যৌন হয়রানির জন্য সরকার ঠেইলা ফালায়া দিবেন !

আরে ভাই আপনারা কি যৌন হয়রানির জন্য সরকার ঠেইলা ফালায়া দিবেন নাকি।   অফ যান; নইলে ---যৌন হয়রানি এ ক্যাম্পাসে নতুন না।

তবে এবারের দলিলটা  শক্ত---ছাত্র ইউনিয়নের লিটন নন্দী ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। প্রভাবশালী পত্রিকায় খবর হয়েছে---তাই এ সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে-- ঘটনা আমলে নিয়েছে পুলিশ ।

২০১০ সালে রাজু স্মৃতি ভাস্কর্যের সামনে কুড়ি জনের মত নারী চরমভাবে লাঞ্ছিত ও আরো অনেকে যৌন হয়রানির  ঘটনার পর খবরটি একামাত্র দৈনিক নয়া দিগন্ত---প্রকাশ করেছিল। সম্ভবত বিপরীত মতের পত্রিকার খবরটির উদ্দেশ্য ধরে নেয়া হয়েছিল---' নারীরা যাতে বৈশাখের উৎসবে না বের হন; তার একটা চক্রান্ত।' হিসাবে।

এবার সোস্যাল মিডিয়া, ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণ এবং প্রভাবশালী মিডিয়ার নজরে আসায় বিচারের দাবিতে সোচ্চার--- আমরা সবাই । সাধারণত এ সব ঘটনা  এড়িয়ে  যেতে এবং নারীদের ওপর দোষ চাপিয়ে বিকৃত আনন্দ পেতে পছন্দ বেশির ভাগ লোকের!  তবে এবারের এ প্রতিবাদমুখরতা--- কোনো অর্থেই কম প্রাপ্তি নয়।

তবে ২০০০, ২০১০ সালের ঘটনাকে আমলে নিলে এবারের বিপর্যয় এড়ানো যেতো বলে  মনে করি।

 যে কোনো ঘটনার পর পরই তা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিৎ। যদি সে খবর ভিত্তিহীন হয় তাহলে সেই গণমাধ্যমকে  অভিযুক্ত করে শাস্তিও দেয়া যেতে পারে।

 কিন্তু খবর এড়িয়ে যেতে যেতে একব সময় যখন  নিজের ঘাঁড়ে এসে পড়ে তদ্দিনে ক্যান্সার আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত তরুণরা ডেট করে নামে যে যৌনতায় জড়িয়ে ক্যাম্পাসে সুনাম হানি করছিল--- ছাত্রীরা বিব্রত হচ্ছিল--- তারা এ নিয়ে হল প্রভোস্টদের কাছে অভিযোগ করার পর একাডেমিক কমিটি ও সিন্ডিকেট বৈঠকে আলোচনার পর একটা সিদ্ধান্তে আসে--- ক্যাম্পাসে বহিরাগত যুগলদের দেখা গেলে তুলে দেয়া হবে। এর একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও দেয় কর্তৃপক্ষ--- সেটি  সে সময়  মানব জমিন রিপোর্ট করে। এর কাউন্টারে বিবিবি বাংলা রিপোর্ট করেছিল--- একজন ছাত্রীর মুখ দিয়ে বলিয়েছিল--- এটা মাদ্রসা না।

আসলে তো তাই এটা মাদ্রাসা না। আবার এটাও তো ঠিক এটা বহিরাগতদের  ডেটিং স্পট না। ক্যাম্পাস  তার নিজস্ব জনগোষ্ঠীর জন্য। বহিরাগতরা এখানে কেনো আড্ডা জমাবেন--- এমন আড্ডা  যা তার পরিবারও পছন্দ করছে না।

ভালো কথা--- কিন্তু স্বেচ্ছা যৌন সুখ  এবং জবর দস্তিমূলক হয়রানির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে--- সেটি আমরা জানি।

তাহলে আমরা কি এ যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশনের শুরুটা ২০০০ সালের শতাব্দী বরণ উৎসবে বাঁধনের কাপড় খুলে নেবার পর করতে পারতাম না। পারতাম--- আমরা করিনি। কারণ  আমরা ধরে নিয়েছি--- একটা মেয়ে রাত ১২ টার পরে টিএসসিতে আসবে কেনো--- তাই এ পরিণতি গ্রহণযোগ্য।

তার উপর এর অভিযোগের তীর ছিল সরকার দলীয় ছাত্র সংঘটনের বিরুদ্ধে। সে সময়কার পত্রিকার খবর অনুযায়ী  এটি আমাদের বিজ্ঞানের ছাত্ররা থাকেন-- সে সব হলের ছাত্রদের কাণ্ড!

২০০০ সালের সেই রাতের প্রত্যক্ষদর্শী  আমরা কয়েক বন্ধু। আমার এখনো মনে আছে নিউ ইয়ারের এ সব আয়োজনে নারী দেখলে শুকুনের মত কিভাবে  'প্রগতিশীল' পুরুষেরা হামলে পড়ে---আমরা বন্ধুরা মিলে রোকেয়া হলের এক ছাত্রীকে উদ্ধার করতে গিয়ে সেটা টের পেয়েছিলাম।

রাত সাড়ে আটটার দিকে রিকশায় করে এক ছাত্রী ক্যাম্পাসে ফিরছিলো--- উৎসব উচ্ছ্বাস সবে জমতে শুরু করেছে। মেয়েটির পেছনে ছুটছে অনেকে। রিকশার উপর দাঁড়িয়ে মেয়েটি সাহসের সাথে বলল-- 'কেউ গায়ে হাত দিবি না। আমি এ ক্যঅম্পাসের মেয়ে। আমি  রোকেয়া হলে থাকি।' ততক্ষণে তার ওড়না উড়ে গেছে।
 তার পরেও কে কার কথা শোনে--- আমরা চেলা কাঠ নিয়ে রিকশা আটকানো যুবকদের পিটাচ্ছিলাম। আমাদের সাথে আরো কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী যোগ দিয়েছিলেন-- বলে সেই ছাত্রীর রক্ষা।

এরপর আজাদ চৌধূরী স্যার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব ধরণের নারীর  ইংরেজি বর্ষবরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন।  সে রেওয়াজ এখনো আছে। নারীরা রাতে ক্যাম্পাসে বের হতে পারে না। অথচ এর বছর দুয়েকের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয় উইমেন স্টাডিজ ডিাপর্টমেসন্ট খুললো--- নারী নিয়ে পড়ার জন্য।


 জেন্ডার নামে একটা কোর্স সোস্যাল সায়েন্স ফ্যাকালটির সবগুলো ডিপার্টমেন্টে পড়ায়--- তারপরেও এ হাল!

২০০২ সাল থেকে ক্যাম্পাসের বাইরের কেউ  ইংরেজি নববর্ষে ঢুকতে পারে না।

২০০১ সালের নারী মুক্ত থাকা ক্যাম্পাসে থার্টি ফাস্টে আমরা আড্ডা দিচ্ছি। অনেক বন্ধু মিলে। সোহরাওয়ার্দীউদ্যানের গেটে হঠাৎ মোটর বাইকে এক তরুণের দেখা মিলল--- তার লম্বা চুল- জুটি। শীত কাল মুখ ঢাকা । ছেলেরা মনে করলো---  মেয়ে। টেনে নামানো হলো। ছেলেটা চিক্কুর মেরে কইলো ভাই আমি ছেলে!

বিশ্বাস হচ্ছিলোনা বলে তার সুয়াটার টেনে খোলা হলো--- পুলিশ হাসছিল এখনো মনে আছে।

২০০২ সালে  ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে  ব্যাপক পুলিশ--- তখন আমি ক্যাম্পাস রিপোর্টার।  স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরের সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছি।

রাত বারেটার দিকে জনা বিশেক নারী এসে দাঁড়ালেন স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরের উল্টো দিকে-- টিএসসির সামনে।

 হুড় মুড় করে ছেলেরা ছুটে আসলো--- ছেলে পুলিশ তাদের আগলে ধরে জানালো এরাও পুলিশ--- মহিলা পুলিশ। সিভিল ড্রেসে বলে চিন্তে অসুবিধা হচ্ছিলো।

মহিলা পুলশেরা পরে এসেছিল ট্র্যাকশূট।  আমরা হেসে গড়াগড়ি--- পরে মানবজমিনে এর একটা নাতিদীর্ঘ রচনা লিখেছিলাম।

দেখুন--- ২০০০ সালে নির্মম ঘটনা এবং পরের বছর সরকার বদল হবার পরেও নারীর প্রতি কোনো রকমের হয়রানির আগ্রহ কমেনি।

 পরের বছরগুলোতে আর এমন ঘটনা দেখিনি--- পয়লা বৈশাখ উৎসবটা সব সময় নারীদের ঘিরের ধরে কিছু তরুণ--- তবে বৈশাখি কনসার্টগুলোতে যৌন হয়রানির কিছু ঘটনা পরবর্তী বছরগুলোতেও ছিল; তবে সেটা সংখ্যায় কম।

২০১০ সালে এটা বড় আকারে হবার পর  বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা এর প্রতিরোধ করেছিলন--- তাই এটা কেউ  আমলে নেয়নি। না পলিটিক্যাল পার্টি; না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন--- না সরকার-- মিডিয়া!

 আমরা সাধারণত শক্তির পুজা করি--- ভালো কাজ বড় কাজ বড়রা করবে ধরে নিই। তাই এবার অন্তত সবাই নড়ে উঠেছেন--- এটাই শান্তি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়েছিলাম-- ক্ষমতা, ক্ষমতার কাছাকাছি এবং ক্ষমতাবানদের কাছাকাছি থাকতে সবাই পছন্দ করে। এটা চরম সত্য!

আপনারা যারা মাঠে-- ফেসবুকে--- ঘরে বসে---- এর প্রতিবাদ করছেন--- সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি---

সাময়িক উত্তেজিত না হয়ে--- ঘটনার বিচারে সরকারকে যদি বাধ্য করতে পারেন তাহলেই সামনে এ ধরণের ঘটনা  কমবে। যারা এ সব করে তারা  সুস্থ্য হবার সুযোগ পাবে।

কোন মন্তব্য নেই: