সাত মার্চ, বন্দুকযুদ্ধ ও একজন বঙ্গবন্ধু

টেপ রিকর্ডার বাজিয়ে আমি অবাক এবং বিস্মাভিভূত হয়ে এক মহান রাজনীতিকের দরাজ কণ্ঠের বক্তব্য শুনেছি। তিনি বঙ্গবন্ধু ।  তার অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দুরদর্শিতার কারণে তার প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা।

জাতি হিসাবে আমাদের অহঙ্কার তার মত একজন রাজনীতিবিদের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন দেশ রচনার সুযোগ আমরা পেয়েছি।

কিন্তু আমরা কি তার কথা গুলো অনুসরণ করি। তিনি সারাজীবন যা আমাদের বলেছেন, তার সবই অনুসরণযোগ্য।  এটা দল হিসাবে কেবল আম্লীগ চর্চা করবে তা নয়, সবারই এর চর্চা থাকাটা জরুরী।
আজ ৭ মার্চ। রাজধাণীর যে প্রান্তেই যাচ্ছিলাম, সেখানে কানে আসছিল... ভায়েরা আমার..। উদার দিল এক মহান নেতার  ভালোবাসার সম্বোধন।

স্বাধীনতা অর্জনের এতগুলো বছর পরে যখন আমরা তার বক্তব্য শুনছি, উদ্দীপ্ত হচ্ছি। সে সময় তার নিজের দলের সরকার ক্ষমতায়। কিন্তু তারা দেশের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে, কঠিন ও ভয়াবহভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।

শাহবাগ থেকে বাসায় ফিরছিলাম, কানে বাজছিলো বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা... 'কী পেলাম আমরা? জামার পয়সা দিয়ে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্র“র আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরীব-দুঃখী নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে- তার বুকের ওপরে হচ্ছে গুলি। আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু- আমরা বাঙালীরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি তখনই তারা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ' (বক্তৃতার শব্দমালা ঠিক রাখার জন্য ইউকির হেল্প নিছি) ।

কথাটা খুবই প্রাসঙ্গিক এবং এখনো সত্য। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বন্দুকযুদ্ধ চলছে। আমার মনে হয় সরকার একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারেন- সেটি হলো কাকে বাঁচিয়ে রাখা হবে, আর কাকে এরশাদের মত  মানসিকভাবে  বিপর্যস্ত করতে হবে আর কাদের মেরে ফেলতে হবে তার জণ্য মাবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান  ড. মিজান কিম্বা সিইসি রকিবের জন্য  উচ্চ স্তরের  গৃহপালিত লোক দিয়ে একটা কমিশন করতে পারেন। তারা চূড়ান্ত রিপোর্ট বানানোর পর  তা দ্রুত কার্যকর করে জাতিকে আতঙ্ক মুক্ত করবেন!

তাহলে যেটা হয় তাহলো আইন ব্যবসায়ীদের থাবা আর  বিচারপতিদের পেছনে সরকারি খরচা বাঁচে। এত টাই হয়তো বাঁচবে যে, একটা পদ্মা সেতু হতে পারে!!!

বঙ্গবন্ধু আমাদের ক্ষমা করুণ, আমরা আপনার কথামালা চর্চা করতে পারছি না।  পারবো বলেও মনে হয় না।  আমরা এখন ক্ষমতায় অন্ধ! ক্ষমা করুণ বঙ্গবন্ধু।

ফেসবুক: কামকলা ও কামাগুন!

ফেসবুকের পাতায় অনেকের অনেক রকম ছবি দেখি। এক সময় বাংলা সিনেমার পোস্টমর্টেম লিখতাম। এখন সেটা করা হয় না। ফেসবুকের ছবি নিয়া ক'টা কথা বাধ্য হয়ে লিখছি।  বিষয়টা আমার কাছে সুরুচির মনে হয়নি বলে বলা।

সাধারণত কামকলা, কামাগুন এবং নারীর ঝলসানো রূপের বন্দনা করা কবি-সাহিত্যিকরে অভাব নাই। তার ওপর এ সব নিয়ে অনেক পুস্তক রচিত হয়েছে।

আমার পড়া এ রকম পুস্তিকার মধ্যে সবচেয়ে নোংরা  গল্প হলো-সৈয়দ শাসুল হকের বাজার সুন্দুরী। মহান মুক্তিযুদ্ধের ফাঁকে ফাঁকে যোদ্ধাদের হাতে পাওয়া এক কিশোরীকে নিয়ে সেই গল্প। নোংরা মানোবৃত্তির এ গল্পটা শিল্পগুণ বর্জিত।

তবে একই লেখকের বাবর আলি খারাপ না। যদিও বাবর আলা নাকি সৈয়দ হক নিজেই, এমন অভিযোগ আমার নয়, প্রমাণ সহ হাজির করেছিলেন তসলিমা নাসরীন। তার একটা বইয়ে।

কামকলা ও কামাগুন নিয়ে আল মাহমুদও কম যান না। তার জলবেশ্যা এবং পানকৌড়ির রক্ত মুগ্ধ করার মত। তবে পাতার শিহরণ আমাকে টানতে পারেনি। সেখানে গৃহকর্মীর শরেরে বর্ণণাটা এক্কেবারেই নোংরা!

এ সব কথা কেন বলছি, বলছি আগে গল্পে পড়তাম, সিনেমায় দেখতাম, এখন ফেসবুকে দেখি।   অনেকের ছবি দেখা যায়। এ সব ছবি কোন অংশে বাংলা সিনেমার  অশ্লীলতার অভিযোগে অভিযুক্ত  নায়িকা বা নায়কদের চেয়ে কম নয়।

মাসখানেক আগে আমার  হোমে একটা পিকচার হাজির,  তাকে আমি চিনি। তিনি একজন রক্ষনশীল চিকিৎসক। কিন্তু থাইল্যান্ডে গিয়ে হাফ প্যান্ট পরে ছবি তুলে সেটি আবার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।  একই ভদ্র-বিবাহিত বালিকার  আরেকটি ছবি দেখলাম তার বর-প্রেমিককে চুমু খাচ্ছেন। সেই ছবি পোস্ট করতে।

তা না হয় মানলাম, তিনি কর্পোরেট চিকিৎসক, বড় লোকের কন্যা, তাদের কালচারটা এমন হয়ে থাকতে পারে।

কিন্তু স্কুৃল মাস্টারের কন্যার পিঠ উদোম করা ছবিটাও কি মানতে হবে। হিন্দি সিনেমার নায়িকার মত পোস দেয়া এমন ছবি না হয় মানলামই। কলেজ পড়ুয়া মেয়ের বয় ফ্রেন্ডের সাথে রাত পোশাকের ছবিটিও ভালো লাগবে? কিম্বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকার গলার হার, কানের দুল, বাহু কিম্বা আরো কিছুৃ দেখানোর প্রবণতা কি মানতে হবে!

তবে এ সব অভ্যস্ততার ব্যাপার বলে অনেকে মানেন। মানতে চান। আবার অনেকে এ সবকে ভয় পান। এটা নিয়ে কথা বললে, পাছে লোকে জামায়াত বা হেফাজত বলে। আমার সেই ভয় টা নাই।

আমি ব্যাক্তিগতভাবে  কিছু বিষয় গোপন রাখার পক্ষে, অন্তত ফেসবুকের মত বাজারে তোলার পক্ষে নই। এটা আমি না চাইলেও উঠবে। তবে যারা ওঠান তাদের চোখে যদি লেকাটা পড়ে এবং তারা সচেতন হন তাহলে  খুবই কুশি হবো।

আমার খুশি হবার চেয়ে আপনার নিরাপত্তাটা জরুরী।  ফেসবুকে বাংলাদেশের মেয়েদের নিয়ে মাঝে মধ্যে কিছু পেজ চোখে পড়ে, যেখানে ফেসবুকে এ সব ছবি  আপ করা হয়, বিকৃত বর্ণণায়।

কেউ না খেয়ে নেই, কিন্তু কীভাবে খাচ্ছেন!

'না খেয়ে কেউ থাকছে না।' কথাটা অনেকদিন ধরে শুনছি। কিন্তু কীভাবে খাচ্ছে মানুষ। সে খবরটা কি আমরা কেউ নিয়ে থাকি! নাগরিক হিসাবে আমরা আমাদের যাপিত জীবনের ক্ষুধার কষ্ট অনেকটা কমিয়ে এনেছি। এটা নিয়ে দ্বিমত করার কিছু নাই।
এর কৃতিত্বটা কার। সরকারের? এনজিও এর। আমি এটা মানতে চাইনি কখনো, এখনো না। আমাদের দেশের মানুষ নিজেদের চেষ্টায় এগিয়েছে। সামনেও এগুবে।
এখানে রাজনীতি বরং একটা বড় বাধা। রাজনীতিকর গুণ্ডা পোষেন, তাদের জন্য যে চান্দা ওঠে তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শোধ করতে হয় আম জনতাকে।
তবুও মানুষ অদম্য। মানুষের এই এগিয়ে যাওয়াটাকে আমি সম্মান করি। ধারণ করি এবং নিজেও চেষ্টা করি।
ক্ষুধার জ্বালা মেটানোর জন্য অনেকে অনেক রকম পথ বেছে নেন। একজন মানুষের যে রকম বেতন কড়ি পাওয়ার কথা সে রকম পান না। আবার পেলেও আবার কেউ স্বভাবগতভাবে আরো পাবার লোভে সমাজে একটা ভারসাম্যহীনতা তৈরি করেন।
চূড়ান্ত বিচারে সৎ মানুষরাই এগিয়ে থাকেন। সে সততা কেবল কথার নয় কাজের সততা। তবে সমাজের ভারসাম্যহীন প্রতিযোগিতা সততার সাথে চলা মানুষের জীবন যাপনকে কঠিন করে তুলেছে।
সাভারের একটা মেয়ে সেলাইয়ের কাজ করে। যে টাকা সে পায় তা দিয়ে সংসার চলে না। সবার মত তার মনেও আকু পাকু করে ভালো ব্র্যান্ডের লিপস্টিক, ক্রিম মাখার। একটা কারুকাজ করা জামা পড়ার শখ তারো। কিন্তু বাবা মা নিয়ে যেখানে খাবার জোটানোর সংগ্রাম, খাবার জোটেনা ঠিকমত, সেখানে সে অসহায়। কেবল তিন বেলা খাবার নিশ্চিত করতে মেয়েটা লড়ে, ইচ্ছের বিরুদ্ধে লড়ে।
নেটওয়ার্কে ধরা পড়ে মেয়েটা। অথবা ধরা দেয়। সপ্তাহে একদিন করে খদ্দের সামলায়। তার শরীরের স্বাদ নিতে ছোটেন উঠতি পয়সাঅলারা।
তাদের একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- ক্যান এ সব করো। সোজা সাপ্টা উত্তর নগরে দু মুঠো খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য।
মতিয়া আপা এভাবে না খাওয়ার জন্যবিক্রি হয়ে যাওয়া নারীর সংখ্যা কম নয়। সমাজতন্ত্র এক সময় আপনার প্রচার মন্ত্র ছিল। এখন কি আছে। সমাজতন্ত্র মানুষকে মানবিক করে। কিন্তু আপনি কৃষি মন্ত্রী, আপনি বলছেন, মানুষ না খেযে থাকছে না। এ ভাবে কারো কারো শরীর বেচে খাবার যোগাড় করাকে কি বলে। আমি জানি না।
কেবল পৃথিবীর আদিম পেশা বলে আমরা এটাকে কবুল করি। কিন্তু এ মানুষগুলোর জন্য আমরা ভাবি না। যারা অভাবে এবং স্বভাবে এ সঙ্কট সময় পার করছেন। তাদের পাশে দাঁড়ান। কারো দরকার ভাত, কারো চিকিৎসা। বলছি না কালই সব মানুষের সমস্যা সমাধান করে ফেলবেন। শুরুটা করেন না। বদলাবে সবাই।

বিডিআর বিদ্রোহ ও গণমাধ্যম

অন্য দশটা সকালের মতই ঘুম থেকে উঠেছিলাম। মোহাম্মদপুরে থাকতাম তখন। বাসা থেকে বের হবো- এমন সময় মিল্টন ফোন করলো। বললাম, কিরে এত্ত দিন পরে মনে পড়লো।

গোপালগঞ্জের এই পোলাটা আমার মেস মেট ছিল। এক সাথে পুরাণ ঢাকার ললিত মোহন দাস লেনে থাকতাম। দুর্দান্ত আড্ডা আর প্রতি শুক্রবারে বিডিআর সিনেমা হলে বাংলা সিনেমা দেখার সে সব দুর্লভ অনন্দঘন দিন ছিল আমাদের। কিন্তু সংসারী হবার কারণে সে দিকে যাওয়া হয় না। মিল্টন বলল, ভাই বিডিআরের ভিতরে দুই গ্রুপে গোলাগুলি চলছে। অনেক গ্যাঞ্জাম।

আমি অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোর বাড়ি গোপালগঞ্জে। সেখানে বিডিআর আইলো ক্যামেনে। ও বলল আরে ভাই ও খানে না। আজিমপুরে। আমার ভুল ভাঙলো। ঘর ছেড়ে বের হলাম। সংসদ ভবনের কোনায় আসতে গুলি আওয়াজ পেলাম। দিন বাড়ছে, টিভি সম্প্রচার চলছে। এভাবে দেখতে থাকলাম, শুনতে থাকলাম এবং একটা সময় ওই এলাকার মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ।

ঘটনার অনেক নাটুকে মোড়ের পর জানা গেলো অনেক সেনা কর্মকর্তার লাশ ম্যান হোলের ভেতর ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ের সাথে চলে গেছে বুড়িগঙ্গায়। পুলিশ লাশ গুনছে। ডিএডি তৌহিদ বৈঠক করছে। আমরা উদ্বিগ্ন। উৎকণ্ঠিত। কিন্তু দোয়া দরুদ পড়া ছাড়া আমাদের আর কিচ্ছু করার নাই!

সন্ধ্যার দিকে আমাদের ক্যাম্পাসের এক ছোট বোন জানালো তার দুলাভাইও নিহত হয়েছেন। আমি খুবই শকড হলাম। নিহত সেনা কর্মকর্তার একটা অটিস্টিক বাচ্চা আছে। আমার এত খারাপ লাগলো, বলে বোঝানো যাবে না। এমনিতেই এত মানুষ মারা গেলো, তার মধ্যে অটিস্টিক একটা বাচ্চার বাবাও। আমি অনেকক্ষন চুপ করে রলাম। একজন অসহায় মানুষের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিই বা করার থাকতে পারে। ফোনটা নামিয়ে রেখে ভাবছিলাম, বেঁচে থাকটাই মনে হয় মিরাকল!

আজ 25 February বিডিআর বিদ্রোহের সেই অভিশপ্ত দিন। কি নির্মম, বিভৎস দিনটি ছিল। সেটি প্রতি বছর ফিরে আসে। ফিরে আসবে। আমরা না চাইলেও।

আমি বিডিআরের দোকানের খদ্দের ছিলাম। চাল ডাল, আটা কিনতাম। তাদের নিজস্ব আউটলেট থেকে। যেটাকে বিডিআর বিদ্রোহের একটা কারণ মনে করা হয়। ১/১১ এর পরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় ‌'ডক্টরস ক্লাব' মানে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানুষকে কম মূল্যে খাওয়ানের জন্য ডাল ভাত কর্মসূচী জোরদার করেছিল।

সেখান থেকে নাকি এ রকম একটা বিদ্রোহ। আমি অবশ্য ইংরেজি জানি না। এত্ত বড় একটা ঘটনা থেকে আমার একটা অর্জন হলো আমি দুটো ইংরেজি শব্দ 'মিউটিনি' ও 'রিভেল হান্ট ' শিখলাম! এ শব্দ দুটোর অনেক ক্যারিকেচার এবং পর্দার অন্তরালের দৃশ্য সম্পর্কে জানতে পারলাম না। পারবোও না।

ঘটনার পর আমার সে সময়কার কর্মস্থল থেকে একজন ক্ষুদ্র ও গোনার বাইরের সম্বাদিক হিসাবে আমাকে বিষয়টা নিযে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছিল। আমি তা করিনি। করিনি- একেবারেই সচেনতন ভাবে। কারণ এ নিয়ে তদন্ত করার আগে সরকার, বিরোধী দল একে অন্যকে দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে। এখান কে কত ফায়দা তুলবেন সে পরিকল্পনা চূড়ান্ত এবং গণ মাধ্যম এ সব ভালো ট্রিটমেন্টে প্রচার করে যাচ্ছে।

সেখানে আমার অনুসন্ধানের দরকার কি। আবার আমার অনুসন্ধান যদি ক্ষমাতাবানদের বিপক্ষে যায়, সেখানে আমরা মত চুনোপুটি সম্বাদিকের টিকে থাকা মুশকিল। আমি অতিকায় হস্তি নই, তেলাপোকার থিওরিতে বিশ্বাসী। হস্তি হয়ে লোপ পাওয়ার চেয়ে, তেলাপোকা হিসাবে টিকে থাকা ভালো। আমি কথিত মহান এবং মহৎ কোনো কালেই হতে চাইনি, এখনো চাই না।

বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে যে সব ঘটনা ঘটেছে, তার আসল ছবি আমরা এখনো দেখিনি। দেখার ভাগ্য আমাদের হবে না। কারণ লরেন্স লিফশুলৎজরা নিজস্ব অ্যাজেন্ডার বাইরে এ সব নিয়ে অনুসন্ধান করবেন না, বা করেন না। বা করতে পারেন না।

আর বাংলাদেশ থেকে যে আন্তর্জাতিক মাধ্যমে যারা খবর পরিবেশন করেন, যাদের কাছে আমরা নিরপেক্ষ সংবাদের আশা করি, তাদের ব্যাক্তিগতভাবেই জানি, তারা বিশেষ দলের প্রতি নিজ থেকে অনুগত। এ আনুগত্য জাতি হিসাবে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। সত্য প্রকাশে সবচেয়ে বড় বাধার। তবুও মবিলে ভাজা জিলাপি হজম করতে পারলে, এ টুকু না করতে পারার কোনো কারণ দেখি না।

তাই আপাত কোনো আশা নেই। আশার দরকারও নেই। কেবল বিডিআর সদস্যদের হার্ট অ্যাটাকে মারা যাবার ঘটনা আমাকে বিব্রত করেছে। আসলে বিচার প্রার্থীরা এখানে কতটা অসহায় এবং দলান্ধরা এখানকে নিজেদের শ্রেষ্ঠ মোসাহেব হিসাবে প্রমাণে কতটা ব্যস্ত, সে সব বোঝার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দরকার নাই! কোর্টের বারান্দায় যাবার দুর্ভাগ্য হলেই সহজে জানা যায়!

দেশে ও দেশের বাইরের রাজনীতির বেশি জ্ঞান অর্জন আমি করতে চাই না। আমার সে রকম মেধাও নাই। আমি খেটে খাওয়া মুটে মুজুর। আর মুটে মুজুরের এ সব নিয়ে ভাবা ঠিক না। বাংলাদেশের চলমান সম্বাদিকতার স্বাধীনতাও ভোগ করবার সাহস আমার নাই। বরং সরকারের সাথে বুক উঁচা করে বজ্র কণ্ঠে কই 'দেশের গণ মাধ্যম স্বাধীন।' খুবই স্বাধীন এতেও যদি শেষ রক্ষা হয়। মন্দ কি।

আর সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি- সারা দিন আমি যেনো ভালো হয়ে চলি। সবাই যেনো একই রকম কথা মনে মনে বলেন। সবাইয়ের দলে যদি বিচারক আইন রক্ষী ও রাজনীতিকরা পড়েন, তাহলে আনন্দের সীমা থাকবে না।

জওহরি, ভাটি বাঙলা এবং আম জনতার জীবন

খেলাটা ভালোই জমেছে। খেলোয়াড়রা খেলবেনই। এতে আম জনতার আপত্তি করবার কিছু নাই। কিন্তু সে খেলায় যদি আম জনতার জীবন বিপন্ন হবার আশঙ্কা থাকে, তখন বিষয়টা আলাপের জায়গায়।

বলছি জওহরি না ফাওহরির অডিও ক্লিপটার কথা। বাংলাদেশে মুসলিম রাষ্ট্র। এখানে ইসলামি রাষ্ট্র না। হবার সম্ভাবনাও নাই। কারণ এখানকার ইসলামী দলগুলো আম্রিকার পোষ্য। মুসলমানিত্ব হেফাজতকারীর ভারতীয় দর্শনে আসক্ত।কারো কারো যোগাযোগ পাপিস্তানে। এ সব এখানকার মানুষ জানে।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন নামীয় একটি অসাধারণ মঞ্চ নাটকের মহড়াকে আমজনতা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মেনে নিতে বাধ্য বা সচেতনভাবে মেনে নেবার পর তাদের জীবনেকে ঝুঁকির দিকে নিয়ে যাওয়া আম্লীগের জন্য একটা মানবিক বিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্ত হতে পারে না।

কোনোভাবেই সন্দেহ করছি না যে, জওহরির অডিও ক্লিপটার পেছনে আম্লীগের হাত আছে। তবে আমি এটা ঠিক জওহরি বার্তা বাঙালি মুসলমানের মনের কথা হতে পারেনা।

আমি নিশ্চিত করে এটা বলতে পারি। জওহরির জেহাদে বা ইন্তিফাদায় সাড়া দেবার মত বোকা মানুষ আমরা নই। এটা এক সময় থাকতে পারতো যে সময়টা অভাব অনটন ছিল। তাও সম্ভব হতো না, কারণ ভৌগলিক কারণেও এখানটায় জঙ্গি চাষ অসম্ভব।

আমাদের পকেটে টাকা পয়সা জমেছে। মানুষ নির্বিঘ্ন, আনন্দময় এবং সম্পদ জমানোর সংগ্রামে ব্যস্ত, সেখানে জওহরির আহবান অটোমেটিক প্রত্যাখ্যাত। কারণ এখানকার মানুষ রক্তে মাংসে জঙ্গিবাদ বিরোধী। এটা জওহরি ভালোই জানার কথা। না জানলে কান পরিষ্কার করে শুনে নিতে হবে, তার খায়েশ বাস্তবায়নের লোক এ দেশে চাওয়ার সাহসটা খুবই নোংলা মনোবৃত্তি থেকে ওঠা। মনে রাখা ভালো এটা আফগানিস্তান, পাপিস্তান কিম্বা ইরাক না।

জওহরি ও আল কয়েদারা যে সব অঞ্চলে তাদের অবস্থান পোক্ত করেছে, সে সব অঞ্চল অনেক পেছনে। তারা সভ্যতার আলো বাতাস থেকে দূরে। জীবন চালাতেই কষ্ট তাদের, নারীর সাথে সময় কাটানো-খুনসুটির সময় বা সামর্থ কোথায়!

এ রকম অনগ্রসর, উগ্র গোষ্ঠীর বিস্তার ঘটে সে সব এলাকায় যারা জীবন-জীবিকা নারী সংসর্গ সম্পর্কে অজ্ঞ অথবা এ সবে মোহ নেই। বাংলার হিস্ট্রি এটা প্রমাণ করেনা। সুতরাং জওহরির আহবান একটা পোক্ত ছাগলামি ছাড়া কিচ্ছু না।

কালনী নদীর তীরে শাহ আবদুল করিম গায়- গ্রামের নও জযোয়ান, হিন্দু মুসলমান, মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদী গাইতাম । আবার চট্টগ্রামে শেফালী ঘোষ গায়- ও রে সাম্পান অলা তুই আমারে করলি দেওয়ানা। কিম্বা কাঙালি সুফিয়া গায়- কোনবা পথে নিতাই গঞ্জ যাই।

সেই দেশে উগ্রবাদের বিস্তারে চেষ্টা হতে পারে বা হয়েছে তবে তা সফল হবার কোনো নজির কি আছে? নাই। হতে পারে না।

কেন নাই? কারণ হলো ভাটি বাঙলার এ দেশে মানুষ ধর্ম কর্মও করে, একটু আধু স্পিরিট, ছোলা মদও খায়, সাথে বিড়ি, হুঁকো কিম্বা সিগ্রেট। আবার টাকা হলে একটু নারী শরীরের স্বাদও নেয়। মদের দোকানে যায়। আবার হজের মৌসুমে সৌদি যায়। সেখানে জওহরিদের এই অডিও ক্লিপ আমাদের মত দেশের মানুষের মনন এবং মনোবৃত্তি না বুঝে ফায়দা হাসিলে সহায়তা ছাড়া অন্য কিছু না।

বাংলাদেশের মানুষ শিখছে, পড়ছে, উপার্জন করছে এবং ভালোভাবে বাঁচার লড়াই করছে। যেখানে প্রিয়জনের সঙ্গ দেবার সময় মিলছে না, সেখানে জওহরির ইসলাম উদ্ধার অভিযানে এ দেশের মানুষ ছুটবে।এটা আমি বিশ্বাস করি না। তবে সবার আগে নিশ্চিত হওনের কাম হলো - এ অডিও বার্তা আদৌ জওহরির নাকি । তবে আমি জওহরির বলেই বিশ্বাস করে এ সব কথা বলেছি।

একটা কথা অবশ্য মনে আছে সবার বুশের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচরে আগে ওসামা বিন লাদেনের একটা ভিডিও বার্তা নিয়ে পুরা জুজুর ভয়ে কাতর ছিল আম্রিকা। বুশ দ্বিতীয়বার নির্বাচিত।

এখন তো আম্লীগ নির্বাচিত । তারপরেও কারা এ জুজ ডাকছে। আম জনতার জীবন বিপন্ন করা কতটা যৌক্তিক, তা ভাবতে হবে। জওহরি শিষ্য থাকার অজুহাত খাড়া করে স্বাধীন বাংলার আকাশে কারা পরাশক্তির ড্রোন ওড়াতে চায়, কারা বাঙালির রক্তে লাল করতে চায় হাত! তাদের ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।

ভারত ও বাংলাদেশ-আম্লীগ, জঙ্গি ও মৌলবাদ তর্ক



বাংলাদেশে ভারতের গোয়ন্দো সংস্থা 'র'র স্টেশন,  ব্যাপক সংখ্যক সহমর্মি ও সহযোদ্ধা থাকার পরেও তারা সম্ভবত ইচ্ছেকৃতভাবে  কিছু ভুল ধারণা লালন করে থাকেন। যেমন বাংলাদেশে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের উত্থান এতটাই বেড়েছে যে, এটা দমন করা এবং দিল্লিতে নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমানোর সুবিধার্থে আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় রাখতে হবে। সে জন্য যা যা করার দরকার, দিল্লি তাই করবে এবং সেটিই করা উচিৎ বলে সাবেক  ইনডিয়ান কূটনীতিকরা  খোলাসা করেই বলছেন! 

অথচ বিএনপিই প্রথম  বাংলাভাই , শায়খ রহমানকে গ্রেপ্তার ও বিচার শুরু করেছিল, মইন-ফখর সরকারের সময় তাদের ফাঁসি হয়।  অনেকে বলবেন, এদের উত্থানও বিএনপি জামায়াতের হাত ধরে- সেটি স্বীকার করেই বলছি, বিম্পি-জমাতের ৫ বছর, মইন ফখরের ৩ বছর এবং আম্লীগের ৫ বছর মিলিয়ে এদের সংখ্যা কত হতে পারে?  ৫০, ১০০, ৫০০, ১০০০?

এর বেশি কি হতে পারে! আমি নিশ্চিত এর বেশি হওয়ার সুযোগ নাই। আমি জানি এবং বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মাটি, সংস্কৃতি, মানুষের মন এ সবকে সমর্থন করেনা। এখানে ধর্মী আচার-রীতি অনুসর করা হয় মানবতার জন্য, প্রতিহিংসার আগুনে পোড়ার জন্য নয়। 

২০০৫ সালে নয়া দিল্লির সায়েন্স সেন্টারে  অনুসন্ধানী সম্বাদিকতার ওপর ট্রেনিং নিতে গেছিলাম। সেইখানে একজন সিনিয়র নারী সাংবাদিক বলিছলেন, বাংলাদেশে  জঙ্গিবাদের প্রসার নিয়ে। তার আলামত হিসাবে জানালেন,  তিনি ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। পথে চট্টগ্রামে দেখলেন টুটি আর টুপি, পাঞ্জাবী আর পাঞ্জাবী পরা লোক। ভয়ে তার আত্ম শুকিয়ে যায়। এ লোকগুলো কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, সেটি ভেবেই তিনি আঁতকে উঠেছেন।

আমার দেখা  গ্রামীন জনপদের এ সহজ সরল মানুষগুলোর টুপি, পাঞ্জাবী পরলেও এরা আদতে  মৌলবাদী নন। আমরা যারা নগরে অনেক  কথার খই ফোটাই তারা তাদের পরিবারের দিকে তাকান, অন্তত এক জেনারেশন আগেও আমাদের পরিবারে দাঁড়ি , টুপি  ও পাঞ্জাবী পরা লোক ছিল, এখনো আছে। এদের সামনে রেখে বাংলাদেশের 'জঙ্গি' পরিস্থিতি বিবেচনা  করলে  সঠিক বিচার হবে না।

আমরা কিন্তু ভারতে গেলে  ধুতি, পাঞ্জাবী দেখে ভয় পাই না। স্থানীয় আচারকে সম্মান করার  শিক্ষা আমাদের পরিবার ও সমাজ থেকে পাওয়া। এটাকে অজুহাত  করে আসলে ফায়দা তোলা যায়, সেটি পারে ইনডিয়া।

'জঙ্গি'র মূল কারখানা মনে করা হয়, কাওমি  মাদ্রসাকে। আমি যদি ভুল না করি- এ পদ্ধতির শিক্ষাটা ইনডিয়ার দেওবন্দে চালু হয়েছিল। সেখানে জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীও পড়েছিলেন।  জঙ্গি, উগ্র বা অন্য যে সব অভিধা দিয়ে বিবেচনা করা হয় মুসলমানদের সে সব  কিন্তু ইনডিয়া থেকে উৎপত্তি। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে দেওবন্দ বড় ভূমিকা রেখেছিল, এটা জানার সুযোগ হয়েছিল দিল্লির বন্ধুদের কাছে।

ইনডিয়া থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশে কাওমি শিক্ষার প্রসার। এখনো কাওমি শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু ইনডিয়া। মজার ব্যাপার হলো ইনডিয়া তার স্বার্থে এদের কখনো জঙ্গি বলে, কখনো সাম্প্রদায়িক বলে , কখনো মৌলবাদের উত্থানে আতঙ্কিত  হয়।

কাওমি মাদ্রসা নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই বলে এমনটা হচ্ছে। এখানকার প্রায় সব শিক্ষার্থী নিরীহ এবং  অনেকে এতিম। শিক্ষকরা রাজনীতিকে ফেতনা মনে করেন এবং উগ্র পন্থাকে সমর্থন করেন না। তবে  এদের কেউ কেউ যে বিভ্রান্ত যে হচ্ছেন না, বা হননি সেটি বলা মুশকিল। কিন্তু আমার  কথা হলো অল্প কজনের জন্য কোটি মানুষ কষ্ট করতে পারেন না। সরকারের ও এবং 'র' এর বাংলাদেশে এমন মেকানিজম আছে,  যা দিয়ে তাদের সনাক্ত করে শাস্তি দেয়া সম্ভব । সেটি না করে এটাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য। এ ইস্যুকে সামনে এনে ভারত  ও আম্লীগ তাদের স্বার্থ হাসিলের রাজনীতিটা করছে ।

হিন্দু মৌলবাদের উত্থানে আমরা আতঙ্কিত হই না। কারণ হলো ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় আমাদের দেখবার বিষয় নয়।  আমাদের উদ্বেগেরও কারণ নয়। আমরা অতি অল্পতে তড়িতাহত হই না। তবে আমরা তাদের দেশের সংখ্যায় কম যে সব সম্প্রদায় তাদের নিরাপত্তার কথা বলি। মুসলমানদের নিরাপত্তার কথা বলি। তাও বলি তখন যখন দেখি অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছেন তারা, ধর্ষিতা হচ্ছেন। 

তবে আমি এই ওকালতি কখনোই করবোনা যে বাংলদেশে উগ্র, চরমপন্থী  লোক নেই। অবশ্যই আছে। বিশ্বেবর সব দেশেই কম বেশি  'জঙ্গি' আছে। বরং বাংলাদেশের উগ্রপন্থীদের 'ম্যানেজ' করা সহজ।  ক্ষমতার কাছে তারা  হার মানে। খুব সহজেই মানে। যে রাজনৈতিক দলটি নিয়ে ভারতরে সবচেয়ে বেশি ভয়, সে দলটি সবার আগে মানে!

তবে খোলাসা করেই বলি- গুটি কতক জনবিচ্ছিন্ন হুজি, বাংলা ভাই টাইপের লোকের জন্য বাংলদেশের আপামর সহজ সরল মানুষকে  জঙ্গি, উগ্রপন্থী, মৌলবাদী হিসাবে অভিহিত করার যে  কাজটি ইনডিয়া করছে, সেটাকে আমরা কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারি না।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সহযোগি ইনডিয়ার ইদানিংকালের আচরণে  সবচেয়ে বেশি প্রমাণিত যে, বাংলাদেশ তার চাওয়া অনুযায়ী চলবে। মানে প্রভুভক্ত প্রাণীর মত। হচ্ছেও তাই। বিএনপি, জামায়াত  সরকারের সময়ও কিন্তু ভারত তার স্বার্থ হাসিল করেছিল। তাতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবুও আওয়ামী লীগে তাদের ভরসা, বিশেষ দূর্বলথা এখানে কাজ করতেই পারে। কিন্তু সেটি বাংরাদেশের জনগণের চাওয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়ে হাসিল করা কতটা শোভন এবং শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে সেটি বিবেচনার সময় কারো নেই।  সবাই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করতে গিয়ে নিজের ছায়ার সাথে লড়ছি। 

 সেভেন সেস্টার নিয়ে ভারতের একটা উদ্বেগের কথা  আমাদের দেশের   জ্ঞানী বিশ্লেষখরা বলে থাকেন, সেটি এখন নেই। ভারত এটাকে কব্জা করতে পেরেছে। আমরা দেখেছি দশকের পর দশক ধরে ভারত আমাদের  দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে কীভাবে মদত দিয়েছে।  এটা নিশ্চয় কেউ ভুলে যাননি বা যাবার মত ঘটনাও তা নয়।  সীমান্তে হত্যা কিম্বা বাংলাদেশের ভূমিতে তাদের  অবাধ বিচরণ আমাদের উদ্বেগ নিয়ে আমরা নিজেরাই যথেষ্ট রকমের সচেতন নই। তাদের দোষ দিয়ে লাভ কি।

 কথা না বাড়িয়ে শেষ করি, ভারত আওয়ামীলেগের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের পরও আওয়ামী লীগের পামশ থাকবে বলে বিবিসি বাংলায় যে খবর প্রকাশ করেছে সেটি উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় কেবল  বাড়াচ্ছে না, সেই সাথে এ দেশের মানুষের অস্তিত্বকেও প্রশ্নের মুখে ফেলছে।

বলি- মাওবাদ, গেরিলা দমনে ভারত যে কঠোর নীতি অবলম্বন করছে, কাশ্মীরে যে নিপীড়ন, গুন হত্যার সমরনীতি অনুসরণ করছে, সেখানে বাংলাদেশে তাদের  প্রকাশ্য ভূমিকা স্পষ্ট হচ্ছে। ভারতের আর আট দশটা রাজ্যের মত এখানকার বিষয় নিয়ে তাদের নিয়মিত ফাইল ওয়ার্ক হয়, এখন মাঠ পর্যায়ে ওয়ার্ক হচ্ছে।  এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের হলেও করার কিছু নেই। কারণ আমাদের মেরুদণ্ড নেই।

জামায়াত নিষিদ্ধ করতে হবে এখনই!


হোমিও চিকিৎসা আর নয়।এবার এন্টিবায়োটিক দরকার।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার যে কথা আপনি দিনের পর দিন বলে আসছেন-এবার তার বাস্তবায়ন করুণ এবং সেটি অতি দ্রুততার সাথে।
এটা করার জন্য আপনি ম্যানডেট পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন- ৫ জানুয়ারীর একটি নির্বাচনি দৃশ্য মঞ্চায়নের পর। সুতরাং এ কাজে আপনার দেরী, আপনার আন্তরিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আমরা চাইনা আপনি এ রকম একটি  বিব্রতকর অবস্থায় আপনি বা আপনার দল পড়ুক।

আমি নির্বাচন মঞ্চায়ন বলছি এ কারণে যে - আম্লীগ যে ভোটের অধিকারের ডাক দিয়ে  ১৯৯৬ সালে বিম্পিকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলো, আপনার দলের মিত্র জামায়াতকে সাথে নিয়ে-  সে ভোটাধিকার প্রয়োগের  সুযোগ থেকে আমি নিজেই এবার বঞ্চিত হয়েছি।আপনিও। খবরের কাগজ আর টিভি চ্যানেলগুলো ভোট দেবার পরে আপনার  হাস্যোজ্জ্বল ছবিটা মিস করেছে। 

সে সময়কার, মানে ১৯৯৬ সালের  দৃশ্যটা কল্পনা করছি- আমার বয়স তখন ১৫ ।

খবরের কাগজে ছবি ছাপা হলো একজন সরকারি কর্মচারী অফিস যাচ্ছেন- তারে ধরে ন্যাংটা করা হলো।  মখা আলমগীর  আঙ্কেল জনতার মঞ্চ করলেন- সচিবালয়ের ফাইল পত্র রেখে সরকারি টাকায় বেতন ভোগ করে তারা তখন  আম্লীগের পক্ষে জামায়াতের সাথে দোস্তি করে রাস্তায়। হাউ ফানি!

সে সময়ও জামায়াত আম্লীগের  মিত্র! সায়েদাবাদে একটা গাড়ি সব যাত্রী সহ ভোটাধিকারের জন্য পুড়ে গেলো- সে সময়ও আম্লীগ-জামায়াত মিত্র। 

পুরনো স্মৃতি মানুষকে আবেগ তাড়িত করে- ব্যাথাতুর করে আবার শিক্ষা নেবার জন্যও সহায়তা করে। আম্লীগ কোনটি পছণ্দ করছে- সেটি বলা ভারি মুশকিল।

জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- আদালতে মামলা আছে। এখনই তারা কোনো অ্যাকশনে যেতে পারছেন না। 

আমরা প্রায় সবাই জানি- আইন আদালত এ সব ক্ষমতার পদতলে লুটিয়ে পড়ে থাকে সব সময়- সারা বিশ্বজুড়ে। সক্রেটিসকেও আদালতের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। এটা খ্রিস্ট পূর্বাব্দের কথা।  হাল জামানায় ইরাকের  সাদ্দাম হোসেনকেও আদালতের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। আরো অনেককে হত্যা করা হচ্ছে।  নেলসন ম্যান্ডেলাকেও কিন্তু আদালতের মাধ্যমে নির্বাসন দেয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশের আদালত তো স্বাধীন- কিন্তু পাখনাটা অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা। জুয়েল আইচের জাদুর মতন। পুরাই পাঙ্খা।  সে যাই হোক- সরকার চাইবে আর হবেনা, এমন সাধ্য কার!  আদালতে এখন তো মানিক সাহেব, সিনহা বাবুরা আছেন।  এরপরেও সরকারের সমস্যা হলে- এটাকে বলতে হবে দুর্ভাগ্য। 

আসুন-জামায়াত নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারকে বাধ্য করি- নইলে  এ নিয়ে রাজনীতি চলতেই থাকবে। চলতেই থাকবে এবং আমাদের ভোটাধিকারের কপাল পুড়বে- সংখ্যালঘু নির্যাতন বাড়তেই থাকবে। আর মানুষের অনিরাপদ মৃত্যু এবং গুম হয়ে যাওয়া সীমার বাইরে চলে যাবে। এমন দেশ আমরা চাইনি, এখনো চাইনা। সামনেও চাইবো না।