মাহিন্দ্রায় চড়ে ফিরছি বান্দরবান শহরে। সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে বলিপাড়া বিজিবি পোস্ট ত্যাগ করার নিয়ম, আমাদের মাথায় ছিল না, তাই কিছুটা সময় অপেক্ষার বিজিবি'র অনুমোদন মিলল। সে অনুমতি নিয়েই আমরা ফিরলাম।
নির্জন পাহাড়ি পথে একমাত্র যাত্রিবাহী যানবাহন আমাদের মাহিন্দ্রা। দু'জন পাহাড়ি আর একজন বাঙালি নিয়ে ফিরছে। পথে পথে স্থানীয় বহু তরুণ এ পাড়া ও পাড়া যাচ্ছে, আড্ডার দৃশ্যও চোখে পড়লো। দোকান গুলো সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে গুটিয়ে যেতে থাকলো।
দূরের গ্রামে নিভু নিভু আলো, সে দৃশ্য, আনন্দ-উত্তজেনা অনুভব করা যায়, বলে বোঝানো মুশকিল। নীলাদ্রি পাহাড়ে আসার পর আবার চেকপোস্টের অনুমতি নিয়ে আমরা ছুটলাম। চেক পোস্ট থেকে জানালো, রাত ৮ টার পরে এ রাস্তায় চলাচল নিষেধ। এর কারণ ব্যাখা করে বললেন, আপনারা যদি কোন বিপদে পড়েন, সেটি মানব সৃষ্ট না হােক, প্রাকৃতিক; তখনো তো আপনাদের কিছু করার থাকবে না।
কথা ঠিকই। কিন্তু আমাদের ফিরতে হবে। তাই নিজেদের বিবেচনার উপর আমাদের ছেড়ে দিলেন তারা।
পাড়ায় পাড়ায় কিশোর-তরুণরা নিভৃতে সখাসখির আড্ডার কথা বলছিলেন- জজ চাকমা। বললেন, দাদা এই ছেলেরা তাদের সখীদের কাছে যাচ্ছে। প্রেমিকার কাছে। মন খুলে কথা বলবে। গল্প করবে। আড্ডা দেবে। এটা আমাদের সংস্কৃতিরও অংশ। আমি বললাম, নিভৃত মিলনে , যদি কেউ শারিরীক সম্পর্কে জড়ায়, তাহলে ?
জজ এবং নু দু'জনেই স্মিত হাসলেন, বললেন, তাতে খারাপ কিছু হবে না। এমনকি বাচ্চা পেটে আসলেও। বরং তখন দু'পরিবারে আনন্দ। সন্তান সম্ভাবা তরুণীকে ওই তরুণ বিয়ে করে। তার লয়ালিটি আরো বেশি প্রমাণিত হয়।
মাহিন্দ্রা এগিয়ে যাচ্ছে। কোন কোন পাড়ার আশপাশে দাওনা হাতেও কয়েক তরুণকে দেখা গেল। প্রথম কেউ দেখলে ভয়ে ভড়কে যাবেন। আক্রমণ করতে পারে, সেটা আশঙ্কা মনে নিশ্চিতভাবে উঁকি দিবে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই পাহাড়ের কাজ সেরে বাসায় ফিরছেন।
আবার 'পাঙকো' ছেলেপুলেও আছে। মোটর বাইক নিয়ে এ দিক ও দিক রাইড দিচ্ছে। দেখে মনে হতে পারে আপনার দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু এমনটা ঘটে না । বা ঘটেছে বলে শোনা যায় নি। এমনকি মাহিন্দ্রার ভেতরেও কেউ টর্চের আলো ফেলেনি। সমতলেও রাতের বেলা কোন কোন এলাকায় নির্জন রাস্তায় কোন বাহন গেলে দুষ্টু ছেলেরা টর্চের আলো ফেলে। এখানে সে রকম অভিজ্ঞতা নেই।
দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তি নিয়ে শহরে এসে নু মঙ দা'র বাসায় রাতের খাবার খেতে খেতে গল্প হচ্ছিল। বৌদি শুনলেন, আমাদের চেকপোস্টের গল্প। অস্পুটে তিনি সেই কথাটিই বললেন, যেটি আমি এর আগে বহুবার শুনেছি-- 'আমরা নিজভূমে পরবাসী'।
এ ভাবনাটা আমাদের বদলে দিতে হবে। এখানে কোন পক্ষ বিপক্ষ নাই। একসাথে আমরা এগিয়ে যাবো। পাহাড়ি-বাঙালি মিলে আমরা বাংলাদেশী। আনন্দ -দুঃখ ভাগাভাগি করে এক নতুন বাংলাদেশ গড়বো, আমরা। শুভ পর্যটন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন