বাংলা সিনেমা যখন ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে সে সময় ঠাডা পড়লো-বাংলাদেশের হলে মুক্তি পাইতে যাচ্ছে হিন্দি সিনামা। মনে বড় কষ্ট নিয়ে এ লেখা লিখছি।-
বাংলা সিনেমার প্রতি আমার প্রচণ্ড টান ছিল এবং এখনো আছে; এটা কারো কাছে হাস্য রসের বিষয় হতে পারে; কারণ তাদের মত হিন্দি ও ইংরাজি সিনেমা দেখে জাতে ওঠার ভাবনা আমার কোনো কালেই ছিল না। এখনো নাই।
বাংলাদেশের সিনেমার প্রতি আমার এ ভীষণ রকমের টানের বড় কারণ আমাদের পরিচালকরা আমাদের সময়কার ঘটনা এবং ভাবনার পরিধি নিয়ে কাজ করেন।
নিম্ন আয়ের দেশ হিসাবে আমাদের চাওয়া দু মুঠো ভাত, মোটা নারী, আর বৈকালিক বিনুদন হিসাবে চা সিগারেট কিম্বা ছোলাই মদ। আর আমার নিজের চেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা মানুষকে ফাঁপর দেয়া। এ সবই সিনেমার অনুষঙ্গ।
তাই এখানে যখন নায়ক মান্না ওই খামোস বলে হাত মুঠো করেন; তার ভয়ে গডফাদার চুপসে যায়; তখন করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে সিনেমা হলঘর।
অথবা চটুলগানের সাথে যখন পপি তার বিশলাকায় রানের দুলুনি তে সনিমোর পর্দা কাঁপিয়ে তোলেন তখন সবাই হিসহাস করেন।
সেই সিনেমা হলে নিশ্চিতভাবেই কখনো কখনো ময়ুরীর উদোম রানের গোশতের থর থর কাঁপন, মুনমুনের মধ্যম আকৃতির বুকের দুলুনি, স্লো মোশনে খল নায়িকা নাগমার ফুলে ওঠা বুকের ওপর অ্যাকশন কারো কারো কাছে অশ্লীল-চোখ বন্ধ হয়ে আসে।
কারো কাছে বমির ভাব হয় আজাদ খানের সিনেমা দেখলে। কারো সোহেল-শাপলা শারিরীক বিত্তবলয় খ্রাপ লাগে। আমি অস্বীকার করছি না।
ভালো সিনামাও এ বঙ্গে হয়েছে; হয়ে আসছে এবং সামনেও হবে। হয়ত আমাদের ধুম থ্রি'র মত সিনেমা বানানো কিম্বা গুণ্ডের মত তর্ক সৃষ্টি করে টিকে থাকার মত শক্তি এ দেশের নির্মাতাদের নেই।
তবে এ টুকু তো আছে যে গেরিলা, ব্যাচেলর কিম্বা অগ্নির মত সিনেমার জয় হয়েছে। ওরা ১১ জনের মত সিনেমা কেবল আমাদের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেনি চলচ্চিত্র ইিতিহাসে বিষয় বৈচিত্রে এক অনন্য সংযোজন নিয়ে এসেছে।
বেদের মেয়ে জোছনা কিম্বা হাঙর নদীর গ্রেনেড, অথবা মাটির ময়না কি আমাদের সম্মান বাড়ায় নি।
সিনেমা হলগুলোতে আমরা খুবই খ্রাপ পরিস্থিতির কথা বলি। বলি ভালো সিনেমা হচ্ছে না। ইনডিয়ার ভালো সিনামা বানায়; আমি দ্বিমত করি না। আবার পুরোপুরি একমতও হই না।
কারণ ইনডিয়ার বহু সিনেমা আছে যে গুলো হলিউডের সিনেমার কাহিনী নকল। আমরা নকল করি হিন্দি সিনামা কিন্তু মৌলিক কাহিনী চলমান সঙ্কট নিয়ে সিনামা হচ্ছে। সবশেষে পিপড়াবিদ্যার কথাই ধরুন। নাটক কিম্বা সিনামা হয়েছে কিনা তা নিয়ে তর্ক হতে পারে; কিন্তু সিনামার গল্পটা একেবারেই সমসাময়িক এবং প্রাসঙ্গিক।
ইনডিয়া সিনামার বাণিজ্যিক প্রসারে যে পরিমাণ বিনিয়োগ ও প্রচার যন্ত্র ব্যবহার করে বাংলাদেশে তা হয় না। বাংরাদেশের প্রচার মাধ্যমের সাপ্তাহিক দু পৃষ্ঠার এক পৃষ্ঠা ইনডিয়ার জন্য বরাদ্দ থাকে।
ডিজিটাল সরকারের ৭ বছরেও ডিজিটাল ইকুইপমেন্ট আসেনি এফডিসিতে। হলফ করে বলছি আমরা এখানে সিনামা শিল্পকে গলা টিপে হত্যা করতে চাই। সে জন্য আজকের এ হাল।
এখানে সসিনেমা নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য ইন্সটিটিউট ও ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট খোলা শুরু হয়েছে; মাত্র। এখানকার পরিচালকরা অন্যের সহকারি থেকে শিখেছে। কয়েকজন ইনডিয়া ও আম্রিকা থেকে পড়ে এসেছেন।
নায়ক-নায়িকারা তাদের সুরত ভাল- সেটি কাজে লাগিয়ে সিনেমায় নেমেছেন।
এত সব প্রতিকূলতায় দেশে অন্তত ২০/২৫ টি ভালো সিনেমা হয়, সে জন্য নির্মাতাদের সম্মান জানানো উচিৎ।
আমাদের নায়িকারা যখন সিনেমায় পা রাখেন-তখন প্রযোজকরা তাকে বেডে ডাকেন, নায়ক তার জন্য উতলা থাকেন। এটা হয়তো সবখানেই হয়। হতে পারে; তাতে কি। কিন্তু সানি লিওনের মত পর্ন স্টারকেও ইনডিয়া বাজারজাত করতে পেরেছে। ক্যাটরিনা, দীপিকা কিম্বা রানীর কথা ভাবুন না। ঐশ্বরিয়ার কথা বাদই দিলাম। তাকে নিয়ে আমাদের তরুণদের আগ্রহ নিশ্চিতভাবেই সবই বুঝতে পারে না।
এমনকি ভারতীয় নায়ক শাহরুখ, সালমান, জন, ইমরান, হৃতিক- বা আরো যারা আছেন। তাতেদর জন্য আমাদের অনেতক তরুণীর জীবন যায় যৌবন ভেসে যায়। এ জন্য আমি আমাদের তরুণ-তরুণীদের দোষ দিই না; কারণ আমরা আমাদের চেনাতে পারিনি।
ববিতার মত নায়িক এ দেশের পর্দা কাঁপাননি বিশ্ব দরবারে বাংলা সিনামার সমৃদ্ধির কথা জানিয়ে দিয়েছেন। সে সব নায়িকাকেও এ দেশের ক্ষমতাবানদের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল।
সিনামা কি কেবলই বাণিজ্য? মনে হয় না। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যবসায়িকভাবে সফলতা অর্জনের জণ্য লড়াইটা বেশি। কারণ এখাতে সরকারের সহযোগিতা কিছু আর্ট ফিলিফেমের জন্য। বাণিজ্যিক সিনেমায় সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করে না। উল্টো সুন্দরী নায়িকার ডাক পড়ে সেন্সর বোর্ড সদস্যের বেড রুমে-এ গুলো ওপেন সিক্রেট।
একটা বড় রকমের গুণ্ডামি ঘিরে রেখেছে সিনামা। সেই সুযোগটা নিয়েছে প্রদর্শকরা। যে সব প্রদর্শক তাদের হলগুলোতে অশ্লীল কাটপিস দেখিয়ে পরিবেশ নষ্ট করেছেন, সিনেমা দেখার জন্য সঙ্গীনীর সহায়তার নামে বেশ্যার বাজার তৈরি করেছেন; ধীর লয়ে তারাই বলছেন হল টিকিয়ে রাখতে হলে এখন হিন্দি সিনেমার বিকল্প নেই।
বড় আফসোস-বঙ্গবন্দূ কন্যা এখন ক্ষমতায়। অথচ বঙ্গবন্ধু নিজ হাতেই এ দেশে উপমহাদেশীয় সিনেমা আমদানি প্রদর্শণ নিষিদ্ধ করেছিলন। সেটি রক্ষা হলো না। শুক্কুরবার হিন্দি সিনামা ওয়াটডেট মুক্তি পাচ্ছে।
যারা আমাদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে গিয়ে ভারতীয় বাণিজ্যিক অশ্লীলতাকে শিল্প বলে চালাতে চান তাদের সাথে বাৎচিৎ করার মত ইচ্ছে আমার নেই।
তবে দেশের সনেমা শিল্পকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে একসাথে একমত হয়ে একই আওয়াজ তুলতে হবে। সময় এখন নিজের সিনেমাকে প্রটেক্ট করার। জয় হোক সবার। জয় হোক বাংলাদেশের সিনেমার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন