কিস্তি ৮৪ :: বৃষ্টি দেখে মাথা নষ্ট!


ইংরেজি ২০০২ সালের বঙ্গ  জ্যৈষ্ঠ মাস। প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে।  ভেজা দরকার। বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাচ্ছে মল চত্বর। কৃষ্ণচুড়া ফুলগুলো নুয়ে যাচ্ছে।কলাভবন থেকে বেরিয়ে আসলাম,  আমরা কয়েকজন। তার মধ্যে মাথা নষ্ঠ কয়টা রিকশা ঠিক করলাম। ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে নগর, আমরা রিকশার হুড নামিয়ে ভিজছি।

রিকশা পেতে সমস্যা হয় নি।  টাকা একটু বেশি গুনতে হয়েছে, এই আর কি! সে সময় এক রিকশা চালককে জিজ্ঞেস করেছিলাম- মেয়েরা  হাত তুললেই খারায়া যাও। আর আমরা হাত তুলতে  মুখ ঘুরায় নাও! কারণটা কও তো দেখি।

তার ভাষ্যটা চরম। সে বল্ল- মেয়ে মানুষের নাকি ওজন নাই। রিকশা বাতাসের বেগে (গতিতে)  চলে।  সে দিন রিকশা করে আমরা ঘুরে এলাম মল চত্বর থেকে কার্জন হল। সেখান থেকে মৈত্রী হল।
সাধারণত বৃষ্টিতে ভিজলে নগরের ছেলে মেয়েদের জর জারি হয়। ঠাণ্ডা লাাগে। আমার সে রকম সমস্যা ছিল না। বৃষ্টিস্নাত ক্যাম্পাস হয়ে ফিরে এলাম  নিজের হলে। দেখলাম বসও ফিরেছে ভিজে। মাসুদ ভাইও। বঙ্গবন্ধু হলের ৩১৪ নম্বর রুমের সবার মাথায় একই দিন  পাগলামি ভর করল ক্যান?  সে প্রশ্ন করলাম না।

কিন্তু রুমে সবার মনে হলে এমন বৃষ্টির দিনে হলে জাফরের  টিকটিক চুবিয়ে রান্না করা ডাল আর  তেলাপোকার  পাখনা ডুবানো তরকারি খাও্রয়া চলবে না। খিচুরি খেতে হবে। তবে সে সময় ক্যাম্পাসে ভালো খিচুরি পাওয়া যেতে, সেটি সপ্তাহে একদিন।

পরে রুমটেরা মিলে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গেলাম  চানখার পুল। সে সময় তিরিশ টাকায় খিচুরি পাওয়া যেতো। সেখান থেকে খিচুরি খেয়ে আবার বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে  হলে ফেরা।  আমাদের রুমের সবাই এবং আমার বন্ধুরা ছাতা বিরোধি ছিল।  আমার ছাতা বিরোধতিার কারন হলো আমি কিছু হাতে বহন করতে পারি না। এটা আমার কাছে খুবই কষ্টের ও বিরক্তির মনে হয়। আর রিকশার হুড তুলিনা, এতে নিজেকে ক্যামন অপরাধি মনে হয়! মুক্ত আকাশটা দেখতে দেখতে পথচলায় আনন্দ!!

তবে আমার বন্ধু বাবুর ভিন্ন মত। তার কথা হুড তুলে রাখলে বাংলা সিনেমার দৃশ্য মিস।  নায়িকার বৃষ্টি ভেজা দৃশ্য বাংলা সিনেমায় মাস্ট।আর সে দৃশ্য দেখার জন্য টাকা খরচ করতে হয়। বৃষ্টির দিনে সেটাই পুরাপই ফ্রি!!

আমাদের এমন সব পাগলামি সম্পর্কে অনেকেরই  জানা।  একবার বুড়িগঙ্গায় বৃষ্টির মধ্যে আমরা প্রায় তিরিশ জন।  পয়লা বৈশাখের দিন, ঘৃুরতে গিয়ে কাকভেজা হয়ে ফিরলাম। আরেকবার  বর্ষায় বান্দরবান। পুরা রাস্তায় বৃষ্টি। সে সময়  চান্দের গাড়ির ছাদ লাগানো থাকতো। আমরা সবাই ছাদের ওপরে উঠে বসলাম। আর্মি ও পুলিশ বারণ করবে ভেবে কেবল চেকপোস্টে আসলে নেমে পড়তাম। পুরো সফরে আমরা ১৯ জন।
চান্দের গাড়ির ঠাসাঠাসি করে বসলে ১৬ জন বসা যায়। কিন্তু আমরা সেটি মানলাম না। আমাদের বৃষ্টি স্পর্শে জ্বরাক্রান্ত কয়েকজন ভেতর বসেছিল। আমরা বাকি ১১ জন  ছাদে। সে রবকম আড্ডা। বৃষ্টির দিনে এমন সৌন্দর্য পাহাড়ের, যেটি এর আগে দেখা হয়নি।  অনন্ত যৌবনা পাহাড় দেখে ফেরা। এখনো বৃষ্টি দেখলে মাথা নষ্ট। কিন্তু শরীর আর কুলায় না।  

কোন মন্তব্য নেই: