নগরবাসী তুমি এখনো আমার একটাই প্রেম !
নিয়তি— ভাগ্য অন্বেষণ —
নগর দিয়েছে রমণী সঙ্গ
পিৎজার আঠালো চিজ
সসে ডোবানো সিঙ্গাড়া-স্যান্ডউইচ
পোড়া তেলে ভাজা পুরি-জিলাবি
নোংরা গন্ধময় বাতাস আর
সিসার বিচরণ বক্ষ !
যে অসুখ আমি চাইনি, সেটিও এ নগরে
তবুও আমি তারে বলি ‘যাদুর শহর ঢাকা রে!’
অথচ আমার গ্রাম— ভোরের শিশির সিক্ত ঘাস দিয়েছে
জলকেলি করে ছুটে যাওয়া হাঁসের পালের সাথে
বিশুদ্ধ বাতাস !
রমণীয় সঙ্গ — বাজিকর দিন
আহা, আমি —
আমার পলাতক গ্রাম !
যদিও এখন সেখানে রাজনীতির বিষে মরে যাচ্ছে মাছ
ধানের ক্ষেতে পশু পড়া নিয়ে গণ্ডগোল
তবুও তো দিন শেষে, কষ্টের অক্তে—
কেউ কাঁধে রাখে হাত ।
কেউ বলে নে পুলিটা মুখে পুরে
মরিচ বাটার সাথে রসুন মিশিয়ে বানানো ভর্তায়
সেরে নে সকালের নাশতা
বিকাল বেলাটায় হয় চা-সঙ্গ আড্ডা
সে সব দিন গত হতে হতে আমি কেবল নগর দেখি
নগর আপদ যে আমার; এখন নিত্য নিকাশ সঙ্গ
ইন দ্য নেম অফ পলিটিক্যাল পার্টি ‘ধর্ষণ বরদাশত করবে না’
ছবি অন্তর্জাল থেকে নেয়া
বিভৎস ধর্ষণ-দৃশ্য-সঙ্কট বর্ণনার জন্য এ লেখা নয়। এর উদ্দেশ্য আমার মনে ভেতর জমা থাকা কিছু কথা বলা। নারীর সম্মান, নারীর অধিকার এবং তেতুল নিয়ে বিস্তর আলাপ আমরা শুনি। শুনি- এ জন্য বলছি, কারণ আমাদের সবার বয়স হচ্ছে, আমরা শুনি এবং শোনাতে পছন্দ করি বলেই।
আমাদের উচিত শোনা ও শোনানো না। মানানো। আমরা মানাতে পারছি না। এ ব্যর্থতার দায় আমরা এড়াতে পারি না। সরকার হিসাবে, সমাজ হিসাবে, নাগরিক হিসাবে, বাবা মা হিসাবে --- এ ব্যর্থতার দায় আমাদের নিতেই হবে।
এলাকার নাম না করেই বলছি-- দেশের আনাচে কানাচে যে হারে ধর্ষণ হচ্ছে; এ সব সমস্যা সমাধানে আমাদের করণীয় কি হতে পারে, সেটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। আমরা কি করেছি? সেটি নিয়ে আলোচনা নেই। মানে- আমাদের রাষ্ট্র এর জন্য উদাহরণ দেবার মত কী ধরণের শাস্তি আরোপ করেছে, তা আমাদের সামনে নেই। ঘটনা ঘটলে আমরা হই চই করি। তারপর থেমে যাই। আমাদের সামনে এত এত ইস্যু আসে; এ সব তখন চাপা পড়ে যায়। আর ডিজিটাল যামানায় এতদ্রুত আবেগ এবং ক্ষোভ বাড়ে আবার একই সাথে প্রশমিত হয়ে যায় যে, এটা নিয়ে নীতি নির্ধারকদের কারো প্রচুর ভাবনারও প্রয়োজন পড়ে না।
২০০০ সালে মিলিয়েনিয়াম উদযাপনে দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক নারী লাঞ্চনা নিয়ে আমরা নানা রকমের তর্ক বিতর্ক শুনেছি। তারপর ওই ঘটনার ফলাফল-- রাতের বেলার কোন উৎসবে নারীর ঘরের বাইরে আসা বন্ধ হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পয়লা বৈশাখে রাজু স্মৃতি ভাস্কর্যের সামনে একাধিক বড় কুকর্মের খবর আমরা জানি । তার সন্ধ্যার দিকের। সেটি নিয়ে বিস্তর আলাপ-তদন্ত হয়েছে। সেটিও আমরা জানি। কিন্তু ফলাফল শূণ্য।
এ রকম আরো অনেক রকম ঘটনার কথা আমরা জানি। আমরা সব বলি না। বান্দরবানের আলি কদম থেকে সিলেট নগর কিম্বা রাজধানী ঢাকা--- কোথাও নিরাপদ নন নারী। অনিরাপদ জীবন মেনে নিয়েই তাদের দিন চলছে। তাদের পরিবারও বিপর্যস্ত হচ্ছে।
নারীবাদী নেতা নেত্রী এবং শাসক দল নিজেও নারীবাদী হিসাবে নানাভাবে নিজেদের রূপায়িত করেন। এটা নিয়ে আমার মনের ভেতর কোন কষ্ট না। কষ্ট কেবল নারীর জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতা সমানতালে শাসক এবং নাগরিক সবার।
এর জন্য কি করা যেতে পারে বা পারতো--- সে বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত একটু বলি; এর সাথে আপনাদের দ্বিমত থাকতে পারে। আমি সে মতামতকেও শ্রদ্ধা করি---
শুভ পর্যটন; শুভ পর্যটন দিবস
=
পর্যটন কর্মী হিসাবে আমি কাজ করি বছর ২১ হবে। নিজের মত করেই করি। এর মধ্যে কিছুকাল পর্যটনের 'নেতাগিরি'ও করেছি। তবে এবারই প্রথম একটা মহামারি কালে বিশ্ব পর্যটন দিবস দেখছি। এ সময়ে যার থিম ধরা হয়েছে- ট্যুরিজম অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট। বাংলায় যাকে বলা হচ্ছে- 'গ্রামীণ উন্নয়নে পর্যটন'।
পেক কাদা মাখামাখির মেঠোপথ, বৃষ্টি ভেজা কাক-শালিকের ওড়াওড়ি, ঘোলা জলে জোছনা উপভোগের গ্রাম আমাদের। ঋতুভেদে পর্যটনের যে বৈচিত্র; সেটি এই বাংলায় সবচে বেশি। সেই দিক বিবেচনায় আমরা গ্রামীণ পর্যটনে এগিয়ে থাকবার কথা। 'থাকবার কথা' এ জন্য বলছি--- আমরা আসলে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে নেই।
আমাদের দেশের মানুষের জীবনযাত্রা- গ্রামে, গঞ্জে মানুষের জীবনাচরণ, সংস্কৃতি, হাট বাজার, হস্ত শিল্প, কৃষি; পিঠাপুলি আর আপ্যায়ন---এ সব পর্যটনের দামি পণ্য। যদিও আমাদের অনেকের কাছেই এটা খুবই আজগুবি শোনাবে। তবুও এটাই সত্য। অস্ট্রলিয়াতে গ্রামীণ জীবন উপভোগ করা সবচেয়ে ব্যয় বহুল পর্যটন। নিউজিল্যান্ডেও তাই।
শহুরে জীবনে অভ্যস্ত অথবা শহুরে জীবনের দুর্নিবার সুখের সন্ধান মেলে--- এ ভাবনা মাথায় রেখে আমাদের সমাজ ব্যবস্থার ভেতরে ভেতরে যে বদলটা হয়েছে, সেটি আসলে সঠিক এবং গঠনমূলক বদল নয়। গ্রাম ও শহরের মেলবন্ধনটা এখানো জরুরী। সে দিকটা উপেক্ষিত। এর পেছনে বহু কারণও নিশ্চয় আছে।
আজকের বিশ্ব পর্যটন দিবসের পর আবার গ্রাম নিয়ে আলোচনা সে অর্থে জমবে না। তবে এ কথা আমি আরো এক দশক আগেও বহু জায়গায় বলেছি। এখনো বলছি---আমাদের মূল প্রডাক্ট গ্রাম এবং গ্রামের মানুষ। বিদেশিরা এটা দেখতেই এখানে আসতে পারেন। এ দেশের মানুষের সারল্য, বিপদের সময়ও হাত নেড়ে অভিভাবদ কিংবা বন্যায় ডুবে যাওয়া ঘরের উপর বসে হাসতে পারে--- আমাদের গ্রাম বাংলার মানুষ। অকপটে বলতে পারে, এক খিলি পান খান। নেন একটু সরবত খান।
এমনকি অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের কাছেও গ্রাম আকর্ষণীয় হবে। এর কিছুটা অবশ্য আমরা উপভোগ করি বহু বছর থেকে। তার একটি বিরিশিরি । অন্যটি পার্বত্য চট্টগ্রাম। যড়িও ঠিক গ্রাম নয়, পাহাড় এবং জনগোষ্ঠী মিলিয়ে আমাদের একটা সমন্বতি পর্যটন সেখানে। তবে এর বাইরেও বিশাল জগত রয়েছে গ্রামের।
গোধূলী-- নোয়াখালীর একটি গ্রাম থেকে তোলা ছবি
গ্রাম বাংলার কতশত রকমের বৈচিত্র; সেটি কেবল ঢাকা থেকে দু পা ফেলে বের হলেই সহজে উপভোগ করা সম্ভব। একেকটা গ্রামের মানুষের খাদ্য একেক রকম। একেক রকম তাদের গান বাজনা। ধর্ম চর্চা। কৃষি। ফসল তোলার গান। উৎসব। এ সবই গ্রামীণ পর্যটনের অংশ।
আমরা এ পণ্যকে সাজাতে পারি নানাভাবে। সাজানো হচ্ছেও। কমিউনিটি ট্যুরিজমের ডেভেলমন্টে হবে। সামনে এটি অনেকদূর যাবে। দেশের প্রথম গ্রামীণ পর্যটনের ভিতটা তৈরি হয়েছির লাউচাপড়ায়। এখন সেটি ভিন্ন স্থানে ছড়েয়ে যাচ্ছে। এটাকে আরো অর্গানাইজ করতে হবে। পর্যটকের নিরাপত্তা, উৎসব-প্রকৃতি উপভোগের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য এবং এ খাতে বিনিয়োগ আগ্রহ বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। এ উদ্যোগ সরকারি বেসরকারি দু'খাতেই হতে পারে।
আমার ব্যক্তিগত মত- সরকার পৃষ্ঠপোষক হোক। বেসরকারি লোকরাই ব্যবসাটা চালাক। তাহলে এ খাতে সফলতা আসবে।
ওয়াল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) হিসাব বলছে, ২০১৮ সালে দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৩ দশমিক ৯ শতাংশ অবদান পর্যটন খাতের। ২০১৯ সালে এটি কিছু বাড়লে এ মহামারিকালে এটি কমছে। তবে গ্রামীণ পর্যটন ঘুরে দাঁড়ালে এখাতের অবদান জাতীয় কর্মসংস্থান এবং মোট দেশজ উৎপাদনে বাড়বে--- এট নিশ্চিত করেই বলা যায়।
সংস্থাটি বলছে, মহামারিকালে পর্যটন খাতে সারা বিশ্বে সাড়ে ৭ কোটি মানুষ চাকরি হারাবে। লোকসান হবে ২ ট্রিলিয়ন ডলার।
জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা জানাচ্ছে, চলতি বছরই পর্যটন আবার পুরোপুরি চালু হলে তিনটি দৃশ্য দেখা যাবে। ১. জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও পর্যটনে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে ৬১ কোটি পর্যটক পাওয়া যাবে। ২. নিষেধাজ্ঞা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থকলে পর্যটক পাওয়া যাবে ৪০ কোটি। নিষেধাজ্ঞা ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকলে পর্যটক পাওয়া যাবে ৩২ কোটি।
আশার কথা হলো ইতোমেধ্যে বহু দেশে পর্যটনের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে। বাংলাদেশও এটি সহসা তুলে না নিলেও গ্রামীণ পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিতে একটা বড় ধরণের পরিবর্তন আনা সম্ভব। এ কারণে সম্ভব যে মানুষের অভ্যন্তরীন ঘোরাঘুরি উপর ইতোমধ্যে সরকতার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।
পাহাড়-- বান্দরবান । ছবি সংগ্রহ করা।
শুভ পর্যটন। শুভ পর্যটন দিবস।
গল্প :: মায়াময় হাসি, ভালোবাসার ডাক! কিংবা কেমন আছো!
- এখন গ্রামে জোছনা--- ছবি ব্লগারের নিজস্ব
কোন কারণ ছাড়া মানুষের মন খারাপ হয়, এটা মানতে নারাজ রফিক। প্রত্যেকটা জিনিসের পেছেনেই একটা কারণ থাকবে। যেমন- আজকে তার মন খারাপ! এর কোন কারণ খুঁজে বের না করা গেলেও; নিশ্চয় একটা কারণ আছে। এটাই মন খারাপ নিয়ে রফিকের কনক্লুশন।
মন খারাপের সময়টাতে মানুষ অনেক বাজে চিন্তা করে। কেউ চুরুট টানে। বিড়ি ফোঁকে। কারো তিক্ত জল গেলার অভ্যাসও আছে। কেউ ভাবে মইরা যামু! কিন্তু রফিক এ সবের ধারে কাছে যায় না!
মন খারাপের দিনে রফিকের সুইমিং করতে ইচ্ছে করে। সেটি পুকুরের পাতলা জলে। কিংবা নদীতে। অদ্ভূত একট বিষয়। এটা এ নগরে হয় না, এ না হবার বিষয়টা তাকে আরো কষ্ট দেয়। কিন্তু দিন শেষে নিজেকে সামলে নেয় রফিক। কাজের ভেতর ডুব দিলে, দিন কীভাবে কাটে; সেটি আর মনে থাকে না।
গ্রাম ছেড়ে শহরের আসবার কারণে নিজের বেশি বিষাদ--- এমন অভিযোগ তার নিজের বিরুদ্ধে। আবার এটাও তো ঠিক শহরে না এলে মানুষে মানুষে ভেদ, গতি প্রকৃতির কত খেলা-- সে সব তার জানাই হতো না। মাঝে মাঝে মনে হয়--- এত জেনে লাভ কি! মাস শেষে টাকার টানাটান। সংসারে অশান্তি। বুকের ভেতর থেকে ঠাণ্ডা একটা নিঃশ্বাস! সবই রয়ে গেলো।
রফিকের এখনো মনে আছে- শহরে আসার পর মেসে একটচা ঘরে তারা দু'জন থাকতো। দু'জনে অনেক গল্প করতো। গ্রামের গল্প। কলেজের গল্প। নিজের বয়ঃসন্ধি কালের গল্প। যৌবনে নারী শরীরের গল্প। সব গল্প ছাপিয়ে রফিকের কেবল মনে হতো; তার গ্রামের ধান চাষের জন্য চষে রাখা জমির ঘোলার জলে উপর জোছনাটা! অপূর্ব! অপূর্ব সেই দৃশ্য। অপূর্ব সেই দৃশ্য তার ২৫ বছরের জীবনে দ্বিতীয়টি চোখে পড়েনি।
রফিকের কাছে জোছনা উপভোগই বিনোদন। অপূর্ব বিনোদন। সে সময় তো এত ফেসবুক, টুইটার, ইমো আর ম্যাসেন্জার আসেনি। পড়াশোনার ফাঁকে একটু ফুসরত পেলে জানালার বাইরে নড়াচড়া করা পাতার রহস্য ভেদ ভাবনা কিংবা জোছনা রাতে ঘরের বাইরে থেকে হেঁটে আসাটাই ছিল উপভোগ্য। অথবা ঘোর মেঘাচ্ছন্ন বিকালে দৌড়ে বাড়ি ফেরার পর আর টিনের চালে বৃষ্টি অবিরত শব্দ। কী অপূর্ব সেই দৃশ্য।
শহরে সে সবের বালাই নেই। এখানে প্রায় সব মানুষই ধান্দায় ঘোরে, ধান্দায় ফেরে। ধান্দাটাই এখানে আসল। বাকি সব মিথ্যা। এই যে পাশের বাসার মেয়েটি উঁকি দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো, সেটিও একটা ফিকির!
ইভ্যালি---পেশাদারিত্বটাই যেখানে দরকার ছিল!
কান্নার ছবি'র ছবি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সৌজন্যে
ইভ্যালির মালিক মি. মোহাম্মদ রাসেলের লাইভটা দেখে খারাপ লাগলো। তাঁর কান্নাটা আমার পছন্দ হয়নি। এখানে সে অর্থে উনি ব্যবসায়ি হয়ে উঠতে পারেননি। পারেননি--- এ কারণে বলছি, যদিও তাঁর হিসাবে ৭০০ মানুষ তাঁর সাথে কাজ করছেন সরাসরি । ১৩শ মানুষ ডেলিভারি করার জন্য যুক্ত আছেন। তাহলে মোটের উপর ২ হাজার লোকের জন্য যে দক্ষ নেতৃত্ব তাঁর দরকার সেটি নেই। এটা ত্যানা না পেঁচিয়ে সারাসরি বলেই নিলাম।
দেশের প্রভাবশালী দৈনিক প্রথম আলো তাদের যে সব তথ্য/ভুল তুলে ধরেছে ইভ্যালির ইউজার হিসাবে আমি এর সাথে মোটামুটি একমত। যাঁরা সরকারের ই-কমার্স নীতিমালাটি পাঠ করেছেন তাঁরাও বলবেন, তারা এর বেশ কিছু ধারা লঙ্ঘন করছেন। এবং নিয়তই করে যাচ্ছেন।
ইভ্যালি কল সেন্টারটি কাজ করে না। এ সত্য। আপনি পণ্য নিয়ে অভিযোগ করবেন সেটিরও উত্তর মেলেনা। আমি নিজে অন্তত চারটি অভিযোগ লগ করে আপনাদের বলছি। এবং এ অভিযোগ লগের পর কোন ডকুমেন্ট থাকে না। যদিও লাইভে এসে তিনি বলেছেন, সব সিস্টেম ডিজিটাল করার জন্য তারা ক্যাশ অন ডেলিভারিটা রাখেননি। তাহলে সমস্যার সমাধানে ই-টোকেন সিস্টেম রাখতে পারেতেন। এটা অনেক ফুড ডেলিভারি সাইট; এমনকি টেলিকম অপারেটরাও ইলেট্রনিক কমপ্লেইনের ক্ষেত্রে রেখেছেন।
জানি না; চলমান ধাক্কাটা ইভ্যালিকে কোথায় দাঁড় করাবে। আমি অবশ্য তাদের সাইটে কেনাকাটা অব্যাহত রেখেছি। অন্য অর্থে বললে বাধ্য হয়েছি। কারণ ইভ্যালি ক্যাশে আমার বেশ কিছু টাকা জমে আছে। সে খরচ করার জন্য আমাকে কেনাকাটা করতে হবে। আমার প্রায় ১০টির মত অর্ডার এখানো ঝুলে আছে। তাতেও আমার আপত্তি নেই। এমন ক্রাইসিসে তারা এটা ডেলিভারি করতে সময় নিবেন এটাই স্বাভাবিক। মজার বিষয় হলো ডেলিভারি অপশনে আপনাকে বাধ্যতামূলক ক্লিক করতে হবে ৭ থেকে ৪৫ কর্ম দিবসে আপনি অর্ডারটি ডেলিভারি পাবেন। তবে এ ডেলিভারি এক মাসের আগে রেয়ার হয়।
যেটি মূলত আমি বলতে চাইছি--- মি. রাসেল আলীবাবার মত আমাদের দেশের জিডিপিতে বড় ধরণের অবদানের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করছেন--- এমন একটা বক্তব্য ২৯ আগস্টের লাইভে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁর সমানে গ্রাফ ছিল বলছিলেন, যদিও সেটি লাইভে আমরা দেখিনি। দেখেছি আবেগময় কিছু কথা। তাঁর পানি খাবার স্টাইলটাও পছন্দ হয়নি। একটি বড় কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতাসুলভ কিছু চোখে পড়েনি।
যে বিষয়গুলোতে তাঁর/তার কোম্পানির ভীষণ দূর্বলতা আমার চোখে ধরা পড়েছে--- সে গুলোই বলি। এটা উনি জানতে পারলে হয়ত কাজে দেবে। সে জন্যই বলা। আমরাও চাই দেশি একটা কোম্পানি বড় হোক। বড় হলে আমরাও বলতে পারি আমােদের একটা বড় কোম্পানি আছে।
ইভ্যালি'র লোগো--- গুগল থেকে নেয়া
চুরি হয়েছে সেই উনুন উষ্ণতা
কবেই পালিয়েছে
উষ্ণতার খোঁজে উনুনপাড়ে হাত মেলে ধরার সকাল
উধাও হয়েছে নির্ভেজাল আনন্দের ভোর
খেজুর রসের হাঁড়ি ঘিরে ভাইবোনদের আনন্দ অপেক্ষা
থালার শিরনি শেষ হওয়ার আগে
মায়ের সেই আদুরে ডাক
আর নিবি?... নে আরেকটু --- এখন মা-কে সে কথা আমরা কেউ বলি না
জীবনের কারণে-জীবিকার খোঁজে আমরা অন্য কোথাও!
নিখাঁদ ভালোবাসাও পালিয়েছে
পালিয়েছে মায়াবী চোখে আবেগি ক্ষণ-অপেক্ষা
বাদুরের নখের থাবায় ঝরে পড়া বাদাম কুড়ানোর ভোর!
কাদা মাখামাখি হাতে---কিছু কৈ, টাকি আর শিং মাছ!
আর প্রিয়মুখ গুলো একসাথে বসে---
দুপুরের খাবার আর রাত---
হারিকেনের আলোয় উজ্জ্বল রাত!
এখন ব্যস্ত সবাই...চুরি হয়েছে সেই উনুন উষ্ণতা
মায়ের চোখে এখন চশমা...
রান্নাঘরের নাম হয়েছে কিচেন
আগমন ঘরেটছে বুয়া'র!
শহুরের সভ্যতার কিন্চিত বাড়তি চাপ গ্রামে
বিটুমিনের রাস্তা হয়েছে
বোতলে গ্যাস-- বুকের ভেতরের মায়াটা হালকা হতে হতে
এখন সবই গা সহা! আহ্হা সময়!!
স্পর্ধিত তরুণী বশীকরণে ধরবো বাজি!
আমার কী এখন সেই বয়েস!
স্পর্ধিত তরুণী বশীকরণে ধরবো বাজি!
কিম্বা পাহাড়ের ভাঁজে লুটিয়ে থাকা
কামুক কুমারী জোছনার সাথে আড়ির!
তবুও খেলি--বাজি!
অগণন সময় অনিশ্চিত
বয়ে যায়
নৌকার ছইয়ের উপর যেমন জল ছিটকে পড়ে
শুকিয়ে যাওয়া জলে অবশিষ্ট থাকে কিছু নুন
সে নুন গুণ-ধারণ না করলেও নারীর চোখের মতই মোহনীয় তার ভঙ্গি!
আমার কী এখন সেই বয়েস
তার চোখে চোখ রেখে নৌকা বাই
তার চুলে নাক ডুবিয়ে বলি-
আহা শিউলিতলায় এমন গন্ধ মেখেছি বহুবার
রাত জুড়ে হাস্নাহেনার যে গন্ধ আমায় আকুল করেছিলো---
সেই গন্ধ তার শরীরে!
আমি নিবীড় হই, ডুবে যাই
ভেসে উঠি হাঁসের মত---
উচ্ছ্বল বকের মত উড়ে যাই পাখা মেলে---
বয়েস!
চুরি হয়ে যায় আমার সোনামাখা রোদ্দুরে দুপুর
ধান ক্ষেতের আলে শিষ দিয়ে ছুটে চলা কিশোরটা এখন তরুণ
কই মাছটা ধানের ফুল খেতে টপকাতে টপকাতে কারো জালে ধরা পড়ে
চুরি হয়ে যায় আমার সোনামাখা রোদ্দুরে দুপুর
শীতের দুপুর---
পওষের টানে নেমে যাওয়া ক্ষেতের পানির পর কিছু জমে থাকে
সেই কাদাপানির ভেতর জমে থাকা মাছ শিকারে
--- কাদা মাখামাখি খেলা
আহা কৈশর!!
উন্নয়ন এসেছে নগরে, গ্রামেও
কাদা মাখামাখির দিন নেই, সুতরো কাপড়, ইলেকট্রিক গাড়ি!
সাথে করে নিয়ে এসেছে রোগ বালাই, উন্নয়ন অসুখ যার নাম
হার্টের বেরাম, ফুসফুসের বেরাম, কোলনের বেরাম, রক্ত চাপের বেরাম, আরো কত রেকমের বেরাম!
এরকম বহু বেরাম এসেছে উন্নয়নের ঘাঁড়ে চেপে!
রাস্তা খোঁড়ার ধুলো, ক’দিন পর ইট ভাঙ্গা আর যান্ত্রিক যানবাহন
সবুজ শৈশব, কৈশরের স্মৃতিকে করেছে নষ্ট!!
ডাক্তাররা বলেন-- স্ট্রেস---স্ট্রেস থেকেই নাকি এ সব বালাই হয়
সে সাথে বাড়ে খরচ! প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ!!
বুক ভরে গ্রামের যে আইলের উপর দাঁড়িয়ে শ্বাস নিতাম--- শান্তিতে ভরে যেত মন
শরীরটা হালকা হয়ে যেত-- এখন সেখানে কালো ধোঁয়া
যে নগরে পর্দা খুলে দিলে হালকা বাতাস ছুঁয়ে যেত ... সে নগরে নেমে আসে ধূলোর আস্তরণ--- কুয়াশার মতন!
তবুও উন্নয়ন চাই আমাদের --- কলের যুগ, যন্ত্রের যুগ, এলইডির যুগ
নতুন বছরে আসছে চুম্বকের যুগ--- যেটার নাম হয়েছে আইওটি(ইন্টারনেট অব থিংস)!
সব আটকে যাচ্ছে নীল আলোয়, চুম্বকের ভেতর
আটকে যাচ্ছে স্বপ্নগুলো--
শৈশব, উৎসব পার্বন এবং দুঃখ্খগুলো আটকে যাচ্ছে নীলের জালে --- বাড়ছে বালাই
মনের অসুখ-- শরীরের অসুখ!
আহা জীবন!
সংবাদ তৃষ্ণা!
- তবুও সংবাদ, সংবাদকর্মীরা কাজ করেন। এটাকে সমাজারে প্রতি দায় না বলে আমি বলি নেশা থেকে। এ সব সংবাদকর্মী চাইলে জীবনে বহুভাবে নিজের জীবিকা নিশ্চিত করতে পারতেন, সেটি না করে তাঁরা সংবাদের নেশায় মেতে আছেন। নতুন খবর, নতুন একটি প্রতিবেদন নতুন করে পিতা হবার অনুভূতির মত!
৪.দেশীয় সংবাদ মাধ্যমের উপর মানুষের আস্থা কম। এটা ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ। এ আস্থার সঙ্কটের সুযোগটা নিয়ে অনেক সাধারণ মানুষ- অসৎ উদ্দেশে সংবাদ, সংবাদের নামে গুজব কিন্তু বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে-ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রামের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আবার বহু ভালো খবরও দিচ্ছে এসব মাধ্যম। বহু নতুন খবরের উৎসও হচ্ছে।
‘ও বাঁশি খুন করেছে’
এমন পিতা যেনো কারো না হয়!
ছবি সৌজন্য: সময় নিউজ ডট টিভি।
পিতার কুকীর্তির ভার সন্তান ও স্বজনদের বইতে হবে। এমন কেন হয়। এমন কেন হবে। মায়ের কুকর্ম সারাজীবন সন্তানকে তাড়া করে বেড়াবে, এমন মাও কেন। তবুও হয়, সমাজে বহুযুগ ধরে এসব চলে আসছে। সে চলে আসাটাকে সহজ করেই দেখে সমাজবিজ্ঞানীরা।
কিন্তু এ সবের প্রচার-প্রসার করে যারা বিকৃত আনন্দ উপভোগ করেন, তাদেরও ভাবা উচিত.. অপরাধ যে করেছে শাস্তি তার প্রপ্য। এ জন্য পুরো পরিবার, স্বজনদের বিব্রত করা... কঠিন সঙ্কটে ফেলে দেওয়াটা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।যা ঘটেছে, তা দু’জনের সম্মতিতে। অনৈতিক এ সম্পর্কের ভিডিও যারা প্রচার করেছেন, তাদের কোন মতলব থাকতে পারে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তারা যদি চাইতেন এ অনৈতিক কাজের জন্য দণ্ড হোক তাহলে তারা এটি সরকারের অপরাধ দমন বিভাগে জানাতে পারতেন। তা না করে এর প্রচার - নৈতিকভিাবে সমর্থন করা যায় না।
সাধনা, যিনি ডিসি সাবের অফিসের সহকারি- তার কথাও ভাবুন... ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণের পুরনো লিপ্সা তার মত একজন সাধারণ নারীর মধ্যে জন্মেছে ঠিক, কিন্তু এর এত বাড় বাড়ন্ত হওয়ায়টা একটা কঠিন সময় হাজির করেছে।
সংবাদ মাধ্যমের বিবরণীতে তাকে ছায়া ডিসিও বলা হচ্ছে। যা-ই হোক না কেন, নিজেকে সঁপে দিলেন, সাধনা। এমন ক্ষমতাবান হয়ে লাভ কি হলো... চূড়ান্তে সব উড়ান দিল.. জীবন বড় নির্মম। সময় বড়ই অস্থির।
কেবল রসিয়ে এসব আলোচনা না করে অবক্ষয়ের দিকটাও ভাবি... আমরা নিজের জায়গা থেকে ঠিক হয়ে যাই। সবাই সুন্দর পরিবার-আনন্দময় জীবনে উৎসাহিত হোন।
পরকালীন যাত্রা শান্তিময় হোক প্রিয় কবি আল মাহমুদ
ছবি : এনটিভি অনলাইন
জমিদারি রক্ত বহন করলেও মানুষটা সারা জীবন কইছেন গ্রাম বাংলার কথা। লোকজ ধারার শব্দ সম্ভার দিয়ে আধুনিক কবিতাতে সমৃদ্ধ করেছেন। বুনেছেন- নতুন, বৈচিত্র্যময় এক অনন্য কবিতার ভুবন। রাজনীতির সুতোয় ঘিরে যাঁরা তাঁকে মূল্যায়ন করেছেন, তারা নিশ্চিতভাবে তাঁর প্রতি, তাঁর সাহিত্য কর্মের প্রতি, অকপটে নিজের সারল্য তুলে ধরা এক কবির প্রতি সুবিচার করেননি! এটা নিশ্চিত।
আল মাহমুদের সাথে আমার পরিচয় অল্প সময়ে। একজন সাংবাদিকের পরিচয় যেমনটা হয়, ঠিক সে রকম। ক্ষেত্রে বিশেষ তারচে কম। আমি ক’ বার তার সাথে কথা বলেছি। ফোনে। সরাসরি কথা বলেছিল অল্প ক’বার। তাও বই মেলা বা শিল্পকলায়।
যতদূর বুঝতে পেরেছি, তাঁর ভেতরের সারল্য অনুভব করেছি। তাঁর সাথে প্রথম সরাসরি দেখা বা কথা সম্ভবত বিউটি বোর্ডিংয়ে। শামসুর রাহমান এবং আল মাহমুদ একসাথে এসেছিলেন, কোন এক অনুষ্ঠানে।
তবে আল মাহমুদের লেখার সাথে আমি কৈশরেই পরিচিত। তার গল্প কবিতা আমাকে প্রচণ্ড রকমের স্পর্শ করেছে। তার গল্পের বই পানকৌড়ির রক্ত আমার ভীষন প্রিয়। তাঁর গল্প জলবেশ্যাও । ওই গল্পে একটা যৌবন, একটা জীবিকা আর একটা মৃত্যুর অনন্য মিথিস্ক্রয়া আছে। ইনডিয়াতে এটা সিনামাও হয়েছে। বাংলাদেশে হয়নি, কারণ বঙ্গে আল মাহমুদ মৌলবাদী হিসাবে বিবৃত হয়। তাঁকে কোনঠাঁসা করার কবি-রাজনীতি এখানে প্রকট।
তাঁর কাছে এ বিষয়টিই আমি জানতে চেয়েছিলাম, সম্ভবত ২০১১ বা ১৩তে। জিগেশ করেছিলাম- আপনি মৌলবাদী। এমন প্রচার আছে। আপনার অবস্থান কি? হাসলেন আল মাহমুদ। বললেন, আমার বিরুদ্ধে এটা প্রধান অভিযোগ। আমি মৌলবাদী। এই অভিযোগের প্রকৃতপক্ষে কোনো ভিত্তি না থাকলেও আমার প্রাপ্য সম্মান থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
ঘটনা সঠিক। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সম্মাননা পাননি। যদিও বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর ঋণের কথা তিনি তাঁর কাবিলের বোনের উল্লেখ করেছেন।
তাঁর কথা ছিল সে দিন এ রকম- ‘আমি অনেকদিন আগেই প্রতিযোগিতামূলক দৌড় থেকে অবসর নিয়েছি, তবুও কেন যে আমার এত অনিষ্টকারী প্রতিযোগি আছে তা আল্লাহই জানেন। দীর্ঘ জীবনই আমাকে বিজয়ীর বরমাল্য পরিয়ে দিয়েছে।’
কবি না হলে কি হতে তিনি সে প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন । বলেছিলেন, ‘আমি যদি সাহিত্যের লোক না হতাম, তাহলে সঙ্গীতই হতো আমার উপজীব্য।’
আল মাহমুদের কথাই বলি-‘কবির কোনো বয়স নেই, বিনাশ নেই। তারা চিরদিনের চিরকালের। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একজন কবি দৃশ্যত লোকান্তরিত হলেও তিনি বেঁচে থাকেন তাঁর কর্মে ও কবিতায়।’
আল মাহমুদ বেঁচে থাকবেন সাহিত্যামোদিরে মননে। পরকালীন যাত্রা শান্তিময় হোক প্রিয় কবি।
শেষে আমার প্রিয় ক’লাইন, আল মাহমুদের সোনালী কাবিন-১০ থেকে
‘‘ ...আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বণ্টন,
পরম স্বস্তির মন্ত্রে গেয়ে ওঠো শ্রেণীর উচ্ছেদ,
এমন প্রেমের বাক্য সাহসিনী করো উচ্চারণ
যেন না ঢুকতে পারে লোকধর্মে আর ভেদাভেদ । ’’
'আমাকে যেন ভুলে না যাও...’
দিলখোলা বুলবুল ভাই। হাসতেন প্রাণখুলে। কথা বলতেন মন খুলে। সুরকার হিসাবে নন্দিত। গাইতেনও। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল- বাংলাগানের কিংবদন্তীর সুরকার। তাঁর সাথে প্রথম সরাসরি আলাপ পরিচয় ২০০৫ সালে। ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁছে বাংলাদেশ- শিরোনামে একটি প্রতিযোগিতায় তিনি বিচারক ছিলেন। সে কারণেই তার সাথে আলাপ হতো বেশি।
প্রথমবারের প্রতিযোগিতার অডিশন রাউন্ড কভার করতে ঢাকার কয়েকজন সহকর্মীর সাথে আমিও ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা, ফরিদপুর, সিলেট, ময়নসিংহ-সহ বেশ কয়েকটি জায়গা গিয়েছিলাম। নিউজের খাতিরেই বুলবুল ভাইয়ের সাথে কথা হতো। অডিশন রাউন্ড কভার শেষে তার সাথে আলাপ-আড্ডা জমতো। তাঁর সাথে সন্তান সামিরওথাকত। সে সময় সামির শিশু। অডিশন নেয়ার ফাঁকে বুলবুল ভাই সামিরকে বেশ সময়ও দিতেন।
নতুন এক বুলবুল ভাইকে আবিষ্কার করি সে সময়। সম্পর্কটা খুব পোক্ত না হলেও টেকসই ছিল। ২০০৫ থেকে টানা প্রতিযোগিতাটি কভার করেছি। একই প্রতিযোগিতার রিপোর্টের খাতিরে তার সাথে বাবার বার নানা প্রসঙ্গে আলাপ হতো। সাঁইজির গানের ভক্ত ছিলেন বুলবুল ভাই। শেকড়ের গানের প্রতি তাঁর প্রচণ্ড টান ছিল। সুযোগ পেলে পুরনো দিনের গান, গানের আয়োজনের প্রসঙ্গ তুলতেন।
২০১১ সালের পর খবরের কাগজে কর্মস্থল বদলের পর গান নিয়ে খুব একটা আলোচনা হতো না। এর মধ্যে গত বছর জানলাম বুলবুল ভাই অসুস্থ। হৃদরোগে আক্রান্ত গানের বুলবুল। মনটা খারাপ হয়েছিল, হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়েই ফিরেছিলেন তিনি,সে খবরও ছিল। কিন্তু শেষতক তিনি আমাদের ছেড়েই গেলেন।
সব মানুষ মারা যাবে। এটাই সৃষ্টিকর্তার নিয়ম। তবুও বুলবুল ভাইদের এত দ্রুত চলে যাওয়াটা কষ্ট দিচ্ছে। সমাজে গানের নামে যাচ্ছে তাইয়ের সময়েও বুলবুল ভাই তাঁর নীতিতে অটল ছিলেন। কথিত আধুনিকতার জোয়ারে গা ভাসাননি। এটা কম কথা নয়। সামাজিক মাধ্যমে 'বুস্ট' করে কেনা জনপ্রিয়তার সময়ও তিনি স্বতন্ত্র ছিলেন। বলেছেন, গানের কথা, ভালো গান করার জন্য নতুনদের প্রেরণা জুগিয়েছেন সব সময়।
হৃদরোগ রোগ তাঁকে ছাড়োনি। কাজেও তিনি অনুপুস্থিত । ব্যস্ত নগরে তাই হয়ত অনেকেই তারঁ খবর নেননি। সে জন্যই হয়ত ২ জানুয়ারি তিনি ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করেছেন, লিখেছেন 'আমাকে যেন ভুলে না যাও... তাই একটা ছবি পোস্ট করে মুখটা মনে করিয়ে দিলাম।’ -----কী নির্মম সত্য বুলবুল ভাই, আমাদের মনে করিয়ে দেয়ার দিনকুড়ি পরে তিনি নিজেই আমাদের ভুলে চলে গেলেন। পরকালীন জীবন কল্যাণকর হোক বুলবুল ভাই।
কিংবদন্তীর মৃত্যু নেই। এ কেবল লোকান্তর। পরকালীন জীবন মঙ্গলময় হোক প্রিয় আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। আপনার সঙ্গীত, সুর, বাংলা গানের সমৃদ্ধি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দেবে-।
কোটি টাকা উঠছে কার হাতে?
বাংলাদেশ জিজ্ঞাসার চূড়ান্ত পর্বে তার সাথে লড়বেন নরসিংদীর ছেলে শামীম আহমেদ। নিজের লালিত স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশ জিজ্ঞাসা তার জন্য এক যুতসই প্লাটফর্ম উল্লেখ করে শামীম বলছেন, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের একটা কথা-মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। এটা আমাকে আলোড়িত করেছে। তাই আমি আমার স্বপ্ন পূরণে লড়ছি। কি তাঁর স্বপ্ন? সেটি তিনি এখনই বলতে চাননি!
ঝিনাইদহের ছেলে বেনজির আহমেদ চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেবেন। শৈশবে আগুনে পুড়ে যাওয়া বেনজির মাদরাসায় পড়াশোনা করেছেন। উচ্চ মাধ্যমিকের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। বেনজির মায়ের শিক্ষানুরাগী মনের দিকটি বিবেচনায় এনে তিনি ঝিনাইদহে নিজ গ্রামে গড়ে তেলেন পাঠাগার। এর জন্য তিনি নিজে মাটি কেটে পাঠাগারের জায়গা ঠিক করেছেন। জীবনের অর্জন উপার্জন দিয়ে তিনি তার এলাকায় পাঠাগার ও শিক্ষা উন্নয়নে কাজ করবেন বলে জানান।
পিরোজপুরের ছেলে মহসিন আহমেদ বলছেন, গুণগত শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। তিনি পথ শিশু ও নারী শিক্ষার আলো পিরোজপুরে এবং ধীরে ধীরে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চান।
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের আজকের বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দিনের প্রশ্নের মুখোমুখি হন প্রতিযোগিরা।
ছবিতে বাঁ থেকে শামীম, মহসীন, উপস্থাপক, বেনজির এবং প্রীতীশ |
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিতে সম্প্রচারিত ৪৭ বছরের বাংলাদেশের অর্জন, সাফল্য, ব্যর্থতা নিয়ে আড়াই মাস ধরে চলা জ্ঞানভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতা বাংলাদেশ জিজ্ঞাসার চূড়ান্ত পর্বের দিকে তাই নজর সবার। শ্বাসরুদ্ধকর প্রতীক্ষার পালা শেষ হবে বিজয় দিবসে, রোববার, ১৬ ডিসেম্বর রাত ১০ টায়।
সারা দেশের ৮০ হাজার প্রতিযোগী থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে লিথিক পরীক্ষার মাধ্যমে ৬৪ জনকে নির্বাচিত করার পর তাঁদের নিয়ে ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হয় বাংলাদেশ জিজ্ঞাসার টেলিভিশন সম্প্রচার পর্ব। ৬৪ জন থেকে ৮ জনকে নিয়ে ৭ ও ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সেমি ফাইনালে নির্বাচিত হন ৪ জন।
কুইজ শো বাংলাদেশ জিজ্ঞাসার চ্যাম্পিয়ন পাবেন এক কোটি টাকা পুরস্কার। প্রথম রানার আপ ২৫ লাখ টাকা, দ্বিতীয় রানার আপ ১৫ লাখ টাকা এবং তৃতীয় রানার আপ পাবেন ৫ লাখ টাকা।
বালিকা বয়সে যৌন নিপীড়ন এবং দেবী!
ছবি জয়ার ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া।
রানুর বয়স কত? মানে জয়া আহসান। দেবী সিনামার কেন্দ্রীয় চরিত্র। স্ক্রিণে তাকে তেইশের বেশি বলা যাবে না B-)। কখনো সখনো সেটি ৩৩ পর্যন্ত নেয়া যেতে পারে ;) । রানু, হুমায়ূন আহমেদের ভৌতিক উপন্যাসের প্রথম কেন্দ্রীয় ভাবনা, এটি এবার বড় পর্দায় হাজির করেছেন জয়া।
বালিকা বয়সে যৌন নিপীড়ন একটা মেয়েকে তার কল্পনা জগতে কত রকমের রহস্যময় সাইকোলজির ভেতর দিয়ে নিয়ে যায়- হুমায়ুন আহমেদ, কিংবদন্তীর কথা শিল্পী এটাই মেলে ধরেছিলেন তার দেবী উপন্যাসে। সেটিই পর্দায় হাজির করেছে সি-তে সিনেমা।
জীবনের জটিল সমাধান সূত্র যে সব সাইকো থেরাপিস্ট বা সাইকোলজিস্টের কাছে, তারাও অনেক সময় সেটি ব্যাখ্যা করতে পারেন না। যেমন রানুর ট্রান্সফরমেশনটা মিসির আলী ব্যাখ্যা করতে পারেননি। এমন ব্যাখ্যাতীত বিষয়গুলো ধরে সিনেমা বাংলাদেশে মনে করার মত সময়ে হয়েছে বলে জানি না।
দেবী- সে অভাবটা পূরণ করেছে। তবে এখানে আরো সাসপেনশন, বক্তব্যের তীক্ষ্ণতা দরকার ছিল, যেখানে চিত্র নাট্যকারের সফলতা নিয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্নটা দেয়া যেতেই পারে!
প্রযোজক হিসাবে দেবী- জয়ার প্রথম প্রযোজনা। অভিনেত্রী হিসাবে ভৌতিক সিনামায়ও তার এটা প্রথম বড় পর্দার আসা, যদি আমার স্মৃতি বঙ্গীয় ইলেকশনের মত আমাকে প্রতারিত না করে, তাহলে এটাই সহীহ কথা।
জয়ার পর্দার শরীরে রূপবতী নায়িকা যে ছাপ হুমায়ুন তার ছবিতে আঁকেন তা ছিল, পুরো মাত্রায় ছিল। তাই এ দিকটা সফলভাবে চিত্রায়িত। ভৌাতিক ঘটনাটাও একইভাবে এসেছে। তবে শেষ দিকে ক্লাইমেক্স বলতে সিনামার ছকে যেটাকে বোঝানো হয়, সেটি হুমায়ূন আহমেদের দেবী বইতে থাকলেও সিনামায় সেটি প্রচ্ছন্নভাবে আসেনি।
মিসির আলীর ঘটনার গভীরে যাবার চেষ্টা এবং রানুর তাঁকে প্রথাগতভাবে চমকে দেয়ার ভাবনাটা ছিল এখানে উল্লেখযোগ্য।
চঞ্চল চৌধুরী মিসির আলী হিসাবে দশে ৬ দেয়া যেতে পারে। এটা আমার ব্যক্তিগত মত। কারণ হুমায়ুন যে রকম এক মিসির আলীকে পাঠকের সামনে হাজির করেছেন, সেটি পর্দায় তুলে আনার ক্ষেত্রে আমাদের অত্যন্ত দক্ষ এ অভিনেতা চঞ্চল দেবীতে পুরোপুরি সফল!- এ কথা আমার মত ছোট দর্শক বলতে পারবে না।
গল্পটা বইয়ের মতই। চিত্রনাট্যকারের এখানে বাড়তি কোন কারিশমা নেই। বরং মিসির আলী গুটগুটে অন্ধকার বাড়িতে এটা আলোর হাতছানি ছিল। এটা হবার কথা নয়। তবুও হয়েছে।
শেষ দৃশ্যে আসলে নীলুই রানু হবার কথা ছিল। সেটি হয়নি। কারণ এখানে একটা কাহিনীগত ট্রান্সফরমেশন ছিল মূল গল্পে। কাহিনী ঠিক রাখলে মানুষ বদলায়নি সিনামা। এটা বড় ত্রুটি। কারণ আমার মতে এ গল্পের মূল স্রোত যৌন নিপীড়ন। সেখান থেকেই একটা অতি প্রাকৃতিক বিষয় রানুর ভেতর চলে আসে। এটার যদিও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, তবুও এটা তো সমাজে আছে। সেই সমাজের গল্পটাই সমাজের মত করে বলার ঢংটা হুমায়ূন ঠিক রাখলেও চিত্রনাট্য সে সাক্ষ্য দিচ্ছে না।
তবুও একথা সঠিক এবং সত্য জয়ার প্রথম প্রযোজনার সিনামাটি দেখলে টাকা উশুল হবে। যদিও সিনামায় তার স্বামী চরিত্র আনিসের অভিনয় অত্যন্ত ম্যারমেরা। তারপরেও। ভালো লাগবে। অন্তত যারা হুমায়ূন পড়ে বড় হয়েছেন, তাদের জন্য জয়ার সি-তে সিনামার প্রযোজনা ভালো লাগবে। পরিচালনা করেছে অনম বিশ্বাস। অভিনয় করেছে জয়া, চঞ্চল ছাড়াও শবনম ফারিয়া, অনিমেষ আইচ এবং আরো অনেকে। সিনামাটির জনসংযোগ কনটেন্ট সহযোগি ছিল ইম্প্যাক্ট পিআর।
ছবির পোস্টার, জয়ার ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া
অভিন্ন কলরেটের অভিজ্ঞতা কেমন?
ছবি আন্তর্জাল থেকে নেয়া
বাজারে প্রতিযোগি তৈরিতে সফল হতে না পারার পর টেলিকম রেগুলেটর বিটিআরসি একটা জায়গায় এসে অভিন্ন কলরেট করার যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে, এতে অনেক গ্রাহকই আহত হয়েছেন। আবার খুশীও হয়েছেন অনেকে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি এর প্রভাব আঁচ করতে পারিনি। কারণ আমি একটি অপারেটরের বান্ডেল প্যাক ইউজার। ৪৯১ টাকায় ৬০০ মিনিট টক টাইম, ১০০ এসএসএম আর ৪ জিবি ইন্টারনেট পাই। এটা দিয়েই আমার মাস চলে যায়। অভিন্ন কলরেটের প্রভাব এই প্যাকেজে নাই।
তবে অসুবিধাও হয়েছে অনেকের। আমার আম্মা যেটি, বলছিলেন- তিনি গ্রামীণফোনের ১০৯ টাকার প্যাকেজ খরিদ করতেন। এতে বেশ সুবিধাই ছিল । এখন তার খরচা বাড়িয়েছে অপারেটরটি। তাই ১০৯ টাকায় কাজ হচ্ছে না। এ প্যাকও নেই।
আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যরাও এফএনএফ সুবিধা উপভোগ করতেন, সেটি এখন আর নাই। এতে তাদের খরচ বেড়েছে।
রেগুলেটর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এ দিকটা মাথায় রাখছে বলে মনে হয় না। যদি রেগুলেটর ইন্টারকানেকশন ফি রাখতে পারে, তাহলে তার এফএনএফ সুবিধাটাও জায়েজ করে দিতে পারতো। এটা না করার কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে।
আমরা লক্ষ্য করেছি, তুলনামূলক বাজার ব্যবস্থায় অপারেটররা নিজেদের মধ্যে এফএনএফরে বাইরে ভিন্ন অপারেটরেও এফএনএফ সুবিধা দিচ্ছিলো। বাজারে একটা ভেতরে ভেতরে প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছিল। তবে একথা সত্য টেলিকম বাজারে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড শুরু থেকেই ছিল না। না থাকার সে দায়টা কার? সেটিও নির্ণয় করা দরকার।
রেগুলেটরকে উদ্ধৃত করে খবরের কাগজগুলোর বয়ানে বলা হচ্ছে, বহু প্যাকেজে বিভ্রান্ত গ্রাহককে একটা সহজ সমাধানে নিয়ে এসেছে, অভিন্ন কলরেট। এর সাথে আমার দ্বিমত নই।
তবে খরচাটা আরেকটু কমানো দরকার ছিল। এটি যদি ফ্লোর প্রাইস ৫০ পয়সা না করে আরেকটু কমানো যেত। ৩০ পয়সা বা ৪০ পয়সা তাহলে ঠিক সুবিধা হতো। সেটি সুবিধাটা কিন্তু রেগুলেটর এখনো নিশ্চিত করতে পারে।
রেগুলেটরের যুক্তি অবশ্য আমি নাকচ করি না। তারা বলত চাইছে, আমরা যে বক্তব্য পাচ্ছি সেটি কেবল ২৫ পয়সা মিনিটে কথা বলা নিয়ে। কিন্তু অফনেট কল করার জন্য যে এক টাকা বা তারো বেশি চার্জ করা হতো, সেটি কিন্তু কেউ বলছেন না। আমরা বাজার অ্যাসেস করে এক সুষম কলরেট ঠিক করেছি। গ্রাহকরা সহসা এর উপকার সম্পর্কে বলবেন।
অভিন্ন কলরেটর পক্ষে থাকা অপারেটরদের যুক্তি অভিন্ন কলরেট চালুর আগে অপারেটর ভেদে অন-নেট কলের মিনিট প্রতি গড় মূল্য ৩৫ থেকে ৫৩ পয়সা। অফ-নেটের ক্ষেত্রে মিনিট প্রতি ৮৫ পয়সা থেকে ১ টাকা। সব অপারেটরের গড় কলরেট বিবেচনায় আনলে অন-নেটের গড় মূল্য মিনিট প্রতি ৪৯ পয়সা এবং অফ-নেটে ৯১ পয়সা।
বাজার প্রতিযোগিতায় নিজস্ব ব্যবসায়িক কৌশলের অংশ হিসাবে প্রত্যেক অপারেটরের ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেজ দিতো। যেমন কোন প্যাকেজে অন-নেট কলের মিনিট প্রতি মূল্য ৫০ থেকে ৬০ পয়সার উপরে। আবার কোন প্যাকেজে অফ-নেট কলের মিনিট প্রতি মূল্য ১ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৪০ পয়সার উপরে। অর্থ্যাৎ অন-নেট ও অফ-নেট কলের মূল্য পার্থক্য থাকার কারণেই এই রকম প্যাকেজ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। এতে করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অফ-নেট কলের মিনিট প্রতি মূল্য অন-নেট কলের মিনিট প্রতি মূল্যের প্রায় ৩ গুণ।
একজন সাধারণ গ্রাহকের জন্য এই ধরণের মোবাইলফোন সেবা ব্যবহার করা কঠিন। এর ফলে দেখা যায়, আমরা গ্রাহকরা সব সময় অন-নেট কল করতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন। গড়ে প্রতি মিনিট কলের জন্য গ্রাহকের খরচ হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ পয়সা। অন-নেট এবং অফ-নেট নির্বিশেষে কলের একক মূল্য মিনিট প্রতি ৫০ পয়সা নির্ধারণ করায় বর্তমান বাজারের গড় অন-নেট মূল্য থেকে কম এবং অফ-নেট কলের মূল্য থেকে আরো অনেক কম।
বিটিআরসি বলছে অভিন্ন কলরেটর চালুর আগে একজন গ্রাহক তার ১০ টি কলের ৮ টি করতেন অন-নেটে। বাকি ২ টি অফ-নেটে। এই অন-নেট কলের আধিক্য হওয়ার একমাত্র কারণ হল, অন-নেট ও অফ-নেট কলের মূল্য পার্থক্য। একক মূল্য নির্ধারণ করা হলে অন-নেট ও অফ-নেট উভয় ধরণের কলেরই মিনিট প্রতি মূল্য কমেছে।
যা-ই হোক না কেন প্রযুক্তি সেবা মূল্য নির্ধারণে সরকারকে আরো যাচাই করা উচিৎ। যাতে করে বাজার প্রতিযোগিতার সুফল গ্রাহক পেতে পারে।
'ছেলেটা যাকে প্রেমে কিনতে চেয়েছিল, লোকটা তাকে টাকায় কিনেছে!'
'ছেলেটা মেয়েটার মনে পেতে দিনের পর দিন -নিজের পড়া, কাজ, ঘুম সব নষ্ট করে। আর লোকটা সে মেয়েটাকে কিনে নেয় টাকা দিয়ে!'--
এ উপলব্ধি হবার পর আবিদুর রহমান এস্তেমাল করলো, সে আর প্রেম ভালোবাসার মত কিছুর সাথে জড়াবে না! এমনকি সংসারীও হবে না। এটার উপর তার কতটা স্থির থাকা সম্ভব হবে, তা নিয়ে শঙ্কা আছে। কারণে অকারণে ফেসবুকে ঢুঁ মারা আর নারীদের চকচকে পিকচারে লাভ ইমো এখনো দেয়টা সে ছাড়তে পারেনি।
দুই
আবিদুর রহিমের যে অনুসিদ্ধান্তটা শুরুতেই বলা হয়েছে, সেটি নারীবাদের সাথে যায় না। এটা বুঝতে পারলেও আবিদুর রহিম এটা তার বয়ানে স্বীকার করে না। একটু ঘুরিয়ে বলে এটা তাঁর অভিজ্ঞতা।
অভিজ্ঞতা হতেই হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে ভর্তির প্রথম ডাগর চোখ যে মেয়েটি তার রাতের ঘুম হারাম করেছিল, তার ছবি কল্পনা করে ফেসবুকের ফাইন্ড ফ্রেন্ড অপশনের বোতামে মাউচ রেখে অস্থিরভাবে ঘোরাঘুরি করেছিল একটা রাত- সে মেয়েটিকে আবিদুর তার হাতের কাছেও পেয়েছিল। রাখতে পারেনি।
তিন
অভাব কিসের ছিল? আবিদুর ব্যাখ্যা করে পারে না।
তবে অভাব একটা ছিল, সেটি টাকার। ছাত্র মানুষ এত টাকা ছিল না তার। চাইলেই কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না সে। তার উপর জেন্ডার বৈষম্য নিয়ে তার একটা গবেষণা কর্ম করার ইচ্ছা। ... সেই টাকা এখন আবিদুরের হয়েছে! মেয়েটি তার হয়নি।
সংসার বিবাগী হবার ব্রত নিয়ে আবিদুর প্রেমহীন জীবনের সিদ্ধান্তে অটল থাকার পরেও- তার সামেন নতুন এক দুনিয়া খুলে যায়। প্রযুক্তি খোলা মাঠ তার সামনে তুলে ধরে আরেক জগত! সে দুনিয়ায় নারীর পেছনে সময় ব্যয় করার দরকার নেই। তার এজন্টরাই উল্টোর তার সাথে যোগাযোগ করেন।
চার
-কেমন পছন্দ স্যারের! এজেন্ট জানতে চায় ম্যাসেঞ্জারে!
-বিস্ময়ে হতবাক আবিদুর রহিম! এটাও বাস্তব। এমনও ঘটে!
এজেন্ট থেকে এজেন্ট নতুন নতুন কালেকশন।
আবিদুর হাসে... আহা জীবন। যে মেয়েদের মনের গহীনে ডুব দিতে বহু পুরুষ দিনের পর দিন স্বপ্ন বুনছে। সেই নারীই ধরা দিচ্ছে এজেন্ট মারফ তার কাছে।
পাঁচ.
-টাকা! অর্থই সকল অনর্থের মূল! কে যেন বলেছিলেন। স্কুলে ভাবসম্প্রসারণে পড়েছিল আবিদুর। রেস সময় যা লিখেছিল, সেগুলো ভুল টাকাই সব কিছু চাকা ঘুরিয়ে দেয়!
আবিদুরের মনে পড়ে ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসার দিন, কলাভবনের সামের একটা ব্যানার। যেখানে একটা কথা লেখা- 'প্রেম একটি পুঁজবাদী চক্রান্ত!' ঘটনা সঠিক - তা এতদিনে প্রমাণিত।
ছয়
তবুও নিজের মনে শঙ্কা- প্রেমহীন জীবন; নাকি টাকায় কেনা শরীর! ভাবে আবিদুর.. ভাবে শরীর মানে ভোঁতা একটা বিষয়। তবুও শরীর ঘিরেই অর্থনীতির চাকা ঘোরে! তাহলে জ্ঞান!
রুশোর জীবনীতে চোখে রাখে- রাজনীতির দর্শনদাতা রুশো তার জীবনীকে বলছেন ঈশ্বরের সামনে তুলে ধরার মত একটি নিপাট-নির্মোহ সত্য জবানবন্দী। আবিদুরও মনে করে তেমনই- নিপাট নির্মোহ! তবে ... সময়!!
ফেসবুক-কুরুক্ষেত্র
ফেসবুক এখন যতটা না সামাজিক যোগাযোগ তারচে বেশি সামাজিক অসুখ। এ অসুখ চারদিকে। নিরাপত্তা বলেন, আর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা! সবই এখন সঙ্কটে ফেলছে জাকারবার্গের জাদুবই!
বহু আগে থেকেই আমরা সিরয়াল আর সিনামার সমালোচনা করে আসছি- একটা অসম সমাজের আকাঙ্খা বানানোর অভিযোগে। এখন সেটি হাতে হাতে- মানুষের মননে ঢুকিয়ে দিচ্ছে ফেসবুক। বিষয়টি এখন এমনটাই দাঁড়িয়েছে যে, ফেসবুকের জন্যই আমরা অানেক আবেগ উচ্ছ্বাস, শোক প্রকাশ করি। ডিজিটাল মিলাদ মাহফিলও হয়। বিয়ে-শাদিও। কী চমৎকার!
এমন আবেগ- স্পর্শহীন জীবন এখানে নানা বিষয়ে ব্যাঘাত ঘটায়। তার মধ্যে অন্যতম-জীবনাচরণে বৈচিত্র আনতে আনতে, কিম্বা নিজেকে প্রকাশের অতি-উৎসাহে এখন শোবার ঘরের ছবিও ফেসবুকের পাতায় চলে আসে। কিছু বিষয় থাক না গোপনে বলে আমরা যেটি আগে থেকে ইয়াদ করতাম, সেটি এখন আর নেই।
অনেক তথ্য আছে আগে ইন্টারভিউ করে জেনে নিতাম, সেটি এখন ফেসবুকের পাতায় আগেই থেকেই থাকে। তাহলে মানব জীবনের- আড্ডা আনন্দ আর বন্ধুত্বের মাঝখানে ভাগাভাগির সময়গুলো ডিজিটাল যামানায় লুপ্ত হতে থাকে-এটাই এখন চরম বাস্তব অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে।
আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে খারাপ বলছি না, মোটেও। কিন্তু অন্যের চরিত্র হনন, ঈর্ষা তৈরির একটা বড় কারখানাও এ ডিজিটাল দুনিয়া। ফেসবুক জীবনের গোপনীয়তা সুরক্ষার নীতিমালা ও সুযোগ তৈয়ার করেছে, সেটি আমরা এনজয় করি না।
আগে বন্ধুর সঙ্গ পেতে হাহাকার থাকত, এখন লাইন কমেন্টের জন্য হাহাকার। মন খারাপ। ফেসবুকে কে কোন ছবি দিলো, কার ছবি কেমন হলো, কে কার ছবিতে কি ধরণের ইমোজি দিলো তা নিয়ে তো বিশদ আলোচনা-বিস্তর ঝগড়ার কুরুক্ষেত্র -সবখানে।
তাই বলি সুস্থ জীবন চাইলে ফেসবুকে সময় কম করে কাটান। বই পড়েন। বেড়াতে যান। বেড়াতে যাবার সময় ফিচার ফোন নিয়ে যান। চার্জ থাকবে ভালো, ঝগড়াটাও কমবে। সময় আনন্দময় হবে । ধন্যবাদ।
বায়তুল্লাহ
কালো গিলাফ। রোদে পুড়ে অনেকটা ধূসর। সোনালি দরজা উজ্জ্বল। পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত ঘর বায়তুল্লাহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা যে ঘরকে মানুষের নামাজের জন্য কিবলা হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
প্রতি বছর হজের আগেই বদলে ফেলা হয় গিলাফ। নতুন গিলাফ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। কালো গিলাফের ওপর সোনালি রঙের ক্যালিগ্রাফি। কালো কাপড়ে ও বুননে অসাধারণ শৈল্পিক সৌন্দর্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কিছু আয়াত।
বায়তুল্লাহর গিলাফ তৈরি করার জন্য মক্কা নগরীতেই রয়েছে আলাদা কারখানা। যেখানে বছরজুড়েই গিলাফ তৈরির কাজ করেন কর্মীরা। তাদের যত্ন-ভালোবাসায় গড়ে ওঠা গিলাফ মক্কা মুকাররমায় জড়িয়ে দেন সৌদি বাদশাহ। যিনি আল্লাহর ঘরের খাদেম হিসেবে পরিচিত!
হজরত ইবরাহিম আ: তাঁর ছেলে হজরত ইসমাইল আ:কে সাথে নিয়ে ঘরটি পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। সে ঘরটি পরে মূর্তিতে ভরে রেখেছিল মক্কার মানুষ। আল্লাহ তাঁর প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সা:কে দিয়ে সেই মূর্তির বিপক্ষে কঠোর ঘোষণা দিলেন। মক্কা মুকাররমাকে মূর্তিমুক্ত করা হলো। সেখানে আজান হলো। মুসলমানেরা নামাজে শামিল হতে থাকলেন।
মক্কা মুকাররমাকে শেষ নবীর উম্মতদের জন্য কিবলা নির্ধারণের আগে বায়তুল মুকাদ্দাস ছিল মুসলমানদের কিবলা। মাদিনাতুন নবীতে হজরত মুহাম্মাদ সা: মসজিদে নামাজরত অবস্থায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা কিবলা বদল করে দেন। যে মসজিদে কিবলা পরিবর্তন করা হয়, সেটাকে বলা হয় মসজিদে জুল কিবলতাইন। হজযাত্রীরা সেই মসজিদে গিয়ে থাকেন এবং মসজিদে প্রবেশের পর সুন্নাত হিসেবে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন।
জীবনের যে স্বপ্নময় ইতিহাসের বর্ণনা কানে বেজেছিল বছরের পর বছর সে ইতিহাস নিজ চোখে দেখার দুর্লভ এক সুযোগ আরব দেশে। যেটি পরে বাদশাহ সাউদ তাঁর নামানুসারে সাউদি আরব করেছিলেন।
রুক্ষ মরুর দেশে আল্লাহ তাঁর রহমতের ধারা বইয়ে দিয়ে যে অসাধারণ বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছেন, তা এ দেশটি না দেখলে বোঝা যাবে না।
মক্কা মুকররামায় ঢুকে নামাজ আদায় করে তাওয়াফ শুরুর করার অনুভূতি অসাধারণ। তার পাশে সাফা ও মারওয়া পাহাড়। বহুবার সায়ি করেছি। মা হাজেরা ছেলে হজরত ইসমাইল আ:-এর জন্য পানির খোঁজে দুই পাহাড়ে ছুটেছিলেন। এখানে সায়ি করার সময় জানিনি দুই পাহাড়ে সাতবার যাতায়াতে কতটা পথ পাড়ি দিতে হয়, পরে জানলাম সাড়ে তিন কিলোমিটার। এ পথ এখন হজযাত্রীরা পাড়ি দেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায়। মা হাজেরা যখন ছুটেছিলেন সে সময় মক্কা নগরীর এ দু’টি পাহাড়ের মাটিতে পা দেয়ার অবস্থা নিশ্চয় ছিল না। যেরকম এখনো বায়তুল্লাহ চত্বরের বাইরে খালি পায়ে মাটিতে পা রাখার সাধ্য নেই। সে সময় প্রিয় সন্তানের পানির পিপাসা মেটানোর জন্য মা হাজেরার এ ছোটাছুটি কতটা কষ্টসাধ্য ছিল মনে করলেই হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে যায়।
সন্তানের প্রতি মায়ের এমন অপরিসীম টান, ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের এর চেয়ে বড় কোনো উদাহরণ অজানা। আল্লাহ মা হাজেরার সন্তানের জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করে ছোটাছুটির প্রতিদান এবং তাঁর প্রিয়নবী হজরত ইসমাঈল আ:-এর জন্য বইয়ে দিলেন একটি কূপ। যে কূপের পানি জমজম হিসেবে পরিচিত। এ পানির কেবল তৃষ্ণা মেটানো নয়, খাদ্যগুণও রয়েছে। সেই হজরত ইসমাইল আ:-এর শিশুকালে যে কূপের সৃষ্টি, সেটি কেয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে ইনশাআল্লাহ। পৃথিবীর কোথাও যদি এক ফোঁটা পানযোগ্য পানিও না থাকে, এখানে থাকবে, যা আল্লাহর অশেষ এক নিয়ামত।
জীবনে বিশ্বের বহু দেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের এবাদতখানা দেখার সুযোগ হয়েছে, মক্কাতুল মুকাররমা দেখার পর মনে হয়েছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও অসাধারণ যে ঘর এবং কাঠামো পর্যটন করলাম সেটি মক্কা মুকাররমা।
ঘরের চাকচিক্য নেই ঠিকই কিন্তু এ ঘর এমন একটা বাঁধন তৈরি করেছে, যে বাঁধন কেবল তার দিকে টানে। আল্লাহর প্রেমে মানুষকে অসাধারণ এক জীবনের খোঁজে টানে। সে টান পৃথিবীর সব আবেগ, ভালোবাসা, ক্ষমতার এবং সম্পদের টানের চেয়েও অসাধারণ।
আল্লাহর নির্দেশে ইবরাহিম আ: তাঁর প্রিয় ছেলে ইসমাঈল আ:কে তাঁর মা বিবি হাজেরার সাথে এ ঘরের কাছেই রেখে গিয়েছিলেন। সে সময় এই স্থাপনা দৃশ্যমান ছিল না। আল্লাহ হজরত ইবরাহিম আ:, হজরত ইসমাঈল আ: এবং বিবি হাজেরার আনুগত্যটাকে এতটাই পছন্দ করেছেন, যাদের স্মৃতিকে হজের আয়োজনে প্রধান করা হয়েছে।
মক্কা মুকাররমায় তাওয়াফের সময় কখনো ক্লান্তি আসে না, অনেকটা পথ হাঁটলে যেমন বুক শুকিয়ে আসে, কষ্ট হয়, পা ধরে আসে, পানির তৃষ্ণা হয় এমন অনুভূতি হয়নি কখনো। মনে হবে জীবনের এ তাওয়াফে যদি অনন্তকাল ধরে আমরা সঙ্গী হতে পারতাম, তাহলে দুনিয়াতে আর অন্য কিছু চাইবার থাকত না।
মক্কা মুকাররমার আঙিনায় যাওয়ার পর পৃথিবীর কোনো ভাবনা-চিন্তা আর মাথায় থাকে না। শরীরে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক সঙ্কটও দেখা যায় না। জীবনে এ রকম বাস্তবতা দ্বিতীয়টি উপলব্ধি করার ঘটনা কখনো ঘটেনি। এমন জীবন, যে জীবনে মক্কা আল মুকররমার কাছে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারের কিছু চাইবার যে সামর্থ্য, সেটি যেকোনো বিবেচনায় বিশেষ নিয়ামত ছাড়া আর কিছু নয়।
ইসলামে মানুষের পূজাকে হারাম করেছে, শিরককে কঠিনভাবে হারাম করা হয়েছে। সব গুনাহ মাফ করা হলেও শিরককে মাফের আওতায় আনা হয়েছে তখন, যখন বান্দাহ তাওবা করবে। কিন্তু না বুঝে আমরা অনেক শিরক করছি। যার জন্য হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, যে ঘরে কোনো জন্তু কিংবা প্রাণির ছবি থাকে, সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।
মক্কা মুকাররমার আঙিনাজুড়েই আল্লাহর নবী আ:দের স্মৃতি। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর জন্মভিটে, আবার ইসলামবিরোধীদেরও আঙিনা ছিল এখানে। আবু জাহেলের বাড়ি ছিল বায়তুল্লাহর কাছে। রাসূল সা:-এর জন্মভিটে লাইব্রেরি বানানো হয়েছে। আবু জাহেলের ভিটেকে করা হয়েছে ওয়াশরুম।
রাসূল সা:-এর প্রথম স্ত্রী উম্মুল মুমেনিন খাদিজাতুল কুবরা রা:-এর কবর রয়েছে এ মক্কা নগরীতে। এ নগরীতেই রাসূল সা: জাবালে নূর পাহাড়ের হেরা গুহায় ধ্যান করেছেন। বিস্ময়কর একটা বিষয়। স্থলভূমি থেকে প্রায় ১ ঘণ্টা হেঁটে পাহাড়ের উপরে উঠলে হেরা গুহা। এ রকম এক জীবন রাসূল সা: বেছে নিয়েছিলেন, তাঁর উম্মাতের হেদায়াতের বার্তা বয়ে আনার জন্য, আর সে উম্মত এখন ধর্মের ব্যাখ্যা করে নিজের মতো আর পালন করে সুবিধা মতো। এর চেয়ে কষ্টের কিছু হতে পারে না।
রাসূল সা: বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন জাবালে রহমতে দাঁড়িয়ে। মানব ইতিহাসে এ ভাষণের সাথে কোনো ভাষণের তুলনা চলে না। এটি এমন এক ভাষণ, যেটি মানব ইতিহাসে মানুষের অধিকার আর ইনসাফের সমাজ গঠনের অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্তমূলক নির্দেশনা হয়ে আছে।
শেষ।।
প্রথম প্রকাশ, ডিসেম্বর, ২০১৪ ।।