গল্প :: মায়াময় হাসি, ভালোবাসার ডাক! কিংবা কেমন আছো!


  • এখন গ্রামে জোছনা--- ছবি ব্লগারের নিজস্ব

কোন কারণ ছাড়া মানুষের মন খারাপ হয়, এটা মানতে নারাজ রফিক। প্রত্যেকটা জিনিসের পেছেনেই একটা কারণ থাকবে। যেমন- আজকে তার মন খারাপ! এর কোন কারণ খুঁজে বের না করা গেলেও; নিশ্চয় একটা কারণ আছে। এটাই মন খারাপ নিয়ে রফিকের কনক্লুশন।

মন খারাপের সময়টাতে মানুষ অনেক বাজে চিন্তা করে। কেউ চুরুট টানে। বিড়ি ফোঁকে। কারো তিক্ত জল গেলার অভ্যাসও আছে। কেউ ভাবে মইরা যামু!  কিন্তু রফিক এ সবের ধারে কাছে যায় না!

মন খারাপের দিনে রফিকের  সুইমিং করতে ইচ্ছে করে। সেটি পুকুরের পাতলা জলে। কিংবা নদীতে। অদ্ভূত একট বিষয়।  এটা এ নগরে হয় না, এ না হবার বিষয়টা তাকে আরো কষ্ট দেয়। কিন্তু দিন শেষে নিজেকে সামলে নেয় রফিক। কাজের ভেতর ডুব দিলে, দিন কীভাবে কাটে; সেটি আর মনে থাকে না।

গ্রাম ছেড়ে শহরের আসবার কারণে নিজের বেশি বিষাদ--- এমন অভিযোগ তার নিজের বিরুদ্ধে। আবার এটাও তো ঠিক শহরে না এলে মানুষে মানুষে ভেদ, গতি প্রকৃতির কত খেলা-- সে সব তার জানাই হতো না। মাঝে মাঝে মনে হয়--- এত জেনে লাভ কি! মাস শেষে টাকার টানাটান।  সংসারে অশান্তি। বুকের ভেতর থেকে ঠাণ্ডা একটা নিঃশ্বাস! সবই রয়ে গেলো।

রফিকের এখনো মনে আছে- শহরে আসার পর মেসে একটচা ঘরে তারা দু'জন থাকতো।  দু'জনে অনেক গল্প করতো। গ্রামের গল্প। কলেজের গল্প। নিজের বয়ঃসন্ধি কালের গল্প। যৌবনে নারী শরীরের গল্প। সব গল্প ছাপিয়ে রফিকের কেবল মনে হতো; তার গ্রামের ধান চাষের জন্য চষে রাখা জমির ঘোলার জলে উপর জোছনাটা! অপূর্ব! অপূর্ব সেই দৃশ্য। অপূর্ব সেই দৃশ্য তার ২৫ বছরের জীবনে দ্বিতীয়টি চোখে পড়েনি।

রফিকের কাছে জোছনা উপভোগই বিনোদন। অপূর্ব বিনোদন।  সে সময় তো এত ফেসবুক, টুইটার, ইমো আর ম্যাসেন্জার আসেনি।  পড়াশোনার ফাঁকে একটু ফুসরত পেলে জানালার বাইরে নড়াচড়া করা পাতার রহস্য ভেদ ভাবনা কিংবা জোছনা রাতে ঘরের বাইরে থেকে হেঁটে আসাটাই ছিল উপভোগ্য।  অথবা ঘোর মেঘাচ্ছন্ন বিকালে দৌড়ে বাড়ি ফেরার পর আর টিনের চালে বৃষ্টি অবিরত শব্দ। কী অপূর্ব সেই দৃশ্য।

 শহরে সে সবের বালাই নেই। এখানে প্রায় সব মানুষই ধান্দায় ঘোরে, ধান্দায় ফেরে। ধান্দাটাই এখানে আসল। বাকি সব মিথ্যা।  এই যে পাশের বাসার মেয়েটি উঁকি দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো, সেটিও একটা ফিকির! 

 নাহারের হাসিটা কোন কালেই রফিকের কাছে  ফিকির মনে হয়নি। মেয়েটা কেমন মায়াময় চোখে তার দিকে তাকায়। কী সুন্দর করে ডাকে! নিজেই নিজেতে হারিয়ে যায়। জিজ্ঞেস করে, কেমন আছো! একটা গ্রামীণ মেয়ে এত সুন্দর করে বাংলা বলে কেম্নে! এতেই মোহিত রফিক।



সেই মেয়েটাও তাকে ছেড়ে গেছে বছর বারো হলো।  তারপরেও তার কোন গোস্সা নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিলনা, সে সময়। চিঠিই ছিলো ভরসা। গুরুজনদের ভয়ে সেই যোগাযোগও ছিল  নিস্তেজ! সব মিলিয়ে অর্জনের খাতায় শূণ্য।

 তবুও কেউ তার দিকে তাকিয়ে মায়ার হাসি হাসলে মন খারাপ হয় রফিকের। এত মায়া কেন? মায়ার উপর কেন আটকে যায় সব। নিজেকে প্রশ্ন করে, কিন্তু উত্তর আসেনি।

 কেবল নাহারের কথা মনে পড়ে! মেয়েটা কি তার জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে পারতো? পারতো হয়ত! সে জন্য তো একটা আশ্বাসের দরকার। সেই আশ্বাসের কিছুই তার ছিল না। ভীতু টাইপ রফিক তাই নিজেই নিজেকে প্রবোদ দেয়। মেনে নাও। ভাগ্যে না থাকলে হবে কেম্নে!

 তবুও মন খারাপ হয়-- মায়াময় হাসি, ভালোবাসার ডাক! কিংবা কেমন আছো! 

কোন মন্তব্য নেই: