Recall doesn’t affect Valsartan brands

Novartis (Bangladesh) Limited has announced that its valsartan brands - Diovan®, CoDiovan®, Entresto® and Exforge® - are not affected by the recent Valsartan recall, says a statement.
Novartis wants to assure general public, healthcare professionals and other concerned stakeholders that the four valsartan brands, marketed in Bangladesh, are produced using its own research-based 'innovator valsartan' API, which is not affected.
The statement said Novartis produces its research based API for Valsartan only at its own manufacturing plants based in Switzerland and England, maintaining the highest level of quality.
Recent recall of valsartan is being done in 23 countries because an impurity was found during qualification tests of generic valsartan API (Active Pharmaceutical Ingredient) were manufactured by a certain Chinese third party manufacturer, it said.
The impurity was identified as N-Nitrosodimethylamine (NDMA).
Novartis wants to reassure its stakeholders that the physicians and patients can use the mentioned medicines confidently, it added.
Source: http://today.thefinancialexpress.com.bd/trade-market/recall-doesnt-affect-valsartan-brands-1532457395

A ready market to tap into | theindependentbd.com Mohammed Adnan Imam, MD of Genex,told The Independent : considering the availability of accounts graduates in the country among which only 15–20 per cent take up jobs based on their education qualifications.

A ready market to tap into | theindependentbd.com



Mohammed Adnan Imam, managing director of #Genex, another large outsourcing company, told The Independent that the prospect of accounting BPO in Bangladesh is huge, considering the availability of accounts graduates in the country among which only 15–20 per cent take up jobs based on their education qualifications.

“About 80 per cent of these graduates are doing something which has minimum or no connection with their educational qualifications. Some freelancing unstructured accounting work is already being done for foreign firms from here. Taken together, they can make great case studies and success stories, which will enable Bangladesh to make a foray into global accounting BPO,” said Imam.

About his company, Imam said: “In Genex, we have a ready infrastructure and resources. We are now looking for opportunities. We plan to start outsourcing accounting services soon.”
Lauding the government, Imam said the ICT Division has been very supportive of the BPO industry. “We hope that some governance framework will be set up sooner or later to standardise the solution, quality and commercial framework of the BPO firms. This will provide a rationalised solution proposal and service delivery,” he added.





এমবিএস ভাইরাসে আক্রান্ত ফিলিস্তিন

গণতন্ত্রের লড়াকু বিশ্ব আচমকা এক যুবরাজের প্রেমে মগ্ন। তার নাম মোহাম্মদ বিন সালমান। পশ্চিমা দুনিয়ায় তার আদুরে নাম এমবিএস। ব্ল্যাক প্যান্থার দিয়ে হলিউড সিনেমা সৌদি আরবে উন্মুক্ত করার আগে রুপার্ড মারডুকের অতিথি হয়েছেন কয়েকদিন আগে।
৩০ বছর বয়সী  যুবরাজ সৌদি আরবের ভেতরে-বাইরে অনেক পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছেন, সেটি শুনে ও জেনে ভালো লাগছে। তবে সে সব পরিবর্তন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, সমাজ এবং সংস্কৃতিতে ঠিক কী ধরণের পরিবর্তন আনবে, সেটি এ মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা খুবই কঠিন বলে, আমাদের কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
কঠিন বলছি এ কারণে যে, এখানে স্বার্থ সব সময় সমান্তরালে হাঁটে না, নড়াচড়া করে। নড়াচড়া করলে এখানে মুসলমানদের জন্য সন্ত্রাসবাদী, সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়া কিংবা জঙ্গি শব্দ সহজে বিপণন ও বিক্রয়যোগ্য হওয়ায় এমবিএস বা তাদের ভাই বেরাদাররা সব সময়ই একটা ঝুঁকি বা সহজ বাংলায় চাপের মুখে থাকেন, থাকতে হবে।  এ সব চাপ কমানোর জন্য নানা কিসিমের সঙ্কট লেগে থাকে, সে সব সঙ্কট যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়! যেমন ইয়ামেনে মানুষ খুন করছে সৌদি আরব। সিরিয়ায় আমেরিকার সাথে গলা মিলিয়ে, হাত লাগাচ্ছে রাসায়নিক অস্ত্রে।
শিয়া ও সুন্নি বিরোধ, তুর্কি-কুর্দি বিরোধে হাল আমলে মুখরোচক আলাপ। তবে এর থেকেও সুস্বাদু রাজনৈতিক চর্চা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে বিশ্বজুড়ে।
বিবিসি বাংলার অনলাইনে এপ্রিল ৩, ২০১৮ প্রকাশিত খবরের একটা অংশ এ রকম —  ‘যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাগাজিন আটলান্টিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমান বলেছেন, ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি উভয় জনগোষ্ঠীরই নিজস্ব ভূমির পূর্ণ অধিকার আছে।’
অত্যন্ত উচিৎ কথা। এর সাথে দ্বিমত করবেন এমন মানুষ নাই।  তবে ইসরাইলের  অধিকার যদি ফিলিস্তিনিরা বা অন্য কোন পক্ষ খর্ব করতো, তাহলে এমবিএসের কথা যুতসই।  সে রকম কোনও প্রেক্ষাপট এটা না ।  কৌশলী এমবিএস অবশ্য একই সাথে ফিলিস্তিনের কথা উল্লেখ করে নিজেকে ‘সাধু’ প্রমাণ করতে চেয়েছেন ! কিন্তু তিনি যে  নির্যাতক ও নির্যাতিতকে সমানভাবে বিবেচনায় আনলেন, সেটি  অন্যায্য ।
এমবিএসের কথার প্রেক্ষাপটই দ্বিমত করার জায়গা।  ইসরাইলের ভূমির পূর্ণ অধিকার আছে। কথাটা তিনি যখন বলছেন,  সে সময় তিনটি বিষয় ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দাবানল ছড়িয়ে রেখেছে-
(১) ইসরাইলের ভূমি আগ্রাসন। ইসরাইল ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করেই যাচ্ছে। প্রতিদিন ইসরাইলি হত্যা করছে তারা।
(২) জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছে। আমেরিকা এতে মদদ দিচ্ছে।
(৩)  ইসরাইলি বর্ববরতায় বিপন্ন ফিলিস্তিনিদের সহায়তার অভিযোগে কাতারের উপর আরব দেশেগুলোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ। যদি এটা প্রত্যক্ষভাবে বলা হয়নি । তবে এটাই পরোক্ষ এবং অন্যতম প্রধান কারণ ।
এ রকম প্রেক্ষাপটে এমবিএসের বক্তব্য  ইসরাইলিদের বর্বরতার আগুনে ঘি ঢালবে। এতদিন ইসরাইল প্রকাশ্যভাবে আমেরিকা ও তাদের সহযোগিদের সহায়তা ও সমর্থন পেয়ে আসছিলো, সন্ত্রাসবাদের ঘৃণ্যতম চর্চার জন্য এবার এমবিএস ভাইরাসও  ফিলিস্তিনিদের বিপন্ন করার বহরে যুক্ত হলো।  এ সংযুক্তি ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ক্রমাগত সঙ্ঘাতকে জায়েজে সহযোগিতা করবে এমবিএস ভাইরাস।  তাই এর প্রতিবাদ হওয়াটা জরুরি।
তবে প্রতিবাদ হচ্ছে না। তারও কারণ আছে। সাধারণত সৌদি বাদশারা মুসলমানদের মোড়ল হিসাবে পরিচিত। এর কারণটা এ সব ভ্রষ্ট মানুষ নয়। এখানে  মুসলমানদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর রওজা মুবারক এবং মহান আল্লাহ তায়ালার ঘর কাবা শরীফ অবস্থিত। এ কারণে এর গুরুত্ব, মর্যাদা এবং তাৎপর্য মুসলমান মাত্রই কবুল করে থাকেন।
আল্লাহ ও তাঁর নবী (সা:) এর প্রতি মুসলিমদের  অনিঃশেষ ভালোবাসাকে পুঁজি করে সৌদি রাষ্ট্র পরিচালকরা  মধ্যপ্রাচ্যে নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় এখনই।
সৌদি  ইয়ামেনে মুসলমানদের হত্যা করছে। আমেরিকার সাথে জোট বেঁধে মানুষ খুনকে জায়েজ করছে।  মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ বর্ণ বিভেদ  তৈরি করছে।  তাই হত্যা, খুন আর সন্ত্রাসের আঞ্চলিক রাজনীতিতে আমেরিকার তল্পিবাহক হিসাবে এতদিনে গোপনে কাজ করলেও এখন প্রকাশ্যে এসেছে সৌদি।
সৌদি আরবের প্রতি মুসলিমদের অকুণ্ঠ সমর্থনের সুযোগে এ মোড়লিপনা  মধ্যপ্রাচ্যে মানুষ হত্যাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে।  এর প্রতিবাদ হোক বা না-্ই হোক, এটা নিশ্চিত যে,  নির্যাতিত মানুষের জয় হবেই হবে।

সমাজে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের সহজভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা জরুরি

 ছবি: ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহিত। 


অটিজম-উন্নয়নশীল বাংলাদেশের সামনে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘ সময় ধরে অজিম সমস্যা জগতজুড়েই আছে। দেশেও এটি আলোচনায়।

সরকারের হিসাব বলছে, প্রতি ৫০০ শিশুর মধ্যে ১টি শিশু অটিজমে আক্রান্ত। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বর্তমানে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ১৪ লাখ।

আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) অটিজম দিবস ২০১৮ সালের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য তুলে ধরে বলছে,  পরিবার ও চিকিৎসকদের জ্ঞানের অভাবে অটিজম আক্রান্ত রোগীর সঠিকসংখ্যা নিরূপিত নয়।   

এ রকম একটা প্রেক্ষাপটে অটিজম নির্ণয়ের জন্য সীমিত সুযোগেরও সঠিক প্রচারণা নেই।  জানিয়ে রাখি সরকারি হাসপাালগুলোতে অটিজম নির্ণয় ও এটি থেকে উত্তরণের জন্য 'শিশু বিকাশ কেন্দ্র' রয়েছে। দু'একটি বাদে অন্য সব হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সুবিধা নেই।  

এটি আসলে আমার আলোচনার মূল বিষয় নয়, যে বিষয়টির প্রতি অটিজম দিবস ঘিরে আমি  বিষয়টির অবতারণা করেছি, সেটি হলো আপনার-আমার আচরণগত পরিবর্তনটা খুব জরুরি। অটিজম আক্রান্ত শিশু, ব্যক্তির প্রতি আপনার-আমার আচরণটা বদলাতে হবে। আপনি-আমি-আমাদের মনে হতে পারে - সঠিক আচরণই আমরা করছি। এ ধরণের শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল।

যদি তা হয়, তাহলে এটা খুবই আনন্দের খবর। তবে বাস্তবতার নিরিখে আমি কিছু বিষয় এখানে বলতে চাই--- অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার দরকার আছে ।  আছে অন্যসব মানুষের মতই তার প্রয়োজনীয় এবং দিনযাপনের অনুষঙ্গগুলোও। কিন্তু সেটি করতে আমরা তাদের উৎসাহিত করি না।

 আমি আবারো বলছি- আমরা তাদের উৎসাহিত করি না।  এ না-করাটা অপরাধ। এ অপরাধ দু'পক্ষ করছেন, এক পক্ষ হলেন- মা বাবা- আত্মীয় স্বজন। আরেক পক্ষ হলো সমাজ।

 পরিবার পরিজন চাইলেও  সমাজ এমন একটা চাপ তৈরি করে রাখে।পরিবারের অন্য সদস্যদের অনেকটা করুণাকাঙ্খি হিসাবে সমাজ বিবেচনা  করে থাকে। বিষয়টি এমন নয় বাচ্চাটার হার্টে ফুটো আছে, সেটি আপনি কার্ডিয়াক সার্জনের কাছে গিয়ে মেরামত করতে পারছেন। এটি এমন একটা সঙ্কট- একটা শিশুকে নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক সময়ের দরকার হয়।

 প্রথমে যদি শিক্ষার কথা বলি- সরকারি বা বেসরকারি স্কুলের ভর্তির ওয়েবসাইটে গেলে আপনি দেখেতে পাবেন অটিজম বাচ্চাদের পড়ার অপশন আছে।  আমি এটি বলছি  দেশের সবচেয়ে অগ্রসর শহর রাজধানী ঢাকাকে ধরে। কিন্তু অত্যন্ত বেদনার বিষয় হলো , এখানে অটিজম শিক্ষার্থী নেওয়া হয় না।

এখানে সরকারি বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানই মূলধারার শিক্ষায় অটিজম আক্রান্ত শিশুকে নিতে চায় না। সরাসরি বললে, না নেয়ার জন্য যত রকমের ছুঁতো আছে, তার সবই তারা  ধরে রাখেন। আর আপনাকে মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে থাকেন।

এ সুযোগকে সামনে রেখে রাজধানীকে অটিজম বাচ্চাদের জন্য 'বিশেষ স্কুল' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে অভিভাবকরা পড়িয়ে থাকেন, আর যেহেতু কোন একজন ব্যবসায়ী  দয়া করে স্কুল চালান, তাই  রাষ্ট্রের এখানে কিছুই করণীয় নেই। করণীয় আছে একটা অবশ্যই - সেটি সুন্দর বক্তৃতা মালা।

 বিশেষ স্কুলগুলোর ফি কমপক্ষে মাসে ৪ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। সেশন ফি' তো আছেই।  একটি স্কুল  প্রশিক্ষিত শিক্ষক ছাড়াই দিনের পর দিন স্পেশাল স্কুল চালাচ্ছে, কিন্তু এর কোন প্রশ্ন অভিভাবক করে পারবেন না। করলে তাকে বোঝানো হয়, আপনার বাচ্চার বহু সমস্যা , তবুও দয়া করে যে তাঁরা রাখছেন, এটা একটা বিশাল মাহানুভবতা। আপনি সেটাকে সেলাম না করে উল্টো অভিযোগ অপরাধ করছেন!  

একজন অটিজম আক্রান্ত বাচ্চার জন্য চার  রকমের থেরাপি দরকার হয়ে থাকে-- কারো ক্ষেত্রে ২ বা এক রকমের।
থেরাপিগুলো হলো--১. ফিজিও  থেরাপি, ২. অকুপেশনাল থেরাপি ৩. স্পিচ থেরাপি ৪. বেহেইভিয়ারাল থেরাপি।

সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন বিনামূল্যে থেরাপি দেয়। রাজধানী ডাকা ছাড়াও ঢাকার বাইরে অনেক জেলায় তাদের কার্যক্রম রয়েছে।  তবে সিআরপি প্রতি ৪৫ মিনিটের থেরাপির জন্য ৩৪৫ টাকা। অন্য সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ৪৫০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা নিয়ে থাকে।  তার উপর সিরিয়াল পাওয়া  খুবই কষ্টের।  কিন্তু এ কষ্ট, সমস্যা এবং থেরাপিস্টের অবহেলার কথা আপনি জানাতে পারবেন না, কারণ অভিযোগ করলে ওরা আপনাকে বাচ্চা নিয়ে সেখানে যেতে ডিসকারেজ করবে।  

 আপনি বাচ্চাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে আশপাশের লোকেরা বিরক্ত হয়। কারণ আপনার বাচ্চাটি হয়ত হঠাৎ করে হেসে উঠলো, বা কেঁদে ফেললো বা তার অনুভূতি প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়ে সে চিৎকার করলো, লাফালাফি করলো--- এ সব সবার কাছে অস্বাভাবিক।  তারপর ফিসফিস করে বলবে-- এমন বাচ্চা নিয়ে রেস্টুরেন্টে কেউ আসে! ওদের দেখি কাণ্ডজ্ঞানও নেই।

 ঢাকায় গণিত শেখানোর  কোচিং ব্যবসা করে আলোহা।  তারা বিশেষ বাচ্চাদের নেয় না। কারণ তাদের সে রকম ক্যাপাসিটি নেই! এটা বলেই তারা বিদায় করেন অভিভাবকদের।

অনেকে আছেন হয়ত আপনার কথা শুনে খবু মন খারাপ করলেন, তারপর ভুলে যাবেন। যখন কোন রেগুলার স্কুলে বাচ্চাকে ভর্তি করতে চাইবেন স্কুলে সবারই এমন একটা ভাব আপনি একটা  উটকো ঝামেলা ঘাঁড়ে চাপাতে এসেছেন। এখানে বাচ্চা নিয়ে ঢুকে পরিবেশটা নষ্ট করেছেন।

স্কুলে যাবেন, মাদরাসায় নিয়ে যাবেন--- সবখানে ও তো বসে না। আমরা ওকে নিয়ে কি করবো? খুবই  বাস্তবভিত্তিক প্রশ্ন। কিন্তু এটাকে কেউ চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিতে চান না। এমনকি বাবা মা যদি বিশেষ শিশুর জন্য একজন শিক্ষকের বাড়তি বেতনও দিতে চান, তারপরও স্কুল এতে আগ্রহি হয়না।

 আমার নিজেরও একজন অটিজম আক্রান্ত বাচ্চা আছে, সে অভিজ্ঞতা থেকে আমি এটা লিখছি।

তবে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর দিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুইমিং পুল অনন্য। বাতিঘর সাংস্কৃতিক স্কুল, নালন্দা অন্যতম। অটিজম আক্রান্ত বাচ্চাদের জন্য সুইমিং দারুণ কাজ দেয়, বিশেষ করে হাইপার একটিভ বাচ্চার ক্ষেত্রে।

হতাশা নয়, কষ্ট। যারা মুখোশ পরে কথা বলেন, তাদের জন্য কষ্ট।  কথার চেয়ে  বিশেষ শিশুদের জন্য কিছু করার সময় এখন। সে করাটা -তাদের সহজভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা। সেই মানসিকতাই পারে সমাজের বিশেষ শিশুদের জন্য স্বস্তি এনে দিতে।

 

ফালানী হত্যাকাণ্ডের বিচার সাত বছরেও হয়নি



সাত বছরেও বিচার হয়নি ফালানী হত্যাকাণ্ডের।  হবে বলেও মনে হচ্ছে না। বিএসএফের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স আদালতে দুই দফা বিচারে ফেলানীকে গুলি করে হত্যায় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়।

এরপর 'ন্যায়বিচার' চেয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে পরপর দুটি রিট করা হলেও আজও শুনানি হয়নি। এ অবস্থায় আসছে ১৮ জানুয়ারি একই সাথে ওই দুই রিটের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ-মাসুম-এর কর্মকর্তা কিরিট রায়কে উদ্ধৃত করে বিবিসি বাংলা বলছে "এই মামলা ঝুলে থাকার সুর্নিষ্টি কোন কারণ নেই। এটা পড়ে আছে। যে কোন দিন এটা তালিকায় আসবে। সেই সময় আবার মামলা হবে"।

কিরিট বলেন, "সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কিন্তু সেই অভিযোগ হয় পাচারের নয়তবা গরু পাচারের, অভিযোগ হয় ফেনসিডিল পাচারের কিন্তু সব ক্ষেত্রে তারা (আইন শৃঙ্খলা বাহিনী) আত্ম রক্ষার্থে গুলি চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে ।এবং সেই রকম ভাবেই তারা থানায় অভিযোগ দায়ের করে যে তারা আক্রান্ত হয়েছ। কিন্তু ফেলানীর ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। সে নিরস্ত্র ছিল সে একটা মেয়ে ছিল, সেই মেয়েকে গুলি করে হত্যা করা হয়"।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারী ফালানীকে হত্যার পর  কুড়িগ্রামের নাগেশ্বর উপজেলা সীমান্তে গিয়েছিলাম। সেই সময় সেখানকার মানুষের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল।

লেখাটি সে সময় লেখা-- ফের  শেয়ার করলাম, কারো বিরক্তির উদ্রেক করলে, দুঃখিত।

-------

ফেলানীকে ভারতের সীমান্তরক্ষীরা খুন করে ঝুলিয়ে রাখার দু'দিন পর ৯ জানুয়ারী ২০১১, সেই সীমান্তে গেছিলাম। এখনো মনে আছে ধূ ধূ বালুর নদী পার হয়ে নৌকায় চড়ে মোটর বাইকে করে সীমান্ত ঘেঁষা কাঁটাতারের বেড়ার কাছে পৌছানোর কথা! সেখানকার বহু মানুষের সাথে কথা হয়েছিল। স্থানীয় মানুষের কাছে সীমান্তে বিএসএফ'র নিপীড়নের যে বর্ণনা শুনছিলাম তা কতটা ভয়ঙ্কর---ঢাকায় বসে তার কষ্ট বোঝা অসম্ভব। ০

কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বর উপজেলা সীমান্ত। মধ্যরাত। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি। বিএসএফের গুলিতে যে কিশোরী মেয়েটা ঝুলে থাকল কাঁটাতারে নাম তার ফেলানী। হবু স্বামীর জন্য ভালোবাসার কথা লিখেছিল সে। সুঁই সুতোয় সেটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টাও চলছিল। সাথে একটি ফুল। হাত রুমালে নকশা করে নিজের মনের ভেতর লুকিয়ে রাখা আবেগটা জানাতে চেয়েছে সে। সেটি আর হয়ে ওঠেনি। কুড়িগ্রামের ঘন কুয়াশায় ঢাকা রাতের আঁধারে কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে গেলো তার স্বপ্ন। সেই সাথে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের গুলিতে গেলো জীবন। ডান বুকে বিঁধে যাওয়া গুলির সাথে বেরিয়ে আসা রক্তের দাগটা স্পষ্ট ছিল। সাদা কাফনে জড়ানো কচি মুখের দিকে তাকিয়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বর উপজেলা দক্ষিণ রামখানা গ্রামের মানুষ। এমন বর্বরতা তারা আগে দেখেনি। তাই অনেকেই ছিলেন বিস্ময়ে বিমূঢ়।

দেশে ফেরার দু’দিন পর ৯ জানুয়ারি ২০১১---স্বামীর ঘরে যাওয়ার কথা ছিল ফেলানীর। নানী হাজেরা জানান, ছোটবেলায় দুই বোনের ছেলে মেয়েতে বিয়ের পাকা কথা। তার দুই ছেলে ও চার মেয়ের সংসারে ফেলানীর মা তৃতীয়। বড় মেয়ে আনজুমা বেগমের ছেলে আমজাদের কাছে ফেলানীর বিয়ের পাকা কথা ছিল। বাড়িতে সে হিসাবে সব প্রস্তুতি চলছিল। ফেলানী এলেই বিয়ে। যে দিন তার শশুরবাড়ি যাওয়ার কথা, সে দিন তাকে অন্তিম শয়ানে শুইয়ে দেয়া হলো দাদার পাশেই। রামখানায়, গাছের ছায়ায়।

২০১১ সালের ৯ জানুয়ারী সকালে ফেলানীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল--ফোলানীদের ভাঙাচোরা ঘর। চারপাশে বাঁশের বেড়া। তারা দেশে  থাকতেন না বলে,মেরামত করা হয়নি।

ফেলানীর ব্যবহৃত সালোয়ার কামিজ, জুতো, পারফিউম জড়ো করে রাখা ছিল মাটিতে পাতা বিছানার এক কোনায়। এ সব কিছুর মধ্যে প্রিয়তম হবু স্বামীর জন্য নিজ হাতে তৈরি করা একটি হালকা গোলাপী রঙের সুতি রুমাল। রুমালের মাঝখানে ফুল আঁকা হয়েছে নীল রঙের কলমে। সুঁই সুতোয় তার অর্ধেক তুলেছিল ফেলানী। হৃদয় চিহ্ন আঁকা হয়েছে। তার মধ্যে কোনাকুনি করে দেয়া তীর। উপরের অংশে লেখা ইংরেজিতে ‘লাভ’। ভালোবাসার সেই আকাঙ্খা অপূর্ণই থেকে গেলো ফেলানীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে।

ভারতের আসামে ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম। সেখানে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকতেন। ফেলানীর বাবা বলেছিলেন ভারতীয় দালালের সহায়তায় কিতাবের কুঠি অনন্ততপুর সীমান্তের ৯৪৭ নম্বর মূল পিলারের কাছে ৩ ও ৪ এস পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে তারা দেশে ফিরছিলেন। সে জন্য মই দিয়ে ভোরের দিকে তাদের পার করার ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় তিনি পার হতে পারলেও মেয়ের জামা আটকে যায়। ফেলানী ভয়ে চিৎকার করায় টহলরত বিএসএফ তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এরপর সে  মারা যায়!

ফেলানীর মামা মোহাম্মদ হানিফ আলী বলেন, সকাল ৭টার দিকে তাকে বোন জামাই নুরুল ইসলাম জানান, বর্ডারে ভাগনীর লাশ ঝুলছে। বর্ডারের লোকজন তাকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির সদস্যদের কাছে না গিয়ে লাইনম্যানদের বলতে বললো। লাইনম্যান হলো বিজিবির সহযোগী সাধারণ মানুষ। তাদের সাথে আলাপ করে তিনি তাদের ইউনিয়নের গত নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলীম এবং মেম্বার রশিদকে নিয়ে বিজিবির সাথে আলাপ করেন। সে দিন সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় বিএসএফ লাশ ফেরত দিলো না। পরের দিন লাশ হস্তান্তর এবং ৯ জানুয়ারি তারা লাশ পান এবং দাফন করেন।

তিনি বলেন, বোন জামাই মেয়ের গায়ে গুলি লেগেছিল কি না বলতে পারেননি। আমি গিয়ে ঝুলানো লাশ দেখলাম। সেখানকার লোকজন আমাকে বলল, ফেলানীকে মেরে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে বিএসএফ। গুলি হতে শুনেছেন পশ্চিম রামখানার  মিস্ত্রিটারির বাসিন্দা মো: জমির হোসেন। তার বাড়ি থেকে সীমান্ত ৫০ গজের মতো হবে।

তিনি বলেন, ভোরেই গুলির শব্দ পাই। চিল্লাচিল্লি শুনলাম। বেরিয়ে কিছু দেখিনি। কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। সকালে ৯টার দিকেও দেখলাম লাশ ঝুলে আছে।

যেখানে ফেলানীর লাশ ঝুলে ছিল তার ঠিক পাশেই বাড়ি আজিরনের। তিনি আমাকে বললেন,  ফজরের একটু আগে গুলির শব্দ শুনলাম। সকালে দেখি লাশ ঝুলছে। ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে দেখলাম বিএসএফ লাশ নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ফেলানীর বড় চাচী লাইলী বেগম বলেন, ফেলানীর মতো কেউ যেন এ ভাবে মারা না যায়। ওরা (বিএসএফ) তাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। ফেলানী নেই। এটা ভাবতেই খুব খারাপ লাগে।

তিনি বলেন, ভারত সরকার এটা কী বিচার করলো! আমরা এর সঠিক বিচার ও দোষীদের শাস্তি চাই। তার অভিযোগ ‘অত্যাচার করে’ হত্যা করা হয়েছে ফেলানীকে। একই রকম মনে করেন এলাকার অনেকে। যেমনটা বলেছেন, কাশীপুর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সেক্রেটারি আবদুল জলিলও। তিনি বলেন, তাকে ‘নির্যাতন’ করে হত্যা করা হয়েছে। তবে ‘নির্যাতন’ নয় গুলিতেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন, ফেলানীর লাশের ময়না তদন্তের তিন সদস্যের অন্যতম ডা: অজয় কুমার রায়।

জীবনের দাম কম একটা আমরা জানি। বিশ্বজুড়েই স্বীকৃত এটা। কিন্তু গরিব মানুষের জীবন যেনো পাপ। অসুখ--- ক্যান্সার। কেটে ফেললে--- ছেঁটে ফেললেই মুক্তি। ফালানীর লাশ-রক্ত আর কষ্ট নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। একজন মানুষ তার কন্যাকে হারালেন। তারা কষ্ট পেলেন। বহু রথি মহারথী তার কাছে গেলেন-- তিনি তার সন্তান হত্যার বিচার পেলেন না।
 বিচার হয়নি সাত বছরেও। এটাই বাস্তবতা।

ব্যস্ততা ... বৃত্তে বন্দী জীবন--- হচ্ছে না কিছুই!






 মেঠো পথ


১.
পুরনো দিনের কথা ভাল্লাগে না অার। সময়টা কেবলই বদলে যেতে থাকে। বিত্তের পেছনে বৃত্তাকার ঘোরাঘুরির হিসাব মিলাতে, নিজেকেই হারিয়ে ফেলি।
 
জীবন এত কঠিন কেন?
নিজেকেই প্রশ্ন করি!
কতগুলো বছর কেটে গেছে, নেশার মত, টেরই পাইনি।

২.
কথা ছিল পকেটে টাকা জমলে, নিমিষেই এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াবো! হয়নি তার অনেক কিছুই!
সংসার, স্ত্রী, সন্তান--- সব কিছু নিয়েই ভাবনা ছিল! তবুও সব মিলে যায় না।
কৈশোর-- তারুণ্যের মত যৌবনের দিনগুলো মসৃন হয় না।

৩.
নিজেকে দোষারোপ করি না! যা পেয়েছি? কম কিসে! নিজেকে বলি।
তবুও নগর জীবনের এক অনিবার্য ব্যস্ততা কেড়ে নেয়, জীবনের অনেকগুলো সময়! বিত্তের পেছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্তি... নিজের ভেতর নিজেকে খুঁজে ফিরি! নিজের সেই সব স্বপ্ন, ইচ্ছাগুলো! 

৪.
চাইলেই এখন আর রোদ্দুরে বিকালের হঠাৎ করেই ট্রেনে চেপে বসা যায় না! গ্রামের মেঠো পথে কাদামাখামাখি করে ফেরা হয় না, নিজের গ্রামের বাড়ি।  টেম্পুর ভেতর সস্তা সুগন্ধি মাখা গ্রামীণ মধ্যবিত্ত নারী; পাউডারের গন্ধে আকুল করে যাওয়া পোশাক শ্রমিকের মুখ--- ভালো লাগতো। ভালো লাগতো--- বাংলা সিনেমা- --মান্নার প্রতিবাদকণ্ঠের সাথে হল ভর্তি দর্শকের উল্লাস।  

৫.
সমাজ-জীবন থেকে ছিন্ন হতে হতে, নিজেকে এখন ভীষণ একা লাগে! মনে হয়, এ নগরে ভিন্ন গ্রহের কেউ। বিদেশের মতই জীবন। প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে আলাপ নেই! খোঁজ নেয় হয় না কারো! এত্ত ব্যস্ততা? চাইনি।  তবুও বিত্ত বৃত্তের জীবনে বন্দী জীবন। 

৬.
এখনো আকাশে পাখি উড়ে গেলে, সূর্যটা ডুবে যেতে থাকলে পশ্চিমের  কংক্রিটের জঞ্জালে, তখনো  মন ছুটে যায় লঙ্গদুর গহীন বনে, কাপ্তাই লেকের জলে চোখ রেখে এক লম্বা নিঃশ্বাস--- সেনটমার্টিনের দক্ষিণপাড়ায় প্রবালের উপর শরীর এগিয়ে লোনা হাওয়ায় ভেসে যাওয়া সন্ধ্যার আলো-- এটুকই চেয়েছি ।

৭.
 ব্যস্ততা ...  বৃত্তে বন্দী জীবন--- হচ্ছে না কিছুই!!

BTRC to fix guidelines on ‘active sharing’ to ensure quality of service | theindependentbd.com

BTRC to fix guidelines on ‘active sharing’ to ensure quality of service | theindependentbd.comThe Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission (BTRC) has decided to prepare a set of guidelines on ‘active sharing’ in the telecommunications sector to ensure quality of service (QoS).

প্রিয় পাঠকের লেখা : প্রশান্তিময় সবুজ গম্বুজ

প্রিয় পাঠকের লেখা : প্রশান্তিময় সবুজ গম্বুজ



তেতে ওঠা রোদ্দুরের দুপুরেও মরু দুলালের রওজার ওপর মাথা তুলে থাকা সবুজ গম্বুজের দিকে তাকালে প্রশান্তিতে মন ভরে যায়। সৌদি আরব যখন তুরস্কের শাসনে ছিল সে সময় রাসূল (সাঃ)-এর রওজা মুবারকের ওপর এ সবুজ গম্বুজ তৈরি করা হয়। পরে মসজিদুন নবীর স্থাপত্য নকশায় খানিকটা পরিবর্তন আনা হলেও গম্বুজটি ঠিক রাখা হয়েছে।
২০১৪ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহের এক দুপুরে হাজির হলাম মসজিদুন নবীতে। সারা জীবন কেবল এ মসজিদের ইতিহাস পড়েছি, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এখানে তাঁর জীবনের একটা বড় অংশ কাটিয়েছেন। মদিনাতুন নবীকে শান্ত শহর বলা হয়, এখানকার মানুষ নবী করিম (সাঃ) কে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে গ্রহণ করেছিলেন। যে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আমরা বাসে চড়ে মক্কা নগরী থেকে মদিনায় এসেছি, সেখানে নবী (সাঃ) তাঁর সাথীদের নিয়ে হিজরত করেছেন উটের পিঠে চড়ে। মরুর বুকে সূর্যের তপ্ত রোদ, নাক দিয়ে রক্ত পড়ার উপক্রম, সে সময় আল্লাহর নবী তাঁর প্রিয় সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ মেনে ছুটে এলেন মদিনায়।
মদিনাতুন নবীতে রাতে পৌঁছার কারণে তাহাজ্জুদ ও ফজর নামাজ পড়ে হোটেলে ফিরে গিয়েছিলাম। দুপুরের দিকে নবী করিম (সাঃ)-এর রওজা মুবারক জিয়ারত করার জন্য ছুটলাম। সে অনুভূতি আর আকুতির কোনো বিবরণ দেয়ার সক্ষমতা কারো নেই। তামাম দুনিয়া থেকে মুসলমানরা হজ পালনের জন্য মক্কা মুয়াজ্জমায় আসেন। হজের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও কেউ মদিনাতুন নবী (সাঃ) না গিয়ে ফেরেন না। এত কাছাকাছি এসে নিজের চোখে নবী করিম (সাঃ)-এর রওজা মুবারক দেখার সুযোগ হাতছাড়া করার ভাবনা কারো মাথায় আসতেই পারে না, আসেও না। তাই হজযাত্রীরা সবাই ছুটে যান মদিনায়। উম্মতের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করা এবং সব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে নিজ দায়িত্ব পালনের যে অসাধারণ দৃষ্টান্ত নবী করিম (সাঃ) স্থাপন করেছেন, সেটি বিশ্বের ইতিহাসে অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে।
তপ্ত পথ পাড়ি দিয়ে মসজিদুন নবী চত্বরে পা রাখতেই অনন্ত প্রশান্তি। বাবুস সালাম দিয়ে আমরা ঢুকতে লাইনে দাঁড়ালাম। এত মানুষ তবুও কোনো রকমের হুড়াহুড়ি নেই। প্রথমবার যাচ্ছি। তাই সব কিছু চিনতে পারছি না। সামনে এগোলে রওজাতুম মির রিয়াজুল জান্নাহ। নবী করিম (সাঃ)-এর সময় খুৎবা দেয়ার মিম্বর। একটু এগোলেই প্রথমে নবী করিম (সাঃ)-এর রওজা মুবারক। দেয়াল দিয়ে ঢেকে রাখা নবী করিম (সাঃ)-এর রওজা বাইরে থেকেই দেখা যায়। সবুজ রঙে ঢেকে রাখা রওজার উপরিভাগে লাল রঙের আবরণ। কবরের গায়ে ক্যালিগ্রাফি। প্রথম দর্শনে এত বিমোহিত জীবনে আর কিছুই করতে পারে বলে মনে হয় না। আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর রওজার সামনে দাঁড়ানোর পর মনে হবে, "এ জীবন আল্লাহর গোলামির বাইরে আর কিছু চাইতে পারে না।"
শত সহস্র মানুষ পেছন থেকে এগিয়ে আসছেন। পুলিশ সদস্যরা হাত বাড়িয়ে সামনে এগিয়ে দিচ্ছেন। রাসূল (সাঃ)-এর রওজা মুবারকের পাশেই হজরত আবুবকর (রাঃ)-এর রওজা, তাঁর পাশেই হজরত ওমর ফারুক (রাঃ)-এর রওজা। কবর তিনটি রাসূল (সাঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)-এর ঘরের জায়গায় হয়েছে। বাবুস সালাম দিয়ে বের হয়ে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে মুসলমানরা সবাই নিজের বিচ্যুতির জন্য ক্ষমা চাইছেন।
বাবুস সালামের পেছনেই বাবে জিবরাঈল (আঃ)। এ দরজা দিয়ে ফেরেশতা হজরত জিবরাঈল (আঃ) নবী (সাঃ)-এর কাছে ওহি নিয়ে আসতেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য পথ নির্দেশনা আসার সেই গেটের দিকে তাকালে যে কারো মনটা ভালো হয়ে যাবে। তার পাশেই আসহাবে সুফফা। সেখানে নবী করিম (সাঃ) ধর্মীয় জ্ঞান প্রদান করতেন। এ অঙ্গনটি সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত। এখানেই মুসলমানদের ধর্মচর্চা এবং জীবন পরিচালনা শুরু হয়েছিল জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে।

Increasing footfall may spell doom for St. Martin’s Island



Rise in tourism could take its toll on Saint Martin’s, the only coral reef island of the country. Faced with an environmental crisis, efforts were made to construct brick structures on the initiative of the government.  However, the plan did not succeed.

"The beauty of the island could diminish forever if steps are not taken immediately", Prof. Syed Rashidul Hasan, tourism researcher and expert, told The Independent recently.

Hasan, quoting a study on tourism of Dhaka University Department of Trouism and Hospitality, said the arrival and departure of tourists, that is,  the "tourism-carrying capacity" of the island, have to be calculated.

According to government data, around 7,000 people stay on the 8 square kilometre long St. Martin’s Island. However, local 6 No. St. Martin's Union chairman, Nur Ahmed, claims the population exceeds 10,000.  

Under the present circumstances, the island has the capacity to tolerate a maximum of 2,000 tourists a day. Hasan said tourists exceeding this capacity could bring disaster to the tourist destination.  

The Bangladesh environment department is thinking about controlling the number of tourists visiting the island.

Mohammad Solaiman Haider, director (planning) of the Department of Environment (DoE) and in charge of the island, told The Independent: "It would have been good if we could put a stop to tourism there, but that is not possible at the moment. So, the next best option is to limit tourism activities to protect the island. The government is working on this aspect."  

The land area of the island measures 8 square km during low-tide and 5 square km during high-tide. It has three parts—the north, south and the centre, which is known as Golachipa as it resembles a throat. The North side is the most populated.

"Tourism-carrying capacity" is defined by the World Tourism Organisation as “the maximum number of people that may visit a tourist destination at the same time, without causing destruction of the physical, economic, socio-cultural environment and an unacceptable decrease in the quality of visitors' satisfaction”.
Most of the tourist accommodation units, shopping centre and port are located on the north side.

There are some cottages in Golachipa built by the Navy. Only a few people live on this side. Most of the coconut trees and cultivable land are here too. The south side is still a "Restricted Access Zone".  

During a visit to the island, this correspondent saw banners of real-estate developers everywhere. Even the land of limited access zone have been sold. Experts have called it "a bad omen".

The Youth Environment Society (YES), a local voluntary organisation of Cox’s Bazar, conducted a survey on hotel and resorts on St. Martin's Island. That report has published a list of 160 resorts including ones that are under construction.

During trouism season, six ships carry tourists to the island. Although each of these has the capacity to carry about 1,000 passenger, they take on board around 9,000 to 10,000 tourists in every single trip during the peak season.

The large number of tourists, which is more than the capacity of St. Martin's Island, is affecting the island’s ecology. Slowly but surely the overload is destroying the coral island.

Rashed-Un-Nabi, professor at the Institute of Marine Sciences and Fisheries, Chittagong University, said in some places of St Martin's stones can be found only 10 to 12 feet below. Thus, if so many buildings are constructed on the island, it may develop cracks. Even the layer of stone can be broken, he cautioned.

The DoE declared Saint Martin's Island as an "Ecologically Critical Area (ECA)" in 1995. A gazette notification of the government was published on June 29, 1999 in this regard. As a result, the government directed that no construction could be carried out on Saint Martin's without approval of the authorities.
Although experts have urged the government to take stern measures to protect the island. But the DoE has said that it is not possible because of the demand of tourists.

Dr Md Nasir Uddin, chief executive officer of the Bangladesh Tourism Board (BTB), told The Independent that they were trying to ensure facilities for the visitors after preserving the natural beauty of the island.

Author : Tareque Moretaza

অপহরণ, খুন এবং হয়রানি-- বাঙালি পাহাড়ি নির্বিশেষে সমানভাবে আমলে নিন


খুন এবং হামলা দু'টোরই বিপক্ষে  আমি। লংগদু আমি গেছি। আমি জানি এ জুম ঘর, পাহাড়ের ভাঁজে বহু বাঙালির রক্ত। বহু পাহাড়ির জীবন গেছে এখানে। বহু ঘরে আগুন পড়েছে।  এখানে দৃবৃত্তের উচ্ছ্বাস আছে। অস্বীকার করার উপায় নেই!  সত্যি করেই বলছি- পাহাড়ি বাঙালি দুবৃত্তরা মিলে লংগদুর বাতাস বিষাক্ত করে তুলছে।

অপহরণ, খুন এবং হয়রানি-- বাঙালি পাহাড়ি নির্বিশেষে সমানভাবে আমলে নিন। বাঙালি-পাহাড়ি হিসাবে বিবেচনা না করে সবাইকে মানুষ ভাবুন। পাহাড়িরাও এ দেশের নাগরিক। তাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের জন্য জরুরী।

আর যারা এ সব ঘটনা নিয়ে রস করেন, ফায়দা তোলার চেষ্টা করেন, উদ্বেগের নামে রাষ্ট্রের সুনাম ক্ষুন্ন করার চেষ্ট করেন; তারা সে সব না করে- আন্তঃসম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। উপকার হবে। ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ি এবং খুন হওয়া বাঙালি দুটো পক্ষেরই কষ্ট উপলব্ধ করছি। ভালোবাসায় পূর্ণ করি- পাহাড় ও অরণ্য। অনন্য মেল বন্ধনে শান্তিতে থাকুন পাহাড়ের মানুষ।

কী সুনিপুন, অনিন্দ্য কর-উৎসব জগতে-

আমার শ্রদ্ধা স্থানীয়দের একজন মাননীয় অর্থমন্ত্রী। আমার জানা মতে, উনি প্রথম আম্লীগার যিনি ডিজিটালাইজেশনের গল্প গণমাধ্যমে বলেছিলেন, সম্ভবত ১৯৯৬ সালে। ভোরের কাগজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সংখ্যায়।

এমন দুরদর্শি একজন মানুষ ব্যাংক লুট, দিনের দিনের পর বৃদ্ধি পাওয়া নির্মাণ খরচের যোগানের ভার কীভাবে  নিরীহ বাঙালদের ঘাঁড়ে চাপিয়ে দেয়ার কাজটি বাহাদুরের মত করেছেন, এটা ভেবে আমি অবাক হই। অবাক এ জন্য যে, তাকে একজন জ্ঞানী ও সমব্যাথী, মানব দরদী মানুষ বলেই জানি।

আম্লীগে যখন এত মধু পিয়াসী ছিল না, অনেক লোক কম, তখনো বাংলা একাডেমি চত্বরে- অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় আমি তার পাশে একা হেঁটেছি। কখনো সঙ্গী ছিলেন পারভেজ ভাই (কালের কণ্ঠ)।  তাঁর সাথে মিশলে মনে হতো- অত্যন্ত সরল মানুষ। তাঁর সাথে আমি  হাঙ্গার প্রজেক্টের  ইউনিয়ন বাজেট করতে কুমিল্লা গেছিলাম, ২০০২ কিম্বা ২০০৩ সালে। পথ চলতে চলতে তাঁর কাছে অনেক গল্প শুনেছি।

সে সময় তিনি মধু পিয়াসী পিঁপড়ার দলের ভিড়ের বাইরে ছিলেন। কেবলই একজন রাজনৈতিক নেতা, তবে একটু বনেদী শ্রেণীর। রাস্তায় হাউ কা্উ করা লোক নন।

'ব্যাপক ভোটে নির্বাচিত' বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসাবে তাঁকে বাজেটের টেবিলে দেখি। আর শুনি তার বক্তব্য- আমরা যারা আম বাঙাল- তাদের 'পাপে'র  জন্য  হয়ত; কর, আবগারি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক , মূল্য সংযোজন কর- এ রকম ভিন্ন ভিন্ন নামে টেক্স বসিয়ে ঢাউস আকৃতির বাজেটের যোগান চাইছেন।  কী ভয়ঙ্কর একটা সময় পার করছি আমরা, আর ভাবছি এ রকম একটা নষ্ট সময়েও দেশ প্রেমিক শক্তি জনাব মালের সাথে আছেন।

আম্লীগ লুট করছে, এটা বলা যাবে না। তারা সবচেয়ে দেশ প্রেমিক দল। এ দেশকে তাদের মত করে কেউ ভালোবাসেনি। বাসবেও না। কিন্তু তাদের সর্বশেষ সময়ে যে পরিমাণ টাকা বিদেশ চলে গেছে, বা বিদেশে স্থানান্তর হয়েছে, ৫৭ ধারা থেকে মুক্তির জন্য এটাকে আরেকটু হালকা করে কী বলা যায়, মানে  ধরেন,  হাত খরচ হিসাবে বিদেশ চলে গেছে, এটা আমার সক্ষমতার প্রমাণ।  কিন্তু প্রত্যেক সক্ষমতাই কিন্তু কিছু অক্ষমতা  তৈরি করে।

 বাংলাদেশের প্রচণ্ড ধনবান  রিকশা শ্রমিক, প্রবাসী শ্রমজীবি থেকে শুরু করেে ছোট খাটো কাজ করা বৃত্তবানরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তার এ মহত বাজেটের মহত্ত্ব ধরে রেখে চাহিদা মত যোগান দিতে। বেসরকারি চাকুরে, মুদির দোকানদার, চটে ঢাকা রেস্টুরেন্টের মালিক- সবাই স্যারের মনবাসনা পূর্ণ করতে চেষ্টা করছেন।

ট্যাক্সনেটটা এমনভাবে বানানো , মোড়ের যে ভিখারী সেও এ থেকে মুক্তি পায়নি, কী সুনিপুন, কী অনিন্দ্য কর-উৎসব জগতে- আহা।

কর, শুল্ক, আবগারি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক আর  মূল্য সংযোজন করের ভার পিঠের উপর চড়িয়ে  একটা সোনালী উন্নয়নের চাবুকের সামনে দৌড়াচ্ছে সাধারণ বাঙাল।

মুহিত সাব তার  ১৯৯৬ সালের ডিজিটালাইজেশনের  প্রবন্ধে বলেছিলে, ডিজিটালাইরেজশনের কারণে আমরা গ্লোবাল ভিলেজের বাসিন্দা হবো। আমরা হয়ে গেছি, এখন ডিজিটাল জুস আর  উন্নয়ন রসদ তর্ক করে পার হয়ে যাচ্ছে সময়।

ক্ষমতায় আসা যাওয়ার অংকে মশগুল সবাই। গেলেআম বাঙালের টা যাচ্ছে, আমার কি। মজা বোঝ!  আসলে মজা বোঝাচ্ছেন সবাই তা মুহিত, তা আম্লীগ তা অন্য যে কেউ! আমরা কেউ অসহায়, বলি-'করুণায় ধারায় সিক্ত করো প্রভু'।

সুস্থ স্বাস্থ্য সেবা বাণিজ্য চাই!




কার্টুন: প্রথম আলো


বিষয়টি খুবই পরিষ্কার- ডাক্তার কারো শত্রু নয়। আবার মিত্রও নয়। অন্য দশটা পেশার মতই তারা টাকা নেন, সেবা দেন। এখানে পার্থক্য হলো- তারা মানব শরীর নিয়ে কাজ করেন। যেটি একবার 'মৃত' হলে ফেরৎ আনা যায় না। তাই সংবেদনশীল এ শরীর ঘিরে যারা নিজেদের জীবিকা নিশ্চিত করেন, তাদের 'দায়' থাকে কাজটি পেশাদারিত্বের সঙ্গে করার। 

পেশাদারিত্ব মানে  নথিতে পেশা- চিকিৎসক লেখা নয়। 

চিকিৎসকরা এতটাই ব্যস্ত থাকেন এবং নিজেদের এমনই লোক মনে করেন যে, তারা যাচ্ছে তাই আচরণ করেন। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। এবং ব্যতিক্রম চিকিৎসকের দপ্তরে যাওয়ার আমি নিজেও মাসের পর মাস অপেক্ষা করি অথবা অনেক বেশি টাকা গুনি। কারণ পেশাদার ডাক্তারকে আমার লাগবে। আমি একজন ভোক্তা হিসাবে সেটিই চাই। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল জীবন কাটিয়েছি। সেখানে কিছু ষণ্ডা টাইপ পলিটিক্যাল পোলাপাইন থাকে। নিজেরে ওরা মনে করে, ওর উপ্রে আর কেউ নাই। ধরাকে সরা জ্ঞান করা যাকে বলে আরকি। একই রকম ডাক্তারদের ক্ষেত্রেও (কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছেন)। তাদের মাস্তানি অপ্রতিরোধ্য। তারা যদি ভুল করেন, তা তদন্ত করা যাবে না। তাহলে তারা মগজে গিঁট মেরে বসে থাকবেন। তাদের তেল দিবেন, সরকার নমনীয় হবেন, মানুষ বলবে, নাহ আপনি তো সমগ্র বাংলাদেশ পাঁচটন , তাই আপনি আমাগো ক্ষমা করেন। চিকিৎসা কাজে ফিরে আসেন। 

সর্বশেষ নজির হলো সেন্ট্রাল হসপিটাল। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী মারা গেছেন। এটা হয়েছে, এটাই সত্য। এর জন্য ন্যুনতম 'দায়বদ্ধ'তা থাকলে হসপিটাল একটা তদন্ত কমিটি করতো। না, তারা তা করেনি। উল্টো-' আমরা কোন ভুল করিনি, যা করেছি বেশ করেছি। তুমি কি ডাক্তার! তুমি কোন ...টা বোঝ। এ ধরণের আচরণ-!' -এ সব অগ্রহণযোগ্য।

তদন্ত করেন, আপনারা ডাক্তাররাই বসেন, বসে বলেন, এটা সঠিক ছিল। তাহলে পরিস্থিতি এতটা ঘোলাটে হয় না। প্রতিদিন দেশের আনাচে কানাচে হাসপাতাল, ক্লিনিকে বহুলোক মারা যা্য়। এর কোন তদন্ত হয় না।

মিডিয়া নিয়ে অনেক ডাক্তার সাবের কষ্ট দেখছি- ' এ যে উনারা বিখ্যাত, উনারা ফেরেশতা , উনারা জাতিকে উদ্ধার করছেন- এ সব খবর ছাপানোর জন্য উনারাই মিডিয়ার কাছে আসেন। কী বৈপরিত্য উনাদের।' 

বলছিনা, ডাক্তার মাত্রই খারাপ। কিন্তু ডাক্তার মাত্রেরই  সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা প্রায় জিরো। রোগীর বক্তব্য শোনার আগ্রহ নেই বললেই চলে।  মনে করিয়ে দেই, কিছু ব্যতিক্রম আছেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, এর সিদ্ধান্ত আদালতে নিতে দেন। অনেক ডাক্তারকে দেখছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন করছেন। করতে পারেন, এটা আপনার নাগরিক অধিকার। 

কিন্তু মেডিকেল কলেজের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। আপনাদের মধ্যেই আছে। আপনারা ডিমএসি, এসএমসি'র বাইরে অন্য কলেজের ডাক্তারদের সেভাবে কাছে টানেন না। যেভাবে নিজেরা নিজেদের টানেন। 

আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে যারা প্রশ্ন করছেন, তারা কিন্তু ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের অধিভূক্ত মেডিকেল কলেজেরই শিক্ষার্থী। 
আপনি যদি মনে করেন এ বিশ্ববিদ্যালয় খারাপ, তাহলে  এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ ফেরৎ দিন। 

সরকারকে বলেন, মেডিকেল কাউন্সিল করে আপনাকে সনদ দিতে। সরকার দেবে, নিশ্চিতভাবে দেবে। কারণ এ দেশে মানুষের জীবন জিম্মি করে একামাত্র আপনারাই মগজে গিঁট মেরে চা -সিগ্রেট ফুঁকতে পারেন! বহু হসপিটালে আপনারা তা করে দেখিয়েছেন, আপনাদের ধর্মঘটের কারণে বহু রোগীর ভোগান্তি হয়েছে। 

তবে একটা কথা বলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে বলে- আপনারা এই যে চিকিৎসার নামে সন্ত্রাস করছেন, মানুষ মারছেন, মানুষকে স্যার বলতে বাধ্য করতে পারছেন এটা সম্ভব হয়েছে। 
ইনডিয়ান মেডিকেল কাউন্সলের খবর নিয়েন, কী পরিমাণ ডাক্তার সনদ হারায়, জেলে যায়। 

ডাক্তাররা, নিজেদের যারা নীতি নৈতিকতার খৈ ফোটান তাদের বলি- নিজের নৈতিকতা-সততা নিয়ে নিজেই একটু যাচাই কইরেন। ওষুধ কোম্পানির উপহার, বিদেশ ট্রিপ, নোট প্যাড, কলম খাতা, স্যাম্পল ওষুধ যে নেন, সেটা হালাল কি-না। 

ডায়াগনস্টিকের  কমিশন যারা নেন-  এটা হালাল কি-না। 
আরেকটা কথা, আমার বেশ কয়েকজন বন্ধু বলছিলেন, ইনডিয়াতে যাতে বেশি রোগী যায়, সে জন্য এ গোলমাল হতে পারে। 

আপনাদের শঙ্কা আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না। আপনারা অনেকে ইনডিয়ার ট্রিটমেন্ট বাংলাদেশের চে খারাপ বলেও তথ্য সূত্র উল্লেখ করেছেন। আমি আপনাদের তথ্য সূত্রকেও সম্মান করি। 

কিন্তু যে দেশে ডাক্তার রোগীর বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই ওষুধ লেখেন, যে দেশের ডাক্তার তার প্রাইভেট চেম্বারে ১০০০ টাকার টিকেট কাটার পরেও  ৩ মিনিট সময় দিতে কষ্ট হয়, সে দেশের ডাক্তারদের শোধরানোর জন্য আমাদের কথা বলতে হবে। 

যদি আমার দেশের ডাক্তারের দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সবল করতে না পারি, তাহলে তো মানুষ বিদেশ যাবে। দেশের রাষ্ট্র প্রধানের চোখ পরীক্ষাও সিঙ্গাপুরে হয়। বুঝতেই পারছেন, আমাদের ডাক্তারদের কতটা আস্থায় নিতে পারছি, আমরা। 

ইনডিয়ায় স্থানীয়রা ভালো চিকিৎসা পান না- আপনাদের মত আমিও শুনেছি। তবে তারা বিদেশি রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করেছেন। চিকিৎসা এবং ব্যয় দুটোই বাংলাদেশের সেন্ট্রাল কিম্বা ল্যাব এইডের মতই! এটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বললাম। তাহলে মানুষ কেন তার সামর্থ থাকলে বিদেশ যাবে না! এখানে 'স্যার'দের গিনিপিগ থাকার জন্য। 

আমরা যারা ফ্রিকোয়েন্টলি বিদেশ যেতে পারি না, তাদের কথা ভাবেন। গরিব মানুষের কথা ভাবেন- যারা হাসপাতাল'র বারান্দায় ডাক্তারের 'আদরে' মরে যান, তাদের কথা ভাবেন। 

এও আপনাদের জানিয়ে রাখি-আমাদের অনেক ভালো ডাক্তার আছেন। অনেক ভালো । বিশেষত উঠতি ডাক্তারদের কথা বলছি, আমার এ রকম বহু পরিচিত ডাক্তার আছেন- যারা তার পকেটের টাকা দিয়ে রোগীর ওষুধ পর্যন্ত কিনে দেন। আমি তাদের শ্রদ্ধা করি। ভালোবাসি। আর স্বপ্ন দেখি- ফেরেশতা নয় রোগী-বান্ধব ডাক্তারে একদিন আমাদের হাসপাতালগুলো ভরে উঠবে। আমরা তাদের কাছে গিয়ে আরোগ্য লাভরে সহযোগি হিসাবে দেখবো। সে দিনের আশায় থাকলাম। 
শুভ স্বাস্থ্য-বাণিজ্য।

হেফাজত, শাপলা এবং ৫ মে

শাপলায়  হেফাজতের অবস্থানের রাজনৈতিক তাৎপর্য ব্যাপক হলেও এর ফলাফল একেবারেই শূণ্য এবং প্রচার-সন্ত্রাস দ্বারা আক্রান্ত । 

 বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এমনকি ভারতবর্ষের কর্পোরেট গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের শক্তি বিবেচনায় এনেও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর উপর একক মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরীর ক্ষেত্রে আল্লামা শফি অত্যন্ত সফল । 

যদিও হুজুরদের ঈমান বেসরকারি চাকুরেদের মত দূর্বল। কারণ জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর হাতে - এ বিশ্বাস থাকার পরেও কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, কাওমী হুজুরদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পেশিবানদের উপর নির্ভর করতে হয় । 

রাজনৈতিক কারণে হেফাজতের ঢাকা অভিযান না হলেও এর রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় আনতে হবে । কারণ এ হেফাজতকে সামনে রেখেই দাবার যত গুঁটিই ঘুরপাক খেয়েছে, তার সবই রাজনৈতিক । 

হেফাজতের সহযোগি হিসাবে যাদের কথা বলা হচ্ছিল, মোটা দাগে সে দলটি হলো বিএনপি । সাথে জমাত । তবে দল দু'টি হাওয়ায় গা ভাসিয়ে হেফাজতের রাস্তায় রেখে সালতানাতের দু:স্বপ্ন দেখেছিল। 

আমার পর্যবেক্ষণে- মাদরাসার নিরীহ শিক্ষার্থীরা রাজপথে এসেছিল, ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে । তাদের সঠিক তথ্য দেয়া হয়নি । এমনি কি হেফাজতের শীর্ষ কয়েকজন ছাড়া বাকিরাও  বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশায় ছিলেন।

যেখানে গণজাগরণ মন্চ অত্যন্ত সফলভাবে সময় মত একটা তথ্য তার কর্মীদের দিতে পেরেছে । গণজাগরণ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার হয়েছে অত্যন্ত কৌশলে । সফলতাও লাভ করেছে । কাজ শেষে গণজাগরণ বিভক্ত এবং নিষ্ক্রিয় করে দিতেও সফল হয়েছে, এর পরিকল্পনাকারীরা । 

কিন্তু পুরোই দিকভ্রান্ত ছিল, হেফাজত । কারণ হেফাজতের ক্ষেত্রে এর উত্থান বিবেচনা করা হয়েছে কেবল, এর বিস্তৃতি এবং পরিচালন ও সমাপন পরিকল্পনা ছিল না । 

যার জন্য এত বড় একটা বিপর্যয়ের পরেও হেফাজত আপস করতে বাধ্য হয়েছে, তাদের সাথে;  যারা তাদের আলো নিভিয়ে রাতের আঁধারে হামলা করেছিল। 

এমন কি , এ বিপর্যয়ে হেফাজত কর্মীদের  ক্ষতিও স্বীকার করা হয়নি , উল্টো উপহাস ছিল। এখনো আছে । 

তবে  হেফাজতের রাজনৈতিক গুরুত্ব এখনো কমে যায়নি, এর প্রমাণ সরকার প্রধান আল্লামা শফি'র সাথে সাক্ষাত করেছেন। আল্লামা শফি সাব আওয়ামী সালতানাতের জন্য প্রার্থনা করেছেন ।

তবে এতে একটা গোষ্ঠী অসন্তুষ্ট হয়েছেন, তাদের একাংশ আওয়ামী লীগ সমর্থক, আরেকটা গোষ্ঠী বিম্পি ও জমাত । 

হতাশ গোষ্ঠীর জন্য ম্যাকেয়াভ্যালির প্রিন্স গ্রন্থ পাঠের পরামর্শ রলো। 

আশাবাদীদের বলি- ৫ মে , ইতিহাসে টিকে থাকবে, কারণ এর রাজনৈতিক গুরুত্ব প্রবল । এবং সামনেও হেফাজত একটা শক্তি হিসাবে টিকে থাকবে । এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা । সে টিকে থাকা ইতিবাচক হবে নাকি নেতিবাচক- সময়ই তা নির্ধারণ করবে । 


-- 

কাসেমে আটকে যাওয়া সাহিত্যের রুচি অরুচি!



কাসেম বিন আবু বাকার, ছবি- এএফপি, সংগ্রহ সূত্র: ডেইলি মেইল 



প্রত্যেক লেখক তার এবং তার আশ-পাশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাখ্যা করেন। সে ব্যাখ্যা ভুল হইতে পারে। সে  ব্যাখ্যা আমি নাও নিতে পারি । কিন্তু জান্তে কোন অসুবিধা নাই। কাসেম বি আবু বাকারের লেখা বঙ্কিম , রবীন্দ্র-নজরুল- শরতের নিক্তিতে মাইপা পাঠ করনে আমি বিশ্বাসী না। আমার হাতে  সময় আছে, আমি পড়ি। যা পাই পড়ি। ছাইপাশ যা পাই তাই!

আমাদের কৈশোরে একটা বই পড়তে সময় নিতাম ১ থেকে দেড় দিন, তাইলে কী পরিমাণ বই দরকার!  চিন্তা করেন! সেই বই কি সুশীল রুচিকর  পাঁচক লেখকেরা লেইখা আমগো সামনে আন্তে পারছিলেন! এবং প্রকাশকরা!  

হুমায়ূন পইড়া হলুদ রঙ ভালো লাইগতো।  জুতা ছাড়া রাস্তায় হাঁটতাম, জোছনা খাইতাম, কুত্তার লগে কতা কইতাম!  ভাল্লাগতো।  যুক্তি মানতাম না। এটা  ভালো কি খারাপ সেইটা তর্কের ব্যাপার। কিন্তু পাঠক হিসাবে আমি ত এটা নিছি। আপনি আমার নেয়াকে  আপনার নিক্তিতে মাইপা রুচিকর অরুচিকর নির্ধারণ ক্যামনে। 

সাহিত্য  লইয়া কত রকমের কতা। বাজাইরা সাহিত্য কইয়া হুমায়ূনরে তো  ব্যাপক সমালোচনা কইরছিল  আহমদ ছফা। কিন্তু  ছফার চিন্তা আপনার মইধ্যে সংক্রমিত অইতে পারে। তার সাহিত্য  সে অর্থে কাউরে সংক্রমণ কইরছে, এ রকম চোখে পড়নের মত ঘটনা কোথাও পড়ি নাই।  

এ দেশের  যারা সাহিত্য কইরে খান, যারা সংস্কৃতির ব্যবসা করেন, তারা নিজের বাইরের লোকের সব কাজকে খাটো কইরা দেখেন।  যারা তাগো উৎসাহিত কইরে থাকে, তাগো ব্যাপক সমালোচনা কইরা থাকেন। 


হালের সমালোচনার  টার্গেট এক  কাসেম বিন আবু বাকার।  তার বই আমি নিজেও পড়েছি।  শব্দ-বাক্য গাঁথুনি ভাল্লাগবে না, আমার কিম্বা আপনার।  আবার অনেকের কাছে ওইটাই অমৃত সমান! যার যার টা তারে নিতে দ্যান! 

তার বই গল্প-উপন্যাস। ধর্মগ্রন্থ না।  তার বই তো বাংলা একাডেমির পুরস্কারের জন্য এপ্লাই করে নাই। আপনাদের কম্পিটিটর তো তিনি নন। তার মত করে তিনি  লিখেছে,  একটা বড় পাঠক শ্রেণি ধরেছে। এইটা আপনারে চুলকায় ক্যান।  

আফনে নিজের দিকে তাকান না কেন? একটা বই বাইর কইরা কত রকমের প্রচারণা চালায়া ত ৫০০ কপি সারা বছরে সেল কইরতে পারেন না।  সেইখানে কাসেমের বই হাজার হাজার বই  বেচা কেনা অয়। ক্যামনে কি! আপনের রুচি বিবেচনায় আইনলে তো সব পাঠকই অরুচিশীল! 

কাসেম বিন আবু বাকারের বই কিম্বা  আবদুল সালাম মিতুলের বইয়ের পাঠককে আপনি অবহেলার চোখে দেইখতে পারেন না। তারা তো আফনের উপ্রে চাইপা বসেন নাই। আফনের ভালোলাগে না, আফনে তারে ইগনোর করেন, হুদাই ত্যানা প্যাঁচাইয়া নিজের 'অক্ষমতা' ঢাকন যাইবো? জনাব-জনাবা! 

মানুষ ! লাশ এবং রানা প্লাজা !


ছবি: সংগ্রহ


বছর চারেক আগের এ রকম একটা দুপুর, শত শত মানুষ রাস্তায়। অটোরিক্সাটা ছুটছে। মানুষের ভিড় ঠেলে রানা প্লাজার কাছে পৌঁছালাম। আশ পাশে উৎসুক মানুষ। পাশেই দেখলাম বিরিয়ানির প্যাকেটের গন্ধ। কিছু লোক ভেতরে যাচ্ছে আসছে। পাশের ভবনে গেলাম, দেখলাম আমাদের সাহসী ফায়ার বিগ্রেডরের লোকজন, কাজ করছেন। নিজের স্বজন উদ্ধারের মতই প্রণান্ত চেষ্টা তাঁদের। ধ্বসে পড়া ভবনের ভেতরে কিছু স্বেচ্ছাসেবি, মানব-শরীরের পঁচে যাওয়া মাংসের গন্ধ।

বাইরে- লাশ গুনছেন অনেকে। ঘটনার তিন দিন পর (২৭ এপ্রিল ২০১৩ )। দেখতে গিয়েছিলাম রানা প্লাজা ট্রাজেডি। লেখাটাও উদ্দেশ্য ছিল। বাইরে এসে রোড ডিভাইডারের ওপর দাঁড়ালাম। একজন নারী এগিয়ে এলেন আমার দিকে। নাম লাইজু। বললেন, তার বোন সীমার সাথে কথা হয়েছে, টয়লেটে আটকা। কিছু করা যায় কিনা? চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি।

বোন সীমাকে জীবিত দেখতে মন কাঁদছে লাইজুর। বললেন, সীমা তিনতলায় কাজ করতেন। এক ছেলের মা সীমা ২৪ এপ্রিল সকালে ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খেয়ে কাজে এসেছিলেন। তারপর নিখোঁজ। চার্জ নেই মোবাইল ফোনে। তবুও বোনের মন মানে না। রিচার্জ করে কিছু টাকা পাঠালেন, বোনের ফোনে। কিছুক্ষণ পরপর বোনের মোবাইলে চেষ্টা করছিলেন। যদি কথা বলা যায়। যদি জানা যায় বোনটি কেমন আছে! শেষ পর্যন্ত তার আর কিছু জানা গেলো না।

একই রকম অবস্থা ছিল মাসুদ রানার। বগুড়ার সোনাতলা থেকে এসেছিলেন তিনি। বোন শাহিনূর ও ভাইয়ের মেয়ে নাজমার কোনো খবর জোগাড় করতে পারেননি। ছুটেছেন অধরচন্দ্র স্কুল, এনাম মেডিক্যাল, সিএমএইচ থেকে রানা প্লাজা।

তিন ছেলে ও একমাত্র কন্যার বাবা আবুল কাসেম ভূঁইয়া নিখোঁজ হয়েছিলেন । তার লাশের খোঁজে বড় ভাই মোহাম্মদ ইবরাহীম অধরচন্দ্র স্কুলে অপেক্ষা করেছেন। ছেলে শাফায়েত রানা প্লাজার সামনে ছিলেন। স্ত্রী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, যদি প্রিয় স্বামীর দেখা মিলে। না সে সব আশা মিথ্যে। দেখা মেলেনি স্বজনের ।

কিছুক্ষণ পর পর লাশ নিয়ে আসা হচ্ছে, সে লাশের গাড়ি যাচ্ছে অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ের মাঠে। যে সব মানুষের জীবিত উদ্ধার করা হচ্ছিল তাদের নেয়া হচ্ছিলো এনাম মেডিকেল ও সিএমএইচএ!

আমার জীবনের এ রকম করুণদৃশ্য এর আগে দেখিছিলাম সিডর আক্রান্ত শরণখোলায়। সেখানে মানুষের লাশ ঝুলে ছিল গাছে, ধান ক্ষেতে ভেসে ছিল মানুষের ফুলে ওঠা লাশ। সে এক হৃদয় বিদারক, নির্মম ও নৃশংস দৃশ্য! 

এটি দ্বিতীয় কঠিন এবং রূঢ় একটা কষ্টময় স্মৃতি হয়ে গেঁথে গেলো।

অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ের মাঠে এক নারী চিৎকার করে শুয়ে পড়ছিলেন। তার কাছে পৌছানোর আগেই অজ্ঞান হয়ে গেলেন। স্বামী সন্ধানী নারী। নিখোঁজের তালিকায় স্বামীর নাম লেখাতে এসেছিলেন।

ছোটবেলায় আমরা দেখতাম দুর্যোগের পর রিলিফ আনতে কিম্বা ইউনিয়ন পরিষদের দুস্থ সহায়তা পেতে লম্বা লাইন। জীবনে আমি প্রথম এবং একবারই লক্ষ্য করলাম, লাশ খুঁজতে লম্বা লাইন। এক নির্মম অভিজ্ঞতা আর করুণ আর্তির কোনো বর্ণনা করার মত ভাষা আমার জানা নেই।

সাভারের অধর চন্দ্র স্কুলের মাঠজুড়েই হাহাকার। লাশের সংখ্যা নিয়েও ছিল ধুম্র জাল। নিখোঁজ মানুষের পরিসংখ্যানও সঠিকভাবে মিলেনি।

ইতিহাসের এ ভয়াবহতম ঘটনায় দু'হাজারের বেশি মানুষ মরে বেঁচে গেছে! যারা আহত হয়ে বেঁচে গেছেন, তাদের জীবন চলছে দুর্বিসহ অবস্থায়।

এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েনি। রসিকতা হয়েছে। নিপীড়ত মানুষের পক্ষে আমরা কাউকে দাঁড়াতে দেখিনি। সবার শরীরে এখন চিকনাই জমেছে। চোয়ালে জমেছে লাস্যতা। কেউ রোদে পুড়ে আন্দোলন করে অধিকার আদায়ের লড়াই করতে চান না! 'দুনিয়ার মজদুর এক হও লড়াই করা' লোকেরা তো এখন সরকারের চাকা ঘোরাচ্ছে! সুতরাং মরে বেঁচে যাওয়া মানুষের জন্য দিন উল্লেখ করেই শোকই একমাত্র প্রাপ্য! তাও এর দু এক বছর তাও থাকবে বলে মনে হয় না।

শ্রমজীবি মানুষের রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারে না।

বাঙালি মোছলমানের মন


সেই টুইট, যেটি  সনুকে  আলোচনায় তুলেছে!

সনু  যে আযান নিয়া তার মতামত দিছে, এটা একান্তই তার কমুনাল দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। তার কাছে আযানের ধ্বনি ভালো নাও লাগতে পারে।  কারণ সে হিন্দু, সে গায়ক- কারণ তার গায়কি-দূষণ রোধের বদলে  মোছলমানরা লাখ লাখ টাকা খরচা কইরা তারে বিভিন্ন দেশে আমদানি কইরা থাকে।

তবে ভুল টা তার ব্যবসায়িক। সে  মননে কমুনাল। চেতনায়ও। তবে সে কেবল ধর্ম পালনকারী লোক হলে ঠিক ছিল। কিন্তু সে যে একজন ব্যবসায়ী। গানের ব্যবসা তার। গলায় গান তুলে সেটি রেকর্ডবন্দী করে  তার পক্ষে লোকেরা তা ফেরি করে। তার সে গান-পণ্যের বড় অংশের ভোক্তারা হইলো মোছলামান।

যারা তার এ আচরণে দুঃখ পাইছেন, তারা  কমুনাল সনুকে চিনতে ভুল কইরছেন।  কারণ তারা তার  গানের ভক্ত, তাকে মনে মনে  পূজা করে যান, তাই মোছলমানদের  আযান লইয়া তার এ বাতচিত অপছন্দ করেছেন।

কিন্তু আপনারা যারা এ লইয়া চেঁচাইতেছেন, তারা কী আযান শোননে, ধর্ম পালন করে থাকেন! মানে আযান, আযানের পর নমাজ এ সব করে থাকেন। যদি করে থাকেন, তাহলে আপনাকে সশ্রদ্ধ সালাম। না করে থাকলে, হুদা আবেগে কাইন্দালাইয়েন না।  সময়ের এ খরস্রোত কেটে গেলে, আপনিই আবার সনুর কোন কনসার্ট কই হইতাছে,  নতুন গান কি আইতেছে, খুঁইজা খুঁইজা শুনবেন।

বাঙালি মোছলমানের মন বোঝা খুবই মুশকিল।

 তবে ধর্ম পালন- না পালন সে সব লইয়া কথা বলার পরিবর্তে আমাকে-আপনাকে যেটা বলি, সনুর কু-কথা লইয়া আপনি -আপনারা  আবার আপনার প্রতিবেশী সনাতন ধর্মীদের উপহাস কইরেন না। আপনি যিাদ মোছলমান হন, তাহলে আপনার ধর্ম আপনার জন্য এটাকে হারাম করেছে।

শুভ দিন। 

জল-পাহাড়ের গোধূলী !


তিন্দু জল পাহাড়ে রূপবতী সূর্য!

তিন্দুর পথে পথে পাহাড়, সূর্য আর সমতলের লুকুচুরি দেখা, পাহাড়ি পাথুরে নদী জলে পাহাড়িদের দেখতে দেখতে ঘণ্টা দুই পর আমরা তিন্দু পৌছালাম। শিগরঙ ত্রিপুরার সাথে আগেই আলাপ ছিল। নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে ইলেকশন করে বিপদে আছেন বেচারা।

সাঙ্গুর জলের কাছে একটা ছোট দোকানে বসে আড্ডা হলো কিছুক্ষণ। তারপর তিন্দুর পাড়ায় উঠে এলাম। সুনসান নীরবতা। প্রেনথাংয়ের সাথে কথা হলো, প্রেনথাং এখানকার হেডম্যান। পাহাড়িদের মধ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী খুমি সম্প্রদায়ের লোক। অনেক আড্ডার ফাঁকে খাবারেরও আয়োজন করলেন, থাওবো বউদি। থাওবো প্রেনথাংয়ের স্ত্রী।

দুপুরের পাহাড়ি খাবার আর শান্ত-সৌম্য-রম্য পাহাড়ে রাজনীতির বিষবাষ্পের গল্পও শোনা হলো, ঘন্টা দেড়েকের আড্ডার পর আমরা ফিরছি।

বিকালের দিকে নৌকায় চড়ে বসলাম। ফেরার পথে সময় কম লাগে। সূর্য অস্ত যাচ্ছে। অনিন্দ্য সুন্দর এক দৃশ্য। পৃথিবীর সবচেয়ে অনন্য এ ঘটনা দেখে খুবই ভালো লাগবে, যে কারো। সূর্য সবখানেই ডোবে। সে নিঝুম দ্বীপ, সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন্স কিম্বা কক্সবাজার। নায়াগ্রা কিম্বা জুরিখে। সবখানেই ডোবে।


গোধূলীবেলায়!

তবে একেক জায়গায় সূর্য ডোবার দৃশ্য একেক রকম। সেটি কারো কারো জীবনকে রাঙিয়ে যায়। সূর্য ওঠা এবং ডোবার দৃশ্য আমার বহু জায়গা থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ের ভাঁজে , সবুজের ফাঁক গলিয়ে সে সূর্যের আলো পাথুরে নদীতে এসে পড়ার মোহনীয় দৃশ্য আমি প্রথম উপভোগ করলাম। অসাধারণ সেই দৃশ্য।

সন্ধ্যা নামতে নামতে আমরা থানছি চলে এলাম। আরেক কাপ চা খাওয়া যেতে পারে। তাই হলো। বিজিবি পোস্টের সামনের দোকানে আমরা চা খেলাম।

মাহিন্দ্রায় চড়ে ফিরছি বান্দরবান শহরে। সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে বলিপাড়া বিজিবি পোস্ট ত্যাগ করার নিয়ম, আমাদের মাথায় ছিল না, তাই কিছুটা সময় অপেক্ষার বিজিবি'র অনুমোদন মিলল। সে অনুমতি নিয়েই আমরা ফিরলাম।

নির্জন পাহাড়ি পথে একমাত্র যাত্রিবাহী যানবাহন আমাদের মাহিন্দ্রা। দু'জন পাহাড়ি আর একজন বাঙালি নিয়ে ফিরছে। পথে পথে স্থানীয় বহু তরুণ এ পাড়া ও পাড়া যাচ্ছে, আড্ডার দৃশ্যও চোখে পড়লো। দোকান গুলো সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে গুটিয়ে যেতে থাকলো।

দূরের গ্রামে নিভু নিভু আলো, সে দৃশ্য, আনন্দ-উত্তজেনা অনুভব করা যায়, বলে বোঝানো মুশকিল।

দূরের গ্রামে নিভু নিভু আলো

দুর্গম পাহাড়ের নির্জন রাত-!


মাহিন্দ্রায় চড়ে ফিরছি বান্দরবান শহরে। সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে বলিপাড়া বিজিবি পোস্ট ত্যাগ করার নিয়ম, আমাদের মাথায় ছিল না, তাই কিছুটা সময় অপেক্ষার বিজিবি'র অনুমোদন মিলল। সে অনুমতি নিয়েই আমরা ফিরলাম।

নির্জন পাহাড়ি পথে একমাত্র যাত্রিবাহী যানবাহন আমাদের মাহিন্দ্রা। দু'জন পাহাড়ি আর একজন বাঙালি নিয়ে ফিরছে। পথে পথে স্থানীয় বহু তরুণ এ পাড়া ও পাড়া যাচ্ছে, আড্ডার দৃশ্যও চোখে পড়লো। দোকান গুলো সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে গুটিয়ে যেতে থাকলো।

দূরের গ্রামে নিভু নিভু আলো, সে দৃশ্য, আনন্দ-উত্তজেনা অনুভব করা যায়, বলে বোঝানো মুশকিল। নীলাদ্রি পাহাড়ে আসার পর আবার চেকপোস্টের অনুমতি নিয়ে আমরা ছুটলাম। চেক পোস্ট থেকে জানালো, রাত ৮ টার পরে এ রাস্তায় চলাচল নিষেধ। এর কারণ ব্যাখা করে বললেন, আপনারা যদি কোন বিপদে পড়েন, সেটি মানব সৃষ্ট না হােক, প্রাকৃতিক; তখনো তো আপনাদের কিছু করার থাকবে না।
কথা ঠিকই। কিন্তু আমাদের ফিরতে হবে। তাই নিজেদের বিবেচনার উপর আমাদের ছেড়ে দিলেন তারা।

পাড়ায় পাড়ায় কিশোর-তরুণরা নিভৃতে সখাসখির আড্ডার কথা বলছিলেন- জজ চাকমা। বললেন, দাদা এই ছেলেরা তাদের সখীদের কাছে যাচ্ছে। প্রেমিকার কাছে। মন খুলে কথা বলবে। গল্প করবে। আড্ডা দেবে। এটা আমাদের সংস্কৃতিরও অংশ। আমি বললাম, নিভৃত মিলনে , যদি কেউ শারিরীক সম্পর্কে জড়ায়, তাহলে ?

জজ এবং নু দু'জনেই স্মিত হাসলেন, বললেন, তাতে খারাপ কিছু হবে না। এমনকি বাচ্চা পেটে আসলেও। বরং তখন দু'পরিবারে আনন্দ। সন্তান সম্ভাবা তরুণীকে ওই তরুণ বিয়ে করে। তার লয়ালিটি আরো বেশি প্রমাণিত হয়।

মাহিন্দ্রা এগিয়ে যাচ্ছে। কোন কোন পাড়ার আশপাশে দাওনা হাতেও কয়েক তরুণকে দেখা গেল। প্রথম কেউ দেখলে ভয়ে ভড়কে যাবেন। আক্রমণ করতে পারে, সেটা আশঙ্কা মনে নিশ্চিতভাবে উঁকি দিবে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই পাহাড়ের কাজ সেরে বাসায় ফিরছেন।

আবার 'পাঙকো' ছেলেপুলেও আছে। মোটর বাইক নিয়ে এ দিক ও দিক রাইড দিচ্ছে। দেখে মনে হতে পারে আপনার দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু এমনটা ঘটে না । বা ঘটেছে বলে শোনা যায় নি। এমনকি মাহিন্দ্রার ভেতরেও কেউ টর্চের আলো ফেলেনি। সমতলেও রাতের বেলা কোন কোন এলাকায় নির্জন রাস্তায় কোন বাহন গেলে দুষ্টু ছেলেরা টর্চের আলো ফেলে। এখানে সে রকম অভিজ্ঞতা নেই।

দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তি নিয়ে শহরে এসে নু মঙ দা'র বাসায় রাতের খাবার খেতে খেতে গল্প হচ্ছিল। বৌদি শুনলেন, আমাদের চেকপোস্টের গল্প। অস্পুটে তিনি সেই কথাটিই বললেন, যেটি আমি এর আগে বহুবার শুনেছি-- 'আমরা নিজভূমে পরবাসী'।

এ ভাবনাটা আমাদের বদলে দিতে হবে। এখানে কোন পক্ষ বিপক্ষ নাই। একসাথে আমরা এগিয়ে যাবো। পাহাড়ি-বাঙালি মিলে আমরা বাংলাদেশী। আনন্দ -দুঃখ ভাগাভাগি করে এক নতুন বাংলাদেশ গড়বো, আমরা। শুভ পর্যটন।

তিন্দুর রূপবতী জলপথে

উত্তরে বাতাস স্পর্শ করলে তপ্ত গরমের আঁচটা কমে আসে। সাধারণত দখিনা বাতাস- শীতল! কিন্তু পাহাড়ের তপ্ত গরমে- বাতাস, সে যে দিক থেকেই আসুক, সে বাতাস শীতল-মধুর।

সকাল আটটায় যখন মাহিন্দ্রায় নু মঙ দা'র সাথে পথ চলছিলাম, অনেক কথা-আলাপ হচ্ছিল। ক্যাম্পাসের সে সব দিন! সোনালী সময়। আমাদের প্রিয় তীর্থ, আমাদের হৃদ-স্পন্দন- ক্যাম্পাস- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরেই জমেছিল পুরোটা সময়।

ক্যাম্পাসে বহু নিপীড়নের গল্প আছে- বহু কষ্টেরও।  তবুও সব ছাপিয়ে ক্যাম্পাস যেন - প্রথম প্রেম। প্রথম আবিষ্কারের আনন্দ।

বান্দরবান আমার সেকেন্ড হোম। যদিও সেখানে আমার কোন বসতি নেই। তবে আত্মার বসতিই তো উত্তম বসতি। সেই ২০০০ সাল থেকে প্রতি মাসে অন্তত একবার করে যাওয়া হতো, যেখানে! সেটা তো সবচে কাছের আবাস, আমার।

মাহিন্দ্রা মিলনছড়িতে থামল। আমরা মিলছড়ি রিসর্টের রেস্টুরেন্টের বারান্দায় এসে বসলাম। উত্তরে বাতাসের ঝাপটা এসে পড়লো, মুখে। বারান্দায় চেয়ার টেনে বসতে বসতে নু মঙ দা ও আমাদের আরেকজন পাহাড়ি সহযাত্রী পাহাড়ের গল্প বলছিলেন। এ সবই আমার বহুবার শোনা, তবুও আবারো শুনছি! খারাপ লাগছে না।



সকালের নাশতা আমি বাদে সবাই খেয়েছেন। নু মঙ দা পান্তা ভাত খেয়ে আমার সফরসঙ্গী হয়েছেন। আরেকজন চাকমা ভদ্রলোক যাচ্ছেন, তার আশ্রমে থাকা পুত্রকে দেখতে; তিনিও একই নাশতা সেরে যাত্রা করেছেন। আনন্দময় যাত্রায় আমাদের চালক জজ চাকমা, যার সিগ্রেটের অসহ্য ধোঁয়া আমাকে ৬ ঘণ্টা সহ্য করতে হয়েছে, সে পরোটা খেয়ে এসেছে।

তাই আপতত, আমি একাই নাশতা খাবো। বাকিরা ধোঁয়া ওঠা কফি। নাশতার অর্ডার একজনের জন্য হবে না- রিসর্টের বেয়ারা এমনটা জানিয়ে নিজের মনে ঘুরছে। জানতে চাইলাম, কয়টা পরোটা হলে তুমি নাশতা দেবে। বলল, কমপক্ষে তিনটা। একেকটা পরোটা নাকি একজনে খায়। বল্লাম, নিয়ে আসো!

'খাদক' হিসাবে আমার সু বা কু খ্যাতি অনেক পুরনো। আমার ছোট ভাই- বড় ভাই এবং বন্ধু-বন্ধু স্থানীয়দের কাছে এটা বহুল আলোচিত বিষয়ও বটে। মিনিট কুড়ি বাদে যে পরোটা আসল, তা দেখে আসলেই ভয় পেলাম। একটা একজন খাইলেও সেটা বাজারের সাধারণ পরোটার তিনটার সমান।
সে যা-ই হোক আমি, প্রমাণ সাইজের এ পরোটা ২ টা খেয়ে তৃতীয়টায় হাত দেয়ার সাহস পেলাম না।

রিসর্টের বারান্দায় পরোটা খেতে খেতে সাঙ্গু দেখছিলাম। পাহাড়ের ভাঁজে, রমণীয় উষ্ণতার সকালে সাঙ্গু-দু'চোখ জুড়িয়ে গেলো। এ খরস্রোতা পাহাড়ি নদী, এ নদীর জল এবং পাহাড়ের প্রকৃতি- এ সব সৃষ্টিকর্তা তার মনের মত করে সাজিয়ে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। অনন্য, অসাধারণ।



রিসর্টের রেস্টুরেন্টের বারান্দায় আগে বেশ পাখি ছিল। এখন সে রকম নেই। তবে কাছাকাছি পাখিদের ডাক শুনছিলাম। মধুর ডাক। মধুর সকাল।

নাশতা সেরে মাহিন্দ্রা আবার ছুটছে। চারজনের মধ্যে আমি একমাত্র বাঙালি। পাহাড়িদের টুকিটাকি গল্প শুনছিলাম। ফারুক পাড়া পেরিয়ে আমরা যাচ্ছি। গন্তব্য থানছি।

পথ যেতে যেতে পাহাড়ে ব্যবসা, জীবিকা এবং অভ্যন্তরীন রাজনীতি নিয়ে আলাপ হলো। চিম্বুক বেল্টে পাহাড়ের ভাঁজে দাঁড়িয়ে ছবিও তুললাম বেশ কয়েকটা। তারপর আবার যাত্রা।

পথে সেনা বাহিনীর চেকপেস্টে রিপোর্ট করার জন্য নীলাদ্রিতে দাঁড়ালাম। আমি অবশ্য নেমে এক মিনিটের একটা ভিডিও ক্লিপ রেডি করলাম। রবি'র থ্রিজি ছিল, সাথে সাথে আপলোড করে দিলাম।

https://www.facebook.com/1277411423/videos/10212543671288249


ভ্রমণ আমার কেবল নেশা নয়, জীবনী শক্তি। তবে এবারে ভ্রমণটা ছিল ভিন্ন কারণে। ইচ্ছা ছিল এমন রমণীয় ভ্রমণে বড় ছেলেকে সাথে নেবার। কিন্তু পুত্র মাতা সাহস সঞ্চয় করতে পারেনি বলে, ছেলেটা এমন স্বর্গ পিতার সাথে ভ্রমণ করতে পারেনি!

বলা যায়, এটা আমার একক ভ্রমণ। সঙ্গী ছিল- নু মঙ দা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই। ঢাকা থেকে আর কয়েকজন যাবার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। তাদের আমি সঙ্গী করতে পারিনি।

নীলগিরি যখন ক্রস করছি, দেখলাম পুরোই হাটবার। ভেতরে বাইরে লোকে লোকারণ্য। তেতে ওঠা রোদে সবাই ঘামছে, আর মাথায় বাবুয়ানা ক্যাপ দিয়ে ঘুরছে। খারাপ লাগেনি, তবুও মানুষ ঘুরছে। এ ঘোরাঘুরি বাতিকটা যেন স্থায়ী হয়, সে জন্য আমরা ছোট্ট একটা গ্রুপ সেই ১৯৯৯ সাল থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছি। যদিও সেটি অনেক বৃহত আকারে নয়, তবুও এর কিছুটা প্রভাব এখানে থাকবে- সেটা নিশ্চিত জেনে মনটা ভালো হয়ে গেলো।



 নীলগিরি পর রাস্তার পুরোটাই নীরব। নু মঙ দা'র সাথে বান্দরবান, পাহাড়ি ছাত্র রাজনীতি, জাতি গোষ্ঠীর রাজনীতি, আঞ্চলিক রাজনীতি, বিম্পি আম্লীগের রাজনীতি নিয়ে আলাপ করতে করতে বলিপাড়া এসে পড়েছি। বিজিবি'র একটা চেক পোস্ট আছে, সেখানে। রিপোর্ট করে আসলেন নু মঙ দা। আমি নামলাম না।

আমাকে এখনো অনেকে জিগেশ করেন, ভাই অমুক জায়গায় দেখার কি আছে? আসলে স্পট সম্পর্কে জানতে চান। আমি যদি বলি ভাই আপনি তো সিমলা গেছেন? সেখানে দেখার কি আছে। উত্তর কি হবে? সেটা ভেবে নিন না।

বলিপাড়া পার হলে আম গাছের অনেক সারি দেখা মিলবে, এখানে আমাদের চাষ হচ্ছে বেশ কয়েকবছর ধরে। পাহাড়ে এখন প্রচুর ফল হয়। মানে ফলের চাষ বেড়েছে। যেখান থেকে পাহাড়িরা বেশ ভালো আয় করছেন। জেনে ভালো লাগলো।

এক সময় পাহাড়ে সেগুন কাঠের চাষ বেশ জনপ্রিয় ছিল। এখন সেটি কমছে। এর কারণ জানতে চাইলে, নু মঙ দা বলছিলেন, এটা অনেক পানি চুষে নেয়। এতে করে পানি সঙ্কটে থাকা পাহাড়ে আরো পানির সঙ্কট বাড়ায়। তাই এ দিকটা অনেকে বুঝতে পেরে, চেষ্টা করছেন বিকল্প কিছু করতে।

কথা-গল্পে আমরা থানছি বাজারে পৌছালাম। এক কাপ চা হলে মন্দ হতো। তপ্ত রোদ মাথার উপরে। মুখের উপর লু হাওয়ার ঝাপটা। জজ মিয়া চায়ের সাথে বিস্কুট চুবাইতে চুবাইতে বললেন, ঘাটে চলেন, তাড়াতাড়ি। নইলে নৌকা পাইবেন না। তারই তখনো চা বিস্কুট শেষ হয়নি। তবুও আমরা উঠলাম।

থানাছি বাজার থেকে বিজিবি পোস্ট হয়ে নৌকা ঘাটে পৌঁছালাম। লাইনের নৌকার দেখা নেই। পরে অন্যের একটা রিজার্ভ করা নৌকায় সওয়ার হলাম, আমরা দু'জন। তপ্ত রোদের হল্কায় চামড়া পুড়ে যায় যায় অবস্থা। সাঙ্গুর জল মেখে নিলাম মুখে হাতে। মার্চের শেষ সপ্তাহে শুনেছিলা, সাঙ্গুতে ব্যাপক কারেন্ট। তার কিছুই এখন দেখা মিলল না।

তবুও এ যাত্রা আনন্দের। কারেন্ট থাকলে, এক রকমের আনন্দ। না থাকলে আরেক রকমের আনন্দ। নৌকা ছুটছে। আনেকটা ভিডিও করার খায়েশ হলো। করলাম । এবং তাও রবি'র থ্রিজির কল্যাণে সাথে সাথে আপলোড মারলাম। বিস্মিত হলাম, ঢাকার চেয়ে থানছিতে থ্রিজির স্পিড অনেক বেশি। এর ব্যাখ্যা হয়ত, সেখানে থ্রিজি ইউজার কম!

সে যাই হোক, কিছুটা পথ পেরোনোর পর বাম পাশে একটা চরের মত চোখে পড়ে। এটা অনেকটা ইউরোপীয় স্টাইলে কেয়ারি করা। দেখে ভালো লাগল। ইউরোপে এ রকম দৃশ্য চোখে পড়ে। যারা ইউরোপে থাকেন, অথবা বেড়াতে যান, তাদের পিকচার দেখে এটা বুঝতে পারলাম!



সাঙ্গুর তিন্দু রেমাক্রি অংশের জল স্বচ্ছ। এর ধারা একেবারেই ভিন্ন। নিচে মাছ দৌড়াচ্ছে, সবুজের প্রতিবিম্ব বা মুদ্রণ জলের উপর চোখ রাখলেই দেখা যাবে। আমার দেখা সাঙ্গু নদী আর তিন্দু-রেমাক্রির জলপথের মত এত বৈচিত্রময় রূপবতী আর দ্বিতীয় পথ দেখা হয় নাই।

অবশ্য সাঙ্গুর এ অংশটার সাথে কিছুটা মিল আছে সুন্দরবনের কচিখালী টাইগার পয়েন্টের ভেতরে একটা জল পথের। সেটি আমি ও আমার বন্ধু বাবু একবার পাড়ি দিয়েছিলাম, সম্ভবত ২০০১ সালে। এটা যে কতটা ভংয়ঙ্কর ঘটনা, সেটি অবশ্য পরে বুঝতে পেরেছি। সেখান থেকে আমাদের ফেরার কোন সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু এডভেঞ্চারের নেশা আমাদের এতটা উন্মাদ করেছিল, আমরা ঢুকে গিয়েছিলাম জঙ্গলের ভেতরে। একা একা।




সে যা-ই হোক তিন্দুর পথে পথে পাহাড়, সূর্য আর সমতলের লুকুচুরি দেখা, পাহাড়ি পাথুরে নদী জলে পাহাড়িদের দেখতে দেখতে ঘণ্টা দুই পর আমরা তিন্দু পৌছালাম। শিগরঙ ত্রিপুরার সাথে আগেই আলাপ ছিল। নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে ইলেকশন করে বিপদে আছেন বেচারা।



সাঙ্গুর জলের কাছে একটা ছোট দোকানে বসে আড্ডা হলো কিছুক্ষণ। তারপর তিন্দুর পাড়ায় উঠে এলাম। সুনসান নীরবতা। প্রেনথাংয়ের সাথে কথা হলো, প্রেনথাং এখানকার হেডম্যান। পাহাড়িদের মধ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী খুমি সম্প্রদায়ের লোক। অনেক আড্ডার ফাঁকে খাবারেরও আয়োজন করলেন, থাওবো বউদি। থাওবো প্রেনথাংয়ের স্ত্রী।



দুপুরের পাহাড়ি খাবার আর শান্ত-সৌম্য-রম্য পাহাড়ে রাজনীতির বিষবাষ্পের গল্পও শোনা হলো, ঘন্টা দেড়েকের আড্ডার পর আমরা ফিরছি। প্রেনথং আমাদের সাথে বের হলেন। আস্ত এক গেলাস দো চুয়ানি খাওয়ার পরেও স্বাভাবাবিকই আছেন। বললেন, দাদা মাছ মারবো। আমাকে পথে নামিয়ে দেবেন।

বিকালের দিকে নৌকায় চড়ে বসলাম। ফেরার পথে সময় কম লাগে। সূর্য অস্ত যাচ্ছে। অনিন্দ্য সুন্দর এক দৃশ্য। পৃথিবীর সবচেয়ে অনন্য এ ঘটনা দেখে খুবই ভালো লাগবে, যে কারো। সূর্য সবখানেই ডোবে। সে নিঝুম দ্বীপ, সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন্স কিম্বা কক্সবাজার। নায়াগ্রা কিম্বা জুরিখে। সবখানেই ডোবে।





তবে একেক জায়গায় সূর্য ডোবার দৃশ্য একেক রকম। সেটি কারো কারো জীবনকে রাঙিয়ে যায়। সূর্য ওঠা এবং ডোবার দৃশ্য আমার বহু জায়গা থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ের ভাঁজে , সবুজের ফাঁক গলিয়ে সে সূর্যের আলো পাথুরে নদীতে এসে পড়ার মোহনীয় দৃশ্য আমি প্রথম উপভোগ করলাম। অসাধারণ সেই দৃশ্য।



সন্ধ্যা নামতে নামতে আমরা থানছি চলে এলাম। আরেক কাপ চা খাওয়া যেতে পারে। তাই হলো। বিজিবি পোস্টের সামনের দোকানে আমরা চা খেলাম।

মাহিন্দ্রায় চড়ে ফিরছি বান্দরবান শহরে। সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে বলিপাড়া বিজিবি পোস্ট ত্যাগ করার নিয়ম, আমাদের মাথায় ছিল না, তাই কিছুটা সময় অপেক্ষার বিজিবি'র অনুমোদন মিলল। সে অনুমতি নিয়েই আমরা ফিরলাম।

নির্জন পাহাড়ি পথে একমাত্র যাত্রিবাহী যানবাহন আমাদের মাহিন্দ্রা। দু'জন পাহাড়ি আর একজন বাঙালি নিয়ে ফিরছে। পথে পথে স্থানীয় বহু তরুণ এ পাড়া ও পাড়া যাচ্ছে, আড্ডার দৃশ্যও চোখে পড়লো। দোকান গুলো সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে গুটিয়ে যেতে থাকলো।

দূরের গ্রামে নিভু নিভু আলো, সে দৃশ্য, আনন্দ-উত্তজেনা অনুভব করা যায়, বলে বোঝানো মুশকিল। নীলাদ্রি পাহাড়ে আসার পর আবার চেকপোস্টের অনুমতি নিয়ে আমরা ছুটলাম। চেক পোস্ট থেকে জানালো, রাত ৮ টার পরে এ রাস্তায় চলাচল নিষেধ। এর কারণ ব্যাখা করে বললেন, আপনারা যদি কোন বিপদে পড়েন, সেটি মানব সৃষ্ট না হােক, প্রাকৃতিক ; তখনো তো আপনাদের কিছু করার থাকবে না।

কথা ঠিকই। কিন্তু আমাদের ফিরতে হবে। তাই নিজেদের বিবেচনার উপর আমাদের ছেড়ে দিলেন তারা।

পাড়ায় পাড়ায় কিশোর-তরুণরা নিভৃতে সখাসখির আড্ডার কথা বলছিলেন- জজ চাকমা। বললেন, দাদা এই ছেলেরা তাদের সখীদের কাছে যাচ্ছে। প্রেমিকার কাছে। মন খুলে কথা বলবে। গল্প করবে। আড্ডা দেবে। এটা আমাদের সংস্কৃতিরও অংশ। আমি বললাম, নিভৃত মিলনে , যদি কেউ শারিরীক সম্পর্কে জড়ায়, তাহলে ?

জজ এবং নু দু'জনেই স্মিত হাসলেন, বললেন, তাতে খারাপ কিছু হবে না। এমনকি বাচ্চা পেটে আসলেও। বরং তখন দু'পরিবারে আনন্দ। সন্তান সম্ভাবা তরুণীকে ওই তরুণ বিয়ে করে। তার লয়ালিটি আরো বেশি প্রমাণিত হয়।

মাহিন্দ্রা এগিয়ে যাচ্ছে। কোন কোন পাড়ার আশপাশে দাওনা হাতেও কয়েক তরুণকে দেখা গেল। প্রথম কেউ দেখলে ভয়ে ভড়কে যাবেন। আক্রমণ করতে পারে, সেটা আশঙ্কা মনে নিশ্চিতভাবে উঁকি দিবে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই পাহাড়ের কাজ সেরে বাসায় ফিরছেন।

আবার 'পাঙকো' ছেলেপুলেও আছে। মোটর বাইক নিয়ে এ দিক ও দিক রাইড দিচ্ছে। দেখে মনে হতে পারে আপনার দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু এমনটা ঘটে না । বা ঘটেছে বলে শোনা যায় নি। এমনকি মাহিন্দ্রার ভেতরেও কেউ টর্চের আলো ফেলেনি। সমতলেও রাতের বেলা কোন কোন এলাকায় নির্জন রাস্তায় কোন বাহন গেলে দুষ্টু ছেলেরা টর্চের আলো ফেলে। এখানে সে রকম অভিজ্ঞতা নেই।

দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তি নিয়ে শহরে এসে নু মঙ দা'র বাসায় রাতের খাবার খেতে খেতে গল্প হচ্ছিল। বৌদি শুনলেন, আমাদের চেকপোস্টের গল্প। অস্পুটে তিনি সেই কথাটিই বললেন, যেটি আমি এর আগে বহুবার শুনেছি-- 'আমরা নিজভূমে পরবাসী'। এ ভাবনাটা আমাদের বদলে দিতে হবে। এখানে কোন পক্ষ বিপক্ষ নাই। একসাথে আমরা এগিয়ে যাবো। পাহাড়ি-বাঙালি মিলে আমরা বাংলাদেশী। আনন্দ -দুঃখ ভাগাভাগি করে এক নতুন বাংলাদেশ গড়বো, আমরা।
শুভ পর্যটন।