পরকালীন যাত্রা শান্তিময় হোক প্রিয় কবি আল মাহমুদ


   ছবি : এনটিভি অনলাইন

জমিদারি রক্ত বহন করলেও মানুষটা সারা জীবন কইছেন গ্রাম বাংলার কথা। লোকজ ধারার শব্দ সম্ভার দিয়ে আধুনিক কবিতাতে সমৃদ্ধ করেছেন। বুনেছেন- নতুন, বৈচিত্র্যময় এক অনন্য কবিতার ভুবন।  রাজনীতির সুতোয় ঘিরে যাঁরা তাঁকে মূল্যায়ন করেছেন, তারা নিশ্চিতভাবে তাঁর প্রতি, তাঁর সাহিত্য কর্মের প্রতি, অকপটে  নিজের সারল্য তুলে ধরা এক কবির প্রতি সুবিচার করেননি! এটা নিশ্চিত।

আল মাহমুদের সাথে আমার পরিচয় অল্প সময়ে। একজন সাংবাদিকের পরিচয় যেমনটা হয়, ঠিক সে রকম। ক্ষেত্রে বিশেষ তারচে কম। আমি  ক’ বার তার সাথে কথা বলেছি। ফোনে। সরাসরি কথা বলেছিল অল্প ক’বার। তাও বই মেলা বা শিল্পকলায়।

 যতদূর বুঝতে পেরেছি, তাঁর ভেতরের সারল্য অনুভব করেছি। তাঁর সাথে প্রথম সরাসরি দেখা বা কথা সম্ভবত বিউটি বোর্ডিংয়ে। শামসুর রাহমান এবং আল মাহমুদ একসাথে এসেছিলেন, কোন এক অনুষ্ঠানে।

তবে আল মাহমুদের লেখার সাথে আমি কৈশরেই পরিচিত। তার গল্প কবিতা আমাকে প্রচণ্ড রকমের স্পর্শ করেছে।  তার গল্পের বই  পানকৌড়ির রক্ত আমার ভীষন প্রিয়।  তাঁর গল্প  জলবেশ্যাও । ওই গল্পে একটা যৌবন, একটা জীবিকা আর একটা মৃত্যুর অনন্য মিথিস্ক্রয়া আছে। ইনডিয়াতে এটা সিনামাও হয়েছে।  বাংলাদেশে হয়নি, কারণ বঙ্গে আল মাহমুদ মৌলবাদী হিসাবে বিবৃত হয়। তাঁকে কোনঠাঁসা করার কবি-রাজনীতি এখানে প্রকট।

তাঁর কাছে এ বিষয়টিই আমি জানতে চেয়েছিলাম, সম্ভবত ২০১১ বা ১৩তে। জিগেশ করেছিলাম- আপনি মৌলবাদী। এমন প্রচার আছে। আপনার অবস্থান কি? হাসলেন আল মাহমুদ। বললেন, আমার বিরুদ্ধে এটা প্রধান অভিযোগ। আমি মৌলবাদী। এই অভিযোগের প্রকৃতপক্ষে কোনো ভিত্তি না থাকলেও আমার প্রাপ্য সম্মান থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

ঘটনা সঠিক। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সম্মাননা পাননি। যদিও বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর ঋণের কথা তিনি তাঁর কাবিলের বোনের উল্লেখ করেছেন।

তাঁর কথা ছিল সে দিন এ রকম- ‘আমি অনেকদিন আগেই প্রতিযোগিতামূলক দৌড় থেকে অবসর নিয়েছি, তবুও কেন যে আমার এত অনিষ্টকারী প্রতিযোগি আছে তা আল্লাহই জানেন। দীর্ঘ জীবনই আমাকে বিজয়ীর বরমাল্য পরিয়ে দিয়েছে।’

কবি না হলে কি হতে তিনি সে প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন । বলেছিলেন, ‘আমি যদি সাহিত্যের লোক না হতাম, তাহলে সঙ্গীতই হতো আমার উপজীব্য।’

আল মাহমুদের কথাই বলি-‘কবির কোনো বয়স নেই, বিনাশ নেই। তারা চিরদিনের চিরকালের। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একজন কবি দৃশ্যত লোকান্তরিত হলেও তিনি বেঁচে থাকেন তাঁর কর্মে ও কবিতায়।’

 আল মাহমুদ বেঁচে থাকবেন সাহিত্যামোদিরে মননে। পরকালীন যাত্রা শান্তিময় হোক প্রিয় কবি।

শেষে আমার প্রিয় ক’লাইন, আল মাহমুদের সোনালী কাবিন-১০ থেকে

‘‘ ...আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বণ্টন,
পরম স্বস্তির মন্ত্রে গেয়ে ওঠো শ্রেণীর উচ্ছেদ,
এমন প্রেমের বাক্য সাহসিনী করো উচ্চারণ
যেন না ঢুকতে পারে লোকধর্মে আর ভেদাভেদ । ’’


1 টি মন্তব্য:

মোরতাজা বলেছেন...
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।