কিস্তি-১৬ ::কত জন যে মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য কাইত হন!

বিনোদন রিপোর্টার হিসাবে আমার একটা বাড়তি দায়িত্ব ছিল, সেটি হলো প্রতি সপ্তাহে যে সব নতুন গানের ক্যাসেট বাজারে আসে তার একটা রিভিউ তৈয়ার করা। আমি সে সময় ব্শ্বিসাহিত্য কেন্দ্রের আয়েজনে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের একটা অনুষ্ঠানে প্রায় যেতাম। এতে করে আমার মধ্যে একটা ভিমরুতি ধরেছিল, ক্ল্যাসিক্যাল ধাঁচের গান না হলে আমার ভালো লাগতো না। 
কিন্তু সে সময় কেবল বাজারে উঠতি শিল্পীদের আনা গোনা। পাটুয়াটুলীতে সাউন্ডটেক, সঙ্গীতাসহ বিভিন্ন ক্যাসেট কোম্পানির অফিসে যেতাম ক্যাসেট আনতে। একবার সঙ্গীতা থেকে বলা হলো-ভাই নতুন একজন শিল্পী আসছে তার একটা ভালো নিউজ করে দিতে হবে। যেহেতু তারা আমাকে অনেক শিল্পীর নম্বর দিয়ে হেল্প করেছে, তাই এ রিকোয়েস্ট রাখতে হবে। কিন্তু ক্যাসেটটা না শুনে আমি কথা দিতে পারলাম না।
সেখানে তারেক ভাই ছিলেন, আমাকে মিতা বলে ডাকতেন। তার কাছেই শিল্পীর কয়েক খানা রেডিমেট ছবিও ছিল। সেখান থেকে বাছাই করে কয়খান দিলেন। বললেন, ভাই কইরে দিয়েন। বললাম, ঠিক আছে, দেখবো। পরের কোনো এক সপ্তাহে শিল্পীকে ফোন করলাম। ইস্কাটনে বাসা। গানের গলা খারাপ না । কিন্তু এ একখান ক্যাসেট বের করতে তাকে অনেক জনের সাথে কাইত হতে হয়েছে, জেনে আমি খুবই মর্মাহত হলাম। হেসে হেসে কথা বলেন। আমাকে প্রায় অফিসে ফোন করে আলাপ করতেন। একটা নিউজও করে দিয়েছিলাম। বড় কোনো কভারেজের কথা চিন্তা করতে পারিনি, কাইত হওয়া লোকদের দলভূক্ত হওয়ার ভয়ে। এ রকম কত জন যে মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য কাইত হতেন, সেটা আমি আরো পরে বেশি জেনেছিলাম। বিশেষ করে সিনেমা পাড়ায় যাওয়ার পরে।
সিনেমায় অভিনয় করতে হলে নাকি এসব লাগে। সেটা নিয়ে পরের একটা কিস্তি লিখবো। তবে গানের শিল্পীদের এ ধরণের সমস্যা আমাকে পীড়া দিয়েছিল।
আমার নির্বাহি সম্পাদক আজিজ ভাই গানের লোক, ছায়ানটে গান শিখতেন। একদিন বললেন, ক্ল্যাসিক্যাল ধারার শিল্পীদের নিয়া স্টোরি করেন। কিন্তু আমার তখন অল্প বষয়। ব্যান্ডের গান বেশি ভালো লাগে। বিশেষ করে জেমসের। তাই জেমসকে একদিন ফোন করে বললাম, ইনটারভিউ লাগবে। বললেন, প্রশ্ন পাঠিয়ে দাও। উত্তর লিখে দেবো। প্রশ্ন পছন্দ না হলে কিন্তু উত্তর পাবানা। এ শর্তে আমি রাজি। 
তার এলিফ্যান্ট রোড়ের স্টুডিওতে প্রশ্ন পৌছে দিলাম। দুদিন পরে জেমস ভাই ফোন দিয়া বললেন, উত্তর রেডি নিয়া যাও। আর দেখা কইরা যাইও। গিয়ে দেখলাম উনি খুব ব্যস্ত। এর মধ্যে হাত বাড়িয়ে করমর্দন করলেন। বললেন, তুমি আমার অনেক গান শুনেছো। প্রশ্ন পড়ে বুঝতে পারলাম। আমি চুপ করে থাকলাম। জেমস ভাই বললো, সঙ্গীতের দুর্দিন শুরু হইছে। ব্যাপার না। একটা সময় সব ঠিক হইয়া যাইবো। যাও, ভালো থাইকো। যোগাযোগ রাইখো। 

পরের কিস্তি সিনেমার গল্প

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:০০

কোন মন্তব্য নেই: