বাংলাদেশের ইতিহাসে মিস্টার নাহিদের চেয়ে আর দ্বিতীয় ব্যর্থ শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন বা সামনে হবেন এটা আমার মনে হচ্ছে না। এ মানুষটা এক সময় প্রথম আলোয় শিক্ষা বিষয়ে ব্যাপক জ্ঞান প্রদান করতেন। যেখানে দেশের শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা এবং শিক্ষা বাণিজ্য নিয়ে বিস্তর কথা থাকত। সম্ভবত ওই সব কলাম সেল করে উনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়েছেন, তিনি অনেক বড় শিক্ষাবিদ! সুতরাং এ দেশে উনি ছাড়া শিক্ষা তরির বৈঠা বইবার মত দ্বিতীয় কোন মহাজন আর নেই!
হতে পারে! তবে শিক্ষা বিষয়ে ভালো বোঝেন এ রকম বহু মহাজন আওয়ামী লীগে আছেন। আমরা অনেকেই তাঁদের চিনি। কিন্তু আনুকল্য বলতে যা বোঝায়, তা পুরোটাই দাদু পেয়েছেন, সম্ভবত আরেক দাদু মুহিতের কারণে। তাছাড়া বাম ঘরাণার রাজনীতিকদের একটা অংশ তো এখন কাল মার্কস-লেলিনের আদর্শ ক্ষমতার রসগোল্লায় আবিষ্কার করেছেন, তারাও তাদের পুরনো ভাই বেরাদারদেরকে টেনে তুলছেন। সেই হিসাবে মিস্টার নাহিদ এগিয়ে থাকবেন।
বঙ্গীয় শিক্ষা ব্যবস্থার হাকিকত এতটা খারাপ আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ সালে পরিচালিত সরকারের সময়ও ছিল না। একটা বিজ্ঞান ভিত্তিক একমুখি শিক্ষা ব্যবস্থার দাবি বহু পুরনো। ভোটের হিসাব কিম্বা উন্নয়নের মহাসড়কে বড় গাড়ি চালাতে হলে, কিছু ছোট গাড়ি রাখতে হয়, সে হিসাবে তিন ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত জোরেশোরে চালু আছে। এবং এটা থাকবে। নইলে ভবিষ্যতে ভয়ের রাজনীতি, মানুষকে একক হিসাবে প্রতিষ্ঠার রাজনীতি টিকবে না। সুতরাং যে কোন ছুঁতোয় এ তিন বা তারো বেশি ধারার শিক্ষা এখানে অত্যন্ত কঠোরভাবে টিকে থাকবে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার ১৪ ডিসেম্বর তার এক বক্তৃতায় বলেছেন, ''আমরা অভিন্ন শিক্ষার স্বপ্ন দেখেছি... যদি তিনধারার শিক্ষা ব্যবস্থা থাকে, তাহলে আমরা পাকিস্তান ত্যাগ করেছিলাম কেন? ত্যাগ করেছিলাম একধারার অভিন্ন শিক্ষার জন্য। শ্রেণীহীন সমাজের জন্য। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা ভাঙ্গার জন্য। তা কিন্তু হয়নি...তিন ধারার মধ্যে ... বিত্তবানরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ছে, মধ্যবিত্তরা যেনতেন পড়বে... গরিবরা মাদরাসায় পড়বে... এর মাধ্যমে সমাজে বিভাজন বিদ্যমান। তিন ধারার শিক্ষার মাধ্যমে মেনে নেয়া হচ্ছে... এ দেশ শ্রেণী দ্বারা বিভক্ত।
তিন ধারার শিক্ষার মাধ্যমে মেনে নেয়া হচ্ছে, এ দেশ শ্রেণী দ্বারা বিভক্ত। এ শ্রেণী বিভাজন কোন দিন দূর হবে না। দূর হবে না বলে আমাদের মানতে হবে যে শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না... এখন যে পুঁজিবাদের বিকাশ হচ্ছে, বৈষম্য বাড়ছে... বস্তিতে আগুন দেওয়া হচ্ছে, তাদের জায়গাগুলো দখল নিয়ে নেওয়া হবে, হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে... বৌদ্ধদের মন্দিরে ...কাউকে বলা হচ্ছে তুমি শিয়া.. কাউকে আহমদিয়া ...প্রবল দূর্বলকে গিলে ফেলবে... এ হচ্ছে বাংলদেশের বাস্তবতা।''
এ রকম নির্মম বাস্তবতার উপর দাঁড়িয়ে আমরা কীভাবে এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বো সেটা একটা প্রশ্ন। কারণ একটা সমৃদ্ধ দেশের জন্য উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার দরকার। সেটি তো হয়ই নি! উল্টো যে টুকু আগে ছিল, সেটিও এখন ভেঙ্গে পড়েছে। পরীক্ষার নামে নৈরিাজ্য, কোচিংয়ের নামে বাণিজ্য আর ভর্তির নামে শিক্ষার্থীদের হয়রানি বাড়ছেই। সে সাথে পাঠ্যপুস্তক এ ভয়ঙ্কর নৈরাজ্য দিনে দিনে এতটা বেড়েছে যে, আমরা অত্যন্ত বেদনাহত হয়ে, ফেসবুকে চেঁচাই! কিন্তু বাস্তবে আমরা হাতে হাত রেখে একবার চকচকে টাকের উপর প্রতিবাদের তাপ ফেলতে পারি না। এর চেয়ে কষ্টের কী হতে পারে।
কেবল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি, সমৃদ্ধ দেশের কথা বলি, অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে রাষ্ট্রের চেহারা বদলে দেওয়ার গল্প করি--- কিন্তু দিনে দুপুরে আমার শিক্ষা, সম্ভ্রম,নৈতিকতা, সম্মান, অর্থ, বিত্ত, সম্পদ আর জীবন লুট হয়, গুম হয়; তারপরেও যেনো --- কারো কিছু বলার নেই! সবাই কেবল তাকিয়ে দেখি, আর বলি, আমি বেঁচে আছি! এই বেশ।
সামর্থবানরা তাদের সন্তানদের বিদেশ পাঠান। দার্জিলিং কচি কচি শিশুরা বোডিং স্কুলে যাচ্ছে। বেঙ্গলোরে, পুনেতে, দিল্লি এমনকি কোলকাতা শহরেও আমাদের ছেলে মেয়েরা যাচ্ছে, পড়তে। ভারতের পেঁয়াজের সাথে যুব্ধ করে চালের বাজারের সাথে লড়াই করে যে কৃষক, যে বাবা টাকা আয় করছেন, সন্তানের শিক্ষার জন্য সেটিও রেমিটেন্স আকারে তুলে দিচ্ছে ভারত-ইউরোপ কিম্বা বঙ্গীয় বেনিয়াদের হাতে। যারা টাকা নেয় কিন্তু দিনের শেষে পিতার স্বপ্নগুলো ফানুসের মত উড়ে, রঙিন ফানুস কিন্তু সে রঙ বেশিক্ষণ থাকে না। জনাব, ভেবে দেখুন... সামনের দিনগুলো... দল হিসাবে নয় দেশ হিসাবে দেশের মানুষকে মানব সম্পদ হিসাবে গড়তে এখনই পদক্ষেপ নিন। নইলে দক্ষ জনবল এখন যে রকম লাখ দশেক আমদানি করে রেখেছেন, সামনের দিনে সেটি কোটিতে পৌছাতে পারে! সে শঙ্কা মিথ্যা হোক, তেলের উপরে ভাসমান জনাবেরা এবার একটু শিক্ষার দিকে নজর দিন!!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন