পরামর্শপ্রাপ্ত  মানুষদের হাতেই গড়া।  ভিত গড়ার জন্য  যারা কাজ করেন তাদের  মনে কষ্ট দিয়ে তাদের কম মাইনে দিয়ে--- কখনো সুশিক্ষিত জাতি গঠন করা সম্ভব নয় বলে আমার ছোট এবং সীমিত জ্ঞানে মনে হয়।  সরকার বাহাদুর নিশ্চয় আরো ভালো বুঝবেন ।


 দয়া করে শিক্ষকদের কিছু দিতে না পারেন--- কটাক্ষ করবেন না। কারণ আপনি আমি আমরা আজ যেখানে দাঁড়িয়ে জ্ঞানের আলাপ প্রলাপ করছি সেটির ভিতও ওই শিক্ষকরাই গড়ে দিয়েছেন।       

কোন মন্তব্য নেই: