কিস্তি-৬ ::চাচা আপনার কে টিকেছে? ও হেসে বলল, ভাস্তে আমি নিজেই!

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি- আঁখ, মুড়ির আয়োজন। ব্যাপার খানা বোঝার চেষ্টার আগে খাওয়া শুরু করলাম। আমরা চারজন এক রুমে থাকছি। একে হোস্টেলের নীচতলার আমাদের তাকার রুমটা বড়ই। সেখানে তরিকের বাড়ি থেকে এ সব খাবার এসেছে। কৃষক পরিবারের ছেলে তরিকদের জমিতেই এ সব চাষবাস হয়। সেখান থেকে ঢাকা প্রবাসী ছেলের জন্য মা পরম যত্নে গুছিয়ে পিতার হাতে তুলে দেন। তিনি ঢাকায় ছেলেকে দেখতে আসার পথেই এ নিয়ে আসেন। যেহেতু আমরা সংখ্যায় চার। তাই এখানে সবার জন্যই আনা হয়। খাওয়া শেষে তরিকের আব্বার সাথে দেখা। বললেন, বাবা কেমন আছেন? কুশল বিনিময় হলো, গ্রামের সহজ সরল মানুষের মুখ। 

ফরিদপুরে পদ্মার পাড়ে ওদের বাড়ি। তরিকের বিয়ের সময় সেখানে যাওয়া হয়েছিল বছয় দুয়েক আগে। তার আগে যাওয়া হয়নি। তরিকের পর ওর পরিবারের অন্যরাও ঢাকায় প্রায় আসত। ওর বড় ভাই যাকে ওরা মিয়া ভাই বলে, ছোট ভাই আসতো। এ রকম সবার। কেবল আমার কেউ আসে না। বাবা ছাড়া। পরিবারের যেহেতু আমিই বড়, তাই এখানে কারো আসার সুযোগও নেই। আমাদের বকশিবাজারের জীবনে তরিককে খুবই মনে রাখতে হবে, কারণ ও খায় প্রচুর, পড়ে প্রচুর এবং ওর লম্বা দাড়ি। ওকে যে কেউ দেখেই মনে করবে বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। 
ওর একটা মজার ঘটনা বলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় টেকার পর লাফিয়ে উঠলো আনন্দে। পাশ থেকে একজন বললো, চাচা আপনার কে টিকেছে? ও হেসে বলল, ভাস্তে আমি নিজেই! প্রশ্ন কর্তার চক্ষু তো ছানাবড়া! বলে কি? 

তরিক ছাড়াও আমার রুমের বাসিন্দা ছিল জুয়েল। ইসলামী ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা এখন। পড়তো জার্নালিজমে। ফরিদ এখন সম্ভবত প্রবাসী। এখানে থাকার সুবাধে অনেকের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠলো। এর মধ্যে জগা বাবুতে পড়তো বরিশালের জলিল। যাকে আমি জইল্যা বলেই ডাকতাম। ও বিষয়টা দারুণ এনজয় করতো। আর মাসুম। গোপালগঞ্জের পোলা। এখন সরকারি কোনো একটা ব্যাংকে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তর জন্য ওপর পড়া আমার এখনো চোখে ভাসে। কী যে পড়তো, সারা দিন, সবই মুখস্থ, তবুও ওর হলোনা। আমাদের খুবই মন খারাপ হতো। কিন্তু বাস্তবতা না মেনে তো উপায় নেই। 

এরপর উঠলাম ঢাবি হলে... তা নিয়ে পরের কিস্তি। 

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৪৪

কোন মন্তব্য নেই: