কিস্তি-৩৩ ::লাশ রাস্তায় পড়ে থাকবে কুত্তাও ছোঁবে না

ক্যাম্পাসে হুল্লোড় পড়ে গেলা একটা সিডি নিয়ে। জগন্নাথ হলে এর সূচনা। তলে তলে এ খবর বঙ্গবন্ধু হলে চলে এলা। সবাই সিডি দেখছে, খুব মজা করে। কিন্তু এটা কোনো খবর না। আসল খবর হলো ২০০২ সালে বাংলাদেশী যুগলের এ রকম একটি সিডি । আরো জানা গেলো এ সিডির নায়ক ছাত্রলীগের বঙ্গবন্ধু হলের নেতা রোকন। 
প্রথম দুদিন খবরটা পাত্তা দিলাম না। তৃতীয় দিন ছাত্রলীগের এক নেতা আমাকে সিডির সন্ধান দিলেন । জানালেন ছাত্রলীগ নেতা রোকন তার প্রেমিকার সাথে শারিরীক সম্পর্ক করে তার ভিডিও করেছেন। সেটি লিকেজ হয়েছে। 
আমি এ খবরটি মতি ভাইকে জানালাম। মতি ভাই বললেন, নিউজ করেন, সাথে একটা সিডি যোগাড় করেন। আমি নিউজটা দিয়ে সন্ধ্যায় বের হলাম সিডির জন্য। এত দিন শুনছি সবার কাছেই আছে। আমি চাইতেই সবাই চুপসে গেলো। 
অবশেষে নিউ মার্কেটের উল্টো দিকে রাফিন প্লাজার একটি দোকান থেকে সিডি সংগ্রহ করে রাতে মানবজমিন অফিসে গেলাম। সেখান থেকে একটি স্ক্রিণশর্ট বের করে ছাপানো হলো। খবরটি প্রথম পৃষ্ঠার নিচের দিকে গেলো। পরের দিন মতি ভাই বললেন, ভালো করে ফলোআপ করেন। আমি যথারীতি কাজে নেমে পড়লাম। রোকনের সব খবর সংগ্রহ করতে লাগলাম, আর সেটি প্রকাশ শুরু হলো। আমার জানা ছিল না সে সময় বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ বিএনপি সরকারের সময় একটি ধর্ষণ বিরোধী সমাবেশের ডাক দিয়েছে। কাকতালীয়ভাবে সমাবেশের চার/ পাঁচ দিন আগে এ রিপোর্ট মানবজমিন ছাপা শুরু করলো। 
আমার সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল রোকন বঙ্গবন্ধু হলের স্টুডেন্ট ছিল। সে সুবাধে আমার তথ্য পেতে সমস্যা হলো না। রোকনের এক সময়কার সহযোগিরা আমাকে সবচেয়ে বেশি হেল্প করেছেন। আমি খবরের পর খবর করে যাচ্ছি। সর্বশেষে সিডির একটি পোস্টমর্টেমও করা হয়েছিল, সেটি আমি ও মাসুদুল আলম তুষার ভাই দুজনে মিলে করেছিলাম। এটি যেদিন লেখা হচ্ছিল সেদিন ছাত্রলীগের সভাপতি বাহাদুর বেপারী আমাকে ফোন করলেন। মতি ভাই, আমি, ফারাবী ভাই, সারোয়ার ভা্ই, জাহেদ ভাই সবাই এক টেবিলে বসে এ রিপোর্ট নিযে আলাপ করছিলাম। এ সময় ফোনটা করেন বাহাদুর ভাই। তিনি খুবই ক্ষিপ্ত হলেন। এবং সাধারণত তার এ রকম ব্যবহার হয় না, তিনি যে রকম ব্যবহার আমার সাথে করলেন। হুমকি দিলেন আমাকে। বললেন, লাশ রাস্তায় পড়ে থাকবে কুত্তাও ছোঁবে না। আমি এতে ভয় পাই না। কারণ সাংবাদিকতা করতে এসে ভয় পেলে চলবে না। আমি শুধু বললাম, ভাই মিথ্যা কিছু লিখছি কিনা বলেন। মতি ভাই সহ সবাই অবাক। বাহাদুর ভাইয়ের সুনাম সবার কাছে প্রায় করতাম। তাই তারা বললেন, এ কি হলো। মতি ভাই উঠে গেলেন। কিছুক্ষন পরে ফিরে এলেন। বললেন, নিউজ করেন। পরে মতি ভাই নিজেই নিউজটা লিখতে বললেন, তুষার ভাইকে। সে খবরটি প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপাও হলো। 
পরের দিন ওই খবর দেখে সম্রাট ভাই বললেন, তাকে কেন জানানো হলো না। এ খবর ঠিক না। উনি বাহাদুর ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে আরো কিছু কথা বললেন। যেখানে আমার সম্পাদক সাক্ষী। তার সামনে লাউড স্পিকারে এ হুমকি শোনা গেছে, এটাকে সম্রাট ভাই (বর্তমানে এটিএন নিউজে) বিশ্বাস করতে চাইলেন না। তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। 
তবে এখানে জানিয়ে রাখি, হুমকি দেয়ার ঘন্টাখানেকের মাথায় বাহাদুর ভাই আমাকে আবার ফোন করলেন। বললেন, সরি। মাথা ঠিক নাই। ধর্ষণ বিরোধী একটা সমাবেশ ডাক দিছিলাম। তোমার রিপোর্টের কারণে এটা হইতেছে না। তাই মাথা ঠিক ছিল না। এ জন্য মাথার গরম ছিল, কি বলতে কি বলেছি, কিছু মনে করো না। 
বাহাদুর ভাই এভাবে বললে, আর রেগে থাকা যায় না। পরে জানলাম সে সময়কার ছাত্র বিষয়ক দায়িত্বে থাকা ওবায়দুল কাদের ভাইকে মতিভাই ফোন করেছিলেন। কাদের ভাই সম্ভবত বাহাদুর ভাইকে সরি বলতে বলেছিলেন। সে যাই হোক।
বাহাদুর ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক বরাবরই ভালো ছিল। ছাত্রদলের বিরুদ্ধে আমার অব্যাহত রিপোর্টিং এর কারণে তারা সব সময় আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন। ছাত্রলীগে আমার কাছের লোকজন আমাকে এ রিপোর্টের জন্য বাহবা দিয়েছেন। ছাত্রলীগ পরে অবশ্য রোকনের বিচার দাবি করে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়। তবে তার কোনো বিচার হয়নি। হবেও না। এটাই নিশ্চিত। 
টিকা:১: রোকনের রিপোর্ট করতে গিয়ে তার ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু হলে সমস্যায় পড়ে ছিলাম। পরে আমার বন্ধু ও হলের স্টাফদের সহায়তায় তা উদ্ধার করি। সে সময় হলের প্রভোস্ট ছিলেন নীল দলের জার্নালিজমের অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান। তার কাছে ছবিটি নেয়ার জন্য অনুমতি চাইলে তিনি ছবিটি আমাকে যেন না দেয়া হয় তার সব ব্যবস্থা করলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ছবিটি উদ্ধার করতে পেরেছিলাম, সেটি ছাপাও হয়েছিল।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:২০

কোন মন্তব্য নেই: