জাফর ইকবাল স্যার 'লাঞ্ছিত' হওনের পর সবার ক্রিয়া প্রতিক্রয়া আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি অত্যন্ত আশান্বিত এ কারণে যে, এ দেশে শিক্ষক লাঞ্ছিত করলে বিচার চাওয়া হয়। 'ছি' পড়ে। এটা দেখে খুবই ভালো লেগেছে।
তবে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা এটাই প্রথম -- তা কিন্তু নয়। গত বছরের শেষের দিকে প্রজন্ম লীগ 'অস্থিতিশীলতা' করতে পারে এমন আশঙ্কায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পিটিয়েছে। সে সব শিক্ষককে 'সাদা' বলে বিম্পি জমাতের ঘাটে ভিড়িয়ে আমরা সবাই নিশ্চুপ ছিলাম। এবং আম্লীগ ঘরাণার 'নীল' শিক্ষকরা এটাকে 'জায়েজ' বলেই কবুল করেছেন। এর আগে বিএনপিপন্থী অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মার খেয়েছেন--- তখনও এটাকে 'জায়েজ' ঘোষণা করা হয়েছে।
যারা স্যার জাফর ইকবালের হেনস্তার কারণে ক্ষুব্ধ এবং বিক্ষুব্ধ--- তাদের সবার প্রতি আমার শ্রদ্ধা। একজন শিক্ষক পুত্র হিসাবে যে কোনো মতেরই শিক্ষকের ওপর নিপীড়ন আমি অত্যন্ত ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যান করি।
বাস্তবতা খুবই নির্মম যে এখন শিক্ষক নয়, ব্যাক্তি বিবেচনায় আমরা শ্রদ্ধা বা ঘৃণা নির্ধারণ করে থাকি। এর জন্য আমাদের নষ্ট রাজনীতি, ভ্রস্ট নীতি আর নিত্য বেড়ে যাওয়া ভোগের যোগানও একটা কারণ হতে পারে।
মনে করার চেষ্টা করছি--- সময়টা ছিল বিম্পির। জাফর স্যার শাবিপ্রবি'র হলের নামকরণ নিয়ে রাস্তায় বসে পড়লেন। সঙ্গে তার ভাই কিংবদন্তীর কথাশিল্পী হুমায়ুন স্যার। পরিবার পরিজন তো ছিলই । বিম্পি নতি স্বীকার করলো। এ সফলতার পর জাফর স্যার শাবিপ্রবির সে সময়কার ভিসি তারেক স্যারকে হটানোর আন্দোলন শুরু করলেন। তাতেও সফল তিনি।
স্যার যে রকম কল্পকাহিনী লিখে সফল হয়েছিলেন, হুমায়ূন আহমেদের ভাই হিসাবে প্রথম ব্রেক পেয়েছিলেন এবং জনপ্রিয় একজন লেখক হিসাবে নন্দিত হয়েছিলেন, সেই স্যারই তার নিজের মতের দলটির হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। বার বার হয়েছেন। অত্যন্ত বেদনার সাথে আমরা তা দেখছিও। কিন্তু অক্ষম আমরা অনলাইট ফাটিয়ে রক্ত বের দিয়েছি, বাস্তবতে স্যারের প্রিয় গণজাগরণমঞ্চকেও একটা সমাবেশ ডাকতে দেখিনি।
সম্ভবত বৃষ্টির কারণে, সিজন বদলের এ সময়ে জর জারির ভয়ে এটা করা হয়নি। যাদের জরের প্রতি সমীহ, তারা তো অনলাইনে স্যারের জন্য সহানুভূতি জানাবেন--- এটাই সম্ভবত ঠিক।
জাফর ইকবাল স্যার খুব বোকা টাইপের মানুষ। এটা আমার ব্যাক্তিগত ধারণা। কারণ আম্লীগের সময় তার নতুন নতুন কিছু কল্পনা- পরি যুক্ত করে ওড়ানোর চেষ্টা করে তার প্রিয় মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছ থেকেও সহায়তা পাননি। যার জন্য যবিপ্রবি ও শাবিপ্রবির যৌথ ভর্তি পরীক্ষাটি নেয়ার পর সিলেটি আবেগের কাছে হার মেনে বাতিল করতে বাধ্য হন ।
স্যার সম্ভবত যে ভুলটা করছেন, সেটি হলো আমাদের আগ্রাসী রাজনীতির কঠোর, রূঢ় এবং ভয়ঙ্কর ষণ্ডামির রূপটা তিনি ধরতে পারেননি।
নিজেকে সমাজ সংস্কারক, আদর্শ শিক্ষক গুরু হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তিনি যে শাবিপ্রবিতে একের পর এক সমস্যা তৈরি করছেন সেটিও তিনি উপলব্ধি করেননি।
আমি নিশ্চিতভাবে তার সাথে একমত এবং মনে করি একটি বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক নিয়মেই চলবে। কিন্তু রাজনীতি যেখানে পঁচন ধরেছে, আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতির বিষ সেখানে কীভাবে সম্ভব। তবে চেষ্টা থাকতে পারে। সে চেষ্টার সাথে আমি দ্বিমত করি না। বরং সহমত পোষণ করি ।
স্যারকে নিয়ে অনেকে উপহাস করেন। কেউ আবার তার চরম ভক্ত। তবে আমি মনে করি স্যার এক চোখা। স্যার যে তাবিজ বিক্রি করে থাকেন, সেটির চেয়ে এ জাতিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা এখন জরুরী। সে জন্য তার নির্দেশনা, দল মত এবং কূটনীতির উপরে ওঠার সময়। সেটি তিনি করতে পারেননি।
আরো অনেকে পারেননি। যেমন আমরা সম্বাদিকরা। জাতির কাছে যারা 'বিবেক' নামে পরিচিত। অথচ এদের কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বাকিদের দিকে তাকালে মনে হয়--- বিবেক কাকে বলে? একই কথা শ্রদ্ধেয় জাফর স্যারের জন্য প্রযোজ্য!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন