কিস্তি -৩৬ :শত চাপ উপেক্ষা করেও তিনি অবিরাম লিখে যাচ্ছেন!

মতি ভাই, মানে মতিউর রহমান চৌধুরী। আপাদমস্তক একজন পেশাদার সাংবাদিক। বিএনপির প্রতি তার সফট কর্ণার আছে। কিন্তু রিপোর্ট যদি সত্য ও সঠিক হয়, তথ্য যদি ঠিক থাকে সে রিপোর্ট আটকায় না। অন্তত মানবজমিনে আমার তিন বছরের কর্মকালে আমি এমনটা দেখিনি। আমি নিজেও মতি ভাইয়ের মতাদর্শে বিশ্বাসী।

বাংলাদেশে যে ক'জন সাংবাদিককে শ্রদ্ধার সাথে বিবেচনায় আনি মতি ভাই নাম্বার ওয়ান। শত চাপ উপেক্ষা করেও তিনি অবিরাম লিখে যাচ্ছেন। তার লেখার একজন ভক্ত আমি। ছোট বেলা থেকে আমার স্বভাব- যে কারো লেখা হাতের কাছেই পেলে পড়ে ফেলা। এ ক্ষেত্রে আমি কোনো চয়েস রাখি না। কারণ হলো, একজন খারাপ লেখকও একটা ভালো লেখা উপহার দিতে পারেন।আর না পড়ে কারো বিষয়ে মন্তব্য করাটা আমার পছন্দ নয়। আমি যে ক'জন মানুষের লেখা অনুসরণ করি তাদের মধ্যে মতি ভাই অন্যতম। তার লেখা শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যাবে না।উনি নামে লিখুন, আরি বেনামে লিখুন পড়তে বসলে লেখার স্টাইল দেখে আমি বুঝতে পারি। তবে মতি ভাই ভালো লেখেন, আমি সে কথা তার কাগজে চাকুরি করার সময় কোনো দিনই বলিনি। কারণ কিছু নয়, আমার আসলে কাউকে সরাসরি প্রশংসা করতে ভালো লাগে না। অন্যের কাছে বলি, অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করি। তবে ইদানিং পাবলিক রিলেশনের কাজ করতে গিয়ে অনেকের অনেক প্রশংসা সামনে করতে হয়। কারণ এত অনেকে বেশ খুশীই হন। আবার অনেকে বেজার হওয়ার ভান করলেও খুশী যে হন সেটি আমার বুঝতে অসুবিধে হয় না। প্রশংষা পেলে কে না খুশী হয়, আমি নিজেও হই! হা হা হা। 
মতি ভাই মানবমজিনের প্রধান সম্পাদক ছাড়াও ভয়েস অব আমেরিকা রিপোর্টার। মানবজমিনে বিশ্ববিদ্যালয রিপোর্টার থাকার সুবাধে ভয়েস অব আমেরিকার রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা কারার সুযোগ আমার হয়েছে। তিনি অত্যন্ত সহযোগি একজন মানুষ। আমার অনেক রিপোর্ট তিনি দেখে দিতেন। আমি খুবই কৃতজ্ঞ যে তার মত একজন মানুষ এখনো আমার মত অতিশয় ছোট একজন রিপোর্টারকে মনে রেখেছেন। 
মতি ভাই সাহসী মানুষ। বয়স তাকে হার মানাতে পারেনি, পারার কথাও নয়, নিউজই তার নেশা। তাকে রাজনীতির সুতোয় বাঁধা যাবে না। দেশের স্বার্থে তাকে আমি সব সময় আপস হীন দেখেছি।মানব জমিনে মতি ভাই রিপোর্টারদের এক বসায় অন্তত ৫০ টা আইডিয়া দিতে পারতেন। এবং সে সব রিপোর্ট ছিল পড়ার মত। আমার সাংবাদিকতা জীবনে পরম সৌভাগ্য তার মত একজনের সাতে কাজ করতে পেরেছি। মতি ভাই এখনো বলেন, যে কোনো সময় তার কাগজে আমার জন্য পথ খোলা। সেটি উনি না বললেও আমি জানি। আমি একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেখান থেকে চলে এসেছিলাম। এখনো আমার মন মানবজমিনে পড়ে থাকে। এর সব চেয়ে বড় কারণ আমাকে সাংবাদিক হিসাবে যারা চিনেন তার পুরো কৃতিত্বটাই মানবজমিনের। ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অনেক আলোচিত রিপোর্ট করার সুযোগ আমার হয়েছে। সব ধরণের রিপোর্ট করে রিপোর্টিং শেখার একটা অনন্য সুযোগ আমি এখানে পেয়েছি। তাই এখানকার কথা একটু বেশি করেই বলতে হবে, কারণ আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্টে ছিল মানবজমিন। 
ব্রডশিট কাগজে আমি এর আগে কাজ করেছিলাম, সেটি প্রথম আলোতে। সেখানেও আমার আলোচিত রিপোর্ট ছিল। বিশেষ করে বেগম বাজার শাহী জামে মসজিদের জায়গা দখল করেছিলেন সে সময়কার লালবাগ এলাকার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি সেলিম। সে জমি এখনো উদ্ধার হয়নি। সেখানকার দখলদারিত্ব নিয়ে আমি একটি প্রতিবেদন করার পর কোটি টাকার মানহানির হুমকি দিয়েছিলেন এমপি সাহেব। কিন্তু আমার কাছে সব ডকুমেন্ট থাকায় শেষ পর্যন্ত এমপি সাহেব হালে পানি পাননি। তবে প্রথম আলো তার একটা বক্তব্য পরে প্রতিবাদ আকারে ছাপিয়েছে। এতে আমার কোনো ক্ষোভ বিক্ষোভ নেই। তবে প্রথম আলোর ঢাকায় থাকি পাতাটা বন্ধ না হলে আমার মানবজমিনে আসা হতো না। মানব জমিনে আসার গল্পটা আপনাদের আগেই শুনিয়েছি।

সামনের কয়েক পর্বে ঢাকা বিশ্বববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির রাজনীতি নিয়ে কথা হবে , আশা করি।

১৬ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:৩৭

কোন মন্তব্য নেই: