বিদায়, সৈয়দ হক



...মানুষ বেকুব চুপ,হাটবারে সকলে দেখুক
কেমন মোচড় দিয়া টাকা নিয়া যায় বাজিকর ৷
চক্ষের ভিতর থিকা সোহাগের পাখিরে উড়াও,
বুকের ভিতর থিকা পিরীতের পূর্ণিমার চান,
নিজেই তাজ্জব তুমি – একদিকে যাইবার চাও
অথচ আরেক দিকে খুব জোরে দেয় কেউ টান৷


পরানের গহিনের ভিতর-সৈয়দ হক ।।


কৈশোরে প্রিয় কবিদের একজন সৈয়দ হক ; তারুণ্যে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস 'নিষিদ্ধ লোবান' কিম্বা অন্যায়ের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ানো কাব্যনাট্য 'নুরলদীনের সারা জীবন' এ মুগ্ধ।।

বিদায়, সৈয়দ হক। আপনার 'নুরালদীনের সারা জীবন' কাব্য নাট্যের দর্শনই সত্য হোক । পরকালীন জীবন মঙ্গলময় হোক।


'...নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন এ দেশ ছেয়ে যায় দালালের আলখাল্লায়,
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার স্বপ্ন লুট হয়ে যায়,
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়,
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমারই দেশে আমারই দেহ থেকে
রক্ত ঝরে যায় ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠায়,
আসুন, আসুন তবে আজ এই প্রশস্ত প্রান্তরে
যেখানে স্মৃতির দুধ জ্যোৎস্নার সাথে খেলা করে
তখন কে থাকে ঘুমে, কে থাকে ভেতরে
কে একা নিঃসঙ্গে বসে অশ্রুপাত করে?
সমস্ত নদীর অশ্রু অবশেষে ব্রহ্মপুত্রে মেশে..
নূরলদীনের কথা সারাদেশে পাহাড়ী নদীর মত নেমে আসে সমস্ত ভাষায়
অভাগা মানুষ যেন আবার জেগে উঠে এই আশায় যে-
আবার নূরলদীন একদিন আসিবে বাংলায়
আবার নূরলদীন একদিন কাল্ পূণির্মায় দিবে ডাক--
জাগো বাহে, কোনঠে সবাই.....'


নুরলদীনের সারা জীবন ।। সৈয়দ হক ।।


সৈয়দ হক - জন্ম  কুড়িগ্রাম ২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫ ।  মৃত্যু-ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬।

শিল্পীর ব্রাশে রবীন্দ্রনাথ আসমানে!

শিল্পীর ব্রাশে রবীন্দ্রনাথ আসমানে!

এ ছবির অনুপ্রেরণা প্রসঙ্গে শিল্পী বলেন, সাঈদী হুজুরকে চান্দে দেখা থেকে আমি এ ছবি আঁকার প্রেরণা পেয়েছি !
শিল্পী আবেগে কাইন্দালাইয়া বলেন, সম্বাদিক সাব। এর পরেও কি আমার ইনডিয়া যাইতে ভিষা লাগবো!
সম্বাদিক সাব বলেন,শিল্পী সাব ভিষা মাফ নাই ।
শিল্পী ফের বুক চাপডায়া কৈলো, জনাব দেখেন মাতা ইন্দিরার হাতে বঙ্গীয় স্মৃতিসৌধ তুইলা দিছি! পদতলে ইলিশ পুজা !
সম্বাদিক কৈলো, বাছা, বঙ্গে জন্মাইছো,যত দাও! চুষিয়া তোমার প্রতিভা; ছুঁইডা ফালাইবো! এটাই এখন মেড ইন ইনডিয়া!!

দায় মুক্তি : এটি একটি কাল্পনিক সংলাপ । কেউ কারো সাথে মেলালে , দায় তার!

মহান এ শিল্পকর্মের ছবিখানা রবি ঠাকুরের দু:স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার গ্যালারি থেইকা কিউট বাম পোলাপান সরবরাহ করছে!

নিলামে তুলেছি সুখ!





নিলামে তুলেছি সুখ, জীবনের সব চাওয়া!
বাদ আছে এক---তুমি-তোমাদের মুখ, বেড়ে ওঠার প্রতিক্ষণ!
প্রিয় পুত্র-পুত্রদ্বয়!

ভোর করে এলে  গাঁয়ের মেঠো পথে
নেমে আসে কিশোরী রোদ্দুর-
নরম আলোর ঝিলিকের সাথে মিলে যায়
সবুজ ধানের খেত!

উড়ে যাওয়া পাখির পেছনে কেবল মায়া,
উচ্ছনে যাওয়া জীবনের কত কিছু হাতড়ানোর দুপুর!

 সন্ধ্যা নামলে হাওড়ের জলের ওপর সূর্যটার লুটিয়ে পড়ার দৃশ্য
আমাকে এখন আর আহত করে না
 বক পাখির  পায়ের  সাথে ঝুলে থাকা তারা বাইমের মত
এই আছি! এই পড়ে যাই!

তবুও তো জীবন মানে উৎসব-উচ্ছ্বাস!
তুমি-তোমাদের মুখ মনে করে সুখ!!  

তাহলে প্রেস কাউন্সিলের দরকার কি?

তাহলে প্রেস কাউন্সিলের দরকার কি? আইন শৃঙ্খলা্ রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন আইনের ধারা উপধারা এবং নির্দেশ ধারায় সম্বাদিকদের তুলে নিতে পারলে, আমরা হাত তালিই দেই! দেবই তো, শালা- বাড় বেড়েছে-সাইজ করবো! সাইজ করার একটা মোক্ষম সুযোগ মিলেছে-- তাহলে সবাই মিলে দু চার ঘা মেরে দিই! এটাই এখানে রেওয়াজ
তারপরেও ১৫ সদস্যের একটা প্রেস কাউন্সিল সরকার করে রেখেছে। একজন বিচারপতি এর চেয়ারম্যান। ১৯৮০ সালে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রেস কাউন্সিল খাড়া হইছে। এরপর এর কার্যক্রম চলছে। তবে তথ্য নিয়ে হেরফের ঠেকাতেই এর জন্ম হলেও এটাকে ঠিক পারফর্ম করতে দেখা যায় না। 
দু'একটি ব্যতিক্রম ছাড়া। 
সম্বাদিক নির্যাতন, হত্যা কিম্বা সম্বাদিকদের ভুল তথ্য পরিবেশন বঙ্গে-এশিয়ায় এবং বিশ্বে নতুন কোন ঘটনা নয়। আর সম্বাদিকতায় 'গুজব'কেও একটা খবর হিসাবে দেখা হয়। যদিও এটা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু এটা তো সত্য- ক্ষমতার বাইরে ভেতরের লোকদের জন্য সত্যটা দুইভাবে সমজে উপস্থাপতি হয়। আর সেটি করে থাকে- গণমাধ্যম। আদতে দায়হীন-মাধ্যম এটা। 
তবুও আমি সম্বাদিকদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, মারধর, খুন এবং মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে কারারুদ্ধ করার বিপক্ষে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। বলছিলাম প্রেস কাউন্সিলের কথা। প্রেস কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে-- ''প্রেস কাউন্সিল একটি কোয়াসি জুডিশিয়াল বা আধা বিচারিক প্রতিষ্ঠান। প্রেস কাউন্সিল আইনের ১২নং ধারার বিধান অনুযায়ী সংবাদপত্রের বিরূদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগ সমূহের বিচারকার্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। '
এখান থেকে স্পষ্ট গণমাধ্যম দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি আইনের আশ্রয় চাইতে পারবেন এবং প্রেস কাউন্সিল এর বিচার করবেন। কিন্তু আমরা কি দেখি
বিম্পি জমাতের আমলে সম্ভবত তথ্য পাচারের অভিযোগে সালিম সামাদ, প্রিসিালা রাজকে গ্রেপ্তার রিমাণ্ড নেয়া হয়েছিল। আর খুলনা যশোরে খুন হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন সম্বাদিক-সম্পাদক। 
আম্লীগের আমলে খুন হয়েছে সাগর রুনিসহ বেশ কয়েকজন সম্বাদিক। আর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেই আছনে- শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমান। ইটিভির মালিক সালাম, ইনকিলাবের বার্তা সম্পাদক রবিউল্লাহ রবি শীর্ষ নিউজের সম্পাদক একরাম (এখন মুক্ত) গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সর্বশেষ বাংলা মেইলের তিনজনকে ধরলো আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযোগ একটা ভিভিআইপ' মৃত্যুর গুজবের খবর। নিশ্চিতভাবে এটা গর্হিত কাজ। অন্যায়। কিন্তু একটা অন্যায়কে আরেনকটা ন্যায়হীন মাধ্যমে মোকাবেলা রাষ্ট্রীয় চরিত্র হতে পারে না। 
আইন সবার জন্য সমান। এটা নিশ্চিত। সম্বাদিক বলে কেউ ছাড় পাবেন, তা মানি না। কিন্তু আইন প্রয়োগের জন্য রাষ্ট্র যে সব প্রতিষ্টান গড়েছে, সে সব প্রতিষ্ঠানকে উপেক্ষা করাটা কতটা সমীচীন , শুধু অধম আদমের প্রশ্নটা থাকলো

 

কিস্তি ৭২: কিছু অসাধারণ স্মৃতি ও বিভ্রাট।


 
কিছু অসাধারণ স্মৃতি মানুষকে সব সময় জাগিয়ে রাখে, আনন্দে রাখে, এ সব স্মৃতি হাতড়ে মানুষ সুখ পায়। আমার সে রকম মনে রাখার স্মৃতি শ্রীঙ্গল  ট্যুরটি।  আমার সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম লং ট্যুর ছিল সেটি।  সেই ট্যুরে যারা গেছে তাদের সবার কাছে এটি এখনো ভালো একটা স্মৃতি হয়ে আছে বলেই মনে করি। শ্রীমঙ্গলের সেই ট্যুরটা ছিল প্রচণ্ড শীতের মধ্যে। 

রাত ন’টার মধ্যে বাস আসার কথা। বাস আসছে না, টেনশন। সবাই রেডি, কখন আসবে বাস?  বাপ্পী ফোনে কার সাথে কথা বলছে। এসে বলল, ভাই যে বাসটা আমাদের দেয়ার কথা, সেটা অ্যাকসিডেন্ট করেছে।  নতুন একটা পাঠাচ্ছে। অনেক্ষণ পর বাস এলো। সেই বাসের পেছনের দিকের কাঁচ ভাঙ্গা।  বাবু ও আমার মধ্যে যত বিবাদই থাক আমরা কখনোই প্রকাশ করি না। এ ক্ষেত্রেও তাই হলো।  আমরা দুজনেই  আসলে একজন অন্যজনকে সম্ভবত খুব বেশি ভালো জানি।  আবার খুব বেশি খারাপ জানি। 

এখানে সে সব বলা উদ্দশ্য নয়, অনেকে বলতো আমরা মানিক জোড়।  হবে হয়তো।  আমি ও বাবু দুজনে সিদ্ধান্ত নিলাম সিনিয়র হিসাবে বাসের সামনে আসন গেড়ে বসার বদলে আমরা সব ট্যুরে পেছণে গিয়ে বসব।  প্রথম ট্যুরেই  সেটার বাস্তবায়ন করা হলো। আমরা দু’জনেই বাসের শেষ সিটে গিয়ে বসলাম। প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে যাবার মত অবস্থা।  গাড়ি  ছুটছে শ্রীমঙ্গল। মধ্যরাতে আমরা বিরতি দিলাম উজান ভাটিতে। সেখান থেকে বাবু আর আমি দুইখান মাফলার কিনলাম। সেই রকম গরম মাফলার। এটা প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। ভোরের একটু আগে এসে শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়ার একটু আগে ডিএফআইডির বাংলোর সামনের  টিলায় ওঠার একটা মোড়ে আটকা পড়লাম। তখনো ভালো মত ভোর হয়নি। গাড়ির নাকি লিভার ফেইল। তাই এই আটকে পড়া। অনেক চেষ্টা চরিত্তর করে সেটি ঠিক করা গেলো না।  তাই সবাইকে বললাম, বাস থেকে নেমে এসো। চা বাগানে ভোর দেখার অপার সুযোগটা আমরা সবাই নিলাম। সেই ট্যুরে আমাদের সাথে যারা ছিলো তাদের অনেকেই পরে আমার খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। 
মৌ, গ্লোরিয়া, লিপি, সাদিয়া,  পুনম, সাম্য, মীর মামুন, বাপ্পাী, শাশীম, সাংবাদিক সমিতির থেকে আসা আমার বন্ধু সেলিম, শামীম, ছোট ভাই ইব্রাহিম ও আশিকসহ আরো অনেকে। সবার নাম এ মুহুর্তে মনে পড়ছে না। 

সবাই বের হয়ে চা বাগানে ঘোরাঘুরির পর পর জানা গেলো গাড়ি ঠিক হবে না। তাই লোকাল একটা বাস পেয়ে ওই বাসেই আমরা সবাই  গেলাম  হীডের বাংলাতে। সেখানে পৌছে রুম ভাগ করে দেয়ার পর সবাই ফ্রেশ হয়ে সকালের নাশতা সেরে নিল। জানালাম সবাই রেস্ট নিক। আমি ও বাবু মিলে একটা লোকাল বাস ঠিক করলাম। সেই বাসে করে আমরা শ্রীমঙ্গলে চা বাগান, লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট, খাসিয়া পুঞ্জিসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে সেদিন দুপুরের মত ট্যুর শেষ করলাম। 

বিকালে আমরা গেলাম একটা চা কারখানায়। সেখানে  বাগান থেকে তোলা পাতা প্রসেস করা হচ্ছে। আমি ও বাবু সকালেই অনুমতি নিয়ে এলাম। বিকালে সেখানে সবাই ভিন্ন রকমের একটা আনন্দ পেলো। সাধারণত কারখানায়  এত লোক অ্যালাউ করা হয়না, কিন্তু সে দিন কীভাবে যেনো আমাদের লাক ফেভার করে গেলো জানি না। সন্ধ্যার দিকে বাংলোয় ফেরা হলো। সবাই কান্ত।  বাংলোয় এসে  রেস্ট নিচ্ছে। পরের দিন সকালে আমাদের যাওয়ার কথা মাধকুণ্ড জলপ্রপাত দেখতে। সেই ঝর্ণা শ্রীমঙ্গল থেকে তিন ঘণ্টার জার্ণি।

রাতেই বাসের  মিস্ত্রি এসে বাস ঠিক করলো। সকালে বাস দেখলাম বাংলোর সামনে। খুব ভালো লাগায় মনটা ভরে  গেলো। আগের রাতটাকে এনজয় করার জন্য আমি ও বাবু প্ল্যান করলাম।  সে প্ল্যান হলো বার বি কিউ হবে। কিন্তু শ্রীমঙ্গলের কমলগঞ্জে জঙ্গলের মধ্যে বার বি কিউ করার মত অভিজ্ঞ লোক বা সরঞ্জাম  দুটোর কিছুই পেলাম না। আমি আর বাবু  দুজনে গেলাম ভানুগাছ চৌরাস্তা বাজারে। সেখান থেকে ব্রয়লার মুরগি কেনা হলো।  সাইকেলের শিক  পাওয়া গেলো। শিক চোখা করে আনলাম। বাংলোর বাবুর্চিকে বললাম মুরগি ধুয়ে ভালো করে মশলা পাতি মাখিয়ে দিতে। কি কি মশলা লাগবে তাও  এনে  বুঝিয়ে দিলাম। বাবুর্চি তাই করলো। রাতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার ভেতর টিলার ওপর বাংলোর পাশে আমরা বার বি কিউ  করলাম। মুরগি পোড়াচ্ছি আমি আর বাবু। সবাই একটু একটু করে টেনে টুনে খেয়ে ফেলছে। সেই  বনে পোড়ানো মুরগির যে কী স্বাদ, সেটি কেবল  খাদকরা (!) বুঝতে পেরেছিলেন। আমরা অনেক ক্ষণ আনন্দ করলাম বার বি কিউ নিয়ে। 

তার পরের রাতে আরো মজা হয়েছিল।  আমরা সন্ধ্যার পরে ঘণ্টা খানেক ব্রেক দিয়ে রিয়ালিটি শো করলাম। ফান রিয়ালিটি ।  এ আইডিয়াটা আমি  নিজেই তৈরী করেছিলাম। আগে যখন ট্যুরে যেতাম, দেখতাম খালি বক্স পাসিং খেলা হয়। কয়েক মিনিটে শেষ। আমি ভাবলাম বিকল্প দরকার। তাই  বিভিন্ন বিষয় লিখে একটা  বক্সে রাখা হবে, যে যেটা পায় সেটি পারফর্ম করবে। দারুণ একটা খেলা। দারুন বললাম এ কারণে সেখানে যে সব সাবজেক্ট অ্যাড করা হলো সেগুলো ছিল মজার। চলমান সময়ের বাংলা সিনেমার বিভিন্ন সংলাপ, সিনেমার নাম ও গান সহ বিভিন্ন বিষয় সেটাকে অন্তর্ভূক্ত ছিল । এভাবেই পরের রাতটি আনন্দ ঘন হয়ে উঠলো। বিশেষ করে ডিপজলের ডায়ালগগুলো বেশ চলছিল। বলে রাখি বাংলা সিনেমার প্রতি আমার ও বাবুর বিশেষ দূর্বলতা রয়েছে। আমরা দুজনেই সময় পেলে অশ্লীল (!)  বাংলা সিনেমা দেখতাম। সময় না পেলে জোর করে সময় বের করেও দেখতাম। 

 হিডের বাংলোয় দুদিনের খাবার ও থাকাটা এখনো নিশ্চয় অনেকের স্মরণে আছে। অনেকে আমাকে এখনো এ ট্যুরটার কথা বলেন। সম্ভবত আমার বিবেচনায় শ্রীমঙ্গল ট্যুরটি ছিল  সবচেয়ে বেশি  নির্মল আনন্দদায়ক ও  মনে রাখার মত ট্যুর।  তবে আমার যামানায় একটা ট্যুর খারাপও হয়েছিল। সে কথাও আমি জানাবো, পরের কোনো একটা পর্বে।

শাফিন আপনি একা নন; আমরা আছি! জেগে আছি!!


বন্য হাতিটি দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে বিবিসির খবর! আর বন্য হাতি যেখানে দুর্বল সেখানে সবল বঙ্গবাসী নিশ্চয় প্রমোদে ব্যস্ত? কি বলেন, ভাইসব!  আমি অন্তত তাই মনে করি!

আমরা অবশ্য বন্যা নিয়া কথা কইতে পারুম না। কারণ হৈলো- এ জলটা নেমে এসেছে দীপিকা, সানি লিয়ন, ক্যাটরিনা আফা আর  খান সাবদের  তল থেকে। সে তলের জলে অতলে হারাইলেও আমাদের কইতে হবে-- যে -- বন্যা এক উপকারি জিনিস। এর মাধ্যমে প্রচুর পলি আসে। সেই পলিতে জমি ভরে উব্বর হয়। সেই উব্বর জমিতে ভারতীয় শিল্পীরা প্রতি মাসে কনসার্ট করতে আসে।


তো, তা যাই হোক। ইনডিয়ার  যৌনতার পাপি জলের চলে তলিয়ে যাওয়া উত্তরবঙ্গ আর   ছলনার জলে ডুবতে যাওয়া সুন্দরবন নিয়ে ভাবনার ভ্রিত্রে আরেক ঘটনা!

মাইলস ব্যান্ডের সাথে 'ফসিলস'  ব্যান্ড গাইবে না। পড়তি জনপ্রিয়তার গানের দলটা রাজনৈতিক-বাণিজ্য কৌশল নিলো।  তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কলকাতায় আজাদি কনসার্টে  মাইলসের সাথে এক মঞ্চে উঠবে না বলে ঘোষনা করলো। আয়োজকদের কাপড় খুলে গেলো। মাইলস বলে দিলো-- এ ক্যাচাল করে তারা সেখানে গাইতে যাবে না। (খবর বিবিসি বাংলা'র)

 তাদের বহু  মত-দাস আছে বঙ্গে। স্বেচ্ছায় বিবেক বন্ধক রেখে বঙ্গে ইনডিয়া পাকিস্তানের দালালি করা লোকের অভাব নেই।
 কথায় আছে -- ভাত ছিটালে কাউয়ার অভাব হয় না। বিষয়টা এ পর্যন্ত ভালো ছিল।
কিন্তু সানি লিওন আর ক্যাটরিনা থাকলে  ইনডিয়ান-সমর্থক তরুণ প্রজন্মের অভাব হয় না। এটা এখন প্রমাণিত সত্য!

 হায় আল্লাহ আমার কি হবে! যদি ইনডিয়া পাশে না থাকে। চুদির ভাই টাইটের এ রকম কিউট  নুলা কথা শুনবেন আপনি। আমিও শুনি। পাকিস্তান গত হইছে। ইনডিয়ার আগ্রাসন চলতাছে।  আমাদের এ সব মানতে বাধ্য করছে, অনেকে। স্বজ্ঞানে।

 শাফিনকে কাঠগড়ায় খারা করানো হইছে, তার ইনডিয়া বিদ্বেষের অভিযোগে।  আমি তন্ন তন্ন করে তার ফেসবুক পেজটা খুঁজে দেখলাম, কিন্তু ইনডিয়া বিদ্বেষ , ইনডিয়াকে আক্রমণ করে তার কোন বক্তব্য পেলাম না। আমি অবশ্য চর্মচক্ষে দেখেছি, যারা অন্তরচক্ষু দিয়ে মাথার চুল দেখে  নুনুর বাল গুণে থাকেন, তাদের কথা আলাদা।

আন্দাজ করি-- বেগম জিয়ার সাথে শাফিনের দেখা করাটাই কাল হয়েছে।  এর আগে ন্যান্সিও একই রকম সমস্যায় পড়েছিলেন। খালেদা জিয়ার বক্তব্য সমর্থন করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়া, সে কী হয়রানি তার!  পুলিশি তাকে হয়রানি করেছিল।  আর সকরারি দল পারলে তাকে চৌরাস্তায় এনে  ন্যাংটো করে অবস্থা। অবশ্য তার চরিত্র নিয়ে ব্যাপক যন্তর মন্তর করেছিল, তারা।

ভিন্ন মত, ভিন্ন  দৃষ্টিভঙ্গিকে সহ্য করার মত এক দমন দিল আমাদের আল্লায় দেয় নাই। তাই ছ্যাঁত করে উঠি সবাই।  বাংলাদেশের পক্ষে কথা বললে- এটা কারো না কারো বিপক্ষে যাবে ।  তিরিশ লাখ বা তারো বেশি মানুষ যদি ভাবতো-- আমাদের মত-- আমার কি হবে? তালে এ দেশ স্বাধীন হতো না।

তাই তাদের রক্তের সাথে ঈমানের সাথে থাকতে চাইলে, তাকে ভারত বিদ্বেষি, পাকিস্তান বিদ্বেষি, আম্রিকা বিদ্বেষি, ইসরাইল বিদ্বেষি, রাশিয়া বিদ্বেষি, তুরস্ক বিদ্বেষি--- এ রকম নানা তকমা সইতে হবে।  শাফিন সেটি সইছেন।

 কথা একটা- শাফিন আপনি একা নন।  আমরা আছি!! জেগে আছি।  জলবন্টন নিয়ে বছরের পর প্রতারণা সয়ে যাচ্ছি, সীমান্তে হত্যা সইছি, জঙ্গিবাদের অভিশাপ সইছি, মাদকের বাজার সইছি, শিল্পী বিনিময়ের নামে  নিজের সংস্কৃতি বিসর্জন দিছি-- বাকি কিছু নাই। তবুও আপনারা যারা আছেন, মাথা উঁচা কইরা কথা কইবেন। আছি। পাশে আছি।  


এই চাটা রাজনৈতিক প্রজন্ম লইয়া জাতি কি করিবে?

ইন্ডিয়ান দিদিদের খসানো জল চাটারা কই! উত্তর বঙ্গে জলে ডুবাই দিছে ইনডিয়া । অগো জল যৌবনের পাপ আমাদের গরিব, নিরীহ মানুষের উপর ছাইরা দিয়ে মজা দোখতাছে!
অগো দৈত্য সুলভ, সব চারখার করে দেয়া মানসিকতার প্রতিক বুনো হাতি বাঁচাতে বিশেষজ্ঞ আসছে বলে, বিবিসি বাংলার গতকালের খবর ।
তা মানুষ যে ডুবে আছে, তাদের উদ্ধার কেমনে হবে ? সে বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞ আসছে, শুনি ।
শুকনো মওসুমে জল আটকে উত্তরবঙ্গ মরুভূমি করে রাখা সব ক'টা গেট খুলে দিয়ে আমাদের উদ্ধার করছে , ইনডিয়া, তাই না! আসেন তালিয়া বাজাই । সানি লিওন লিখে গুগল করি । যৌবল জ্বালান তো বড় জ্বালা । মানুষ থাকলেই কি, আর না থাকলে কি !
ইন্ডিয়ান আধিপত্যবাদ , বঙ্গীয় মানুষের উপর জলজ অনাচার, মাদক, জঙ্গি, পণ্য আর সীমান্তে মানুষ খুন করে- তারা আমাদের সৎ প্রতিবেশী! তাদের মন খারাপ করলে আপনি ব্যান ! এই আমাদের চাটা রাজনীতি ।
এ চাটা রাজনৈতিক প্রজন্ম লইয়া জাতি কি করিবে?

জল থামাতে জলের আয়োজন!


                              পাঞ্জাবী ট্রডিশনাল ড্রিংকস! সবাই জলের মত খায়!

প্রতিদিনকার খাবার, তবে একটু আয়েশি।  খাবারের সাথে ঘি, ভাজা জিরা, কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজের টুকরো সামনে আনলে জিভে জল না আসে পারে। সে জল থামানোর জন্য আবার জলের আয়োজন।   ছাতু আর লাচ্ছি। হেলদি লাচ্ছি, অল্প মিষ্টিতে ঘুঁটে দেয়া হবে আপনার সামনে। কাঁচামরিচের চায়ের মত কাঁচা মরিচ ডোবানো ছাতু। এ সব পাঞ্জাবী খাবারে আলাপ। 

ভারতের পাঞ্জাব নগরের রমণীদের সুনাম আছে। শেষ বিকালে অস্তমায়ন সূর্যের রঙ নাকি ছুঁয়ে থাকে কিশোরী-তরুণীর মুখ। সে  নগরের খাবারের সুনাম ছড়িয়েছে ইনডিয়ায়। বিশেষত সাউথ ইনডিয়াজুড়েই তো এর সুনাম। বঙ্গেও এর সুনাম আছে। পর্যটক হিসাবে আমরা যারা সিমলায়-মানালী ঢুকি, তাদের একবার  পাঞ্জাব থামতে হয়। ডাল মাখানিতে নান ডুবিয়ে খেতে খেতে অনেকেরই মনে হয়েছে- আহা! অমৃত! 

সে খবার এবার রাজধানি ঢাকায়ও আসলো।  তবে সায়েবি কায়দায়। লা মেরিডিয়ানে  গেছিলাম, সোমবার।  লিফটের ১৬ নম্বর বোতাম টিপলে চোখের সামনে একটা পাঞ্জাবী যুগল-ট্রাকের উপর! সেটা থেকে একটু সামনে এগোলে সাদা কুর্তা আর লাল ট্রাউজার পরা, মাথায় পাগড়ি দেয়া  তরুণ, এগিয়ে ধরে কাঁচা মরিচ চুবানো মাঠা জাতীয় পানীয়ের গ্লাস।



পানীয় পরিবেশন প্রস্তুতি!

হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ছিলো সাজানো সব পাঞ্জাবী খাবার। তবে এত খাবার পাঞ্জাবে একসাথে দেখিনি। রেস্টুরেন্টে আমার মত কাল্লুর কাছে খাবারের অর্ডার নিতে ২০০২ সালে বিকালে যে তরুণি এসেছিল, চোখ কচলে তাকে দেখেছি আগে! তারপর খাবারের অর্ডার করে একগ্লাস পানি খেলাম! 
সেই খাবার অনেকদিন পর আবার খেলাম পাঁচতারকা হোটেলের রেস্টুরেন্টে! 
খাবারের টেবিলটা সাজানো- একটা বাটিতে চামচ তিন ঘি, তিন পিস পোড়ানো মুরগি, একবাটি ভেড়ার খুরার সুপ! এক বাটি ডাল মাখানি। দু চামচের মত পোড়ানো জিরা গুঁড়া, পেঁয়াজ, লেবু আর কাঁচামরিচ জমা করা একটা বাটি। আনা হলো- তিন পদের রুটি। 

                                        খাবার সাজানো হলো টেবিলে!

জিভের জল সামলানো কঠিন। 
সে কঠিনকে আরো কঠিন করে দিলে ফুডলাউঞ্জে গুর্দে কাপুরি নাল কিমা কলিজা। সে রকম খাবার। গরুর কলিজার সাথে গুর্দার কিমা মিক্সড করে রান্না করা খাবারের সাথে নান- আহ! কত দিনপর গালে পুরলাম। 
                                         নাল কিমা কলিজা, জল আটকাতে পারছি না!
খাবারের ফাঁকে ইনডিয়ান শেফ শমসের সাথে কথা। বললেন, মুরগি, ভেড়ার খুরার সুপ, রুটি আর ঘি মাখিয়ে খেযে নেওয়ায় তাদের রেওয়াজ। 
ভেড়ার খুরার সুপটাকে তার অর্গানিক বলে। কারণ এর সাথে দেয়া সব কিছুই লোকাল। 
একটা রেসিপিও জেনে নেয়া গেলো তার কাছ থেকে--KHARODEY DA RAS (এটার উচ্চারণ কি হবে? খারুদি দা রাস!) সে নাম যাই হোক খাবারটা সিরাম! 

ল্যাম্ব ট্রটার্স নিয়ে সিদ্ধ করে পানির সাথে আদা, রসুন, ধইন্নার গোটা, কুচি করে কাটা পেঁয়াজ দিয়ে রান্না শুরু করে দিলেই হলো। 
এটার নিয়ম নাকি এ রকম---একটি পাতিলে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি লাল হওয়া পর্যন্ত আগুনে পোড়াতে হবে। ভেড়ার পা এবং আদা রসুন বাটা দই ঝাঁটা এবং পেঁয়াজ পেস্ট ভেড়ার গোশতের সাথে যোগ করতে হবে। লিগানের সাথে শুকনো মসলা মিশিয়ে রান্না চলাকালেই ভেড়ার গোশত ঢেকে দিতে হবে। রান্না হয়ে গেলে সস মিশিয়ে আদার কুচি দিয়ে পরিবেশন। 
                                      ঢোকার আগেই!!

উত্তরবঙ্গে গিয়ে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানান না!

পারলে উত্তর বঙ্গে গিয়ে  তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানান না! ফারাক্কা বাঁধ আর গজল ডোবায় তিস্তার পানি আটকে রেখে তো পুরা উত্তরবঙ্গ মরুভূমি বানিয়ে ফেলেছেন। তো সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে পারে না; তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। হতে পারে না। কারণ হলো নদীর সব পানি আটকে নদী মেরে দিয়েছেন মনমহন, শন মহন আর মোডি কাকুরা। তা কাঁচামাল নেবেন কেমনে। রাস্তারও তেরটা বেজে আছে।

তো রামপাল।

ফারাক্কার প্রভাবে এমনিতেই সুন্দরবনের শিরা উপশিরার নদী গুলোর পানি নোনতা হয়ে আছে। বাড়তে আছে নোনতার আধিপত্য। তার ওপর এখানে ট্রলার চলবে, কাঁচামাল আসবে, ছাই উড়বে আর সুন্দরবন ধীরে ধীরে আক্রান্ত হবে ক্যান্সারে। মরে যাবে চোখের সামনে। কিছু নরাধম সে জমি দখল করে ঘের বানাবে। 

পরিবেশবাদিদের প্রতিবাদের মুখে সরকারের অধিদপ্তর ---ইনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ) প্রতিবেদন দিয়েছে। সে অনুযায়ী ১৩২০ মেগাওয়াটের এ প্রকল্পের জন্য বছরে ৪৭ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা পোড়ানো হবে।

যেখানে ১ টন কয়লা পুড়লে ২ দশমিক ৮৬ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়। সেই হিসাবে এই প্রকল্প ৮০ শতাংশ লোড ফ্যাক্টরে উৎপাদন করলেও বছরে ১ কোটি ৮ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হবে। যদিও সরকারের প্রতিবেদনে সুপার ক্রিটিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহার করায় উদ্যোক্তাদের হিসাব মতেই, ৭৯ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে বাকি কার্বন ফ্লাই অ্যাশে যোগ হবে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে।

উদ্যোক্তাদের হিসাব সঠিক বলে ধরে নেয়া হলেও প্রশ্ন থা্কছে--- ৭৯ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড কী কম ক্ষতিকর! যত উঁচু চিমনিই ব্যবহার করা হোক না কেন বাতাসের চেয়ে ভারী এই গ্যাস তো এই দেশেই ফিরে আসবে, ফিরে আসবে সুন্দরবনের বুকে।

বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাই-অক্সাইড (বছরে ৫১ হাজার ৮৩০ টন) ও ৮৫ টন বিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (বছরে ৩১ হাজার ২৫ টন) নির্গত হবে। বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত গ্যাস সুন্দরবনের বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব বর্তমান ঘনত্বের তুলনায় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়ে গোটা সুন্দরবন ধ্বংস করবে--- তারপরেও সন্দেহ জাগে!

রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের প্রতি একজন দলিত জনতার আর্জি



রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের প্রতি একজন দলিত জনতার আর্জি

 জনাব

সাধারণ ডায়েরি যে থানায় কোনো গুরুত্ব পায় না, এটা নিশ্চিতভাবেই আপনারা এখন উপলব্ধি করছেন।  নইলে এত দিন ধরে নিখোঁজ তরুণরা 'জঙ্গি' হিসাবে আত্ম-প্রকাশ করছে। অথচ পুলিশের কাছে কোন তথ্য নেই। গোয়েন্দারা কানামাছি খেলছেন। এটা কীভাবে বিশ্বাস করি। বিডিআর বিদ্রোহের মত এক স্পর্শকাতর ঘটনার পরও গোয়েন্দাদের সামর্থ বাড়েনি ।  এটা  বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ দরকার ছিল। তা করা হয়নি। সময় এখনো শেষ হয়নি, এখনো করা যেতে পারে।

নিখোঁজ বাংলাদেশে এক নৈমেত্তিক  ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার ও বিরোধীদল দু'পক্ষ একে অন্যকে দোষারোপ করে যাচ্ছেন। কিন্তু একটি গুম, একটি নিখোঁজ, একটি খুন, একটি অপমৃত্যু-একটি পরিবারের জন্য কী দুঃসহ সময় নিয়ে আসে! মানবিক হৃদয় দিয়ে তা অনুভব করুন। মানুষকে মানুষ হিসাবে ভাবুন। মানুষকে হয়রানির করার কোনো অধিকার কারো আছে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবেই মনে করি না।

জনাব

এ দেশে হয়রানি একটি  উদ্ভাবনী বাণিজ্য। কোনো কিছু আরোপ করে এখানে মানুষ খুন করা একটা সাধারণ ঘটনা। এখানে সোশ্যাল মিডিয়ার পারদ উঁচুতে। গল্পবাজারে ছেড়েই আপনি মজা দেখতে পারবেন। বিচিমুক্ত লোকে  দেশ ভরে গেছে।  প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। তাই অপাত্রে বীর্যস্খলন ঘটাচ্ছে বহুন তরুণ-তরুণী। তাদের কাছে জ্ঞানের ভাণ্ডার নেই। ইতিহাসের নির্মোহ শিক্ষা নেই। দলীয় সংকর্ণীতা, পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার বিকার আর  মুহুর্তে চোখ উল্টানো স্বভাবের নাম ওরা দিয়েছে  'কর্পোরেট'।  এখান থেকে বের হওয়ার উপায় আছে। তবে সে জন্য আগে আমাদেরই ঠিক হতে হবে, আমরা কি হতে চাই। আমরা কি একটি মানবিক রাষ্ট্র হতে চাই। নাকি একটি অমানবিক।

 জনাব

ধর্ম নিয়ে শঙ্কায় থাকি। বক্তিগতভাবে আমি একজন পাপি মানুষ। কিন্তু  প্রতিপালকের ওপর অবিচল আস্থা আমার আছে।  তবে ধর্মকর্ম নিয়ে বিস্তর পড়াশোনার ইচ্ছা অনেকের।  ভয়ে পড়তে পারেন  না। কারণ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী ক'দিন পর পর 'জিহাদি' বই উদ্ধার করে মানুষকে হয়রানি করে। খোঁজ নিয়ে দেখলাম, 'জিহাদি' বইয়ের সংজ্ঞা, নামধাম, তালিকা কোনোটাই আপনারা করেন নি। তাহলে 'জিহাদি' বই মানে কি দাঁড়ায়। জঙ্গি বানানোর উপকরণ। দয়া করে জিহাদি বইকে সংজ্ঞায়িত করুণ।  একই সাথে তালিকা প্রকাশ করে ওই সব বই বাজেয়াপ্ত করুন এবং  এর জন্য দণ্ড ঠিক করুন।তাহলে নিরীহ মানুষ  দুুঃশ্চিন্তা মুক্ত থাকরার সুযোগ পাবে।  

 জনাব

 আমি জানি, আপনাদের আবেগ আছে। প্রেম প্রীতি-ভালোবাসা আছে।  আমরা তার আবেগ অনুভূতি ও ভালোবাসার প্রকাশটা দেখতে চাই। আশা করছি আপনাদের প্রীতি সব ধরণের শঙ্কা উড়িয়ে নতুন এক দিগন্তের সূচনা করবে। 

সন্তান নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা মা বাবাকে জ্ঞান দেয়ার আগে- আরেকবার ভাবুন


আইএস ইসুতে ব্যাপক হারে মা বাবাকে জ্ঞান দিচ্ছেন অনেকে। বলি জনাব, জনাবা- নিজের চরকায় তেল দেন ।
মা বাবার ব্যস্ততা বা সন্তানদের সময় দিতে না পারার কারণ একটাই, পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা। ভোগ প্রতিযোগিতাই এখানে মুখ্য । তো ভোগ করতে হলে তো ব্যস্ত থাকতেই হবে । 

স্কুল ফিসের উপর ভ্যাট বসাবেন , দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণহীন থাকবে, কৃষক তার ফসলের সঠিক মুল্য পাবেন না, সিনেমা হল তুলে দেবেন, মসজিদে-মন্দিরে-গির্জায় গেলে তাচ্ছিল্য করবেন, খেলার মাঠ দখল করে রাজনীতি করবেন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ক্যাডার নিয়োগ দিবেন, বাস-রেলের ভাড়া বাড়বেন, বিদেশি নায়িকা এনে নাচাবেন, গ্যাস, পানি, কারেন্টের দাম বাড়াবেন ---

আর মা বাবাদের তুলে কথা বলবেন, তা ত চলতে পারে না ।

সুখ অসুখের গল্প ৮ : কিছু সতর্কতা আপনার চিকিৎসাকে সহজ করবে।



সুখ অসুখের গল্প ৮ : কিছু সতর্কতা আপনার চিকিৎসাকে সহজ করবে।

ইনডিয়া মানে সব ভালো ডাক্তার তা কিন্তু নয়। আপনাকে সেখানে যাওয়ার আগে সতর্কতার সাথে ডাক্তার এবং হসপিটাল সিলেক্ট করতে হবে। কলকাতা অনেকটা দালার ঠাঁসা। আর হেলথ টুরিজমের নামে আপনাকে অনেক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এবং এ সব ক্ষেত্রে শুরুতেই বলবে, স্যার আমরা আপনাকে ফ্রি কন্সালটেশন দিচ্ছি। পরে বলবে, স্যার আপনাকে সেবা দেওয়ার জন্য ১০০ ডলার ফি দিতে হবে। তাও বলবে ঘটনার শেষে!

সুতরাং আপনি যদি কোন ইনডিয়ান এজেন্টের সাথে জানতে  কথা বলে থাকেন, তাহলে আগেই সার্ভিস ফি'র বিষয়টি জেনে নিন। তারপর  আলাপ করুণ। আমি নিজে ইনটেক্সরে সাথে কথা বলেছিলাম। তারা প্রথমে জানালো আমাকে কোন টাকা গুনতে হবে না। পরে ্তাদের আরেকজন আলাপকালে বললো, স্যার সার্ভিস শেষে আপনাকে ১শ ডলার পে করতে হবে! তারপর আমি আর ও মুখো হইনি!

 তবে আপনি একটু চোখকান খোলা রাখলে নিজেই নিজের কাজটি করে ফেলতে পারেন।  এখন অনলাইনের যুগ, আপনি চাইলে সব কিছুই দেশে বসেই সেরে নিতে পারেন।

 আপনি যদি শখে শখে ডাক্তার দেখাতে না চান, তাহলে আপনার বাংলাদেশের ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র থাকার কথা। এবং  টেস্টের রিপোর্টও। আপনি টেস্টের রিপোর্ট পাঠাতে পারেন, হসপিটালে। কর্পোরেট হসপিটাল, মানে টাকা পয়সা কামাই করার হসপিটালে বিদেশিদের সার্ভিস দেওয়ার জন্য আলাদা ডিপার্টমেন্টই আছে। এর নাম ইন্টারন্যশনাল পেশেন্ট ম্যানেজম্যান্ট, বা কারো  লাউঞ্জ কারো সার্ভিস এ সব নামে থাকে। আপনি যে হসপিটালে যাচ্ছেন, তার ওয়েবসাইটে গেলেই এর লিঙ্ক পাবেন। লাইভ চ্যাট অপশনও আছে।  সেখানে মেইল করুণ। তবে এটা ইংরেজিতেই করতে হবে।

 নিজে ইংরেজি না জানলে, পরিচিত কারো সহায়তা নিতে পারেন।  মেইল করলে আপনি সবচে দ্রুত রেসপন্স পাবেন এ্পলো, রিলায়েন্স, আম্বানি , লীলাবতি হসপিটালের। তবে পাবলিক বা দাতব্য হসপিটালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহায়ক সিএমসি ভেলর। এখানকার খরচও কম। হসপিটালটি আপনার মেইলের ভিত্তিতে খরচ এর  হিসাবসহ জানিয়ে দিবে।  আপনি আপনার  মেডিকেল রিপোর্ট পাঠিয়ে দিলে তারা রিভিউ করে  ট্রিটমেন্টপ্ল্যান মেইল করে দিবে।

 এ জন্য অবশ্যই আপনাদের নির্দিষ্ট ডাক্তার বা ডিপার্টমেন্টে মেইল পাঠাতে হবে। যেমন নিউরো লজির জন্য  নিউরো ওয়ান  বা নিউরো টুতে আপনি  আপনার সমস্যা অনুযায়ী ডকুমেন্ট পাঠালে তারা আপনাকে ডিটেইল জানাবে।  সেখানে চিকিৎসার জন্য  কেমন সময় লাগবে তাও জানিয়ে দেবে।

দিল্লি এইমস হসপিটাল ইনডিয়ার নম্বর ওয়ান হসপিটাল। সেখানেও এখন বিদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রাইভেটের মত ঝটপট চাওয়া মাত্র সেবা পাওয়া যাবে না। কিছুটা সময় নিতে হবে। সেখানে চাইলে  আপনি কেবিনও নিতে পারবেন।  ইনডিয়ার দ্বিতীয় বেস্ট হসপিটাল চণ্ডিগড় পোস্ট গ্রাজুয়েট হসপিটাল। সেখানে আপনাকে সরাসরি গিয়ে তারপর ডাক্তারের সিরিয়াল দিতে হবে। তবে দিল্লি এইমসে আপনি ইনডিয়া পৌছেই সিরিয়াল দিতে পারবেন। সে জন্য আপনার একটিভ ইনডিয়ান মোবাইল সংযোগ লাগবে।

সিএমসি ভেলোরে ডাক্তার দেখানোর জন্য প্রাইভেট ও  নরমাল দু রকম সিস্টেমই আছে। প্রাইভেটে দেখাতে ৬০০ রুপি লাগে। পাবলিকে ২০০ রুপি।  আরো কমেও আউটডোরে দেখানো সম্ভব।

আর এপোলো টাইপের হসপিটালে দেখাতে ডাক্তার ভেদে ১০০০ থেকে ১২০০ রুপি খচর করতে হবে। তবে মনে রাখবেন এপোলো টাইপের হসপিটালে  টেস্টের খরচ বেশি। এ ক্ষেত্রে আপনি চাইলে আপনার কি কি টেস্টের প্রয়োজন হতে পারে তা একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে আইসিডিডিআরবি'র  মহাখালী থেকে টেস্টগুলো করিয়ে নিতে পারেন। রাখবেন, তারা বঙ্গীয় ব্রাক্ষণ ডাক্তার নন যে, যেখানে তার কমিশন আছে সেখান থেকে টেস্ট করা হবে। আপনার টেস্ট থাকলেই হলো! তবে কিছু টেস্ট আপনাকে হয়ত নতুন করে করাতে হতে পারে।

জেনে রাখুন, বড় হসপিটালগুলো অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করানো হার খুবই কম! এটা তারা খুব ভালো মানুষ বলে নয়, এটা ইনডিয়ার আর্থ সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে।  কারণ ইনডিয়ানরা খরচের ব্যাপারে খুবই  সতর্ক। তাই মন চাইলো আর টেস্ট দিলো, সেটা করে ডাক্তারের চেম্বারে হুমড়ি খেয়ে পড়বে এমনটা নয়।

 মাস তিনেক ধরে ইনডিয়ার হসপিটাল গুলোর খবর নিছিলাম। সে অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আপনি যদি কেবল চেক আপ এবং ডাক্তার দেখাতে চান , সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য দিল্লি এপোলো বেস্ট অপশন। কম টাকায় প্রাইভেট চিকিৎসার জন্য সিএমসি।  এর বাইরে মুম্বাইয়ের আম্বানি হসপিটাল ভালো।  ব্যাঙ্গালোরের  দেবীশেঠির হসপিটালরের কথা সবাই জানেন । কিন্তু মিস্টার শেঠিকে আপনি কলকাকতায়ও দেখাতে পারেন। কারণে তার হসপিটালের যাত্রা কিন্তু কলকাতায়। এবং রবীন্দ্র নাথের নামে একটা ট্রাস্ট এটি পরিচালনা করে থাকে বলে শুনেছি।

 কোন রকমের দ্বিধা- না করে যে কোন বিষয়ে ডাক্তারের সাথেই কথা বলুন। কোন রকমের সমস্যা হবে না। এটা বঙ্গীয় ডাক্তার নয় যে, বিরক্ত হবেন। তার সিরিয়াল দেয়া লোকটা দেখিয়ে বলরেন, ওর সাথে আলাপ করুন।ডোক্তাররা মেইলের পাশপাশি হোয়াটসঅ্যাপে খুব স্বচ্ছন্দবোধ করেন!

 ইনডিয়ার হসপিটালে গেলে আপনার এক বাংলাভাষি গাইড দরকার হতে পারে। কর্পোরেট হসপিটালে আপনি বিনাপয়সায় এ সেবা পাবেন। পাবলিক হসপিটালের জন্য কিছু টাকা দিলে আপনি এ রকম কাউকে পেয়ে যেতে পারে।  সেটা টাকা  ২০০ থেকে ৩০০ রুপির বেশি নয়।

আমি বলছি না তারা তাদের দেশের রোগীদের সাথে তারা এ রকম অনন্য ব্যবহার করেন। তবে বাইরের রোগীদের তারা বিশেষ যত্ন নিয়ে দেখেন। কারণ তারা চান দেশটাকে রেমিটেন্স আসুক এবং তাদের সুনাম ছড়িয়ে যাক। তাদের সুনামের কারণে কিন্তু এখন ঢাকায় এপোলো, স্কয়ারে বেশ কয়েকজন ইনডিয়ান ডাক্তার নিয়মিত রোগী দেখছেন।  আমরা যাচ্ছিও।

সুখ অসুখের গল্প ৭ :: আমাদেরও রোগীবান্ধব ডাক্তার আছেন!

 সুখ অসুখের গল্প ৭ :: আমাদেরও রোগীবান্ধব ডাক্তার আছেন!

নিশ্চিত করে বলছি, আমাদের অত্যন্ত মেধাবী এবং রোগী বান্ধব ডাক্তার আছেন। খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন। তবে তাঁদের পর্যন্ত পৌছানো অনেক দুরহ হয়, কখনো কখনো। নিউরোলজির জন্য ডাক্তার কাজী দীন মোহাম্মদের কথা বলতে হবে। তাঁর কাছে পৌছাতে তিন মাসের মত সময় লাগে। তবে তাঁর রোগী দেখে দ্রুততার সাথে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভালো পরামর্শ দিতে পারেন।

আমি যখন উচচ রক্তচাপ নিয়ে বিপাকে ছিলাম, তার শরণাপন্ন হলাম।  তিনি আমাকে কোনো রকমের টেস্ট ছাড়াই ওষুধের  দিলেন। এর আগে বেশ কয়েকমাস ধরেই আমি  হাইব্লডাপ্রেসার নিয়ে বিপদে ছিলাম। এই, হুটহাট প্রেসার বেড়ে যাওয়ার একটা ভয়ঙ্কার ব্যাপার ছিল।

 দীন মোহাম্মদ স্যারের অধীনে আমি বছর দু চিকিৎসা নেয়ার পর তার সাথে  ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরে তার সাথে দেখা করা কঠিন হয়ে গেলে, আব্বার ডাক্তার বরেণ চক্রবর্তীর শরণাপ্ন্ হলাম।

 বরেণ দা, আমার দেখা অসাধারণ ডাক্তার।  তিনি মনযোগ দিয়ে রোগীর কথা শোনেন। পায়ে হাত দিয়ে অন্তত পালসটা দেখেন। যেটা অন্য ডাক্তারদের অনেকেই করতে চান না।

 ইন্টারনাল মেডিসিনের ডাক্তার বরেণ চক্রবর্তী, ওষুধও  রয়ে সয়ে  লিখেন। এবং রোগীদের তিনি ফোনেও সময় দেন। দরকার হলে ওষুধ পরিবর্তন করেও দেন।  গত চার বছরে আমাকে দুবার কিছু টেস্ট করতে দিয়েছেন।

বরেণ দা এক সময় দিনে ১৫ জন রোগী দেখতেন।  এখন কর্পোরেট হসপিটালে বসার কারণে এ সংখা চারগুণ হয়েছে।  তবে তার একটা  গুণ হলো- অত্যন্ত যত্ন করে রোগী দেখেন। আমি এবার আব্বার সাথে ইনডিয়ায়  যাওয়ার পর তাঁর চিকিৎসার  কাগজপত্র এপোলোর অমিত মিত্তালকে দেখালাম। তিনি বরেণ দা'র চিকিৎসাটা ঠিক রাখলেন। তবে দুটো টেস্ট দিয়ে বল্লেন,  টেস্টের রিপোর্টটা যেন বরেণ দাকে দেখাই এবং চাইলে অমিতকেও আমি এটা পাঠাতে পারি।

ডাক্তার মুরতুজা খায়েরও রোগীবান্ধব।  রেসপেরেটরি মেডিসিনের এ চিকিৎসক মূলত বসেন একটি বড় কর্পোরেট হসপিটালে। রোগী দেখেন নির্ভারভাবে। তার সবচে যে বিষয়টা ভালো, সেটি হলো তিনি রোগীর কথা শোনেন এবং ওষুধগুলো তিনি কেন দিচ্ছেন, জানতে চাইলে ব্রিফ করেন। আরেকটা বিষয় হলো, তিনি ওষুধের জেনেরিক নাম লিখে থাকেন।  এতে করে আপনি যেখানেই যান, আপনার ওষুধ কিনতে কোন সমস্যা হবে না।

যেহেতু বক্ষব্যাধি একটা ক্রনিক ডিজিস, এর ওষুধ যে কোন সময় কেনার দরকার পড়তে পারে। মিস্টার খায়েরের এন্টিবায়োটিক বাতিক নেই। তবে তার বিদেশি ওষুধের প্রতি দূর্বলতা আছে। আমি গ্রিন উইচে একবার এক বিলেতি চিকিৎসককে তাঁর প্রেসক্রিপনি দেখিয়েছিলাম, তিনি দেখে বললেন, ভালো ডায়গনসিস করেছে। ওষুধও ঠিক আছে।

রেসপেরেটরি মেডিসিনের আরেকজন চিকিৎসক আলি আহসানও বেশ ভালো। তার চিকিৎসাও  প্রশংসা করার মত। আমি শুরুর দিকে তার রোগী ছিলাম। তবে তার চেম্বার ভয়াবহ ভিড়ের কারণে এখন যাই না।  ফুসফুসের একটি টেস্ট তিনি ১৬০০ টাকায় চেম্বার একজন জুনিয়র ডাক্তারের সহায়তায় করিয়ে নেন।  এ্কই টেস্ট বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শ তিনেক টাকার মধ্যে করা সম্ভব। আমি এখন তাই করি।

 রিউম্যাটিক ফিভারে অসাধারণ ডাক্তার নজরুল ইসলাম।  একজন চিকিৎসক কতটা ভরসা দিতে পারেন, তা জানতে একবার তার দপ্তরে যেতে হবে।  টেস্ট ? ,দরকার না হলে কখনোই না।  আমার ছোট বোনের একবার  রিউমিটিক ফিভারের কথা জানালো স্থানীয় ডাক্তার। পরে তার দপ্তরে হাজির হলাম। ওষুধ তো দিলেনই না। কোনো টেস্টই নয়।  দিলেন কেবল দু'টা ব্যায়াম। এটা কেবল দেশের বাইরে দেখেছি।

মেডিসিনের ডাক্তার মধ্যে আমাদের পরিবারের সবারই পছন্দ ডাক্তার আইয়ুব আলী চৌধুরী। ভদ্রলোক বদলেছেন, এখন অনেক। ২০০২ সালে আব্বার  ডেঙ্গু হয়েছিল।  নোয়াখালীর ডাক্তাররা ধরতে পারেননি। ঢাকা থেকে  হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের একজন  সহকারি অধ্যাপক  নোয়াখালীর প্রাইমে যেতেন, তাঁর কাছে নিলে বললেন, ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এখনই হসপিটাইলাইজ করুন।

পরে ঢাকায় আনার পর তাঁর ডেঙ্গু ধরা পড়লো। চারদিনের ট্রিটমেন্ট করলেন ডাক্তার আইয়ুব আলী চৌধুরী ।  মিস্টার চৌধুরী সে সময়কার  চিকিৎসা আর এখনকার মধ্যে ফারাক আছে। এখন তিনি দিনে ৬০ জন রোগী দেখেন চেম্বারে। হসপিটাল তো আছেই!  তবুও আমরা এখনো মেডিসিন বলতে তাঁকে বুঝি। তার একটা বড় কারণ তিনি  ওষুধের পরিমাণ টা কম দেন।  এন্টিবায়যোটিক এবং ভিটামিন ওষুধ প্রীতি তার নেই।  অপ্রায়োজনীয় টেস্টও না।

গাইনোকলজির জন্য বস ডাক্তার জাকিউর রহমান। তাঁর ডাক্তারি দেশি ডাক্তারদের সাথে যায় না। মিস্টার রহমান রোগীকে কমপক্ষে ১৫ মিনিট সময় দেন। এবং মানবিক ডাক্তার বলতে যা বোঝায়, তিনি তাই! তার কাছে ওষুধের চেয়ে  বিকল্প পদ্ধতি- ব্যায়াম, ডায়েটই উপযুক্ত ওষুধ।

শিশু ডাক্তারদের মধ্যে অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী।  তাঁকে দেখছি অন্তত ৭ বছর ধরে।  রোগীর মায়েদের অভিযোগ তিনি সময় দিয়ে রোগী দেখেন না। তার ওষুধ কাজ করতে বেশ সময় লাগে।  কিন্তু আমার তা মনে হয়নি। যদিও তার হিস্টরি লিখেন একজন। আর তিনি ফাইনাল দেখেন। তবে তার  রোগ নির্ণয় ও ওষুধ নির্বাচন খুবই চমৎকার। এন্টিবায়োটিক তিনি একটা শিশুর উপর কখন প্রয়োগ করবেন, সেটা ভালো বোঝেন।  আর সাধারণ ওষুধের বদলে আর্য়ুবেদিক ওষুধেই তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। সাথে ওষুধ না খাইয়ে কীভাকে রোগ সরানো যায় তাও বলে দেন।   এ রকম শিশু ডাক্তার আমার চোখে কম পড়েছে।  মায়েরা  গুঁড়ো দুধ খাওয়ার জন্য জানতে চাইলে, বেশ বিরক্ত হন।

 সার্জারি ডাক্তার ফিরোজ কাদিরকে মনে পড়ছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটভাই নুরুল ইসলাম আকাশের টানা ৮ ঘণ্টা  অপারেশন করেছিলেন তিনি। ঢাকা মেডিকেলের  অপারেশন থিয়েটার পুরো একটা নির্ঘুম রাত কাটানোর পরেও তার মুখে হাসি ছিল, বলছিলেন, অপারেশন ভালোভাবে করতে পেরেছি।  চার্জ?  ওটা না শুনলেও চলবে।

 সার্জারি ডাক্তারদের এ রকম, অসাধারণ  দেখার সুযোগ  সবার হয় না।  তবে ছোটভাই আকাশ বাঁচেনি। আইনসইউতে থাকার সময় তার  জণ্ডিস ধরা পড়ে এবং মারা যায় ছেলেটি।

ডাক্তার মোবিন খান। লিভারের জন্য  বস ।   রোগীকে দেখেন দেড় থেকে দু মিনিট। কিন্তু তার স্মৃতিশক্তি কতটা প্রখর তার একটা বর্ণণা দিই। একজন রোগীকে আমি ২০০৩ সালে তার চেম্বারে নিয়ে গেছিলাম। ২০০৭ সালে ওই রোগীকে আবার নিয়ে গেলে,তিনি মুখস্তই বলে দিলেন তাকে কি চিকিৎসা দেওয়া হয়েছির এবং এখন কি দিতে হবে। আমার একটা বিজনেস কার্ড এগিয়ে দিতে বললেন, আপনারা একটা কার্ড আমার কাছে আছে। এবং সেটি  যে আছে তা রোগীর  রেফারেন্স বুক উল্টে দেখালেন। বললেন, লং টার্ম চিকিৎসা লাগবে রোগীর। ভালো হয়ে যাবে।

রোগীকে তিনি যা ঘটনা তা বলে দিতে পছন্দ করেন। যদিও খারাপ অবস্থা সম্পর্কে রোগীকে বলা ঠিক নয় বলে আমরা মনে করি। তার কথা ভিন্ন, রোগীর অবস্থা তার জানা উচিৎ।

ইউরোলজি ডাক্তারদের মধ্যে ডাক্তার সালামকে এক নম্বর ধরা হয়। এবং আসলে বেটা এক নম্বর। আপনি যার  প্রেসক্রিপশনই নিয়ে যান না কেন, তিনি সে চিকিৎসকে সম্মান দিয়ে কথা বলেন। তবে টেস্টের ব্যাপারে তার সমস্যা আছে। আব্বাকে  নিয়ে গেছিলাম। ১ দিন আগে স্কয়ারে টেস্ট করা হযেছিল। বললেন, আবার করেন। কমফোর্টেই করেন। করলাম। রেজাল্ট একই।  পরে বললেন, ওষুধ লাগবে না। চারমাস পর আবার চেক করানোর নির্দেশনা দিলেন।  একই রকম  কথা অবশ্য ইনডিয়ান ডাক্তারও বলেছেন।

 ডাক্তার জাহিদ সম্ভবত একমাত্র ডাক্তার যিনি রোগীর সঙ্গ উপভোগ করেন। আব্বাকে নিয়ে তার চেম্বারে যতবারই গেছি, কমপেক্ষ তিরিশ মিনিট সময় দিয়েছেন।  পরে জানলাম, অন্য রোগীদেরও তিনি একই রকম সময় দিয়ে থাকেন।

 সাইফুল ইসলাম অত্যন্ত দক্ষ ডেন্টাল সার্জন। রোগ ণির্ণয় করতে পারেন সহজে। তারচে সহজে তিনি বড় অপারেশন করেন, হাসি মুখে। খরচও অত্যন্ত কম। ইসলামি ব্যাংক হসপিটালের শাহজাহান পুর ব্রাঞ্চে বসেন তিনি। ভিসিট তিনশ টাকার কম। রিপোর্ট দেখাতে টাকা লাগে না।  একমাসের  মধ্যে  আবার সাক্ষাৎ দেখানোও মাগনা।

আম্মার দাঁতের ইনফেকশন হলো ২০০২ সালে। বঙ্গবন্ধু হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগে আমার ডিপার্টমেন্টের ম্যাডামের হাজব্যান্ড বিভাগীয় প্রধান। নিয়ে গেলে অত্যন্ত যত্ন করে দেখলেন। কিন্তু মূল সমস্যা বার করতে পারেননি। পরে নিয়ে গেলাম, সাইফুল ইসলামের কাছে। তুলনা রহিত চিকিৎসা।

 দাঁতের আরেকজন ডাক্তারে কথা মনে পড়ছে। নোয়াখলীতে বসেন। ডাক্তার বিএল নাগ।  তার চেম্বারে ৯৩ সালে গেছিলাম। আমার  দাঁত ভেঙ্গে গেছিল। তিনি বললেন, দাঁত ফিলআপ করতে টাকা লাগবে ৪০০। আমার কাছে তখন শ দুশ টাকা ছিল।  আমি বললাম, তাহলে পরে আসবো। কিন্তু তিনি চিকিৎসা করলেন, বাকিতে। পরে যখন টাকা ফেরৎ দিতে গেলাম, যেন-আসমান থেকে পড়লেন।  খুশী হয়ে আমার মাড়ির দুটো দাঁত মাগনা ফিলআপ করে দিলেন। আমার সামনের মেরামত করা দাঁড় ৯৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ভালো  আছে। কৃতজ্ঞতা, বিএল নাগ।

বাংলাদেশের আউটডোরেও অসাধারণ কিছু চিকিৎসকের দেখা মিলবে। তবে এটা দেখবেন খুব কম। তবে আছে। বঙ্গবন্ধুর আউটডোরে বসেন ডাক্তার নাহিদ। মেডিসিনের ডাক্তার। অত্যন্ত বিনয়ী এবং অল্টারনেটিভি মেডিসিন এবং ব্যায়ামেই তিনি রোগীকে ভরসা দিতে চান।

বঙ্গবন্ধুতে চর্মরোগ ডিপার্টমেন্টটাও দারুণ। আউটডোরের ডাক্তাররা  চর্মরোগ ভালোভাবেই বিচার করে ওষুধ দিতে জানেন। এটা আমার ও আমাদেে বন্ধুদের অনেকেই পরিক্ষীত।

 আমাদের এ রকম বহু চিকিৎসক আছেন। কিন্তু কিছু শঠ, তঞ্চক,ভণ্ড, লোভী চিকিৎসকের কারণে সে সব আলোতে আসে না।  কারণ চিকিৎসকরা এখন আর মানুষরে সাথে যে ব্যবহার করেন , কতাঁদের যে আচরণ এবং মানুষ ঠকানোর প্রবণতা তা  ভালো চিকিৎসকদের সফলতাকেও ঢেকে দেয়।