শান্তি চুক্তির সুফল না পাওয়া মুরংদের কথা

নোট: এ রিপোর্ট ২০০৯ সালের ১৬ আগস্ট করা । এর মধ্যে নিশ্চিতভাবে বহু কিছুর পরিবর্তন হয়েছে।  তবে মূল রিপোর্ট ঠিক রাখার জন্য ভেতরে তথ্য ও বক্তব্য অদল বদল করা হয়নি। একটা তথ্য আগে জানিয়ে রাখি- বোমাং সার্কেল রাজা অং শৈ প্রু  মারা গেছেন। এখন নতুন রাজা বান্দরবানে। 

 

 


 সাঙ্গু --- মুরংরা যেখানে শান্তি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিলেন! 


গরু ‘সিল’ মারাটা মনে আছে ইয়ং চিং ম্রো’র। ছোট বেলায় তারা গরু সিল মারার সময় বাঁশি বাজাতে বাজাতে নাচতেন। এখন নাচেন না। ধর্ম বদলে গেছে। উদ্ধার হয়েছে তাদের মাতৃভাষার বর্ণমালা। তাই বৌদ্ধ ধর্ম থেকে তারা  নয়া ধর্ম ক্র্যামা ধর্মে যুক্ত হয়েছেন।  তারা নিজেদের ধর্ম নিয়েই ব্যস্ত। এর ভেতর আবার অনেকে ধর্ম বদলেছেন। গ্রহণ করেছেন খ্রিস্টান ধর্ম।

 
গরু সিল মারা মানে--বছরে মুরং বৌদ্ধরা একটা অনুষ্ঠানে মিলিত হয়। সে সময় তারা গরু ধরে একটি বাঁশের ঘেরা দেয়া জায়গায় বন্দী করে। নাচের তালে তালে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ওই গরুটিকে মেরে ফেলা হত। এটাই গরু সিল মারা। 

  
ধর্ম বদলের বয়ানে ইয়ং ম্রো বলছিলেন, ‘অনেক লাভ। টাকা দেয়। যাজক হিসাবে চাকুরি দেয়। সাথে স্বচ্ছন্দময় জীবন। লোভে পড়ে অনেকে। খ্রিস্টান হয়ে যায়।’ 

বান্দরবানের ম্রলং পাড়ায় তার বাস। মেঘ খেলা করে ঘরের আঙ্গিনায়। আগে নওয়া পাড়ায় ছিল তাদের বসত । সেখান থেকে উঠে এসে এখানে ঘর তুলেছেন। সুয়া পা উ তাঁর মা। বয়স ৬৫। ঝিরি থেকে পানি নিয়ে উপরে উঠেছেন।

 
বললেন, ‘নিজের ভাষায় নিজের ধর্ম করি। ভাল লাগে। আমাদের বেশী চাওয়া নেই।’ অস্টম শ্রেণী পাস  ইয়ং তাঁর একমাত্র ছেলে। বাবা মারা গেছেন। স্ত্রী ও মাকে নিয়ে ২৫ বছরের ইয়ং-’র সংসার। বান্দরবানে বাস করা দ্বিতীয় বৃহত্তম  ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী মুরং বা ম্রো সম্প্রদায়ের সদস্য তাঁরা।

 
পাহাড়ে শান্তির জন্য মুরংরা সরকারকে সহায়তা করেছেন এক সময়। মুরংদের দিয়ে পাড়ায় পাড়ায়  বাহিনী করা হয়েছিল। এটি মুরং বাহিনী বা লাল বাহিনী নামেই পরিচিত। ‘শান্তি’ চুক্তির পর অনেক সম্প্রদায়ের অবস্থার উন্নতি হলেও মুরংদের উন্নতি হয়নি বলে দাবি ইয়ং এর।

 
বললেন, ‘আমরা আগের চেয়ে ভাল নেই। চিম্বুকের দিকে আঙ্গুল তুললেন। বললেন, সেখান থেকে মুরংদের কিছু পাড়া তুলে দিয়েছে। অধিগ্রহণ করা যাকে বলে। এখন ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে। ক্ষতিপুরণের টাকা নিয়ে সবাই নিজের মত করে সরে আসছেন।’  এ নিয়ে মনোকষ্ট আছে মুরংদের।

  এমনিতেই যাযাবর জাতি হিসাবে মুরং দের পরিচিতি। যেখানে জুম চাষের সুযোগ সেখানেই যান তাঁরা। তবে দশক তিনেকের মত তারা স্থায়ী আবাস গড়েছেন চিম্বুকে। সেখান থেকে তাদের তুলে দেবার চেষ্টা কনোভোইে সঙ্গত নয় বলে মনে করেন তাঁদের নেতা রাং লাই ম্রো। তিনি বলেন, ‘মুরংরা খুবই শান্তি প্রিয়। আমাদের নিয়ে এভাবে হয়রানি না করলেই ভাল। যাযাবর ছিলাম ঠিকই। এখন তো স্থায়ী আবাস গড়ে তুলেছি। এভাবে বারবার ঠিকানা বদলে ‘অতিষ্ট’  আমরা। আমাদের এখন নিজের মত করে থাকতে দেয়া উচিৎ।’


 তিনি বলেন,‘ চিম্বুক থেকে থেকে মুরংরা উঠে এসেছেন তা নয়। বাঙালিদেরও তুলে দেয়া হয়েছে। অবশ্য আমাদের সবাইকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু তার পরিমাণ সন্তোষজনক নয়।’
ক্ষতিপূরণ নিয়ে উঠে আসারা এখন পাহাড়ে তাদের বসত গড়ছেন। সেটি কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে তাং লাই ম্রং বলেন, ‘এখন সরকারি খাস জমি ছাড়া উপায় নেই। তাই আমরা পাশের যে যে পাহাড়ে জায়গা পেয়েছি । সেখানেই ঘর বেঁধেছি।’ অধিগ্রহণের মধ্যে পড়া পাড়ার সংখ্যা প্রায় সতেরোটি বলে রাং লাই জানিয়েছেন। 


ক্র্যামা ধর্মে বিশ্বাস রাখা মুরংরা ১৯৭৫ সাল থকে যাযাবর জীবন বদলেছেন। সংখ্যায় তাঁরা ৫৯ হাজার ছিলেন বলে জানান রাং লাই। তবে এদের বেশীর ভাগই এখন ক্র্যামা ধর্মে বিশ্বাস করেন। মুরংদের নিজস্ব বর্ণমালায় ধর্মের কথা লিখেছেন ম্যান লে। সে সব বর্ণমালা ও উপদেশ বুঝতে সুবিধা বলে এ ধর্মের প্রতি তাদের অনুরাগ। তবে কেউ কেউ এ ধর্ম বদলে খ্রিস্টান হচ্ছেন। এ রকম আরো অনেকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষা নিচ্ছেন। এর মধ্যে মারমা ও খিয়ারা এগিয়ে।

 
বোম  সম্প্রদায়ের পুরোটায় খ্রিস্টান। সংগঠিত। গেৎসিমণিপাড়ায় চা খেতে খেতে এক দোকানির সাথে আলাপে জানা গেলো গেৎসিমণিপাড়া নামকরণের কথা। বললেন, এটি নাম করণ হয়েছে এ কারণে যে, যিশু কে ক্রুশ বিদ্ধ করার আগের উদ্যান ছিল গেৎসিমণি। এখানে প্রার্থনা হয়েছিল। কেবল ধর্মীয় পরিচয় নয়; ধর্ম সম্পর্কে ভাল খোঁজ খবর আছে তাঁর- সহজেই এটি বোঝা গেলো। তবে খিয়াংদের মধ্যে এখনো বৌদ্ধ ধর্ম এগিয়ে আছে বলে রনি খিযাং জানিয়েছেন।

 
খ্রিস্টান ধর্ম ২০১৭ সালে পাহাড়ে শতবর্ষ উদযাপন করবে বলে বোমরা জানিয়েছেন। মানিক বোম জানান, এটি ১৯১৭ যাত্রা করে এখানে।


ধর্মের এ বদল সম্পর্কে বান্দরবানের বোমাং সার্কেল রাজা অং শৈ প্রু বলেন, ‘অনেকের আসল কোনো ধর্ম ছিল না। প্রকৃতি পূজা করত। তারা  বিভিন্ন ধর্মে চলে যাচ্ছেন। আবার খ্রিস্টান হলে তো লাভই। একটু স্বচ্ছন্দে চলতে পারেন। একটু সুবিধা মিলে।’ ‘সুবিধা’র জন্য খ্রিস্টান হওয়া আর ধর্ম পালনের জন্য হওয়ার মধ্যে বেশ তফাৎ দেখতে পান পুং খাল বম। তিনি বলেন, আমরা মনে প্রাণে ধর্ম পালন করি।
 

কেবল ধর্মের বিষয় নয় মুরং হারিয়েছে তাদের ঐতিহ্য। তাদের ছেলে মেয়েরা আগে ঐতিহ্যবাহি পোশাক পরলেও এখন সেখান থেকে সরে যাচ্ছেন। রাং লাই বললেন, ‘ক’ দিন পর মুরংদের পোশাক আমার ড্রয়িং রুমে লাগাতে হবে। অবস্থা এমনই হচ্ছে।’ তবে রাজা  বললেন, ‘রোমে গেলো রোম হয়ে যেতে হয়। তাই এখানে বাঙাগালির প্রভাব পড়বেই। এটাকে অস্বীকার করলে চলবে না।’
তিনি বলেন, ‘এটি কেবল  মুরংদের ক্ষেত্রে নয় অন্যসব জাতি গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।’


‘শান্তি’ চুক্তি পর  তেমন কোনো উন্নতি হয়নি মুরং দের।  বিকালের বৃষ্টির ভেতর রেনিক্ষং বাগান পাড়ার বাসিন্দা  ম্যান লং ম্রো বললেন, আমাদের ছেলে মেয়েরা সরকারি কোটা পাচ্ছে না। কারণ হলো এখানে শিক্ষার সুযোগ নেই। আবাসিক স্কুল বলতে দুটি। এনজিও স্কুল আছে কিছু। এখন অবশ্য অবস্থার খানিকটা উন্নতি হচ্ছে। তবে সেটি উল্লেখ করার মত নয়।


 তিনি বলেন, ‘কোটা কাদের জন্য ? যারা পিছিয়ে আছে তাদের জন্য তো। কিন্তু আমরা এটি সেভাবে পাই না।’ তার সাথে একমত হয়ে রাং লাই বললেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কোটা আছে সেটি চাকমারা পেয়ে যায়। আমাদের ছেলে মেয়েরা পায় না। কারণ হলো চাকমারা এগিয়ে আছে। আমরা একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে দেখা করে বলেছিলাম কোটা আপনারা ‘আদিবাসী’দের মধ্যে পিছিয়ে পড়াদের জন্য দিন। অথবা তাদের জন্য কোটার ভেতর থেকে আলাদাভাবে কোটা করে দিন। কিন্তু সেটি তাঁরা করেননি।’


মুরং যুবক  রিং লট বলেন, ‘আমাদের এগিয়ে নেবার মত কিছুই করা হয়নি। বাঁশ চিরে বিশেষভাবে বানানো  রেজর দিয়ে দাঁড়ি কাটছিলেন তিনি। বললেন, ‘সেভ করতে সপ্তাহে ৫ টি ব্লেড কিনলে দশ টাকা খরচ। তাই এ পদ্ধতি। আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। জুম চাষ করি। তা দিয়েই চলে।’
রেনি ক্ষং পাড়ার ম্যান  লং এক সময় মুরং বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। এখন অবসরে। বললেন, ‘শান্তি বাহিনীর সাথে অনেক যুদ্ধ করেছি। সাঙ্গু ও রুমাতে যুদ্ধ হয়েছে। ৬ শ টাকা মাসিক বেতন ভাতা পেতাম। সাথে রেশন।  সৈন্যরা পেতেন ৪৫০ টাকা।  এখনো আছে। তবে একটা সময় কাজ ছিল যুদ্ধ করা। এখন আমাদের মুরং বাহিনী দিয়ে ঘাস কাটানো হয়।’

 
আগে ৬ হাজারের মত মুরং বাহিনী থাকলেও এখন আছে সাকুল্যে তেরশর মত। ম্যান  লং বললেন, আমরা বৈষম্যের শিকার। আমাদের দিকে সেভাবে কারো নজর নেই। তিনি বলেন, আমরা ‘শান্তি’ বাহিনীর বিপক্ষে যুদ্ধ করেছি পাহাড়ে শান্তির জন্য। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য। অবস্থার এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে মুরংদের প্রাপ্ত সম্মান এখনো পাইনি। যারা ‘সন্ত্রাস’ করেছে তারা সম্মানিত হয়েছে। তাই জীবনের পড়ন্ত বেলায় আফসোস তাঁর। আগামী প্রজন্মের মুরং-রা যেন সম্মান পান সে আশা করে ম্যান লং। বললেন, আমাদের ছেলে মেয়েরা শিক্ষত হোক। তাদের এগিয়ে নেবার জন্য সরকার হাত বাড়িয়ে দিক।


 তাদের নেতা রাং লাই ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে তাঁর বান্দরবানের বাসায় বলেছেন, পাহাড়ে কোনো অশান্তি থাকত না যদি না রাজনীতিকরা এটা নিয়ে রাজনীতি না করতেন। তিনি বলেন, সেনা মুরং পাড়া থেকে তুলে নেবার দরকার হলেও সরকার এখান থেকে তুলছে না। যেখান থেকে তুলছে সেখানটায় সন্ত্রাসীরা থাকেন। মুরংরা ‘সন্ত্রাস’ করে না;‘ হুমকি’  দেয় না। সে জন্য এখানে এখানো সেনা উপস্থিতি থাকছে। তবে তাদের থাকা না থাকায় আমাদের কিছু যায় আসে না। ##


নগরবাসী তুমি এখনো আমার একটাই প্রেম !

 

 
 

 
 
 
 
রোজ নিয়ম করে
তুমি যে পথে কাদা-কণা উড়িয়ে যেতে! 
সে পথ ধরেই আমি আরেকবার হেঁটে যেতাম!
 
তোমার পায়ের ছাপে সোঁদা মাটির ধুলো-কণা ওড়ার -
সে দৃশ্য দেখতে দেখতে নিজেকে বড় করেছি।
ভালোবেসেছি তোমার প্রতি পদক্ষেপ!
 
এখন তুমি নগরে--
নোংরা ধুলোজমা ঘরের বারান্দায় বসে আকাশ দেখো!
সেই শ্যামল মাঠ, হেমন্তের শুকোতে থাকা মাটির গন্ধ-
এখনো আমার নাকে লেগে আছে!
 
কেবল তুমি নেই।
নগরবাসী তুমি এখনো আমার একটাই প্রেম !

নিয়তি— ভাগ্য অন্বেষণ —

 

নগর দিয়েছে রমণী সঙ্গ
পিৎজার আঠালো চিজ
সসে ডোবানো সিঙ্গাড়া-স্যান্ডউইচ
পোড়া তেলে ভাজা পুরি-জিলাবি
নোংরা গন্ধময় বাতাস আর
সিসার বিচরণ বক্ষ !

যে অসুখ আমি চাইনি, সেটিও এ নগরে
তবুও আমি তারে বলি ‘যাদুর শহর ঢাকা রে!’


অথচ আমার গ্রাম— ভোরের শিশির সিক্ত ঘাস দিয়েছে
জলকেলি করে ছুটে যাওয়া হাঁসের পালের সাথে
বিশুদ্ধ বাতাস !

রমণীয় সঙ্গ — বাজিকর দিন
আহা, আমি —
আমার পলাতক গ্রাম !
যদিও এখন সেখানে রাজনীতির বিষে মরে যাচ্ছে মাছ
ধানের ক্ষেতে পশু পড়া নিয়ে গণ্ডগোল

তবুও তো দিন শেষে, কষ্টের অক্তে—
কেউ কাঁধে রাখে হাত ।
কেউ বলে নে পুলিটা মুখে পুরে
মরিচ বাটার সাথে রসুন মিশিয়ে বানানো ভর্তায়
সেরে নে সকালের নাশতা
বিকাল বেলাটায় হয় চা-সঙ্গ আড্ডা

সে সব দিন গত হতে হতে আমি কেবল নগর দেখি
নগর আপদ যে আমার; এখন নিত্য নিকাশ সঙ্গ

ইন দ্য নেম অফ পলিটিক্যাল পার্টি ‘ধর্ষণ বরদাশত করবে না’

  ছবি অন্তর্জাল থেকে নেয়া 

 


বিভৎস ধর্ষণ-দৃশ্য-সঙ্কট বর্ণনার জন্য এ লেখা নয়।  এর উদ্দেশ্য আমার মনে ভেতর জমা থাকা কিছু কথা বলা। নারীর সম্মান, নারীর অধিকার এবং তেতুল নিয়ে বিস্তর আলাপ আমরা শুনি।  শুনি- এ জন্য বলছি, কারণ আমাদের সবার বয়স হচ্ছে, আমরা শুনি এবং শোনাতে পছন্দ করি বলেই।

 আমাদের উচিত শোনা ও শোনানো না। মানানো। আমরা  মানাতে পারছি না। এ ব্যর্থতার দায় আমরা এড়াতে পারি না।  সরকার হিসাবে, সমাজ হিসাবে, নাগরিক হিসাবে, বাবা মা হিসাবে --- এ ব্যর্থতার দায় আমাদের নিতেই হবে।

এলাকার নাম না করেই বলছি-- দেশের আনাচে কানাচে যে হারে ধর্ষণ হচ্ছে; এ সব সমস্যা সমাধানে আমাদের করণীয় কি হতে পারে, সেটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। আমরা কি করেছি? সেটি নিয়ে আলোচনা নেই। মানে- আমাদের রাষ্ট্র এর জন্য উদাহরণ দেবার মত কী ধরণের শাস্তি আরোপ করেছে, তা আমাদের সামনে নেই। ঘটনা ঘটলে আমরা হই চই করি। তারপর থেমে যাই। আমাদের সামনে এত এত ইস্যু আসে;  এ সব তখন চাপা পড়ে যায়। আর ডিজিটাল যামানায় এতদ্রুত আবেগ  এবং ক্ষোভ  বাড়ে আবার একই সাথে প্রশমিত হয়ে যায় যে,  এটা নিয়ে নীতি নির্ধারকদের কারো প্রচুর ভাবনারও প্রয়োজন পড়ে না।

২০০০ সালে মিলিয়েনিয়াম  উদযাপনে দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক নারী লাঞ্চনা নিয়ে আমরা  নানা রকমের তর্ক বিতর্ক শুনেছি। তারপর ওই ঘটনার ফলাফল-- রাতের বেলার কোন উৎসবে নারীর ঘরের বাইরে আসা বন্ধ হয়েছে।
   
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পয়লা বৈশাখে রাজু স্মৃতি ভাস্কর্যের সামনে একাধিক বড় কুকর্মের খবর  আমরা জানি । তার সন্ধ্যার দিকের। সেটি নিয়ে বিস্তর আলাপ-তদন্ত হয়েছে।  সেটিও আমরা জানি। কিন্তু ফলাফল শূণ্য।  

এ রকম আরো অনেক রকম  ঘটনার কথা আমরা জানি। আমরা সব বলি না।  বান্দরবানের আলি কদম থেকে সিলেট নগর কিম্বা রাজধানী ঢাকা--- কোথাও নিরাপদ নন নারী। অনিরাপদ জীবন মেনে নিয়েই তাদের দিন চলছে। তাদের পরিবারও বিপর্যস্ত  হচ্ছে।  

নারীবাদী নেতা নেত্রী এবং শাসক দল নিজেও নারীবাদী হিসাবে নানাভাবে  নিজেদের রূপায়িত করেন। এটা নিয়ে আমার মনের ভেতর কোন কষ্ট না। কষ্ট কেবল নারীর  জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতা সমানতালে শাসক এবং নাগরিক সবার।  
 এর জন্য  কি করা যেতে পারে বা পারতো--- সে বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত একটু বলি; এর সাথে আপনাদের দ্বিমত থাকতে পারে। আমি সে মতামতকেও শ্রদ্ধা করি---


শুভ পর্যটন; শুভ পর্যটন দিবস

=


পর্যটন কর্মী হিসাবে আমি কাজ করি বছর ২১ হবে।  নিজের মত করেই করি। এর মধ্যে কিছুকাল পর্যটনের 'নেতাগিরি'ও করেছি। তবে এবারই প্রথম একটা মহামারি কালে বিশ্ব পর্যটন দিবস দেখছি। এ সময়ে যার  থিম ধরা হয়েছে- ট্যুরিজম অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট। বাংলায় যাকে বলা হচ্ছে- 'গ্রামীণ উন্নয়নে পর্যটন'।

 পেক কাদা মাখামাখির মেঠোপথ, বৃষ্টি ভেজা কাক-শালিকের ওড়াওড়ি, ঘোলা জলে জোছনা উপভোগের গ্রাম আমাদের। ঋতুভেদে পর্যটনের যে বৈচিত্র; সেটি এই বাংলায় সবচে বেশি। সেই দিক বিবেচনায় আমরা  গ্রামীণ পর্যটনে এগিয়ে থাকবার কথা। 'থাকবার কথা' এ জন্য বলছি--- আমরা আসলে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে নেই।

আমাদের দেশের মানুষের জীবনযাত্রা- গ্রামে, গঞ্জে মানুষের জীবনাচরণ, সংস্কৃতি, হাট বাজার, হস্ত শিল্প, কৃষি; পিঠাপুলি আর আপ্যায়ন---এ সব পর্যটনের দামি পণ্য। যদিও আমাদের অনেকের কাছেই এটা খুবই আজগুবি শোনাবে।  তবুও এটাই সত্য।  অস্ট্রলিয়াতে গ্রামীণ জীবন উপভোগ করা সবচেয়ে ব্যয় বহুল পর্যটন। নিউজিল্যান্ডেও তাই।  

শহুরে জীবনে অভ্যস্ত অথবা শহুরে জীবনের দুর্নিবার সুখের সন্ধান মেলে--- এ ভাবনা মাথায় রেখে আমাদের সমাজ ব্যবস্থার ভেতরে ভেতরে যে বদলটা হয়েছে, সেটি আসলে সঠিক এবং  গঠনমূলক বদল নয়। গ্রাম ও  শহরের মেলবন্ধনটা এখানো জরুরী। সে দিকটা উপেক্ষিত। এর পেছনে বহু কারণও নিশ্চয় আছে।

আজকের বিশ্ব পর্যটন দিবসের পর আবার গ্রাম নিয়ে আলোচনা সে অর্থে জমবে না। তবে এ কথা আমি আরো এক দশক আগেও বহু জায়গায় বলেছি। এখনো বলছি---আমাদের মূল প্রডাক্ট গ্রাম এবং গ্রামের মানুষ। বিদেশিরা এটা দেখতেই এখানে আসতে পারেন। এ দেশের মানুষের সারল্য, বিপদের সময়ও হাত নেড়ে অভিভাবদ কিংবা বন্যায় ডুবে যাওয়া ঘরের উপর বসে হাসতে পারে--- আমাদের গ্রাম বাংলার মানুষ।  অকপটে বলতে পারে, এক খিলি পান খান। নেন একটু সরবত খান।

এমনকি অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের কাছেও গ্রাম আকর্ষণীয় হবে। এর কিছুটা অবশ্য আমরা উপভোগ করি বহু বছর থেকে। তার একটি বিরিশিরি । অন্যটি পার্বত্য চট্টগ্রাম।  যড়িও ঠিক গ্রাম নয়, পাহাড় এবং জনগোষ্ঠী মিলিয়ে আমাদের একটা সমন্বতি পর্যটন সেখানে।  তবে এর বাইরেও বিশাল জগত রয়েছে গ্রামের।


                                  গোধূলী-- নোয়াখালীর একটি গ্রাম থেকে তোলা ছবি
 


গ্রাম বাংলার কতশত রকমের বৈচিত্র; সেটি কেবল  ঢাকা থেকে দু পা ফেলে বের হলেই সহজে উপভোগ করা সম্ভব।  একেকটা গ্রামের মানুষের খাদ্য একেক রকম। একেক রকম তাদের গান বাজনা।  ধর্ম চর্চা। কৃষি।  ফসল তোলার  গান।  উৎসব। এ সবই গ্রামীণ পর্যটনের অংশ।

আমরা এ পণ্যকে সাজাতে পারি নানাভাবে। সাজানো হচ্ছেও। কমিউনিটি ট্যুরিজমের ডেভেলমন্টে হবে। সামনে এটি অনেকদূর যাবে। দেশের প্রথম গ্রামীণ পর্যটনের ভিতটা তৈরি হয়েছির লাউচাপড়ায়। এখন সেটি ভিন্ন স্থানে ছড়েয়ে যাচ্ছে। এটাকে আরো  অর্গানাইজ করতে হবে। পর্যটকের নিরাপত্তা, উৎসব-প্রকৃতি উপভোগের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য এবং এ খাতে বিনিয়োগ আগ্রহ বাড়াতে  উদ্যোগ নিতে হবে। এ উদ্যোগ সরকারি বেসরকারি  দু'খাতেই হতে পারে।

 আমার ব্যক্তিগত মত- সরকার পৃষ্ঠপোষক হোক। বেসরকারি লোকরাই ব্যবসাটা চালাক। তাহলে  এ খাতে সফলতা আসবে।    

 ওয়াল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম  কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) হিসাব বলছে, ২০১৮ সালে  দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৩ দশমিক ৯ শতাংশ অবদান পর্যটন খাতের। ২০১৯ সালে এটি কিছু বাড়লে এ মহামারিকালে এটি কমছে।  তবে গ্রামীণ পর্যটন ঘুরে দাঁড়ালে এখাতের অবদান জাতীয় কর্মসংস্থান  এবং মোট দেশজ উৎপাদনে বাড়বে--- এট নিশ্চিত করেই বলা যায়।  

সংস্থাটি বলছে, মহামারিকালে পর্যটন খাতে সারা বিশ্বে  সাড়ে ৭ কোটি মানুষ চাকরি হারাবে। লোকসান হবে ২ ট্রিলিয়ন ডলার।

জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা  জানাচ্ছে, চলতি বছরই পর্যটন আবার পুরোপুরি চালু হলে তিনটি দৃশ্য দেখা যাবে। ১. জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও পর্যটনে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে ৬১ কোটি পর্যটক পাওয়া যাবে। ২. নিষেধাজ্ঞা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থকলে  পর্যটক পাওয়া যাবে ৪০ কোটি।  নিষেধাজ্ঞা ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকলে পর্যটক পাওয়া যাবে  ৩২ কোটি।

আশার কথা হলো ইতোমেধ্যে বহু দেশে পর্যটনের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে।  বাংলাদেশও এটি সহসা তুলে না নিলেও গ্রামীণ পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিতে একটা বড় ধরণের পরিবর্তন আনা সম্ভব। এ কারণে সম্ভব যে মানুষের অভ্যন্তরীন ঘোরাঘুরি উপর ইতোমধ্যে সরকতার নিষেধাজ্ঞা  তুলে নিয়েছে। 

                                          পাহাড়-- বান্দরবান । ছবি সংগ্রহ করা। 



শুভ পর্যটন। শুভ পর্যটন দিবস।


গল্প :: মায়াময় হাসি, ভালোবাসার ডাক! কিংবা কেমন আছো!


  • এখন গ্রামে জোছনা--- ছবি ব্লগারের নিজস্ব

কোন কারণ ছাড়া মানুষের মন খারাপ হয়, এটা মানতে নারাজ রফিক। প্রত্যেকটা জিনিসের পেছেনেই একটা কারণ থাকবে। যেমন- আজকে তার মন খারাপ! এর কোন কারণ খুঁজে বের না করা গেলেও; নিশ্চয় একটা কারণ আছে। এটাই মন খারাপ নিয়ে রফিকের কনক্লুশন।

মন খারাপের সময়টাতে মানুষ অনেক বাজে চিন্তা করে। কেউ চুরুট টানে। বিড়ি ফোঁকে। কারো তিক্ত জল গেলার অভ্যাসও আছে। কেউ ভাবে মইরা যামু!  কিন্তু রফিক এ সবের ধারে কাছে যায় না!

মন খারাপের দিনে রফিকের  সুইমিং করতে ইচ্ছে করে। সেটি পুকুরের পাতলা জলে। কিংবা নদীতে। অদ্ভূত একট বিষয়।  এটা এ নগরে হয় না, এ না হবার বিষয়টা তাকে আরো কষ্ট দেয়। কিন্তু দিন শেষে নিজেকে সামলে নেয় রফিক। কাজের ভেতর ডুব দিলে, দিন কীভাবে কাটে; সেটি আর মনে থাকে না।

গ্রাম ছেড়ে শহরের আসবার কারণে নিজের বেশি বিষাদ--- এমন অভিযোগ তার নিজের বিরুদ্ধে। আবার এটাও তো ঠিক শহরে না এলে মানুষে মানুষে ভেদ, গতি প্রকৃতির কত খেলা-- সে সব তার জানাই হতো না। মাঝে মাঝে মনে হয়--- এত জেনে লাভ কি! মাস শেষে টাকার টানাটান।  সংসারে অশান্তি। বুকের ভেতর থেকে ঠাণ্ডা একটা নিঃশ্বাস! সবই রয়ে গেলো।

রফিকের এখনো মনে আছে- শহরে আসার পর মেসে একটচা ঘরে তারা দু'জন থাকতো।  দু'জনে অনেক গল্প করতো। গ্রামের গল্প। কলেজের গল্প। নিজের বয়ঃসন্ধি কালের গল্প। যৌবনে নারী শরীরের গল্প। সব গল্প ছাপিয়ে রফিকের কেবল মনে হতো; তার গ্রামের ধান চাষের জন্য চষে রাখা জমির ঘোলার জলে উপর জোছনাটা! অপূর্ব! অপূর্ব সেই দৃশ্য। অপূর্ব সেই দৃশ্য তার ২৫ বছরের জীবনে দ্বিতীয়টি চোখে পড়েনি।

রফিকের কাছে জোছনা উপভোগই বিনোদন। অপূর্ব বিনোদন।  সে সময় তো এত ফেসবুক, টুইটার, ইমো আর ম্যাসেন্জার আসেনি।  পড়াশোনার ফাঁকে একটু ফুসরত পেলে জানালার বাইরে নড়াচড়া করা পাতার রহস্য ভেদ ভাবনা কিংবা জোছনা রাতে ঘরের বাইরে থেকে হেঁটে আসাটাই ছিল উপভোগ্য।  অথবা ঘোর মেঘাচ্ছন্ন বিকালে দৌড়ে বাড়ি ফেরার পর আর টিনের চালে বৃষ্টি অবিরত শব্দ। কী অপূর্ব সেই দৃশ্য।

 শহরে সে সবের বালাই নেই। এখানে প্রায় সব মানুষই ধান্দায় ঘোরে, ধান্দায় ফেরে। ধান্দাটাই এখানে আসল। বাকি সব মিথ্যা।  এই যে পাশের বাসার মেয়েটি উঁকি দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো, সেটিও একটা ফিকির! 

ইভ্যালি---পেশাদারিত্বটাই যেখানে দরকার ছিল!



কান্নার ছবি'র ছবি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সৌজন্যে


ইভ্যালির মালিক মি. মোহাম্মদ রাসেলের লাইভটা দেখে খারাপ লাগলো।  তাঁর কান্নাটা আমার পছন্দ হয়নি। এখানে সে অর্থে উনি ব্যবসায়ি হয়ে উঠতে পারেননি।  পারেননি--- এ কারণে বলছি, যদিও তাঁর হিসাবে ৭০০ মানুষ তাঁর সাথে কাজ করছেন সরাসরি । ১৩শ মানুষ ডেলিভারি করার জন্য যুক্ত আছেন। তাহলে মোটের উপর ২ হাজার লোকের  জন্য যে দক্ষ নেতৃত্ব তাঁর দরকার সেটি নেই।  এটা ত্যানা না পেঁচিয়ে সারাসরি বলেই নিলাম।

দেশের প্রভাবশালী দৈনিক প্রথম আলো তাদের  যে সব তথ্য/ভুল তুলে ধরেছে ইভ্যালির ইউজার হিসাবে আমি এর সাথে মোটামুটি একমত। যাঁরা  সরকারের ই-কমার্স নীতিমালাটি পাঠ করেছেন তাঁরাও বলবেন, তারা এর  বেশ কিছু ধারা লঙ্ঘন করছেন।  এবং নিয়তই করে যাচ্ছেন।

ইভ্যালি কল সেন্টারটি কাজ করে না। এ সত্য। আপনি পণ্য নিয়ে অভিযোগ করবেন সেটিরও উত্তর মেলেনা।  আমি নিজে অন্তত চারটি অভিযোগ লগ করে আপনাদের বলছি। এবং এ অভিযোগ লগের পর কোন ডকুমেন্ট থাকে না। যদিও লাইভে এসে তিনি বলেছেন, সব সিস্টেম ডিজিটাল করার জন্য তারা ক্যাশ অন ডেলিভারিটা রাখেননি। তাহলে সমস্যার সমাধানে ই-টোকেন  সিস্টেম রাখতে পারেতেন। এটা অনেক ফুড ডেলিভারি সাইট; এমনকি টেলিকম অপারেটরাও ইলেট্রনিক কমপ্লেইনের ক্ষেত্রে রেখেছেন।


জানি না; চলমান ধাক্কাটা ইভ্যালিকে কোথায় দাঁড় করাবে।  আমি অবশ্য তাদের সাইটে কেনাকাটা অব্যাহত রেখেছি। অন্য অর্থে বললে বাধ্য হয়েছি। কারণ ইভ্যালি ক্যাশে আমার বেশ কিছু টাকা জমে আছে। সে খরচ করার জন্য আমাকে কেনাকাটা করতে হবে। আমার প্রায় ১০টির মত অর্ডার এখানো ঝুলে আছে।  তাতেও আমার আপত্তি নেই। এমন ক্রাইসিসে তারা এটা ডেলিভারি করতে সময় নিবেন এটাই স্বাভাবিক।  মজার বিষয় হলো ডেলিভারি অপশনে  আপনাকে বাধ্যতামূলক ক্লিক করতে হবে ৭ থেকে ৪৫ কর্ম দিবসে আপনি অর্ডারটি ডেলিভারি পাবেন। তবে এ ডেলিভারি এক মাসের আগে রেয়ার হয়।  

যেটি মূলত আমি বলতে চাইছি--- মি. রাসেল  আলীবাবার মত  আমাদের দেশের জিডিপিতে বড় ধরণের অবদানের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করছেন--- এমন একটা বক্তব্য ২৯ আগস্টের লাইভে  দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁর সমানে গ্রাফ ছিল বলছিলেন, যদিও সেটি লাইভে আমরা দেখিনি। দেখেছি আবেগময় কিছু কথা। তাঁর পানি খাবার স্টাইলটাও পছন্দ হয়নি। একটি  বড় কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতাসুলভ কিছু চোখে পড়েনি।  

 যে বিষয়গুলোতে তাঁর/তার কোম্পানির ভীষণ দূর্বলতা আমার চোখে ধরা পড়েছে--- সে গুলোই বলি। এটা উনি জানতে পারলে হয়ত কাজে দেবে। সে জন্যই বলা। আমরাও চাই দেশি একটা কোম্পানি বড় হোক। বড় হলে আমরাও বলতে পারি আমােদের একটা বড় কোম্পানি আছে।


ইভ্যালি'র লোগো--- গুগল থেকে নেয়া 

 

চুরি হয়েছে সেই উনুন উষ্ণতা





কবেই পালিয়েছে
উষ্ণতার খোঁজে উনুনপাড়ে হাত মেলে ধরার সকাল

উধাও হয়েছে নির্ভেজাল আনন্দের ভোর
খেজুর রসের হাঁড়ি ঘিরে ভাইবোনদের আনন্দ অপেক্ষা

থালার শিরনি শেষ হওয়ার আগে 
মায়ের সেই আদুরে ডাক
আর নিবি?... নে আরেকটু --- এখন মা-কে সে কথা আমরা কেউ বলি না
জীবনের কারণে-জীবিকার খোঁজে আমরা অন্য কোথাও!

 নিখাঁদ ভালোবাসাও পালিয়েছে
 পালিয়েছে মায়াবী চোখে আবেগি ক্ষণ-অপেক্ষা

বাদুরের নখের থাবায় ঝরে পড়া বাদাম কুড়ানোর ভোর!
কাদা মাখামাখি হাতে---কিছু কৈ, টাকি আর শিং মাছ!
আর প্রিয়মুখ গুলো একসাথে বসে---

দুপুরের খাবার আর রাত---
হারিকেনের আলোয় উজ্জ্বল রাত!

এখন ব্যস্ত সবাই...চুরি হয়েছে সেই উনুন উষ্ণতা
মায়ের চোখে এখন চশমা...
রান্নাঘরের নাম হয়েছে কিচেন
আগমন ঘরেটছে বুয়া'র!

শহুরের সভ্যতার কিন্চিত বাড়তি চাপ গ্রামে
বিটুমিনের রাস্তা হয়েছে
বোতলে গ্যাস-- বুকের ভেতরের মায়াটা হালকা হতে হতে
এখন সবই গা সহা! আহ্হা সময়!!

স্পর্ধিত তরুণী বশীকরণে ধরবো বাজি!




ছবি সৌজন্য: bd.lovepik.com




আমার কী এখন সেই বয়েস!
স্পর্ধিত তরুণী বশীকরণে ধরবো বাজি!
কিম্বা পাহাড়ের ভাঁজে লুটিয়ে থাকা
কামুক কুমারী জোছনার সাথে আড়ির!

তবুও খেলি--বাজি!

অগণন সময় অনিশ্চিত
বয়ে যায়
নৌকার ছইয়ের উপর যেমন জল ছিটকে পড়ে
শুকিয়ে যাওয়া জলে অবশিষ্ট থাকে কিছু নুন
সে নুন  গুণ-ধারণ না করলেও নারীর চোখের মতই মোহনীয় তার ভঙ্গি!

আমার কী এখন সেই বয়েস
তার চোখে চোখ রেখে নৌকা বাই
তার চুলে নাক ডুবিয়ে বলি-
আহা শিউলিতলায় এমন গন্ধ মেখেছি বহুবার
রাত জুড়ে হাস্নাহেনার যে গন্ধ আমায় আকুল করেছিলো---
সেই গন্ধ তার শরীরে!

আমি নিবীড় হই, ডুবে যাই
ভেসে উঠি হাঁসের মত---
উচ্ছ্বল বকের মত উড়ে যাই পাখা মেলে---
বয়েস! 

চুরি হয়ে যায় আমার সোনামাখা রোদ্দুরে দুপুর



কাদাপানির ভেতর জমে থাকা মাছ- ছবি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থেকে তোলা।


ধান ক্ষেতের আলে শিষ দিয়ে ছুটে চলা কিশোরটা এখন তরুণ
কই মাছটা ধানের ফুল খেতে টপকাতে টপকাতে কারো জালে ধরা পড়ে
চুরি হয়ে যায় আমার সোনামাখা রোদ্দুরে দুপুর
শীতের দুপুর---

পওষের টানে নেমে যাওয়া ক্ষেতের পানির পর কিছু জমে থাকে
 সেই কাদাপানির ভেতর জমে থাকা মাছ শিকারে
--- কাদা মাখামাখি খেলা
 আহা কৈশর!! 

 উন্নয়ন এসেছে নগরে, গ্রামেও
 কাদা মাখামাখির দিন নেই, সুতরো কাপড়, ইলেকট্রিক গাড়ি! 

 সাথে করে নিয়ে এসেছে রোগ বালাই, উন্নয়ন অসুখ যার নাম

 হার্টের বেরাম, ফুসফুসের বেরাম, কোলনের বেরাম, রক্ত চাপের বেরাম, আরো কত রেকমের বেরাম!

 এরকম বহু বেরাম এসেছে উন্নয়নের ঘাঁড়ে চেপে!
 রাস্তা খোঁড়ার ধুলো, ক’দিন পর ইট ভাঙ্গা আর  যান্ত্রিক যানবাহন
 সবুজ শৈশব, কৈশরের স্মৃতিকে করেছে নষ্ট!!

ডাক্তাররা বলেন-- স্ট্রেস---স্ট্রেস থেকেই নাকি এ সব বালাই হয়
সে সাথে বাড়ে খরচ! প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ!!

বুক ভরে গ্রামের যে আইলের উপর দাঁড়িয়ে শ্বাস নিতাম--- শান্তিতে ভরে যেত মন
শরীরটা হালকা হয়ে যেত-- এখন সেখানে কালো ধোঁয়া
যে নগরে পর্দা খুলে দিলে হালকা বাতাস ছুঁয়ে যেত ... সে নগরে নেমে আসে ধূলোর আস্তরণ--- কুয়াশার মতন!

 তবুও উন্নয়ন চাই আমাদের --- কলের যুগ, যন্ত্রের যুগ, এলইডির যুগ
 নতুন বছরে আসছে চুম্বকের যুগ--- যেটার নাম হয়েছে আইওটি(ইন্টারনেট অব থিংস)!

সব আটকে যাচ্ছে নীল আলোয়, চুম্বকের ভেতর
আটকে যাচ্ছে স্বপ্নগুলো--
শৈশব, উৎসব পার্বন এবং দুঃখ্খগুলো আটকে যাচ্ছে নীলের জালে --- বাড়ছে বালাই
 মনের অসুখ-- শরীরের অসুখ!
 আহা জীবন!