উচ্ছন্নে যাওয়া আমরা; একজন আব্দুল কালাম

যে ক'জন মানুষের বক্তব্য আমাকে মুগ্ধ করেছে তাদের মধ্যে ড. ইউনূস; ফরহাদ মজহার; সলিমুল্লাহ খান; সিরাজুল ইসলাম চৌধূরী এবং অমর্ত্য সেনকে বাদ দিলে ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আবদুল কালাম নিশ্চিতভাবে ড. ইউনূসের পাশপাশি থাকবেন।
তার বক্তব্য, চিন্তার বিস্তৃতি, দর্শন এবং এগিয়ে থাকার চেতনা আমাকে কেবল মুগ্ধ করেননি; ভাবিয়ে তুলেছে - আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য কেমন একটা সমাজ রেখে যাচ্ছি।
শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানেআবদুল কালাম তার বক্তব্যটার শুরুতেই বলছেন, মানুষের বিকাশ তার পরিবার ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার বক্তব্যের পরতে পরতে সৃজনশীলতার কথা। উদ্ভাবনের কথা এবং ব্যবস্থাপনার কথা। লক্ষ্য স্থির করার কথা।
বিস্ময় এবং কষ্ট দুটোই আমাকে আচ্ছন্ন করেছে। আরো বেশি আচ্ছন্ন করেছে ব্যর্থতা। কারণ আমরা আসলে পেছনে পড়ে আছি এবং নিয়তই পেছনে যাবার প্রতিযোগিতা করছি।
আবদুল কালাম বলছেন, বিশ্বের মানুষের সবচেয়ে বড় সঙ্কট হবে গুণগন মা্নসম্পন্ন শিক্ষা ও মূল্যাবোধ। এ জন্য বিশ্বজুড়েই একটা ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে।
আমাদের মত গরিব দেশ; বিশেষ করে ভারত দ্বারা শোষিত দেশ কীভাবে কোমর খাড়া করে দাঁড়াবে; সেটা নিয়ে তার স্পেশাল কোনো কথা তার বক্তব্যে না থাকলেও নিজেদের নিজের জন্য পরিকল্পনা করার কথা বলেছেন।
ধরে নিন পাটের কথা। বিশ্বব্যাংক বলেছে আমদজী বন্ধ করো। আমরা বন্ধ করে দিলাম। আরো অনেক চট কল বন্ধ করে দিযেছি। সেখানেই আব্দুল কালাম আমাদের সম্ভবানার কথা বললেন।
তার কথটা খুব মনে ধরেছে; কেউ বললো আপনি এটা বন্ধ করেন; অমনি আপনি তা বন্ধ করে দিবেন। আপনারা পরিকল্পনা কি? প্রশ্নটা তিনিই করলেন। আসলে বঙ্গ দেশের কারো কোনো পরিকল্পনা নেই।
গানেই তো `যেমনে নাচাও তেমনি নাচাও পুতুলের কি দোষ।' আমরা আসলে পুতুলের মতই।
মূল্যবোধ ও গুণতমত মানসম্পন্ন যে শিক্ষার কথা বলেছেন, আবদুল কালাম; সেটি কী আমাদের আছে। আমাদের সন্তানদের সামনে আমরা নিয়ে হাজির হচ্ছি। সে কি হবে? নাকি তার কী হবে ইচ্ছা। আমরা কোনটিকে প্রধান্য দিচ্ছি।
কিন্তু এ ইচ্ছাটা কীভাবে জন্মায়। সে জন্য ক্ষেত্রে কেমন। দ্রাবিড় কিম্বা চণ্ডাল; আশরাফ কিম্বা আতরফ- যে গ্রোত্র ভুক্তই আমরা হই না কেনো; বৈশ্বিক সঙ্কট থেকে মুক্ত আমরা নই।
বাঙালি সমাজের ঐতিহ্য; মুসলামন কিম্বা হিন্দু; কিম্বা বৌদ্ধ কিম্বা খ্রিস্টানের একটা ধারা; আমরা যে ধর্ম বিশ্ববাসীরা বয়ে চলেছি- সে দিকে নজর দেবার সময় কী আমাদের আছে। চূড়ান্ত বিচারে নেই। আমরা ভারতীয় কিম্বা পশ্চিমা সংস্কৃতি দ্বারা সব সময় প্রভাবিত- নিশ্চতভাবেই এ প্রভাব থাকতে পারে; কিন্তু সেটি বাছ বিচারের জন্য যে দরকারি জিনিসটি দরকার; সেটি আমাদের নেই। তা হলো বিবেক দ্বারা তাড়িত হওয়া।
আমরা বিবেক নয়; ভোগ দ্বারা তাড়িত। যেখানে নীতি নৈতিকতার বালাই নেই; আমরা ধর্ম পালন করতে পারি না কিম্বা বাঙালি সংস্কৃতির লালন করতে পারি না- সে জন্য আমাদের লজ্জিত হবার বদলে অহঙ্কার হয়। আর কথা তো সত্যি অহঙ্কার পতুনের মূল। কেবল কেতাবে পড়েছি; বাস্তবে আমল করছি না।
মন খারাপ হচ্ছিলো কালামের বক্তব্যে- একটা উচ্ছন্নে যাওয়া; নানা রকমের বিভক্তির ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠছে নতুন প্রজন্ম। যাদের দিয়ে আবদুল কালামের থিওরি মেনে বঙ্গদেশের উন্নয়ন হয় না।
তবুও আশায় বুক বাঁধি। আবদুল কালামের বক্তব্যের কিছুটা যদি উপলব্ধি করতে পারি ; তাহলে আমরা টিকে যাবো। নইলে বিশ কোটি কিম্বা তার কিছু কম বেমি লোকের বাজার ছাড়া আমরা কিছুই হতে পারবো না। এখানেই আফসোস।
আসনেনা মাও জে দং; লেলিন, সেক্যুলারিজম; জমায়াত ইসলাম; বাঙালি জাতীয়তাবাদ কিম্বা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের তকমা খুলে চোখটা কচলে দেখুন না; কোথায় দাঁড়িযে আছি। কোথায় যাবার কথা ছিল। পথ কোথায়? ভাবনু।
আবদুল কালামের কথায় বলি আপনার ভিমনটা কি তা ঠিক করুণ। আপনার পকিল্পনা আপনি করুন। আপনি যে ক্ষেত্রে থাকুন না কেনো; হতে পারেন আপনি চাকুরীজীবী; হতে পারেন ব্যবসায়ঢী; কৃষক কিম্বা পলিটিশিয়ান। আপনাকেই আপনার গন্তব্য ঠিক করতে হবে। কেউ তা ঠিক করবে না।

কোন মন্তব্য নেই: