কান্নার ছবি'র ছবি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সৌজন্যে
ইভ্যালির মালিক মি. মোহাম্মদ রাসেলের লাইভটা দেখে খারাপ লাগলো। তাঁর কান্নাটা আমার পছন্দ হয়নি। এখানে সে অর্থে উনি ব্যবসায়ি হয়ে উঠতে পারেননি। পারেননি--- এ কারণে বলছি, যদিও তাঁর হিসাবে ৭০০ মানুষ তাঁর সাথে কাজ করছেন সরাসরি । ১৩শ মানুষ ডেলিভারি করার জন্য যুক্ত আছেন। তাহলে মোটের উপর ২ হাজার লোকের জন্য যে দক্ষ নেতৃত্ব তাঁর দরকার সেটি নেই। এটা ত্যানা না পেঁচিয়ে সারাসরি বলেই নিলাম।
দেশের প্রভাবশালী দৈনিক প্রথম আলো তাদের যে সব তথ্য/ভুল তুলে ধরেছে ইভ্যালির ইউজার হিসাবে আমি এর সাথে মোটামুটি একমত। যাঁরা সরকারের ই-কমার্স নীতিমালাটি পাঠ করেছেন তাঁরাও বলবেন, তারা এর বেশ কিছু ধারা লঙ্ঘন করছেন। এবং নিয়তই করে যাচ্ছেন।
ইভ্যালি কল সেন্টারটি কাজ করে না। এ সত্য। আপনি পণ্য নিয়ে অভিযোগ করবেন সেটিরও উত্তর মেলেনা। আমি নিজে অন্তত চারটি অভিযোগ লগ করে আপনাদের বলছি। এবং এ অভিযোগ লগের পর কোন ডকুমেন্ট থাকে না। যদিও লাইভে এসে তিনি বলেছেন, সব সিস্টেম ডিজিটাল করার জন্য তারা ক্যাশ অন ডেলিভারিটা রাখেননি। তাহলে সমস্যার সমাধানে ই-টোকেন সিস্টেম রাখতে পারেতেন। এটা অনেক ফুড ডেলিভারি সাইট; এমনকি টেলিকম অপারেটরাও ইলেট্রনিক কমপ্লেইনের ক্ষেত্রে রেখেছেন।
জানি না; চলমান ধাক্কাটা ইভ্যালিকে কোথায় দাঁড় করাবে। আমি অবশ্য তাদের সাইটে কেনাকাটা অব্যাহত রেখেছি। অন্য অর্থে বললে বাধ্য হয়েছি। কারণ ইভ্যালি ক্যাশে আমার বেশ কিছু টাকা জমে আছে। সে খরচ করার জন্য আমাকে কেনাকাটা করতে হবে। আমার প্রায় ১০টির মত অর্ডার এখানো ঝুলে আছে। তাতেও আমার আপত্তি নেই। এমন ক্রাইসিসে তারা এটা ডেলিভারি করতে সময় নিবেন এটাই স্বাভাবিক। মজার বিষয় হলো ডেলিভারি অপশনে আপনাকে বাধ্যতামূলক ক্লিক করতে হবে ৭ থেকে ৪৫ কর্ম দিবসে আপনি অর্ডারটি ডেলিভারি পাবেন। তবে এ ডেলিভারি এক মাসের আগে রেয়ার হয়।
যেটি মূলত আমি বলতে চাইছি--- মি. রাসেল আলীবাবার মত আমাদের দেশের জিডিপিতে বড় ধরণের অবদানের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করছেন--- এমন একটা বক্তব্য ২৯ আগস্টের লাইভে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁর সমানে গ্রাফ ছিল বলছিলেন, যদিও সেটি লাইভে আমরা দেখিনি। দেখেছি আবেগময় কিছু কথা। তাঁর পানি খাবার স্টাইলটাও পছন্দ হয়নি। একটি বড় কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতাসুলভ কিছু চোখে পড়েনি।
যে বিষয়গুলোতে তাঁর/তার কোম্পানির ভীষণ দূর্বলতা আমার চোখে ধরা পড়েছে--- সে গুলোই বলি। এটা উনি জানতে পারলে হয়ত কাজে দেবে। সে জন্যই বলা। আমরাও চাই দেশি একটা কোম্পানি বড় হোক। বড় হলে আমরাও বলতে পারি আমােদের একটা বড় কোম্পানি আছে।
ইভ্যালি'র লোগো--- গুগল থেকে নেয়া
দ্বিতীয়ত:: তাঁর প্রতিষ্ঠানের পেইড অফ ক্যাপিটাল সময়মত বৃদ্ধরি সুযোগ ছিল, তিনি সেটি করেননি।
তৃতীয়ত:: তিনি গ্রাহক সমস্যা সমাধানে সঠিক কোন তরিকা জারি রাখেননি।
বিদেশে টাকা পাচার করেছেন কি করেননি; তা আমার মাথাব্যথার কারণ নয়। আমি যেটি নিয়ে বলতে চাই-- একটা প্রতিষ্ঠান মাসে ৩শ কোটি টাকা সেল করে, সে প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা ভঙ্গুর হবে কেন? সে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা লাইভে এসে আবেগ প্রকাশ করতে পারেন; কিন্তু নিজের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বক্তব্যগুলোর একটা গোছানো ব্যাখ্যাও তিনি দিবেন। এটাই প্রত্যাশিত ছিল। এটা হয়নি মানে --- উনার প্রতিষ্ঠানের রেপুটেশন, কমিউনিকেশন, কাস্টমার রিলেশন প্রফেশনালি ম্যানেজ হচ্ছিলো না।
সত্য কথা--- উনার স্বপ্ন বড়। এবং উনি একটা বড় মার্কেটপ্লেস তৈরি করেছেন। আমি নিশ্চিত তাঁর উত্থানের পেছনে অনেকে পথ আগলানোর চেষ্টা করেছেন বা এখনো করছেন। পথ আগলানোর বিষয়টি প্রথমেই মাথায় নিয়ে তাঁকে মাঠে নামা দরকার ছিল। হয়ত তিনি নেমেছেনও। কিন্তু কৌশল নির্ধারণে তাঁর দূর্বলতা থাকর কারণে দেশি একটা উদ্যোগ প্রশ্নের মুখে পড়লো। সময় এখনো চলে যায়নি,ড্যামেজ কন্ট্রোল করার জন্য এখনো তাঁর পেশাদারি মনোভাব দরকার।
সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক ক্যাম্পেইন চলছে; ইভ্যালির পক্ষে । এটা ভালো। কিন্তু মূলধারার মিডিয়ায় এখনো আসল মিডিয়া। মাউথ অফ ওয়ার্ডই আসল মার্কেটিং। এটা থেকে তাঁরা দূরে আছেন। এ জন্য ড্যামেজ বাড়ছে। এখানে তাঁদের প্রাপার ইনফরমেশন দিয়ে মানুষকে এডুকেট করা দরকার।
তাদের নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ই-ক্যাব থেকেও একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি আজকে(১ সেপ্টেম্বর ২০২০) গঠিত হয়েছে। সব মিলিয়ে এত তদন্তের দরকার হতো না;যদি পেশাদার প্রতিষ্ঠানের মত শুরু থেকে আচরণ করতো ইভ্যালি। এটি করতে না পারার ব্যর্থতা হয়ত একটা প্রতিশ্রুতিশীল প্রতিষ্ঠানকে বিপাকে ফেলতে পারে। এটা অন্যদের জন্যও লার্নিং হতে পারে।
লাইভের নিউজ এবং ভিডিও দেখতে ক্লিক করতে পারেন -- https://www.thedailycampus.com/economics-technology/51824
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন