সংবাদ তৃষ্ণা!







 
১.

সংবাদ জানা এবং  জানানোর একটা তৃষ্ণা সমাজ-রাষ্ট্রে বহু আগ থেকে চলে আসলেও এর ভেতর নানা কূট-কূটনীতিও কৌশলের প্রয়োগও নতুন ঘটনা নয়।

সংবাদ নিয়ন্ত্রণ চেষ্টা, সংবাদ কর্মীদের হয়রানি  উন্নত-উন্নয়শীল দেশে হামেশাই ঘটছে। এ সত্যকে মেনেও সাহসি সাংবাদিকতা সম্ভব এবং সেটি হচ্ছেও। তবে পরিবারের অন্ন সংস্থান বিপন্ন হলে তা অনেক সময় অসম্ভব হয়ে উঠে।

আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে বলছি, গত দুই দশকে দেশে সাংবাদিকদের জীবিকা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে। নতুন কাগজ এসেছে, স্যাটেলাইট চ্যানেল চালু হয়েছে। তবে সাংবাদিকদের নিরাপদ জীবিকার সংস্থান হয়নি (সরকারি বার্তা সংস্থা বিএসএস, বিটিভি এবং রেডিও বাদে)।


  • তবুও সংবাদ, সংবাদকর্মীরা কাজ করেন। এটাকে সমাজারে প্রতি দায়  না বলে আমি বলি  নেশা থেকে। এ সব সংবাদকর্মী চাইলে জীবনে বহুভাবে  নিজের জীবিকা নিশ্চিত করতে পারতেন, সেটি না করে তাঁরা সংবাদের  নেশায় মেতে আছেন। নতুন খবর, নতুন একটি প্রতিবেদন নতুন করে পিতা হবার অনুভূতির মত!

২.

সংবাদ মানুষকে নানাভাবে প্রভাবিত করে, সে প্রভাব এবং পরবর্তী সমীকরণ বাস্তবতা মেনে সংবাদের গুরুত্ব একেকজনের কাছে একেক রকম।

গরিব দেশের মানুষের কাছে খবর আর বিত্তবান দেশের কাছে খবরের বৈচিত্র হয়ত ভিন্ন । কিন্তু আবেদন সমান। তাই সংবাদের ভেতরের খবর জানার জন্যও মানুষ আকুল হয়ে ওঠেন।

শূণ্য দশকে আমরা যারা সংবাদ নিয়ে  কাজ শুরু করি সে সময়টার সাথে এখনকার সময়টার বিস্তর ফারাক।  তবে এটা নিশ্চিতভাবে আমার মত একজন অপাঙতেয় সংবাদকর্মীর উপলব্ধি যে, বাংলাদেশে সংবাদ মাধ্যম গুটিকতক ব্যতিক্রম ছাড়া ঠিক পেশা এবং শিল্প মান উত্তীর্ণ হতে পারেনি।

এ হতে না পারার পেছনে দু’পক্ষই দায়ি-একপক্ষ যারা সংবাদকর্মী। অন্যপক্ষ উদ্যোক্তা। এ  দু’পক্ষের মধ্যে যারা সমন্বয় করেন- তাদের আমি পক্ষ না বলে  মিডিয়েটর বলি। এ  মিডিয়েটররা মিডিয়ায় এক বড় আপদ । তাঁরা নিজেদের দিকটায় সব সময় সামলানানোর চেষ্টা করেন। কর্মীর দিকটা নয়।  
 
 
তবুও সংবাদ, সংবাদ নিয়ে কাজের লোক ও বার্তা কক্ষ এক ধরণের সম্মোহন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। তার সাথে  যুক্ত হযেছে গ্ল্যামার সাংবাদিকতা। যেটাকে আমরা টিভি সাংবাদিকতা নামে ডাকি।

যে নামে, বা যে আবরণেই আমরা নিজেদের  তুলে ধরিনা কেন, সমাজে সংবাদ, সংবাদ সরবরাহকারীদের নিয়ে  নানা রকমের সঙ্কট-সম্মান-সংশয়-অপমান-অসম্মান এবং বিপন্ন  হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রব্যবস্থার সঞ্চালকদের তল্পিবাহকদের কারণে। সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণের  একটা ফর্মূলা বা তরিকা কিন্তু তল্পিবাহকরাই  শিখিয়ে দেন, যেটি রাজনীতিকরা এখন বেশ রপ্ত করেছেন।
 
৩.

গোড়াতেই যে কথা বলছিলাম- সংবাদের ক্ষুধা-তৃষ্ণা।  হাজার খানেক কাগজ, কয়েক হাজার ডিজিটাল সংবাদ মাধ্যম, কয়েক ডজন টেলিভিশন চ্যানেল এবং ডজন খানেকেরো বেশি রেডিও স্টেশন থাকার পরে সংবাদদের ক্ষুধা মেটেনা ১৬ কোটি মানষের!

এটা নিয়ে কোন সংবাদ মাধ্যম পাঠকের মতামত জানতে চায়নি। প্রেস কাউন্সিল বা প্রেস ইন্সটিটিউটও শুনতে চায়নি, পাঠক আপনার চাহিদা কি?

সংবাদ মাধ্যম বা সংবাদ নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের সবারই গৎবাঁধা কিছু তত্ত্ব মেনে সংবাদ পরিবেশনের ছক আঁকা। সে ছকে আটকে আছে সংবাদ। পাঠকের রুচি যে বদলেছে, ডিজিটালাইজেশেনের সুবাধে পাঠক এখন চাইলে যে কোন ধরণের সংবাদ মুহুর্তে জেনে নিতে পারছেন, সেটি আমাদের বার্তা কক্ষ পরিচালকরা জানলেও খুবই কম আমল করছেনা।  






 
দেশীয় সংবাদ মাধ্যমের উপর মানুষের আস্থা কম। এটা ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ। এ আস্থার সঙ্কটের সুযোগটা নিয়ে অনেক সাধারণ মানুষ- অসৎ উদ্দেশে সংবাদ, সংবাদের নামে গুজব কিন্তু বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে-ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রামের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আবার বহু ভালো খবরও দিচ্ছে এসব মাধ্যম। বহু নতুন খবরের উৎসও হচ্ছে।
৪.

সংবাদের মূল প্রবাহ বা সূত্র ঠিক রাখেন  সংবাদকর্মীরা। সেটাকে  আরো পোক্ত করার কাজ করেন বার্তাকক্ষের প্রাজ্ঞ জনেরা।  সেখানে পরিস্থিতি বিবেচনায়  অনেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় বা নিতে বাধ্য হয়। এর পেছনে বড় কারণ নিরাপত্তা।  তারপরেই আছে বেতন- ভাতা । চাকুরি হারানোর শঙ্কা।  এ রকম চাপে থেকে সংবাদকর্মীরা স মানুষের তৃষ্ণা মেটানোর মত খবর জোগাড়ের আগ্রহ পাবেন না-এটাই বাস্তব এবং সত্য। এ শূণ্য স্থানটা ভরাট করছে  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কোন বাছ বিচার ছাড়াই ছেড়ে দিচ্ছে  খবর। এ সব থেকে কখনো কখনো সৃষ্টি হচ্ছে রামু, কখনো নাসির নগর।  আবার কখনো টেকনাফ।
 
সংবাদ মাধ্যমে দলীয় রঙ, প্রতিপক্ষকে  চাপে রাখার কৌশল আগেও ছিল। এখনো আছে। তবে এ সব ছাপিয়ে নতুন ধারার সংবাদ চর্চা যে একেবারেই হয়নি সেটিও  আমি মানি না। বহু সংবাদে মানুষের  কাজে লেগেছে। নিরপরাধ মানুষ সাজা মওকুফ পেয়েছে।  সে সব উদাহরণ কম হলেও আছে।

সংবাদ মাধ্যমে নিয়ে যে সব প্রতিষ্ঠান পাঠ দান করে সেখানেও চলমান সময় এবং বাস্তবতার নিরিখে পরিবর্তন আসেনি, বার্তাকক্ষের পরিবেশও বদলায়নি, বদলায়নি  মালিকদরে আচরণ এবং রাজনৈতিক নেতাদের  দৃষ্টিভঙ্গি। 

সংবাদ মাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠ কাজের জায়গা না বাড়ালে সামনের দিনগুলো মানুষ  সংবাদ মাধ্যমের চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমেই বেশি আস্থা রাখতে বাধ্য হবে, সেটি এ শিল্পের জন্য  ভালো খবর হবে নয়।  কারণ এতে সংবাদ মাধ্যমের রাজস্ব বঞ্চনা যেমন বাড়বে, তেমনি সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।
 

‘ও বাঁশি খুন করেছে’

 
এক মধ্যরাতের গল্প ... সোনাইমুড়ি স্কুলের পাশে ছোট এক মার্কেট।  নিভৃত রাত । দশক দুই আগের । বাঁশির অনবদ্য সুর । নীরব রাতে অনন্য এক আবহ তৈরি করলো। বালিশ থেকে মাথা তুলে জানালা দিয়ে বাইরে চাইলাম। কারো দেখা নেই । কেবল কমনীয় রমণীর মণিপুরী রাগাশ্রয়ী নৃত্যের মত বাঁশির সুর সুধা । জীবের প্রথম উপলব্ধি করলাম । বহু রাত অবধি । সে বাঁশির ডাক আজো মনে পড়ে। বাঁশি নিয়ে এ গানটা আমার সেইসব দিনের কাছে নিয়ে গেলো ... আহা সময় । তারপর বহু বিখ্যাত মানুষের বাঁশি শুনেছি ... ওস্তাদ আজিজুল থেক হরিপ্রসাদ । সোনাইমুড়ির স্কুল ঘরের পাশের মার্কেটের সামনে সেই টেক্সঅলার বাঁশির মত সুর এখনো প্রথম তৃপ্তি, আমার ! আজকে দাদার গানটা সেই টেক্সিঅলাকে মনে করিয়ে দিলো। যদিও সে টেক্সিঅলা ফ্রেমবন্ধী ‘শিল্পী’ নন, সৌখিন বাঁশিঅলা। তবুও তার সেই বাঁশিতে মোহিত রাত জীবনে ফিরে ফিরে আসে। ...‘ও বাঁশি খুন করেছে’ । শুনতে পারেন ... এখানে 

এমন পিতা যেনো কারো না হয়!


ছবি সৌজন্য:  সময় নিউজ ডট টিভি।


বরখাস্ত ডিসি কবীরের সন্তানদের কথা চিন্তা করেন, কী ভয়ঙ্কর একটা সময় তাদের সামনে হাজির করেছে পিতা। এমন পিতা যেনো কারো না হয়। 

পিতার কুকীর্তির ভার সন্তান ও স্বজনদের বইতে হবে।  এমন কেন হয়। এমন কেন হবে। মায়ের কুকর্ম সারাজীবন সন্তানকে তাড়া  করে বেড়াবে, এমন মাও কেন।  তবুও হয়, সমাজে বহুযুগ  ধরে এসব চলে আসছে। সে চলে আসাটাকে  সহজ করেই দেখে সমাজবিজ্ঞানীরা। 


কিন্তু এ সবের প্রচার-প্রসার করে যারা বিকৃত আনন্দ উপভোগ করেন, তাদেরও ভাবা উচিত.. অপরাধ যে করেছে শাস্তি তার প্রপ্য। এ জন্য পুরো পরিবার, স্বজনদের বিব্রত করা... কঠিন সঙ্কটে ফেলে দেওয়াটা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।
যা ঘটেছে, তা দু’জনের সম্মতিতে। অনৈতিক এ সম্পর্কের ভিডিও যারা প্রচার করেছেন, তাদের কোন মতলব থাকতে পারে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তারা যদি চাইতেন এ অনৈতিক কাজের জন্য দণ্ড হোক তাহলে তারা এটি সরকারের অপরাধ দমন  বিভাগে জানাতে পারতেন। তা না করে এর  প্রচার - নৈতিকভিাবে সমর্থন করা যায় না। 

সাধনা,  যিনি ডিসি সাবের  অফিসের সহকারি- তার কথাও ভাবুন... ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণের পুরনো লিপ্সা তার মত একজন সাধারণ নারীর মধ্যে জন্মেছে ঠিক, কিন্তু এর  এত বাড় বাড়ন্ত হওয়ায়টা একটা কঠিন সময় হাজির করেছে। 

সংবাদ মাধ্যমের বিবরণীতে তাকে ছায়া ডিসিও বলা হচ্ছে।  যা-ই হোক না কেন, নিজেকে সঁপে দিলেন, সাধনা। এমন ক্ষমতাবান হয়ে লাভ কি হলো... চূড়ান্তে সব উড়ান দিল.. জীবন বড় নির্মম। সময় বড়ই অস্থির। 

কেবল রসিয়ে এসব আলোচনা না করে অবক্ষয়ের দিকটাও ভাবি... আমরা নিজের জায়গা থেকে ঠিক হয়ে যাই। সবাই সুন্দর পরিবার-আনন্দময় জীবনে উৎসাহিত হোন।


পরকালীন যাত্রা শান্তিময় হোক প্রিয় কবি আল মাহমুদ


   ছবি : এনটিভি অনলাইন

জমিদারি রক্ত বহন করলেও মানুষটা সারা জীবন কইছেন গ্রাম বাংলার কথা। লোকজ ধারার শব্দ সম্ভার দিয়ে আধুনিক কবিতাতে সমৃদ্ধ করেছেন। বুনেছেন- নতুন, বৈচিত্র্যময় এক অনন্য কবিতার ভুবন।  রাজনীতির সুতোয় ঘিরে যাঁরা তাঁকে মূল্যায়ন করেছেন, তারা নিশ্চিতভাবে তাঁর প্রতি, তাঁর সাহিত্য কর্মের প্রতি, অকপটে  নিজের সারল্য তুলে ধরা এক কবির প্রতি সুবিচার করেননি! এটা নিশ্চিত।

আল মাহমুদের সাথে আমার পরিচয় অল্প সময়ে। একজন সাংবাদিকের পরিচয় যেমনটা হয়, ঠিক সে রকম। ক্ষেত্রে বিশেষ তারচে কম। আমি  ক’ বার তার সাথে কথা বলেছি। ফোনে। সরাসরি কথা বলেছিল অল্প ক’বার। তাও বই মেলা বা শিল্পকলায়।

 যতদূর বুঝতে পেরেছি, তাঁর ভেতরের সারল্য অনুভব করেছি। তাঁর সাথে প্রথম সরাসরি দেখা বা কথা সম্ভবত বিউটি বোর্ডিংয়ে। শামসুর রাহমান এবং আল মাহমুদ একসাথে এসেছিলেন, কোন এক অনুষ্ঠানে।

তবে আল মাহমুদের লেখার সাথে আমি কৈশরেই পরিচিত। তার গল্প কবিতা আমাকে প্রচণ্ড রকমের স্পর্শ করেছে।  তার গল্পের বই  পানকৌড়ির রক্ত আমার ভীষন প্রিয়।  তাঁর গল্প  জলবেশ্যাও । ওই গল্পে একটা যৌবন, একটা জীবিকা আর একটা মৃত্যুর অনন্য মিথিস্ক্রয়া আছে। ইনডিয়াতে এটা সিনামাও হয়েছে।  বাংলাদেশে হয়নি, কারণ বঙ্গে আল মাহমুদ মৌলবাদী হিসাবে বিবৃত হয়। তাঁকে কোনঠাঁসা করার কবি-রাজনীতি এখানে প্রকট।

তাঁর কাছে এ বিষয়টিই আমি জানতে চেয়েছিলাম, সম্ভবত ২০১১ বা ১৩তে। জিগেশ করেছিলাম- আপনি মৌলবাদী। এমন প্রচার আছে। আপনার অবস্থান কি? হাসলেন আল মাহমুদ। বললেন, আমার বিরুদ্ধে এটা প্রধান অভিযোগ। আমি মৌলবাদী। এই অভিযোগের প্রকৃতপক্ষে কোনো ভিত্তি না থাকলেও আমার প্রাপ্য সম্মান থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

ঘটনা সঠিক। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সম্মাননা পাননি। যদিও বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর ঋণের কথা তিনি তাঁর কাবিলের বোনের উল্লেখ করেছেন।

তাঁর কথা ছিল সে দিন এ রকম- ‘আমি অনেকদিন আগেই প্রতিযোগিতামূলক দৌড় থেকে অবসর নিয়েছি, তবুও কেন যে আমার এত অনিষ্টকারী প্রতিযোগি আছে তা আল্লাহই জানেন। দীর্ঘ জীবনই আমাকে বিজয়ীর বরমাল্য পরিয়ে দিয়েছে।’

কবি না হলে কি হতে তিনি সে প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন । বলেছিলেন, ‘আমি যদি সাহিত্যের লোক না হতাম, তাহলে সঙ্গীতই হতো আমার উপজীব্য।’

আল মাহমুদের কথাই বলি-‘কবির কোনো বয়স নেই, বিনাশ নেই। তারা চিরদিনের চিরকালের। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একজন কবি দৃশ্যত লোকান্তরিত হলেও তিনি বেঁচে থাকেন তাঁর কর্মে ও কবিতায়।’

 আল মাহমুদ বেঁচে থাকবেন সাহিত্যামোদিরে মননে। পরকালীন যাত্রা শান্তিময় হোক প্রিয় কবি।

শেষে আমার প্রিয় ক’লাইন, আল মাহমুদের সোনালী কাবিন-১০ থেকে

‘‘ ...আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বণ্টন,
পরম স্বস্তির মন্ত্রে গেয়ে ওঠো শ্রেণীর উচ্ছেদ,
এমন প্রেমের বাক্য সাহসিনী করো উচ্চারণ
যেন না ঢুকতে পারে লোকধর্মে আর ভেদাভেদ । ’’


'আমাকে যেন ভুলে না যাও...’







দিলখোলা বুলবুল ভাই। হাসতেন প্রাণখুলে। কথা বলতেন মন খুলে। সুরকার হিসাবে নন্দিত। গাইতেনও। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল- বাংলাগানের কিংবদন্তীর সুরকার।  তাঁর সাথে প্রথম সরাসরি আলাপ পরিচয় ২০০৫  সালে। ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁছে বাংলাদেশ- শিরোনামে একটি প্রতিযোগিতায় তিনি বিচারক ছিলেন। সে কারণেই তার সাথে আলাপ হতো বেশি।

প্রথমবারের প্রতিযোগিতার অডিশন রাউন্ড কভার করতে ঢাকার কয়েকজন সহকর্মীর সাথে আমিও  ঢাকার বাইরে  চট্টগ্রাম, খুলনা, ফরিদপুর, সিলেট, ময়নসিংহ-সহ বেশ কয়েকটি জায়গা গিয়েছিলাম। নিউজের খাতিরেই বুলবুল ভাইয়ের সাথে কথা হতো।  অডিশন রাউন্ড কভার শেষে তার সাথে আলাপ-আড্ডা জমতো। তাঁর সাথে সন্তান সামিরওথাকত। সে সময় সামির শিশু। অডিশন নেয়ার ফাঁকে বুলবুল ভাই সামিরকে বেশ সময়ও দিতেন। 

নতুন এক বুলবুল ভাইকে আবিষ্কার করি সে সময়। সম্পর্কটা খুব পোক্ত না হলেও  টেকসই ছিল। ২০০৫ থেকে টানা প্রতিযোগিতাটি কভার করেছি। একই প্রতিযোগিতার রিপোর্টের খাতিরে তার সাথে বাবার বার নানা প্রসঙ্গে আলাপ হতো। সাঁইজির গানের ভক্ত ছিলেন বুলবুল ভাই। শেকড়ের গানের প্রতি তাঁর প্রচণ্ড টান ছিল। সুযোগ পেলে পুরনো দিনের গান, গানের আয়োজনের প্রসঙ্গ তুলতেন। 

২০১১ সালের পর খবরের কাগজে কর্মস্থল বদলের পর গান নিয়ে খুব একটা আলোচনা হতো না।  এর মধ্যে গত বছর জানলাম বুলবুল ভাই অসুস্থ।  হৃদরোগে আক্রান্ত গানের বুলবুল। মনটা খারাপ হয়েছিল, হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়েই ফিরেছিলেন তিনি,সে খবরও ছিল। কিন্তু শেষতক তিনি  আমাদের ছেড়েই গেলেন।

সব মানুষ মারা যাবে। এটাই সৃষ্টিকর্তার নিয়ম। তবুও বুলবুল ভাইদের এত দ্রুত চলে যাওয়াটা কষ্ট দিচ্ছে। সমাজে গানের নামে যাচ্ছে তাইয়ের সময়েও বুলবুল ভাই তাঁর নীতিতে  অটল ছিলেন। কথিত আধুনিকতার জোয়ারে গা ভাসাননি। এটা কম কথা নয়। সামাজিক মাধ্যমে 'বুস্ট' করে কেনা জনপ্রিয়তার সময়ও তিনি স্বতন্ত্র ছিলেন। বলেছেন, গানের কথা, ভালো গান করার জন্য নতুনদের প্রেরণা জুগিয়েছেন সব সময়।

হৃদরোগ রোগ তাঁকে ছাড়োনি। কাজেও তিনি অনুপুস্থিত ।  ব্যস্ত নগরে তাই হয়ত অনেকেই তারঁ খবর নেননি। সে জন্যই হয়ত ২ জানুয়ারি তিনি ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করেছেন, লিখেছেন 'আমাকে যেন ভুলে না যাও... তাই একটা ছবি পোস্ট করে মুখটা মনে করিয়ে দিলাম।’ -----কী নির্মম সত্য বুলবুল ভাই, আমাদের মনে করিয়ে দেয়ার দিনকুড়ি পরে তিনি নিজেই আমাদের ভুলে চলে গেলেন। পরকালীন জীবন কল্যাণকর হোক বুলবুল ভাই। 

কিংবদন্তীর মৃত্যু নেই। এ কেবল লোকান্তর। পরকালীন জীবন মঙ্গলময় হোক প্রিয় আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। আপনার সঙ্গীত, সুর, বাংলা গানের সমৃদ্ধি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দেবে-।