উন্নয়নের উঁচু ট্রেইলে যে ট্রেকিং করছে মহামান্য সরকার বাহাদুর, তার প্রতি আমার কোন রাগ বিরাগ অনুরাগ কিছুই নাই। বরং একটা দলের কাউন্সিল ঘিরে নোংরা শহরের এবড়ো থেবড়ো খোকন আর আনিসুলের উপর কিছু বিটুমিনের চুমু খাওয়া পাথর জড়াজড়ি করে আছে, এটা দেখেই শান্তি।
সরকারে থাকা প্রধান রাজনৈতিক দলটি, যে দলটি আমার ইতিহাস ঐতিহ্য এবং অধিকার আদায়ের অগ্র সেনানী; সে দলটি কাউন্সিলে বসবে বলে যে আয়োজন বাংলায় হলো, এটা বিশ্বের বৃহত গণতান্ত্রিক (!) রাষ্ট্র হিসাবে কেতাবে উল্লেখ থাকা ইনডিয়ারও নেই। এত বড় আত্মা তাদের হবে না।
আমাদের আত্ম-আত্মহারা হওয়ার মত। তবে আয়োজনের জৌলূস হার মানিয়েছে, আমাদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উৎসবকে। আবার যদি উল্টে বলি, এ জৌলুস আমাদের রাজনৈতিক অর্থনীতি যে ঐশ্বর্যের যে অনন্য উচ্চতায় পৌছে গেছে, তার একটা প্রমাণ।
রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মানে এমন নয়, নেতা বদলাতে হবে। তবে মন খুলে কথা বলে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এটা অত্যন্ত ভালোলাগার খবর। রাজনীতি বিজ্ঞানের একজন ছাত্র হিসাবে এ কাউন্সিলকে আমি স্বহগত জানাই এভং এ আয়োজনের উদ্যোক্তাদের অভিনন্দন জ্ঞাপন করি।
যে কোন বিচারে এবারের আওয়ামী লীগের নগরজুড়ে সজ্জা, আলোকোৎসব অনেকককে 'বোকা' বানিয়েছে। 'বোকা' বলছি এ কারণে, দলটির এর আগে আরো ১৯ টি কাউন্সিল হয়েছে। এ রকম সাজ আর চোখে পড়েনি। এ একটি কাউন্ষিল আমাদের জানিয়ে গেল, একটি রাজনৈতিক দল সমৃদ্ধির পথে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি, যেটি এতদিন কারো নজরে আসেনি!
মূসা বিন শমসের একজন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীকে কয়েকশ কোটি টাকা অনুদান দেয়ার ঘোষণার পরই আমাদের জানা হয়েছিল, বাংলাদেশের মানুষের হাতে টাকা আছে। আর আওয়ামী লীগের এক কাউন্সিলের পর আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এ রকম সম্মেলনে টাকা নস্যি!
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াকে আমরা সাধারণত বলে থাকি, ' মানি ইজ নো ম্যাটার'র জনক। তবে আওয়ামী লীগ জিয়ার এ তত্ত্বকে পুরো মাত্রায় সত্য করে দেখালো, যেটি বিত্তবান হিসাবে আমাদের এগিয়ে থাকার একটা উদাহরণ।
বিষয়টি ভালো লাগারও বটে।
তবে এখানে এত টাকার যোগান নিয়ে কথা বলাটা ঠিক না। এ ধরণের কথা বলা, অন্যের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপও বটে! এখানে গণতন্ত্র চর্চার উৎসবটাই আমার কাছে মুখ্য। তবে তাই হোক বন্ধু।
কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল ঘিরে নগরীতে যান চলাচল সীমিত করার পুলিশি ম্যাপ এর আগে আমার চােখে পড়েনি। সারা শহুরজুড়েই যান নিয়ন্ত্রিত ছিল। অনেকটা হরতাল আমেজ। তবে একটা উৎসবের জন্য নগরবাসী এ টুকু ছাড় তো দিতে পারেন। পোড়া মবিল আর তেলে দূষিত নগরে ফুরফুরে হাওয়া আর রিকশা করে এখানে ওখানে যাওয়ার সীমাহীন আনন্দ যে কেউ উপভোগ করতে পারেন। এবং এটি অত্যন্ত ভালো লাগার বিষয়ও বটে।
আমার ছোট্ট একটা আপত্তির জন্য এত কথা বল্লাম, আমাদের ট্রাফিক বিভাগ কাউন্সিল উপলক্ষে আমার প্রিয় ক্যাম্পাসকে পার্কিং এরিয়া ঘোষণা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা্ বলছি। রেজিস্ট্রার বিল্ডংয়ের পাশের মল চত্বরে সবুজ গাছালী আর ফুলের বন। সেখানে পার্কিং করতে বলেছে, ট্রাফিক বিভাগ। মল চত্বর নামটা তারা লেখেনি, লিখেছে, রেজিস্ট্রার বিল্ডংয়ের সামনে মাঠ সংলগ্ন সকল এলাকা।
বিজ্ঞপ্তির ভাষাটা এ রকম ---'যে সব স্থানে পার্কিং করা হবে---ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম মাঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সম্মুখের মাঠ সংলগ্ন সকল এলাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তার পাশ (যাতে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে), মাননীয় সংসদ সদস্যবৃন্দের মধ্যে যাদের গাড়ি সম্মেলন স্থলে স্থান সংকুলান করা যাবে না তাদের গাড়ি রমনা রেঁস্তোরা এবং ঢাকা ক্লাবের মধ্যে পার্কিং করা হবে।'
একটা দলের কাউন্সিলে একটি ক্যাম্পাস গাড়ি দিয়ে ভরে দেওয়া হলো! কেউ একবারো মনে করলেন না, এটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান;পার্কিং এরিয়া না। একটা সম্মেলনের জন্য গাড়ি নিয়ে আসবেন! সেটি রাখবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে! এটা কোন বিবেচনায় যুক্তি সঙ্গত, আমার খুব জানার ইচ্ছা। এ ইচ্ছাটা পূর্ণ হতে হবে, তা নয়, মনে ভিতরে জাগল , তাই জানালাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল ঘিরে এ রকম ঘোষণা দিয়ে গণ পার্কিংয়ের ঘটনা আমার দেখা মতে, প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একামাত্র। এটা আমাকে আহত করেছ, বেদনাহত করেছে। কারণ এ কাউন্সিল ঘিরের ঢাকায় আসা ঢাকার বাইরে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জন্য বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন ভাবে তুলে ধরা যেত। মধুর ক্যান্টিন, অপারেজয় বাংলা, তিন নেতার মাজার, কার্জন হল, জগন্নাথ হল ও জহুরুল হক হল আর টিএসসি ঘিরে যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বলয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সে সব উপস্থাপন করা যেত! কিন্তু তা করতে পারেনি সরকার, পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতজানু প্রশাসন! পারেনি দল হিসাবে আওয়ামী লীগও।
এ ব্যর্থতার ভেতরেও ভালো লাগছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একমটা কথা- গৃহহীন মানুষের গৃহ সংস্থান করা হবে, বিনা পয়সায়। জয় হোক আপনার। মাননীয় নেত্রী আপনার হাত ধরেই এগিয়ে যাক আমার প্রাণের বাংলা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন