কিস্তি ৮৪ :: বৃষ্টি দেখে মাথা নষ্ট!


ইংরেজি ২০০২ সালের বঙ্গ  জ্যৈষ্ঠ মাস। প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে।  ভেজা দরকার। বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাচ্ছে মল চত্বর। কৃষ্ণচুড়া ফুলগুলো নুয়ে যাচ্ছে।কলাভবন থেকে বেরিয়ে আসলাম,  আমরা কয়েকজন। তার মধ্যে মাথা নষ্ঠ কয়টা রিকশা ঠিক করলাম। ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে নগর, আমরা রিকশার হুড নামিয়ে ভিজছি।

রিকশা পেতে সমস্যা হয় নি।  টাকা একটু বেশি গুনতে হয়েছে, এই আর কি! সে সময় এক রিকশা চালককে জিজ্ঞেস করেছিলাম- মেয়েরা  হাত তুললেই খারায়া যাও। আর আমরা হাত তুলতে  মুখ ঘুরায় নাও! কারণটা কও তো দেখি।

তার ভাষ্যটা চরম। সে বল্ল- মেয়ে মানুষের নাকি ওজন নাই। রিকশা বাতাসের বেগে (গতিতে)  চলে।  সে দিন রিকশা করে আমরা ঘুরে এলাম মল চত্বর থেকে কার্জন হল। সেখান থেকে মৈত্রী হল।
সাধারণত বৃষ্টিতে ভিজলে নগরের ছেলে মেয়েদের জর জারি হয়। ঠাণ্ডা লাাগে। আমার সে রকম সমস্যা ছিল না। বৃষ্টিস্নাত ক্যাম্পাস হয়ে ফিরে এলাম  নিজের হলে। দেখলাম বসও ফিরেছে ভিজে। মাসুদ ভাইও। বঙ্গবন্ধু হলের ৩১৪ নম্বর রুমের সবার মাথায় একই দিন  পাগলামি ভর করল ক্যান?  সে প্রশ্ন করলাম না।

কিন্তু রুমে সবার মনে হলে এমন বৃষ্টির দিনে হলে জাফরের  টিকটিক চুবিয়ে রান্না করা ডাল আর  তেলাপোকার  পাখনা ডুবানো তরকারি খাও্রয়া চলবে না। খিচুরি খেতে হবে। তবে সে সময় ক্যাম্পাসে ভালো খিচুরি পাওয়া যেতে, সেটি সপ্তাহে একদিন।

পরে রুমটেরা মিলে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গেলাম  চানখার পুল। সে সময় তিরিশ টাকায় খিচুরি পাওয়া যেতো। সেখান থেকে খিচুরি খেয়ে আবার বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে  হলে ফেরা।  আমাদের রুমের সবাই এবং আমার বন্ধুরা ছাতা বিরোধি ছিল।  আমার ছাতা বিরোধতিার কারন হলো আমি কিছু হাতে বহন করতে পারি না। এটা আমার কাছে খুবই কষ্টের ও বিরক্তির মনে হয়। আর রিকশার হুড তুলিনা, এতে নিজেকে ক্যামন অপরাধি মনে হয়! মুক্ত আকাশটা দেখতে দেখতে পথচলায় আনন্দ!!

তবে আমার বন্ধু বাবুর ভিন্ন মত। তার কথা হুড তুলে রাখলে বাংলা সিনেমার দৃশ্য মিস।  নায়িকার বৃষ্টি ভেজা দৃশ্য বাংলা সিনেমায় মাস্ট।আর সে দৃশ্য দেখার জন্য টাকা খরচ করতে হয়। বৃষ্টির দিনে সেটাই পুরাপই ফ্রি!!

আমাদের এমন সব পাগলামি সম্পর্কে অনেকেরই  জানা।  একবার বুড়িগঙ্গায় বৃষ্টির মধ্যে আমরা প্রায় তিরিশ জন।  পয়লা বৈশাখের দিন, ঘৃুরতে গিয়ে কাকভেজা হয়ে ফিরলাম। আরেকবার  বর্ষায় বান্দরবান। পুরা রাস্তায় বৃষ্টি। সে সময়  চান্দের গাড়ির ছাদ লাগানো থাকতো। আমরা সবাই ছাদের ওপরে উঠে বসলাম। আর্মি ও পুলিশ বারণ করবে ভেবে কেবল চেকপোস্টে আসলে নেমে পড়তাম। পুরো সফরে আমরা ১৯ জন।
চান্দের গাড়ির ঠাসাঠাসি করে বসলে ১৬ জন বসা যায়। কিন্তু আমরা সেটি মানলাম না। আমাদের বৃষ্টি স্পর্শে জ্বরাক্রান্ত কয়েকজন ভেতর বসেছিল। আমরা বাকি ১১ জন  ছাদে। সে রবকম আড্ডা। বৃষ্টির দিনে এমন সৌন্দর্য পাহাড়ের, যেটি এর আগে দেখা হয়নি।  অনন্ত যৌবনা পাহাড় দেখে ফেরা। এখনো বৃষ্টি দেখলে মাথা নষ্ট। কিন্তু শরীর আর কুলায় না।  

কিস্তি ::৮৩:: ক্যাম্পাস সুন্দরীরা

সুন্দরীদের কদর সবখানে। ক্যাম্পাস তার ব্যতিক্রম জায়গা নয়। আমাদের ক্যাম্পাসে সবচেয়ে সুন্দরী ম্যাডাম সম্ভবত দিল রওশন । তিনি কী পড়ান তা নিয়ে সংশয় আছে। তিনি নিজেও নিশ্চিত নন। তবে আমরা সবাই নিবিষ্ট মনে তার ক্লাস উপভোগ করতাম। কারণ তিনি যথেষ্ট সুন্দরী। ক্যাম্পাসে আরো দুজন সুন্দরী ম্যাডাম ছিলেন, সে সময়। তাদের  একজন সাদেকা ম্যাডাম আরেকজন সামিয়া ম্যাডাম।

ক্যাম্পাস রিপোর্টার থাকার কারণে এবং একই সাথে ট্যুরিস্ট সোসাইটির  কর্মী হওবার সুযোগে অনেক সুন্দরী শিক্ষার্থীর দেখা মিলেছে।

আমার চোখে রাজনৈতিক দলের সুন্দরীদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের জলি, ছাত্রফ্রন্টের কানিজ,  ছাত্রলীগের মম, ছাত্রদলের শান্তা এবং নিশিতা।  আরো দুজন ছিল একজন মৈত্রী হলের আরেকজন রোকেয়া হলের। তাদের নাম আমার মনে পড়ছে না। মৈত্রী হলের মেয়েটা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সেটিই মনে হতো না, মনে হতো সদ্য স্কুল থেকে বাসায় ফিরছে মেয়েটা।

ক্যাম্পাস সুন্দরীদের মধ্যে শারমিন আপার নামটা নিতে হবে।  প্রথম যেদিন তার সাথে পরিচয়, অনার্স শেষ বর্ষে পড়ছেন শুনে অবাক ও বিস্মিতভাবে তাকিয়ে ছিলাম। ট্যুরিস্ট সোসাইটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। পড়তেন ভূগোলে।  আমি  ও বাবু প্রায় সময় ডিইউটিএস-এ  শারমিনকে আপাকে আড্ডায় পেতাম।  শারমীন আপা আমার দেখা সেরা ক্যাম্পাস সুন্দরীদের একজন।

দ্বিতীয় ক্যাম্পাস সুন্দুরী নীলিমা। সে সময় ছোট করে ছাটা এলাচুলে কলাভবন চত্বর মাতিয়ে রাখতেন তিনি। ইয়ারের দিক থেকে আমাদের সিনিয়র ছিলেন। পড়তেন  ইংরেিজতে। থাকতেন শাসুন্নাহার হলে।  শা্মসুন্নাহার হলে পুলিশি ট্রাজেডির কারণে তার সাথে দেখা হয়েছিল। তিনি  সুলতানা শফি ম্যাডামকে হল প্রভোস্ট হিসাবে রাখতে ইচ্ছুকদের অন্যতম।  তাদের আরেক সহযোগি ছিলেন  তনুশ্রী। তিনিও শাসুন্নাহার হলে থাকতেন। তার মায়ভরা চাহনি আমাদের মুগ্ধ করতো।

শাসুন্নাহার হলে তৃতীয় সুন্দরী ছিলেন নীপা।  কমার্স ফ্যাকাল্টিতে পড়তো। থাকতো মিরপুরে। শাসুন্নার হলের ঘটনার সময় হলেই ছিল। তার সাথে বহুদিন আমরা একসাথে আড্ডা মেরেছি নায়েমে, শামসুন্নাহার হলের ঘটনায় বিচারপতি তাফাজ্জল কমিশনের বারান্দায়।  নীপার সৌন্দর্যটা অন্য জায়গায়।

ক্যাম্পাস সুন্দরীদের মধ্যে নাট্যকলা একটা বড় আপু ছিল। পরিপাটি। বাড়ি দিনাজপুরে। আমাদের এক বড় ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড ছিল। পরে সম্পর্ক টেকেনি । থাকতেন মৈত্রী হলে।  একই ডিপার্টমেন্ট আরেকজন সুন্দরী  পড়তো সে আমাদের ছোটবোন মিটি।  ন্যাচারাল লুকের জন্য সে  আমাদের সময়কার আর্ট বিল্ডিংয়ে বেশ জনপ্রিয় ছিল।

আমার এক ইয়ার সিনিয়র নৃবিজ্ঞানের প্রজ্ঞা, ইয়ারমেট  রিফাত, সমাজকল্যাণের রনি চাকমাও যথেস্ট সুন্দরী হিসাবে বিবেচিত ছিলো, ক্যাম্পাসে।   কমার্স ফ্যাকাল্টির  সামান্থা, আইবিএ-'র লুবনা এবং ফারসির ফাতেমাতুজ্জোহরা, ভূগোলের রিমি, ইতিহাসের সাদিয়ার  কথাও বলতে হবে। ইংরেজির মহুয়াকেও বাদ দেয়া  না। 

হুমায়ুন আহমেদ কন্যা শীলা ও বিপাশা, অভিনেত্রী থনিমা হামিদও আছেন একই কাতারে। তনিমাকে দেখার জন্য অনেকে তার ডিপার্টমেন্ট ইতিহাসের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতেন।  তনিমা আমাদের বন্ধু বেলালদের সার্কেলে থাকায় তার সাথে আড্ডাবাজি হতো। তাদের ইস্কাটনের বাসায় আমি সম্বাদিক হিসাবেও গিয়েছিলাম কয়েকবার!

আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বড় বিচিত্র, বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতা নিয়ে হাজির হয়। সে অভিজ্ঞতা নিয়ে ৮৩তম কিস্তিটা লেখর কথা ছিল। তাই লিখলাম। জানি অনেক নেতিবাচক ধা্রণা এখান থেকে অনেকের মনে জন্মাবে। তবুও সত্য তো সত্যই। এ লেকাটা ২০০০ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত  সময়ে ক্যাম্পাসে আমাদের দেখা সুন্দরীদের নিয়ে!

সাথে একটা ঘোষনা:: কিস্তি এখন থেকে  চলমান থাকবে। 

নজরুলকে নিয়ে বিশ্বজিৎ ও গোলামের কৌশলী বিকার

যে কুতর্ক বিশ্বজিৎ খুবই কৌশলে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সুশীল পাড়ার গবেষক হিসাবে পরিচিত গোলাম মুরশিদ গত বছর বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে নিয়ে কুকথা বলেছিলেন, তার সাথে এর এক যোগসূত্র আছে।
গোলামের বিচার হয়নি বলে বিশ্বজিৎ সাহসটা করলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে দেশে নজরুল জাতীয় কবির মর্যাদায় আসীন; সে দেশে এমন নোংরামি সরকার মেনে নিচ্ছে, সেটাও একটা জিজ্ঞাসা হয়ে থাকছে।
আমরা যে কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে জানবো, জানার অফুরন্ত আগ্রহ আমাদের আছে। কিন্তু বিশেষ কোনো এজেন্ডা এখানে হাজির দেখে আমরা ব্যথিত। এগুলো উদ্দেশ্যমূলক, বিকৃত রুচির এবং নোংরা মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।
আমাদের বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত আরেকজন কবি সম্পর্কে কমবেশি বিশ্বজিৎ বা গোলামদের জানা। কিন্তু সে সম্পর্কে তারা লিখেননি বলে আমরা কৃতজ্ঞ্। কারণ কিছু মানুষ আছে তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যাক্তিজীবন নিয়ে উৎসাহ দেখানোটা কোনো কালেই আমার কাছে শোভন মনে হয়নি।
বিশ্বজিৎ ও গোলামরা নজরুলকে ছোট করার যে চেষ্টা করছেন এটা বৃথা। সাহিত্য তার সৃজনশীল, নান্দনিক, সামাজিক ও প্রাসঙ্গিক দিক বিবেচনা করে গৃহিত বা বর্জিত হয় বলে জেনে আসছি। রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য সে বিচারে টিকে গেছে।
নিজেদের নাম ইতিহাসে রাখার অনেক উপায় থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত প্রতিভা ও তাদের সৃনজশীল কর্মের বিষবাষ্প ছড়ানোর যে সুক্ষ কৌশল মতলবাজ মিডিয়া নিয়েছে, সেজন্য আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।
এককালে মোল্লারা নজরুলকে বর্জন করেছিল। বলেছিল কাফির। এখন কথিত জ্ঞানীরা, যাদের পাপের চৌহদ্দির মাপতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা লাগবে। সে সব লোক নজরুলের মত লোককে নিয়ে কথা বলে!
নারগিসকে নিয়ে আলাপ হতেই পারে। সেটি নিয়ে আপত্তি করার কিছু নাই। কিন্তু সাধারণের বাইরের প্রতিভাতের জন্ম বা মৃত্যু দিবস ঘিরে এ নিয়ে আলোচনাটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
গত বছর বাংলা একাডেমিতে গোলাম নারগিস এবং প্রমীলাকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছে। এর কিছু অংশ প্রেস রিলিজ করে একাডেমি থেকে ছাড়াও হয়। কিন্তু সম্বাদিকরা নিজ দায়িত্বে ওই অংশটুকু ছাটাই করেন।
এবার বিশ্ব যে কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন- নজরুল কথা দিযে কথা না রেখে আবার দরদীয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তিনি হাজির করেন নি।
ধরে নিলাম এ কথাটা সত্য। কিন্তু এ সত্যটা তার জন্মদিন ঘিরে উৎসব আয়োজনে কতটা প্রকাশ যোগ্য।
আমরা কী কখনো রবীন্দ্র প্রেমিকা আন্নাকে নিয়ে কোনো লেখা দেখেছি। কাজী আনোয়ার হোসেন , যিনি মাসুদ রানার জনক। তার সম্পাদিত ঐতিহাসিক প্রেমপত্র থেকে যেটি জানা সেটি হলো, আন্নার প্রেম কখনোই ভুলতেই পারেননি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু পিতার বন্ধুর ঘর ত্যাগের পর রবীন্দ্রনাথ কী তার খবর নিয়েছেন? তবে কাজী আনোয়ারের বইয়ের সূত্র মতে, রবীন্রদ্রনাথ বলেছিলেন , তাকে নিয়ে কোনো জাদুঘর হলে সেখানে যেনো আন্নার চিঠিটা থাকে। কিন্তু তার সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল এ সব আলোচনা কতটা রুচিকর।
আমার মনে হয় রবীন্দ্র নজরুল বা জীবনানন্দ; শহীদুল্লাহ কিম্বা শামসুর রাহমানদের জীবনের এ সব দিক নিয়ে আলোচনাটা পাবলিকলি হওয়ার বিষয় নয়্ এটা একাডেমিক। এটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনা যতক্ষণ পর্যন্ত সার্বজনীন হবে ততক্ষণ এটা নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে লেখা বা প্রচার সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমার কাছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা আপত্তিকর এবং নোংরামি বলে বিবেচিত। এটা অন্যের কাছে মনে নাও হতে পারে। আমাদের কিছু আশ্রয় থাকা দরকার। যেমন সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুল। রাজনীতিতে ভাসানী-বঙ্গবন্ধু। সিনেমায় রাজ্জাক-ববিতা। এ রকম আরো। তার মানে এটা নয় যে, তারা ধোয়া তুলসি পাতা। তবে তাদের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয়ের চেয়ে তাদের কর্মটাই বড়। সেটিই আলোচনার মূল জায়গা।
- See more at: http://www.priyo.com/blog/2014/05/28/71503.html#sthash.YLkytC42.dpuf
 কুতর্ক বিশ্বজিৎ খুবই কৌশলে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সুশীল পাড়ার গবেষক হিসাবে পরিচিত গোলাম মুরশিদ গত বছর বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে নিয়ে কুকথা বলেছিলেন, তার সাথে এর এক যোগসূত্র আছে।
গোলামের বিচার হয়নি বলে বিশ্বজিৎ সাহসটা করলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে দেশে নজরুল জাতীয় কবির মর্যাদায় আসীন; সে দেশে এমন নোংরামি সরকার মেনে নিচ্ছে, সেটাও একটা জিজ্ঞাসা হয়ে থাকছে।
আমরা যে কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে জানবো, জানার অফুরন্ত আগ্রহ আমাদের আছে। কিন্তু বিশেষ কোনো এজেন্ডা এখানে হাজির দেখে আমরা ব্যথিত। এগুলো উদ্দেশ্যমূলক, বিকৃত রুচির এবং নোংরা মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।
আমাদের বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত আরেকজন কবি সম্পর্কে কমবেশি বিশ্বজিৎ বা গোলামদের জানা। কিন্তু সে সম্পর্কে তারা লিখেননি বলে আমরা কৃতজ্ঞ্। কারণ কিছু মানুষ আছে তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যাক্তিজীবন নিয়ে উৎসাহ দেখানোটা কোনো কালেই আমার কাছে শোভন মনে হয়নি।
বিশ্বজিৎ ও গোলামরা নজরুলকে ছোট করার যে চেষ্টা করছেন এটা বৃথা। সাহিত্য তার সৃজনশীল, নান্দনিক, সামাজিক ও প্রাসঙ্গিক দিক বিবেচনা করে গৃহিত বা বর্জিত হয় বলে জেনে আসছি। রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য সে বিচারে টিকে গেছে।
নিজেদের নাম ইতিহাসে রাখার অনেক উপায় থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত প্রতিভা ও তাদের সৃনজশীল কর্মের বিষবাষ্প ছড়ানোর যে সুক্ষ কৌশল মতলবাজ মিডিয়া নিয়েছে, সেজন্য আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।
এককালে মোল্লারা নজরুলকে বর্জন করেছিল। বলেছিল কাফির। এখন কথিত জ্ঞানীরা, যাদের পাপের চৌহদ্দির মাপতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা লাগবে। সে সব লোক নজরুলের মত লোককে নিয়ে কথা বলে!
নারগিসকে নিয়ে আলাপ হতেই পারে। সেটি নিয়ে আপত্তি করার কিছু নাই। কিন্তু সাধারণের বাইরের প্রতিভাতের জন্ম বা মৃত্যু দিবস ঘিরে এ নিয়ে আলোচনাটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
গত বছর বাংলা একাডেমিতে গোলাম নারগিস এবং প্রমীলাকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছে। এর কিছু অংশ প্রেস রিলিজ করে একাডেমি থেকে ছাড়াও হয়। কিন্তু সম্বাদিকরা নিজ দায়িত্বে ওই অংশটুকু ছাটাই করেন।
এবার বিশ্ব যে কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন- নজরুল কথা দিযে কথা না রেখে আবার দরদীয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তিনি হাজির করেন নি।
ধরে নিলাম এ কথাটা সত্য। কিন্তু এ সত্যটা তার জন্মদিন ঘিরে উৎসব আয়োজনে কতটা প্রকাশ যোগ্য।
আমরা কী কখনো রবীন্দ্র প্রেমিকা আন্নাকে নিয়ে কোনো লেখা দেখেছি। কাজী আনোয়ার হোসেন , যিনি মাসুদ রানার জনক। তার সম্পাদিত ঐতিহাসিক প্রেমপত্র থেকে যেটি জানা সেটি হলো, আন্নার প্রেম কখনোই ভুলতেই পারেননি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু পিতার বন্ধুর ঘর ত্যাগের পর রবীন্দ্রনাথ কী তার খবর নিয়েছেন? তবে কাজী আনোয়ারের বইয়ের সূত্র মতে, রবীন্রদ্রনাথ বলেছিলেন , তাকে নিয়ে কোনো জাদুঘর হলে সেখানে যেনো আন্নার চিঠিটা থাকে। কিন্তু তার সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল এ সব আলোচনা কতটা রুচিকর।
আমার মনে হয় রবীন্দ্র নজরুল বা জীবনানন্দ; শহীদুল্লাহ কিম্বা শামসুর রাহমানদের জীবনের এ সব দিক নিয়ে আলোচনাটা পাবলিকলি হওয়ার বিষয় নয়্ এটা একাডেমিক। এটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনা যতক্ষণ পর্যন্ত সার্বজনীন হবে ততক্ষণ এটা নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে লেখা বা প্রচার সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমার কাছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা আপত্তিকর এবং নোংরামি বলে বিবেচিত। এটা অন্যের কাছে মনে নাও হতে পারে। আমাদের কিছু আশ্রয় থাকা দরকার। যেমন সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুল। রাজনীতিতে ভাসানী-বঙ্গবন্ধু। সিনেমায় রাজ্জাক-ববিতা। এ রকম আরো। তার মানে এটা নয় যে, তারা ধোয়া তুলসি পাতা। তবে তাদের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয়ের চেয়ে তাদের কর্মটাই বড়। সেটিই আলোচনার মূল জায়গা।
- See more at: http://www.priyo.com/blog/2014/05/28/71503.html#sthash.YLkytC42.dpuf
যে কুতর্ক বিশ্বজিৎ খুবই কৌশলে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সুশীল পাড়ার গবেষক হিসাবে পরিচিত গোলাম মুরশিদ গত বছর বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে নিয়ে কুকথা বলেছিলেন, তার সাথে এর এক যোগসূত্র আছে।
গোলামের বিচার হয়নি বলে বিশ্বজিৎ সাহসটা করলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে দেশে নজরুল জাতীয় কবির মর্যাদায় আসীন; সে দেশে এমন নোংরামি সরকার মেনে নিচ্ছে, সেটাও একটা জিজ্ঞাসা হয়ে থাকছে।
আমরা যে কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে জানবো, জানার অফুরন্ত আগ্রহ আমাদের আছে। কিন্তু বিশেষ কোনো এজেন্ডা এখানে হাজির দেখে আমরা ব্যথিত। এগুলো উদ্দেশ্যমূলক, বিকৃত রুচির এবং নোংরা মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।
আমাদের বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত আরেকজন কবি সম্পর্কে কমবেশি বিশ্বজিৎ বা গোলামদের জানা। কিন্তু সে সম্পর্কে তারা লিখেননি বলে আমরা কৃতজ্ঞ্। কারণ কিছু মানুষ আছে তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যাক্তিজীবন নিয়ে উৎসাহ দেখানোটা কোনো কালেই আমার কাছে শোভন মনে হয়নি।
বিশ্বজিৎ ও গোলামরা নজরুলকে ছোট করার যে চেষ্টা করছেন এটা বৃথা। সাহিত্য তার সৃজনশীল, নান্দনিক, সামাজিক ও প্রাসঙ্গিক দিক বিবেচনা করে গৃহিত বা বর্জিত হয় বলে জেনে আসছি। রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য সে বিচারে টিকে গেছে।
নিজেদের নাম ইতিহাসে রাখার অনেক উপায় থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত প্রতিভা ও তাদের সৃনজশীল কর্মের বিষবাষ্প ছড়ানোর যে সুক্ষ কৌশল মতলবাজ মিডিয়া নিয়েছে, সেজন্য আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।
এককালে মোল্লারা নজরুলকে বর্জন করেছিল। বলেছিল কাফির। এখন কথিত জ্ঞানীরা, যাদের পাপের চৌহদ্দির মাপতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা লাগবে। সে সব লোক নজরুলের মত লোককে নিয়ে কথা বলে!
নারগিসকে নিয়ে আলাপ হতেই পারে। সেটি নিয়ে আপত্তি করার কিছু নাই। কিন্তু সাধারণের বাইরের প্রতিভাতের জন্ম বা মৃত্যু দিবস ঘিরে এ নিয়ে আলোচনাটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
গত বছর বাংলা একাডেমিতে গোলাম নারগিস এবং প্রমীলাকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছে। এর কিছু অংশ প্রেস রিলিজ করে একাডেমি থেকে ছাড়াও হয়। কিন্তু সম্বাদিকরা নিজ দায়িত্বে ওই অংশটুকু ছাটাই করেন।
এবার বিশ্ব যে কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন- নজরুল কথা দিযে কথা না রেখে আবার দরদীয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তিনি হাজির করেন নি।
ধরে নিলাম এ কথাটা সত্য। কিন্তু এ সত্যটা তার জন্মদিন ঘিরে উৎসব আয়োজনে কতটা প্রকাশ যোগ্য।
আমরা কী কখনো রবীন্দ্র প্রেমিকা আন্নাকে নিয়ে কোনো লেখা দেখেছি। কাজী আনোয়ার হোসেন , যিনি মাসুদ রানার জনক। তার সম্পাদিত ঐতিহাসিক প্রেমপত্র থেকে যেটি জানা সেটি হলো, আন্নার প্রেম কখনোই ভুলতেই পারেননি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু পিতার বন্ধুর ঘর ত্যাগের পর রবীন্দ্রনাথ কী তার খবর নিয়েছেন? তবে কাজী আনোয়ারের বইয়ের সূত্র মতে, রবীন্রদ্রনাথ বলেছিলেন , তাকে নিয়ে কোনো জাদুঘর হলে সেখানে যেনো আন্নার চিঠিটা থাকে। কিন্তু তার সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল এ সব আলোচনা কতটা রুচিকর।
আমার মনে হয় রবীন্দ্র নজরুল বা জীবনানন্দ; শহীদুল্লাহ কিম্বা শামসুর রাহমানদের জীবনের এ সব দিক নিয়ে আলোচনাটা পাবলিকলি হওয়ার বিষয় নয়্ এটা একাডেমিক। এটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনা যতক্ষণ পর্যন্ত সার্বজনীন হবে ততক্ষণ এটা নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে লেখা বা প্রচার সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমার কাছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা আপত্তিকর এবং নোংরামি বলে বিবেচিত। এটা অন্যের কাছে মনে নাও হতে পারে। আমাদের কিছু আশ্রয় থাকা দরকার। যেমন সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুল। রাজনীতিতে ভাসানী-বঙ্গবন্ধু। সিনেমায় রাজ্জাক-ববিতা। এ রকম আরো। তার মানে এটা নয় যে, তারা ধোয়া তুলসি পাতা। তবে তাদের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয়ের চেয়ে তাদের কর্মটাই বড়। সেটিই আলোচনার মূল জায়গা।
- See more at: http://www.priyo.com/blog/2014/05/28/71503.html#sthash.YLkytC42.dpuf
যে কুতর্ক বিশ্বজিৎ খুবই কৌশলে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সুশীল পাড়ার গবেষক হিসাবে পরিচিত গোলাম মুরশিদ গত বছর বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে নিয়ে কুকথা বলেছিলেন, তার সাথে এর এক যোগসূত্র আছে।
গোলামের বিচার হয়নি বলে বিশ্বজিৎ সাহসটা করলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে দেশে নজরুল জাতীয় কবির মর্যাদায় আসীন; সে দেশে এমন নোংরামি সরকার মেনে নিচ্ছে, সেটাও একটা জিজ্ঞাসা হয়ে থাকছে।
আমরা যে কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে জানবো, জানার অফুরন্ত আগ্রহ আমাদের আছে। কিন্তু বিশেষ কোনো এজেন্ডা এখানে হাজির দেখে আমরা ব্যথিত। এগুলো উদ্দেশ্যমূলক, বিকৃত রুচির এবং নোংরা মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।
আমাদের বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত আরেকজন কবি সম্পর্কে কমবেশি বিশ্বজিৎ বা গোলামদের জানা। কিন্তু সে সম্পর্কে তারা লিখেননি বলে আমরা কৃতজ্ঞ্। কারণ কিছু মানুষ আছে তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যাক্তিজীবন নিয়ে উৎসাহ দেখানোটা কোনো কালেই আমার কাছে শোভন মনে হয়নি।
বিশ্বজিৎ ও গোলামরা নজরুলকে ছোট করার যে চেষ্টা করছেন এটা বৃথা। সাহিত্য তার সৃজনশীল, নান্দনিক, সামাজিক ও প্রাসঙ্গিক দিক বিবেচনা করে গৃহিত বা বর্জিত হয় বলে জেনে আসছি। রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য সে বিচারে টিকে গেছে।
নিজেদের নাম ইতিহাসে রাখার অনেক উপায় থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত প্রতিভা ও তাদের সৃনজশীল কর্মের বিষবাষ্প ছড়ানোর যে সুক্ষ কৌশল মতলবাজ মিডিয়া নিয়েছে, সেজন্য আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।
এককালে মোল্লারা নজরুলকে বর্জন করেছিল। বলেছিল কাফির। এখন কথিত জ্ঞানীরা, যাদের পাপের চৌহদ্দির মাপতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা লাগবে। সে সব লোক নজরুলের মত লোককে নিয়ে কথা বলে!
নারগিসকে নিয়ে আলাপ হতেই পারে। সেটি নিয়ে আপত্তি করার কিছু নাই। কিন্তু সাধারণের বাইরের প্রতিভাতের জন্ম বা মৃত্যু দিবস ঘিরে এ নিয়ে আলোচনাটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
গত বছর বাংলা একাডেমিতে গোলাম নারগিস এবং প্রমীলাকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছে। এর কিছু অংশ প্রেস রিলিজ করে একাডেমি থেকে ছাড়াও হয়। কিন্তু সম্বাদিকরা নিজ দায়িত্বে ওই অংশটুকু ছাটাই করেন।
এবার বিশ্ব যে কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন- নজরুল কথা দিযে কথা না রেখে আবার দরদীয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তিনি হাজির করেন নি।
ধরে নিলাম এ কথাটা সত্য। কিন্তু এ সত্যটা তার জন্মদিন ঘিরে উৎসব আয়োজনে কতটা প্রকাশ যোগ্য।
আমরা কী কখনো রবীন্দ্র প্রেমিকা আন্নাকে নিয়ে কোনো লেখা দেখেছি। কাজী আনোয়ার হোসেন , যিনি মাসুদ রানার জনক। তার সম্পাদিত ঐতিহাসিক প্রেমপত্র থেকে যেটি জানা সেটি হলো, আন্নার প্রেম কখনোই ভুলতেই পারেননি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু পিতার বন্ধুর ঘর ত্যাগের পর রবীন্দ্রনাথ কী তার খবর নিয়েছেন? তবে কাজী আনোয়ারের বইয়ের সূত্র মতে, রবীন্রদ্রনাথ বলেছিলেন , তাকে নিয়ে কোনো জাদুঘর হলে সেখানে যেনো আন্নার চিঠিটা থাকে। কিন্তু তার সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল এ সব আলোচনা কতটা রুচিকর।
আমার মনে হয় রবীন্দ্র নজরুল বা জীবনানন্দ; শহীদুল্লাহ কিম্বা শামসুর রাহমানদের জীবনের এ সব দিক নিয়ে আলোচনাটা পাবলিকলি হওয়ার বিষয় নয়্ এটা একাডেমিক। এটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনা যতক্ষণ পর্যন্ত সার্বজনীন হবে ততক্ষণ এটা নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে লেখা বা প্রচার সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমার কাছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা আপত্তিকর এবং নোংরামি বলে বিবেচিত। এটা অন্যের কাছে মনে নাও হতে পারে। আমাদের কিছু আশ্রয় থাকা দরকার। যেমন সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুল। রাজনীতিতে ভাসানী-বঙ্গবন্ধু। সিনেমায় রাজ্জাক-ববিতা। এ রকম আরো। তার মানে এটা নয় যে, তারা ধোয়া তুলসি পাতা। তবে তাদের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয়ের চেয়ে তাদের কর্মটাই বড়। সেটিই আলোচনার মূল জায়গা।
- See more at: http://www.priyo.com/blog/2014/05/28/71503.html#sthash.YLky


যে কুতর্ক বিশ্বজি খুবই কৌশলে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সুশীল পাড়ার গবেষক হিসাবে পরিচিত গোলাম মুরশিদ গত বছর বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে নিয়ে কুকথা বলেছিলেন, তার সাথে এর এক যোগসূত্র আছে।

গোলামের বিচার হয়নি বলে বিশ্বজি সাহসটা করলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে দেশে নজরুল জাতীয় কবির মর্যাদায় আসীন; সে দেশে এমন নোংরামি সরকার মেনে নিচ্ছে, সেটাও একটা জিজ্ঞাসা হয়ে থাকছে।
 
আমরা যে কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে জানবো, জানার অফুরন্ত আগ্রহ আমাদের আছে। কিন্তু বিশ কোনো এজেন্ডা এখানে হাজির দেখে আমরা ব্যথিত। এগুলো উদ্দেশ্যমূলক, বিকৃত রুচির এবং নোংরা মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।

আমাদের বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত আরেকজন কবি সম্পর্কে কমবেশি বিশ্বজি বা গোলামদের জানা। কিন্তু সে সম্পর্কে তারা লিখেননি বলে আমরা কৃতজ্ঞ্। কারণ কিছু মানুষ আছে তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যাক্তিজীবন নিয়ে ৎসাহ দেখানোটা কোনো কালেই আমার কাছে শোভন মনে হয়নি।
 
বিশ্বজি গোলামরা নজরুলকে ছোট করার যে চেষ্টা করছেন এটা বৃথা। সাহিত্য তার সৃজনশীল, নান্দনিক, সামাজিক প্রাসঙ্গিক দিক বিবেচনা করে গৃহিত বা বর্জিত হয় বলে জেনে আসছি। রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য সে বিচারে টিকে গেছে।
 
নিজেদের নাম ইতিহাসে রাখার অনেক উপায় থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত প্রতিভা তাদের সৃনজশীল কর্মের বিষবাষ্প ছড়ানোর যে সুক্ষ কৌশল মতলবাজ মিডিয়া নিয়েছে, সেজন্য আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।
 
এককালে মোল্লারা নজরুলকে বর্জন করেছিল। বলেছিল কাফির। এখন কথিত জ্ঞানীরা, যাদের পাপের চৌহদ্দির মাপতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা লাগবে। সে সব লোক নজরুলের মত লোককে নিয়ে কথা বলে!

নারগিসকে নিয়ে আলাপ হতেই পারে। সেটি নিয়ে আপত্তি করার কিছু নাই। কিন্তু সাধারণের বাইরের প্রতিভাতের জন্ম বা মৃত্যু দিবস ঘিরে নিয়ে আলোচনাটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
 
গত বছর বাংলা একাডেমিতে গোলাম নারগিস এবং প্রমীলাকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছে। এর কিছু অংশ প্রেস রিলিজ করে একাডেমি থেকে ছাড়াও হয়। কিন্তু সম্বাদিকরা নিজ দায়িত্বে ওই অংশটুকু ছাটাই করেন।

এবার বিশ যে কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন- নজরুল কথা দিযে কথা না রেখে আবার দরদীয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তিনি হাজির করেন নি।
ধরে নিলাম কথাটা সত্য। কিন্তু সত্যটা তার জন্মদিন ঘিরে ৎসব আয়োজনে কতটা প্রকাশ যোগ্য।
 
আমরা কী কখনো রবীন্দ্র প্রেমিকা আন্নাকে নিয়ে কোনো লেখা দেখেছি। কাজী আনোয়ার হোসেন , যিনি মাসুদ রানার জনক। তার সম্পাদিত ঐতিহাসিক প্রেমপত্র থেকে যেটি জানা সেটি হলো, আন্নার প্রেম কখনোই ভুলতেই পারেননি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু পিতার বন্ধুর ঘর ত্যাগের পর রবীন্দ্রনাথ কী তার খবর নিয়েছেন? তবে কাজী আনোয়ারের বইয়ের সূত্র মতে, রবীন্রদ্রনাথ বলেছিলেন , তাকে নিয়ে কোনো জাদুঘর হলে সেখানে যেনো আন্নার চিঠিটা থাকে। কিন্তু তার সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল সব আলোচনা কতটা রুচিকর।
 
আমার মনে হয় রবীন্দ্র নজরুল বা জীবনানন্দ; শহীদুল্লাহ কিম্বা শামসুর রাহমানদের জীবনের সব দিক নিয়ে আলোচনাটা পাবলিকলি হওয়ার বিষয় নয়্ এটা একাডেমিক। এটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনা যতক্ষণ পর্যন্ত সার্বজনীন হবে ততক্ষণ এটা নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে লেখা বা প্রচার সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমার কাছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা আপত্তিকর এবং নোংরামি বলে বিবেচিত। এটা অন্যের কাছে মনে নাও হতে পারে। আমাদের কিছু আশ্রয় থাকা দরকার। যেমন সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুল। রাজনীতিতে ভাসানী-বঙ্গবন্ধু। সিনেমায় রাজ্জাক-ববিতা। রকম আরো। তার মানে এটা নয় যে, তারা ধোয়া তুলসি পাতা। তবে তাদের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয়ের চেয়ে তাদের কর্মটাই বড়। সেটিই আলোচনার মূল জায়গা।