যৌন হয়রানির ক্যাম্পাসটি আমার!

এ আমার ক্যাম্পাস! তব্দ হয়ে গেলাম। নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এ ক্যাম্পাসে নোংরা মনোবৃত্তির লোকরা আসে; নির্বিঘ্নে কুকর্ম করে সরে যায়। কখনোই তারা বিচারের আওতায় আসে না।
এর দোষ--- ওর দোষ করে শেষ পর্যন্ত শুয়রের বাচ্চাগুলোর চেহারা সিনহা বাবুর এজলাসে ওঠে না। আফসোস আরেফিস স্যার- - এখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি।
এ আমার বিশ্ববিদ্যালয়- এ আমার অহঙ্কারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়!
আরেফিন স্যারের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’টো নোংরা ঘটনা বিশালাকারে হয়েছে। ২০১০ রাজু স্মৃতি ভাস্কর্যের সামনে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন কুড়িজন নারী। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এর অভিযোগও উঠেছিল- কিন্তু আরেফিন স্যার এখানেও ব্যর্থ। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে এক সময়কার নৈতিকভাবে স্ট্রং শিক্ষককে দেখলাম--- কেমন যেনো মিইয়ে যাচ্ছেন।লুটিয়ে পড়ছেন ক্ষমতার পদতলে। ক্ষমতা তুমি এত মোহনীয় কেনো!
চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ আরেফিন স্যার যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাণ্ডারি; তখন ২০১৫ সালের বৈশাখেও সেই একই কলঙ্ক। সেই একই স্থানে ঘটলো- নারীর প্রতি সহিংসতা। ঠেকাতে গিয়ে আহত ছাত্রইউনিয়ন নেতা লিটন। কুড়ি জন নারী আবারো লাঞ্ছিত হলে পশুত্বের আদিমতার নোংরা উল্লাসের কাছে।
অথচ ক্যাম্পাসে রেকর্ড পরিমান নারীর প্রতি সহিংসতার পরেও প্রগতিশীলতার দাবিদার কিছু শিক্ষক আরেফিন স্যারের রেফারেন্স লাগিয়ে সিভি বানিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতার মন্ত্র বেচেন, এখানে ও খানে কতখানে সেমিনারে গিয়ে আলাপ করেন; টেকি দুনিয়াতেও তাদের ব্যাপক দেখা মেলে- কিন্তু নিজের ক্যাম্পাসে নারীর সুরক্ষায় এদের কোনো ভূমিকা নেই।
এরা আসলে মানুষ নয়; পা দুটো ঠিকই আছে। জবানও আছে। বাট এ সব বিক্রি হয়ে গ্যাছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নারীর প্রতি সহিংসতার খবর নতুন নয়। যৌন হয়রানি এখানে নিত্যকার ঘটনা।
ভাবলেই ঘেন্ন লাগে। কিন্তু সেই ঘেণ্নার কথা কাউকে বলতে পারি না। এতো আমারই ক্যাম্পাস। আমার রক্তে শিরা উপশিরায় এ ক্যাম্পাসের অনুভূতি। তাই এটাকে আমি অস্বীকার করতে পারি না। আমি এটা স্বীকার করে নিয়েই বলছি এ সব শুয়রের বাচ্চাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে--- যারা নারী দেখলেই হামলে পড়ে তাদের পক্ষে কারো অবস্থান থাকতে পারে না।
নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়--- এখানে নারীর পণ্য হিসাবে ভোগের সামগ্র বিবেচনা করে কিছু মানুষ নামের পশূ তাদের পশূত্ব ক্ষমতাকে উপভোগ করছে। আবার তারায় নাকি নারী স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। তবে একটা প্রশ্ন মনে আসে এ রকম ভোগের জন্যই কি এমন স্বাধীনতার ঘোষনা।
তাহলে আমি সেই স্বাধীনতার বিরোধী।
আমার দেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয ক্যাম্পাসে প্রথম নারী নিপীড়নের প্রকাশ্য ঘটনা--- টিএসটি চত্বরে। একুশ শতক বরণ করে নেবার প্রথম প্রহরে বাধনকে ন্যাংটা করা হলো। কারা করেছে---স সেটা নিশ্চয় কারো অজানা নয়।
বিচার?
হয়নি। হবেও না। এটা তামাদি। সে সময়কার ভিসি আজাদ চৌধূরী স্যার এখন মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান।
বিম্পির আমলে শামসুন্নাহার হলে পুলিশ ঢুকেছে- সে ঘটনায় শাস্তি হয়েছে । তবে সেটা আমার মনে হয়- আরো বেশি হতে পারতো। ভিসি, প্রক্টরের বিদায় নয়--- তাদের আরো দণ্ড দেয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু মামলা হয়নি; তাই ট্রায়ালাও হয়নি। শাস্তি বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব যে গণ্ডি --- সেটুকু।
সেনা সমর্থিত মইন ফখরের সময়ও ক্যাম্পাসে যৌন হয়রানি হয়েছে।
তবে আম্লীগের আমলে এটা এতটা বেড়েছে- বলে বোঝানোর উপায় নেই। আম্লীগের সহযোগি সংগঠন ছাত্রলীগের একজন নেত্রী নিজেও নিপীড়নের স্বীকার হয়েছিলেন বলে খবরে পড়েছি।
বিবিসি বাংলা গত বছরের রিপোর্ট
এক বছরে অন্তত ২০ জন নারী ক্যাম্পাসে যৌন হয়রানির স্বীকার হয়েছেন।
২০১৫ সালের বৈশাখেও একই হাল।
এ সব যৌনে হয়রানি 'অপরাধ' হতো যদি বিপরীত মতের সরকার ক্ষমতায় থাকতো। যেহেতু এখন সমমনা সরকার ক্ষমতায় তাই তা অপরাধ নয়। এটা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি।

আসলে আমরা নিজেরা আক্রান্ত হবার আগ পর্য ন্ত বুঝিনা কত খ্রাপ অবস্থা।
এ লেখা কারো সংশোধনের জন্য নয়--। কয়লা ধুইলে যায় না ময়লা। এটা একজন বিক্ষুব্ধ মানুষের আওয়াজ মাত্র!

কোন মন্তব্য নেই: