কিস্তি ২৯ ::জবরদস্তিমূলকভাবে অনেক শিক্ষক নারী সঙ্গ উপভোগ করতে চান

শিক্ষকরা পিতৃ তুল্য। এ কথা আমরা ছোটবেলায় শুনে এসেছি। তবে কিছু শিক্ষক তাদের সে সম্মান ধরে রাখতে পারেননি। এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় এসে দেখলাম। নারীর শরীরের ভাগ সবাই চান, কেউ পান, কেউ পান না বলে আফসোসস করেন। কিন্তু জবরদস্তিমূলকভাবে অনেকে সে সঙ্গ উপভোগ করতে চান। আর সেখানে আমার আপত্তি। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের সমাজ বিজ্ঞানের একজন সাবেক শিক্ষক, যিনি সুদর্শনও বটে, তার হাতে অনেক ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে তদন্তও হয়েছে। তবে সব কথার শেষ কথা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর প্রতি লোভ করা , কিংবা তাকে নিষ্পেষণ করার একটা অলিখিত অধিকারের কথা আমরা মেনে নেই। সে জন্য এর বিচার হলেও তা সাময়িক। 
সমাজ বিজ্ঞানের ওই শিক্ষকের তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো শাস্তি হয়নি। এ নিয়ে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক আলোচনা আছে। বলছি ২০০০ সালের দিকের কথা।
২০০২ ও ২০০৩ সালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেক যৌনাচার সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছে। মেঘলা দিনের এক দুপুরে জার্নালিজম ডিপার্টমেন্টের এক অধ্যাপক ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছেন। আরো কিছু করার চেষ্টা করেছেন। মেয়েটি লিখিতভাবে সে সময় এটা ভিসি স্যারকে জানান। এ রিপোর্ট লিখতে বসলে ওই ছাত্রীর সহপাঠি আমার বন্ধু ও সে সময়কার তুখোড় সাংবাদিক ইশতিয়াক(বর্তমানে বাংলানিউজরে স্পেশাল করেসপনডেন্ট) ও মোশতাক (এখন প্রথম আলোতে ) বলেছিল, মেয়েটিরও সমস্যা আছে। পরে সাংবাদিক সমিতির সদস্য হওয়ো একজন সদস্যের সাথেও তার সম্পর্কের কথা জানা যায়। 
তাই প্রথম দিন আমি রিপোর্টটি দুপক্ষকে দায়ি করে করি। কারণ আমার বন্ধু সাংবাদিকরা বলেছির, নম্বরের জন্য এমনটা ঘটতে পারে। ঘটতে পারে মানে ঘটে। অনেক ছাত্রীদের না শুলে নম্বর বের হয়না স্যারের হাত থেকে। এমন অনেক স্যার সে সময় যেমন ছিলেন, এখনো আছেন। 
কিন্তু পরের দিন ওই অধ্যাপক নিজেই এর প্রতিবাদ করেন। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে একটা ষড়যন্ত্র হিসাবে উল্লেখ করেন। পরে আমি নিপীড়িত ছাত্রীটির পরিবারের সাথে কথা বলি এবং ভিসি স্যারের দপ্তরে জমা হওয়া অভিযোগের একখানা কপি হাতে পাই। সেটি দিয়ে রিপোর্ট করা শুরু করি। 
মানবজমিন থেকে আমাকে সাযযাদ কাদির ভাই বললেন, এ ঘটনার পেছনে লেগে থাকতে হবে। শেষ দেখা চাই। আমারো মনে হযেছে একটা ঘটনার দৃষ্টান্তশূলক শাস্তি হলে অন্য শিক্ষকরা এখান থেকে সরে আসবেন। সে সময় এ ঘটনার তদন্ত করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক সৈয়দ রাশিদুল হাসান। 
দল মত নির্বিশেষে সবার কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ভালো। 
আমি নিবিড়ভাবে এ নিউজ ফলো করছি। শেষ পর্যন্ত জার্নালিজমের ওই অধ্যাপকের শাস্তি হয়েছে। কিন্তু সেটি উল্লেখ করারর মত নয়। কারণ এখানেও পুরুষতান্ত্রকি দৃষ্টিভঙ্গি। যদিও জার্নালিজম ডিপার্টমেন্টে নারীবাদী অনেক শিক্ষক রয়েছেন, কাউকে এ নিয়ে তেমন কথা বলতে দেখলাম না। 
সে সময় যেটুকু সহযোগিতা করেছিলেন, তা আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী স্যার। 
জার্নালিজম ডিপার্টমেন্টে ১ জন বাদে সবাই আওয়ামী লীগ মনা টিচার। একজন যার কথা বলছি তিনি মান্নান স্যার, ধরে নেয়া হয় তিনি সাদা দল। মানে বিএনপি। আসলে উনি কি, তা নিজেই জানতেন না। 
তবে নীল দলের এ ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকরা আবার দুভাগে বিভক্ত। তাতে কিছু যায় আসে না। তবে এখানে যৌনাচারে লিপ্ত ছিলেন আরো দু একজন শিক্ষক। তাদের একজন ক্ষুদ্র জাতি সত্ত্বা নিয়ে কাজ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের একজন নেতা তার নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন, তিনি নাকি তাদের নারীদের ভোগ করেন। একই অভিযোগ তিনি করেছেন একই বিষয়ে কাজ করা ইতিহাসের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। এস অদ্যাক্ষরের ওই ক্ষুদ্র জাতি সত্ত্বার বৃহত নেতা আমাকে বলেছিলেন, 'এরা গবেষণার নামে ভণ্ডামি করে, কচি মাল খাওয়ার ধান্ধা।' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ থেকে পাস করে যাওয়া ওই নেতা কতটা কষ্টে এ কথা বলেছেন, সেটি উপলব্ধি করতে আমাকে আরো সময় নিতে হয়েছে। 
ছাত্রীদের প্রতি আরো অনেক শিক্ষকের সমস্যা ছিল। তবে অনেকে এখন 'মরহুম'। তাই তাদের বিষয়ে বলাটা ঠিক হবে না। প্রাণী বিদ্যা ডিপার্টমেন্টর একজন অধ্যাপক তার এক ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে ব্যাপক ঝামেলা পাকিয়েছিলেন। ওই ছাত্রী লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয কর্তৃপক্ষকে জানালে আমি খবর পাই। চিঠির একটি কপিও পেয়েছিলাম। তাতে যে বর্ণণা দেয়া তা শুনলে শিক্ষকদের প্রতি কারো আর আস্থা থাকবে না। 
ছাত্রীদের সাথে যৌনাচরণ বা নিপীড়নের তালিকাতে ফার্সি ডিপার্টমেন্টও ছিল। অতি অপরিচিত এ ডিপার্টমেন্টের এক অধ্যাপকের বৌ তার স্বামীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু এ সব ঘটনার সঠিক সুরাহা হয়নি। 
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষকরা এ ধরণের আচরণে জড়িয়ে পড়েছেন, এর প্রমাণ অনেকের কাছেই আছে।
বিশ্বববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জ্ঞানী মানুষ তাই প্রতিভার বিকৃতি হিসাবে এ সব ক্ষমা করে দেয়া হয়। কিন্তু এ সব ক্ষমা কিংবা বিচার ছাড়া দায় মুক্তির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ঘটনা বাড়ছে বৈ কমছে না। বিস্তারিত আর কিছু বলতে চাই না। এ পর্বটি লিখতাম না। কিন্তু অনেকেই বলেছেন, ছাত্রদের টা লিখলে, শিক্ষকরা বাদ যাবে কেন? তাইতো। বাদ যাবে কেন? তাই স্বল্প পরিসরে কিছু লিখলাম। পৃথিবী বড়ই বিচিত্র, অভিজ্ঞতা আরো বিচিত্র এবং নির্মম। 
সামনের পর্বে অন্য গল্প। আপাতত শরীর বিষয়ক গদ্য বাদ। 


১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:৫১

কোন মন্তব্য নেই: