কিস্তি -১৩ ::'ভাই, ভাবি কিন্তু এখনো ড্রেস চেঞ্জ করে নাই। আপনার অপেক্ষা।'

মিল্টন এসে আমার কানে কানে বললো, 'ভাই, ভাবি কিন্তু এখনো ড্রেস চেঞ্জ করে নাই। আপনার অপেক্ষা।'আমি হাসলাম। সুইটির মা ভাবির কথা হচ্ছে। তিনি আমাদের সাথে আছেন কয়েক মাস। 
সেজে গুজে তিনি বাইরে গেলে আমরা ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এসে গল্প করে যান। কেমন লাগছে জানতে চান! বাংলা সিনেমা দেখার সুবাদে সুইটির মা ভাবিকে খারাপ লাগে না। ওজনদার মহিলা। কিউট কিউট একটা ভাব আছে চেহারায়। আমরা বিষয়টা এনজয় করতাম। একজন আরেকজনকে খোঁচাতাম। ভাবির সাথে আমাদের ভাব ছিল-বেশ। সবচেয়ে বেশি ছিল মিজানের সাথে। তারপর মিল্টন । বড়দের তিনি খুব একটা পাত্তা দিতেন না। ভাবির একমাত্র কন্যা সুইটি সবার আদরের। তাই মেসের সবাইকে ভাবি ভালো জানতেন। 

এখন সুইটি এসএসসি করে ফেলেছে। ওর একটা ছোট ভাইও আছে। মেসে আসার পর ভাবির এই বাচ্চা ফয়দা হয়। সেটা নিয়ে আমাদের সবার মাঝে আনন্দ ছিল। ভাবিরা তিনবোন। তাদের মধ্যে তিনিই একমাত্র অবস্থা সম্পন্ন। মুন্সীগঞ্জে তাদের বাড়ি। বাসায় তিনি তারচেয়ে সুন্দরী কাউকে সহ্য করতেন না। বাড়িঅলার তন্বী দু কন্যা এখানে উকি ঝুঁকি মারলে তিনি ক্ষেপে যেতেন। আমাদের সর্বশেষ ঠিক করা বুয়া তারচেয়ে দেখতে ভালো এবং রান্নায় পারদর্শী তিনি এটা মানতে চাইলেন না। একদিন এসে বললেন, তারেক এই বুয়া বিদায় করো। আমি তোমাদের জন্য বুয়া ঠিক করে দিচ্ছি। যেহেতু তিনি ভাবি, তাই তার কথা শুনতে হলো। সবাই বললো, ভাবির সাথে ঝামেলার দরকার নেই। 

যথারীতি বুয়া পাওয়া গেলো না। ক'দিন উনি রান্না করে দিলেন। তারপর কয়েকদিন পর উনার ছোটবোন রান্না করে দিলো। এভাবেই ভালোই চলছিলো। তখন আমাদের ভাঙনের পালা। হলে ওঠার তোড়জোড়। 

ভাবি হিন্দিতে পারদর্শী। সিরিয়াল দেখে জিনিসপত্তর কিনে, সাজগোজ করেন। মিল্টন ও মিজান দুজন হিন্দি সিনেমা টিনেমা দেখে। ওদের সাথে ভাবি এ সব নিয়ে আলাপ করে, আমি নীরব দর্শক। কারণ আমি বাংলা সিনেমা ও নাটকের লোক। তাই এ নিয়ে আমার কোনো কথা বলার থাকে না। 

সুইটির আব্বা সাইফুল ভাই পুরনো ঢাকার মানুষ। কিন্তু বউ নিয়ে কেন যেন বাসায় সবার সাথে বনিবনা হয় না, তাই তিনি আমাদের মেসের একটা রুম নিয়া থাকেন। একদিন কথায় কথায় জানালেন নিজের বাড়ি থাকতেও বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার কথা। সব কথা একান্তই ব্যক্তিগত, তাই শেযার করা গেলো না। এর মধ্যে সরকার পাল্টে গেলো। আমি ফের হলে ওঠার জন্য তোজজোড় শুরু করলাম। শরণাপন্ন হলাম এক বড় ভাইয়ের । 

তবে তার আগে নায়ক নায়িকাদের নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতার গল্প শোনাব। পরের দু তিন পর্ব তাদের নিয়ে।


৩১ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৫০

কিস্তি-১২ মেসের সন্ধানে

মহিলা গলা নিচু করে বললেন, সেও এখানে থাকে। আমি মাথা মুন্ডু কিছু বুঝলাম না। একটা রুম। এখানে একজন ঢাকা মেডিকেল পড়ুয়া ছাত্র থাকেন। আরেকজন লাগবে। তার রুমে। আবার একই রুমে কাজের মহিলা থাকে। 
আমি কিছুটা বিস্মিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস কলাম, মানে? মহিলা আমার বোকামি দেখে হেসে দিলেন। আজিমপুর কবর স্থানের গেটের উল্টো দিকের ওই একতলা বাড়িতে আমি আর দ্বিতীয়বার যাইনি। এতটা নিম্ন রুচি আমার নয় যে, কাজের মহিলা নিয়ে ডাক্তার বেটার মত আমিও থাকব! 
পরে খোঁজাখুঁজি করে একটা মেস পাওয়া গেলো- ললিত মোহন দাস লেনে। এক আইনজীবীর বাড়ির চারতলা। মেস করার জন্যই মনে হয় আলাদা আলাদা চারটা রুম নিয়ে চতুর্থ তলা। সেখানে গিয়ে পরিচয় ঘটে শফিক ভাইয়ের সাথে। সিএ করছেন রহমান রহমান হকে। ভালো ছাত্র। গোপালগঞ্জে বাড়ি। কেবল একটাই সমস্যা-রাগ বেশি। কিছু হলেই বটি নিয়া কোপাতে চান। আমি অবশ্য দেখিণি। কেবল শুনেছি। যেহেতু আমি বেশির ভাগ সময় মেসের বাইরে থাকি। তবে শফিক ভাই একদিন বললেন, ঢাকা কলেজের মান্নান নাকি বুয়াকে কুপ্রস্তাব দিযেছে। তাই তাকে খেদিয়ে দেয়া হলো। এত সঙ্কটের মধ্যে বুয়া নির্বাচনের দায়িত্বটা আমি নিলাম। ভালো একটা বুয়াটা পেয়েও গেলাম। পেশাদার নন, উনার স্বামী মারা যাওয়ার পর ঢাকায় আসেন। স্বামী যার বাড়িতে কাজ করতেন সেই বাড়িতে কাজ করেন। ভদ্র মহিলা ভালোই ছিলেন। কিন্তু আমাদের সাথে একটা ফ্যামিলি থাকতো, সেই ফ্যামিলির ভাবির আবার আমাদের বুয়াকে পছন্দ না। তা নিয়ে রাজ্যের ঝামেলা। তবুও এতে আমরা গা করি না। 
মেস লাইফ খারাপ না। বেড়িবাঁধ ও পোস্টঅফিসের পাশের বাজার থেকে কেনাকাটা করে আনি, উনি রেঁধে দেন। সকালে ঘিয়ে ভাজা পরোটা, মাছ মাংসের ছড়াছড়ির কারণে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ- সবাইকে ফতুর করার বুগিদ্ধ করেছি। কেবল শফিক ভাই রিপন ভাই ও মিল্টন কিছু বলে না। 

এখানে আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিই। আমার সম সাময়িক কেউ ছিল না। পরে অবশ্য শফিক ভাইয়ের কাজিন মিল্টন আসলো। ও ঢাবিতে পড়ে। তাই আমি আর ও এক রুমে উঠলাম। পরে ওর বন্ধু মিজান। মানিকগঞ্জের পোলা। আমরা খুব মজা করতাম। মিজান প্রায় একটা গান গাইতো... ‌‌'যমুনার জল ঘোলা কইরা... ও সখি বলি গো তোমায়.. কাঞ্চা বয়সে মোর আগুন জ্বলে গায়।'

হা হা হা । এভাবেই ভালোই চলছিল। আমাদের সাথে থাকতেন রিপন ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয থেকে পাস করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে জব করতেন। ভালোই। তার কাছ নব্বুইয়ের গণ অভু্যত্থানের গল্প শুনতাম। ভালোই লাগতো। এক সময় জাসদ কর্মী রিপন ভাই পরে চাকরী নিলেন ইসলামী ব্যাংকে। তার কাছে শোনা গল্প নায়িকা মৌসুমী নাকি আগে মল চত্বরে আড্ডা মারতেন। তার দিকে নাকি কেউ ফিরেও তাকাতেন না। হঠাৎ একদিন মৌসুমী নায়িকা। তাদের তো অবাক হবার পালা। 
মেসে আমাদের সাথে আরেকটা ফ্যামিলি থাকতেন, সামর্থ সে রকম ছিল না বলে হয়ত। তবে তারাও বেশ আন্তরিক ছিলেন। সবচেয়ে আন্তরিক মনে হয়েছে বাড়িঅলাকে। তাদের বাসায় শুক্কুরবারে পোলাও রোস্ট হতো। তার একটা ভাগ চারতলার ব্যাচেলদের জন্য চলে আসতো। এত আদর আপ্যায়নের মধ্যে একটচা কঠিন শর্ত ছিল- ছাদে ওঠা যাবেনা, জানালা খোলা যাবে না। আমরা তাই করতাম। কিন্তু বাড়িঅলা দুইকন্যা যে আমাদের উত্যক্ত করত, সেটা কাউকে বলা যেতে না। বলতামও না। বিশেষ করে মিল্টন ও আমি এ দুজনের অত্যাচারের শিকার ছিলাম। 
মেসে সবচেয়ে বেশি মজা হতো সুইটির মা ভাবিকে নিয়ে। তাকে নিয়ে এক পর্ব না লিখলেই নয় , আনন্দ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। 

পরের কিস্তি সুইটির মা ভাবিকে নিয়ে...

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৭

কিস্তি ১১- বিনোদন সাংবাদিকতা

নায়িকাদের টিভি পর্দায় দেখি, সোনালী পর্দায় দেখি। এবার সরাসরি দেখার পালা। প্রথম আলোর অনুমতি সাপেক্ষে প্রিয়মুখে কাজ নিলাম। রিপোর্টার। পূর্ণ মাত্রায় বিনোদন রিপোর্টার। এলিফ্যান্ট রোড়ে কামাল ভাইয়ের বাড়ির তিনতলায় অফিস। আজিজ ভাই নির্বাহি সম্পাদক। প্রতিদিন আসি। প্রথম সংখ্যায় কে হবেন প্রচ্ছদ? এ নিয়ে হুলুস্থুল। শেষশেষ তৌকির আহমেদকে প্রচ্ছদ করা হলো। 
এভাবে শুরু। তার পর চললো অনেক দিন। এখানে কাজ করতে এসে অনেকের সাথে ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলো। একব পর্যায়ে প্রধান প্রতিবেদেকের দায়িত্ব পেলাশ। আমার পুরো সেটআপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাই মজাও ছিল। প্রিয়মুখে কাজ করতে করতে কত রাত যে আজিজ ভাইয়ের বাসায় কাটিয়িছি তার হিসাব নেই। 
এখানে কাজ করতে এসে নায়িকা রত্নার প্রচ্ছদ করতে গিয়ে মজা পেয়েছিলাম, জেমস, নায়িকা সুইটি, বন্যা মর্জিা, চাঁদনী, রিচি সহঅনেকের পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। দিনে দিতনে সম্পর্কের পরিধি বাড়ছিল। সেই সাথে বাঁকানো শরীরের পরতে পরতে নায়িকাদের অন্ধকার জীবন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে ছিলাম অনেক জ্ঞান অর্জন হযেছে। তাই এখান থেকে পালাবো ভাবছিলাম। শেষ পর্যন্ত পালিয়েছিল। তাও ২০০১ সালের দিকে। দুই বছর কাজ করেছিলাম প্রিয় মুখে। পাল ানোর কারণ অবশ্য ভিন্ন আজিজ ভাই আর পত্রিকাটি চালাতে পারছিলেন না। তাই বন্ধ করে দিয়েছেন। দিতেই হবে, কারণ আজিজ ভাইদের এত ইনভেস্টমেন্ট ছিল না। শখের বসে তাদের পাক্ষিক পত্রিকা করা। এখানে অনেকের সাথে বেশ ভাব জমেছিল। তাদের অনেকে এখন অনেক বড় স্টার। আমার কথা তাদের মনে থাকার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেবল ইয়াসমীন মুশতারী। নজরুলের গানের শিল্পী। অসাধারণ গান করেন। তার সাথে এখনো যোগাযোগ আছে। তবে এই বিনোদন সাংবাদিতকতা করার কারণে নিউজ স্টোরি ছোট বড় করার একটা ক্ষমতা এখান থেকে লাভ করেছিলাম। একই সাথে তারকাদের জীবনের বিভিন্ন দিক জানার যে দুর্লভ সুযোগ পেলাম, তা জীবনের সঞ্চয় হয়ে থাকবে। এত আলোকিত মুখের আড়ালে এত অন্ধকার প্রথম দিকে আমাকে বিস্মিত করেছিল। কিন্তু বাস্তবতা মানতে আপত্তিক নিশ্চয় কারো থাকার কথা নয়, আমিও সে রকম। বাস্তবতা মেনেই চলেছি। এখনো চলছি। 

পরের কিস্তি... হল ছেড়ে আবার মেসে 

৮ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩১

কিস্তি-১০, হলে ওঠা ও নেমে পড়া

হাজিরা ডাকার রেওয়াজ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল, এখনো আছে। কিন্তু হল গেটে হাজিরা ডাকার সিস্টেম আমার জানা ছিলনা। আমার বন্ধু ছাত্রলীগ নেতা মোশররফ অবশ্য প্রথম দফায় বাঁচিয়ে দিল। বলল, মধুতে আসিস। তাহলে হবে। মধু মানে মধুর ক্যান্টিন।অনার্স প্রথম বর্সে যারা হলে ওঠে তাদের বাধ্যতামূলক হাজিরা দিতে হয়। আমিও গিয়ে হাজিরা দিয়ে আসি। 
যেদিন হলে ওঠার জন্য আসলাম সেদিন আমাদের ক্লাশ মেট মান্না বললো, মামা মাল চালাইতে পারবি। তাইলে হলে ওঠা নিশ্চিত। বললাম, মাল? ও নিচু গলায় বলল, মেশিন। এখন মেশিনের যুগ। রাজনীতি হলো মেশিনে চলে। মানে অস্ত্রপাতি। 
আমার হলে ওঠা ফরম বা ওয়াজিব ছিল না। শখে হলে ওঠা। বাড়ি থেকে বলা হযেছে হলে ওঠার দরকার নেই। খালি হাঙ্গামা। এ সবে যাওয়ার কোনো মানে নেই। 
আমাদের বন্ধুদের মধ্যে মোশা, মান্না ও দোজা পলিটিকস করে। ছাত্রলীগের পলিটিকস। তাই ওদের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত হলে উঠলাম। আমাকে দেখতে একটু গুণ্ডা গুণ্ডা বলে মনে হয় বলে, হয়ত সহজেই নেতাদের নজরে পড়লাম। হলে খাবার আসতে থাকলো। এক বড় ভাই ডেকে বললো, তোমার ক্যান্টিনে যেতে হবে না। তুমি আমার সাথে মধুতে যাবা। সাথে থাকবা। মানে বডি গার্ড। আমি তো ভাবলাম এবার আমার দফারফা হবে। নেতার বডিগার্ড। 
আমার থাকার ব্যবস্থা হলো যমুনা ব্লকে নেতার রুমেই। রাতভর নেতা কুপরার্শ দেন তার ক্যাডারদের। এ সব শুনতে শুনতে রাত পার হয়ে যায়। ঘুমাই সকালে। এভাবে চলছিল। কিন্তু আমার আর সইছিলো না। কিন্তু হলে উঠে নেতার খেদমত না করে পালিয়ে আসা ভারি মুশকিল। 
একদিন মোশাকে বললাম, শালা আমি প্রথম আলোর কন্ট্রিবিউটর। আর আমারে দিয়া পলিটক্স! এ সব হবে না। আমি পালাবো। ও বললো পালিয়ে থাকতে পারবি না। জালে পড়ে গেছিস। কিন্তু আমি সেটি মানতে চাইলাম না। যথা নিয়মে একদিন ভোরে পালিয়ে গেলাম। আমার ট্রাঙ্ক, লেপ, তোষক, বিছানার চাদর সবই হলে রেখে এলাম হলে, নেতার রুমে।। এ সব আর কোনোদিন ফেরৎ পাইনি। পাবার চিন্তাও করিনি। বঙ্গবন্ধু হলে এটাই আমার প্রথম ওঠা ও নেমে পড়ার গল্প! 


পরের কিস্তি....বিনোদন সাংবাদিকতা নিয়ে


২৮ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:২০

কিস্তি-৯ সাংবাদিকতার প্রথম পাঠ

অনেকে লেখে। আমি কেবল পড়ি। এভাবে পড়তে পড়তে আমারো লিখতে ইচ্ছে করে। আমার এক বছরের সিনিয়র আরিফ লেখেন, আশরাফ ভাইও। তাদের লেখা পড়ি। একদিন আরিফ ভাই ও আশরাফ ভাইকে বললাম, পত্রিকায় আমিও লিখতে চাই। নবিশ হিসাবে আমাকে যথেষ্ট হেল্প করলেন তারা। তাদের পরামর্শে সিডিসিতে ভর্তি হলাম। সাংবাদিকতার বিভিন্ন বই-পাঠ চলছে। এর মধ্যে পরিচয় হলো বুয়েটের মোকাররম ভাইয়ের সাথে। খুবই সজ্জ্ন মানুষ। এত পছন্দ করতেন, ভালো লাগতো। তার কাছেই শুনলাম প্রথম আলো একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছে 'প্রদায়ক সংবাদদাতা' নিবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে গিয়ে প্রথম আলোর দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় বিজ্ঞাপনটা দেখলাম। একটা লেখা ও সিভি জমা দিতে বললো। পরের দুদিন খেটে খুটে একটা রিপোর্ট তৈরি করে প্রথম আলো অফিসে গেলাম, দেখি লম্বা লাইন। বাইরে একটা চটের বস্তায় লেখা ও সিভি জমা হচ্ছে। আমিও দিলাম। কিছু হবে বলে মনে হলো না। কিন্তু না, মাস দেড়েকর মাথায় ডাক পড়লো। হজির হলাম। রাজিব ভাই অনেক কথা শোনালেন। প্রথম আলোর দোতলার ছোট ক্যান্টিনের চিপায় দুজনে বসে গোল্ডলিপ সিগারেট আর চা পানে অনেক আলাপ হলো। পরিকল্পনার কথা জা্নালেন। বললেন, কাজে নেমে পড়। তাই শুরু করলাম।
শুরুতেই দেশের নাম্বার ওয়ান কাগজে লেখার সুযোগ। আমার মুগ্ধতার শেষ নেই। আমার এলাকা হিসাবে ঠিক করা হলো পুরনো ঢাকার লালবাগ ও হাজারীবাগ। এ সব এলাকার নাগরিক সমস্যা নিয়ে আমার প্রথম রিপোর্ট। হেঁটে রিপোর্ট বের খুঁজতে থাকলাম। কিন্তু 'আলোকিত রাজধাণী' পাতা আর আলোর মুখ দেখছে না। অবশেষে ২০০১ সালে পাতাটি প্রকাশিত হলো এবং এতে আমার প্রথম লেখা ছাপা হলো। বেশ সাড়া পেলাম । ক্লাশের বন্ধুরা শুভেচ্ছা জানালো। 

এখনো মনে পড়ে রিপোর্টটা কীভাবে শুরু করবো তা নিয়ে একটা উত্তেজনা ছিল। পরে লিখেছিলাম। এবং আনকাট সেটি ছাপা হয়েছে দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। প্রথম আলোয় লিখলে আর বাইরে কোথাও লেখা যায় না। তাই প্রথম আলোতে সাপ্তাহিক দু থেকে তিনটা লেখা দিতে থাকলাম। ছাপাও হতে থাকলো।
রাজিব ভাইয়ের বদলে আমাদের দেখভালে দায়িত্ব পড়লো সুমন কায়সার ও টোকন ভাইয়ের ওপর। সুমন ভাই অসাধারণ একজন মানুষ। আমার দেখা এ রকম ভালো ও শান্ত মানুষ দ্বিতীয়টি সংবা্দ মাধ্যমে মনে করতে পারছি না। টোকনও ভাই সজ্জন। আমাকে পছন্দ করতেন। ভালো লাগতো। কাজ করতে করতে আমরা কয়েকজন বেশ ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। তাদের মধ্যে সবাই এখনো মিডিয়া জগতেই আছেন।

এর মধ্যে একদিন প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন দেখলাম প্রিয়মুখ নামে একটি পাক্ষিক বের করবেন কয়েকজন তরুণ। সেখানে রিপোর্টার লাগবে। সুমন ভাইয়ের অনুমতি নিয়ে সেখানে গেলাম। আলাপ আলোচনায় কাজের কথা চূড়ান্ত হয়ে গেলো। এটা নিয়ে এক কিস্তি লিখবো। তার আগে ঢাবি হলে ওঠা ও নেমে পড়ার কাহিনী জানাবো পরের কিস্তেতে।

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৫৯

কিস্তি-৮ ::কীভাবে লিখতে হবে সে সম্পর্কে আমার ধারণা নেই!

লেখার শখ আমার পুরনো। ছোট বেলায় ছড়া লেখার চেষ্টা করতাম। অনেক কবিতা লিখেছি। কিন্তু বড় হয়ে মনে হলো এ সব কেবলই ছাইভস্ম! আমার কবিতার চরিত্র ছিল একই, সেই ছোট বেলার আধো আলো আধো আঁধারে দেখা আমার প্রথম প্রেম! 
আমার লেখালেখির প্রেরণা আমার বাবা। তিনি অসাধারণ লেখেন। আমার দেখা দু'জন মানুষের লেখার আমি প্রচণ্ড ভক্ত, তার মধ্যে আমার বাবা একজন। অন্যজন হুমায়ূন আহমেদ। দুজন আবার দু রকম লিখতেন। আমার বাবা লিখতেন-পাঠ্যবই। হুমায়ূন আহমেদ কী লিখতেন তা বলে সময় নষ্ট করতে চাই না। 
আমি উচ্চ মাধ্যমিকে থাকার সময় 'নতুন চাঁদ' নামে একটা স্মরণিকা সম্পাদনা করি। এর সম্পাদকীয় লেখা নিয়ে বিপদে পড়ে যাই। কীভাবে লিখতে হবে সে সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। পরে আমার বাবার সম্পাদিত একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদকীয় দেখে লিখলাম। সবাই খুব প্রশংসা করলো। সেই ১৯৯৮ সালে আমি প্রযুক্তি নিয়ে লিখেছিলাম। আমার আজো মনে পড়ে আমার লেখা সেই নিবন্ধ নিয়ে প্রচুর আলোচনা। ইন্টারনেট নিয়ে দুনিয়াজুড়ে যে হই চই হবে তা সে সময় বলেছিলাম। সে সময় ভোরের কাগজের নিয়মিত পাঠক ছিলাম। সেই সুবাধে প্রযুক্তি সম্পর্কে গ্রামে থেকেও জানার সুযোগ হয়েছিল। সেই সাথে আরো খোঁজখবর নিয়ে আমার সে লেকাটা তৈলি করি। ছাপা হয় আমার মামা ইমাইলের নামে। কীভাবে জানি সবাই জেনে গেলো লেকাটা তার না, আমার। 
অনেকে বলে ছিলেন আমি আজগুবি কথা লিখেছি। এখন এসে খুব মজা লাগে। সে সময়কার ভাইবোনদের সাথে দেখা হলে, সবাই হেসে বলে তুই তো ঠিকই বলেছিলি। 
ঢাকায় আসার পর ডিএ হোস্টেলে একদিন ভোরে দেখলাম আমাদের দু ব্যাচ সিনিয়র আনিস ভাই একজনের সাথে নিচু গলায় কথা বলছেন। পরে জানলাম, যার সাথে আলাপ করছিলেন- তিনি একজন প্রকাশক। আমি ঘুম থেকে ওঠার পর আনিস ভাই বললেন, আপনি তো বাংলা ভালো পারেন, তো আমাকে দু তিনটা গাইড বই লিখে দেন। আমি লিখতে শুরু করলাম। অল্প সময়ে শেষ করলাম, এর মধ্যে একদিন সেই প্রকাশক নেসার ভাইয়ের সাথে দেখা। বললেন, বাংলবাজার আসো। আমিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয থেকে পড়াশোনা করে এই লাইনে এসেছি। দু ভাই মিলে গল্প করবো। লেখার আইযডয়াও হবে। সেই শরু । এরপর আবদুল্লাহ অ্যান্ড সন্স, স্কলারস পাবলিকেশন্সের বই লিখেছিলাম। এ সব বই দেশের খ্যাতিমান অধ্যাপকদের নামে বাজারে গেছে। অথচ লিখেছি আমার মত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তবে খারাপ লিখি নাই বলে অপরাধ বোধ নেই। চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। 
এই লেখালেখির বাণিজ্যটা আমি দু বছর ধরে রেখেছি। পরে দেখি টাকা পয়সা ঠিকমত পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিলাম। স্কলাসের কাছে এখনো হাজার পঞ্চাশেক টাকা পাওয়া আছি। এখন গেলে শালা আমারে চিনবে বলে মনে লয় না। 
সে সময় পুরনো ঢাকার বাংলাবাজার যাওয়াটা আমি খুব এনজয় করতাম। ফুলবাড়িয়া থেকে ঘোড়ার গাড়িতে ৫ টাকায় বাংলা বাজার যেতাম খুব মজাই পেতাম। 

পরের কিস্তি সাংবাদিকতা শুরুর গল্প।

২৫ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:০৭



কিস্তি-৭ ::চেয়ারম্যানের সে কী প্রতিভা। তরুণীর কোমর জড়িয়ে মঞ্চে নাচছে। হা হা হা। সেই রকম নাচ।

চেয়ারম্যান নামেই আমরা ওকে চিনি। আসল নাম খুরশিদ। ফেণীতে ওদের বাড়ি। আমাদের আরেক বন্ধু জাফর। জাফর সাদিক। দুজনেই তুখোড় স্টুডেন্ট। রাজনীতিতেও সিদ্ধ হস্ত। তবে চেয়ারম্যানের নামের পেছনে একটা কারণ আছে। চেয়ারম্যান হেন কোনো কাজ নেই করে না। জাফরও এ ক্ষেত্রে কম যায় না। 

একদিন এসে চেয়ারম্যান বললো, দোস্ত চল পাবলিক লাইব্রেরী। কেন? জানতে চাইলে জাফর বললো, শালা গেলে বুঝবি। কথা মত হাজির হলাম পাবলিক লাইব্রেরিতে। দেখি চেয়ারম্যানের সে কী প্রতিভা। তরুণীর কোমর জড়িয়ে মঞ্চে নাচছে। হা হা হা। সেই রকম নাচ। 
চেয়ারম্যান লোকটা ভীষণ ভালো। জাফর, চেয়ারম্যান ও হেলাল তিন জন এক সাথে থাকতো। একটু আধটু পলিটিক্স করতো। পল্টনের হোটেল মিডওয়ে ওদের আস্তানা। নারী জগতে সুখ্যাতি ছিল। ইডেন বদরুননেসা ছির ওদের কাছ নস্যি, যেখানে গেটের বাইরের নিরীহ তরুণেরা অপেক্ষা করতো, সেখানে ওদের জণ্য ছুটে আসত তরুণীরা। ভালোই তো। আমরা খুব মজা পেতাম। নারীমহলে যাদের কদর বেশি তাদের সাথে আছি!! বিষয়টা হালকা না কিন্তু। চেয়ারম্যানের সুবাধে আমাদের আরেক বন্ধু আজমি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়ে কিছুদিন মাস্টারি করেছিল। এখন আইনই পেশা ও নেশা। 

চেয়ারম্যানও একে হোস্টেলে থাকতো। থাকতো আমাদের একব্যাচ সিনিয়র নাজমুল। সে এখন কোথায় আছে জানি না। তবে তার সাথে আমার বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল। আমরা দুজনে বাংলাবাজারে নোট বই লিখতাম। আমার সম্মানি তার চেয়ে কিঞ্চিত বেশি ছিল বলে আমাকে বেশ সমীহ করতেন। তাদের সিলেট অঞ্চলে এক স্মরণিকায় আমার একটা লেখাও ছাপিয়েছিলেন। যেটি এখনো আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। 

নাজমুল ভাই ছাড়া আমার আরেক বন্ধু ছিল ফয়সাল। এখন বড় মালদার পার্টি। ঢকায় গাড়ি আছে। প্লট ও ফ্ল্যাটের বাণিজ্যও। 

তবে আমার বন্ধু সামাদের ঘনিষ্ঠতার সুযোগে একে হোস্টেলে জাকারিয়ার সাথেও আমার ঘনিষ্ঠতা ছিল। বরিশালের ছেলে জাকারিয়া এখন একটা ওষুধ কোম্পানিতে চাকুরী করে। ওর সাথে বছর তিনেক আগে একবার দেখা হয়েছিল। হোস্টেলে ওর বেশ দাপট ছিল সে সময়। আমাদের সাথে ভালোই আড্ডা জমাতো। সেখানে আমাদের আরেকজন গুরুস্থানীয ছিলেন। বর্তমানে কাবুল প্রবাসী। তিনি আশরাফুল আলম ভাই। আমার জীবনের অন্যতম পরামর্শক। এখনো আছেন। বহু দিন আমরা একসাথে আলাপে মগ্ন হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ থেকে পড়ে তিনি এখন বিশ্ব্যাংকের হয়ে কাবুলে কাজ করছেন। তার সাথে আমার আরো কিছু বিষয় আছে। সেটা লেখালেখি কেন্দ্রিক। সেটা নিয়ে পরের কিস্তি।

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৪৮


কিস্তি-৬ ::চাচা আপনার কে টিকেছে? ও হেসে বলল, ভাস্তে আমি নিজেই!

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি- আঁখ, মুড়ির আয়োজন। ব্যাপার খানা বোঝার চেষ্টার আগে খাওয়া শুরু করলাম। আমরা চারজন এক রুমে থাকছি। একে হোস্টেলের নীচতলার আমাদের তাকার রুমটা বড়ই। সেখানে তরিকের বাড়ি থেকে এ সব খাবার এসেছে। কৃষক পরিবারের ছেলে তরিকদের জমিতেই এ সব চাষবাস হয়। সেখান থেকে ঢাকা প্রবাসী ছেলের জন্য মা পরম যত্নে গুছিয়ে পিতার হাতে তুলে দেন। তিনি ঢাকায় ছেলেকে দেখতে আসার পথেই এ নিয়ে আসেন। যেহেতু আমরা সংখ্যায় চার। তাই এখানে সবার জন্যই আনা হয়। খাওয়া শেষে তরিকের আব্বার সাথে দেখা। বললেন, বাবা কেমন আছেন? কুশল বিনিময় হলো, গ্রামের সহজ সরল মানুষের মুখ। 

ফরিদপুরে পদ্মার পাড়ে ওদের বাড়ি। তরিকের বিয়ের সময় সেখানে যাওয়া হয়েছিল বছয় দুয়েক আগে। তার আগে যাওয়া হয়নি। তরিকের পর ওর পরিবারের অন্যরাও ঢাকায় প্রায় আসত। ওর বড় ভাই যাকে ওরা মিয়া ভাই বলে, ছোট ভাই আসতো। এ রকম সবার। কেবল আমার কেউ আসে না। বাবা ছাড়া। পরিবারের যেহেতু আমিই বড়, তাই এখানে কারো আসার সুযোগও নেই। আমাদের বকশিবাজারের জীবনে তরিককে খুবই মনে রাখতে হবে, কারণ ও খায় প্রচুর, পড়ে প্রচুর এবং ওর লম্বা দাড়ি। ওকে যে কেউ দেখেই মনে করবে বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। 
ওর একটা মজার ঘটনা বলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় টেকার পর লাফিয়ে উঠলো আনন্দে। পাশ থেকে একজন বললো, চাচা আপনার কে টিকেছে? ও হেসে বলল, ভাস্তে আমি নিজেই! প্রশ্ন কর্তার চক্ষু তো ছানাবড়া! বলে কি? 

তরিক ছাড়াও আমার রুমের বাসিন্দা ছিল জুয়েল। ইসলামী ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা এখন। পড়তো জার্নালিজমে। ফরিদ এখন সম্ভবত প্রবাসী। এখানে থাকার সুবাধে অনেকের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠলো। এর মধ্যে জগা বাবুতে পড়তো বরিশালের জলিল। যাকে আমি জইল্যা বলেই ডাকতাম। ও বিষয়টা দারুণ এনজয় করতো। আর মাসুম। গোপালগঞ্জের পোলা। এখন সরকারি কোনো একটা ব্যাংকে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তর জন্য ওপর পড়া আমার এখনো চোখে ভাসে। কী যে পড়তো, সারা দিন, সবই মুখস্থ, তবুও ওর হলোনা। আমাদের খুবই মন খারাপ হতো। কিন্তু বাস্তবতা না মেনে তো উপায় নেই। 

এরপর উঠলাম ঢাবি হলে... তা নিয়ে পরের কিস্তি। 

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৪৪

কিস্তি-৫ ::স্যার বহিষ্কার করে দিন না!!

ঢাকায় ডি এ ছাত্রবাস নামের মেসে আমরা যারা জড়ো হয়েছি, তাদের প্রায় সবারই উদ্দেশ্য এক- বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। সবার নিশ্চয় একই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হবে না, হয়ও নি। তাই এবার আমাদের বিচ্ছিন্ন হবার পালা। ১৯৯৯ সালে অনার্স ভর্তির জন্য আমার প্রথম পরীক্ষা দিলাম জগা বাবুর পাঠশালায় (সে সময়কার জগন্নাথ কলেজ)। 

পরীক্ষাটা আমার কাছে একটা খেলা। বরাবরই আমি তা মনে করি। এ খেলায় ভালো করার সুযোগও আছে, আবার খারাপ। 

জগা বাবুর পাঠশালার ভর্তি পরীক্ষা সেবারই এমসিকিউ পদ্ধতির হয়েছে বলে আমার ধারণা প্রশ্ন এত সোজা যে আধ ঘণ্টায় আমার পরীক্ষা শেষ। নিজেকে যথেষ্ট মেধাবী প্রমান করার জন্য বলছিনা, সত্যই তাই। আমার পরীক্ষা শেষে আশ পাশের বন্ধুদের হেল্প করতে শুরু কলাম। আমি যেহেতু জগা বাবুর পাঠশালায় ভর্তি হবো না, তাই আমার ডর নেই। পরীক্ষক দুবার সতর্ক করে গেলেন। তৃতীয়বার আসলে বলি স্যার বহিষ্কার করে দিন না, শিক্ষক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি এখানে ভর্তি হবানা, আমি, সোজা বললাম না। কারণ আমার বাবা বাড়ি থেকে ঢাকা আসার সময় বলেই দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হতে না পারলে আমাকে নোয়াখালী কলেজে পড়তে হবে। এর বাইরে আর কোথাও তার পড়ানোর ইচ্ছে নেই, সেটা রাকঢাক না করেই বলে দিয়েছেন।
জগন্নাথে পরীক্ষা দেয়ার একটাই কারণ আমার অপেক্ষাকৃত দূর্বল বন্ধুদের হেল্প করা।

আমার সহযোগিতা পেয়ে আমাদের আমিন দোস্ত ইকনমিক্সে চান্স পেলো্। খাদিজা ইংরেজিতে। আরো অনেকে পছন্দের সা্বজেক্ট পেলো।আমি চাইলে যে কোনো সাবজেক্টে ভর্তি হতে পারি। কিন্তু হবো কিনা বুছঝতে পারলাম না। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব আমার বাবার কাছে ওঠানোর সুযোগই পেলাম না। 

জগন্নাথের পর আমার বন্ধুরা সবাই ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের পরীক্ষা দিলাম। টিকলাম আমরা তিন জন-আলি আজম, কুদ্দুস আর আমি। মেসের বাইরের বন্ধুদের মধ্যে মুস্তাফিজ মামুন এবং আবদুল্লাহ আল ফারুক। 

আমার ঘনিষ্ঠতম বলে যাকে আপনাদের বলেছি সেই সামাদ টিকলো শাবিপ্রবিতে। হাবিব জগন্নাথে। আলিমুল হক পাড়ি জমালো মিশরে। আল আজহারে পড়ে এখন দেশে। এভাবেই আমাদের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। এবার নতুন জায়গা। মেস চেঞ্জ করে আমরা বকশি বাজারে এসে উঠলাম। সেখানে আবার নতুন বন্ধু-পরিসর। 

তা নিয়ে পরের কিস্তি। 

২৩ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৫০


কিস্তি-৪ ::নায়িকা ঋতুপর্ণার বাঁকানো শরীরের পরতে পরতে তার স্পর্শ। সেই রকম।

রিয়াল... রিয়াল... ডিসি...ডিসি.. টানা আওয়াজটা কানে এসে বাড়ি খাচ্ছে। আমি আর বন্ধু বেলাল (বর্তমানে অস্ট্রিয়া প্রবাসী) দুজন এগিয়ে গেলাম। সিনেমা হল সম্পর্কে বেলালের অভিজ্ঞতা ভালো। ছোটকাল থেকে সিনেমা দেখে। নোয়াখালি জেলার সোনাইমুড়ি বাজারে ওদের ভিডিও ক্যাসেট বিক্রি ও ভাড়ার দোকান ছিল। অনি ভিডিও নামে। সেখানে রাত করে ভিসিডিতে সিনেমা দেখা হতো। 
১৯৯৯ সালের শুরু দিকের কথা , বেলাল ঢাকা এসে পরের দিন আমার মেসে উঠলো। শুক্রবার দিন বললো চল সিনেমা দেখবো। রাঙা বউ। মোহাম্মদ হোসেনর সিনেমা। বাংলা সিনেমায় অশ্লীলতার সূচনা করা এ সিনেমার গল্পটা দারুন। হিন্দি কোনো একটা সিনেমা থেকে নকল করা। 
আমরা ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলে, দুটো ডিসি ক্লাশের টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম। 

হুমায়ূন ফরিদী কামকলাকে(!) একটা শিল্পে রূপ দিয়েছেন এই সিনেমায়। অনেক সাহসী ভূীমকা তার। নায়িকা ঋতুপর্ণার বাঁকানো শরীরের পরতে পরতে তার স্পর্শ। সেই রকম। দারুণ উপভোগ্য এক সন্ধ্যায় সিনেমাটি দেখা হয়ে গেলো। এটাই আমার দেখা প্রথম খোলামেলা সিনেমা। অনেক দিন মনে রাখার মত গল্প । সেখান থেকে ঢাকার সিনেমা হলে আমার সিনেমা দেখার শুরু। বেলাল ঢাকায় আসলেই আমরা সিনেমা দেখতে যেতাম ফার্মগেটে। আনন্দ অথবা ছন্দ হলে সিনেমা দেখা হতো। মাঝে মধ্যে পূর্ণিমাতে। তবে বেলালেল ফেভারেট ছিল আনন্দ সিনেমা। 
দ্বিতীয়বার ওর সাথে আমার দেখা সিনেমা 'কী'। ইংরেজি সিনেমা এটি। এডাল্ট রেটিংয়ের এ সিনেমার গল্পটাও ভালো ছিল। সিনেমাটিতে যত রকমের অবৈধ সম্পর্কই থাক না কেন, মানুষ যে একদিন মরে যাবে এবং তার সব কর্ম পেছনে রেখে তাকে পাড়ি দিতে হবে অন্য জগতে, সেটি তুলে ধরা হয়েছে। নায়কের শব যাত্রার দৃশ্যটা দেখে কিছুক্ষন আগে দেখা উত্তেজক দৃশ্যগুলো আমার চোখের সামনে থেকে সরে যেতে থাকে। বোধ করি অন্যদেরও। কোনো এডাল্ট সিনেমা দেখার পর এটা আমার প্রথম অনুভূতি। মনে হতে থাকে দুনিয়াটা মিথ্যে। এত মউজ মাস্তি ! তার পর সব শেষ। সব কিছু থেকে আমদের দূরে সরে যেতে হবে। দূরে সরে যাচ্ছি আমি ও আমরা। 

দূরে সরে যাওয়া নিয়ে পরের কিস্তি

২১ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮



কিস্তি-৩ ::১ টাকা খরচা করে রওয়ানা করলাম সায়েদাবাদ থেকে টিএসসির উদ্দেশে

১ টাকা খরচা করে রওয়ানা করলাম সায়েদাবাদ থেকে টিএসসির উদ্দেশে। বাসঅলা আমাকে নামিয়ে দিলো কদমফোয়ারার সামনে। প্রেসক্লাবের পাশে এই কদম ফোয়ারা। সেখানে নেমে টিএসসি পেলাম না। হাঁটা শুরু করলাম। কিছু দূর গিয়ে এক পুলিশের সহায়তায় চিনলাম টিএসসি। দেখি জটলা করে আড্ডা চলছে্ । এমন আড্ডা মাঠে ঘাটে আমরা দিতাম। এখানে একটু ভিন্নতা। 

অনেক দিনের শখ ছিল আবৃত্তি শিখবো। তাই একটা ফরম কিনে নিলাম পরের কোনো একদিন। স্বরশীলনে ভর্তি হলাম। তিন মাসের কোর্স। আমার করার কথা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং, সেটা বাদ দিয়ে আমি করছি আবৃত্তির কোর্স। আমার বন্ধুরা বললো, শালা গেছে। 

আমি দেখলাম যা পড়ায় কোচিংয়ে, তার বেশির ভাগই আমার পড়া আছে। তাই এটা নিয়ে সময় নষ্ট করার কোনো মানে খুঁজে পেলাম না। তবে মাঝে মধ্যে কোচিংয়ে যেতাম। সেখানে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল, মুহিত চাকমা।রাঙ্গামাটির ছেলে। নেশা টেশা করে। বাড়ি থেকেই আসে দোচুয়ানি। ভালোই তো। আমি অবশ্য তখনো সেটা চেখে দেখিনি। তবে ওর আমার আমার সাথে একটা অদ্ভূত মিল- দুজনেই কোক পছন্দ করি।গরম কাল ছিল খালি সারাদিন ঠাণ্ডা কোকে গলা ভেজানো। 

এভাবেই তো ভালোই চলছে। এর মধ্যে সিনেমা দেখা শুরু করলাম। গ্রামে অনেক কঠোর শাসনে ছিলাম। এলাকার লোক সিনেমা হলে যাই শুনলে আহত হতো। আমি তাই কাউকে আহত করতে চাইনি। সিনেমা নিয়ে পরের কিস্তি 


২০ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৩

কিস্তি -২ :জানলাম নোয়াখাইল্যা আর বরিশাইল্যারা চরম খারাপ

উচ্চ মাধ্যমিকের বোর্ড পরীক্ষায় মেধা তালিকায় আমার নাম ছিল, তাই 
মেসজুড়ে সবাই একটু ভিন্ন চোখে দেখতো।সদ্য মফস্বল থেকে আসা একটা ছেলে আমি, সেখানেও মানুষের খাতির পেয়ে বেড়ে উঠেছি। তাই এটা আমার কাছে বাড়তি আকর্ষন ছিল না। 
যেটা আমাকে আকর্ষন করেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছেলেরা এখানে আছে। আমি নোয়াখালী থেকে। কেউ বরিশাল। কেউ চট্টগ্রাম। কারো বাড়ি টাঙ্গাইল।এখানে এসে জানলাম নোয়াখাইল্যা আর বরিশাইল্যারা চরম খারাপ। আমার বন্ধুর তালিকায় দু এলাকার লোকই ছিল। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আমার ঢাকায় আসা।ভর্থি হলাম একটা কোচিংয়ে। বন্ধুরা সবাই মিলে পড়াশোনা চলছে। তবে আমার পড়ার চেয়ে ঢাকা দেখাতে মন বেশি।

মাদারীপুরের বন্ধু আলী আজম, টাঙ্গাইলের হাবিব, চট্টগ্রামের পোয়া আলিমুল হক আর আমার ঘনিষ্ঠতম সামাদ। যাকে সবাই শহিদ নামে চিনে।আমরা সবাই এক সাথে আড্ডা দিতাম। মেসের ছাদে আড্ডা জমত। সে আড্ডায় অনেকে হাজির হতেন, যারা বয়সে ছোট বা বড়। 
এভাবেই শুরু। তবে আমি মেসের বাইরে বেশি সময় থাকতাম। বেশির ভাগ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। এটা নিয়ে পরের কিস্তি 


১৯ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:২৩

কিস্তি-১ : ১৯৯৮ সালের এক বিকালে ঢাকায়

১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাসে এক বিকাল। ফকিরাপুল এসে বাস থেকে নামলাম। রিকশা চড়ে সোজা চলে গেলাম হোটেল ইসলামে। আপাতত এক রাত এখানে কাটানোর চিন্তা। সকালে ঘুম থেকে উঠে বন্ধু সামাদকে ফোন ধিলাম। টিএন্ডটি ফোনে। ও বললো, চলে আয় আমার মেসে। পরে ও এসে নিয়ে গেল। যাত্রাবাড়ির শহীদ ফারুক রোড়ের উল্টো দিকের একটা নয়া বাড়িতে আমার থাকার ব্যবস্থা হলো। মেসের খাবার আর বন্ধুর সাথে ১৫ দিন থাকার পর নিজের সিট হলো। পুরো বাড়িই মেস। মালিক খুব মজা পান। আমরা মেসে খুব আড্ডা দিতাম। অনেক বন্ধু হয়ে গেলো। তাদের নিয়ে পরের কিস্তি।




১৯ মার্চ ২০১৩ 

রপ্তানি বাজারে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে মৎস্য বর্জ্য


বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে মৎস্য বর্জ্য। সাহসী বিনিয়োগ, দক্ষ জনবল আর প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি নিশ্চিত করা গেলে বছরে আয় হতে পারে ৮ হাজার কোটি টাকা।

মৎস্য বর্জ্য ব্যবহারে নতুন সুযোগ বের করার জন্য বাংলাদেশ  চিংড়ি ও মৎস্য  ফাউন্ডেশন (বিএসএফএফ) প্রশিক্ষক তৈরির কাজ শুরু করেছে। জাকিসঙ্ঘ বিশ্ববিদ্যালয় এতে সহায়তা করছে।

বিশ্বে সবচে সফলভাবে মৎস্য বর্জ্য ব্যবহারকরা দেশ  আইসল্যান্ড ।   দেশটি ২০০৪ সালে মৎস্য বর্জ্য নিয়ে কাজ শুরু করে এখন সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। প্রডাক্টেও  এনেছে বৈচিত্র ।

মূল ইংরেজি খবরটি পড়তে ক্লিক করুণ---http://www.theindependentbd.com/post/43927

আইসল্যান্ড ফিস লিভার থেকে ওষুধ গ্রেড, ফুড গ্রেড এবং কসমেটিকস গ্রেডের  কাঁচামাল তৈরি করছে। মাছের চামড়া দিয়ে তারা বেল্ট, মানি ব্যাগের মত সৌখিন  পণ্যও তৈরি করছে। আফ্রিকায় মাছের মাথা রপ্তানি করছে। যেটি আফ্রিকা অঞ্চলের স্থানীয় সুপের উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তবে আমরা এখনই তা করতে পারবো না। তাই আমাদের  নজর দিতে হবে শুরুর দিকে। যেখানে ফিশ মিল বা মাছের খাবার তৈরি দিয়েই শুরু করতে পারি।

তবে বাংলাদেশ আপাতত বাই প্রডাক্ট হিসাবে ফিস মিল তৈরি করতে চায়। পুষ্টিগুণ ঠিক রেখে এটি করতে পারলে দেশটি লাভবান হবে বলে মনে করছেন বিএসএফএফ'র চেয়ারম্যান  সৈয়দ মাহমুদুল হক।

 তার মতে, বাংলাদেশ এখন যে পরিমাণ মৎস্য বর্জ্য তৈরি হচ্ছে , তার এক তৃতীয়াংশও যদি সঠিক ভাবে  সংরক্ষণ করে বাই প্রডাক্ট হিসাবে ব্যবহার করা যায় তাহলেও কমপক্ষে ৮ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি আয় সম্ভব। বিদেশে একটন  মৎস্য বর্জ্য রপ্তানি হচ্ছে কমপক্ষে ১ হাজার ডলারে। সে হিসাবে  এক মিলিয়ন বা দশলক্ষ মেট্রিক মৎস্য বর্জ্য রপ্তানি করা গেলে  ৮ হাজার  কোটি টাকা আয় সম্ভব। (১ ডলার সমান ৮০ টাকা হিসাবে)।  এ জন্য পরিকল্পনাটাই জরুরী।

সৈয়দ মাহমুদুল হক দি ইনডিপেনডেন্টকে  বলছেন, আমরা নতুন সুযোগের তৈরি করতে চাই।   উদ্যোক্তা, সরকার এবং ব্যবসায়ীদের সাথে বৈশ্বিক  সংযোগ তৈরি  করতে চাই।

সরকারের মৎস্য অধিপ্তরের হিসাবে বর্তমানে দেশে ৩ দশমিক ৭  মিলিয়ন  মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। বিএসএফএফ এর এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে  উৎপাদিত মাছের ৭১ শতাংশ দেশে ও দেশের বাইরে মানুষের খাবারে ব্যবহৃত হয়ে । ২৯ শতাংশ মৎস্য বর্জ্য হয়ে । যেটাকে বাই প্রডাক্ট হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে একবারই মৎস্য বর্জ্য রপ্তানি করেছে। সেটি ২০১৪ সালে। এর মূল্যমান ছিল মাত্র ৬৬ হাজার ইউরো। এ খাতকে ব্যাপক সম্ভাবনায় খাত হিসাবে উল্লেখ করে জাতিসঙ্ঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের  মৎস বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর প্রিন্সিপাল  ইনভিস্টিগেটর   সৈয়দ ইশতিয়াক  দি ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, মাছের চামড়া, মাথা মাথার ফ্রেম, কাঁটা, লিভার, আঁশ প্রভৃতি বাই প্রডাক্ট করা সম্ভব।

তার মতে, বাংলাদেশে এখনো এ জন্য  কোনো  প্রসেসিং  সুবিধা, প্রযুক্তি নেই, যার মাধ্যমে ফিশ বল, ফিশ কাটলেট মত পণ্য তৈরি করা সম্ভব। তাছাড়া  মাছের খাদ্য, মাছের তেল, পশু খাদ্য  তৈরি প্রযুক্তিও এখন পর্যন্ত আমরা এডপ্ট করতে পারিনি।
   
জাতিসঙ্ঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের  মৎস্য প্রশিক্ষণ  কর্মসূচীর গবেষণাপত্রে বলা হচ্ছে  দেশে  বর্তমানে ৭৮ টি  মৎস প্রক্রিয়াজাত প্লান্ট  পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৪১ টি প্লান্ট রয়েছে খুলনায়। ৩২ টি চট্টগ্রাম অঞ্চলে। খুলনার  ফ্যাক্টরিতে  দৈনিক গড়ে দুই হাজার কেজি মাছ প্রক্রিয়াজাত করা হয়ে থাকে।  এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই  মাছের টুকরো, ব্লক বা স্টিক। ২৫ শতাংশ ফ্রোজেন।    
চট্টগ্রাম অঞ্চলের কারখানায়  দৈনিক ৩৫৬৬ কেজি মাছ প্রক্রিয়াজাত করা হয়। যার ৩০ শতাংশ  মাছের টুকরো, বা স্ট্রিক। ৭০ শতাংশ  আস্ত মাছ। এর মধ্যে থেকে খুলনায় ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ  এবং চট্টগ্রামে ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ  বাই প্রডাক্ট বা ব্যবহারযোগ্য মৎস্য বর্জ্য তৈরি হয়।  সে হিসাবে খুণলায় দিনে ৪১ মেট্রিক টন এবং চট্টগ্রামে ৩২ মেট্রিক টন মৎস্য বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে।

 সৈয়দ মাহমুদুল হক দি ইনডিপেনডেন্টকে বলছেন, তারা ক্ষেত্রটি উন্মোচন করতে চাইছেন। সে জন্য তারা চট্টগ্রাম মেরিন ফিশারিজ একাডেমিতে  একটা প্রশিক্ষণ কর্মসূচীও শূরু করেছেন। যেখানে ২৪ জন অংশ নিচ্ছেন। যারা পরে প্রশিক্ষণ দিয়ে এখাতের জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তুলবেন।

 বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাতটির জন্য নতুন করে  মানব সম্পদ তৈরি জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টের কারিকুলামেও ফিস ওয়াস্টের বিষয়টি অন্তভূক্ত করার জন্য চেষ্টা করবেন।

 ২৪ জন প্রশিক্ষক তৈরির জন্য যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন  তএদর মধ্যে চারজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও রয়েছেন।  এ সব প্রশিক্ষকের মাধ্যমে পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ও সিলেটে আরো দুটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর আয়োজন করা হবে।

সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, আমাদের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। সে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে।

বড় চ্যালেঞ্জ দক্ষ মানবসম্পদ, টেকনলজি এবং ইনভেস্টমেন্ট। তবে প্রশিক্ষতি মানব সম্পদ গড়ে তোলার পাশা্পাশি টেকনলজি করা গেলে খাতটি দাঁড়াবে বলেই মনে করেন মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিককৈর্মকর্তা নিত্যরঞ্জন বিশ্বাস  দি ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং ইনডিয়া এ খাতে ভালো ব্যবসা করছে। আমাদের সম্ভাবনা আছে। এটাকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ শুরু করেছি।

সৈয়দ মাহমুদুল হক বলছেন, আমাদের এ খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ফিস মার্কেটের একটা স্ট্রাকটচার করতে হবে। যাতে করে সেখানে  মৎস্য বর্জ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।

তার মতে, নগরায়নের কারণে এখন কেউ আর মাছ কাটাকাটির ঝামেলায় যেতে চান না। অন্যদিকে বিদেশে রপ্তারি ক্ষেত্রেও আমরা পুরো মাছ রপ্তানি করছি। এতে করে  আমরা ভালো দাম পাচ্ছি না। আমরা যদি এটাকে ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাত  করে রপ্তানি বা সেল করতে পারি  তাহলে এখাতে বেশ ভালো আয় করা সম্ভব।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এক কেজি মাছ  যদি কেউ বিক্রি করেন ১০০ টাকা। তার যদি মাছটি কেটে দেয়ার জন্য ১০ টাকা নেন। আর মাছ থেকে পাওয়া মৎস্য বর্জ্য বিক্রি করতে পারেন ২০ টাকা। তাহলে  বিক্রেতার ৩০ শতাংশ লাভ বেশি হচ্ছে। তাকে সেটি বোঝাতে হবে।  একই সাথে কিচেন মার্কেট, ফিস প্রসেসিং জোন এবং ফিশারিঘাটগুলোতে স্টোরেজ সিস্টেম ডেভেলপ করলে কাঁচামাল সঙ্কট হবে না।

তবে এখানে শিল্প গড়তে হলে মেটেরিয়ালের কন্টিনজেন্সি রাখতে হবে।  এতে এ খাতে সঙ্কট হওয়ার কথা নয় বলে মনে করেন  ইশতিয়াক। তার গবেষণার ফলাফল অনুসারে বাংলাদেশে মৎস্য বর্জ্য কাঁচামালের মধ্যে  মাছেল চামড়া, আঁশ, লিভার, হাড় বা কাঁটা  রয়েছে ৫৭ শতাংশ। মাথা ২৮ শতাংশ এবং অন্য উপাদান ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে চিংড়িতে মাথার অংশ ৯০ শতাংশ এবং খোলস ও পা ১০ শতাংশ। এ সব থেকে বাই প্রডাক্ট  তৈরির অন্যতম উপাদান।

তবে এর বৃদ্ধি করা সম্ভব এবং সঠিক টেকনলজি ইউজ করা সম্ভব হলে  ফিশ মিলের খরচও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন সৈয়দ মাহমুদুল হক।

অবৈধ ভিওআইপি মামলার আসামী এখন বাংলালিংকের সিইও!


টিআইবি'র এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'এরিক অস যদি অবৈধ ভিওআইপির মত একটা মামলায় অভিযুক্ত হন এবং জরিমানা দিয়ে তার কর্মস্থল তাকে মুক্ত করে থাকে, তার মানে অপরাধ প্রমাণিত, সে ক্ষেত্রে সেই একই সেক্টরে (টেলিকম) তার মত একজন মানুষের নিয়োগ নৈতিকভাবে সমর্থন করা যায় না। একটা রেসপন্সিবল কর্পোরেট হাউসের কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না।
তিনি বলেন, বিজনেস মানে শুধু প্রফিট মেকিং নয়, এখানে এথিকসেরও বিষয় আছে। আমি মনে করি এ নিয়োগ অনৈতিক। '



অবৈধ ভিওআইপি'র অভিযোগে দুইবার জরিমানা দিয়ে মুক্তি পাওয়া  নরওয়েজিয়ান নাগরিক এরিক অস এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবইলফোন অপারেটর বাংলালিংকের সিইও।

২০০৭ এবং ২০০৮ সালে দুই দফা অবৈধ ভিওআইপি'র অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এরিকের সে সময়কার কর্মস্থল গ্রামীণফোন জরিমান গুনে তাদের দায়মুক্তি নিশ্চিত করে।

২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারী এরিকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

রাজধানীর গুলশান থানায় দায়ের করা মামলা এখন চলছে না? এর কারণ ব্যাখ্যা করে মামলার বাদী জিয়ান শাহ কবির  বলেন, এডমেনেস্ট্রেটিভ ফাইন দিয়ে অপারেটর দায়মুক্তি পেয়েছে। তাই মামলা চলছে না।

২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে গ্রামীণফোনের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসাবে নিয়োগ পেয়ে বাংলাদেশে আসার পর এরিকের হাতেই বদলে যেতে থাকে অপারেটরটি। তার হাতেই অপারেটরটি দেশীয় লোগো বদলে টেলিনরের লোগো লাগানো হয়।  গত বছরের ১ ডিসেম্বর  এরিক বাংলালিংকের সিইও হিসাবে যোগ দেন।

বাংলালিংকের কর্পোরেট কমিউনিকেশন্সের  প্রধান আসিফ আহমেদ দি ইনডিপেনডেন্টকে  বলেন, 'ভিওআইপি ২০০৬-০৭ সালে একটি ইন্ড্রাস্ট্রি ইসু ছিল।  এটা কোনো ব্যঅক্তি ভিত্তিক ইসু নয়। বাংলালিংক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবে না, যার সাথে অন্য অপারেটরও জড়িত।'

তবে বাংলাদেশের কোনো অপারেটরের সিইও হিসাবে থাকতে তার আইনি কোনো বাধা নেই বলে  জনিয়েছেন,  সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিব আলম। তার মতে,  নৈতিকতা যদি বলেন, সেটি যার চর্চা করার কথা তিনি ভালো বলতে পারবেন। তবে আইনে এতে কোনো বাধা নেই।

টিআইবি'র এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর ইফতেখারুজ্জামান ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, এরিক অস যদি অবৈধ ভিওআইপির মত একটা মামলায় অভিযুক্ত হন এবং জরিমানা দিয়ে তার কর্মস্থল তাকে মুক্ত করে থাকে, তার মানে অপরাধ প্রমাণিত, সে ক্ষেত্রে সেই একই সেক্টরে (টেলিকম) তার মত একজন মানুষের নিয়োগ নৈতিকভাবে সমর্থন করা যায় না। একটা রেসপন্সিবল কর্পোরেট হাউসের কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না।

তিনি বলেন, বিজনেস মানে শুধু প্রফিট মেকিং নয়, এখানে এথিকসেরও বিষয় আছে। আমি মনে করি এ নিয়োগ অনৈতিক। '

২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের সময়  বিটিআরসি অবৈধ ভিওআইপি বিরোধি অভিযোন শুরু করলে গ্রামীণফোন দুইবার, বাংলালিংক, একটেল ও সিটিসেল একবার করে  সরকারকে প্রশাসনিক জরিমানা দিয়ে অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিটিআরসির সে সময়কার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মনজুরুল আলম কললিস্ট পরীক্ষার উদ্যোগ নেন ২০০৭-০৮ সালে। সে সময় বিটিআরসি মোবাইলফোন অপারেটরদের অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পায়।

২০০৭ সালের শেষ দিকে অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গে জড়িত থাকায় গ্রামীণফোনকে প্রথম দফায় ১৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আর ২০০৮ সালের শুরুর দিকে গ্রামীণফোনে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভিওআইপির যন্ত্রপাতি উদ্ধারের পর  আবার ২৫০ কোটি টাকা জরিমানা করে বিটিআরসি।

বিটিআরসির তত্কালীন চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম সে সময়  জানিয়েছিলেন, ‘ভিওআইপির  অবৈধ ব্যবসায় গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার দলের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা রয়েছে। এটা আমাদের অনুসন্ধানে বের হয়েছে।’

সে সময় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গ্রামীণফোনও স্বীকার করে, তৃতীয়পক্ষকে অবৈধভাবে ভিওআইপি প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছিল তারা। এজন্য জরিমানার ২৫০ কোটি টাকা দিতেও সম্মত  প্রতিষ্ঠানটি।

সে সময়কার গুলশান থানার  সাব ইন্সপেক্টর  মানজুর আলী খা্ন জানিযেছেন অবৈধ ভিওআইপর অভিযোগে দায়ের করা মামলার নম্বর ৪৬। এটি দায়ের করা হয় ১৬ জানুয়ারী।

মামলার আর্জিতে বলা হয়, ২০০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর সংস্থার একটি দল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে গ্রামীণফোনের কার্যালয়ে অভিযান চালায়। এ সময় দেখা যায়, চারটি 'ই ওয়ান' সংযোগের মাধ্যমে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক অ্যাকসেস টেল এর নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। অভিযানকারী দলটি গ্রামীণফোনের কল রেকর্ড ও ই মেইল 'অনুসন্ধান' করেন। এরপর ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা আট দিন গ্রামীণফোনের কার্যালয়ে অনুসন্ধান চালায় দলটি।

অভিযানে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে গ্রামীণফোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এ কার্যক্রমে গ্রামীণফোনের বৈদেশিক সহযোগী হিসেবে মালয়েশিয়ার ডিজি টেলিকমের সংশ্লিষ্টতারও প্রমাণ মিলেছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, গ্রামীণফোনের বেশিরভাগ শেয়ারের মালিক নরওয়ের প্রতিষ্ঠান 'টেলিনর' বাংলাদেশে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় উৎসাহ দিয়েছে বলে অনুমেয়। গ্রামীণফোনের 'মেইল সার্ভার' এ সন্দেহভাজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মেইল খতিয়ে দেখে কল টার্মিনেশনে সংস্থার সম্পৃক্ততাসহ কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিজস্ব সংশ্লিষ্টতারও আলামত পাওয়া গেছে।

গ্রামীণফোনের ৬২ ভাগ শেয়ারের মালিক টেলিনর মালয়েশিয়াভিত্তিক ডিজি টেলিকমেরও অংশীদার। অভিযানের সময় গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছে বিটিআরসি।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গ্রামীণফোনের হেড অফ রেভিনিউ অ্যাসুরেন্স এসপেন উইগ ০১৭১৩১৩০৪০০ নম্বরের কল রেকর্ড র‌্যাব সদস্যদের কাছে না দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশ দেন। পরে জানা যায় অ্যাকসেস টেল এর কল টার্মিনেশনের কাজে নম্বরটি ব্যবহৃত হতো।

মামলায় গ্রামীণফোন ছাড়াও এর সাবেক প্রধান নির্বাহী এরিক অস ও ওলা রি, সাবেক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর থর রান্ডহগ, সাবেক চিফ টেকনিক্যাল অফিসার যোগেশ সঞ্জিব মালিক, সাবেক সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ডিরেক্টর মেহবুব চৌধুরী, রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর খালিদ হাসান, চিফ টেকনিক্যাল অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ডিরেক্টর কাফিল এইচ এস মুঈদ, চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মো. আরিফ আল ইসলাম ও হেড অফ রেভিনিউ অ্যাসুরেন্স এসপেন উইগ ওয়ারেনডরফকে আসামি করা হয়েছিল।

অভিযুক্ত  কে কোথায়? 

অভিযুক্তদের মধ্যে এরিক অসকে চাকুরী দিয়ে দেশে এনেছে ভিম্পেলকম।   বাকিদের গ্রামীণফোন থেকে সরিয়ে টেলিনরে নেওয়া হয় এবং তাদের পদোন্নতি  দেওয়া হয়।

অভিযুক্ত সাবেক সিইও  Ola Ree বর্তমানে Head of Group Supply Chain Sustainability, Telenor. জুন ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সালে নভেম্বর পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে গ্রামীনফোনের এমডি ছিলেন। Yogesh Malik  এখন  VimpelCom এর  Chief Technology Officer এবং  Group Executive Board ও Group Management Board এর সদস্য।

Espen Wiig Warendorph এখন  BellTel  এর Advisor (Commercial) । গ্রামীণফোনে Technical Controller হিসাবে যোগ দেন ২০০৪ সালের এপ্রিল মানে। মাত্র এক বছরের মধ্যে ২০০৫ সালের মে মাসে তাতে পদোন্নতি দিয়ে করা হয় Head of Revenue Assurance & Fraud Management.

Kafil HS Muyeed বর্তমানে Managing Director, Cel Telecom Limited, গ্রামীণফোন থাকান অবস্থায় মামলার অভিযুক্ত হলে তাকে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সরিয়ে দেয়া হয়। ওই বছরের এপ্রিল মাসে  তাকে Consultant,Telenor হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।
Md. Arif Al Islam বর্তমানে  সামিট কমিউনিকেশন্সর  সিইও এভং ভ্যবসায়িক অংশীদার।  Mehboob Chowdhury সিটিসেলের সিইও হিসাবে বাংলাদেশেই কর্মরত রয়েছেন। 

রোহিঙ্গা সঙ্কট ও 'অহিংস' হিংস্র সু চি

ছোট্ট একটা খবর, বড় ধরণের ধাক্কা দিলো, সকালে।  প্রথম আলো খবরটি প্রকাশ করেছে, সংবাদ সংক্ষেপে। সু চি'র মুখপাত্র বলছেন, রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা বলা যাবে না।

খবরের তথ্য, সু চির মুখপাত্র উ কিও জে ইয়া বলেন, 'রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না।তাই সরকার তাদের ওই নামে ডাকবে না। জে ইয়ার ভাষায়, ‘আমরা তাদের রোহিঙ্গা বলব না। কারণ, তারা মিয়ানমারের স্বীকৃত ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নয়’। (সূত্র প্রথম আলো, ০৯ মে ২০১৬)

 সু চি কে যারা অহিংস নেত্রী হিসাবে জানেন, যারা তাকে গণতন্ত্রের মানস কন্যা বলে অভিহিত করেন, শান্তির দূত হিসাবে ভাবনায় রেখে আনন্দ উপভোগ করেন, তারা নিশ্চিতভাবেই  একটা ধাক্কা খাবেন। বা খেয়েছেন।

দেশহীন মানুষ বিশ্বজুড়েই আছে, রোহিঙ্গারা জাতিসঙ্ঘের হিসাবে সবচে প্রান্তিক দেশহীন মানুষ। কিন্তু এদের এখন আর মানুষ হিসাবে দেখতে অভ্যস্ত নই আমরা।  কারণ রোহিঙ্গাদের করুণ আর্তির ছবি  এ দেশে, বিশ্বে ছাপা হয়েছে, যেখানে দুর্দিনেও তাদের নৌকা ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ কাজটি এমন দেশ করেছে, যে দেশটির লক্ষ লক্ষ লোক মহান স্বাধীনতার সময় পাশের দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল, এবং সেখানে বছরখানেক থেকেছিল। এ একথা এ জন্য বল্লাম যে, এটা গণমা্নুষের আকাঙ্খার সঙ্গে যায় না।  (ঘটনা অক্টোবর, ২০১২ )

রোহিঙ্গাদের  প্রান্তিক থেকে প্রান্তিকতর করার কাজটি করা করছে?  কারা এটা বিষফোঁড়ার মত টিকিয়ে রেখেছে বছরের পর বছর, সে সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে সমাধানটা খুবই জরুরী হলেও তা আমরা করতে পারিনি। যার জন্য আমাদের মত গরিব দেশের উপর বর্মার নাগরিকদের চাপ বাড়ছে। বর্মার লোকেরা আমাদের সাথে বসলে এ সমাধানের আশ্বাস দেয় এবং বিমানে চড়ার পর সে কথা ভুলে যায় ।

রোহিঙ্গা বলতে চোখের সামনে অপরাধ উন্মাদ একদল মানুষের ছবি দেশি গণমাধ্যম তুলে দিয়েছে। অন্যদিকে বিদেশি মিডিয়া বলছে, তারা সবচে নিপীড়িত। বাংলাদেশের গণমাধ্যম রোহিঙ্গা নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। এখানকার গণমাধ্যমের বড় অংশ রোহিঙ্গাদের  জমাত ইসলামের দিকে ঠেলে দিয়ে বিচার করে। এতে করে  নিপীড়িত  রোহিঙ্গাদের আসল চিত্র মিডিয়ায় আসে না।

বাংলায় কথা বলা এ সব মানুষ দশকের পর দশক ধরে এ  বর্মা থেকে তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। বৈধ অধৈ দু'পন্থায় এ দেশে বহু রোহিঙ্গা আছেন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ধারণা করা হচ্ছিল, সু চি দেশরি নেতৃত্বে আসলে সমস্যার সমাধান হবে, তবে এটি এ দুঃস্বপ্ন।  সু চি  কেবল রোহিঙ্গা বিদ্বেষিই নন, তিনি মুসলিম বিদ্বেষিও। সম্প্রতি তার একটি বক্তব্য বেশ আলোড়ন তুলেছিল, যে দিনি কোনো মুসলিম সাংবাদিককে তার প্রথম সাক্ষাৎকার দিতে চান না।

অনেকেই বলতে চাইবেন বাংলাদেশের পাহাড়ি মানুষেরও দেশ নেই। সেটা নিয়ে আমরা ত কথা বলছি না। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে দ্বিমত করি।  পাহাড়িরা বাংলাদেশের নাগরিক এবং তাদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সরকার কাজ করছে। এমনটি সংবিধান অনুমোদন করে না, তার পররেও আওয়ামী লীগ সরকার ঝুঁকি নিয়ে তাদের সাথে চুক্তি করে, তা বাস্তবায়ন করে চলেছে।

বান্দরবান জেলার অন্তত ৪৬ হাজার মুরং বা ম্রো সম্প্রদারে লোক আছেন, যারা বর্মার রাখাইন রাজ্য থেকে তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে  এসেছেন এবং থাকছেন।  নাগরিক হিসাবেও তাদের আমরা কেবল স্বীকার করিনা, আমরা তাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি।

কিন্তু  রোহিঙ্গাদের  স্বেদেশ থেকে তাড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশি বলে, এবং এ কাজটি করছে বর্মা। যাদের আমরা সামরিক শক্তির দিক থেকে দুর্বল মনে করতাম। এখন অবশ্য করার কারণ নেই। কারণ শক্তি সমরে তারা অনেক এগিয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সরকারি হিসাবে বর্তমানে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন। এর বাইরে আরো হাজার হজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে।

বিবিসির বিশ্লেষক ডেভিড লয়েন বলছেন, রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমণ একটি জাতিগত নির্মূল চেষ্টা। তিনি এও বলছেন, সেখানকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষায় দেশটির সরকারের  চেষ্টা যথেষ্ট নয়।

স্থানীয় সংবাদদাতাদের উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম যে সব খবর প্রচার করছে তাতে দেখা যাচ্ছে, রাখাইন প্রদেশের যে আট লাখ মুসলিম বাস করেন, তাদের বিরুদ্ধে কেবল সরকার নয় স্থানীয় বৌদ্ধধর্মীয় গুরুরাও দাঙ্গা উসকে দিচ্ছে।
বর্মা অঞ্চলের জাতিগত সঙ্ঘাত নিয়ে কাজ করেন ল্যারি চাগান। তাকে উদ্ধৃত করে বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছিল, বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মনে করে মালয়েশিয়া এক সময় বৌদ্ধদের দেশ ছিল। কিন্তু সেখানে ক্রমেই মুসলমানরা বেড়ে গিয়ে সেটি এখন ইসলামিক দেশে পরিণত হয়েছে। বার্মায় মুসলিমদের অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের মেনে নেয়া হলে এবং তাদের বংশ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দেশটি একই রকম হয়ে যেতে পারে।

ল্যারি বলছেন, বার্মায় রোহিঙ্গারা অত্যন্ত কষ্টকর জীবনযাপন করছেন, তাদের নির্ধারিত চৌহদ্দির বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এর কারণ তারা মসুলিম ও তাদের ভাষা বাংলা। এমনকি তারা রেঙ্গুনেও যেতে পারেন না। তাদের এলাকায় কোনো স্কুল পর্যন্ত নেই, এতে করে রোহিঙ্গা শিশুরা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে বার্মা স্বাধীন হওয়ার পর আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গারা ছিল না বলে দাবি করে সেখানকরা বৌদ্ধরা। অন্য দিকে রোহিঙ্গারা নিজেদের বর্তমানের রাখাইন রাজ্য যা আগে আরাকান হিসেবে পরিচিত ছিল তার ভূমিপুত্র বলে দাবি করেন। এর কোনো সমাধান এখন পর্যন্ত না হওয়ায় এ সঙ্কট টিকে আছে।

ল্যারি বলছেন, সেখানে মুসলিমরা এতটাই নিপীড়নের শিকার যে তারা বিয়ে পর্যন্ত করতে পারেন না। তাদের বিয়ে করতে হলে বাংলাদেশে এসে বিয়ে করে যেতে হয়। আবার বিয়ে করে বার্মায় ঢোকার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের অভিভাসন আইনে আটক করে। এ রকম এক সঙ্কটময় কাল অতিক্রম করছে বার্মার রোহিঙ্গারা।

ধর্ম, চাপাতি,গুম এবং শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি!

কৈফিয়ত :: ব্যক্তিগতভাবে আমি ধর্মাশ্রয়ী। ধর্মকে  আমি আমার জীবনের মূল ভাবনার মধ্যে রাখি, যদিও এর প্রতিপালন আমার পক্ষে সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না কিম্বা কখনো কখনো ধর্ম অনুমোদন করে না, এমন কাজও আমি করি। তারপরেও আমি ধর্মকে আশ্রয় করে বেড়ে উঠেছি। এটাই আমার জীবনের একমাত্র ভরসা। 

 হাল আমলে চাপাতি, নাস্তিক, মুক্তমনা এ সব টাইপের শব্দের উদ্ভব এবং বিকাশ ধরে এ দেশে জঙ্গি, জঙ্গি প্রশ্রয় নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে।

আমাদের দেশে ইসলাম ধর্ম নিয়ে আলোচনা করলে  শিক্ষিত ও প্রগতিশীল মানুষের প্রায় সবাই এটাকে জমাত ইসলামের সাথে মিলিয়ে ফেলেন। সে জন্যই হয়ত ইসলাম ধর্মের কোনো অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র ধর্মানুসরী 'সুশীল'রা স্বস্তি পান না।

 ধর্মকে নানা রকমের আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি এবং করিও! রাষ্ট্র প্রধান 'মদিনা সনদ' অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে জড়িত অন্তত দশজন লোককে বার করা যাবে না, যারা মদিনা সনদের মর্ম  উপলব্ধি করতে পারেন!

 এটা তাদের দোষ নয়! এ ত্রুটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার।

আমরা ছোট বেলায় পড়তাম.. 'সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি/ সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।' এখন পড়ি---'  জনি জনি ইয়েস পাপা/ ইটিং শুগার / নো পাপ/ টেলিং লাই/ নো পাপা/ ওপেন ইওর মাউথ  হাহ্হা হা! '

 সুতরাং এ যে বাঙালিয়ানার মধ্যেও একটা তফাৎ তৈরি হয়েছে, সেটি আমাদের সমাজের প্রথাগত  সংস্কৃতির ভিতও ভেঙ্গে দিয়েছে। তাহলে আমাদের করণীয় কি? সে সম্পর্কে আমরা কেউ একমত নয়! কারণ আমরা সবাই নিজেকে সব জান্তা মনে করে বসে আছি! একেক জন একেক রকমের থিওরি দিচ্ছি।

 অনেককে দেয়া যায় এখন ধর্মের জন্য মরাকান্না করছেন, ধর্ম উদ্ধারে খুন করার কিম্বা খুনিদের সমর্থন করছেন? কিন্তু এরা ইসলাম ধর্মের মূল মর্মবাণী থেকে দূরে আছেন। সেই মর্মবানী নজরুল বা রবীন্দ্রনাথের মত স্বশিক্ষিত লোক সবাই নন যে, তারা নিজ দায়িত্বে জেনে নিবেন। জেনে নিবেন না বলেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা! এ ধরণের আত্মঘাতি মগজের সুষম ব্যবহারের জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধর্মানুরাগী ও নৈতিকতার সাথে সাজানো জরুরী ।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা চারধারায় বিভক্ত। এ বিভক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার সিলেবাস প্রণয়ণ করেছেন কারা? কারা এটি মডারেশন করছেন, সে দিকে তাকালেই সহজেই বোঝা যাবে বেকরাত্ব বৃদ্ধি, নন্দতত্ত্বরে চর্চা হ্রাস এবং ধর্মকে উপেক্ষার কারণে সমাজে আজ জঙ্গী, আম্রিকার আগ্রাসনের শঙ্কা এভং ইনডিয়ার ঝেঁকে বসে যাওয়ার  কারণ!

 ছোট বেলায় আমরা জানতাম, আম গাছে কলম করলে বরই ধরে। এটা সাময়িক।  কিন্তু আম খেতে হলে বরই খেতে হলে বরই গাছই লাগাতে হবে।
আমরা যুদি সুশিক্ষিত, সৎ এবং দেশ প্রেমিক শ্রমনিষ্ঠ  মানব সম্পদ গড়তে চাই, তাহলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়াতেই নজর দিতে হবে।

 আমরা সব ধর্ম, ধর্মাচার এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবো, এতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু  সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়াও একটি সহনশীল জাতি গঠনে মুসলিম বালক বালিকাদের  সহনশীল-নৈতিক-সৎ এবং প্রগতিশীল সমাজ ব্যবস্থা এবং ধর্মের বানী তাদের মনের ভেতরে গেঁথে দিয়ে উগ্র পন্থা মোকাবেলার কোনো উদ্যোগ  কোন সরকারই নেয়নি। নেবেও না। কারণ আমাদের কর্মকৌশল, পরিকল্পনা নির্ধারিত হয় আম্রিকা ও প্রতিবেশি দেশের কথা মাথায় রেখে। সুতরাং এখানে  এটা আশা করা মুশকিল যে, আমরা একটা সহনশীল সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি।

 অনেকে যুক্তি দেবেন, ধর্ম নিজের ব্যাপার । আবার বাঙলায় একটা প্রবাদ আছে-- আপনি ঠিক তো দুনিয়া ঠিক। এ সব কিন্তু আসলে কথার কথা।  নিজে ঠিক হওয়ার পাশাপাশি সমাজ ঠিক করার দায়িত্ব আমাদের আছে।

 পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষা ব্যবস্থা ঘিরে যে নৈরাজ্য চলছে, সেটি বলে বোঝানো মুশকিল।  এ খতা সত্যি স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার  ভিশনটা ঠিক করতে পারিনি। পারলে এ দুর্দশা হতো না।

আমি ব্যক্তিগতভাবে  নৈতিক শিক্ষার  প্রতি অনুরক্ত। একই সাথে সবার মাঝে পর্যটন নেশা ছড়িয়ে দেওয়ার পক্ষপাতি। মানুষকে তার সীমা এবং অন্যের অধিকার সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে কেউ কোন শিক্ষা দেন না। না পরিবার, না বিদ্যায়তন না  সমাজ-সংস্কৃতি! (কিছূ ব্যতিক্রম ছাড়া) । বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজগুলো রাজনীতি চর্চা! সেখানে সহনশীলতা আশা করা বোকামি।

 এ লেখাটার কারণ একটাই  ধর্ম, নৈতিক শিক্ষা বহু আগেই  পাঠ্যপুস্তক থেকে বিদায় করা হয়েছে। সেটি আপনি মাদরাসা বলেন, স্কুল বলেন আর কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়! সবখানে।   আমরা আসলে একজন শিক্ষার্থীর কাছে কি বার্তা, কি লক্ষ্য নিয়ে তার বড় হতে হবে, সেটি সেট করতে ব্যর্থ হয়েছি।

ধর্ম সম্পর্কে আমাদের উদাসীনতা বরাবরই আছে। কিন্তু আবার একটু বয়স হলে আমরা সবাই (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) চাই আমাদের সন্তান যেন ধর্মকর্ম করে। যখন আমরা চাই, তখন আর কিছু করার থাকে না। এ থাকে নার জায়গা কিন্তু অনেকেই উপলব্ধি করছেন, কিন্তু সেটি  বাস্তবায়নে কেউ কাজ শুরু না করে কীভাবে নব প্রজন্মকে আরো অস্থিরতায় ফেলে দেয়া যায় তা নিয়ে কাজ করছেন।  এতে করে জঙ্গি রাষ্ট্রের তকমা পেয়ে যেতে যাচ্ছি।

 চাপাতি অথবা গুম
 চলছে এখন ধুম!

 এ ধুম চলা বন্ধ করতে হবে। এ জন্য গণমাধ্যম, স্বঘোষিত সুশীলদেরও ভূমিকা আছে। আর ইসলামকে জমাত ইসলাম থেকে আলাদা করে একটা ধর্ম হিসাবে বিবেচনা করলে অর্ধেক সমাধান হয়ে যায়!

পাঠ্যপুস্তক থেকে   ড. কাজি দীন মুহম্মদরে 'বিনয় নম্রতা'র মত প্রবন্ধও উঠে গেছে। আর গতকাল বুধবার ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী সংবাদ সম্মেলন করে যে সব তথ্য তুলে ধরেছেন, সে গুলো খুবই উদ্বেগের।  এটা অবশ্যই আমার ব্যক্তিগত মতামত।

 নেজামী  বলছেন,' দ্বিতীয় শ্রেণিতে আগে পড়ানো হতো ‘সবাই মিলে করি কাজ’ শিরোনামে  সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহানবীর(সা.) সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত। তৃতীয় শ্রেণির বইয়ে  ইসলামের প্রথম খলিফা ‘খলিফা হযরত আবু বকর’ শিরোনামের সংক্ষিপ্ত জীবনী। চতুর্থ শ্রেণিতে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর জীবনী পড়ানোর ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু নতুন শিক্ষানীতির অধীনে প্রণীত পাঠ্য বই থেকে মহানবীর(সা.) এবং ইসলামের প্রথম ও দ্বিতীয় খলিফার জীবনী বাদ দেওয়া হয়েছে। '

তার তথ্যানুসারে , 'পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্য বই থেকে মহানবীর(সা.) জীবনী, কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ শীর্ষক কবিতা, ‘শহীদ তিতুমীর’ নামক একটি জীবনীর বদলে সংযুক্ত করা হয়েছে হুমায়ূন আজাদ লিখিত ‘বই’ নামক একটি কবিতা, যা পবিত্র কোরআন বিরোধী বলে পরিচিত।'

তিনি বলেন, ' ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ধর্মীয় শিক্ষণীয় ঘটণা সম্বলিত ড. শহীদউল্লাহর ‘সততার পুরস্কার’ নামক একটি লেখা, কায়কোবাদের লেখা ‘প্রার্থনা’ কবিতা বাদ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা  হয়েছে দেবী দূর্গার প্রশংসা সম্বলিত কবিতা ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ এবং লাল গরুটা নামক ছোট গল্প, যা গরুকে দেবতার আসনে বসানো হয়েছে।  একই শ্রেণিতে পাঠ্য ’নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ নামক একটি ভ্রমণ কাহিনীর বদলে ‘রাঁচির ভ্রমণ কাহিনী’  প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির  বই থেকে ’মরু ভাস্কর’ নামক শেষ নবীর(সা.) জীবন চরিত বাদ দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে পাঠা বলী দেওয়ার নিয়ম-কানুন সম্বলিত ‘লালু’ নামক একটি গল্প। অষ্টম শ্রেণি থেকে ‘বাবরের মহত্ব’ ও বেগম সুফিয়া কামালের লেখা ‘প্রার্থনা’ কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে সংযোজন করা হয়েছে ‘রামায়ণের সংক্ষিপ্ত কাহিনী’। নবম-দশম শ্রেণির জন্যে লিখিত বই থেকে কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’, কবি আলাওলের ‘হামদ’ ও আবদুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’   ‘জীবন বিনিময়’ কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে একই শ্রেণির বইয়ে দেবী অন্নপূর্ণার প্রশংসা সম্বলিত মঙ্গল কাব্য ‘আমার সন্তান’, ‘সাকোটা দুলছে’ ও রাধা-কৃষ্ণের লীলা কীর্তন ‘সুখের লাগিয়া’ প্রভৃতি কবিতা  সংযোজন  করা হয়েছে।‘সাকোটা দুলছে’ কবিতাটিতে ৪৭-এর ভারত বিভক্তিকে হেয় করা হয়েছে।  তাছাড়া ভারতের পর্যটন স্পট পালামৌ-এর ভ্রমণ কাহিনী এবং বাউলদের যৌনাচার সম্বলিত ‘সময় গেলে সাধন হবেনা’ নামক বইটি  নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্য-পুস্তক হিসেবে সংযোজন করা হয়েছে। উপরন্তু, প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে পাঠ্য করা হয়েছে যৌন শিক্ষার বই ‘নিজেকে জানুন’।'

 তাহলে আপনি ফেসবুকে লেকচার দিবেন, টিভি সেট গরম করে ফেলবেন, মাইকে ফূঁ দিবেন আর বলবেন সবাই 'মানুষ হও'। কেমনে। এ ধরণের কাজ তো উগ্রপন্থার প্রচারকারীদের  সহযোগিতা করছে। সুতরাং সময় থাকতে আমাদের সাবধান হওয়াটা জরুরী।

স্বেচ্ছায় অধীন কিম্বা আয়ত্বে বঙ্গীয় সংবাদমাধ্যম !


প্রেস ফ্রিডম ডে [3 May] নামে একটা দিবস বাংলাদেশে উদযাপিত হলো- ভালো লাগলো শুনে। মুক্ত গণমাধ্যম নিয়েও  কথা হয়েছে। হচ্ছে। হবে। মাশাআল্লাহ, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি!

বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ কতটা, তার সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারণা নেই! কারণ এখনো আমি কোনো অনলাইন, অফলাইনের সম্পাদক হতে পারি নাই। কিম্বা কর্তা সাইজে যেতে পারি নাই। যাওয়ার কোনো 'আশঙ্কাও' নেই!

তবে  এটা তো জানি সেলফ সেন্সরশিপ এখানে বহু আগে থেকে প্রচলিত। এখানে সম্বাদিকরা স্বেচ্ছায়, স্ব-উদ্যোগে অন্যের পারপাস সার্ভ করতে খুবই পছন্দ করেন!  যদি ক্ষমতাবানদের  'নেক' নজর মিলে! এই একটাই আশা!

আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ---বাংলাদেশের সবচেয়ে নিগৃহিত দু'টি  প্রাণি আছে! একটি সম্বাদিক! আরেকটি বাসা বাড়ির কাজের লোক! এদের  বশে আনা কঠিন কিন্তু পেটে এদের ক্ষুধা। অনিরাপদ জীবন, এক দিক থেকে ইসলামিক জীবনও বলা চলে। ইসলাম ধর্ম অনুসারে আজকে নিয়ে ভাবো, ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য, পয়সা মজুদ করে অন্যকে কষ্ট দিও না! এর দু'প্রাণিকুল এটা মানতে বাধ্য! কারণ তার তো দিনে আনা দিনে খাওয়া!। অবশ্য কিছূ পেটি বুর্জোয়া  সম্বাদিক এখন সমাজে আছেন। তাদের কথা না বলি। আম সম্বাদিকের কথাই ধরে এ পর্যবেক্ষণটা দিলাম!

 সে যাই হোক, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও রেডিও'র স্বায়ত্ত্বশাসনের জন্য একটা কমিশন হয়েছিল, আসাফ উদ দৌলা এ কমিশনের প্রধান ছিলেন। সম্ভবত ১৯৯৬ কিম্বা ৯৭ সালের দিকের ঘটনা, এ কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলছিলেন, তিনি যে প্রতিবেদন বানিয়েছেন, সেটি অবশিষ্ট নাই। তার স্বপ্রজাতির আমলার এটাকে  কাটছাঁট করে  স্বায়ত্ত্বশাসনের বদলে 'আয়ত্ত্বশাসন'  এর এন্তেজাম করেছে।

' আয়ত্ত্বশাসন' শব্দটা খুব মনে ধরেছে আমার। অসাধারণ। বঙ্গীয় শব্দ ভাণ্ডারে এক অনন্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন। ভাবলে আজো চমৎকৃত হই। এবং আরো ভালো লাগে পরে আসাফ উদ দৌলার সাথে কথা বলেছিলাম, তার কথাটা খুব পরিষ্কার,  এখানে প্রেস ফ্রিডম বলে কিছু নেই।

 যার বিপক্ষে যাবে, সে বয়কট করবে! নিশ্চিতভাবে অনেকেরই জানা আছে আম্লীগ সভানেত্রী বিম্পির ২০০১ থেকে ২০০৬ এর আমলে লাইসেন্স দেওয়া টিভি চ্যানেলকে তার  অনুষ্ঠান কভার করতে দিতেন না।   সে সময় ওই সব টিভি চ্যানেলৈর সম্বাদকর্মীরা প্যান্ডেলের বাইরে  মাইকের সামনে তাদের ' বুম' রেখে সাউন্ড বাইট সংগ্রহ করতেন!

 এটাকেও অত্যন্ত সম্মান করি, আমি। কারণ  আম্লীগ এটা শেষ পর্যন্ত টেনে নিতে পেরেছে, যে শক্তি বিম্পির নেই। বিম্পি- জমাতের লোকজন সব সময় একটা অপরাধী ভাব নিয়ে থাকে। মনে হচ্ছে, আহা রে কি বললেম জনাব অসন্তুষ্ট হবে। তাই সন্তুষ্ট করার একটা ভাবনা। কোনো অবস্থানে কঠোরভাবে  থাকতে পারে না।

 বলছিলাম,  গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা।  গণমাধ্যম স্বাধীন এ কথা সরকারের মন্ত্রী, তথ্য মন্ত্রী সবাই বলেন এবং  সেটা এখন বললে, অনেকটা কৌতুকের সৃষ্টি করে। কারণ  বিপরীত মতের পত্রিকা সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত,  দিনকাল তো বন্ধ হয়নি, এ দাবি তো সরকার করছে!  এবং এ দাবি মিথ্যাও নয়। তাহলে আমরা প্রেস ফ্রিডম আছে, এটা আপতত চোখে মেনে নিতে পারি!

কিন্তু বাস্তবতা কি তাই!  আমরা সম্বাদিকরাও  গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাই। আমি চোখ বন্ধ করে বল্লাম, চাই না। একই সাথে দায়িত্বশীল সম্বাদিকতাও চাই না। কসম করে বলছি , চাই না! যদি চাইতাম তাহলে এ দেশে একের পর এক লুট, আর খুনের বিষয়ে আমরা কেউ-ই এতটা নিশ্চুপ আর ডে ইভেন্ট হিসাবে কভার করে চুপ থাকতাম না! এর ফলো আপ রিপোর্ট হতো, কারা এর পেছনে জড়ি এবং তাদের বিচারে সরকারকে গণমাধ্যম বাধ্য করতে পারতো!

আমার দেশ পত্রিকার উপর খগড় নেমে আসার পর আমাদের দেশের  'প্রগতিশীল' সম্বাদিক গোষ্ঠী তো হাত তালি দিয়েছে! দেন নি! দিয়েছেন। দিগন্ত টিভি বন্ধ হওয়ার পর সবাই বলেছেন, বাপু ঠ্যালা বোঝ!  ইসলামিক টিভির মত নিরীহ টিভি চ্যানেল বন্ধ করার পরও গণমাধ্যমের কর্মীদের একাংশ উল্লাস প্রকাশ করেছেন।  ইটিভির চ্যায়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের পরও আমরা বহুলোককে দেখেছি  উল্লাস করতে!

বাকি গুলো কবে বন্ধ হবে? সে জন্যও অপেক্ষা করেছেন দিনের পর দিন। আর  বিপরীত মতের এখনো তেলা পোকার মত টিকে থাকা  গণমাধ্যমগুলোকে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে, এবং এ সব কাগজে চাকুরী করা কিছু সরকারপন্থী কীভাবে ফায়দা লুটছে, সেটাও আমরা কম বেশি জানি! সেই যাই হোক,  দুনিয়া কা মজা লোটটো দুনিয়া তোমারি হ্যায় এর বিশ্বাসী লোকের তো ভাব হবে না, এটা জানা কথা!

 তবে গণমাধ্যম  চাপের বাইরেও স্বউদ্যোগে বহু খবর 'টুইস্ট' করে থাকে। এটা জেনেই করে। সরকারের নজরে পড়ার জন্য। যেমনটা  একটা ইসু বাংলাদেশে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, সেটি হলো ড. ইউনূস। লোকটাকে তুলো ধুনো করতে পারলে কিছু সম্বাদিক এতটা আন্দ পান, যেটি হয় তিনি তার  প্রেমিকার সাথে প্রথম সাক্ষাতেও লাভ করেন নি।

 মজার ব্যাপার হলো এরা আবার আপনাকে নৈতিক সম্বাদিকার   সবকও দিবনে। কিন্তু অসত্য, বিকৃত খবর ছাপানোর পর তার প্রতিবাদ ছাপতে পারবে না। কারণ  তআহলে আবার না ক্ষমতাবানদের 'বদ' নজরে পড়ে যান।

 অনেকে বলবেন, ড. ইউনূসকে লাত্থি মেরে বের করে দেওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংক ভালো চলছে! দ্বিমত করছি না। কিন্তু  কার সেট আপে চলছে?

 গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন ও সরকারের করায়ত্বে আনার জন্য বহু ফন্দি ফিকির তো হলো, কিন্তু পর্ষদ নির্বাচন আজ পর্যন্ত করতে পারেননি!

 অনেক সম্বাদিক মনে করেন,  ইউনূস দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন। কিন্তু এটা মনে করা পর্যন্ত তার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।

আর এ দেশের গণমাধ্যমে সবার সমান অধিকার একটা স্বাপ্নিক ঘটনা। এখানে বিদেশে টাকা পাচারের  প্রমাণিত রিপোর্টকে  লেখা হয় 'কথিত'। আর শোনা যাওয়ার রিপোর্টকে বলা হয়, 'অভিযোগ' । কথিত ও অভিযুক্ত শব্দ দু'টোর তফাৎ নিশ্চিতভাবেই আছে।  এদেশে ক্ষমতাবানের  সন্তান হলে  সাচ্চা লোক, ক্ষমতাহীনের ছেলে-মেয়ে হলে  অসম্ভব নিম্ন মানের লোক।

 বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের অধীনতা কিম্বা আয়ত্বে থাকাটা অনেকটা স্বেচ্ছায়। জবরদস্তিমূলক এটা বলা যাবে না। কারণ  সরকার জবরদস্তি করে না, শুধু ফিতা ধরে টান দেয়, মাহফুজ আনাম, মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান হওয়ার চেয়ে বউ পোলাপাইন নিয়ে টিকে থাকাই শ্রেয়।

ফাঁকে ডিজিটাল স্বাধীনতা, সেলফি তোলেন, জ্ঞান বিতরণ করেন এবং  সরকারি প্রতিপক্ষের গুষ্টি উদ্ধার করেন, আপনার চে আর প্রগতিশীল  কে হতে পারে! জনাব ভালো থাকেন, প্রেস ফ্রিডম ডে'র শুভেচ্ছা!

'খুন' তুমি জায়েজ হয়ে যাও

খুনি' তুমি মুক্তি পেয়ে যাও
সমকামী, বিকৃত রুচি, নাস্তিকতার নামে 

'খুন' তুমি জায়েজ হয়ে যাও 
মোল্লা-মৌলভী, জমাত-শিবির, বিম্পি'র নামে

খুন 'নিরপরাধ' হয়ে যাও
পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে-বাঁশখালী!

ইলেকশনের নামে নামে সিলিকশনেও তুমি আপদ হও না! 
খুনের আবার 'আদব' কি?

তোমার পক্ষে ক্ষমতা, লোভ, রাজনীতি
মানুষের পক্ষে কেউ নেই! কেউ না! এমনকি প্রকৃতিও! 

রানা প্লাজা: সেই নৃশংস স্মৃতি




বছর তিনেক আগের এ রকম একটা দুপুর, শত শত মানুষ রাস্তায়। সবুজ অটোরিক্সাটা ছুটে চলেছে, মানুষের ভিড় ঠেলে রানা প্লাজার কাছে পৌঁছালাম, আশ পাশে উৎসুক মানুষ। পাশেই দেখলাম বিরিয়ানির প্যাকেটের গন্ধ, কিছু লোক  ভেতরে যাচ্ছে আসছে, পাশের ভবনে গেলাম, দেখলাম আমাদের সাহসী ফায়ার বিগ্রেডরের  লোকজন, কাজ করছে, নিজের পরিবারের সদস্য উদ্ধারের মত করে। ভেতরে কিছু স্বেচ্ছাসেবি, মানব-শরীরের পঁচে যাওয়া মাংসের গন্ধ।

একটু বাইরে আসলাম, লাশ গুনছে অনেকে, ঘটনার তিন দিন পর (২৭ এপ্রিল ২০১৩ ) দেখতে গিয়েছিলাম রানা প্লাজা ট্রাজেডি। লেখাটাও  উদ্দেশ্য ছিল।  বাইরে এসে  রোড ডিভাইডারের ওপর দাঁড়ালাম,লাইজু নামে একজন নারী এগিয়ে এসে বললেন, তার বোন সীমার সাথে কথা হয়েছে, টয়লেটে আটকা।  কিছু করা যায় কিনা? চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি।

বোন সীমাকে জীবিত দেখতে তার মন কাঁদছে। বললেন, সীমা তিনতলায় কাজ করতেন। এক ছেলের মা সীমা ২৪ এপ্রিল সকালে ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খেয়ে এলেন কাজে। তারপর নিখোঁজ। চার্জ নেই মোবাইলে। তবুও বোনের মন মানে না। রিচার্জ করে কিছু টাকাও পাঠালেন বোনের ফোনে। কিছুক্ষণ পরপর বোনের মোবাইলে চেষ্টা করছিলেন। যদি কথা বলা যায়। যদি জানা যায় বোনটি কেমন আছে! শেষ পর্যন্ত তার আর কিছু জানা গেলো না।

একই রকম অবস্থা ছিল মাসুদ রানার। বগুড়ার সোনাতলা থেকে এসেছিলেন তিনি।  বোন শাহিনূর ও ভাইয়ের মেয়ে নাজমার কোনো খবর জোগাড় করতে পারেননি।  ছুটেছেন অধরচন্দ্র স্কুল, এনাম মেডিক্যাল, সিএমএইচ থেকে রানা প্লাজা।

তিন ছেলে ও একমাত্র কন্যার  বাবা আবুল কাসেম ভূঁইয়া নিখোঁজ হয়েছিলেন । তার লাশের খোঁজে বড় ভাই মোহাম্মদ ইবরাহীম অধরচন্দ্র স্কুলে অপেক্ষা করেছেন। ছেলে  শাফায়েত রানা প্লাজার সামনে ছিলেন। স্ত্রী  ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, যদি প্রিয় স্বামীর দেখা মিলে। না সে সব আশা মিথ্যে।  দেখা মেলেনি স্বজনের ।

 অগুনতি ব্যর্থতার ভেতর কিছুক্ষণ পর পর লাশ নিয়ে আসা হচ্ছে, সে লাশের গাড়ি যাচ্ছে অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ের মাঠে। যে সব  মানুষের জীবিত উদ্ধার করা হচ্ছিল তাদের নেয়া হচ্ছিলো এনাম মেডিকেল ও  সিএমএইচএ!

আমার জীবনের এ রকম করুণদৃশ্য এর আগে দেখিছিলাম সিডর আক্রান্ত শরণখোলায়। সেখানে মানুষের লাশ ঝুলে ছিল গাছে, ধান ক্ষেতে ফুলে ওঠা মানুষের লাশ। সে এক হৃদয় বিদারক, নির্মম ও নৃশংস দৃশ্য!  

 এটি দ্বিতীয় কঠিন এবং রূঢ় একটা কষ্টময় স্মৃতি হয়ে গেঁথে গেলো।

অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ের মাঠে এক নারী চিৎকার করে শুয়ে পড়ছিলেন, আমি তার কাছে যেতে যেতে তিনি  অজ্ঞান হয়ে গেলেন, স্বামী সন্ধানী নারী নিখোঁজের তালিকার স্বামীর নাম লেখাতে এসেছিলেন।

ছোটবেলায় আমরা দেখতাম দুর্যোগের পর রিলিফ আনতে কিম্বা ইউনিয়ন পরিষদের দুস্থ সহায়তা পেতে লম্বা লাইন। জীবনে আমি প্রথম এবং একবারই লক্ষ্য করলাম, লাশ খুঁজতে লম্বা লাইন। এক নির্মম অভিজ্ঞতা আর করুণ আর্তির কোনো বর্ণণা করার মত ভাষা আমার জানা  নেই।

সাভারের অধর চন্দ্র স্কুলের মাঠজুড়েই হাহাকার। লাশের সংখ্যা নিয়েও ছিল ধুম্র জাল।  নিখোঁজ মানুষের পরিনসংখ্যানও  সঠিকভাবে মিলেনি।

ইতিহাসের এ ভয়াবহতম ঘটনায়  দু'হাজারের বেশি মানুষ মরে বেঁচে গেছেন। আর যারা আহত হয়ে বেঁচে গেছেন, তাদের জীবন চলছে দুর্বিসহ অবস্থায়।

 এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েনি। রসিকতা হয়েছে।  নিপীড়ত মানুষের পক্ষে আমরা কাউকে দাঁড়াতে দেখিনি। সবার শরীরে এখন চিকনাই জমেছে। চোয়ালে জমেছে  লাস্যতা। কেউ রোদে পুড়ে আন্দোলন করে অধিকার আদায়ের লড়াই করতে চান না। আর 'দুনিয়ার মজদুর এক হও লড়াই করা' লোকেরা তো এখন সরকারের চাকা ঘোরাচ্ছে! সুতরাং মরে বেঁচে যাওয়া মানুষের জন্য দিন উল্লেখ করেই শোকই  একমাত্র প্রাপ্য! তাও এর দু এক বছর তাও থাকবে বলে মনে হয় না।