হাস রঙা মেঘ, ঘাস রঙা সাপ


বৃষ্টি, আহা বৃষ্টি
কেবলই নিয়ে আসে পুরনো দিন-
স্মৃতি হয়ে থাকা সময়।।

কৈ মাছ উঠে আসে  উঠোনে
ধান ক্ষেতে নেমে যাচ্ছে হাঁস
উঠে আসছে ব্যাঙ
সাপের দ্রুত চলে যাওয়া দেখতে দেখতে

এখন

নগরে বৃষ্টি-
ছাদের কোন বেয়ে নেমে যাচ্ছে
ভিজিয়ে যাচ্ছে পথ শিশুর কপাল।।


হাস রঙা মেঘ, ঘাস রঙা সাপ
আর তোমার হাসি
টিনের চালে বৃষ্টির টুপ টাপ শব্দ
এভাবেই মোহিত
সকাল দুপুর সন্ধ্যা বিকাল।।


কাদা মাটি মেখে মেখে ছুটি
নগরে কাদা দেখলে নাক উঁচু করি
আহা একি রূপ মরি!!  

কামাগুনে পুড়ে যায় নগর

কামাগুনে পুড়ে যায় নগর

কত জাহাজ ভিড়েছে বন্দরে
জেগে থাকা কামনার আবরণে
সীমান্ত মাড়িয়ে এসেছে, কত পুরুষ!

শ্যামা সুন্দরীদের কদর  করেছে, বণিকরা
অথবা লুটেছে -।

দ্রাবিড় নারীর অঙ্গে কত রূপ
কত রকমের বাহনা তার
সবই চুষে নিয়ে বণিক-পুরুষ

নৃবিজ্ঞানীদের অনেক জ্ঞান- বিশ্লেষণ
অনেক কথা-
সব কথার শেষ কথা- কাম।

কামাগুনে পুড়ে যাওয়া এ শহর প্রান্তর
দুর্গম জঙ্গল থেকে সীমান্ত
আমরা আলগা করেছি বাঁধন

নিজের পরিচয় আছে
তবুও মানুষ মরে
কামাগুনে পুড়ে যায় নগর।

ফান্দে

বিষয়: অস্ত্র উদ্ধার -আটক!

 আমল:: চারদলীয় জোট সরকার।
এলিটমেন্টস :: ১০ ট্রাক অস্ত্র।
যাদের ঘিরে কাহিনীর বিস্তৃতি :: উলফা!
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী:: উই আর লুকিং ফর শত্রুজ।
অথর: আরএবি।

ফলাফাল: ফান্দে পড়িয়া বিম্পি জামায়াত কান্দে রে।

আমল:: বাম অ্যান্ড সেক্যুলার।
এলিমন্টেস: সাতছড়িতে অস্ত্রের খনি।
যাদের ঘিরে কাহিনীর বিস্তৃতি :: উলফা!
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী :: দেখতাছি ঘটনাটা।
অথর: আরএবি

সম্ভাব্য ফলাফাল:: ফান্দে পড়িবার আশঙ্কা!

পাবলিক: এইডা কি অইলো!


উপসংহার:: উনারা ভালো গল্পকার, সক্ষম উদ্ধারকারী। রাজনীতিতে নতুন এলিমেন্টস যুক্ত করে জাতিকে ধন্য করেন। রাষ্ট্রের চিকিৎসা খাতে সরকারের খরচ কমিয়ে আনতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তাই উনাদের টিকিয়ে রাখতে হবে যে কোনো মূল্যে!




 

জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা সবাইকে দয়া করো প্রভু

সব সময় একটা কথা বলতাম, এখনো বলি- সবাইকে বলি। বাঁচো, নতুন আশায়। তোমার সামনে অনাগত ভবিষ্যত। হতাশা আসে ক্যামনে। এগিয়ে যাও। দু'চোখ মেলে চাও উদার আকাশ। দেখো অনন্ত  জোছনায় ভিজে যাচ্ছে বঙ্গপোসাগার। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে পাহাড়-নগর-নদী। ভাটি বাংলার রূপ মাধুর্য দেখেই একটা দীর্ঘ জীবন পার করে দেয়া যায়।

মাদক, বিচ্ছেদ, জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ানো কিম্বা নিজেকে হত্যার  কোনো কিছুই এখানে আসতে পারে না। এমন দেশে যার জন্ম যেখানে জোছনায় ভিজে,গেুটগুটে অন্ধকারে ছুটে চলা রিকশার নিচের  বাতির মোহনীয় আলো কিম্বা কাদামাটি মেখে গাঁয়ের মেঠোপথ ধরে হেঁটে এলে মনে হয়-  মানুষের জীবন এত ছোট কেনো? সে দেশে জন্মে কেনো আত্মহত্যা!

পর্যটন কর্মী হিসাবে গত ১৪ টি বছর এ একটি কথা বার বার বলছি। পর্যটন সংগঠন ডিইউটিএস'র কর্মীদের বলতাম, বন্ধুদের বলেছি, এখনো বলি, যেখানে যাই, যার সাথেই বসি এ কথাটি বলি। নিজেকে ভালোবাসো।

 ট্যুরিস্ট সোসাইটি আমার দ্বিতীয় প্রেম। সে প্রেমময় পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্ক আমার রক্তের নয়, কিন্তু তারচেয়েও বেশি। আমাকে যারা পছন্দ করতো, বা করতো না- আমি তাদের সবাইকে ভালোবাসি। তাদের সুখ-মঙ্গল এবং হাসিমাখা মুখটা মনে করে আমি জীবনের নতুন ব্যাঞ্জনা খুঁজে পাই।

বন্ধু স্বজন, যারাই হতাশ, তাদের সবাইকে বলছি- নিজেকে খুন করোনা। সে অধিখার তোমার নেই। উপভোগ করো, বাঁচো।
 তবুও কখনো কখনো খারাপ খবর আসে। কানটা ফেটে যায়। বুকটা ভেঙ্গে যায়।  জীবন কি এতই তুচ্ছ? স্রষ্টার দানটা কী এতই ক্ষুদ্র? কেনো উপভোগ করো না জীবন!

আশাহত মানুষ নই আমি। হতে চাইনি কোনো দিন। এত ঝড়, এত ঝঞ্ঝা, এত শঙ্কা তবুও আশায় বুক বাঁধি।

কিন্তু জীবনকে দুপায়ে ঠেলে যারা ব্যাক্তিগত ভাবে  নিজের জীবনকে হত্যা করে তাদের বিপক্ষে আমি।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমার খুবই ঘনিষ্ঠ দুজন  মানুষ নিজেদের হত্যা করেছে।  একজন আমার হলের, পাশের রুমে থাকতো। ছোট ভাই। সব সময় এসে  আড্ডা দিত, আমার রুমে। হল ছেড়ে আসার পর শুনি ছেলেটা আত্মহত্যা করেছে।

 মেনে নিতে পারিনি। তবুও মানতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হলে বেড়ে ওঠা ছেলেটার বুকে কিসের এত হতাশা ছিল, জানি না।  জীবনকে খুন করার মত এমন হতাশা কেনো জন্মায়। জানতে চাইনি কখনো, চাইবো না। কেবল মিনতি করি, নিজেকে হত্যা করো না।

 জীবনের উৎসবের জন্য। আনন্দের জন্য। কৃতজ্ঞতার জন্য। পর্যটন কর্র্মীর বর্ণিল জীবনে আসা মাহবুব কেনো আত্মহত্যা করবে? প্রশ্নটা মাথার ভেতর বারবার এলেও উত্তর পেলাম না।

ট্যুরিস্ট সোসাইটি থেকে ২০০৬ সালে দায়িত্ব ছাড়ার আগেই মাহবুব মেম্বার হিসাবে আসে। দায়িত্ব ছাড়ার পরও বেশ কয়েকবার আমার কাছে হলে-অফিসে এসেছিল। ক্যাম্পাসে দেখা হলে অন্য দশজনের মতই এগিয়ে আসতো- সালাম দিয়ে খবর নিতো।  আমিও নিতাম। ওর সাথে শেষ দেখাটা হাকিম চত্বরে হযেছিল, আমার নিজের ও তাদের ভাবি-সন্তানদের খবর নিচ্ছিলো। বলেছিলাম- বাসায় এসো!  আসবে বলেছিল।

কিন্তু বহমান সময়, চলমান ব্যস্ততার ভেতর হয়ত সবাইকে ফোন করে খবর নেয়া হতো না  আমার। আজ মঙ্গলবার জানলাম মাহবুব নাই।  ওর বন্ধুদের সাথে কথা বল্লাম। স্বজনদের কাছে  জানতে চাইলাম।  ফেসবুকে ওর লেখাগুলো পড়লাম।
ওর বন্ধুরা বললো হতাশা। ফেসবুক  থেকেও একই ম্যাসেজ।  আত্মহত্যা কি তার কোনো সমাধান হতে পারে! জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কি কোনো সমাধান!

দুঃখ কষ্ট ভয় আর সীমাহীন অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়েও বাঁচতে শেখা জাতি আমরা। সে জাতির সন্তানরা এভাবে জীবন দিবে, এটা মেনে নিতে পারি না।

তৃতীয় আরেকটি খবর আমি শুনতে চাই না। ক্ষমা করো প্রভু।  তোমার করুণা ধারায় ভরে দাও সবার অন্তর। জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা সবাইকে  দয়া করো। দয়া করো। দয়া করো প্রভু।
 

কিস্তি :: ৮৫ :: রোড টু কুয়াকাটা:: ট্যুর উইথ মুরগি


কুয়াকাটা যাবার ভূত চাপলো মাথায়। সে সময় ট্যুরের জন্য পোস্টার করতাম। কাঁকড়ার চর, ফাতরার বন, আর কুয়াকাটার লাবণ্য তুলে ধরে সে পোস্টারের ডাকে ডিইউটিএস'র মেম্বারের বাইরে আরো ক'জন এলেন। বছরের শেষ দিকে সে ট্যুর। সালটা সম্ভবত ২০০৪।

সব মিলিয়ে লোক হলো ১৩ কি চৌদ্দজন।  সেটি ট্যুরিস্ট সোসাইটি থেকে প্রথম ট্যুর যে ট্যুরে বাবু ছিল না।  আমাদের সাথী হলো মৌ, মামুন, তুহিনসহ আরো অনেকে।

কুয়াকাটা যাবার রাস্তাটা কষ্টের। কোনো সন্দেহ নেই। সে সময় সরাসরি একটা বাসই যেতো, সেটি বিআরটিসির। বাসের ডান দিকে তিনটা সিট। বাম দিকে দুটো।

আমরা বাম দিকের সিটগুলো কাটলাম। বাসে উঠলাম গাবতলী থেকে।  ডান পাশের সিটে  মুরগী। খাঁচাবন্দী মুরগীগুলো মাজে মধ্যে ওড়াওড়ি করছে। কক করে ডাকছেও । আমরা ছুটে চলেছি।

পথে ফরিদপুরের এক রাস্তায় বাস দাঁড়ালো। লম্বা জ্যাম। আমরা সবাই নেমে এলাম। দেখলাম রাস্তার পাশে দুধ বিক্রি হচ্ছে। গরম দুধ আর বিস্কুট খেয়ে  আমরা আবার উঠে দাঁড়ালাম। বাসে উঠে বসে আছি। বাস চলছে। রাস্তার অবস্থা খারাপ।  হেলে দুলে বাসে বাসে আমাদের মধ্যরাত হলো  একটা কলেজের পাশে।

বর্ষ বিদায় জানানোর জন্য সবাই নেমে এলাম সেখানে।  বেশ খানিকটা সময় হৈ হুল্লোড় হলো। গান বাজনা  হলো।  মোমবাতি জেলেছিল কলেজের  শিক্ষার্থীরা।  ফের উঠে এলাম বাসে। তার আগের গল্পটা  আমরা প্রতারিত হলাম।

রাস্তার পাশে একটা  শনের বেড়া দেয়া রেস্টুরেন্টে খেতে বসলাম। যা মন চায় খাও। খেতে শুরু করলাম, ডিম, মাছ, বেশি করে তেলে ডোবানো সবজি। খাবার শেষ করার আগেই বাস ছেড়ে দিচ্ছে। পড়ি মরি করে ছুটতে গিয়ে  খাবারে বিল তিনগুণ শোধ করেছি।

সকাল ৮ টার দিকে আমরা নামলাম  কুয়াকাটায়।  থার্টিফাস্ট উপলক্ষে যে রকম ভিড় আশা করেছিলাম, সেটি নেই। আমরা একটা হোটেলের সন্ধানে বের হলাম। এর মধ্যে রাস্তার পাশে সকালের নাশতা। মাত্র বারো টাকা হারে সেরে নিয়ে চা খাচ্ছে কেউ কেউ।

হোটেল সাগরপারের তিনটা রুম আমরা দখল নিলাম। এটা নেবার জন্য হোটেল মালিকের বাড়ি যেতে হয়েছে। প্রথম বলল রুম নেই। আমরা বল্লাম তাহলে আপনার বাড়িতে থাকি। শেষ পর্যন্ত পটিয়ে আড়াইশ টাকা দরে রুম গুলো নেয়া হলো।

রুমে ওঠার পর ফ্রেশ হয়ে আমরা ছুটলাম সৈকতে। ভ্যানে চড়ে  যাওয়া  হলো। ভেজাভেজি হলো ভীষণ। তারপর দুপুর। 'ভাত ঘর' নামে একটা রেস্তোরা পাওয়া গেলো। এর মেইন শাখা ছিল ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন রোড়ে। দুপুরে পেট পুরে খাবার খেলাম-মাত্র ৩৮ টাকায়।

রাতে খাবারের বার বি কিউ করার জন্য একটা কোরাল মাছ অর্ডার করা হলো । সেটি দেড় কেজি ওজনের। দাম  দেড়শ টাকা। এটা একেবারে রেডি করে দেয়া পর্যন্ত  খরচ।

কুয়াকাটার বিকালটাও দারুণ কাটলো। বিচে ঘুরে বেড়ালাম আমরা। সন্ধ্যার  দিকে আমরা ভ্যানে করে লোকাল একটা বাজারে গেলাম। সেখানে  একটা নতুন সিনেমা হল। তাতে সিনেমা দেখার আয়োজন। সিনেমা দেখার পর ফিরে এলাম কুয়াকাটায়।

রাত সাড়ে ১২ টা। প্রচণ্ড কুয়াশায় ঢেকে আছে সব। মাছ আনা হলো। কিন্তু  পোড়ানোর আয়োজন  নেই। হোটেলের সামনে  খোলা মাঠে আগুন ধরছে না।  কেরোসিন আনা হলো।  কিন্তু আগুন জ্বলে না। পাশের সুপারি  গাছের পাতা পোড়ানো হলো, ভেজা কাঠ কিছুতেই মাছ পোড়ার যুতসই হচ্ছে না।  শেষ পর্যন্ত মামুন পাশের ওষুধ দোকানের ঝাঁপ ওঠানোর বাশের লাঠি নিয়ে আসলো।  সেটি দিয়ে পুরো মাছ পোড়ানোর আয়োজন।

রাত দুটায় মৎস্য ভক্ষণ পর্ব শেষে আমরা বিচে গেলাম। অন্ধকার বিচে  কেবল সমুদ্রের গর্জন ছাড়া কিছুই  কানে আসছে না। এ রকম দুর্দমনীয় আনন্দ-উপভোগ্য রাত, খুব কম সময় দেখা হয়েছে।

ভোরের দিকে আমরা ফের হোটেলে।   সকালে দেখলাম ওষুধের দোকানি এসে ঝাঁপ ওঠাতে না পেরে বকাবকি করছে। আমরা চুপ চাপ। কিছুই হয়নি, এমন ভান করে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এর মধ্যে মামুন গিয়ে কয়েকটা প্যারাসিটামল নিয়ে এলো। দোকানির সাথে গল্পও করে এলো।

সকালের নাশতা সেরে ফের আমরা  বিচে। সেখান থেকে  বৌদ্ধবিহার হয়ে মহিলা মার্কেটে। মহিলা মার্কেট মানে মহিলা বিক্রি নয়! এটি চালাতেন মহিলারা। এ জন্য এর নাম মহিলা মার্কেট। সেখানে কেনাকাটার পর দুপুরের দিকে আমরা পটুয়াখালী ছুটলাম।

মুরগির সাথে আর ফেরা নয়। এবার লঞ্চে ফিরবো। নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় লঞ্চে ওঠবো- এমন সময়  সবাই এক সাতে চিক্কুর মারলো।  যাত্রীদের চোখ আমাদের দিকে। লঞ্চের দোতলায় উঠলে একজন এগিয়ে এসে বললো- কার্পেট  লাগলে দিতে পারি। বল্লাম-'ট্যাকা নাই। দিবা কিনা ভাইবা লও।'

কার্পেট এসে পড়লো।  আমরা বসে পড়লাম।  ঢাকা আসবো মাত্র ১০০ টাকায়।  সে রকম মজা। দেখলাম সবাই ঘুমানোর  আয়োজন করছে। আমরা সাপ লুডু খেলছি। লুডু খেলছি।  গান গাইতেছি। মওজ-মাস্তিতে ভরপুর পুরা রাত।  ঘুমের ডিস্টার্ব হলো অনেকের। এর মধ্যে একবার সবাই মিলে রাতের খাবার খেতে গেলাম লঞ্চের  রেস্টুরেন্টে।  চল্লিশ টাকা প্রতি রাতের বাধ্য গ্রহণ পর্ব শেষে আবারো আড্ডা।

মধ্যরাতে  লঞ্চটা কাত হয়ে গেলো। দ্রিম দ্রিম আওয়াজ হচ্ছে।  বের হয়ে দেখলাম যাত্রাবাড়ি- গাবতলী রুটের আট নম্বর বাসের মত কে কার আগে যাবে সে জন্য লঞ্চ  দুটো  কম্পিটিশন চলছে।  অন্য যাত্রীদের কোনো ভাবনা নেই।

আমরাও আর বাবলাম না। লঞ্চের ডেকে, ছাদে  আড্ডায় রাত কেটে গেলো। সকাল বেলা আমরা সদরঘাট। ফিরলাম-ক্যাম্পাসে!


   

কিস্তি ৮৪ :: বৃষ্টি দেখে মাথা নষ্ট!


ইংরেজি ২০০২ সালের বঙ্গ  জ্যৈষ্ঠ মাস। প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে।  ভেজা দরকার। বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাচ্ছে মল চত্বর। কৃষ্ণচুড়া ফুলগুলো নুয়ে যাচ্ছে।কলাভবন থেকে বেরিয়ে আসলাম,  আমরা কয়েকজন। তার মধ্যে মাথা নষ্ঠ কয়টা রিকশা ঠিক করলাম। ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে নগর, আমরা রিকশার হুড নামিয়ে ভিজছি।

রিকশা পেতে সমস্যা হয় নি।  টাকা একটু বেশি গুনতে হয়েছে, এই আর কি! সে সময় এক রিকশা চালককে জিজ্ঞেস করেছিলাম- মেয়েরা  হাত তুললেই খারায়া যাও। আর আমরা হাত তুলতে  মুখ ঘুরায় নাও! কারণটা কও তো দেখি।

তার ভাষ্যটা চরম। সে বল্ল- মেয়ে মানুষের নাকি ওজন নাই। রিকশা বাতাসের বেগে (গতিতে)  চলে।  সে দিন রিকশা করে আমরা ঘুরে এলাম মল চত্বর থেকে কার্জন হল। সেখান থেকে মৈত্রী হল।
সাধারণত বৃষ্টিতে ভিজলে নগরের ছেলে মেয়েদের জর জারি হয়। ঠাণ্ডা লাাগে। আমার সে রকম সমস্যা ছিল না। বৃষ্টিস্নাত ক্যাম্পাস হয়ে ফিরে এলাম  নিজের হলে। দেখলাম বসও ফিরেছে ভিজে। মাসুদ ভাইও। বঙ্গবন্ধু হলের ৩১৪ নম্বর রুমের সবার মাথায় একই দিন  পাগলামি ভর করল ক্যান?  সে প্রশ্ন করলাম না।

কিন্তু রুমে সবার মনে হলে এমন বৃষ্টির দিনে হলে জাফরের  টিকটিক চুবিয়ে রান্না করা ডাল আর  তেলাপোকার  পাখনা ডুবানো তরকারি খাও্রয়া চলবে না। খিচুরি খেতে হবে। তবে সে সময় ক্যাম্পাসে ভালো খিচুরি পাওয়া যেতে, সেটি সপ্তাহে একদিন।

পরে রুমটেরা মিলে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গেলাম  চানখার পুল। সে সময় তিরিশ টাকায় খিচুরি পাওয়া যেতো। সেখান থেকে খিচুরি খেয়ে আবার বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে  হলে ফেরা।  আমাদের রুমের সবাই এবং আমার বন্ধুরা ছাতা বিরোধি ছিল।  আমার ছাতা বিরোধতিার কারন হলো আমি কিছু হাতে বহন করতে পারি না। এটা আমার কাছে খুবই কষ্টের ও বিরক্তির মনে হয়। আর রিকশার হুড তুলিনা, এতে নিজেকে ক্যামন অপরাধি মনে হয়! মুক্ত আকাশটা দেখতে দেখতে পথচলায় আনন্দ!!

তবে আমার বন্ধু বাবুর ভিন্ন মত। তার কথা হুড তুলে রাখলে বাংলা সিনেমার দৃশ্য মিস।  নায়িকার বৃষ্টি ভেজা দৃশ্য বাংলা সিনেমায় মাস্ট।আর সে দৃশ্য দেখার জন্য টাকা খরচ করতে হয়। বৃষ্টির দিনে সেটাই পুরাপই ফ্রি!!

আমাদের এমন সব পাগলামি সম্পর্কে অনেকেরই  জানা।  একবার বুড়িগঙ্গায় বৃষ্টির মধ্যে আমরা প্রায় তিরিশ জন।  পয়লা বৈশাখের দিন, ঘৃুরতে গিয়ে কাকভেজা হয়ে ফিরলাম। আরেকবার  বর্ষায় বান্দরবান। পুরা রাস্তায় বৃষ্টি। সে সময়  চান্দের গাড়ির ছাদ লাগানো থাকতো। আমরা সবাই ছাদের ওপরে উঠে বসলাম। আর্মি ও পুলিশ বারণ করবে ভেবে কেবল চেকপোস্টে আসলে নেমে পড়তাম। পুরো সফরে আমরা ১৯ জন।
চান্দের গাড়ির ঠাসাঠাসি করে বসলে ১৬ জন বসা যায়। কিন্তু আমরা সেটি মানলাম না। আমাদের বৃষ্টি স্পর্শে জ্বরাক্রান্ত কয়েকজন ভেতর বসেছিল। আমরা বাকি ১১ জন  ছাদে। সে রবকম আড্ডা। বৃষ্টির দিনে এমন সৌন্দর্য পাহাড়ের, যেটি এর আগে দেখা হয়নি।  অনন্ত যৌবনা পাহাড় দেখে ফেরা। এখনো বৃষ্টি দেখলে মাথা নষ্ট। কিন্তু শরীর আর কুলায় না।  

কিস্তি ::৮৩:: ক্যাম্পাস সুন্দরীরা

সুন্দরীদের কদর সবখানে। ক্যাম্পাস তার ব্যতিক্রম জায়গা নয়। আমাদের ক্যাম্পাসে সবচেয়ে সুন্দরী ম্যাডাম সম্ভবত দিল রওশন । তিনি কী পড়ান তা নিয়ে সংশয় আছে। তিনি নিজেও নিশ্চিত নন। তবে আমরা সবাই নিবিষ্ট মনে তার ক্লাস উপভোগ করতাম। কারণ তিনি যথেষ্ট সুন্দরী। ক্যাম্পাসে আরো দুজন সুন্দরী ম্যাডাম ছিলেন, সে সময়। তাদের  একজন সাদেকা ম্যাডাম আরেকজন সামিয়া ম্যাডাম।

ক্যাম্পাস রিপোর্টার থাকার কারণে এবং একই সাথে ট্যুরিস্ট সোসাইটির  কর্মী হওবার সুযোগে অনেক সুন্দরী শিক্ষার্থীর দেখা মিলেছে।

আমার চোখে রাজনৈতিক দলের সুন্দরীদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের জলি, ছাত্রফ্রন্টের কানিজ,  ছাত্রলীগের মম, ছাত্রদলের শান্তা এবং নিশিতা।  আরো দুজন ছিল একজন মৈত্রী হলের আরেকজন রোকেয়া হলের। তাদের নাম আমার মনে পড়ছে না। মৈত্রী হলের মেয়েটা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সেটিই মনে হতো না, মনে হতো সদ্য স্কুল থেকে বাসায় ফিরছে মেয়েটা।

ক্যাম্পাস সুন্দরীদের মধ্যে শারমিন আপার নামটা নিতে হবে।  প্রথম যেদিন তার সাথে পরিচয়, অনার্স শেষ বর্ষে পড়ছেন শুনে অবাক ও বিস্মিতভাবে তাকিয়ে ছিলাম। ট্যুরিস্ট সোসাইটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। পড়তেন ভূগোলে।  আমি  ও বাবু প্রায় সময় ডিইউটিএস-এ  শারমিনকে আপাকে আড্ডায় পেতাম।  শারমীন আপা আমার দেখা সেরা ক্যাম্পাস সুন্দরীদের একজন।

দ্বিতীয় ক্যাম্পাস সুন্দুরী নীলিমা। সে সময় ছোট করে ছাটা এলাচুলে কলাভবন চত্বর মাতিয়ে রাখতেন তিনি। ইয়ারের দিক থেকে আমাদের সিনিয়র ছিলেন। পড়তেন  ইংরেিজতে। থাকতেন শাসুন্নাহার হলে।  শা্মসুন্নাহার হলে পুলিশি ট্রাজেডির কারণে তার সাথে দেখা হয়েছিল। তিনি  সুলতানা শফি ম্যাডামকে হল প্রভোস্ট হিসাবে রাখতে ইচ্ছুকদের অন্যতম।  তাদের আরেক সহযোগি ছিলেন  তনুশ্রী। তিনিও শাসুন্নাহার হলে থাকতেন। তার মায়ভরা চাহনি আমাদের মুগ্ধ করতো।

শাসুন্নাহার হলে তৃতীয় সুন্দরী ছিলেন নীপা।  কমার্স ফ্যাকাল্টিতে পড়তো। থাকতো মিরপুরে। শাসুন্নার হলের ঘটনার সময় হলেই ছিল। তার সাথে বহুদিন আমরা একসাথে আড্ডা মেরেছি নায়েমে, শামসুন্নাহার হলের ঘটনায় বিচারপতি তাফাজ্জল কমিশনের বারান্দায়।  নীপার সৌন্দর্যটা অন্য জায়গায়।

ক্যাম্পাস সুন্দরীদের মধ্যে নাট্যকলা একটা বড় আপু ছিল। পরিপাটি। বাড়ি দিনাজপুরে। আমাদের এক বড় ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড ছিল। পরে সম্পর্ক টেকেনি । থাকতেন মৈত্রী হলে।  একই ডিপার্টমেন্ট আরেকজন সুন্দরী  পড়তো সে আমাদের ছোটবোন মিটি।  ন্যাচারাল লুকের জন্য সে  আমাদের সময়কার আর্ট বিল্ডিংয়ে বেশ জনপ্রিয় ছিল।

আমার এক ইয়ার সিনিয়র নৃবিজ্ঞানের প্রজ্ঞা, ইয়ারমেট  রিফাত, সমাজকল্যাণের রনি চাকমাও যথেস্ট সুন্দরী হিসাবে বিবেচিত ছিলো, ক্যাম্পাসে।   কমার্স ফ্যাকাল্টির  সামান্থা, আইবিএ-'র লুবনা এবং ফারসির ফাতেমাতুজ্জোহরা, ভূগোলের রিমি, ইতিহাসের সাদিয়ার  কথাও বলতে হবে। ইংরেজির মহুয়াকেও বাদ দেয়া  না। 

হুমায়ুন আহমেদ কন্যা শীলা ও বিপাশা, অভিনেত্রী থনিমা হামিদও আছেন একই কাতারে। তনিমাকে দেখার জন্য অনেকে তার ডিপার্টমেন্ট ইতিহাসের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতেন।  তনিমা আমাদের বন্ধু বেলালদের সার্কেলে থাকায় তার সাথে আড্ডাবাজি হতো। তাদের ইস্কাটনের বাসায় আমি সম্বাদিক হিসাবেও গিয়েছিলাম কয়েকবার!

আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বড় বিচিত্র, বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতা নিয়ে হাজির হয়। সে অভিজ্ঞতা নিয়ে ৮৩তম কিস্তিটা লেখর কথা ছিল। তাই লিখলাম। জানি অনেক নেতিবাচক ধা্রণা এখান থেকে অনেকের মনে জন্মাবে। তবুও সত্য তো সত্যই। এ লেকাটা ২০০০ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত  সময়ে ক্যাম্পাসে আমাদের দেখা সুন্দরীদের নিয়ে!

সাথে একটা ঘোষনা:: কিস্তি এখন থেকে  চলমান থাকবে। 

নজরুলকে নিয়ে বিশ্বজিৎ ও গোলামের কৌশলী বিকার

যে কুতর্ক বিশ্বজিৎ খুবই কৌশলে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সুশীল পাড়ার গবেষক হিসাবে পরিচিত গোলাম মুরশিদ গত বছর বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে নিয়ে কুকথা বলেছিলেন, তার সাথে এর এক যোগসূত্র আছে।
গোলামের বিচার হয়নি বলে বিশ্বজিৎ সাহসটা করলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে দেশে নজরুল জাতীয় কবির মর্যাদায় আসীন; সে দেশে এমন নোংরামি সরকার মেনে নিচ্ছে, সেটাও একটা জিজ্ঞাসা হয়ে থাকছে।
আমরা যে কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে জানবো, জানার অফুরন্ত আগ্রহ আমাদের আছে। কিন্তু বিশেষ কোনো এজেন্ডা এখানে হাজির দেখে আমরা ব্যথিত। এগুলো উদ্দেশ্যমূলক, বিকৃত রুচির এবং নোংরা মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।
আমাদের বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত আরেকজন কবি সম্পর্কে কমবেশি বিশ্বজিৎ বা গোলামদের জানা। কিন্তু সে সম্পর্কে তারা লিখেননি বলে আমরা কৃতজ্ঞ্। কারণ কিছু মানুষ আছে তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যাক্তিজীবন নিয়ে উৎসাহ দেখানোটা কোনো কালেই আমার কাছে শোভন মনে হয়নি।
বিশ্বজিৎ ও গোলামরা নজরুলকে ছোট করার যে চেষ্টা করছেন এটা বৃথা। সাহিত্য তার সৃজনশীল, নান্দনিক, সামাজিক ও প্রাসঙ্গিক দিক বিবেচনা করে গৃহিত বা বর্জিত হয় বলে জেনে আসছি। রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য সে বিচারে টিকে গেছে।
নিজেদের নাম ইতিহাসে রাখার অনেক উপায় থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত প্রতিভা ও তাদের সৃনজশীল কর্মের বিষবাষ্প ছড়ানোর যে সুক্ষ কৌশল মতলবাজ মিডিয়া নিয়েছে, সেজন্য আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।
এককালে মোল্লারা নজরুলকে বর্জন করেছিল। বলেছিল কাফির। এখন কথিত জ্ঞানীরা, যাদের পাপের চৌহদ্দির মাপতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা লাগবে। সে সব লোক নজরুলের মত লোককে নিয়ে কথা বলে!
নারগিসকে নিয়ে আলাপ হতেই পারে। সেটি নিয়ে আপত্তি করার কিছু নাই। কিন্তু সাধারণের বাইরের প্রতিভাতের জন্ম বা মৃত্যু দিবস ঘিরে এ নিয়ে আলোচনাটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
গত বছর বাংলা একাডেমিতে গোলাম নারগিস এবং প্রমীলাকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছে। এর কিছু অংশ প্রেস রিলিজ করে একাডেমি থেকে ছাড়াও হয়। কিন্তু সম্বাদিকরা নিজ দায়িত্বে ওই অংশটুকু ছাটাই করেন।
এবার বিশ্ব যে কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন- নজরুল কথা দিযে কথা না রেখে আবার দরদীয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তিনি হাজির করেন নি।
ধরে নিলাম এ কথাটা সত্য। কিন্তু এ সত্যটা তার জন্মদিন ঘিরে উৎসব আয়োজনে কতটা প্রকাশ যোগ্য।
আমরা কী কখনো রবীন্দ্র প্রেমিকা আন্নাকে নিয়ে কোনো লেখা দেখেছি। কাজী আনোয়ার হোসেন , যিনি মাসুদ রানার জনক। তার সম্পাদিত ঐতিহাসিক প্রেমপত্র থেকে যেটি জানা সেটি হলো, আন্নার প্রেম কখনোই ভুলতেই পারেননি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু পিতার বন্ধুর ঘর ত্যাগের পর রবীন্দ্রনাথ কী তার খবর নিয়েছেন? তবে কাজী আনোয়ারের বইয়ের সূত্র মতে, রবীন্রদ্রনাথ বলেছিলেন , তাকে নিয়ে কোনো জাদুঘর হলে সেখানে যেনো আন্নার চিঠিটা থাকে। কিন্তু তার সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল এ সব আলোচনা কতটা রুচিকর।
আমার মনে হয় রবীন্দ্র নজরুল বা জীবনানন্দ; শহীদুল্লাহ কিম্বা শামসুর রাহমানদের জীবনের এ সব দিক নিয়ে আলোচনাটা পাবলিকলি হওয়ার বিষয় নয়্ এটা একাডেমিক। এটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনা যতক্ষণ পর্যন্ত সার্বজনীন হবে ততক্ষণ এটা নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে লেখা বা প্রচার সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমার কাছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা আপত্তিকর এবং নোংরামি বলে বিবেচিত। এটা অন্যের কাছে মনে নাও হতে পারে। আমাদের কিছু আশ্রয় থাকা দরকার। যেমন সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুল। রাজনীতিতে ভাসানী-বঙ্গবন্ধু। সিনেমায় রাজ্জাক-ববিতা। এ রকম আরো। তার মানে এটা নয় যে, তারা ধোয়া তুলসি পাতা। তবে তাদের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয়ের চেয়ে তাদের কর্মটাই বড়। সেটিই আলোচনার মূল জায়গা।
- See more at: http://www.priyo.com/blog/2014/05/28/71503.html#sthash.YLkytC42.dpuf
 কুতর্ক বিশ্বজিৎ খুবই কৌশলে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সুশীল পাড়ার গবেষক হিসাবে পরিচিত গোলাম মুরশিদ গত বছর বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে নিয়ে কুকথা বলেছিলেন, তার সাথে এর এক যোগসূত্র আছে।
গোলামের বিচার হয়নি বলে বিশ্বজিৎ সাহসটা করলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে দেশে নজরুল জাতীয় কবির মর্যাদায় আসীন; সে দেশে এমন নোংরামি সরকার মেনে নিচ্ছে, সেটাও একটা জিজ্ঞাসা হয়ে থাকছে।
আমরা যে কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে জানবো, জানার অফুরন্ত আগ্রহ আমাদের আছে। কিন্তু বিশেষ কোনো এজেন্ডা এখানে হাজির দেখে আমরা ব্যথিত। এগুলো উদ্দেশ্যমূলক, বিকৃত রুচির এবং নোংরা মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।
আমাদের বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত আরেকজন কবি সম্পর্কে কমবেশি বিশ্বজিৎ বা গোলামদের জানা। কিন্তু সে সম্পর্কে তারা লিখেননি বলে আমরা কৃতজ্ঞ্। কারণ কিছু মানুষ আছে তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যাক্তিজীবন নিয়ে উৎসাহ দেখানোটা কোনো কালেই আমার কাছে শোভন মনে হয়নি।
বিশ্বজিৎ ও গোলামরা নজরুলকে ছোট করার যে চেষ্টা করছেন এটা বৃথা। সাহিত্য তার সৃজনশীল, নান্দনিক, সামাজিক ও প্রাসঙ্গিক দিক বিবেচনা করে গৃহিত বা বর্জিত হয় বলে জেনে আসছি। রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য সে বিচারে টিকে গেছে।
নিজেদের নাম ইতিহাসে রাখার অনেক উপায় থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত প্রতিভা ও তাদের সৃনজশীল কর্মের বিষবাষ্প ছড়ানোর যে সুক্ষ কৌশল মতলবাজ মিডিয়া নিয়েছে, সেজন্য আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।
এককালে মোল্লারা নজরুলকে বর্জন করেছিল। বলেছিল কাফির। এখন কথিত জ্ঞানীরা, যাদের পাপের চৌহদ্দির মাপতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা লাগবে। সে সব লোক নজরুলের মত লোককে নিয়ে কথা বলে!
নারগিসকে নিয়ে আলাপ হতেই পারে। সেটি নিয়ে আপত্তি করার কিছু নাই। কিন্তু সাধারণের বাইরের প্রতিভাতের জন্ম বা মৃত্যু দিবস ঘিরে এ নিয়ে আলোচনাটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
গত বছর বাংলা একাডেমিতে গোলাম নারগিস এবং প্রমীলাকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছে। এর কিছু অংশ প্রেস রিলিজ করে একাডেমি থেকে ছাড়াও হয়। কিন্তু সম্বাদিকরা নিজ দায়িত্বে ওই অংশটুকু ছাটাই করেন।
এবার বিশ্ব যে কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন- নজরুল কথা দিযে কথা না রেখে আবার দরদীয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তিনি হাজির করেন নি।
ধরে নিলাম এ কথাটা সত্য। কিন্তু এ সত্যটা তার জন্মদিন ঘিরে উৎসব আয়োজনে কতটা প্রকাশ যোগ্য।
আমরা কী কখনো রবীন্দ্র প্রেমিকা আন্নাকে নিয়ে কোনো লেখা দেখেছি। কাজী আনোয়ার হোসেন , যিনি মাসুদ রানার জনক। তার সম্পাদিত ঐতিহাসিক প্রেমপত্র থেকে যেটি জানা সেটি হলো, আন্নার প্রেম কখনোই ভুলতেই পারেননি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু পিতার বন্ধুর ঘর ত্যাগের পর রবীন্দ্রনাথ কী তার খবর নিয়েছেন? তবে কাজী আনোয়ারের বইয়ের সূত্র মতে, রবীন্রদ্রনাথ বলেছিলেন , তাকে নিয়ে কোনো জাদুঘর হলে সেখানে যেনো আন্নার চিঠিটা থাকে। কিন্তু তার সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল এ সব আলোচনা কতটা রুচিকর।
আমার মনে হয় রবীন্দ্র নজরুল বা জীবনানন্দ; শহীদুল্লাহ কিম্বা শামসুর রাহমানদের জীবনের এ সব দিক নিয়ে আলোচনাটা পাবলিকলি হওয়ার বিষয় নয়্ এটা একাডেমিক। এটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনা যতক্ষণ পর্যন্ত সার্বজনীন হবে ততক্ষণ এটা নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে লেখা বা প্রচার সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমার কাছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা আপত্তিকর এবং নোংরামি বলে বিবেচিত। এটা অন্যের কাছে মনে নাও হতে পারে। আমাদের কিছু আশ্রয় থাকা দরকার। যেমন সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুল। রাজনীতিতে ভাসানী-বঙ্গবন্ধু। সিনেমায় রাজ্জাক-ববিতা। এ রকম আরো। তার মানে এটা নয় যে, তারা ধোয়া তুলসি পাতা। তবে তাদের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয়ের চেয়ে তাদের কর্মটাই বড়। সেটিই আলোচনার মূল জায়গা।
- See more at: http://www.priyo.com/blog/2014/05/28/71503.html#sthash.YLkytC42.dpuf
যে কুতর্ক বিশ্বজিৎ খুবই কৌশলে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সুশীল পাড়ার গবেষক হিসাবে পরিচিত গোলাম মুরশিদ গত বছর বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে নিয়ে কুকথা বলেছিলেন, তার সাথে এর এক যোগসূত্র আছে।
গোলামের বিচার হয়নি বলে বিশ্বজিৎ সাহসটা করলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে দেশে নজরুল জাতীয় কবির মর্যাদায় আসীন; সে দেশে এমন নোংরামি সরকার মেনে নিচ্ছে, সেটাও একটা জিজ্ঞাসা হয়ে থাকছে।
আমরা যে কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে জানবো, জানার অফুরন্ত আগ্রহ আমাদের আছে। কিন্তু বিশেষ কোনো এজেন্ডা এখানে হাজির দেখে আমরা ব্যথিত। এগুলো উদ্দেশ্যমূলক, বিকৃত রুচির এবং নোংরা মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।
আমাদের বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত আরেকজন কবি সম্পর্কে কমবেশি বিশ্বজিৎ বা গোলামদের জানা। কিন্তু সে সম্পর্কে তারা লিখেননি বলে আমরা কৃতজ্ঞ্। কারণ কিছু মানুষ আছে তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যাক্তিজীবন নিয়ে উৎসাহ দেখানোটা কোনো কালেই আমার কাছে শোভন মনে হয়নি।
বিশ্বজিৎ ও গোলামরা নজরুলকে ছোট করার যে চেষ্টা করছেন এটা বৃথা। সাহিত্য তার সৃজনশীল, নান্দনিক, সামাজিক ও প্রাসঙ্গিক দিক বিবেচনা করে গৃহিত বা বর্জিত হয় বলে জেনে আসছি। রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য সে বিচারে টিকে গেছে।
নিজেদের নাম ইতিহাসে রাখার অনেক উপায় থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত প্রতিভা ও তাদের সৃনজশীল কর্মের বিষবাষ্প ছড়ানোর যে সুক্ষ কৌশল মতলবাজ মিডিয়া নিয়েছে, সেজন্য আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।
এককালে মোল্লারা নজরুলকে বর্জন করেছিল। বলেছিল কাফির। এখন কথিত জ্ঞানীরা, যাদের পাপের চৌহদ্দির মাপতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা লাগবে। সে সব লোক নজরুলের মত লোককে নিয়ে কথা বলে!
নারগিসকে নিয়ে আলাপ হতেই পারে। সেটি নিয়ে আপত্তি করার কিছু নাই। কিন্তু সাধারণের বাইরের প্রতিভাতের জন্ম বা মৃত্যু দিবস ঘিরে এ নিয়ে আলোচনাটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
গত বছর বাংলা একাডেমিতে গোলাম নারগিস এবং প্রমীলাকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছে। এর কিছু অংশ প্রেস রিলিজ করে একাডেমি থেকে ছাড়াও হয়। কিন্তু সম্বাদিকরা নিজ দায়িত্বে ওই অংশটুকু ছাটাই করেন।
এবার বিশ্ব যে কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন- নজরুল কথা দিযে কথা না রেখে আবার দরদীয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তিনি হাজির করেন নি।
ধরে নিলাম এ কথাটা সত্য। কিন্তু এ সত্যটা তার জন্মদিন ঘিরে উৎসব আয়োজনে কতটা প্রকাশ যোগ্য।
আমরা কী কখনো রবীন্দ্র প্রেমিকা আন্নাকে নিয়ে কোনো লেখা দেখেছি। কাজী আনোয়ার হোসেন , যিনি মাসুদ রানার জনক। তার সম্পাদিত ঐতিহাসিক প্রেমপত্র থেকে যেটি জানা সেটি হলো, আন্নার প্রেম কখনোই ভুলতেই পারেননি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু পিতার বন্ধুর ঘর ত্যাগের পর রবীন্দ্রনাথ কী তার খবর নিয়েছেন? তবে কাজী আনোয়ারের বইয়ের সূত্র মতে, রবীন্রদ্রনাথ বলেছিলেন , তাকে নিয়ে কোনো জাদুঘর হলে সেখানে যেনো আন্নার চিঠিটা থাকে। কিন্তু তার সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল এ সব আলোচনা কতটা রুচিকর।
আমার মনে হয় রবীন্দ্র নজরুল বা জীবনানন্দ; শহীদুল্লাহ কিম্বা শামসুর রাহমানদের জীবনের এ সব দিক নিয়ে আলোচনাটা পাবলিকলি হওয়ার বিষয় নয়্ এটা একাডেমিক। এটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনা যতক্ষণ পর্যন্ত সার্বজনীন হবে ততক্ষণ এটা নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে লেখা বা প্রচার সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমার কাছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা আপত্তিকর এবং নোংরামি বলে বিবেচিত। এটা অন্যের কাছে মনে নাও হতে পারে। আমাদের কিছু আশ্রয় থাকা দরকার। যেমন সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুল। রাজনীতিতে ভাসানী-বঙ্গবন্ধু। সিনেমায় রাজ্জাক-ববিতা। এ রকম আরো। তার মানে এটা নয় যে, তারা ধোয়া তুলসি পাতা। তবে তাদের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয়ের চেয়ে তাদের কর্মটাই বড়। সেটিই আলোচনার মূল জায়গা।
- See more at: http://www.priyo.com/blog/2014/05/28/71503.html#sthash.YLkytC42.dpuf
যে কুতর্ক বিশ্বজিৎ খুবই কৌশলে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সুশীল পাড়ার গবেষক হিসাবে পরিচিত গোলাম মুরশিদ গত বছর বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে নিয়ে কুকথা বলেছিলেন, তার সাথে এর এক যোগসূত্র আছে।
গোলামের বিচার হয়নি বলে বিশ্বজিৎ সাহসটা করলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে দেশে নজরুল জাতীয় কবির মর্যাদায় আসীন; সে দেশে এমন নোংরামি সরকার মেনে নিচ্ছে, সেটাও একটা জিজ্ঞাসা হয়ে থাকছে।
আমরা যে কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে জানবো, জানার অফুরন্ত আগ্রহ আমাদের আছে। কিন্তু বিশেষ কোনো এজেন্ডা এখানে হাজির দেখে আমরা ব্যথিত। এগুলো উদ্দেশ্যমূলক, বিকৃত রুচির এবং নোংরা মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।
আমাদের বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত আরেকজন কবি সম্পর্কে কমবেশি বিশ্বজিৎ বা গোলামদের জানা। কিন্তু সে সম্পর্কে তারা লিখেননি বলে আমরা কৃতজ্ঞ্। কারণ কিছু মানুষ আছে তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যাক্তিজীবন নিয়ে উৎসাহ দেখানোটা কোনো কালেই আমার কাছে শোভন মনে হয়নি।
বিশ্বজিৎ ও গোলামরা নজরুলকে ছোট করার যে চেষ্টা করছেন এটা বৃথা। সাহিত্য তার সৃজনশীল, নান্দনিক, সামাজিক ও প্রাসঙ্গিক দিক বিবেচনা করে গৃহিত বা বর্জিত হয় বলে জেনে আসছি। রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য সে বিচারে টিকে গেছে।
নিজেদের নাম ইতিহাসে রাখার অনেক উপায় থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত প্রতিভা ও তাদের সৃনজশীল কর্মের বিষবাষ্প ছড়ানোর যে সুক্ষ কৌশল মতলবাজ মিডিয়া নিয়েছে, সেজন্য আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।
এককালে মোল্লারা নজরুলকে বর্জন করেছিল। বলেছিল কাফির। এখন কথিত জ্ঞানীরা, যাদের পাপের চৌহদ্দির মাপতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা লাগবে। সে সব লোক নজরুলের মত লোককে নিয়ে কথা বলে!
নারগিসকে নিয়ে আলাপ হতেই পারে। সেটি নিয়ে আপত্তি করার কিছু নাই। কিন্তু সাধারণের বাইরের প্রতিভাতের জন্ম বা মৃত্যু দিবস ঘিরে এ নিয়ে আলোচনাটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
গত বছর বাংলা একাডেমিতে গোলাম নারগিস এবং প্রমীলাকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছে। এর কিছু অংশ প্রেস রিলিজ করে একাডেমি থেকে ছাড়াও হয়। কিন্তু সম্বাদিকরা নিজ দায়িত্বে ওই অংশটুকু ছাটাই করেন।
এবার বিশ্ব যে কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন- নজরুল কথা দিযে কথা না রেখে আবার দরদীয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তিনি হাজির করেন নি।
ধরে নিলাম এ কথাটা সত্য। কিন্তু এ সত্যটা তার জন্মদিন ঘিরে উৎসব আয়োজনে কতটা প্রকাশ যোগ্য।
আমরা কী কখনো রবীন্দ্র প্রেমিকা আন্নাকে নিয়ে কোনো লেখা দেখেছি। কাজী আনোয়ার হোসেন , যিনি মাসুদ রানার জনক। তার সম্পাদিত ঐতিহাসিক প্রেমপত্র থেকে যেটি জানা সেটি হলো, আন্নার প্রেম কখনোই ভুলতেই পারেননি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু পিতার বন্ধুর ঘর ত্যাগের পর রবীন্দ্রনাথ কী তার খবর নিয়েছেন? তবে কাজী আনোয়ারের বইয়ের সূত্র মতে, রবীন্রদ্রনাথ বলেছিলেন , তাকে নিয়ে কোনো জাদুঘর হলে সেখানে যেনো আন্নার চিঠিটা থাকে। কিন্তু তার সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল এ সব আলোচনা কতটা রুচিকর।
আমার মনে হয় রবীন্দ্র নজরুল বা জীবনানন্দ; শহীদুল্লাহ কিম্বা শামসুর রাহমানদের জীবনের এ সব দিক নিয়ে আলোচনাটা পাবলিকলি হওয়ার বিষয় নয়্ এটা একাডেমিক। এটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনা যতক্ষণ পর্যন্ত সার্বজনীন হবে ততক্ষণ এটা নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে লেখা বা প্রচার সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমার কাছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা আপত্তিকর এবং নোংরামি বলে বিবেচিত। এটা অন্যের কাছে মনে নাও হতে পারে। আমাদের কিছু আশ্রয় থাকা দরকার। যেমন সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুল। রাজনীতিতে ভাসানী-বঙ্গবন্ধু। সিনেমায় রাজ্জাক-ববিতা। এ রকম আরো। তার মানে এটা নয় যে, তারা ধোয়া তুলসি পাতা। তবে তাদের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয়ের চেয়ে তাদের কর্মটাই বড়। সেটিই আলোচনার মূল জায়গা।
- See more at: http://www.priyo.com/blog/2014/05/28/71503.html#sthash.YLky


যে কুতর্ক বিশ্বজি খুবই কৌশলে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সুশীল পাড়ার গবেষক হিসাবে পরিচিত গোলাম মুরশিদ গত বছর বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে নিয়ে কুকথা বলেছিলেন, তার সাথে এর এক যোগসূত্র আছে।

গোলামের বিচার হয়নি বলে বিশ্বজি সাহসটা করলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে দেশে নজরুল জাতীয় কবির মর্যাদায় আসীন; সে দেশে এমন নোংরামি সরকার মেনে নিচ্ছে, সেটাও একটা জিজ্ঞাসা হয়ে থাকছে।
 
আমরা যে কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে জানবো, জানার অফুরন্ত আগ্রহ আমাদের আছে। কিন্তু বিশ কোনো এজেন্ডা এখানে হাজির দেখে আমরা ব্যথিত। এগুলো উদ্দেশ্যমূলক, বিকৃত রুচির এবং নোংরা মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।

আমাদের বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত আরেকজন কবি সম্পর্কে কমবেশি বিশ্বজি বা গোলামদের জানা। কিন্তু সে সম্পর্কে তারা লিখেননি বলে আমরা কৃতজ্ঞ্। কারণ কিছু মানুষ আছে তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যাক্তিজীবন নিয়ে ৎসাহ দেখানোটা কোনো কালেই আমার কাছে শোভন মনে হয়নি।
 
বিশ্বজি গোলামরা নজরুলকে ছোট করার যে চেষ্টা করছেন এটা বৃথা। সাহিত্য তার সৃজনশীল, নান্দনিক, সামাজিক প্রাসঙ্গিক দিক বিবেচনা করে গৃহিত বা বর্জিত হয় বলে জেনে আসছি। রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য সে বিচারে টিকে গেছে।
 
নিজেদের নাম ইতিহাসে রাখার অনেক উপায় থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত প্রতিভা তাদের সৃনজশীল কর্মের বিষবাষ্প ছড়ানোর যে সুক্ষ কৌশল মতলবাজ মিডিয়া নিয়েছে, সেজন্য আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।
 
এককালে মোল্লারা নজরুলকে বর্জন করেছিল। বলেছিল কাফির। এখন কথিত জ্ঞানীরা, যাদের পাপের চৌহদ্দির মাপতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা লাগবে। সে সব লোক নজরুলের মত লোককে নিয়ে কথা বলে!

নারগিসকে নিয়ে আলাপ হতেই পারে। সেটি নিয়ে আপত্তি করার কিছু নাই। কিন্তু সাধারণের বাইরের প্রতিভাতের জন্ম বা মৃত্যু দিবস ঘিরে নিয়ে আলোচনাটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
 
গত বছর বাংলা একাডেমিতে গোলাম নারগিস এবং প্রমীলাকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছে। এর কিছু অংশ প্রেস রিলিজ করে একাডেমি থেকে ছাড়াও হয়। কিন্তু সম্বাদিকরা নিজ দায়িত্বে ওই অংশটুকু ছাটাই করেন।

এবার বিশ যে কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন- নজরুল কথা দিযে কথা না রেখে আবার দরদীয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তিনি হাজির করেন নি।
ধরে নিলাম কথাটা সত্য। কিন্তু সত্যটা তার জন্মদিন ঘিরে ৎসব আয়োজনে কতটা প্রকাশ যোগ্য।
 
আমরা কী কখনো রবীন্দ্র প্রেমিকা আন্নাকে নিয়ে কোনো লেখা দেখেছি। কাজী আনোয়ার হোসেন , যিনি মাসুদ রানার জনক। তার সম্পাদিত ঐতিহাসিক প্রেমপত্র থেকে যেটি জানা সেটি হলো, আন্নার প্রেম কখনোই ভুলতেই পারেননি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু পিতার বন্ধুর ঘর ত্যাগের পর রবীন্দ্রনাথ কী তার খবর নিয়েছেন? তবে কাজী আনোয়ারের বইয়ের সূত্র মতে, রবীন্রদ্রনাথ বলেছিলেন , তাকে নিয়ে কোনো জাদুঘর হলে সেখানে যেনো আন্নার চিঠিটা থাকে। কিন্তু তার সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল সব আলোচনা কতটা রুচিকর।
 
আমার মনে হয় রবীন্দ্র নজরুল বা জীবনানন্দ; শহীদুল্লাহ কিম্বা শামসুর রাহমানদের জীবনের সব দিক নিয়ে আলোচনাটা পাবলিকলি হওয়ার বিষয় নয়্ এটা একাডেমিক। এটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনা যতক্ষণ পর্যন্ত সার্বজনীন হবে ততক্ষণ এটা নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে লেখা বা প্রচার সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমার কাছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা আপত্তিকর এবং নোংরামি বলে বিবেচিত। এটা অন্যের কাছে মনে নাও হতে পারে। আমাদের কিছু আশ্রয় থাকা দরকার। যেমন সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুল। রাজনীতিতে ভাসানী-বঙ্গবন্ধু। সিনেমায় রাজ্জাক-ববিতা। রকম আরো। তার মানে এটা নয় যে, তারা ধোয়া তুলসি পাতা। তবে তাদের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয়ের চেয়ে তাদের কর্মটাই বড়। সেটিই আলোচনার মূল জায়গা।