আঙুলের ছাপ নিয়ে তর্ক; ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়াটা কঠিন!

আঙুলের ছাপ নিয়ে তর্ক উঠেছে; এটাকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়াটা কঠিন।  কারণ আমাদের মত অপরাধ-মজ্জাগত সমাজে এর অপব্যাবহার নিশ্চিতভাবেই হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ এখানে স্ত্রী-স্বামীর সম্পর্ক পর্যন্ত ইউটিউবে উঠে আসে, প্রেমিকার সাথে গোপন সংলাপ সাউন্ডক্লাউডে আপ হয়, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দু'জন শীর্ষ রাজনৈতিকের টেলিফান আলাপ সম্প্রচার-ব্রেকিং প্রতিযোগিতা চলে।

সেখানে অপরাধী পরিবর্তন করার প্রাচীন প্রথাকে আধুনিক যুগে আঙুলের ছাপ বেঁচে করে দেয়া খুবই সম্ভব একটা কাজ। যেমন আগে কালা মিয়া খুন করেছে সাদা মিয়াকে খুনী বানিয়ে কালা মিয়াকে পার করে দেয়া যেত। এখন আঙ্গুলে ছাপ কিনে যে কাউকে এ দায় থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়ে উঠতে পারে!

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে প্রযুক্তিবিদ স্বপন ভাই (জাকারিয়া স্বপন) বলছিলেন, কেবল আর্থিক জালিয়াতির কথা।  কিন্তু এখানে অপরাধ---অপরাধী পরিবর্তন করে দেয়াও সম্ভব।

এ সম্ভবটা এখন দেশের চৌহদ্দিতে আছে, সীমিত আকারে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এটাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।  প্যারিসে হামলা, কিম্বা আম্রিকায় হামলার ঘটনায়  পাপিস্তানিদের দেখা মেলে। সময় হয়ত এমন হবে যে রাজনৈতিক  সঙ্কট আমাদের জীবনে এর চে বেশি বিপন্ন করার মত মিথ্যা ঘটনার অবতারণা হতে পারে।

বলা হতে পারে--- আইএস প্রধানের আঙুলের ছাপ বাঙালি কোনে লোকের । যাকে ধরার জন্য এখানে আম্রিকান সৈন্যের উপস্থিতি জরুরী।  আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিকাশ, অপশাসন এবং বিস্তৃতির সাথে প্রযুক্তির অন্য রকম একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

কিন্তু এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই, প্রযুক্তির জাল থেকে আমরা দূরে থাকতে পারবো--- আমাদের কোনো না কোনোভাবেই   একটা ডিজিটাল দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে ফেলা হচ্ছে। আমরা জেনে বা নে জেনে এতে আবদ্ধ হচ্ছি।

ফেসবুকে আপনি কতটা সাহসী কিম্বা আপনি কতটা সেক্সি টাইপের যে সব অ্যাপ আমরা ইউজ করি, তারা যে আমার ফেসবুকের তথ্য সংযোগ করে এনালাইসিস করে; সেখানও আমার ব্যক্তিগত তথ্য  তারা নিয়ে নিতে পারে, নিয়ে নেয়ও বটে। নইলে একের পর এক মিয়াঁও বিয়াঁও টাইপের এপের রিকোয়েস্ট আমাদের কাছে আসতো না।

 মাইন্ড রিড করে ফেসবুক, গুগল কিন্তু আপনার চোখের সামনে বিজ্ঞাপন বেচতেছে।

 আমরা অত্যন্ত হালকাভাবেই বিষয়টাকে নিচ্ছি।

 জাতীয় নিরাপত্তা, সমাজের স্থিতি নিশ্চিত, অপরাধী সনাক্ত করার জন্য সরকারের যে কোনো উদ্যোগকে আমি ব্যক্তিগভাবে অভিনন্দন জানাই।

 কিন্তু মোবাইলফোনের সংযোগ গ্রহিগতা সনাক্ত করার জন্য আঙুলের ছাপ নেয়া খুব জরুরী বলে মনে করি না। কারণ যে বা যারা এ অপরাধ করবে-- তাদের কাছে  সিমলেক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই অপরাধ করা সম।ব। এবং সেটি হচ্ছে।

 খেয়াল করলে দেখবেন-- ভাইবার কিন্তু বলেই দিচ্ছে আপনি তার কল ট্র্যাক করতে পারবেন না। আসলে আপনি পারবেন না।  তাহলে যেখানে প্রথাগত ভয়েস কলের বাজার যখন পড়ে যাচ্ছে, ডিজিটাল ট্রান্সফরশেনের দিকে যাচ্ছে মোবাইলফোনের সংযোগ; সেখানে  এ ধরণের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ না করে, সংযোগ গ্রহিতা তার পরিচয়পত্র দিয়ে নিজেকে নিশ্চিত করে নিতে পারতেন। আঙুলের ছাপের মত একটি স্পর্শকাতর সম্পদ তৃতীয়পক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনার দরকার পড়তো না।

সরকার আসলে  অনেক কিছু না ভে্বেই কাজটা করেছেন। এর জন্য কোনো রকমের গ্রাউন্ডওয়ার্ক করা হয়নি বলেই মনে হচ্ছে, হলে এর রিস্ক ফ্যাক্টর গুলো নিয়ে সরকার ভাবতো।
একই সাথে রাষ্ট্রের উচিৎ আমার মত গোনার বাইরের নাগরিকদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমার শরীর, আমার অন্য কারো সম্পদ হতে পারে না।

 রাষ্ট্র চাইলেই  এ ধরণের কর্মে আমাদের বাধ্যও করতে পারে না! যদিও বাধ্য করলে আমাদের অধিকার প্রটেক্ট করার মত ক্ষমতা নেই। তবুও নীতির কথাটা সুযোগে বলে নিলাম।

সরকার আঙুলে ছাপ নিচ্ছে মোবাইলফোন অপারেটরের মাধ্যমে, সে ছাপ সরকার বলছে, অপারেটররা সংরক্ষন করতে পারছে না। কিন্তু বিষয়টা সত্য নয়।  অপারেটররা এটা স্টোর করছে। বাংলালিংক কিন্তু বিবিসিকে এটা নিশ্চিত করেই বলেছে।

এটা খুব সহজে অনুমিত যে, এখন অফিসগুলো, বিশেষত কর্পোরেট অফিসে  প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য আঙুলে ছাপ নেয়া হয়। সে ছাপ একটা সার্ভারে স্টোর হয়, যেখান থেকে একজন কর্মীর অফিসে আসা না আসা বা কর্মঘণ্টা নির্ণয় করা হয়। এটা থেকেই প্রমাণিত যে, ছাপ স্টোর করা যায়!

আঙুলের  ছাপ স্টোর করা যায় না বলে বিটিআরসি যে দাবি বিবিসির কাছে করছে--- এর স্বপক্ষে জোরালো কোনো প্রমাণাদি নেই!

আমাদের দেশের সবগুলো মোবাইলফোন অপারেটর বিদেশি নিয়ন্ত্রিত। আরো পরিষ্কার করে বললেন--- ইনডিয়া প্রভাবিত। এমনিতেই  আমাদের জঙ্গি-ফঙ্গি বানানোর কা্জ অব্যাহত রেখেছে। কেউ ফটকা ফোটালেও তারা আমাদের দেশের জঙ্গীর দুঃস্বপ্ন দেখে। সেখানে এ রকম একটি স্পর্শকাতর বিষয় থার্ড পার্টি, মহল্লার দোকান  আর গলিগুপচির সামনে টেবিল পেতে বসে মিশিন বসিয়ে ছাপ সংগ্রহ শুধু ঝুঁকিপূর্ণই নয়, এটি  ব্যক্তি নিরাপত্তার বাইরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকেও হুমকিতে ফেলতে পারে।

অনেকে এ জন্য পাকিস্তানের উদাহরণ  দিচ্ছেন। আমরা আর পাকিস্তান এক না। মনে মেজাজে, সংস্কৃতিতে। আমরা জাতি হিসাবে পাকিস্তান থেকে বহু বহু গুণে উন্নত।

 সুতরাং সময় থাকতে আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া খুবই জরুরী।   

কোন মন্তব্য নেই: