কিস্তি-৬ ::চাচা আপনার কে টিকেছে? ও হেসে বলল, ভাস্তে আমি নিজেই!

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি- আঁখ, মুড়ির আয়োজন। ব্যাপার খানা বোঝার চেষ্টার আগে খাওয়া শুরু করলাম। আমরা চারজন এক রুমে থাকছি। একে হোস্টেলের নীচতলার আমাদের তাকার রুমটা বড়ই। সেখানে তরিকের বাড়ি থেকে এ সব খাবার এসেছে। কৃষক পরিবারের ছেলে তরিকদের জমিতেই এ সব চাষবাস হয়। সেখান থেকে ঢাকা প্রবাসী ছেলের জন্য মা পরম যত্নে গুছিয়ে পিতার হাতে তুলে দেন। তিনি ঢাকায় ছেলেকে দেখতে আসার পথেই এ নিয়ে আসেন। যেহেতু আমরা সংখ্যায় চার। তাই এখানে সবার জন্যই আনা হয়। খাওয়া শেষে তরিকের আব্বার সাথে দেখা। বললেন, বাবা কেমন আছেন? কুশল বিনিময় হলো, গ্রামের সহজ সরল মানুষের মুখ। 

ফরিদপুরে পদ্মার পাড়ে ওদের বাড়ি। তরিকের বিয়ের সময় সেখানে যাওয়া হয়েছিল বছয় দুয়েক আগে। তার আগে যাওয়া হয়নি। তরিকের পর ওর পরিবারের অন্যরাও ঢাকায় প্রায় আসত। ওর বড় ভাই যাকে ওরা মিয়া ভাই বলে, ছোট ভাই আসতো। এ রকম সবার। কেবল আমার কেউ আসে না। বাবা ছাড়া। পরিবারের যেহেতু আমিই বড়, তাই এখানে কারো আসার সুযোগও নেই। আমাদের বকশিবাজারের জীবনে তরিককে খুবই মনে রাখতে হবে, কারণ ও খায় প্রচুর, পড়ে প্রচুর এবং ওর লম্বা দাড়ি। ওকে যে কেউ দেখেই মনে করবে বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। 
ওর একটা মজার ঘটনা বলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় টেকার পর লাফিয়ে উঠলো আনন্দে। পাশ থেকে একজন বললো, চাচা আপনার কে টিকেছে? ও হেসে বলল, ভাস্তে আমি নিজেই! প্রশ্ন কর্তার চক্ষু তো ছানাবড়া! বলে কি? 

তরিক ছাড়াও আমার রুমের বাসিন্দা ছিল জুয়েল। ইসলামী ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা এখন। পড়তো জার্নালিজমে। ফরিদ এখন সম্ভবত প্রবাসী। এখানে থাকার সুবাধে অনেকের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠলো। এর মধ্যে জগা বাবুতে পড়তো বরিশালের জলিল। যাকে আমি জইল্যা বলেই ডাকতাম। ও বিষয়টা দারুণ এনজয় করতো। আর মাসুম। গোপালগঞ্জের পোলা। এখন সরকারি কোনো একটা ব্যাংকে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তর জন্য ওপর পড়া আমার এখনো চোখে ভাসে। কী যে পড়তো, সারা দিন, সবই মুখস্থ, তবুও ওর হলোনা। আমাদের খুবই মন খারাপ হতো। কিন্তু বাস্তবতা না মেনে তো উপায় নেই। 

এরপর উঠলাম ঢাবি হলে... তা নিয়ে পরের কিস্তি। 

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৪৪

কিস্তি-৫ ::স্যার বহিষ্কার করে দিন না!!

ঢাকায় ডি এ ছাত্রবাস নামের মেসে আমরা যারা জড়ো হয়েছি, তাদের প্রায় সবারই উদ্দেশ্য এক- বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। সবার নিশ্চয় একই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হবে না, হয়ও নি। তাই এবার আমাদের বিচ্ছিন্ন হবার পালা। ১৯৯৯ সালে অনার্স ভর্তির জন্য আমার প্রথম পরীক্ষা দিলাম জগা বাবুর পাঠশালায় (সে সময়কার জগন্নাথ কলেজ)। 

পরীক্ষাটা আমার কাছে একটা খেলা। বরাবরই আমি তা মনে করি। এ খেলায় ভালো করার সুযোগও আছে, আবার খারাপ। 

জগা বাবুর পাঠশালার ভর্তি পরীক্ষা সেবারই এমসিকিউ পদ্ধতির হয়েছে বলে আমার ধারণা প্রশ্ন এত সোজা যে আধ ঘণ্টায় আমার পরীক্ষা শেষ। নিজেকে যথেষ্ট মেধাবী প্রমান করার জন্য বলছিনা, সত্যই তাই। আমার পরীক্ষা শেষে আশ পাশের বন্ধুদের হেল্প করতে শুরু কলাম। আমি যেহেতু জগা বাবুর পাঠশালায় ভর্তি হবো না, তাই আমার ডর নেই। পরীক্ষক দুবার সতর্ক করে গেলেন। তৃতীয়বার আসলে বলি স্যার বহিষ্কার করে দিন না, শিক্ষক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি এখানে ভর্তি হবানা, আমি, সোজা বললাম না। কারণ আমার বাবা বাড়ি থেকে ঢাকা আসার সময় বলেই দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হতে না পারলে আমাকে নোয়াখালী কলেজে পড়তে হবে। এর বাইরে আর কোথাও তার পড়ানোর ইচ্ছে নেই, সেটা রাকঢাক না করেই বলে দিয়েছেন।
জগন্নাথে পরীক্ষা দেয়ার একটাই কারণ আমার অপেক্ষাকৃত দূর্বল বন্ধুদের হেল্প করা।

আমার সহযোগিতা পেয়ে আমাদের আমিন দোস্ত ইকনমিক্সে চান্স পেলো্। খাদিজা ইংরেজিতে। আরো অনেকে পছন্দের সা্বজেক্ট পেলো।আমি চাইলে যে কোনো সাবজেক্টে ভর্তি হতে পারি। কিন্তু হবো কিনা বুছঝতে পারলাম না। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব আমার বাবার কাছে ওঠানোর সুযোগই পেলাম না। 

জগন্নাথের পর আমার বন্ধুরা সবাই ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের পরীক্ষা দিলাম। টিকলাম আমরা তিন জন-আলি আজম, কুদ্দুস আর আমি। মেসের বাইরের বন্ধুদের মধ্যে মুস্তাফিজ মামুন এবং আবদুল্লাহ আল ফারুক। 

আমার ঘনিষ্ঠতম বলে যাকে আপনাদের বলেছি সেই সামাদ টিকলো শাবিপ্রবিতে। হাবিব জগন্নাথে। আলিমুল হক পাড়ি জমালো মিশরে। আল আজহারে পড়ে এখন দেশে। এভাবেই আমাদের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। এবার নতুন জায়গা। মেস চেঞ্জ করে আমরা বকশি বাজারে এসে উঠলাম। সেখানে আবার নতুন বন্ধু-পরিসর। 

তা নিয়ে পরের কিস্তি। 

২৩ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৫০


কিস্তি-৪ ::নায়িকা ঋতুপর্ণার বাঁকানো শরীরের পরতে পরতে তার স্পর্শ। সেই রকম।

রিয়াল... রিয়াল... ডিসি...ডিসি.. টানা আওয়াজটা কানে এসে বাড়ি খাচ্ছে। আমি আর বন্ধু বেলাল (বর্তমানে অস্ট্রিয়া প্রবাসী) দুজন এগিয়ে গেলাম। সিনেমা হল সম্পর্কে বেলালের অভিজ্ঞতা ভালো। ছোটকাল থেকে সিনেমা দেখে। নোয়াখালি জেলার সোনাইমুড়ি বাজারে ওদের ভিডিও ক্যাসেট বিক্রি ও ভাড়ার দোকান ছিল। অনি ভিডিও নামে। সেখানে রাত করে ভিসিডিতে সিনেমা দেখা হতো। 
১৯৯৯ সালের শুরু দিকের কথা , বেলাল ঢাকা এসে পরের দিন আমার মেসে উঠলো। শুক্রবার দিন বললো চল সিনেমা দেখবো। রাঙা বউ। মোহাম্মদ হোসেনর সিনেমা। বাংলা সিনেমায় অশ্লীলতার সূচনা করা এ সিনেমার গল্পটা দারুন। হিন্দি কোনো একটা সিনেমা থেকে নকল করা। 
আমরা ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলে, দুটো ডিসি ক্লাশের টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম। 

হুমায়ূন ফরিদী কামকলাকে(!) একটা শিল্পে রূপ দিয়েছেন এই সিনেমায়। অনেক সাহসী ভূীমকা তার। নায়িকা ঋতুপর্ণার বাঁকানো শরীরের পরতে পরতে তার স্পর্শ। সেই রকম। দারুণ উপভোগ্য এক সন্ধ্যায় সিনেমাটি দেখা হয়ে গেলো। এটাই আমার দেখা প্রথম খোলামেলা সিনেমা। অনেক দিন মনে রাখার মত গল্প । সেখান থেকে ঢাকার সিনেমা হলে আমার সিনেমা দেখার শুরু। বেলাল ঢাকায় আসলেই আমরা সিনেমা দেখতে যেতাম ফার্মগেটে। আনন্দ অথবা ছন্দ হলে সিনেমা দেখা হতো। মাঝে মধ্যে পূর্ণিমাতে। তবে বেলালেল ফেভারেট ছিল আনন্দ সিনেমা। 
দ্বিতীয়বার ওর সাথে আমার দেখা সিনেমা 'কী'। ইংরেজি সিনেমা এটি। এডাল্ট রেটিংয়ের এ সিনেমার গল্পটাও ভালো ছিল। সিনেমাটিতে যত রকমের অবৈধ সম্পর্কই থাক না কেন, মানুষ যে একদিন মরে যাবে এবং তার সব কর্ম পেছনে রেখে তাকে পাড়ি দিতে হবে অন্য জগতে, সেটি তুলে ধরা হয়েছে। নায়কের শব যাত্রার দৃশ্যটা দেখে কিছুক্ষন আগে দেখা উত্তেজক দৃশ্যগুলো আমার চোখের সামনে থেকে সরে যেতে থাকে। বোধ করি অন্যদেরও। কোনো এডাল্ট সিনেমা দেখার পর এটা আমার প্রথম অনুভূতি। মনে হতে থাকে দুনিয়াটা মিথ্যে। এত মউজ মাস্তি ! তার পর সব শেষ। সব কিছু থেকে আমদের দূরে সরে যেতে হবে। দূরে সরে যাচ্ছি আমি ও আমরা। 

দূরে সরে যাওয়া নিয়ে পরের কিস্তি

২১ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮



কিস্তি-৩ ::১ টাকা খরচা করে রওয়ানা করলাম সায়েদাবাদ থেকে টিএসসির উদ্দেশে

১ টাকা খরচা করে রওয়ানা করলাম সায়েদাবাদ থেকে টিএসসির উদ্দেশে। বাসঅলা আমাকে নামিয়ে দিলো কদমফোয়ারার সামনে। প্রেসক্লাবের পাশে এই কদম ফোয়ারা। সেখানে নেমে টিএসসি পেলাম না। হাঁটা শুরু করলাম। কিছু দূর গিয়ে এক পুলিশের সহায়তায় চিনলাম টিএসসি। দেখি জটলা করে আড্ডা চলছে্ । এমন আড্ডা মাঠে ঘাটে আমরা দিতাম। এখানে একটু ভিন্নতা। 

অনেক দিনের শখ ছিল আবৃত্তি শিখবো। তাই একটা ফরম কিনে নিলাম পরের কোনো একদিন। স্বরশীলনে ভর্তি হলাম। তিন মাসের কোর্স। আমার করার কথা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং, সেটা বাদ দিয়ে আমি করছি আবৃত্তির কোর্স। আমার বন্ধুরা বললো, শালা গেছে। 

আমি দেখলাম যা পড়ায় কোচিংয়ে, তার বেশির ভাগই আমার পড়া আছে। তাই এটা নিয়ে সময় নষ্ট করার কোনো মানে খুঁজে পেলাম না। তবে মাঝে মধ্যে কোচিংয়ে যেতাম। সেখানে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল, মুহিত চাকমা।রাঙ্গামাটির ছেলে। নেশা টেশা করে। বাড়ি থেকেই আসে দোচুয়ানি। ভালোই তো। আমি অবশ্য তখনো সেটা চেখে দেখিনি। তবে ওর আমার আমার সাথে একটা অদ্ভূত মিল- দুজনেই কোক পছন্দ করি।গরম কাল ছিল খালি সারাদিন ঠাণ্ডা কোকে গলা ভেজানো। 

এভাবেই তো ভালোই চলছে। এর মধ্যে সিনেমা দেখা শুরু করলাম। গ্রামে অনেক কঠোর শাসনে ছিলাম। এলাকার লোক সিনেমা হলে যাই শুনলে আহত হতো। আমি তাই কাউকে আহত করতে চাইনি। সিনেমা নিয়ে পরের কিস্তি 


২০ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৩

কিস্তি -২ :জানলাম নোয়াখাইল্যা আর বরিশাইল্যারা চরম খারাপ

উচ্চ মাধ্যমিকের বোর্ড পরীক্ষায় মেধা তালিকায় আমার নাম ছিল, তাই 
মেসজুড়ে সবাই একটু ভিন্ন চোখে দেখতো।সদ্য মফস্বল থেকে আসা একটা ছেলে আমি, সেখানেও মানুষের খাতির পেয়ে বেড়ে উঠেছি। তাই এটা আমার কাছে বাড়তি আকর্ষন ছিল না। 
যেটা আমাকে আকর্ষন করেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছেলেরা এখানে আছে। আমি নোয়াখালী থেকে। কেউ বরিশাল। কেউ চট্টগ্রাম। কারো বাড়ি টাঙ্গাইল।এখানে এসে জানলাম নোয়াখাইল্যা আর বরিশাইল্যারা চরম খারাপ। আমার বন্ধুর তালিকায় দু এলাকার লোকই ছিল। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আমার ঢাকায় আসা।ভর্থি হলাম একটা কোচিংয়ে। বন্ধুরা সবাই মিলে পড়াশোনা চলছে। তবে আমার পড়ার চেয়ে ঢাকা দেখাতে মন বেশি।

মাদারীপুরের বন্ধু আলী আজম, টাঙ্গাইলের হাবিব, চট্টগ্রামের পোয়া আলিমুল হক আর আমার ঘনিষ্ঠতম সামাদ। যাকে সবাই শহিদ নামে চিনে।আমরা সবাই এক সাথে আড্ডা দিতাম। মেসের ছাদে আড্ডা জমত। সে আড্ডায় অনেকে হাজির হতেন, যারা বয়সে ছোট বা বড়। 
এভাবেই শুরু। তবে আমি মেসের বাইরে বেশি সময় থাকতাম। বেশির ভাগ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। এটা নিয়ে পরের কিস্তি 


১৯ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:২৩

কিস্তি-১ : ১৯৯৮ সালের এক বিকালে ঢাকায়

১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাসে এক বিকাল। ফকিরাপুল এসে বাস থেকে নামলাম। রিকশা চড়ে সোজা চলে গেলাম হোটেল ইসলামে। আপাতত এক রাত এখানে কাটানোর চিন্তা। সকালে ঘুম থেকে উঠে বন্ধু সামাদকে ফোন ধিলাম। টিএন্ডটি ফোনে। ও বললো, চলে আয় আমার মেসে। পরে ও এসে নিয়ে গেল। যাত্রাবাড়ির শহীদ ফারুক রোড়ের উল্টো দিকের একটা নয়া বাড়িতে আমার থাকার ব্যবস্থা হলো। মেসের খাবার আর বন্ধুর সাথে ১৫ দিন থাকার পর নিজের সিট হলো। পুরো বাড়িই মেস। মালিক খুব মজা পান। আমরা মেসে খুব আড্ডা দিতাম। অনেক বন্ধু হয়ে গেলো। তাদের নিয়ে পরের কিস্তি।




১৯ মার্চ ২০১৩ 

রপ্তানি বাজারে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে মৎস্য বর্জ্য


বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে মৎস্য বর্জ্য। সাহসী বিনিয়োগ, দক্ষ জনবল আর প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি নিশ্চিত করা গেলে বছরে আয় হতে পারে ৮ হাজার কোটি টাকা।

মৎস্য বর্জ্য ব্যবহারে নতুন সুযোগ বের করার জন্য বাংলাদেশ  চিংড়ি ও মৎস্য  ফাউন্ডেশন (বিএসএফএফ) প্রশিক্ষক তৈরির কাজ শুরু করেছে। জাকিসঙ্ঘ বিশ্ববিদ্যালয় এতে সহায়তা করছে।

বিশ্বে সবচে সফলভাবে মৎস্য বর্জ্য ব্যবহারকরা দেশ  আইসল্যান্ড ।   দেশটি ২০০৪ সালে মৎস্য বর্জ্য নিয়ে কাজ শুরু করে এখন সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। প্রডাক্টেও  এনেছে বৈচিত্র ।

মূল ইংরেজি খবরটি পড়তে ক্লিক করুণ---http://www.theindependentbd.com/post/43927

আইসল্যান্ড ফিস লিভার থেকে ওষুধ গ্রেড, ফুড গ্রেড এবং কসমেটিকস গ্রেডের  কাঁচামাল তৈরি করছে। মাছের চামড়া দিয়ে তারা বেল্ট, মানি ব্যাগের মত সৌখিন  পণ্যও তৈরি করছে। আফ্রিকায় মাছের মাথা রপ্তানি করছে। যেটি আফ্রিকা অঞ্চলের স্থানীয় সুপের উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তবে আমরা এখনই তা করতে পারবো না। তাই আমাদের  নজর দিতে হবে শুরুর দিকে। যেখানে ফিশ মিল বা মাছের খাবার তৈরি দিয়েই শুরু করতে পারি।

তবে বাংলাদেশ আপাতত বাই প্রডাক্ট হিসাবে ফিস মিল তৈরি করতে চায়। পুষ্টিগুণ ঠিক রেখে এটি করতে পারলে দেশটি লাভবান হবে বলে মনে করছেন বিএসএফএফ'র চেয়ারম্যান  সৈয়দ মাহমুদুল হক।

 তার মতে, বাংলাদেশ এখন যে পরিমাণ মৎস্য বর্জ্য তৈরি হচ্ছে , তার এক তৃতীয়াংশও যদি সঠিক ভাবে  সংরক্ষণ করে বাই প্রডাক্ট হিসাবে ব্যবহার করা যায় তাহলেও কমপক্ষে ৮ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি আয় সম্ভব। বিদেশে একটন  মৎস্য বর্জ্য রপ্তানি হচ্ছে কমপক্ষে ১ হাজার ডলারে। সে হিসাবে  এক মিলিয়ন বা দশলক্ষ মেট্রিক মৎস্য বর্জ্য রপ্তানি করা গেলে  ৮ হাজার  কোটি টাকা আয় সম্ভব। (১ ডলার সমান ৮০ টাকা হিসাবে)।  এ জন্য পরিকল্পনাটাই জরুরী।

সৈয়দ মাহমুদুল হক দি ইনডিপেনডেন্টকে  বলছেন, আমরা নতুন সুযোগের তৈরি করতে চাই।   উদ্যোক্তা, সরকার এবং ব্যবসায়ীদের সাথে বৈশ্বিক  সংযোগ তৈরি  করতে চাই।

সরকারের মৎস্য অধিপ্তরের হিসাবে বর্তমানে দেশে ৩ দশমিক ৭  মিলিয়ন  মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। বিএসএফএফ এর এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে  উৎপাদিত মাছের ৭১ শতাংশ দেশে ও দেশের বাইরে মানুষের খাবারে ব্যবহৃত হয়ে । ২৯ শতাংশ মৎস্য বর্জ্য হয়ে । যেটাকে বাই প্রডাক্ট হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে একবারই মৎস্য বর্জ্য রপ্তানি করেছে। সেটি ২০১৪ সালে। এর মূল্যমান ছিল মাত্র ৬৬ হাজার ইউরো। এ খাতকে ব্যাপক সম্ভাবনায় খাত হিসাবে উল্লেখ করে জাতিসঙ্ঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের  মৎস বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর প্রিন্সিপাল  ইনভিস্টিগেটর   সৈয়দ ইশতিয়াক  দি ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, মাছের চামড়া, মাথা মাথার ফ্রেম, কাঁটা, লিভার, আঁশ প্রভৃতি বাই প্রডাক্ট করা সম্ভব।

তার মতে, বাংলাদেশে এখনো এ জন্য  কোনো  প্রসেসিং  সুবিধা, প্রযুক্তি নেই, যার মাধ্যমে ফিশ বল, ফিশ কাটলেট মত পণ্য তৈরি করা সম্ভব। তাছাড়া  মাছের খাদ্য, মাছের তেল, পশু খাদ্য  তৈরি প্রযুক্তিও এখন পর্যন্ত আমরা এডপ্ট করতে পারিনি।
   
জাতিসঙ্ঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের  মৎস্য প্রশিক্ষণ  কর্মসূচীর গবেষণাপত্রে বলা হচ্ছে  দেশে  বর্তমানে ৭৮ টি  মৎস প্রক্রিয়াজাত প্লান্ট  পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৪১ টি প্লান্ট রয়েছে খুলনায়। ৩২ টি চট্টগ্রাম অঞ্চলে। খুলনার  ফ্যাক্টরিতে  দৈনিক গড়ে দুই হাজার কেজি মাছ প্রক্রিয়াজাত করা হয়ে থাকে।  এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই  মাছের টুকরো, ব্লক বা স্টিক। ২৫ শতাংশ ফ্রোজেন।    
চট্টগ্রাম অঞ্চলের কারখানায়  দৈনিক ৩৫৬৬ কেজি মাছ প্রক্রিয়াজাত করা হয়। যার ৩০ শতাংশ  মাছের টুকরো, বা স্ট্রিক। ৭০ শতাংশ  আস্ত মাছ। এর মধ্যে থেকে খুলনায় ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ  এবং চট্টগ্রামে ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ  বাই প্রডাক্ট বা ব্যবহারযোগ্য মৎস্য বর্জ্য তৈরি হয়।  সে হিসাবে খুণলায় দিনে ৪১ মেট্রিক টন এবং চট্টগ্রামে ৩২ মেট্রিক টন মৎস্য বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে।

 সৈয়দ মাহমুদুল হক দি ইনডিপেনডেন্টকে বলছেন, তারা ক্ষেত্রটি উন্মোচন করতে চাইছেন। সে জন্য তারা চট্টগ্রাম মেরিন ফিশারিজ একাডেমিতে  একটা প্রশিক্ষণ কর্মসূচীও শূরু করেছেন। যেখানে ২৪ জন অংশ নিচ্ছেন। যারা পরে প্রশিক্ষণ দিয়ে এখাতের জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তুলবেন।

 বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাতটির জন্য নতুন করে  মানব সম্পদ তৈরি জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টের কারিকুলামেও ফিস ওয়াস্টের বিষয়টি অন্তভূক্ত করার জন্য চেষ্টা করবেন।

 ২৪ জন প্রশিক্ষক তৈরির জন্য যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন  তএদর মধ্যে চারজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও রয়েছেন।  এ সব প্রশিক্ষকের মাধ্যমে পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ও সিলেটে আরো দুটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর আয়োজন করা হবে।

সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, আমাদের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। সে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে।

বড় চ্যালেঞ্জ দক্ষ মানবসম্পদ, টেকনলজি এবং ইনভেস্টমেন্ট। তবে প্রশিক্ষতি মানব সম্পদ গড়ে তোলার পাশা্পাশি টেকনলজি করা গেলে খাতটি দাঁড়াবে বলেই মনে করেন মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিককৈর্মকর্তা নিত্যরঞ্জন বিশ্বাস  দি ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং ইনডিয়া এ খাতে ভালো ব্যবসা করছে। আমাদের সম্ভাবনা আছে। এটাকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ শুরু করেছি।

সৈয়দ মাহমুদুল হক বলছেন, আমাদের এ খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ফিস মার্কেটের একটা স্ট্রাকটচার করতে হবে। যাতে করে সেখানে  মৎস্য বর্জ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।

তার মতে, নগরায়নের কারণে এখন কেউ আর মাছ কাটাকাটির ঝামেলায় যেতে চান না। অন্যদিকে বিদেশে রপ্তারি ক্ষেত্রেও আমরা পুরো মাছ রপ্তানি করছি। এতে করে  আমরা ভালো দাম পাচ্ছি না। আমরা যদি এটাকে ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাত  করে রপ্তানি বা সেল করতে পারি  তাহলে এখাতে বেশ ভালো আয় করা সম্ভব।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এক কেজি মাছ  যদি কেউ বিক্রি করেন ১০০ টাকা। তার যদি মাছটি কেটে দেয়ার জন্য ১০ টাকা নেন। আর মাছ থেকে পাওয়া মৎস্য বর্জ্য বিক্রি করতে পারেন ২০ টাকা। তাহলে  বিক্রেতার ৩০ শতাংশ লাভ বেশি হচ্ছে। তাকে সেটি বোঝাতে হবে।  একই সাথে কিচেন মার্কেট, ফিস প্রসেসিং জোন এবং ফিশারিঘাটগুলোতে স্টোরেজ সিস্টেম ডেভেলপ করলে কাঁচামাল সঙ্কট হবে না।

তবে এখানে শিল্প গড়তে হলে মেটেরিয়ালের কন্টিনজেন্সি রাখতে হবে।  এতে এ খাতে সঙ্কট হওয়ার কথা নয় বলে মনে করেন  ইশতিয়াক। তার গবেষণার ফলাফল অনুসারে বাংলাদেশে মৎস্য বর্জ্য কাঁচামালের মধ্যে  মাছেল চামড়া, আঁশ, লিভার, হাড় বা কাঁটা  রয়েছে ৫৭ শতাংশ। মাথা ২৮ শতাংশ এবং অন্য উপাদান ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে চিংড়িতে মাথার অংশ ৯০ শতাংশ এবং খোলস ও পা ১০ শতাংশ। এ সব থেকে বাই প্রডাক্ট  তৈরির অন্যতম উপাদান।

তবে এর বৃদ্ধি করা সম্ভব এবং সঠিক টেকনলজি ইউজ করা সম্ভব হলে  ফিশ মিলের খরচও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন সৈয়দ মাহমুদুল হক।

অবৈধ ভিওআইপি মামলার আসামী এখন বাংলালিংকের সিইও!


টিআইবি'র এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'এরিক অস যদি অবৈধ ভিওআইপির মত একটা মামলায় অভিযুক্ত হন এবং জরিমানা দিয়ে তার কর্মস্থল তাকে মুক্ত করে থাকে, তার মানে অপরাধ প্রমাণিত, সে ক্ষেত্রে সেই একই সেক্টরে (টেলিকম) তার মত একজন মানুষের নিয়োগ নৈতিকভাবে সমর্থন করা যায় না। একটা রেসপন্সিবল কর্পোরেট হাউসের কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না।
তিনি বলেন, বিজনেস মানে শুধু প্রফিট মেকিং নয়, এখানে এথিকসেরও বিষয় আছে। আমি মনে করি এ নিয়োগ অনৈতিক। '



অবৈধ ভিওআইপি'র অভিযোগে দুইবার জরিমানা দিয়ে মুক্তি পাওয়া  নরওয়েজিয়ান নাগরিক এরিক অস এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবইলফোন অপারেটর বাংলালিংকের সিইও।

২০০৭ এবং ২০০৮ সালে দুই দফা অবৈধ ভিওআইপি'র অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এরিকের সে সময়কার কর্মস্থল গ্রামীণফোন জরিমান গুনে তাদের দায়মুক্তি নিশ্চিত করে।

২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারী এরিকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

রাজধানীর গুলশান থানায় দায়ের করা মামলা এখন চলছে না? এর কারণ ব্যাখ্যা করে মামলার বাদী জিয়ান শাহ কবির  বলেন, এডমেনেস্ট্রেটিভ ফাইন দিয়ে অপারেটর দায়মুক্তি পেয়েছে। তাই মামলা চলছে না।

২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে গ্রামীণফোনের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসাবে নিয়োগ পেয়ে বাংলাদেশে আসার পর এরিকের হাতেই বদলে যেতে থাকে অপারেটরটি। তার হাতেই অপারেটরটি দেশীয় লোগো বদলে টেলিনরের লোগো লাগানো হয়।  গত বছরের ১ ডিসেম্বর  এরিক বাংলালিংকের সিইও হিসাবে যোগ দেন।

বাংলালিংকের কর্পোরেট কমিউনিকেশন্সের  প্রধান আসিফ আহমেদ দি ইনডিপেনডেন্টকে  বলেন, 'ভিওআইপি ২০০৬-০৭ সালে একটি ইন্ড্রাস্ট্রি ইসু ছিল।  এটা কোনো ব্যঅক্তি ভিত্তিক ইসু নয়। বাংলালিংক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবে না, যার সাথে অন্য অপারেটরও জড়িত।'

তবে বাংলাদেশের কোনো অপারেটরের সিইও হিসাবে থাকতে তার আইনি কোনো বাধা নেই বলে  জনিয়েছেন,  সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিব আলম। তার মতে,  নৈতিকতা যদি বলেন, সেটি যার চর্চা করার কথা তিনি ভালো বলতে পারবেন। তবে আইনে এতে কোনো বাধা নেই।

টিআইবি'র এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর ইফতেখারুজ্জামান ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, এরিক অস যদি অবৈধ ভিওআইপির মত একটা মামলায় অভিযুক্ত হন এবং জরিমানা দিয়ে তার কর্মস্থল তাকে মুক্ত করে থাকে, তার মানে অপরাধ প্রমাণিত, সে ক্ষেত্রে সেই একই সেক্টরে (টেলিকম) তার মত একজন মানুষের নিয়োগ নৈতিকভাবে সমর্থন করা যায় না। একটা রেসপন্সিবল কর্পোরেট হাউসের কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না।

তিনি বলেন, বিজনেস মানে শুধু প্রফিট মেকিং নয়, এখানে এথিকসেরও বিষয় আছে। আমি মনে করি এ নিয়োগ অনৈতিক। '

২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের সময়  বিটিআরসি অবৈধ ভিওআইপি বিরোধি অভিযোন শুরু করলে গ্রামীণফোন দুইবার, বাংলালিংক, একটেল ও সিটিসেল একবার করে  সরকারকে প্রশাসনিক জরিমানা দিয়ে অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিটিআরসির সে সময়কার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মনজুরুল আলম কললিস্ট পরীক্ষার উদ্যোগ নেন ২০০৭-০৮ সালে। সে সময় বিটিআরসি মোবাইলফোন অপারেটরদের অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পায়।

২০০৭ সালের শেষ দিকে অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গে জড়িত থাকায় গ্রামীণফোনকে প্রথম দফায় ১৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আর ২০০৮ সালের শুরুর দিকে গ্রামীণফোনে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভিওআইপির যন্ত্রপাতি উদ্ধারের পর  আবার ২৫০ কোটি টাকা জরিমানা করে বিটিআরসি।

বিটিআরসির তত্কালীন চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম সে সময়  জানিয়েছিলেন, ‘ভিওআইপির  অবৈধ ব্যবসায় গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার দলের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা রয়েছে। এটা আমাদের অনুসন্ধানে বের হয়েছে।’

সে সময় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গ্রামীণফোনও স্বীকার করে, তৃতীয়পক্ষকে অবৈধভাবে ভিওআইপি প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছিল তারা। এজন্য জরিমানার ২৫০ কোটি টাকা দিতেও সম্মত  প্রতিষ্ঠানটি।

সে সময়কার গুলশান থানার  সাব ইন্সপেক্টর  মানজুর আলী খা্ন জানিযেছেন অবৈধ ভিওআইপর অভিযোগে দায়ের করা মামলার নম্বর ৪৬। এটি দায়ের করা হয় ১৬ জানুয়ারী।

মামলার আর্জিতে বলা হয়, ২০০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর সংস্থার একটি দল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে গ্রামীণফোনের কার্যালয়ে অভিযান চালায়। এ সময় দেখা যায়, চারটি 'ই ওয়ান' সংযোগের মাধ্যমে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক অ্যাকসেস টেল এর নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। অভিযানকারী দলটি গ্রামীণফোনের কল রেকর্ড ও ই মেইল 'অনুসন্ধান' করেন। এরপর ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা আট দিন গ্রামীণফোনের কার্যালয়ে অনুসন্ধান চালায় দলটি।

অভিযানে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে গ্রামীণফোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এ কার্যক্রমে গ্রামীণফোনের বৈদেশিক সহযোগী হিসেবে মালয়েশিয়ার ডিজি টেলিকমের সংশ্লিষ্টতারও প্রমাণ মিলেছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, গ্রামীণফোনের বেশিরভাগ শেয়ারের মালিক নরওয়ের প্রতিষ্ঠান 'টেলিনর' বাংলাদেশে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় উৎসাহ দিয়েছে বলে অনুমেয়। গ্রামীণফোনের 'মেইল সার্ভার' এ সন্দেহভাজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মেইল খতিয়ে দেখে কল টার্মিনেশনে সংস্থার সম্পৃক্ততাসহ কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিজস্ব সংশ্লিষ্টতারও আলামত পাওয়া গেছে।

গ্রামীণফোনের ৬২ ভাগ শেয়ারের মালিক টেলিনর মালয়েশিয়াভিত্তিক ডিজি টেলিকমেরও অংশীদার। অভিযানের সময় গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছে বিটিআরসি।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গ্রামীণফোনের হেড অফ রেভিনিউ অ্যাসুরেন্স এসপেন উইগ ০১৭১৩১৩০৪০০ নম্বরের কল রেকর্ড র‌্যাব সদস্যদের কাছে না দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশ দেন। পরে জানা যায় অ্যাকসেস টেল এর কল টার্মিনেশনের কাজে নম্বরটি ব্যবহৃত হতো।

মামলায় গ্রামীণফোন ছাড়াও এর সাবেক প্রধান নির্বাহী এরিক অস ও ওলা রি, সাবেক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর থর রান্ডহগ, সাবেক চিফ টেকনিক্যাল অফিসার যোগেশ সঞ্জিব মালিক, সাবেক সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ডিরেক্টর মেহবুব চৌধুরী, রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর খালিদ হাসান, চিফ টেকনিক্যাল অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ডিরেক্টর কাফিল এইচ এস মুঈদ, চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মো. আরিফ আল ইসলাম ও হেড অফ রেভিনিউ অ্যাসুরেন্স এসপেন উইগ ওয়ারেনডরফকে আসামি করা হয়েছিল।

অভিযুক্ত  কে কোথায়? 

অভিযুক্তদের মধ্যে এরিক অসকে চাকুরী দিয়ে দেশে এনেছে ভিম্পেলকম।   বাকিদের গ্রামীণফোন থেকে সরিয়ে টেলিনরে নেওয়া হয় এবং তাদের পদোন্নতি  দেওয়া হয়।

অভিযুক্ত সাবেক সিইও  Ola Ree বর্তমানে Head of Group Supply Chain Sustainability, Telenor. জুন ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সালে নভেম্বর পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে গ্রামীনফোনের এমডি ছিলেন। Yogesh Malik  এখন  VimpelCom এর  Chief Technology Officer এবং  Group Executive Board ও Group Management Board এর সদস্য।

Espen Wiig Warendorph এখন  BellTel  এর Advisor (Commercial) । গ্রামীণফোনে Technical Controller হিসাবে যোগ দেন ২০০৪ সালের এপ্রিল মানে। মাত্র এক বছরের মধ্যে ২০০৫ সালের মে মাসে তাতে পদোন্নতি দিয়ে করা হয় Head of Revenue Assurance & Fraud Management.

Kafil HS Muyeed বর্তমানে Managing Director, Cel Telecom Limited, গ্রামীণফোন থাকান অবস্থায় মামলার অভিযুক্ত হলে তাকে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সরিয়ে দেয়া হয়। ওই বছরের এপ্রিল মাসে  তাকে Consultant,Telenor হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।
Md. Arif Al Islam বর্তমানে  সামিট কমিউনিকেশন্সর  সিইও এভং ভ্যবসায়িক অংশীদার।  Mehboob Chowdhury সিটিসেলের সিইও হিসাবে বাংলাদেশেই কর্মরত রয়েছেন। 

রোহিঙ্গা সঙ্কট ও 'অহিংস' হিংস্র সু চি

ছোট্ট একটা খবর, বড় ধরণের ধাক্কা দিলো, সকালে।  প্রথম আলো খবরটি প্রকাশ করেছে, সংবাদ সংক্ষেপে। সু চি'র মুখপাত্র বলছেন, রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা বলা যাবে না।

খবরের তথ্য, সু চির মুখপাত্র উ কিও জে ইয়া বলেন, 'রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না।তাই সরকার তাদের ওই নামে ডাকবে না। জে ইয়ার ভাষায়, ‘আমরা তাদের রোহিঙ্গা বলব না। কারণ, তারা মিয়ানমারের স্বীকৃত ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নয়’। (সূত্র প্রথম আলো, ০৯ মে ২০১৬)

 সু চি কে যারা অহিংস নেত্রী হিসাবে জানেন, যারা তাকে গণতন্ত্রের মানস কন্যা বলে অভিহিত করেন, শান্তির দূত হিসাবে ভাবনায় রেখে আনন্দ উপভোগ করেন, তারা নিশ্চিতভাবেই  একটা ধাক্কা খাবেন। বা খেয়েছেন।

দেশহীন মানুষ বিশ্বজুড়েই আছে, রোহিঙ্গারা জাতিসঙ্ঘের হিসাবে সবচে প্রান্তিক দেশহীন মানুষ। কিন্তু এদের এখন আর মানুষ হিসাবে দেখতে অভ্যস্ত নই আমরা।  কারণ রোহিঙ্গাদের করুণ আর্তির ছবি  এ দেশে, বিশ্বে ছাপা হয়েছে, যেখানে দুর্দিনেও তাদের নৌকা ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ কাজটি এমন দেশ করেছে, যে দেশটির লক্ষ লক্ষ লোক মহান স্বাধীনতার সময় পাশের দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল, এবং সেখানে বছরখানেক থেকেছিল। এ একথা এ জন্য বল্লাম যে, এটা গণমা্নুষের আকাঙ্খার সঙ্গে যায় না।  (ঘটনা অক্টোবর, ২০১২ )

রোহিঙ্গাদের  প্রান্তিক থেকে প্রান্তিকতর করার কাজটি করা করছে?  কারা এটা বিষফোঁড়ার মত টিকিয়ে রেখেছে বছরের পর বছর, সে সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে সমাধানটা খুবই জরুরী হলেও তা আমরা করতে পারিনি। যার জন্য আমাদের মত গরিব দেশের উপর বর্মার নাগরিকদের চাপ বাড়ছে। বর্মার লোকেরা আমাদের সাথে বসলে এ সমাধানের আশ্বাস দেয় এবং বিমানে চড়ার পর সে কথা ভুলে যায় ।

রোহিঙ্গা বলতে চোখের সামনে অপরাধ উন্মাদ একদল মানুষের ছবি দেশি গণমাধ্যম তুলে দিয়েছে। অন্যদিকে বিদেশি মিডিয়া বলছে, তারা সবচে নিপীড়িত। বাংলাদেশের গণমাধ্যম রোহিঙ্গা নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। এখানকার গণমাধ্যমের বড় অংশ রোহিঙ্গাদের  জমাত ইসলামের দিকে ঠেলে দিয়ে বিচার করে। এতে করে  নিপীড়িত  রোহিঙ্গাদের আসল চিত্র মিডিয়ায় আসে না।

বাংলায় কথা বলা এ সব মানুষ দশকের পর দশক ধরে এ  বর্মা থেকে তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। বৈধ অধৈ দু'পন্থায় এ দেশে বহু রোহিঙ্গা আছেন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ধারণা করা হচ্ছিল, সু চি দেশরি নেতৃত্বে আসলে সমস্যার সমাধান হবে, তবে এটি এ দুঃস্বপ্ন।  সু চি  কেবল রোহিঙ্গা বিদ্বেষিই নন, তিনি মুসলিম বিদ্বেষিও। সম্প্রতি তার একটি বক্তব্য বেশ আলোড়ন তুলেছিল, যে দিনি কোনো মুসলিম সাংবাদিককে তার প্রথম সাক্ষাৎকার দিতে চান না।

অনেকেই বলতে চাইবেন বাংলাদেশের পাহাড়ি মানুষেরও দেশ নেই। সেটা নিয়ে আমরা ত কথা বলছি না। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে দ্বিমত করি।  পাহাড়িরা বাংলাদেশের নাগরিক এবং তাদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সরকার কাজ করছে। এমনটি সংবিধান অনুমোদন করে না, তার পররেও আওয়ামী লীগ সরকার ঝুঁকি নিয়ে তাদের সাথে চুক্তি করে, তা বাস্তবায়ন করে চলেছে।

বান্দরবান জেলার অন্তত ৪৬ হাজার মুরং বা ম্রো সম্প্রদারে লোক আছেন, যারা বর্মার রাখাইন রাজ্য থেকে তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে  এসেছেন এবং থাকছেন।  নাগরিক হিসাবেও তাদের আমরা কেবল স্বীকার করিনা, আমরা তাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি।

কিন্তু  রোহিঙ্গাদের  স্বেদেশ থেকে তাড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশি বলে, এবং এ কাজটি করছে বর্মা। যাদের আমরা সামরিক শক্তির দিক থেকে দুর্বল মনে করতাম। এখন অবশ্য করার কারণ নেই। কারণ শক্তি সমরে তারা অনেক এগিয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সরকারি হিসাবে বর্তমানে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন। এর বাইরে আরো হাজার হজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে।

বিবিসির বিশ্লেষক ডেভিড লয়েন বলছেন, রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমণ একটি জাতিগত নির্মূল চেষ্টা। তিনি এও বলছেন, সেখানকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষায় দেশটির সরকারের  চেষ্টা যথেষ্ট নয়।

স্থানীয় সংবাদদাতাদের উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম যে সব খবর প্রচার করছে তাতে দেখা যাচ্ছে, রাখাইন প্রদেশের যে আট লাখ মুসলিম বাস করেন, তাদের বিরুদ্ধে কেবল সরকার নয় স্থানীয় বৌদ্ধধর্মীয় গুরুরাও দাঙ্গা উসকে দিচ্ছে।
বর্মা অঞ্চলের জাতিগত সঙ্ঘাত নিয়ে কাজ করেন ল্যারি চাগান। তাকে উদ্ধৃত করে বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছিল, বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মনে করে মালয়েশিয়া এক সময় বৌদ্ধদের দেশ ছিল। কিন্তু সেখানে ক্রমেই মুসলমানরা বেড়ে গিয়ে সেটি এখন ইসলামিক দেশে পরিণত হয়েছে। বার্মায় মুসলিমদের অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের মেনে নেয়া হলে এবং তাদের বংশ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দেশটি একই রকম হয়ে যেতে পারে।

ল্যারি বলছেন, বার্মায় রোহিঙ্গারা অত্যন্ত কষ্টকর জীবনযাপন করছেন, তাদের নির্ধারিত চৌহদ্দির বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এর কারণ তারা মসুলিম ও তাদের ভাষা বাংলা। এমনকি তারা রেঙ্গুনেও যেতে পারেন না। তাদের এলাকায় কোনো স্কুল পর্যন্ত নেই, এতে করে রোহিঙ্গা শিশুরা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে বার্মা স্বাধীন হওয়ার পর আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গারা ছিল না বলে দাবি করে সেখানকরা বৌদ্ধরা। অন্য দিকে রোহিঙ্গারা নিজেদের বর্তমানের রাখাইন রাজ্য যা আগে আরাকান হিসেবে পরিচিত ছিল তার ভূমিপুত্র বলে দাবি করেন। এর কোনো সমাধান এখন পর্যন্ত না হওয়ায় এ সঙ্কট টিকে আছে।

ল্যারি বলছেন, সেখানে মুসলিমরা এতটাই নিপীড়নের শিকার যে তারা বিয়ে পর্যন্ত করতে পারেন না। তাদের বিয়ে করতে হলে বাংলাদেশে এসে বিয়ে করে যেতে হয়। আবার বিয়ে করে বার্মায় ঢোকার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের অভিভাসন আইনে আটক করে। এ রকম এক সঙ্কটময় কাল অতিক্রম করছে বার্মার রোহিঙ্গারা।

ধর্ম, চাপাতি,গুম এবং শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি!

কৈফিয়ত :: ব্যক্তিগতভাবে আমি ধর্মাশ্রয়ী। ধর্মকে  আমি আমার জীবনের মূল ভাবনার মধ্যে রাখি, যদিও এর প্রতিপালন আমার পক্ষে সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না কিম্বা কখনো কখনো ধর্ম অনুমোদন করে না, এমন কাজও আমি করি। তারপরেও আমি ধর্মকে আশ্রয় করে বেড়ে উঠেছি। এটাই আমার জীবনের একমাত্র ভরসা। 

 হাল আমলে চাপাতি, নাস্তিক, মুক্তমনা এ সব টাইপের শব্দের উদ্ভব এবং বিকাশ ধরে এ দেশে জঙ্গি, জঙ্গি প্রশ্রয় নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে।

আমাদের দেশে ইসলাম ধর্ম নিয়ে আলোচনা করলে  শিক্ষিত ও প্রগতিশীল মানুষের প্রায় সবাই এটাকে জমাত ইসলামের সাথে মিলিয়ে ফেলেন। সে জন্যই হয়ত ইসলাম ধর্মের কোনো অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র ধর্মানুসরী 'সুশীল'রা স্বস্তি পান না।

 ধর্মকে নানা রকমের আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি এবং করিও! রাষ্ট্র প্রধান 'মদিনা সনদ' অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে জড়িত অন্তত দশজন লোককে বার করা যাবে না, যারা মদিনা সনদের মর্ম  উপলব্ধি করতে পারেন!

 এটা তাদের দোষ নয়! এ ত্রুটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার।

আমরা ছোট বেলায় পড়তাম.. 'সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি/ সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।' এখন পড়ি---'  জনি জনি ইয়েস পাপা/ ইটিং শুগার / নো পাপ/ টেলিং লাই/ নো পাপা/ ওপেন ইওর মাউথ  হাহ্হা হা! '

 সুতরাং এ যে বাঙালিয়ানার মধ্যেও একটা তফাৎ তৈরি হয়েছে, সেটি আমাদের সমাজের প্রথাগত  সংস্কৃতির ভিতও ভেঙ্গে দিয়েছে। তাহলে আমাদের করণীয় কি? সে সম্পর্কে আমরা কেউ একমত নয়! কারণ আমরা সবাই নিজেকে সব জান্তা মনে করে বসে আছি! একেক জন একেক রকমের থিওরি দিচ্ছি।

 অনেককে দেয়া যায় এখন ধর্মের জন্য মরাকান্না করছেন, ধর্ম উদ্ধারে খুন করার কিম্বা খুনিদের সমর্থন করছেন? কিন্তু এরা ইসলাম ধর্মের মূল মর্মবাণী থেকে দূরে আছেন। সেই মর্মবানী নজরুল বা রবীন্দ্রনাথের মত স্বশিক্ষিত লোক সবাই নন যে, তারা নিজ দায়িত্বে জেনে নিবেন। জেনে নিবেন না বলেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা! এ ধরণের আত্মঘাতি মগজের সুষম ব্যবহারের জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধর্মানুরাগী ও নৈতিকতার সাথে সাজানো জরুরী ।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা চারধারায় বিভক্ত। এ বিভক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার সিলেবাস প্রণয়ণ করেছেন কারা? কারা এটি মডারেশন করছেন, সে দিকে তাকালেই সহজেই বোঝা যাবে বেকরাত্ব বৃদ্ধি, নন্দতত্ত্বরে চর্চা হ্রাস এবং ধর্মকে উপেক্ষার কারণে সমাজে আজ জঙ্গী, আম্রিকার আগ্রাসনের শঙ্কা এভং ইনডিয়ার ঝেঁকে বসে যাওয়ার  কারণ!

 ছোট বেলায় আমরা জানতাম, আম গাছে কলম করলে বরই ধরে। এটা সাময়িক।  কিন্তু আম খেতে হলে বরই খেতে হলে বরই গাছই লাগাতে হবে।
আমরা যুদি সুশিক্ষিত, সৎ এবং দেশ প্রেমিক শ্রমনিষ্ঠ  মানব সম্পদ গড়তে চাই, তাহলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়াতেই নজর দিতে হবে।

 আমরা সব ধর্ম, ধর্মাচার এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবো, এতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু  সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়াও একটি সহনশীল জাতি গঠনে মুসলিম বালক বালিকাদের  সহনশীল-নৈতিক-সৎ এবং প্রগতিশীল সমাজ ব্যবস্থা এবং ধর্মের বানী তাদের মনের ভেতরে গেঁথে দিয়ে উগ্র পন্থা মোকাবেলার কোনো উদ্যোগ  কোন সরকারই নেয়নি। নেবেও না। কারণ আমাদের কর্মকৌশল, পরিকল্পনা নির্ধারিত হয় আম্রিকা ও প্রতিবেশি দেশের কথা মাথায় রেখে। সুতরাং এখানে  এটা আশা করা মুশকিল যে, আমরা একটা সহনশীল সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি।

 অনেকে যুক্তি দেবেন, ধর্ম নিজের ব্যাপার । আবার বাঙলায় একটা প্রবাদ আছে-- আপনি ঠিক তো দুনিয়া ঠিক। এ সব কিন্তু আসলে কথার কথা।  নিজে ঠিক হওয়ার পাশাপাশি সমাজ ঠিক করার দায়িত্ব আমাদের আছে।

 পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষা ব্যবস্থা ঘিরে যে নৈরাজ্য চলছে, সেটি বলে বোঝানো মুশকিল।  এ খতা সত্যি স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার  ভিশনটা ঠিক করতে পারিনি। পারলে এ দুর্দশা হতো না।

আমি ব্যক্তিগতভাবে  নৈতিক শিক্ষার  প্রতি অনুরক্ত। একই সাথে সবার মাঝে পর্যটন নেশা ছড়িয়ে দেওয়ার পক্ষপাতি। মানুষকে তার সীমা এবং অন্যের অধিকার সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে কেউ কোন শিক্ষা দেন না। না পরিবার, না বিদ্যায়তন না  সমাজ-সংস্কৃতি! (কিছূ ব্যতিক্রম ছাড়া) । বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজগুলো রাজনীতি চর্চা! সেখানে সহনশীলতা আশা করা বোকামি।

 এ লেখাটার কারণ একটাই  ধর্ম, নৈতিক শিক্ষা বহু আগেই  পাঠ্যপুস্তক থেকে বিদায় করা হয়েছে। সেটি আপনি মাদরাসা বলেন, স্কুল বলেন আর কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়! সবখানে।   আমরা আসলে একজন শিক্ষার্থীর কাছে কি বার্তা, কি লক্ষ্য নিয়ে তার বড় হতে হবে, সেটি সেট করতে ব্যর্থ হয়েছি।

ধর্ম সম্পর্কে আমাদের উদাসীনতা বরাবরই আছে। কিন্তু আবার একটু বয়স হলে আমরা সবাই (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) চাই আমাদের সন্তান যেন ধর্মকর্ম করে। যখন আমরা চাই, তখন আর কিছু করার থাকে না। এ থাকে নার জায়গা কিন্তু অনেকেই উপলব্ধি করছেন, কিন্তু সেটি  বাস্তবায়নে কেউ কাজ শুরু না করে কীভাবে নব প্রজন্মকে আরো অস্থিরতায় ফেলে দেয়া যায় তা নিয়ে কাজ করছেন।  এতে করে জঙ্গি রাষ্ট্রের তকমা পেয়ে যেতে যাচ্ছি।

 চাপাতি অথবা গুম
 চলছে এখন ধুম!

 এ ধুম চলা বন্ধ করতে হবে। এ জন্য গণমাধ্যম, স্বঘোষিত সুশীলদেরও ভূমিকা আছে। আর ইসলামকে জমাত ইসলাম থেকে আলাদা করে একটা ধর্ম হিসাবে বিবেচনা করলে অর্ধেক সমাধান হয়ে যায়!

পাঠ্যপুস্তক থেকে   ড. কাজি দীন মুহম্মদরে 'বিনয় নম্রতা'র মত প্রবন্ধও উঠে গেছে। আর গতকাল বুধবার ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী সংবাদ সম্মেলন করে যে সব তথ্য তুলে ধরেছেন, সে গুলো খুবই উদ্বেগের।  এটা অবশ্যই আমার ব্যক্তিগত মতামত।

 নেজামী  বলছেন,' দ্বিতীয় শ্রেণিতে আগে পড়ানো হতো ‘সবাই মিলে করি কাজ’ শিরোনামে  সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহানবীর(সা.) সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত। তৃতীয় শ্রেণির বইয়ে  ইসলামের প্রথম খলিফা ‘খলিফা হযরত আবু বকর’ শিরোনামের সংক্ষিপ্ত জীবনী। চতুর্থ শ্রেণিতে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর জীবনী পড়ানোর ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু নতুন শিক্ষানীতির অধীনে প্রণীত পাঠ্য বই থেকে মহানবীর(সা.) এবং ইসলামের প্রথম ও দ্বিতীয় খলিফার জীবনী বাদ দেওয়া হয়েছে। '

তার তথ্যানুসারে , 'পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্য বই থেকে মহানবীর(সা.) জীবনী, কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ শীর্ষক কবিতা, ‘শহীদ তিতুমীর’ নামক একটি জীবনীর বদলে সংযুক্ত করা হয়েছে হুমায়ূন আজাদ লিখিত ‘বই’ নামক একটি কবিতা, যা পবিত্র কোরআন বিরোধী বলে পরিচিত।'

তিনি বলেন, ' ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ধর্মীয় শিক্ষণীয় ঘটণা সম্বলিত ড. শহীদউল্লাহর ‘সততার পুরস্কার’ নামক একটি লেখা, কায়কোবাদের লেখা ‘প্রার্থনা’ কবিতা বাদ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা  হয়েছে দেবী দূর্গার প্রশংসা সম্বলিত কবিতা ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ এবং লাল গরুটা নামক ছোট গল্প, যা গরুকে দেবতার আসনে বসানো হয়েছে।  একই শ্রেণিতে পাঠ্য ’নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ নামক একটি ভ্রমণ কাহিনীর বদলে ‘রাঁচির ভ্রমণ কাহিনী’  প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির  বই থেকে ’মরু ভাস্কর’ নামক শেষ নবীর(সা.) জীবন চরিত বাদ দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে পাঠা বলী দেওয়ার নিয়ম-কানুন সম্বলিত ‘লালু’ নামক একটি গল্প। অষ্টম শ্রেণি থেকে ‘বাবরের মহত্ব’ ও বেগম সুফিয়া কামালের লেখা ‘প্রার্থনা’ কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে সংযোজন করা হয়েছে ‘রামায়ণের সংক্ষিপ্ত কাহিনী’। নবম-দশম শ্রেণির জন্যে লিখিত বই থেকে কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’, কবি আলাওলের ‘হামদ’ ও আবদুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’   ‘জীবন বিনিময়’ কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে একই শ্রেণির বইয়ে দেবী অন্নপূর্ণার প্রশংসা সম্বলিত মঙ্গল কাব্য ‘আমার সন্তান’, ‘সাকোটা দুলছে’ ও রাধা-কৃষ্ণের লীলা কীর্তন ‘সুখের লাগিয়া’ প্রভৃতি কবিতা  সংযোজন  করা হয়েছে।‘সাকোটা দুলছে’ কবিতাটিতে ৪৭-এর ভারত বিভক্তিকে হেয় করা হয়েছে।  তাছাড়া ভারতের পর্যটন স্পট পালামৌ-এর ভ্রমণ কাহিনী এবং বাউলদের যৌনাচার সম্বলিত ‘সময় গেলে সাধন হবেনা’ নামক বইটি  নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্য-পুস্তক হিসেবে সংযোজন করা হয়েছে। উপরন্তু, প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে পাঠ্য করা হয়েছে যৌন শিক্ষার বই ‘নিজেকে জানুন’।'

 তাহলে আপনি ফেসবুকে লেকচার দিবেন, টিভি সেট গরম করে ফেলবেন, মাইকে ফূঁ দিবেন আর বলবেন সবাই 'মানুষ হও'। কেমনে। এ ধরণের কাজ তো উগ্রপন্থার প্রচারকারীদের  সহযোগিতা করছে। সুতরাং সময় থাকতে আমাদের সাবধান হওয়াটা জরুরী।

স্বেচ্ছায় অধীন কিম্বা আয়ত্বে বঙ্গীয় সংবাদমাধ্যম !


প্রেস ফ্রিডম ডে [3 May] নামে একটা দিবস বাংলাদেশে উদযাপিত হলো- ভালো লাগলো শুনে। মুক্ত গণমাধ্যম নিয়েও  কথা হয়েছে। হচ্ছে। হবে। মাশাআল্লাহ, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি!

বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ কতটা, তার সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারণা নেই! কারণ এখনো আমি কোনো অনলাইন, অফলাইনের সম্পাদক হতে পারি নাই। কিম্বা কর্তা সাইজে যেতে পারি নাই। যাওয়ার কোনো 'আশঙ্কাও' নেই!

তবে  এটা তো জানি সেলফ সেন্সরশিপ এখানে বহু আগে থেকে প্রচলিত। এখানে সম্বাদিকরা স্বেচ্ছায়, স্ব-উদ্যোগে অন্যের পারপাস সার্ভ করতে খুবই পছন্দ করেন!  যদি ক্ষমতাবানদের  'নেক' নজর মিলে! এই একটাই আশা!

আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ---বাংলাদেশের সবচেয়ে নিগৃহিত দু'টি  প্রাণি আছে! একটি সম্বাদিক! আরেকটি বাসা বাড়ির কাজের লোক! এদের  বশে আনা কঠিন কিন্তু পেটে এদের ক্ষুধা। অনিরাপদ জীবন, এক দিক থেকে ইসলামিক জীবনও বলা চলে। ইসলাম ধর্ম অনুসারে আজকে নিয়ে ভাবো, ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য, পয়সা মজুদ করে অন্যকে কষ্ট দিও না! এর দু'প্রাণিকুল এটা মানতে বাধ্য! কারণ তার তো দিনে আনা দিনে খাওয়া!। অবশ্য কিছূ পেটি বুর্জোয়া  সম্বাদিক এখন সমাজে আছেন। তাদের কথা না বলি। আম সম্বাদিকের কথাই ধরে এ পর্যবেক্ষণটা দিলাম!

 সে যাই হোক, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও রেডিও'র স্বায়ত্ত্বশাসনের জন্য একটা কমিশন হয়েছিল, আসাফ উদ দৌলা এ কমিশনের প্রধান ছিলেন। সম্ভবত ১৯৯৬ কিম্বা ৯৭ সালের দিকের ঘটনা, এ কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলছিলেন, তিনি যে প্রতিবেদন বানিয়েছেন, সেটি অবশিষ্ট নাই। তার স্বপ্রজাতির আমলার এটাকে  কাটছাঁট করে  স্বায়ত্ত্বশাসনের বদলে 'আয়ত্ত্বশাসন'  এর এন্তেজাম করেছে।

' আয়ত্ত্বশাসন' শব্দটা খুব মনে ধরেছে আমার। অসাধারণ। বঙ্গীয় শব্দ ভাণ্ডারে এক অনন্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন। ভাবলে আজো চমৎকৃত হই। এবং আরো ভালো লাগে পরে আসাফ উদ দৌলার সাথে কথা বলেছিলাম, তার কথাটা খুব পরিষ্কার,  এখানে প্রেস ফ্রিডম বলে কিছু নেই।

 যার বিপক্ষে যাবে, সে বয়কট করবে! নিশ্চিতভাবে অনেকেরই জানা আছে আম্লীগ সভানেত্রী বিম্পির ২০০১ থেকে ২০০৬ এর আমলে লাইসেন্স দেওয়া টিভি চ্যানেলকে তার  অনুষ্ঠান কভার করতে দিতেন না।   সে সময় ওই সব টিভি চ্যানেলৈর সম্বাদকর্মীরা প্যান্ডেলের বাইরে  মাইকের সামনে তাদের ' বুম' রেখে সাউন্ড বাইট সংগ্রহ করতেন!

 এটাকেও অত্যন্ত সম্মান করি, আমি। কারণ  আম্লীগ এটা শেষ পর্যন্ত টেনে নিতে পেরেছে, যে শক্তি বিম্পির নেই। বিম্পি- জমাতের লোকজন সব সময় একটা অপরাধী ভাব নিয়ে থাকে। মনে হচ্ছে, আহা রে কি বললেম জনাব অসন্তুষ্ট হবে। তাই সন্তুষ্ট করার একটা ভাবনা। কোনো অবস্থানে কঠোরভাবে  থাকতে পারে না।

 বলছিলাম,  গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা।  গণমাধ্যম স্বাধীন এ কথা সরকারের মন্ত্রী, তথ্য মন্ত্রী সবাই বলেন এবং  সেটা এখন বললে, অনেকটা কৌতুকের সৃষ্টি করে। কারণ  বিপরীত মতের পত্রিকা সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত,  দিনকাল তো বন্ধ হয়নি, এ দাবি তো সরকার করছে!  এবং এ দাবি মিথ্যাও নয়। তাহলে আমরা প্রেস ফ্রিডম আছে, এটা আপতত চোখে মেনে নিতে পারি!

কিন্তু বাস্তবতা কি তাই!  আমরা সম্বাদিকরাও  গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাই। আমি চোখ বন্ধ করে বল্লাম, চাই না। একই সাথে দায়িত্বশীল সম্বাদিকতাও চাই না। কসম করে বলছি , চাই না! যদি চাইতাম তাহলে এ দেশে একের পর এক লুট, আর খুনের বিষয়ে আমরা কেউ-ই এতটা নিশ্চুপ আর ডে ইভেন্ট হিসাবে কভার করে চুপ থাকতাম না! এর ফলো আপ রিপোর্ট হতো, কারা এর পেছনে জড়ি এবং তাদের বিচারে সরকারকে গণমাধ্যম বাধ্য করতে পারতো!

আমার দেশ পত্রিকার উপর খগড় নেমে আসার পর আমাদের দেশের  'প্রগতিশীল' সম্বাদিক গোষ্ঠী তো হাত তালি দিয়েছে! দেন নি! দিয়েছেন। দিগন্ত টিভি বন্ধ হওয়ার পর সবাই বলেছেন, বাপু ঠ্যালা বোঝ!  ইসলামিক টিভির মত নিরীহ টিভি চ্যানেল বন্ধ করার পরও গণমাধ্যমের কর্মীদের একাংশ উল্লাস প্রকাশ করেছেন।  ইটিভির চ্যায়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের পরও আমরা বহুলোককে দেখেছি  উল্লাস করতে!

বাকি গুলো কবে বন্ধ হবে? সে জন্যও অপেক্ষা করেছেন দিনের পর দিন। আর  বিপরীত মতের এখনো তেলা পোকার মত টিকে থাকা  গণমাধ্যমগুলোকে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে, এবং এ সব কাগজে চাকুরী করা কিছু সরকারপন্থী কীভাবে ফায়দা লুটছে, সেটাও আমরা কম বেশি জানি! সেই যাই হোক,  দুনিয়া কা মজা লোটটো দুনিয়া তোমারি হ্যায় এর বিশ্বাসী লোকের তো ভাব হবে না, এটা জানা কথা!

 তবে গণমাধ্যম  চাপের বাইরেও স্বউদ্যোগে বহু খবর 'টুইস্ট' করে থাকে। এটা জেনেই করে। সরকারের নজরে পড়ার জন্য। যেমনটা  একটা ইসু বাংলাদেশে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, সেটি হলো ড. ইউনূস। লোকটাকে তুলো ধুনো করতে পারলে কিছু সম্বাদিক এতটা আন্দ পান, যেটি হয় তিনি তার  প্রেমিকার সাথে প্রথম সাক্ষাতেও লাভ করেন নি।

 মজার ব্যাপার হলো এরা আবার আপনাকে নৈতিক সম্বাদিকার   সবকও দিবনে। কিন্তু অসত্য, বিকৃত খবর ছাপানোর পর তার প্রতিবাদ ছাপতে পারবে না। কারণ  তআহলে আবার না ক্ষমতাবানদের 'বদ' নজরে পড়ে যান।

 অনেকে বলবেন, ড. ইউনূসকে লাত্থি মেরে বের করে দেওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংক ভালো চলছে! দ্বিমত করছি না। কিন্তু  কার সেট আপে চলছে?

 গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন ও সরকারের করায়ত্বে আনার জন্য বহু ফন্দি ফিকির তো হলো, কিন্তু পর্ষদ নির্বাচন আজ পর্যন্ত করতে পারেননি!

 অনেক সম্বাদিক মনে করেন,  ইউনূস দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন। কিন্তু এটা মনে করা পর্যন্ত তার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।

আর এ দেশের গণমাধ্যমে সবার সমান অধিকার একটা স্বাপ্নিক ঘটনা। এখানে বিদেশে টাকা পাচারের  প্রমাণিত রিপোর্টকে  লেখা হয় 'কথিত'। আর শোনা যাওয়ার রিপোর্টকে বলা হয়, 'অভিযোগ' । কথিত ও অভিযুক্ত শব্দ দু'টোর তফাৎ নিশ্চিতভাবেই আছে।  এদেশে ক্ষমতাবানের  সন্তান হলে  সাচ্চা লোক, ক্ষমতাহীনের ছেলে-মেয়ে হলে  অসম্ভব নিম্ন মানের লোক।

 বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের অধীনতা কিম্বা আয়ত্বে থাকাটা অনেকটা স্বেচ্ছায়। জবরদস্তিমূলক এটা বলা যাবে না। কারণ  সরকার জবরদস্তি করে না, শুধু ফিতা ধরে টান দেয়, মাহফুজ আনাম, মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান হওয়ার চেয়ে বউ পোলাপাইন নিয়ে টিকে থাকাই শ্রেয়।

ফাঁকে ডিজিটাল স্বাধীনতা, সেলফি তোলেন, জ্ঞান বিতরণ করেন এবং  সরকারি প্রতিপক্ষের গুষ্টি উদ্ধার করেন, আপনার চে আর প্রগতিশীল  কে হতে পারে! জনাব ভালো থাকেন, প্রেস ফ্রিডম ডে'র শুভেচ্ছা!

'খুন' তুমি জায়েজ হয়ে যাও

খুনি' তুমি মুক্তি পেয়ে যাও
সমকামী, বিকৃত রুচি, নাস্তিকতার নামে 

'খুন' তুমি জায়েজ হয়ে যাও 
মোল্লা-মৌলভী, জমাত-শিবির, বিম্পি'র নামে

খুন 'নিরপরাধ' হয়ে যাও
পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে-বাঁশখালী!

ইলেকশনের নামে নামে সিলিকশনেও তুমি আপদ হও না! 
খুনের আবার 'আদব' কি?

তোমার পক্ষে ক্ষমতা, লোভ, রাজনীতি
মানুষের পক্ষে কেউ নেই! কেউ না! এমনকি প্রকৃতিও! 

রানা প্লাজা: সেই নৃশংস স্মৃতি




বছর তিনেক আগের এ রকম একটা দুপুর, শত শত মানুষ রাস্তায়। সবুজ অটোরিক্সাটা ছুটে চলেছে, মানুষের ভিড় ঠেলে রানা প্লাজার কাছে পৌঁছালাম, আশ পাশে উৎসুক মানুষ। পাশেই দেখলাম বিরিয়ানির প্যাকেটের গন্ধ, কিছু লোক  ভেতরে যাচ্ছে আসছে, পাশের ভবনে গেলাম, দেখলাম আমাদের সাহসী ফায়ার বিগ্রেডরের  লোকজন, কাজ করছে, নিজের পরিবারের সদস্য উদ্ধারের মত করে। ভেতরে কিছু স্বেচ্ছাসেবি, মানব-শরীরের পঁচে যাওয়া মাংসের গন্ধ।

একটু বাইরে আসলাম, লাশ গুনছে অনেকে, ঘটনার তিন দিন পর (২৭ এপ্রিল ২০১৩ ) দেখতে গিয়েছিলাম রানা প্লাজা ট্রাজেডি। লেখাটাও  উদ্দেশ্য ছিল।  বাইরে এসে  রোড ডিভাইডারের ওপর দাঁড়ালাম,লাইজু নামে একজন নারী এগিয়ে এসে বললেন, তার বোন সীমার সাথে কথা হয়েছে, টয়লেটে আটকা।  কিছু করা যায় কিনা? চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি।

বোন সীমাকে জীবিত দেখতে তার মন কাঁদছে। বললেন, সীমা তিনতলায় কাজ করতেন। এক ছেলের মা সীমা ২৪ এপ্রিল সকালে ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খেয়ে এলেন কাজে। তারপর নিখোঁজ। চার্জ নেই মোবাইলে। তবুও বোনের মন মানে না। রিচার্জ করে কিছু টাকাও পাঠালেন বোনের ফোনে। কিছুক্ষণ পরপর বোনের মোবাইলে চেষ্টা করছিলেন। যদি কথা বলা যায়। যদি জানা যায় বোনটি কেমন আছে! শেষ পর্যন্ত তার আর কিছু জানা গেলো না।

একই রকম অবস্থা ছিল মাসুদ রানার। বগুড়ার সোনাতলা থেকে এসেছিলেন তিনি।  বোন শাহিনূর ও ভাইয়ের মেয়ে নাজমার কোনো খবর জোগাড় করতে পারেননি।  ছুটেছেন অধরচন্দ্র স্কুল, এনাম মেডিক্যাল, সিএমএইচ থেকে রানা প্লাজা।

তিন ছেলে ও একমাত্র কন্যার  বাবা আবুল কাসেম ভূঁইয়া নিখোঁজ হয়েছিলেন । তার লাশের খোঁজে বড় ভাই মোহাম্মদ ইবরাহীম অধরচন্দ্র স্কুলে অপেক্ষা করেছেন। ছেলে  শাফায়েত রানা প্লাজার সামনে ছিলেন। স্ত্রী  ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, যদি প্রিয় স্বামীর দেখা মিলে। না সে সব আশা মিথ্যে।  দেখা মেলেনি স্বজনের ।

 অগুনতি ব্যর্থতার ভেতর কিছুক্ষণ পর পর লাশ নিয়ে আসা হচ্ছে, সে লাশের গাড়ি যাচ্ছে অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ের মাঠে। যে সব  মানুষের জীবিত উদ্ধার করা হচ্ছিল তাদের নেয়া হচ্ছিলো এনাম মেডিকেল ও  সিএমএইচএ!

আমার জীবনের এ রকম করুণদৃশ্য এর আগে দেখিছিলাম সিডর আক্রান্ত শরণখোলায়। সেখানে মানুষের লাশ ঝুলে ছিল গাছে, ধান ক্ষেতে ফুলে ওঠা মানুষের লাশ। সে এক হৃদয় বিদারক, নির্মম ও নৃশংস দৃশ্য!  

 এটি দ্বিতীয় কঠিন এবং রূঢ় একটা কষ্টময় স্মৃতি হয়ে গেঁথে গেলো।

অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ের মাঠে এক নারী চিৎকার করে শুয়ে পড়ছিলেন, আমি তার কাছে যেতে যেতে তিনি  অজ্ঞান হয়ে গেলেন, স্বামী সন্ধানী নারী নিখোঁজের তালিকার স্বামীর নাম লেখাতে এসেছিলেন।

ছোটবেলায় আমরা দেখতাম দুর্যোগের পর রিলিফ আনতে কিম্বা ইউনিয়ন পরিষদের দুস্থ সহায়তা পেতে লম্বা লাইন। জীবনে আমি প্রথম এবং একবারই লক্ষ্য করলাম, লাশ খুঁজতে লম্বা লাইন। এক নির্মম অভিজ্ঞতা আর করুণ আর্তির কোনো বর্ণণা করার মত ভাষা আমার জানা  নেই।

সাভারের অধর চন্দ্র স্কুলের মাঠজুড়েই হাহাকার। লাশের সংখ্যা নিয়েও ছিল ধুম্র জাল।  নিখোঁজ মানুষের পরিনসংখ্যানও  সঠিকভাবে মিলেনি।

ইতিহাসের এ ভয়াবহতম ঘটনায়  দু'হাজারের বেশি মানুষ মরে বেঁচে গেছেন। আর যারা আহত হয়ে বেঁচে গেছেন, তাদের জীবন চলছে দুর্বিসহ অবস্থায়।

 এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েনি। রসিকতা হয়েছে।  নিপীড়ত মানুষের পক্ষে আমরা কাউকে দাঁড়াতে দেখিনি। সবার শরীরে এখন চিকনাই জমেছে। চোয়ালে জমেছে  লাস্যতা। কেউ রোদে পুড়ে আন্দোলন করে অধিকার আদায়ের লড়াই করতে চান না। আর 'দুনিয়ার মজদুর এক হও লড়াই করা' লোকেরা তো এখন সরকারের চাকা ঘোরাচ্ছে! সুতরাং মরে বেঁচে যাওয়া মানুষের জন্য দিন উল্লেখ করেই শোকই  একমাত্র প্রাপ্য! তাও এর দু এক বছর তাও থাকবে বলে মনে হয় না।

ড. ইউনূসকে ঘিরে নোংরা-চর্চা!

'ড. ইউনূস একটা চোর', এটা শুনতে পারলে এ দেশের এক শ্রেণীর সম্বাদিক নামের প্রাণী প্রচণ্ড আনন্দ উত্তেজনা অনুভব করেন।  যেটি হয়ত তারা বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের হারেও অনুভব করেন না।  ইউনূসকে ঘিরে দেশীয় গণমাধ্যমের অরুচিকর নোংরামি থেকে এটা আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি । 

দেশের বহু চুরি, ডাকাতি ও লুটের খবর এদের মন খারাপ হয়, লুকুচুরি খেলে, এটাকে হালাল করার তরিকা আবিষ্কার করে এ সব নিম্ন রুচির লোকেরা। সম্বাদিকতা জগতকে এরা কুলষিত করেছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েব ভিত্তিক পত্রিকা “দি ডেইলী কলার” গত ১৭ এপ্রিল একটি প্রতিবেদন  প্রকাশ  করার পর বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যম এতে এতটাই উত্তেজেতি বোধ করে, এ বিষয়ে অভিযুক্তের বক্তব্য জানার ফুসরত পর্যন্ত  পায়নি। একমাত্র ইংরেজি দৈনিক ইনডিপেনডেন্ট দেখলাম তারা ঘটনা সম্পর্কে ইউনূস সেন্টারের কাছে জানতে চেয়েছে, বাকিদের জানার দরকার নেই। উঠতে বসতে আমেরিকাকে গালি দেওয়া কিছু লোকও  ভুল রিপোর্টটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ছেপে দিয়েছে। আহা, কি দারুণ নৈতিক  সম্বাদিকতা। 

আর ইউনূস বেচারাও বিষয়টা আমলে নিলনে না প্রথমে, পরে অবশ্য একটা ব্যাখ্যা দিয়েছে, দেমাগি-দলদাসত্বের সম্বাদিকতার জগতে জ্ঞানীর কদর থাকবে না, এটাই তো স্বাভাবিক। 

“Disgraced Clinton Donor Got $ 13 Million in State Department Grants Under Hillary” শিরোনামের রিপোর্টে বলা হচ্ছিলো- প্রফেসর ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে মার্কিন সরকারের অর্থ গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর ক্ষমতাশালী বন্ধু সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁকে এই অর্থ পেতে সাহায্য করেছেন। প্রতিবেদনটিতে আরেকটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলা হয়েছে যে, প্রফেসর ইউনূস মিসেস ক্লিনটনের পারিবারিক ফাউন্ডেশনকে অনুদান দিয়েছেন। এতে এমন একটা ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে মিসেস ক্লিনটনের পারিবারিক ফাউন্ডেশনকে অনুদান দিয়েছেন বলেই প্রফেসর ইউনূস মার্কিন সরকারের নিকট থেকে অনুদান পেয়েছেন।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে দুর্নীতির অভিযোগে প্রফেসর ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বহিষ্কার করে দেয়া হয়েছিল। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ইচ্ছাকৃত অপপ্রচার। 

ইউনূস সেন্টার এ রিপোর্টের ব্যাখ্যায় বলছেন, ' প্রথমত, প্রফেসর ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে মার্কিন সরকারের কোন টাকা গ্রহণ করেননি। উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য সৃষ্ট এজেন্সীগুলো কোন ব্যক্তিকে অর্থ দিতে পারেই না। রিপোর্টটিতে সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা প্রচারিত হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রফেসর ইউনূসকে ১৩ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়া হয়েছে। একজন ব্যক্তিকে টাকা দেয়ার কোন ক্ষমতা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেই। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদারককারী সংস্থা এটা হতে দেখলেই এ ব্যপারে বড় রকম একটা প্রতিবাদ জানাতো। প্রতিবেদনটি মার্কিন সরকারের সংস্থাগুলির কাজ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ একটা মিথ্যা ধারণার সৃষ্টি করেছে।'

'দ্বিতীয়ত, পত্রিকাটি বলছে যে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ওয়েব সাইটে পাওয়া তথ্য থেকে তারা জানতে পেরেছে যে প্রফেসর ইউনূস ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে একবার ১ লক্ষ ডলার, আরেকবার ৩ লক্ষ ডলার অনুদান দিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ওয়েব সাইটে এরকম কোন তথ্যই নেই। অনুদান বা অন্য কোন খাতে প্রফেসর ইউনূসের কোন নামই ওয়েব সাইটে নেই। গ্রামীণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভে যোগদান করার জন্য ফি বাবদ টাকা দিয়েছেন এটার উল্লেখ আছে। ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এখানে যোগ দিতে হলে ফি দিয়ে যোগদান করতে হয়। গ্রামীণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফি দিয়ে তাই করেছেন।'

https://www.clintonfoundation.org/contributors?category=$100,001 to $250,000&page=2

এই ওয়েব সাইটে কোথাও কোনো তালিকায় দাতা হিসেবে প্রফেসর ইউনূসের কোনো নাম নেই। অথচ প্রতিবেদনে এই মিথ্যাটাই সাজিয়ে প্রচারিত হয়েছে। এমনকি শিরোনামেও সজোরে তাই প্রচার করা হয়েছে। 

তৃতীয়ত, পত্রিকাটি তার প্রতিবেদনের শিরোনামে উরংমৎধপবফ বা “অপমানিত” শব্দটির পরিবর্তে “বিপুলভাবে সম্মানিত” কথাটি ব্যবহার করলে তা যথার্থ হতো কারণ প্রফেসর ইউনূসকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০১০ সালে “কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল” প্রদান করে যা প্রতিনিধি পরিষদে উভয় দলের প্রতিনিধিদের বিপুল ভোটে ও সিনেটে উভয় দলের সর্বসম্মতিক্রমে পাশ করা হয়। এছাড়াও প্রফেসর ইউনূস ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নিকট থেকে “প্রেসিডেনসিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম” গ্রহণ করেন। তাঁকে “বিশ্ব খাদ্য পুরষ্কার” (১৯৯৪), “কেয়ার হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড” (১৯৯৩) সহ অসংখ্য পুরষ্কার এবং মার্কিন সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে গত তিন দশক ধরে অসংখ্য সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।

ইউএসএআইডি-র ১৩ মিলিয়ন ডলার কোথায় গিয়েছে? গত অনেক বছর ধরে পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন দেশে “গ্রামীণ” ও “ইউনূস” নাম ধারণ করে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রফেসর ইউনূস এবং গ্রামীণ নামের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাঁর আদর্শের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে এই সকল প্রতিষ্ঠান এই নাম গ্রহণ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান সেসব দেশে দরিদ্রদের সেবা প্রদান করতে ও বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে সৃষ্টি করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এরকম দু’টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে গ্রামীণ ফাউন্ডেশন ও গ্রামীণ আমেরিকা। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে ১৯৯৮ সালে গ্রামীণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। পৃথিবীর ২০টি দেশে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচিকে অর্থ সহায়তা দিতে এই প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ১৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের অনেক দাতাদের মধ্যে ইউএসএআইডি গত দশ বছরে একটি ক্ষুদ্র দাতা মাত্র।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন ধনী ও নিবেদিতপ্রাণ রিপাবলিকান তাঁর নিজ অর্থে ২০০৮ সালে নিউ ইয়র্কে গ্রামীণ ব্যাংকের অনুকরণে গ্রামীণ আমেরিকা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত সফল হওয়াতে আমেরিকার বিভিন্ন শহরে সম্প্রসারিত হতে থাকে। এখন আমেরিকার ১১টি শহরে গ্রামীণ আমেরিকার কর্মসূচি চালু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি যতই সম্প্রসারিত হয়েছে, ততই আরো বেশী টাকার প্রয়োজন হতে থাকে। প্রতিষ্ঠাতা নিজের অর্থে এটা বড় করা যাচ্ছিল না বলে তিনি বাইরে থেকে অর্থ সংগ্রহে লেগে যান। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর সময় ও শ্রম দিতে থাকেন। এতেও তিনি সফল হন। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ৬৫,০০০ মহিলা ঋণ গ্রহীতাকে ঋণ দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি ক্ষুদ্র ঋণ হিসেবে এ পর্যন্ত ৩৮০ মিলিয়ন ডলার বিতরণ করেছে যার আদায় হার ৯৯% এর বেশী। গ্রামীণ আমেরিকার কর্মসূচিতে ইউএসএআইডি-র সংশ্লিষ্টতা অত্যন্ত সামান্য। ইউএসএআইডি-র তহবিল পেয়েছে এরকম আরেকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে “ইউনূস সামাজিক ব্যবসা” যা ২০১২ সালে বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের দু’জন তরুণ মহিলা পেশাজীবি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রধান কার্যালয় জার্মানীর ফ্রাঙ্কফুর্টে অবস্থিত। “ইউনূস সামাজিক ব্যবসা” ব্রাজিল, কলম্বিয়া, হাইতি, আলবেনিয়া, বসনিয়া, মেসিডোনিয়া, তিউনিসিয়া, উগান্ডা, তানজানিয়া ও ভারতে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি এই দেশগুলোতে ৮.৬ মিলিয়ন ডলারের বেশী মূলধন বিনিয়োগ করে ৩৪টি সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে সামাজিক ব্যবসা তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছে। 

প্রফেসর ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ ও সামাজিক ব্যবসার ধারণাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এমন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অনেক ডোনার, ব্যাংক, বিত্তশালী ব্যক্তি ও বিনিয়োগকারী অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন। ইউএসএআইডি এই বহুসংখ্যক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মাত্র একটি। ইউএসএআইডি এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কাজের গুণগত মানের জন্য অর্থ সহায়তা দিয়েছে, কোন উচ্চ পদে আসীন কারো বন্ধুকে খুশী করতে নয়।

এই প্রতিবেদনটির উদ্দেশ্য যদি সৎ হতো তাহলে তথ্য অনুসন্ধানের সামান্যতম চেষ্টা করলেই তারা তা জানতে পারতো, সত্যের সন্ধান পাওয়া যেতো। সমস্ত প্রতিবেদনটি জুড়ে যত সব মিথ্যা পরিবেশন করা হয়েছে তাতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে তারা সাংবাদিকতার প্রতি লক্ষ্য না-রেখে শুধু মিথ্যা প্রচারণায় ব্যস্ত থেকেছে।

দেশের সীমান্ত নিয়ে কটাক্ষ করার সিনেমা 'শঙ্খচিল' অগ্রহণযোগ্য

কি করলে, কি হতো, বা কারা উপকৃত হতো, কারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এ সব আলোচনার চে বাস্তব অবস্থাটাই মুখ্য। আমরা স্বাধীন দেশ। সুতরাং এখানে আমাদের জোড়া লাগা থাকলে ভালো কি মন্দ হতো সেটি আমরা কল্পনা করতে পারি । তবে কিছু বাস্তবতা তো উপেক্ষা করা যায় না। 

বাঙালি পরিচয়ের জন্য যাদের আকুতি তারাই তো দাঙ্গায় শত শত মুসলিম ও হিন্দুদের বসতি পুড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানেরা এসেছেন পূর্ববঙ্গে। আর পূর্ববঙ্গের হিন্দুরা চলে গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। 

তবে সবাই নয়। বহু হিন্দু বাংলাদেশে এখনো আছেন। বহু মুসলমান পশ্চিমবঙ্গেও। এটা তো নিশ্চিত এবং বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী সূত্রেও আমরা দাঙ্গার ভয়াবহতার আঁচ করতে পারি। 

তাহলে স্বাধীনতা সাড়ে ৪ দশক পরে ভারত বাংলাদেশ প্রযোজনার সিনেমা 'শঙ্কচিল' কীভাবে প্রশ্ন তোলে, দেশ ভাগটা সঠিক ছিল না। এটা ভাবনার বিষয়।
'অখণ্ড ভারত' সিনেমাটির মূল স্রোত। আমরা অখণ্ড ভারতে থাকলে লাভবান হতাম কি, হতাম না, তা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে একটা সরল রেখায় সমাধান টেনে দেওয়া মুশকিল--- শঙ্খচিল-- সিনেমায়ও আমরা দেখি সাম্প্রদায়গত একটা নিচুতা পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যমান। সেখানে পুর্ববঙ্গের মানুষ কতটা ভালো, সুখে থাকতেন তা কল্পনা করা কঠিন ।
শঙ্খচিলে রূপসা চরিত্র ইনডিয়া চিকিৎসার জন্য যাওয়ার পর সেখানে তাদের হিন্দু পরিচয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। কুসুম সিকদারের মাথায় তুলতে হয় সিঁদুর। কন্যা তাদের বাঁচে না। অনুপ্রবেশকারী হিসাবে তাদের ঠাঁই হয় জেলে। আইন অনুসারে তাই হয়, হতেই হয়ে।
প্রসেনজিৎ মূল চরিত্র রূপকার। আমরা সিনেমার গোড়াতেই দেখি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বিয়ে বাড়িতে আসা ইনডিয়ানদের নৌকা ঘুরিয়ে দেয় বর্ডার গার্ড । তারা অনুনয় করে বিয়ে-নেমতন্ন সেরেই চলে যাবে। কিন্তু বিজিবি তাতে সাঁয় দেয় না। এখানে ইনডিয়ান মুসলিমদের দেখানো হয়, ইনডিয়ান হিসাবে তারা কেবল বিয়ের নেতমন্ন সম্পন্ন করতে আসছেন।
বিপরীত চিত্র বাঙালদের ক্ষেত্রে। বাঙালরা ভারত ঢুকছে চোরাচালন নিয়ে, মই দিয়ে সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করছে। এ সময় ভোরে বিএসএফ'র গুলিতে খুন হলো একটা তরুণ।
বাঁশে ঝুলিয়ে লাশ নিতে অভ্যস্ত বিএসএফকে আমরা দেখি স্ট্রেচারে করে লাশ নিচ্ছে! আমরা ধারণা করতে পারি এ ঘটনা 'ফালানীর' ছায়া চিত্র। কারণ ঘটনার পর বিএসএফ'র উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত বিশ্বের সবচেয়ে ' কমপ্লেক্স বর্ডার'। তাই এখানে মানবিকতা ও মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন বেহুদা! আমিও তাই মনে করি।
কিন্তু তাই বলে সীমান্তে হত্যা জায়েজ!
হতে পারে। কারণ বিএসএফ বলছে!
তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিএসএফ কর্মকর্তা চরিত্র রূপায়নকারী বলছেন, তারা তদন্ত করে বিএসএফ জওয়ানদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন। সিনেমার শেষাংশ পর্যন্ত সে গল্পের বিষয়ে কোনো আলাপ আমরা দেখিনি।
সীমান্ত নিয়ে তার মন্তব্যও তাচ্ছেল্যের! রেডক্লিপ কিম্বা জিন্নাহ নেহরুকে জিজ্ঞেস করতে বলেন তিনি, কেন এ রকম সীমান্ত হলো।
আমরা আবার এও দেখি, বাংলাদেশের পত্রদূত কাগজের সাংবাদিক বিজিবি'র সাথে সীমান্ত দেখতে যায়, সীমান্ত সমস্যা দেখায় বিজিবি, বলে দেখেন তাল গাছের গোড়া বাংলাদেশে, মাথা ইনডিয়ায়। পিলার দেখান এবং হাজারের ওপর পিলারও নেই বলে জানান, যে গুলো নদীতে থাকতে পারত।
এখানে কি বিজিবি চরিত্র রূপায়নকারী সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেছেন, নৌ সীমান্ত কি পিলার দিয়ে করতে হয়। একই সাথে সীমান্ত গ্রাম নিয়েও এখানে বিজিবি চরিত্র রূপায়নকারীদের আমরা তাচ্ছিল্য করতে দেখি--- দেখুন সীমান্তের গ্রামে কে কোন দেশের সেটা বোঝাও মুশকিল।
হতে পারে। তবে এ মুশকিল সামাল দেয়ার জন্য সীমান্ত রক্ষী। তারা এখানে সফলভাবে সিনেমায় উপস্থিত হতে পারত, সেটি কেন হয়নি প্রশ্নটা থেকেই যায়।
এখানে পত্রদূত কাগজের সাংবাদিক চরিত্রেও দেখি,বলছেন,'আমার মনে নয় সীমান্ত ঠিক করার সময় রেডক্লিফ নেশাগ্রস্থ ছিলেন।' তারক দাঁত কেলিরে হাসি !
একটি দেশের সার্বভৌমত্ব , সীমান্ত স্পর্শকাতর বিষয়, অথচ এ সিনেমাটির ক্ষেত্রে এটাকে মামুলি সিনেমেটিক ফরমেটে বিবেচনায় করা হয়েছে। এটা দুঃখজনক।
যে দেশে চাকমা ভাষায় নির্মিত সিনেমা 'মর থেংগারি'র মুক্তিতে সেন্সর বোর্ড গড়ি মসি করে, সে দেশে শঙ্খচিল এত সহজে কীভাবে হলের পর্দায় আসে, সেটি বুঝতে পারিনা !
আমরা প্রসেনজিৎকে দেখি নদীর তীরে বসে --- অন্নদা শঙ্কর রায়ের সে ছড়া কাটতে---'তেলের শিশি ভাঙ্গলো বলে/খুকুর পরে রাগ করো/তোমরা যেসব বুড়ো খোকা ভারত ভেঙ্গে ভাগ করো!' ভারত ভাগে মনোকষ্ট তার।
বাদলকে আমরা দেখি একটা পুরনো ট্রাঙ্ক থেকে অনেকগুলো চিঠি খুঁজে বের করতে, যেখানে তার পিতার সূত্রে প্রাপ্ত চিঠিতে বলা হচ্ছে, মুসলিমরা কীভাবে হিন্দুদের নিপীড়ন করেছে, চিঠি পড়তে পড়তে আমরা মুসলিম বাদল চৌধুরীকে পুড়তে দেখি, কষ্ট পাই।
আমরা এও একমত হই, যারা ধর্মের নাম করে অন্য ধর্মের লোকদের আক্রমণ করে তাদের ধর্ম ঘৃণা। তাদের ধর্ম কখনোই ইসলাম হতে পারে না। হিন্দু হতে পরে না!
সিনেমায় আমরা এটা দেখতে পারলে ভালো হতো, পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমরাও একই রকম নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। এটা ঐতিহাসিক সত্য। এটা এডিয়ে গৌতম ঘোষ কি বার্তা দিতে চাইলেন, সহজে অনুমেয়!
সিনামায় আমরা মামুনুর রশীদকে দেখি সাতক্ষীরার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে, তার নাম- তপন বাগচী। বাদল চৌধুরীর খুব কাছের একজন; তার স্কুলেইর শিক্ষক।
বাদল স্যারের মেয়ে রূপসার হার্টের রোগ ধরা পড়ার পর তপন বাগচীর পরামর্শেই তাকে নেয়া হয়, সাতক্ষীরা ওপারে টাকী হসপিটালে। তপন বাবুর আত্মীয় চরিত্র রূপায়নকারী মিস্টার বাগচীর ফোন পেয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। তার আতিথেয়তা মুগ্ধ করার মত।
আমরা দেখি বাদল স্যার তার স্ত্রী এবং কন্যাকে নিয়ে ইনডিয়া গেলেন, টাকীর সেই ভদ্রলোক তাদের বললেন, সীমান্ত আইন কড়াকড়ি। মেয়ের চিকিৎসার জন্য তাদের হিন্দু পরিচয় দিতে হবে। হসপিটালে তাই দেয়া হয়।
উন্নত চিকিৎসার জন্য রূপসাকে স্থানান্তর করা হয় কলকাতায়। সেখানে নিয়ত তাদের লুকিয়ে চলতে হয়। এখানে আমরা অবশ্য নামাজি বাদল চৌধুরীকে আবিষ্কার করি, যাকে আমরা দেশে বারবরই গান বাজনায় মগ্ন থাকতে দেখি, তিনি হঠাৎ সেখানে বিরাট মুসল্লী। তার স্ত্রীর সিঁথিতে সিঁদুর তুলে নেয়ার চেষ্টা করছে,--- নিজের পরিচয় লুকানোর কষ্টের চিত্রায়ন। তবে একই সাথে তপন বাগচীর আত্মীয়'র তৈরি করে দেয়া অবৈধ নাগরিকত্ব সনদ দিয়ে কন্যার চিকিৎসার করানো দ্বিধাদ্বন্ধের সাথে লক্ষ্য করি। এখানে দ্বি-মুখিতা উপলব্ধি করবেন যে কেউ!
আমরা জানি সন্তানে জন্য মা বাবা যে কোনো কিছুই করতে পারেন, কারণ সন্তান সবারই প্রিয়! কিন্তু একের পর এক অপরাধ, ধর্ম, দেশ নিয়ে মিথ্যা তথ্য, জালিয়াতি--- সবই হয়ত মেনে নয়ো যায়, কিন্তু এর উদ্দেশ্য যখন চূড়ান্ত বিচারে অনুপ্রবেশকারী হিসাবে ঘোষণা, তখন নিশ্চিতভাবে এখানে একটা ইল মোটিভ থাকতে পারে বলে, দর্শক হিসাবে সন্দেহ করার সুযোগ থাকে।
একটা লোক মুসলিম, যে তার কন্যাকে সত্য কথা বলতে শেখায়, মিথ্যা পরিচয় দিয়ে কন্যাকে হসপিটালে ভর্তি করায়। মারা যাবার পর সন্তানের লাশের ডিসচার্জ লেটার নিতে গিয়ে বাদল চৌধুরীর অনুতাপ প্রকাশ করে নিজেদের "অনুপ্রবেশকারী" ঘোষণা এক সাথে যায় না।
তারপর থানা পুলিশ। এর মাধ্যমে কি ভারতে বহু বাঙালকে অনুপ্রবেশকারী হিসাবে দাবি জনতা পার্টির এজেন্ডার সফল চিত্রায়ন হলো!
লাশটা অবশ্য ফেরৎ পাঠানো হয় বাংলাদেশে। সে সাথে লাশ দাফনের পথে যাওয়ার সময় তপন বাগচীকে তার ইনডিয়া প্রীতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় রূপসার চাচা আনিস। এটাও বাংলাদেশের মানুষের হিন্দুদের প্রতি দুষ্টুমিচ্ছলে বলা কথা। এর সিনেমায় চিত্রায়ন নেতিবাচক ।
সাকুল্যে সিনেমার গল্পটা ঘুরপাক খায় সীমান্ত নিয়ে। সীমান্ত--- মানুষের জীবন বিপন্ন করে, স্বাধীন চলাফেরা আর বাঙালিত্বে অনেক বড় বাধা। এটাই সিনেমার ট্যাগ লাইন।
এ ধরণের সিনেমা আমাদের তিরিশ লাখ বা তারো বেশি শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা, দু'লক্ষ বা তততোধিক নারীর ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত। সে ত্যাগের সহযোগিতা আমরা ইনডিয়ার কাছ থেকে পেয়েছি, সেটি স্বীকার করে নিয়েই বলছি--- এ ধরণের বার্তা, অখন্ড ভারতের আকাঙ্খা , সীমান্তকে কটাক্ষ করার সিনেমা শঙ্খচিল গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।

এত লুটের ভিড়ে জীবনটাই সবচে সস্তা। সব মানুষের জীবনই সস্তা!





গ্রাফ সূত্র: প্রথম আলো

জগতে এত লোক থাকতে থাকলে আমাকেই কেন লিখতে হবে? এ প্রশ্ন  আমার পরিমণ্ডলের মানুষের! কিন্তু নিজেকে আটকাতে পারি না। তাই লিখছি!

সকালে কানটা গরম হয়ে গেলো-- -কারণ একটা খবর। সাত বছরে আত্মসাৎ ৩০ হাজার কোটি টাকা। বিচার হয়নি।  অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলি-  এ টাকা কেউ কারো পকেট থেকে দেবেন না, রাষ্ট্রের এ জনগণ যারা কালো ধোঁয়া গিলে, উটের পেছনে ছুটে, থালা বাসন পরিষ্কার করে-- তাদের উপর দিয়েই  যাবে।

আগে অবশ্য এ সব বুঝতাম না। এখন বুঝি, রাষ্ট্র মাথা পিছু আয়ের হিসাব দ্যায়, কিন্তু ঋণের হিসাব দেয় না। দিনে দিনে শুনি আমাদের শির দাঁড়া খাড়া হচ্ছে, সে খাড়া হওয়া শির দাঁড়া যে লক হয়ে যাচ্ছে , সেটা বোধ করি আমরা বুঝতে শুরু করেছি। তিরিশ হাজার টাকা তো দৃশ্যমান, আরো কত হাজার টাকা গিললো লুটেরারা সেটির হিসাব নাই। অথবা আাছে, আমি-আমরা জানি না।

মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে বাংলাদেশের বিকাশ, কিম্বা মর্জিনা ওরফে কাজের বেটি যে আমাদের এশিয়ান অর্থণীতির উদিয়মান টাইগার বলতেন--- প্রথম দিকে আমি এটা বিশ্বাস করতাম না। বিশ্বাস করুণ আসলেই করতাম না। কারণ আমার জীবন যাত্রার মান বিশ্ববিদ্যালয় হল লাইফে যা ছিল, তার চে কিঞ্চতি বেড়েছে। কোনো কোন ক্ষেত্রে কমেছেও, কিন্তু দেশ মধ্যম আয়ে পৌঁছে গেছে, এটা  আমার কাছে মনে হয়নি, কারণ এখনো তো নগরে যৌনকর্মীর  আয়ের পঞ্চাশ শতাংশ রাজনৈতিক নেতা আর শৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের পকেটে যায়।

পকেটে ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে মানুষকে হয়রানি করার খবর তো পড়েছি ক'দিন আগেও! ক'টা টাকার জন্য আমাদের নিরাপতা্তা রক্ষীরা এ হয়রানিটা করে থাকেন বলে অভিযোগ!  সেখানে এটা আমার বিশ্বাস হবে কেমনে?

তবে এখন বিশ্বাস হচ্ছে, মাত্র তিরিশ হাজার কোটি টাকা লুটেছে। এ আর এমন কি টাকা। আমরা তো পদ্মা সেতু বানাচ্ছি।  বছরের পর বছর ধরে আমাদের তৈরি হচ্ছে ফ্লাইওভার।  ঈদের সময় মহাসড়ক ঠিক করার জন্য সেটি কসরত-হরিলুট, বর্ষা মওসুমে রাস্তায় কেটে আবার ঢালাই করি এবং গলিপথ চিরে ঢুকাচ্ছি প্লাস্টিকের পাইপ!

উড়াল সেতুর নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে, নকশা বদল হচ্ছে, নিম্ন মানের মাল জমা হচ্ছে, লোহা লক্কর পড়ে মানুষের মগজ ছিটকে বেরিয়ে যাচ্ছে--- আমাদের বুকে বালি বাসা বাঁধছে, ইনহেলা আর অ্যাজমার ওষুধ কিনতে কিনতে মানুষের কষ্ট আরো বাড়ছে--- তবুও জীবন মান নির্ধারণের সব সূচেক নাকি আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। শুনে শান্তি!

 রাষ্ট্র কে পরিচালনা করবে, বা কারা কি করবে এটা একান্ত উপরস্তরের ভাবনা। আমরা যারা নিঁচু স্তরে আছি, তাদের শঙ্কা হয়রানি নিয়ে।  আমরা হয়রানির শিকার হতে পারি না! তবুও তাে তাই হচ্ছে।   বাড়ছে মূল্য সংযোগ করের আওতা, সম্পূরক শুল্ক, আয় কর। কমছে জীবনের দাম।  ২০ হাজার টাকায় তো শেষ পর্যন্ত কুমিল্লা জেলা প্রশাসন  জীবনের মূল্য নির্ধারণ করেছে, তনুর পরিবারকে একটা চেক দিয়েছে। আর ধর্ষণের জন্য এক খণ্ড জমি।

এত লুটের ভিড়ে জীবনটাই সবচে সস্তা। সব মানুষের জীবনই সস্তা! আজ যারা ক্ষমতায় আছেন, যারা ক্ষমতার বাইরে আছেন, সবার কাছেই  গরিব মানুষের , অসহায় মানুষের , অরাজতৈকি মানুষের জীবনের মূল্য তু্চ্ছ। একটা জীবন কেড়ে নেয়ার পর যে ভাবে মানুষকে দ্বিধা-বিভক্ত দেখি। তাতে চোখ বুঝলেই এনিমেল প্লানেটের সে সব হিংস্র সিরিজের মত মনে হয়, যেখানে জন্তুরা খবুলে তুলছে অন্য জন্তুর শরীর।

মাঝে মাঝে মনে হয়--- আমি উপযুক্ত নই এ উন্নতির সাথে তাল মেলাতে! আমাকে পালাতে হবে। অবশ্যই! কিন্তু কোথায় পালাবো!। আমি যে এ দেশটাকে ভালোবাসি । আমাকে এখানে থাকতে হবে।।।

আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক : আমার পদক লাগবে কি না, চেক লাগবে কি না,

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য পদক তৈরি করুক,
শুধু আমার জন্য তুলে রাখুক একেকটা সোনালি পদক ।
বাইরে থেকে দেখে সোনা মনে হলেই হবে! ভেতরে সোনার খাদ? সে তো অতি পুরনো 
পদক না পেতে পেতে; আমি মানুষের কথা শুনে এখন ক্লান্ত ।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে  সোনার পদকের সাথে একটা চেক দিক ।  মুলা নিয়ে আমি
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
রাজনীতিকে মুক্তি দিয়েছে কবি -সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক :
আমার পদক লাগবে কি না, চেক লাগবে কি না,
পদকের সাথে  আরও একটা
তেলে ভাজা পদবী লাগবে কি না ।
এঁটো কবিতা,রুমাল-প্রেম আমি নিজেই ডাস্টবিনে ছুড়তে পারি!

আমি বলছি না ভলোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার জন্য পদকের  দরোজা
খুলে দিক । সে দরজা বিম্পি বানিয়েছে কি আম্লীগ।
তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না! কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক : 'চেয়ে পুরস্কার নেবার পর তোমার কেমন লাগছে ?'


দায় মুক্তি ::  এটি একটি প্যারেডি কবিতা। কবি নির্মলেন্দু গুণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক তার লেখা কবিতা 'তোমার চোখ এতো লাল কেন?' অনুসরণ করে লেখা। শুধু মাত্র রসের জন্য তৈরি! কেউ মনো কষ্ট পেলে দুঃখিত। 

আতিউরকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিৎ

ড. আতিউরের প্রতি প্রচণ্ড সহানুভূতি লক্ষ্য করছি । হয়ত এটা ঠিক আছে । তবে আমার ভাবনা এবং জানার সীমাবদ্ধতার কারণে আমি তাকে সমর্থন করতে পারিনি ।

১. কারো মতে মালের কাছে ৪ হাজার কোটি টাকা কিছুই না। ৮ শ কোটি টাকা কেন আমল পেলো।
এটার জবাবটা সোজা , সাইবার এটাকে একসাথে এত টাকা চলে যাওয়ার চে , ডিজিটাল বাংলাদেশের সাইবার সিকিউরিটি কতটা ভঙ্গুর এবং এটা ঠিক করতে ড. আতিউর কতটা অসফল তারই প্রমাণ হলো এই হ্যাকিং!
প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত না  ব্যাংকিং ভাবনায় প্রযুক্তির তড়িৎ সংযুক্তি-সম্প্রসারণ অবশ্যই ভুল ছিল, যেটি হ্যাংকিংয়ের পর তার নেয়া পদক্ষপের বলে খবর থেকে পড়ে সহজেই বোঝা যায়।

২. ড. আতিউর মোটেও মাস্টর নন । তিনি এনজিও ব্যবসায়ী। বিম্পি-জমাত সরকারের শেষ দিকে ঢাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে তিনজন অধ্যাপক নিয়োগ করা হয় , সে সময় 'সুশীল' হিসাবে তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত ।।

৩. আম্লীগের উনি বিরাট কিছু নন । বিরাট কোন অবদান তার নেই । তবে তিনি মেধাবী চতুর । তিনি রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে একটা মোটা বই লিখেছেন , যারা পড়ে থাকবেন তারা জেনেছেন, নিশ্চিতভাবে গ্রন্থটি আনুকল্য প্রত্যাশায় রচিত ।

৪. ড. আতিউর বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ তার সন্তানের মত । সত্য । তবে সন্তান তিনি সঠিকভাবে লালন করতে পারেননি । তাই তিনি সন্তান বিপদে পড়ার পর একটি বাহিনীকে বলেছেন, যাকে সন্দেহ তুলে নিন । অনুমতি লাগবে না । এটা একটি বে আইনি প্রক্রিয়া ।

৫. বিদেশ থেকে টাকা আসার কোড বলেন আর আইটি সার্ভারের সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য ঘটনার পরে তিনি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ডেকে কথা বলেছেন বলে জানালেন । আসলে এটা আগে করলে এ রকম ড্যামেজ নাও হতে পারতো ।

৫. রিজার্ভ বৃদ্ধি সাধারণ এবং অতি সাধারণ একটি ঘটনা । রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ ভালো গেলে এটা আরো বাডতে। আমার জানা মতে, রিজার্ভের মুল টাকা আমাদের প্রবাসীদের আয়। যারা তাদের জীবনেকে বেঁচে দিয়েছে অল্প দামে। তাদের শ্রমের টাকা । এখানে কারো কোন বাহাদুরের ফলানোর কিছু মাই ।

৬. বাংলাদেশ ব্যাংক ড. আতিউরের সময় দৃশ্যমান বিপ্লবী কিছু করেছে হলে মনে পড়ে না ।

৮. অনেকে বলছেন , সরকারের অপছন্দের কারণ হলো তিনি দলের কথা শোনেন নি । আপনাদের নিশ্চয় মনে থাকে ড. ইউনুসকে সরকার ন্যাংটা করার কাজটা  ড. আতিউরকে দিয়েই করিয়েছেন ।


৯. পদত্যাগই যথেষ্ট নয়, তাকে বিচারের মুখামুখি করা দরকার ।


১০. মালের অপরাধও সরকার আমলে নিবে ; এটাও আমরা আশা করি । তবে মাল যেহেতু কোর রাজনৈতিক টিমের কোর মেম্বার, তাই তার রক্ষা পেয়ে যাওয়া বঙ্গীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলেই সম্ভব । তবুও সরকার কিছু একটা করে দেখাতে পারেন । আশায় আছি ।।

ভারাইট্টা :: নগর তোর লাইগা না!



নগরে ভারাইট্টাদের বিপক্ষে  কেবল বাড়িঅলা একা নন; এখন বিচারায়লও যুক্ত হৈলো। পুলিশ এখতিয়ারে বাইরে তথ্য চাইতে পারে!  আজ রোববার আদালত খুইলা কৈছে। 'নিরাপত্তার স্বার্থে' এটা পারে। কার নিরাপত্তা? রাষ্ট্রের ! হতে পারে। রাষ্ট্র এখন ডিজিটাল এবং এনালগ দু'দিক থেকেই  অনিরাপদ অবস্থায় আছে।

বঙ্গীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হরিলুট ডিজিটাল উপাখ্যানের পরে এ নিরাপত্তার বিষয়টি বেশি আলোচিত হবে--- এটাই স্বাভাবিক।  একই ভাবে আইএস নাই কিন্তু জঙ্গী-জিএমবি আছে--- সরকারের এ অবস্থান নিয়ে  মোড়ল-বনাম বঙ্গীয়  সক্কার বাহাদুরের বক্তব্য বৈপরিত্যও  এ ধরণের তথ্য লওয়াকে জায়েজ করবে।

বিদেশ গেলে আমরা কোনো তথ্য-সহায়তা দরকার হৈলে পুলিশের কাছে যাই। দেশে আমরা পুলিশকে সে রকম সহযোগি দেখি না; কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ হতে পারে, তবে সেটি যৌক্তিক বিচেনায় নিশ্চিত কিছু না। কিন্তু পুলিশ তথ্য নিয়ে সন্ত্রাস দমন করবে নাকি হয়রানি করবে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।  আমি এ প্রশ্নটা করছি না! কারণ এখানে প্রশ্ন করলে কেউ আবার বিশেষ কোনো  পক্ষীয় হিসাবে আমাকে সিল দিতে পানে! সে আশঙ্কা থেকে  চুপ থাকাই উত্তম।

নগরে ভারাইট্টা নাগরিকরা যে এখনো  গোনায় আছে, সেটা হঠাৎ করে আমার মনে হলো, জ্যেতির্ময় বড়ুয়ার রিটের পর।  তিনি রিট করে এ তথ্য চাইবার অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। আদালত রুলও দিয়েছে। দিয়ে এটাকে রোববার হালাল বলে ঘোষণা করেছে।

জ্যেতির্ময় বড়ুয়াকে উদ্ধৃত করে বিডিনিউজ জানাচ্ছে,  “ডিএমপি রুলস-২০০৬ অনুসারে সন্ত্রাস দমনে ডিএমপি যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে। এর আলোকে তারা তথ্য সংগ্রহ করছে বলে রিট আবেদনটি আদালত খারিজ করে দিয়েছে।”

'যে কোনো' শব্দটা খুবই মরাত্মক একটা শব্দ। যদিও্ এ নগরে মারত্মক আরো অনেক কিছু ঘটে গেছে, সামনেও ঘটবে সে সবের প্রতিকার আশা করাটাও অনুচিৎ এবং সন্ত্রাস দমনের স্বার্থে বললে-- 'অন্যায়'।

নগরে আসলে মানুষ শখ করে আসে না! শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা, চাকুরী, ক্ষমতা, ডাকাতি, চুরি, রিকশা টানা--- সব কিছুরই কেন্দ্র এ রা্জধানী । এ শহরকে কখনো বিকেন্দ্রীকরণ করা যায়নি, অন্য অর্থে কারো এমন ক্ষমতা হয়নি; এটাকে বিকেন্দ্রীকরণ করবে!  তাই এখানে লোকে আসে, আসতে হয়---   এই কালো ধোঁয়া, বিষাক্ত সিসা, আর বালু বুকের  ভেতর নিয়ে খক খক করে কাশি  দিতে দিতে ইনকাম করা টাকার একটা অংশ বাড়িঅলা, একটা অংশ এনবিআর আর একটা অংশ ডাক্তারে চেম্বারেন জমা করতে করতে ক্লান্ত মানূষগুলো আগামীর স্বপ্ন বোনে।

সেই স্বপ্নের ফানুস আকাশে ওড়ে না। ফুস করে ফুটে যায়। হ্যাকার বেকার চ্যাকার নানা  তরিকার লোকেরা লুটে নেয়, চেটে পুটে খেয়ে সর্বসান্ত্ব করে নেয়ার পর এ ভারাট্টারা এ নগরে মরে পঁচে যায়। তাদের তুলে নেয় একটা এম্বুল্যান্স--- গ্রামের বাড়ির পথে রওয়ানা হয় সেখানে কবর! তারপর আবার নতুন ভারাইট্টা হিসাবে তার সন্তানের জীবন চক্র শুরু। এভাবে--- দিনে দিনে প্রতিদিনে এ নষ্ট নগরে বহু ভারাইট্টার জীবন  মিশে গেলো। কেউ খবর নিলো না!

পুনশ্চ: ধারণা ছিল এ রিট খারিজ হবে। তাই আগেই ফরম পূরণ করে জমা দিয়ে দিয়েছি।  তবে একটা জিনিস খটকা লাগলো--- তিনজনের বেশি লোক বাসায় থাকার তথ্য নাই। আমার অবশ্য আমি ছাড়া ৩ জন পরিবারের সদস্য। বাকি  গরিব মানুষ যারা থাকেন একটা বাসায় বেশি লোক তাদের কী হবে? 

 ওরে কালিয়া, নগর তোর লাইগা না!