স্বেচ্ছায় অধীন কিম্বা আয়ত্বে বঙ্গীয় সংবাদমাধ্যম !


প্রেস ফ্রিডম ডে [3 May] নামে একটা দিবস বাংলাদেশে উদযাপিত হলো- ভালো লাগলো শুনে। মুক্ত গণমাধ্যম নিয়েও  কথা হয়েছে। হচ্ছে। হবে। মাশাআল্লাহ, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি!

বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ কতটা, তার সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারণা নেই! কারণ এখনো আমি কোনো অনলাইন, অফলাইনের সম্পাদক হতে পারি নাই। কিম্বা কর্তা সাইজে যেতে পারি নাই। যাওয়ার কোনো 'আশঙ্কাও' নেই!

তবে  এটা তো জানি সেলফ সেন্সরশিপ এখানে বহু আগে থেকে প্রচলিত। এখানে সম্বাদিকরা স্বেচ্ছায়, স্ব-উদ্যোগে অন্যের পারপাস সার্ভ করতে খুবই পছন্দ করেন!  যদি ক্ষমতাবানদের  'নেক' নজর মিলে! এই একটাই আশা!

আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ---বাংলাদেশের সবচেয়ে নিগৃহিত দু'টি  প্রাণি আছে! একটি সম্বাদিক! আরেকটি বাসা বাড়ির কাজের লোক! এদের  বশে আনা কঠিন কিন্তু পেটে এদের ক্ষুধা। অনিরাপদ জীবন, এক দিক থেকে ইসলামিক জীবনও বলা চলে। ইসলাম ধর্ম অনুসারে আজকে নিয়ে ভাবো, ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য, পয়সা মজুদ করে অন্যকে কষ্ট দিও না! এর দু'প্রাণিকুল এটা মানতে বাধ্য! কারণ তার তো দিনে আনা দিনে খাওয়া!। অবশ্য কিছূ পেটি বুর্জোয়া  সম্বাদিক এখন সমাজে আছেন। তাদের কথা না বলি। আম সম্বাদিকের কথাই ধরে এ পর্যবেক্ষণটা দিলাম!

 সে যাই হোক, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও রেডিও'র স্বায়ত্ত্বশাসনের জন্য একটা কমিশন হয়েছিল, আসাফ উদ দৌলা এ কমিশনের প্রধান ছিলেন। সম্ভবত ১৯৯৬ কিম্বা ৯৭ সালের দিকের ঘটনা, এ কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলছিলেন, তিনি যে প্রতিবেদন বানিয়েছেন, সেটি অবশিষ্ট নাই। তার স্বপ্রজাতির আমলার এটাকে  কাটছাঁট করে  স্বায়ত্ত্বশাসনের বদলে 'আয়ত্ত্বশাসন'  এর এন্তেজাম করেছে।

' আয়ত্ত্বশাসন' শব্দটা খুব মনে ধরেছে আমার। অসাধারণ। বঙ্গীয় শব্দ ভাণ্ডারে এক অনন্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন। ভাবলে আজো চমৎকৃত হই। এবং আরো ভালো লাগে পরে আসাফ উদ দৌলার সাথে কথা বলেছিলাম, তার কথাটা খুব পরিষ্কার,  এখানে প্রেস ফ্রিডম বলে কিছু নেই।

 যার বিপক্ষে যাবে, সে বয়কট করবে! নিশ্চিতভাবে অনেকেরই জানা আছে আম্লীগ সভানেত্রী বিম্পির ২০০১ থেকে ২০০৬ এর আমলে লাইসেন্স দেওয়া টিভি চ্যানেলকে তার  অনুষ্ঠান কভার করতে দিতেন না।   সে সময় ওই সব টিভি চ্যানেলৈর সম্বাদকর্মীরা প্যান্ডেলের বাইরে  মাইকের সামনে তাদের ' বুম' রেখে সাউন্ড বাইট সংগ্রহ করতেন!

 এটাকেও অত্যন্ত সম্মান করি, আমি। কারণ  আম্লীগ এটা শেষ পর্যন্ত টেনে নিতে পেরেছে, যে শক্তি বিম্পির নেই। বিম্পি- জমাতের লোকজন সব সময় একটা অপরাধী ভাব নিয়ে থাকে। মনে হচ্ছে, আহা রে কি বললেম জনাব অসন্তুষ্ট হবে। তাই সন্তুষ্ট করার একটা ভাবনা। কোনো অবস্থানে কঠোরভাবে  থাকতে পারে না।

 বলছিলাম,  গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা।  গণমাধ্যম স্বাধীন এ কথা সরকারের মন্ত্রী, তথ্য মন্ত্রী সবাই বলেন এবং  সেটা এখন বললে, অনেকটা কৌতুকের সৃষ্টি করে। কারণ  বিপরীত মতের পত্রিকা সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত,  দিনকাল তো বন্ধ হয়নি, এ দাবি তো সরকার করছে!  এবং এ দাবি মিথ্যাও নয়। তাহলে আমরা প্রেস ফ্রিডম আছে, এটা আপতত চোখে মেনে নিতে পারি!

কিন্তু বাস্তবতা কি তাই!  আমরা সম্বাদিকরাও  গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাই। আমি চোখ বন্ধ করে বল্লাম, চাই না। একই সাথে দায়িত্বশীল সম্বাদিকতাও চাই না। কসম করে বলছি , চাই না! যদি চাইতাম তাহলে এ দেশে একের পর এক লুট, আর খুনের বিষয়ে আমরা কেউ-ই এতটা নিশ্চুপ আর ডে ইভেন্ট হিসাবে কভার করে চুপ থাকতাম না! এর ফলো আপ রিপোর্ট হতো, কারা এর পেছনে জড়ি এবং তাদের বিচারে সরকারকে গণমাধ্যম বাধ্য করতে পারতো!

আমার দেশ পত্রিকার উপর খগড় নেমে আসার পর আমাদের দেশের  'প্রগতিশীল' সম্বাদিক গোষ্ঠী তো হাত তালি দিয়েছে! দেন নি! দিয়েছেন। দিগন্ত টিভি বন্ধ হওয়ার পর সবাই বলেছেন, বাপু ঠ্যালা বোঝ!  ইসলামিক টিভির মত নিরীহ টিভি চ্যানেল বন্ধ করার পরও গণমাধ্যমের কর্মীদের একাংশ উল্লাস প্রকাশ করেছেন।  ইটিভির চ্যায়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের পরও আমরা বহুলোককে দেখেছি  উল্লাস করতে!

বাকি গুলো কবে বন্ধ হবে? সে জন্যও অপেক্ষা করেছেন দিনের পর দিন। আর  বিপরীত মতের এখনো তেলা পোকার মত টিকে থাকা  গণমাধ্যমগুলোকে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে, এবং এ সব কাগজে চাকুরী করা কিছু সরকারপন্থী কীভাবে ফায়দা লুটছে, সেটাও আমরা কম বেশি জানি! সেই যাই হোক,  দুনিয়া কা মজা লোটটো দুনিয়া তোমারি হ্যায় এর বিশ্বাসী লোকের তো ভাব হবে না, এটা জানা কথা!

 তবে গণমাধ্যম  চাপের বাইরেও স্বউদ্যোগে বহু খবর 'টুইস্ট' করে থাকে। এটা জেনেই করে। সরকারের নজরে পড়ার জন্য। যেমনটা  একটা ইসু বাংলাদেশে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, সেটি হলো ড. ইউনূস। লোকটাকে তুলো ধুনো করতে পারলে কিছু সম্বাদিক এতটা আন্দ পান, যেটি হয় তিনি তার  প্রেমিকার সাথে প্রথম সাক্ষাতেও লাভ করেন নি।

 মজার ব্যাপার হলো এরা আবার আপনাকে নৈতিক সম্বাদিকার   সবকও দিবনে। কিন্তু অসত্য, বিকৃত খবর ছাপানোর পর তার প্রতিবাদ ছাপতে পারবে না। কারণ  তআহলে আবার না ক্ষমতাবানদের 'বদ' নজরে পড়ে যান।

 অনেকে বলবেন, ড. ইউনূসকে লাত্থি মেরে বের করে দেওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংক ভালো চলছে! দ্বিমত করছি না। কিন্তু  কার সেট আপে চলছে?

 গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন ও সরকারের করায়ত্বে আনার জন্য বহু ফন্দি ফিকির তো হলো, কিন্তু পর্ষদ নির্বাচন আজ পর্যন্ত করতে পারেননি!

 অনেক সম্বাদিক মনে করেন,  ইউনূস দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন। কিন্তু এটা মনে করা পর্যন্ত তার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।

আর এ দেশের গণমাধ্যমে সবার সমান অধিকার একটা স্বাপ্নিক ঘটনা। এখানে বিদেশে টাকা পাচারের  প্রমাণিত রিপোর্টকে  লেখা হয় 'কথিত'। আর শোনা যাওয়ার রিপোর্টকে বলা হয়, 'অভিযোগ' । কথিত ও অভিযুক্ত শব্দ দু'টোর তফাৎ নিশ্চিতভাবেই আছে।  এদেশে ক্ষমতাবানের  সন্তান হলে  সাচ্চা লোক, ক্ষমতাহীনের ছেলে-মেয়ে হলে  অসম্ভব নিম্ন মানের লোক।

 বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের অধীনতা কিম্বা আয়ত্বে থাকাটা অনেকটা স্বেচ্ছায়। জবরদস্তিমূলক এটা বলা যাবে না। কারণ  সরকার জবরদস্তি করে না, শুধু ফিতা ধরে টান দেয়, মাহফুজ আনাম, মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান হওয়ার চেয়ে বউ পোলাপাইন নিয়ে টিকে থাকাই শ্রেয়।

ফাঁকে ডিজিটাল স্বাধীনতা, সেলফি তোলেন, জ্ঞান বিতরণ করেন এবং  সরকারি প্রতিপক্ষের গুষ্টি উদ্ধার করেন, আপনার চে আর প্রগতিশীল  কে হতে পারে! জনাব ভালো থাকেন, প্রেস ফ্রিডম ডে'র শুভেচ্ছা!

'খুন' তুমি জায়েজ হয়ে যাও

খুনি' তুমি মুক্তি পেয়ে যাও
সমকামী, বিকৃত রুচি, নাস্তিকতার নামে 

'খুন' তুমি জায়েজ হয়ে যাও 
মোল্লা-মৌলভী, জমাত-শিবির, বিম্পি'র নামে

খুন 'নিরপরাধ' হয়ে যাও
পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে-বাঁশখালী!

ইলেকশনের নামে নামে সিলিকশনেও তুমি আপদ হও না! 
খুনের আবার 'আদব' কি?

তোমার পক্ষে ক্ষমতা, লোভ, রাজনীতি
মানুষের পক্ষে কেউ নেই! কেউ না! এমনকি প্রকৃতিও! 

রানা প্লাজা: সেই নৃশংস স্মৃতি




বছর তিনেক আগের এ রকম একটা দুপুর, শত শত মানুষ রাস্তায়। সবুজ অটোরিক্সাটা ছুটে চলেছে, মানুষের ভিড় ঠেলে রানা প্লাজার কাছে পৌঁছালাম, আশ পাশে উৎসুক মানুষ। পাশেই দেখলাম বিরিয়ানির প্যাকেটের গন্ধ, কিছু লোক  ভেতরে যাচ্ছে আসছে, পাশের ভবনে গেলাম, দেখলাম আমাদের সাহসী ফায়ার বিগ্রেডরের  লোকজন, কাজ করছে, নিজের পরিবারের সদস্য উদ্ধারের মত করে। ভেতরে কিছু স্বেচ্ছাসেবি, মানব-শরীরের পঁচে যাওয়া মাংসের গন্ধ।

একটু বাইরে আসলাম, লাশ গুনছে অনেকে, ঘটনার তিন দিন পর (২৭ এপ্রিল ২০১৩ ) দেখতে গিয়েছিলাম রানা প্লাজা ট্রাজেডি। লেখাটাও  উদ্দেশ্য ছিল।  বাইরে এসে  রোড ডিভাইডারের ওপর দাঁড়ালাম,লাইজু নামে একজন নারী এগিয়ে এসে বললেন, তার বোন সীমার সাথে কথা হয়েছে, টয়লেটে আটকা।  কিছু করা যায় কিনা? চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি।

বোন সীমাকে জীবিত দেখতে তার মন কাঁদছে। বললেন, সীমা তিনতলায় কাজ করতেন। এক ছেলের মা সীমা ২৪ এপ্রিল সকালে ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খেয়ে এলেন কাজে। তারপর নিখোঁজ। চার্জ নেই মোবাইলে। তবুও বোনের মন মানে না। রিচার্জ করে কিছু টাকাও পাঠালেন বোনের ফোনে। কিছুক্ষণ পরপর বোনের মোবাইলে চেষ্টা করছিলেন। যদি কথা বলা যায়। যদি জানা যায় বোনটি কেমন আছে! শেষ পর্যন্ত তার আর কিছু জানা গেলো না।

একই রকম অবস্থা ছিল মাসুদ রানার। বগুড়ার সোনাতলা থেকে এসেছিলেন তিনি।  বোন শাহিনূর ও ভাইয়ের মেয়ে নাজমার কোনো খবর জোগাড় করতে পারেননি।  ছুটেছেন অধরচন্দ্র স্কুল, এনাম মেডিক্যাল, সিএমএইচ থেকে রানা প্লাজা।

তিন ছেলে ও একমাত্র কন্যার  বাবা আবুল কাসেম ভূঁইয়া নিখোঁজ হয়েছিলেন । তার লাশের খোঁজে বড় ভাই মোহাম্মদ ইবরাহীম অধরচন্দ্র স্কুলে অপেক্ষা করেছেন। ছেলে  শাফায়েত রানা প্লাজার সামনে ছিলেন। স্ত্রী  ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, যদি প্রিয় স্বামীর দেখা মিলে। না সে সব আশা মিথ্যে।  দেখা মেলেনি স্বজনের ।

 অগুনতি ব্যর্থতার ভেতর কিছুক্ষণ পর পর লাশ নিয়ে আসা হচ্ছে, সে লাশের গাড়ি যাচ্ছে অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ের মাঠে। যে সব  মানুষের জীবিত উদ্ধার করা হচ্ছিল তাদের নেয়া হচ্ছিলো এনাম মেডিকেল ও  সিএমএইচএ!

আমার জীবনের এ রকম করুণদৃশ্য এর আগে দেখিছিলাম সিডর আক্রান্ত শরণখোলায়। সেখানে মানুষের লাশ ঝুলে ছিল গাছে, ধান ক্ষেতে ফুলে ওঠা মানুষের লাশ। সে এক হৃদয় বিদারক, নির্মম ও নৃশংস দৃশ্য!  

 এটি দ্বিতীয় কঠিন এবং রূঢ় একটা কষ্টময় স্মৃতি হয়ে গেঁথে গেলো।

অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ের মাঠে এক নারী চিৎকার করে শুয়ে পড়ছিলেন, আমি তার কাছে যেতে যেতে তিনি  অজ্ঞান হয়ে গেলেন, স্বামী সন্ধানী নারী নিখোঁজের তালিকার স্বামীর নাম লেখাতে এসেছিলেন।

ছোটবেলায় আমরা দেখতাম দুর্যোগের পর রিলিফ আনতে কিম্বা ইউনিয়ন পরিষদের দুস্থ সহায়তা পেতে লম্বা লাইন। জীবনে আমি প্রথম এবং একবারই লক্ষ্য করলাম, লাশ খুঁজতে লম্বা লাইন। এক নির্মম অভিজ্ঞতা আর করুণ আর্তির কোনো বর্ণণা করার মত ভাষা আমার জানা  নেই।

সাভারের অধর চন্দ্র স্কুলের মাঠজুড়েই হাহাকার। লাশের সংখ্যা নিয়েও ছিল ধুম্র জাল।  নিখোঁজ মানুষের পরিনসংখ্যানও  সঠিকভাবে মিলেনি।

ইতিহাসের এ ভয়াবহতম ঘটনায়  দু'হাজারের বেশি মানুষ মরে বেঁচে গেছেন। আর যারা আহত হয়ে বেঁচে গেছেন, তাদের জীবন চলছে দুর্বিসহ অবস্থায়।

 এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েনি। রসিকতা হয়েছে।  নিপীড়ত মানুষের পক্ষে আমরা কাউকে দাঁড়াতে দেখিনি। সবার শরীরে এখন চিকনাই জমেছে। চোয়ালে জমেছে  লাস্যতা। কেউ রোদে পুড়ে আন্দোলন করে অধিকার আদায়ের লড়াই করতে চান না। আর 'দুনিয়ার মজদুর এক হও লড়াই করা' লোকেরা তো এখন সরকারের চাকা ঘোরাচ্ছে! সুতরাং মরে বেঁচে যাওয়া মানুষের জন্য দিন উল্লেখ করেই শোকই  একমাত্র প্রাপ্য! তাও এর দু এক বছর তাও থাকবে বলে মনে হয় না।

ড. ইউনূসকে ঘিরে নোংরা-চর্চা!

'ড. ইউনূস একটা চোর', এটা শুনতে পারলে এ দেশের এক শ্রেণীর সম্বাদিক নামের প্রাণী প্রচণ্ড আনন্দ উত্তেজনা অনুভব করেন।  যেটি হয়ত তারা বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের হারেও অনুভব করেন না।  ইউনূসকে ঘিরে দেশীয় গণমাধ্যমের অরুচিকর নোংরামি থেকে এটা আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি । 

দেশের বহু চুরি, ডাকাতি ও লুটের খবর এদের মন খারাপ হয়, লুকুচুরি খেলে, এটাকে হালাল করার তরিকা আবিষ্কার করে এ সব নিম্ন রুচির লোকেরা। সম্বাদিকতা জগতকে এরা কুলষিত করেছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েব ভিত্তিক পত্রিকা “দি ডেইলী কলার” গত ১৭ এপ্রিল একটি প্রতিবেদন  প্রকাশ  করার পর বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যম এতে এতটাই উত্তেজেতি বোধ করে, এ বিষয়ে অভিযুক্তের বক্তব্য জানার ফুসরত পর্যন্ত  পায়নি। একমাত্র ইংরেজি দৈনিক ইনডিপেনডেন্ট দেখলাম তারা ঘটনা সম্পর্কে ইউনূস সেন্টারের কাছে জানতে চেয়েছে, বাকিদের জানার দরকার নেই। উঠতে বসতে আমেরিকাকে গালি দেওয়া কিছু লোকও  ভুল রিপোর্টটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ছেপে দিয়েছে। আহা, কি দারুণ নৈতিক  সম্বাদিকতা। 

আর ইউনূস বেচারাও বিষয়টা আমলে নিলনে না প্রথমে, পরে অবশ্য একটা ব্যাখ্যা দিয়েছে, দেমাগি-দলদাসত্বের সম্বাদিকতার জগতে জ্ঞানীর কদর থাকবে না, এটাই তো স্বাভাবিক। 

“Disgraced Clinton Donor Got $ 13 Million in State Department Grants Under Hillary” শিরোনামের রিপোর্টে বলা হচ্ছিলো- প্রফেসর ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে মার্কিন সরকারের অর্থ গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর ক্ষমতাশালী বন্ধু সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁকে এই অর্থ পেতে সাহায্য করেছেন। প্রতিবেদনটিতে আরেকটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলা হয়েছে যে, প্রফেসর ইউনূস মিসেস ক্লিনটনের পারিবারিক ফাউন্ডেশনকে অনুদান দিয়েছেন। এতে এমন একটা ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে মিসেস ক্লিনটনের পারিবারিক ফাউন্ডেশনকে অনুদান দিয়েছেন বলেই প্রফেসর ইউনূস মার্কিন সরকারের নিকট থেকে অনুদান পেয়েছেন।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে দুর্নীতির অভিযোগে প্রফেসর ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বহিষ্কার করে দেয়া হয়েছিল। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ইচ্ছাকৃত অপপ্রচার। 

ইউনূস সেন্টার এ রিপোর্টের ব্যাখ্যায় বলছেন, ' প্রথমত, প্রফেসর ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে মার্কিন সরকারের কোন টাকা গ্রহণ করেননি। উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য সৃষ্ট এজেন্সীগুলো কোন ব্যক্তিকে অর্থ দিতে পারেই না। রিপোর্টটিতে সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা প্রচারিত হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রফেসর ইউনূসকে ১৩ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়া হয়েছে। একজন ব্যক্তিকে টাকা দেয়ার কোন ক্ষমতা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেই। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদারককারী সংস্থা এটা হতে দেখলেই এ ব্যপারে বড় রকম একটা প্রতিবাদ জানাতো। প্রতিবেদনটি মার্কিন সরকারের সংস্থাগুলির কাজ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ একটা মিথ্যা ধারণার সৃষ্টি করেছে।'

'দ্বিতীয়ত, পত্রিকাটি বলছে যে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ওয়েব সাইটে পাওয়া তথ্য থেকে তারা জানতে পেরেছে যে প্রফেসর ইউনূস ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে একবার ১ লক্ষ ডলার, আরেকবার ৩ লক্ষ ডলার অনুদান দিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ওয়েব সাইটে এরকম কোন তথ্যই নেই। অনুদান বা অন্য কোন খাতে প্রফেসর ইউনূসের কোন নামই ওয়েব সাইটে নেই। গ্রামীণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভে যোগদান করার জন্য ফি বাবদ টাকা দিয়েছেন এটার উল্লেখ আছে। ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এখানে যোগ দিতে হলে ফি দিয়ে যোগদান করতে হয়। গ্রামীণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফি দিয়ে তাই করেছেন।'

https://www.clintonfoundation.org/contributors?category=$100,001 to $250,000&page=2

এই ওয়েব সাইটে কোথাও কোনো তালিকায় দাতা হিসেবে প্রফেসর ইউনূসের কোনো নাম নেই। অথচ প্রতিবেদনে এই মিথ্যাটাই সাজিয়ে প্রচারিত হয়েছে। এমনকি শিরোনামেও সজোরে তাই প্রচার করা হয়েছে। 

তৃতীয়ত, পত্রিকাটি তার প্রতিবেদনের শিরোনামে উরংমৎধপবফ বা “অপমানিত” শব্দটির পরিবর্তে “বিপুলভাবে সম্মানিত” কথাটি ব্যবহার করলে তা যথার্থ হতো কারণ প্রফেসর ইউনূসকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০১০ সালে “কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল” প্রদান করে যা প্রতিনিধি পরিষদে উভয় দলের প্রতিনিধিদের বিপুল ভোটে ও সিনেটে উভয় দলের সর্বসম্মতিক্রমে পাশ করা হয়। এছাড়াও প্রফেসর ইউনূস ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নিকট থেকে “প্রেসিডেনসিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম” গ্রহণ করেন। তাঁকে “বিশ্ব খাদ্য পুরষ্কার” (১৯৯৪), “কেয়ার হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড” (১৯৯৩) সহ অসংখ্য পুরষ্কার এবং মার্কিন সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে গত তিন দশক ধরে অসংখ্য সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।

ইউএসএআইডি-র ১৩ মিলিয়ন ডলার কোথায় গিয়েছে? গত অনেক বছর ধরে পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন দেশে “গ্রামীণ” ও “ইউনূস” নাম ধারণ করে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রফেসর ইউনূস এবং গ্রামীণ নামের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাঁর আদর্শের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে এই সকল প্রতিষ্ঠান এই নাম গ্রহণ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান সেসব দেশে দরিদ্রদের সেবা প্রদান করতে ও বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে সৃষ্টি করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এরকম দু’টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে গ্রামীণ ফাউন্ডেশন ও গ্রামীণ আমেরিকা। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে ১৯৯৮ সালে গ্রামীণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। পৃথিবীর ২০টি দেশে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচিকে অর্থ সহায়তা দিতে এই প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ১৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের অনেক দাতাদের মধ্যে ইউএসএআইডি গত দশ বছরে একটি ক্ষুদ্র দাতা মাত্র।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন ধনী ও নিবেদিতপ্রাণ রিপাবলিকান তাঁর নিজ অর্থে ২০০৮ সালে নিউ ইয়র্কে গ্রামীণ ব্যাংকের অনুকরণে গ্রামীণ আমেরিকা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত সফল হওয়াতে আমেরিকার বিভিন্ন শহরে সম্প্রসারিত হতে থাকে। এখন আমেরিকার ১১টি শহরে গ্রামীণ আমেরিকার কর্মসূচি চালু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি যতই সম্প্রসারিত হয়েছে, ততই আরো বেশী টাকার প্রয়োজন হতে থাকে। প্রতিষ্ঠাতা নিজের অর্থে এটা বড় করা যাচ্ছিল না বলে তিনি বাইরে থেকে অর্থ সংগ্রহে লেগে যান। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর সময় ও শ্রম দিতে থাকেন। এতেও তিনি সফল হন। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ৬৫,০০০ মহিলা ঋণ গ্রহীতাকে ঋণ দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি ক্ষুদ্র ঋণ হিসেবে এ পর্যন্ত ৩৮০ মিলিয়ন ডলার বিতরণ করেছে যার আদায় হার ৯৯% এর বেশী। গ্রামীণ আমেরিকার কর্মসূচিতে ইউএসএআইডি-র সংশ্লিষ্টতা অত্যন্ত সামান্য। ইউএসএআইডি-র তহবিল পেয়েছে এরকম আরেকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে “ইউনূস সামাজিক ব্যবসা” যা ২০১২ সালে বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের দু’জন তরুণ মহিলা পেশাজীবি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রধান কার্যালয় জার্মানীর ফ্রাঙ্কফুর্টে অবস্থিত। “ইউনূস সামাজিক ব্যবসা” ব্রাজিল, কলম্বিয়া, হাইতি, আলবেনিয়া, বসনিয়া, মেসিডোনিয়া, তিউনিসিয়া, উগান্ডা, তানজানিয়া ও ভারতে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি এই দেশগুলোতে ৮.৬ মিলিয়ন ডলারের বেশী মূলধন বিনিয়োগ করে ৩৪টি সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে সামাজিক ব্যবসা তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছে। 

প্রফেসর ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ ও সামাজিক ব্যবসার ধারণাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এমন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অনেক ডোনার, ব্যাংক, বিত্তশালী ব্যক্তি ও বিনিয়োগকারী অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন। ইউএসএআইডি এই বহুসংখ্যক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মাত্র একটি। ইউএসএআইডি এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কাজের গুণগত মানের জন্য অর্থ সহায়তা দিয়েছে, কোন উচ্চ পদে আসীন কারো বন্ধুকে খুশী করতে নয়।

এই প্রতিবেদনটির উদ্দেশ্য যদি সৎ হতো তাহলে তথ্য অনুসন্ধানের সামান্যতম চেষ্টা করলেই তারা তা জানতে পারতো, সত্যের সন্ধান পাওয়া যেতো। সমস্ত প্রতিবেদনটি জুড়ে যত সব মিথ্যা পরিবেশন করা হয়েছে তাতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে তারা সাংবাদিকতার প্রতি লক্ষ্য না-রেখে শুধু মিথ্যা প্রচারণায় ব্যস্ত থেকেছে।

দেশের সীমান্ত নিয়ে কটাক্ষ করার সিনেমা 'শঙ্খচিল' অগ্রহণযোগ্য

কি করলে, কি হতো, বা কারা উপকৃত হতো, কারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এ সব আলোচনার চে বাস্তব অবস্থাটাই মুখ্য। আমরা স্বাধীন দেশ। সুতরাং এখানে আমাদের জোড়া লাগা থাকলে ভালো কি মন্দ হতো সেটি আমরা কল্পনা করতে পারি । তবে কিছু বাস্তবতা তো উপেক্ষা করা যায় না। 

বাঙালি পরিচয়ের জন্য যাদের আকুতি তারাই তো দাঙ্গায় শত শত মুসলিম ও হিন্দুদের বসতি পুড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানেরা এসেছেন পূর্ববঙ্গে। আর পূর্ববঙ্গের হিন্দুরা চলে গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। 

তবে সবাই নয়। বহু হিন্দু বাংলাদেশে এখনো আছেন। বহু মুসলমান পশ্চিমবঙ্গেও। এটা তো নিশ্চিত এবং বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী সূত্রেও আমরা দাঙ্গার ভয়াবহতার আঁচ করতে পারি। 

তাহলে স্বাধীনতা সাড়ে ৪ দশক পরে ভারত বাংলাদেশ প্রযোজনার সিনেমা 'শঙ্কচিল' কীভাবে প্রশ্ন তোলে, দেশ ভাগটা সঠিক ছিল না। এটা ভাবনার বিষয়।
'অখণ্ড ভারত' সিনেমাটির মূল স্রোত। আমরা অখণ্ড ভারতে থাকলে লাভবান হতাম কি, হতাম না, তা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে একটা সরল রেখায় সমাধান টেনে দেওয়া মুশকিল--- শঙ্খচিল-- সিনেমায়ও আমরা দেখি সাম্প্রদায়গত একটা নিচুতা পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যমান। সেখানে পুর্ববঙ্গের মানুষ কতটা ভালো, সুখে থাকতেন তা কল্পনা করা কঠিন ।
শঙ্খচিলে রূপসা চরিত্র ইনডিয়া চিকিৎসার জন্য যাওয়ার পর সেখানে তাদের হিন্দু পরিচয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। কুসুম সিকদারের মাথায় তুলতে হয় সিঁদুর। কন্যা তাদের বাঁচে না। অনুপ্রবেশকারী হিসাবে তাদের ঠাঁই হয় জেলে। আইন অনুসারে তাই হয়, হতেই হয়ে।
প্রসেনজিৎ মূল চরিত্র রূপকার। আমরা সিনেমার গোড়াতেই দেখি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বিয়ে বাড়িতে আসা ইনডিয়ানদের নৌকা ঘুরিয়ে দেয় বর্ডার গার্ড । তারা অনুনয় করে বিয়ে-নেমতন্ন সেরেই চলে যাবে। কিন্তু বিজিবি তাতে সাঁয় দেয় না। এখানে ইনডিয়ান মুসলিমদের দেখানো হয়, ইনডিয়ান হিসাবে তারা কেবল বিয়ের নেতমন্ন সম্পন্ন করতে আসছেন।
বিপরীত চিত্র বাঙালদের ক্ষেত্রে। বাঙালরা ভারত ঢুকছে চোরাচালন নিয়ে, মই দিয়ে সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করছে। এ সময় ভোরে বিএসএফ'র গুলিতে খুন হলো একটা তরুণ।
বাঁশে ঝুলিয়ে লাশ নিতে অভ্যস্ত বিএসএফকে আমরা দেখি স্ট্রেচারে করে লাশ নিচ্ছে! আমরা ধারণা করতে পারি এ ঘটনা 'ফালানীর' ছায়া চিত্র। কারণ ঘটনার পর বিএসএফ'র উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত বিশ্বের সবচেয়ে ' কমপ্লেক্স বর্ডার'। তাই এখানে মানবিকতা ও মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন বেহুদা! আমিও তাই মনে করি।
কিন্তু তাই বলে সীমান্তে হত্যা জায়েজ!
হতে পারে। কারণ বিএসএফ বলছে!
তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিএসএফ কর্মকর্তা চরিত্র রূপায়নকারী বলছেন, তারা তদন্ত করে বিএসএফ জওয়ানদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন। সিনেমার শেষাংশ পর্যন্ত সে গল্পের বিষয়ে কোনো আলাপ আমরা দেখিনি।
সীমান্ত নিয়ে তার মন্তব্যও তাচ্ছেল্যের! রেডক্লিপ কিম্বা জিন্নাহ নেহরুকে জিজ্ঞেস করতে বলেন তিনি, কেন এ রকম সীমান্ত হলো।
আমরা আবার এও দেখি, বাংলাদেশের পত্রদূত কাগজের সাংবাদিক বিজিবি'র সাথে সীমান্ত দেখতে যায়, সীমান্ত সমস্যা দেখায় বিজিবি, বলে দেখেন তাল গাছের গোড়া বাংলাদেশে, মাথা ইনডিয়ায়। পিলার দেখান এবং হাজারের ওপর পিলারও নেই বলে জানান, যে গুলো নদীতে থাকতে পারত।
এখানে কি বিজিবি চরিত্র রূপায়নকারী সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেছেন, নৌ সীমান্ত কি পিলার দিয়ে করতে হয়। একই সাথে সীমান্ত গ্রাম নিয়েও এখানে বিজিবি চরিত্র রূপায়নকারীদের আমরা তাচ্ছিল্য করতে দেখি--- দেখুন সীমান্তের গ্রামে কে কোন দেশের সেটা বোঝাও মুশকিল।
হতে পারে। তবে এ মুশকিল সামাল দেয়ার জন্য সীমান্ত রক্ষী। তারা এখানে সফলভাবে সিনেমায় উপস্থিত হতে পারত, সেটি কেন হয়নি প্রশ্নটা থেকেই যায়।
এখানে পত্রদূত কাগজের সাংবাদিক চরিত্রেও দেখি,বলছেন,'আমার মনে নয় সীমান্ত ঠিক করার সময় রেডক্লিফ নেশাগ্রস্থ ছিলেন।' তারক দাঁত কেলিরে হাসি !
একটি দেশের সার্বভৌমত্ব , সীমান্ত স্পর্শকাতর বিষয়, অথচ এ সিনেমাটির ক্ষেত্রে এটাকে মামুলি সিনেমেটিক ফরমেটে বিবেচনায় করা হয়েছে। এটা দুঃখজনক।
যে দেশে চাকমা ভাষায় নির্মিত সিনেমা 'মর থেংগারি'র মুক্তিতে সেন্সর বোর্ড গড়ি মসি করে, সে দেশে শঙ্খচিল এত সহজে কীভাবে হলের পর্দায় আসে, সেটি বুঝতে পারিনা !
আমরা প্রসেনজিৎকে দেখি নদীর তীরে বসে --- অন্নদা শঙ্কর রায়ের সে ছড়া কাটতে---'তেলের শিশি ভাঙ্গলো বলে/খুকুর পরে রাগ করো/তোমরা যেসব বুড়ো খোকা ভারত ভেঙ্গে ভাগ করো!' ভারত ভাগে মনোকষ্ট তার।
বাদলকে আমরা দেখি একটা পুরনো ট্রাঙ্ক থেকে অনেকগুলো চিঠি খুঁজে বের করতে, যেখানে তার পিতার সূত্রে প্রাপ্ত চিঠিতে বলা হচ্ছে, মুসলিমরা কীভাবে হিন্দুদের নিপীড়ন করেছে, চিঠি পড়তে পড়তে আমরা মুসলিম বাদল চৌধুরীকে পুড়তে দেখি, কষ্ট পাই।
আমরা এও একমত হই, যারা ধর্মের নাম করে অন্য ধর্মের লোকদের আক্রমণ করে তাদের ধর্ম ঘৃণা। তাদের ধর্ম কখনোই ইসলাম হতে পারে না। হিন্দু হতে পরে না!
সিনেমায় আমরা এটা দেখতে পারলে ভালো হতো, পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমরাও একই রকম নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। এটা ঐতিহাসিক সত্য। এটা এডিয়ে গৌতম ঘোষ কি বার্তা দিতে চাইলেন, সহজে অনুমেয়!
সিনামায় আমরা মামুনুর রশীদকে দেখি সাতক্ষীরার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে, তার নাম- তপন বাগচী। বাদল চৌধুরীর খুব কাছের একজন; তার স্কুলেইর শিক্ষক।
বাদল স্যারের মেয়ে রূপসার হার্টের রোগ ধরা পড়ার পর তপন বাগচীর পরামর্শেই তাকে নেয়া হয়, সাতক্ষীরা ওপারে টাকী হসপিটালে। তপন বাবুর আত্মীয় চরিত্র রূপায়নকারী মিস্টার বাগচীর ফোন পেয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। তার আতিথেয়তা মুগ্ধ করার মত।
আমরা দেখি বাদল স্যার তার স্ত্রী এবং কন্যাকে নিয়ে ইনডিয়া গেলেন, টাকীর সেই ভদ্রলোক তাদের বললেন, সীমান্ত আইন কড়াকড়ি। মেয়ের চিকিৎসার জন্য তাদের হিন্দু পরিচয় দিতে হবে। হসপিটালে তাই দেয়া হয়।
উন্নত চিকিৎসার জন্য রূপসাকে স্থানান্তর করা হয় কলকাতায়। সেখানে নিয়ত তাদের লুকিয়ে চলতে হয়। এখানে আমরা অবশ্য নামাজি বাদল চৌধুরীকে আবিষ্কার করি, যাকে আমরা দেশে বারবরই গান বাজনায় মগ্ন থাকতে দেখি, তিনি হঠাৎ সেখানে বিরাট মুসল্লী। তার স্ত্রীর সিঁথিতে সিঁদুর তুলে নেয়ার চেষ্টা করছে,--- নিজের পরিচয় লুকানোর কষ্টের চিত্রায়ন। তবে একই সাথে তপন বাগচীর আত্মীয়'র তৈরি করে দেয়া অবৈধ নাগরিকত্ব সনদ দিয়ে কন্যার চিকিৎসার করানো দ্বিধাদ্বন্ধের সাথে লক্ষ্য করি। এখানে দ্বি-মুখিতা উপলব্ধি করবেন যে কেউ!
আমরা জানি সন্তানে জন্য মা বাবা যে কোনো কিছুই করতে পারেন, কারণ সন্তান সবারই প্রিয়! কিন্তু একের পর এক অপরাধ, ধর্ম, দেশ নিয়ে মিথ্যা তথ্য, জালিয়াতি--- সবই হয়ত মেনে নয়ো যায়, কিন্তু এর উদ্দেশ্য যখন চূড়ান্ত বিচারে অনুপ্রবেশকারী হিসাবে ঘোষণা, তখন নিশ্চিতভাবে এখানে একটা ইল মোটিভ থাকতে পারে বলে, দর্শক হিসাবে সন্দেহ করার সুযোগ থাকে।
একটা লোক মুসলিম, যে তার কন্যাকে সত্য কথা বলতে শেখায়, মিথ্যা পরিচয় দিয়ে কন্যাকে হসপিটালে ভর্তি করায়। মারা যাবার পর সন্তানের লাশের ডিসচার্জ লেটার নিতে গিয়ে বাদল চৌধুরীর অনুতাপ প্রকাশ করে নিজেদের "অনুপ্রবেশকারী" ঘোষণা এক সাথে যায় না।
তারপর থানা পুলিশ। এর মাধ্যমে কি ভারতে বহু বাঙালকে অনুপ্রবেশকারী হিসাবে দাবি জনতা পার্টির এজেন্ডার সফল চিত্রায়ন হলো!
লাশটা অবশ্য ফেরৎ পাঠানো হয় বাংলাদেশে। সে সাথে লাশ দাফনের পথে যাওয়ার সময় তপন বাগচীকে তার ইনডিয়া প্রীতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় রূপসার চাচা আনিস। এটাও বাংলাদেশের মানুষের হিন্দুদের প্রতি দুষ্টুমিচ্ছলে বলা কথা। এর সিনেমায় চিত্রায়ন নেতিবাচক ।
সাকুল্যে সিনেমার গল্পটা ঘুরপাক খায় সীমান্ত নিয়ে। সীমান্ত--- মানুষের জীবন বিপন্ন করে, স্বাধীন চলাফেরা আর বাঙালিত্বে অনেক বড় বাধা। এটাই সিনেমার ট্যাগ লাইন।
এ ধরণের সিনেমা আমাদের তিরিশ লাখ বা তারো বেশি শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা, দু'লক্ষ বা তততোধিক নারীর ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত। সে ত্যাগের সহযোগিতা আমরা ইনডিয়ার কাছ থেকে পেয়েছি, সেটি স্বীকার করে নিয়েই বলছি--- এ ধরণের বার্তা, অখন্ড ভারতের আকাঙ্খা , সীমান্তকে কটাক্ষ করার সিনেমা শঙ্খচিল গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।

এত লুটের ভিড়ে জীবনটাই সবচে সস্তা। সব মানুষের জীবনই সস্তা!





গ্রাফ সূত্র: প্রথম আলো

জগতে এত লোক থাকতে থাকলে আমাকেই কেন লিখতে হবে? এ প্রশ্ন  আমার পরিমণ্ডলের মানুষের! কিন্তু নিজেকে আটকাতে পারি না। তাই লিখছি!

সকালে কানটা গরম হয়ে গেলো-- -কারণ একটা খবর। সাত বছরে আত্মসাৎ ৩০ হাজার কোটি টাকা। বিচার হয়নি।  অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলি-  এ টাকা কেউ কারো পকেট থেকে দেবেন না, রাষ্ট্রের এ জনগণ যারা কালো ধোঁয়া গিলে, উটের পেছনে ছুটে, থালা বাসন পরিষ্কার করে-- তাদের উপর দিয়েই  যাবে।

আগে অবশ্য এ সব বুঝতাম না। এখন বুঝি, রাষ্ট্র মাথা পিছু আয়ের হিসাব দ্যায়, কিন্তু ঋণের হিসাব দেয় না। দিনে দিনে শুনি আমাদের শির দাঁড়া খাড়া হচ্ছে, সে খাড়া হওয়া শির দাঁড়া যে লক হয়ে যাচ্ছে , সেটা বোধ করি আমরা বুঝতে শুরু করেছি। তিরিশ হাজার টাকা তো দৃশ্যমান, আরো কত হাজার টাকা গিললো লুটেরারা সেটির হিসাব নাই। অথবা আাছে, আমি-আমরা জানি না।

মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে বাংলাদেশের বিকাশ, কিম্বা মর্জিনা ওরফে কাজের বেটি যে আমাদের এশিয়ান অর্থণীতির উদিয়মান টাইগার বলতেন--- প্রথম দিকে আমি এটা বিশ্বাস করতাম না। বিশ্বাস করুণ আসলেই করতাম না। কারণ আমার জীবন যাত্রার মান বিশ্ববিদ্যালয় হল লাইফে যা ছিল, তার চে কিঞ্চতি বেড়েছে। কোনো কোন ক্ষেত্রে কমেছেও, কিন্তু দেশ মধ্যম আয়ে পৌঁছে গেছে, এটা  আমার কাছে মনে হয়নি, কারণ এখনো তো নগরে যৌনকর্মীর  আয়ের পঞ্চাশ শতাংশ রাজনৈতিক নেতা আর শৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের পকেটে যায়।

পকেটে ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে মানুষকে হয়রানি করার খবর তো পড়েছি ক'দিন আগেও! ক'টা টাকার জন্য আমাদের নিরাপতা্তা রক্ষীরা এ হয়রানিটা করে থাকেন বলে অভিযোগ!  সেখানে এটা আমার বিশ্বাস হবে কেমনে?

তবে এখন বিশ্বাস হচ্ছে, মাত্র তিরিশ হাজার কোটি টাকা লুটেছে। এ আর এমন কি টাকা। আমরা তো পদ্মা সেতু বানাচ্ছি।  বছরের পর বছর ধরে আমাদের তৈরি হচ্ছে ফ্লাইওভার।  ঈদের সময় মহাসড়ক ঠিক করার জন্য সেটি কসরত-হরিলুট, বর্ষা মওসুমে রাস্তায় কেটে আবার ঢালাই করি এবং গলিপথ চিরে ঢুকাচ্ছি প্লাস্টিকের পাইপ!

উড়াল সেতুর নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে, নকশা বদল হচ্ছে, নিম্ন মানের মাল জমা হচ্ছে, লোহা লক্কর পড়ে মানুষের মগজ ছিটকে বেরিয়ে যাচ্ছে--- আমাদের বুকে বালি বাসা বাঁধছে, ইনহেলা আর অ্যাজমার ওষুধ কিনতে কিনতে মানুষের কষ্ট আরো বাড়ছে--- তবুও জীবন মান নির্ধারণের সব সূচেক নাকি আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। শুনে শান্তি!

 রাষ্ট্র কে পরিচালনা করবে, বা কারা কি করবে এটা একান্ত উপরস্তরের ভাবনা। আমরা যারা নিঁচু স্তরে আছি, তাদের শঙ্কা হয়রানি নিয়ে।  আমরা হয়রানির শিকার হতে পারি না! তবুও তাে তাই হচ্ছে।   বাড়ছে মূল্য সংযোগ করের আওতা, সম্পূরক শুল্ক, আয় কর। কমছে জীবনের দাম।  ২০ হাজার টাকায় তো শেষ পর্যন্ত কুমিল্লা জেলা প্রশাসন  জীবনের মূল্য নির্ধারণ করেছে, তনুর পরিবারকে একটা চেক দিয়েছে। আর ধর্ষণের জন্য এক খণ্ড জমি।

এত লুটের ভিড়ে জীবনটাই সবচে সস্তা। সব মানুষের জীবনই সস্তা! আজ যারা ক্ষমতায় আছেন, যারা ক্ষমতার বাইরে আছেন, সবার কাছেই  গরিব মানুষের , অসহায় মানুষের , অরাজতৈকি মানুষের জীবনের মূল্য তু্চ্ছ। একটা জীবন কেড়ে নেয়ার পর যে ভাবে মানুষকে দ্বিধা-বিভক্ত দেখি। তাতে চোখ বুঝলেই এনিমেল প্লানেটের সে সব হিংস্র সিরিজের মত মনে হয়, যেখানে জন্তুরা খবুলে তুলছে অন্য জন্তুর শরীর।

মাঝে মাঝে মনে হয়--- আমি উপযুক্ত নই এ উন্নতির সাথে তাল মেলাতে! আমাকে পালাতে হবে। অবশ্যই! কিন্তু কোথায় পালাবো!। আমি যে এ দেশটাকে ভালোবাসি । আমাকে এখানে থাকতে হবে।।।

আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক : আমার পদক লাগবে কি না, চেক লাগবে কি না,

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য পদক তৈরি করুক,
শুধু আমার জন্য তুলে রাখুক একেকটা সোনালি পদক ।
বাইরে থেকে দেখে সোনা মনে হলেই হবে! ভেতরে সোনার খাদ? সে তো অতি পুরনো 
পদক না পেতে পেতে; আমি মানুষের কথা শুনে এখন ক্লান্ত ।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে  সোনার পদকের সাথে একটা চেক দিক ।  মুলা নিয়ে আমি
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
রাজনীতিকে মুক্তি দিয়েছে কবি -সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক :
আমার পদক লাগবে কি না, চেক লাগবে কি না,
পদকের সাথে  আরও একটা
তেলে ভাজা পদবী লাগবে কি না ।
এঁটো কবিতা,রুমাল-প্রেম আমি নিজেই ডাস্টবিনে ছুড়তে পারি!

আমি বলছি না ভলোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার জন্য পদকের  দরোজা
খুলে দিক । সে দরজা বিম্পি বানিয়েছে কি আম্লীগ।
তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না! কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক : 'চেয়ে পুরস্কার নেবার পর তোমার কেমন লাগছে ?'


দায় মুক্তি ::  এটি একটি প্যারেডি কবিতা। কবি নির্মলেন্দু গুণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক তার লেখা কবিতা 'তোমার চোখ এতো লাল কেন?' অনুসরণ করে লেখা। শুধু মাত্র রসের জন্য তৈরি! কেউ মনো কষ্ট পেলে দুঃখিত। 

আতিউরকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিৎ

ড. আতিউরের প্রতি প্রচণ্ড সহানুভূতি লক্ষ্য করছি । হয়ত এটা ঠিক আছে । তবে আমার ভাবনা এবং জানার সীমাবদ্ধতার কারণে আমি তাকে সমর্থন করতে পারিনি ।

১. কারো মতে মালের কাছে ৪ হাজার কোটি টাকা কিছুই না। ৮ শ কোটি টাকা কেন আমল পেলো।
এটার জবাবটা সোজা , সাইবার এটাকে একসাথে এত টাকা চলে যাওয়ার চে , ডিজিটাল বাংলাদেশের সাইবার সিকিউরিটি কতটা ভঙ্গুর এবং এটা ঠিক করতে ড. আতিউর কতটা অসফল তারই প্রমাণ হলো এই হ্যাকিং!
প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত না  ব্যাংকিং ভাবনায় প্রযুক্তির তড়িৎ সংযুক্তি-সম্প্রসারণ অবশ্যই ভুল ছিল, যেটি হ্যাংকিংয়ের পর তার নেয়া পদক্ষপের বলে খবর থেকে পড়ে সহজেই বোঝা যায়।

২. ড. আতিউর মোটেও মাস্টর নন । তিনি এনজিও ব্যবসায়ী। বিম্পি-জমাত সরকারের শেষ দিকে ঢাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে তিনজন অধ্যাপক নিয়োগ করা হয় , সে সময় 'সুশীল' হিসাবে তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত ।।

৩. আম্লীগের উনি বিরাট কিছু নন । বিরাট কোন অবদান তার নেই । তবে তিনি মেধাবী চতুর । তিনি রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে একটা মোটা বই লিখেছেন , যারা পড়ে থাকবেন তারা জেনেছেন, নিশ্চিতভাবে গ্রন্থটি আনুকল্য প্রত্যাশায় রচিত ।

৪. ড. আতিউর বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ তার সন্তানের মত । সত্য । তবে সন্তান তিনি সঠিকভাবে লালন করতে পারেননি । তাই তিনি সন্তান বিপদে পড়ার পর একটি বাহিনীকে বলেছেন, যাকে সন্দেহ তুলে নিন । অনুমতি লাগবে না । এটা একটি বে আইনি প্রক্রিয়া ।

৫. বিদেশ থেকে টাকা আসার কোড বলেন আর আইটি সার্ভারের সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য ঘটনার পরে তিনি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ডেকে কথা বলেছেন বলে জানালেন । আসলে এটা আগে করলে এ রকম ড্যামেজ নাও হতে পারতো ।

৫. রিজার্ভ বৃদ্ধি সাধারণ এবং অতি সাধারণ একটি ঘটনা । রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ ভালো গেলে এটা আরো বাডতে। আমার জানা মতে, রিজার্ভের মুল টাকা আমাদের প্রবাসীদের আয়। যারা তাদের জীবনেকে বেঁচে দিয়েছে অল্প দামে। তাদের শ্রমের টাকা । এখানে কারো কোন বাহাদুরের ফলানোর কিছু মাই ।

৬. বাংলাদেশ ব্যাংক ড. আতিউরের সময় দৃশ্যমান বিপ্লবী কিছু করেছে হলে মনে পড়ে না ।

৮. অনেকে বলছেন , সরকারের অপছন্দের কারণ হলো তিনি দলের কথা শোনেন নি । আপনাদের নিশ্চয় মনে থাকে ড. ইউনুসকে সরকার ন্যাংটা করার কাজটা  ড. আতিউরকে দিয়েই করিয়েছেন ।


৯. পদত্যাগই যথেষ্ট নয়, তাকে বিচারের মুখামুখি করা দরকার ।


১০. মালের অপরাধও সরকার আমলে নিবে ; এটাও আমরা আশা করি । তবে মাল যেহেতু কোর রাজনৈতিক টিমের কোর মেম্বার, তাই তার রক্ষা পেয়ে যাওয়া বঙ্গীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলেই সম্ভব । তবুও সরকার কিছু একটা করে দেখাতে পারেন । আশায় আছি ।।

ভারাইট্টা :: নগর তোর লাইগা না!



নগরে ভারাইট্টাদের বিপক্ষে  কেবল বাড়িঅলা একা নন; এখন বিচারায়লও যুক্ত হৈলো। পুলিশ এখতিয়ারে বাইরে তথ্য চাইতে পারে!  আজ রোববার আদালত খুইলা কৈছে। 'নিরাপত্তার স্বার্থে' এটা পারে। কার নিরাপত্তা? রাষ্ট্রের ! হতে পারে। রাষ্ট্র এখন ডিজিটাল এবং এনালগ দু'দিক থেকেই  অনিরাপদ অবস্থায় আছে।

বঙ্গীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হরিলুট ডিজিটাল উপাখ্যানের পরে এ নিরাপত্তার বিষয়টি বেশি আলোচিত হবে--- এটাই স্বাভাবিক।  একই ভাবে আইএস নাই কিন্তু জঙ্গী-জিএমবি আছে--- সরকারের এ অবস্থান নিয়ে  মোড়ল-বনাম বঙ্গীয়  সক্কার বাহাদুরের বক্তব্য বৈপরিত্যও  এ ধরণের তথ্য লওয়াকে জায়েজ করবে।

বিদেশ গেলে আমরা কোনো তথ্য-সহায়তা দরকার হৈলে পুলিশের কাছে যাই। দেশে আমরা পুলিশকে সে রকম সহযোগি দেখি না; কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ হতে পারে, তবে সেটি যৌক্তিক বিচেনায় নিশ্চিত কিছু না। কিন্তু পুলিশ তথ্য নিয়ে সন্ত্রাস দমন করবে নাকি হয়রানি করবে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।  আমি এ প্রশ্নটা করছি না! কারণ এখানে প্রশ্ন করলে কেউ আবার বিশেষ কোনো  পক্ষীয় হিসাবে আমাকে সিল দিতে পানে! সে আশঙ্কা থেকে  চুপ থাকাই উত্তম।

নগরে ভারাইট্টা নাগরিকরা যে এখনো  গোনায় আছে, সেটা হঠাৎ করে আমার মনে হলো, জ্যেতির্ময় বড়ুয়ার রিটের পর।  তিনি রিট করে এ তথ্য চাইবার অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। আদালত রুলও দিয়েছে। দিয়ে এটাকে রোববার হালাল বলে ঘোষণা করেছে।

জ্যেতির্ময় বড়ুয়াকে উদ্ধৃত করে বিডিনিউজ জানাচ্ছে,  “ডিএমপি রুলস-২০০৬ অনুসারে সন্ত্রাস দমনে ডিএমপি যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে। এর আলোকে তারা তথ্য সংগ্রহ করছে বলে রিট আবেদনটি আদালত খারিজ করে দিয়েছে।”

'যে কোনো' শব্দটা খুবই মরাত্মক একটা শব্দ। যদিও্ এ নগরে মারত্মক আরো অনেক কিছু ঘটে গেছে, সামনেও ঘটবে সে সবের প্রতিকার আশা করাটাও অনুচিৎ এবং সন্ত্রাস দমনের স্বার্থে বললে-- 'অন্যায়'।

নগরে আসলে মানুষ শখ করে আসে না! শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা, চাকুরী, ক্ষমতা, ডাকাতি, চুরি, রিকশা টানা--- সব কিছুরই কেন্দ্র এ রা্জধানী । এ শহরকে কখনো বিকেন্দ্রীকরণ করা যায়নি, অন্য অর্থে কারো এমন ক্ষমতা হয়নি; এটাকে বিকেন্দ্রীকরণ করবে!  তাই এখানে লোকে আসে, আসতে হয়---   এই কালো ধোঁয়া, বিষাক্ত সিসা, আর বালু বুকের  ভেতর নিয়ে খক খক করে কাশি  দিতে দিতে ইনকাম করা টাকার একটা অংশ বাড়িঅলা, একটা অংশ এনবিআর আর একটা অংশ ডাক্তারে চেম্বারেন জমা করতে করতে ক্লান্ত মানূষগুলো আগামীর স্বপ্ন বোনে।

সেই স্বপ্নের ফানুস আকাশে ওড়ে না। ফুস করে ফুটে যায়। হ্যাকার বেকার চ্যাকার নানা  তরিকার লোকেরা লুটে নেয়, চেটে পুটে খেয়ে সর্বসান্ত্ব করে নেয়ার পর এ ভারাট্টারা এ নগরে মরে পঁচে যায়। তাদের তুলে নেয় একটা এম্বুল্যান্স--- গ্রামের বাড়ির পথে রওয়ানা হয় সেখানে কবর! তারপর আবার নতুন ভারাইট্টা হিসাবে তার সন্তানের জীবন চক্র শুরু। এভাবে--- দিনে দিনে প্রতিদিনে এ নষ্ট নগরে বহু ভারাইট্টার জীবন  মিশে গেলো। কেউ খবর নিলো না!

পুনশ্চ: ধারণা ছিল এ রিট খারিজ হবে। তাই আগেই ফরম পূরণ করে জমা দিয়ে দিয়েছি।  তবে একটা জিনিস খটকা লাগলো--- তিনজনের বেশি লোক বাসায় থাকার তথ্য নাই। আমার অবশ্য আমি ছাড়া ৩ জন পরিবারের সদস্য। বাকি  গরিব মানুষ যারা থাকেন একটা বাসায় বেশি লোক তাদের কী হবে? 

 ওরে কালিয়া, নগর তোর লাইগা না!





  

আঙুলের ছাপেই সিম নিবন্ধন চলবে!

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধন ও পুনঃনিবন্ধনে কোন পর্যায়েই আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করা হচ্ছে না বলে নিশ্চিত করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। 

আজ রোববার সচিবালয়ের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন নিয়ে একই সভায় আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করা হচ্ছে বলে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের ধরা হবে বলে জানিয়েছেন জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী।

বাংলালিংকের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার শিহাব আহমাদ ২৫ ফেব্রুয়ারি বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, “যে তথ্যগুলো আসে সব তথ্যই এখানে সংরক্ষণ করা হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত এটা ভেরিফাই করা না হচ্ছে। ভেরিফাই হওয়ার পরে বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী এগুলো হয় সংরক্ষণ করা হবে অথবা আমরা এটা পরবর্তীতে অন্য কোনো পদ্ধতিতে ডিলিট করে দিব”।

গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংরক্ষণ না করে ভেরিফাই করা সম্ভব না উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, “গ্রাহকদের সম্পূর্ণ তথ্য পরিপূর্ণভাবে সংরক্ষণ করা হয় এবং ওইটা প্রটেকশন দেয়া হয়। এবং আমাদের সার্ভার থেকে এটা বাইরে যাবার কোনো সম্ভাবনা নাই।”

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অভিযোগ ওঠে অপারেটরদের সিম নিবন্ধনে আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করছে ৷ এ তথ্য পাচার হতে পারে বলে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেন ৷ 

গত বৃহস্পতিবার নাগরিকদের আঙুলের ছাপের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন বন্ধ করতে উকিল নোটিসও পাঠানো হয় ৷ 

এ বিষয়ে তারানা হালিম বলেন, যে পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করা হচ্ছে সেখানে অপারেটরদের আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করার প্রযুক্তিগত কোন সক্ষমতা নেই।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন জানান, যে যন্ত্রের সাহায্যে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে সিম নিবন্ধন করা হচ্ছে সেখানে শুধু অনলাইনে যাচাই করা হচ্ছে, ওই যন্ত্রে আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করার প্রযুক্তি নেই। ব্যাংক ও অন্যান্য সেবা খাতেও এইভাবে ছাপ যাচাই করা হচ্ছে।

সিআইডি পুলিশ সুপার রেজাউল হায়দার বলেন, আঙ্গুলের ছাপটি একটি বাইনারি ডিজিটাল কোড, যা কোন অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা সম্ভব নয়, এগুলো কেবল সিনেমাতেই সম্ভব।” 

তারানা হালিম বলেন, “এই প্রজেক্ট (বায়োমেট্রিক নিবন্ধন) ভেস্তে গেলে অপারেটররা সবচেয়ে খুশী হবে। তাদের সিম বিক্রি কমে গেছে। '

তিনি বলেন, 'একটি মহল এই অপপ্রচার চালাচ্ছে, যে এটা ( বায়োমেট্রিক নিবন্ধন) বন্ধ হয়ে যায়, কারণ এ প্রক্রিয়া সফল হলে যারা অবৈধ ভিওআইপি করে কোটি কোটি টাকা কামাই করছে, চাঁদাবাজী করছে এবং সন্ত্রাসী কাজ করছে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে ৷”

টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেন, এই অপপ্রচারে যারা জড়িত রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে ৷ গোড়ায় হাত দেয়া হবে। তাদের খুঁজে বের করা হবে। এদের ধরতে চাই।”

বিটিআরসির মহাপরিচালক মো. এমদাদ উল বারী বলেন, যেই পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে সেখানে কোনভাবেই তা সংরক্ষণ করার উপায় নেই।

অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব মহাসচিব নুরুল কবির বলেন, সিম নিবন্ধনে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তাতে অপারেটরদের হাত নেই। বরং এ বিষয়ে অপারেটররা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে যাতে খুব দ্রুত এই কাজ শেষ হয় ৷ 

ভুয়া পরিচয়ে সিম কিনে তা নানা অপরাধ কর্মে ব্যবহারের অভিযোগ বাড়তে থাকায় সম্প্রতি গ্রাহকদের সিমের তথ্য যাচাই ও সিম পুনঃনিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

১৬ ডিসেম্বর থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম পুনঃনিবন্ধনের কার্যক্রম চালু হয় ৷ নতুন সিম কিনতেও অাঙুলের ছাপ লাগছে ৷ 

বিটিআরসির মহাপরিচালক মো. এমদাদ উল বারী জানান, ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই কোটি ৫৩ লাখ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন বা পুন:নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।

শ্রম আদালতে অভিযুক্ত বাংলালিংক;শোকজ।

বাংলালিংক সিইও, সিটিও এবং সিসিওকে শো করেছে শ্রম আদালত । ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ প্রথম শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান তাবাসসুম ইসলাম ১০ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে এ শোকজ করেছেন , যাতে 'ভলেন্টারি সেপারেশন স্কিম’ কেন বন্ধ করা হবে না এবং ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ, কর্মীদের ছাঁটাই, বদলী , হয়রানি , বেতন বন্ধ রাখা অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়েছে শ্রম আদালত ।

মামলার বাদী বাংলালিংক এম্পলয়িজ ইউনিয়ন (প্রস্তাবিত) সভাপতি উজ্জল পাল এবং সেক্রেটারি বখতিয়ার হোসেন ।


শোকজ প্রাপ্তর বাকি তিনজন - সিনিয়র ডাইরেক্টর-এইচ আর, রেগুলেটির এবং লিগ্যাল ।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়নের দরখাস্তের প্রেক্ষিতে শ্রম আদালত এ নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি ‘ভলেন্টারি সেপারেশন স্কিম’ সাময়িক স্থগিত করারও অস্থায়ী আদেশ দিয়েছে। 


২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলালিংক তার কর্মীদের ‘ভলেন্টারি সেপারেশন স্কিম’ সুবিধা নেয়ার শেষ দিন নির্ধারণ করেছিল । এর বেশি সময়ও তারা বাড়াবেন না জানিয়ে দেন অপারেটরটির সিইও এরিক অস ।
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, সোমবার, স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের সময় শেষ হবে বলে এরিক নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘ঘোষিত সময়ের মধ্যেই কর্মীদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর সময় আর বাড়ছে না।’
সে অনুযায়ী সময় বাডেনি ।


এরিক রাজধানীতে গত মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কোনো সমস্যা দেখছি না। কোম্পানি ডিজিটাল হতে যাচ্ছে। পুরানো মোবাইল কোম্পানির ধারণা আর নেই। এখন পরিবর্তনের সময়। গ্রাহক সেবার জন্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যারা কোম্পানির নতুন পথ চলায় অবদান রাখতে পারবে তাদের জন্য সুযোগ তো থাকছেই।’

কতসংখ্যক কর্মী চাকরি হারাবেন সেই বিষয়ে জানতে চাইলে অপারেটরটির চিফ কর্মাশিয়াল অফিসার (সিসিও) শিহাব আহমদ জানান, সংখ্যা এখনই ঠিক করা হয়নি। ডিজিটাল রূপান্তরের পরিকল্পনায় কোম্পানির প্রয়োজনই এই সংখ্যা চূড়ান্ত করে দেবে।

আর ‘ভলেন্টারি সেপারেশন স্কিম’ নামে কর্মীদের এই স্বেচ্ছা অবসরের অফার যদি নির্ধারিত সময়ে কেউ না নেয়, সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে চাকরি হারালে এই স্কিমের সুবিধা আর মিলবে না বলেও জানান শিহাব সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন।

অপারেটরটির কর্মীরা ‘ভলেন্টারি সেপারেশন স্কিম’র সময় জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলেন ।বাংলালিংক এম্লয়িজ ইউনিয়নের (প্রস্তাবিত) সভাপতি উজ্জল পাল আলাপকালে জানালেন, আমরা চেয়েছিলাম ‘ভলেন্টারি সেপারেশন স্কিম’এর মেয়াদও বাড়ানো হোক। তাঃক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত খুবই মুশকিল।

টেলিকম খাতে চাকুরীর বাজার সঙ্কুচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, শীর্ষ অপারেটর ছাঁটাই করার উপর আছে। তারা এখন কেউ চলে গেলে বা বাদ দিলে সেখানে নতুন লোক নিচ্ছে না।
উজ্জলের মতে, টেলিকম কোম্পানিগুলোর আয় বাড়ছে। কিন্তু তারা কর্মী হয়রানি করছে। এটা হতে পারে না।

তিনি জানান, আইন অনুসারে কােম্পানীর চাকুরী বিধিমালা শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার কথা। কিন্তু, অধ্যাবদি বাংলালিংকের চাকুরী বিধিমালা শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত নয়। বরং যখন খুশি তখন পলিসি তৈরী করা হয়।
তবে এ বিষয়ে বাংলালিংক সিইও এরিক অস বলছেন, তারা শ্রম আইন মেনেই চলছেন ।

আঙুলের ছাপ নিয়ে তর্ক; ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়াটা কঠিন!

আঙুলের ছাপ নিয়ে তর্ক উঠেছে; এটাকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়াটা কঠিন।  কারণ আমাদের মত অপরাধ-মজ্জাগত সমাজে এর অপব্যাবহার নিশ্চিতভাবেই হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ এখানে স্ত্রী-স্বামীর সম্পর্ক পর্যন্ত ইউটিউবে উঠে আসে, প্রেমিকার সাথে গোপন সংলাপ সাউন্ডক্লাউডে আপ হয়, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দু'জন শীর্ষ রাজনৈতিকের টেলিফান আলাপ সম্প্রচার-ব্রেকিং প্রতিযোগিতা চলে।

সেখানে অপরাধী পরিবর্তন করার প্রাচীন প্রথাকে আধুনিক যুগে আঙুলের ছাপ বেঁচে করে দেয়া খুবই সম্ভব একটা কাজ। যেমন আগে কালা মিয়া খুন করেছে সাদা মিয়াকে খুনী বানিয়ে কালা মিয়াকে পার করে দেয়া যেত। এখন আঙ্গুলে ছাপ কিনে যে কাউকে এ দায় থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়ে উঠতে পারে!

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে প্রযুক্তিবিদ স্বপন ভাই (জাকারিয়া স্বপন) বলছিলেন, কেবল আর্থিক জালিয়াতির কথা।  কিন্তু এখানে অপরাধ---অপরাধী পরিবর্তন করে দেয়াও সম্ভব।

এ সম্ভবটা এখন দেশের চৌহদ্দিতে আছে, সীমিত আকারে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এটাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।  প্যারিসে হামলা, কিম্বা আম্রিকায় হামলার ঘটনায়  পাপিস্তানিদের দেখা মেলে। সময় হয়ত এমন হবে যে রাজনৈতিক  সঙ্কট আমাদের জীবনে এর চে বেশি বিপন্ন করার মত মিথ্যা ঘটনার অবতারণা হতে পারে।

বলা হতে পারে--- আইএস প্রধানের আঙুলের ছাপ বাঙালি কোনে লোকের । যাকে ধরার জন্য এখানে আম্রিকান সৈন্যের উপস্থিতি জরুরী।  আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিকাশ, অপশাসন এবং বিস্তৃতির সাথে প্রযুক্তির অন্য রকম একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

কিন্তু এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই, প্রযুক্তির জাল থেকে আমরা দূরে থাকতে পারবো--- আমাদের কোনো না কোনোভাবেই   একটা ডিজিটাল দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে ফেলা হচ্ছে। আমরা জেনে বা নে জেনে এতে আবদ্ধ হচ্ছি।

ফেসবুকে আপনি কতটা সাহসী কিম্বা আপনি কতটা সেক্সি টাইপের যে সব অ্যাপ আমরা ইউজ করি, তারা যে আমার ফেসবুকের তথ্য সংযোগ করে এনালাইসিস করে; সেখানও আমার ব্যক্তিগত তথ্য  তারা নিয়ে নিতে পারে, নিয়ে নেয়ও বটে। নইলে একের পর এক মিয়াঁও বিয়াঁও টাইপের এপের রিকোয়েস্ট আমাদের কাছে আসতো না।

 মাইন্ড রিড করে ফেসবুক, গুগল কিন্তু আপনার চোখের সামনে বিজ্ঞাপন বেচতেছে।

 আমরা অত্যন্ত হালকাভাবেই বিষয়টাকে নিচ্ছি।

 জাতীয় নিরাপত্তা, সমাজের স্থিতি নিশ্চিত, অপরাধী সনাক্ত করার জন্য সরকারের যে কোনো উদ্যোগকে আমি ব্যক্তিগভাবে অভিনন্দন জানাই।

 কিন্তু মোবাইলফোনের সংযোগ গ্রহিগতা সনাক্ত করার জন্য আঙুলের ছাপ নেয়া খুব জরুরী বলে মনে করি না। কারণ যে বা যারা এ অপরাধ করবে-- তাদের কাছে  সিমলেক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই অপরাধ করা সম।ব। এবং সেটি হচ্ছে।

 খেয়াল করলে দেখবেন-- ভাইবার কিন্তু বলেই দিচ্ছে আপনি তার কল ট্র্যাক করতে পারবেন না। আসলে আপনি পারবেন না।  তাহলে যেখানে প্রথাগত ভয়েস কলের বাজার যখন পড়ে যাচ্ছে, ডিজিটাল ট্রান্সফরশেনের দিকে যাচ্ছে মোবাইলফোনের সংযোগ; সেখানে  এ ধরণের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ না করে, সংযোগ গ্রহিতা তার পরিচয়পত্র দিয়ে নিজেকে নিশ্চিত করে নিতে পারতেন। আঙুলের ছাপের মত একটি স্পর্শকাতর সম্পদ তৃতীয়পক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনার দরকার পড়তো না।

সরকার আসলে  অনেক কিছু না ভে্বেই কাজটা করেছেন। এর জন্য কোনো রকমের গ্রাউন্ডওয়ার্ক করা হয়নি বলেই মনে হচ্ছে, হলে এর রিস্ক ফ্যাক্টর গুলো নিয়ে সরকার ভাবতো।
একই সাথে রাষ্ট্রের উচিৎ আমার মত গোনার বাইরের নাগরিকদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমার শরীর, আমার অন্য কারো সম্পদ হতে পারে না।

 রাষ্ট্র চাইলেই  এ ধরণের কর্মে আমাদের বাধ্যও করতে পারে না! যদিও বাধ্য করলে আমাদের অধিকার প্রটেক্ট করার মত ক্ষমতা নেই। তবুও নীতির কথাটা সুযোগে বলে নিলাম।

সরকার আঙুলে ছাপ নিচ্ছে মোবাইলফোন অপারেটরের মাধ্যমে, সে ছাপ সরকার বলছে, অপারেটররা সংরক্ষন করতে পারছে না। কিন্তু বিষয়টা সত্য নয়।  অপারেটররা এটা স্টোর করছে। বাংলালিংক কিন্তু বিবিসিকে এটা নিশ্চিত করেই বলেছে।

এটা খুব সহজে অনুমিত যে, এখন অফিসগুলো, বিশেষত কর্পোরেট অফিসে  প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য আঙুলে ছাপ নেয়া হয়। সে ছাপ একটা সার্ভারে স্টোর হয়, যেখান থেকে একজন কর্মীর অফিসে আসা না আসা বা কর্মঘণ্টা নির্ণয় করা হয়। এটা থেকেই প্রমাণিত যে, ছাপ স্টোর করা যায়!

আঙুলের  ছাপ স্টোর করা যায় না বলে বিটিআরসি যে দাবি বিবিসির কাছে করছে--- এর স্বপক্ষে জোরালো কোনো প্রমাণাদি নেই!

আমাদের দেশের সবগুলো মোবাইলফোন অপারেটর বিদেশি নিয়ন্ত্রিত। আরো পরিষ্কার করে বললেন--- ইনডিয়া প্রভাবিত। এমনিতেই  আমাদের জঙ্গি-ফঙ্গি বানানোর কা্জ অব্যাহত রেখেছে। কেউ ফটকা ফোটালেও তারা আমাদের দেশের জঙ্গীর দুঃস্বপ্ন দেখে। সেখানে এ রকম একটি স্পর্শকাতর বিষয় থার্ড পার্টি, মহল্লার দোকান  আর গলিগুপচির সামনে টেবিল পেতে বসে মিশিন বসিয়ে ছাপ সংগ্রহ শুধু ঝুঁকিপূর্ণই নয়, এটি  ব্যক্তি নিরাপত্তার বাইরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকেও হুমকিতে ফেলতে পারে।

অনেকে এ জন্য পাকিস্তানের উদাহরণ  দিচ্ছেন। আমরা আর পাকিস্তান এক না। মনে মেজাজে, সংস্কৃতিতে। আমরা জাতি হিসাবে পাকিস্তান থেকে বহু বহু গুণে উন্নত।

 সুতরাং সময় থাকতে আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া খুবই জরুরী।   

লাইফ সাপোর্টে নৃ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া


একুশে পদক প্রাপ্ত নৃ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক-- শ্রদ্ধাভাজন আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া অসুস্থ। লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকেই তিনি  আইসিইউতে ছিলেন। গতকাল সোমবার তাকে লাইফসার্পেটে নেয়া হয়েছে।  রাজধানীর শমরিতা হাসপাতাল থেকে তার একটি ছবিও অনলাইনে দেখলাম।  গত বছর একুশে পদক পেয়েছিলেন তিনি।

অসাধারণ একজন মানুষ। তার গবেষণা মূলক গ্রন্থ ---'বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচিতি' প্রকাশিত হওয়ার পর কালেরকণ্ঠের পারভেজ ভাই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। বাংলা একাডেমির কোনার দিকে অমর একুশে গ্রন্থমেলার একটা স্টলের সামনে কথা হচ্ছিল, বেশ আন্তরিকতা নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন। পারভেজ ভাই বললেন-- ' স্যার ও মেলার রিপোর্টে বিশেষ বইগুলো হাইলাইট করে রিভিউ'র মত করে লেখে। আপনি ওকে  বলতে পারেন।'

যাকারিয়া স্যার আমাকে তার গ্রন্থের একটা কপি দিলেন। অফিসে ফিরতে ফিরতে কয়েকপাতা ওল্টালাম। হলে এসে পুরো বইটা শেষ করে পরদিন লিখেছিলাম। আমার খুবই ভালো লেগেছিল। তার সাথে দেখা ভরলেন-- ভালো লেগেছে। এরপর  আরো কয়েকবার কথা হয়েছিল--- বিভিন্ন ইসুতে। স্যারের  বয়স হয়েছে, মেনে নিয়েই বলছি - ভালো মানুষরা আরো কিছু দিন আমাদের মধ্যে থাকলে আমরা আলোকিত হতে পারি।

 স্যার ফিরে আসুন। আপনার ফিরে আসার অপেক্ষায়।

বাংলাদেশের 'আদিবাসী' বিতর্ক নিয়ে যাকারিয়া স্যারের অনুসিদ্ধান্ত- 

আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া 'বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচিতি' গ্রন্থের সপ্তম অধ্যায়ে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের উত্তর ও পূর্ব প্রত্যন্ত অঞ্চলের জেলাগুলোতে বিশেষ করে বৃহত্তর দিনাজপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ, শ্রীহট্ট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রভৃতি জেলায় অসংখ্য উপজাতির বসতি দেখা যায়। নৃতত্ত্বের বিচারে এরা সাধারণ বাঙালি হিন্দু ও মুসলিম অধিবাসীথেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন সত্তার অধিকারী এবং তাদের দৈনন্দিন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনও ভিন্ন ধরনের। এসব কারণে তাদেরকে উপজাতি বলা হয়ে থাকে।’
এতে তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেদেরকে আদিবাসী বলে অভিহিত করতে চান এবং আদিবাসী বলতে কী বোঝায়, তা ভালো করে না জেনে অন্যরা তাদেরকে সমর্থনও করে থাকেন।
যাকারিয়া স্যার বলছেন, ‘অপেক্ষাকৃত হাল আমলে (চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের এসব লোক তো পনেরো-ষোল শতকের আগে এ দেশে আসেননি) এ দেশে আগত এসব মোঙ্গলীয় রক্তধারার মানুষেরা তো আন্তর্জাতিক সংজ্ঞানুসারে কোনো মতেই আদিবাসী হতে পারেন না। আদিবাসী মানুষের যে আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা আছে তা অনুসরণ করলে তো কোনো মতেই এদেরকে আদিবাসী বলা যায় না।’

মান্না ছাড়া বাংলা সিনেমার দর্শকের ৮ বছর!





নয়াক মান্না নেই, আজ আট বছর। মনে হলো, এই তো সে দিন। দেখতে দেখতে সময় চলে যাচ্ছে। তার মারা যাওয়ার দিন শহরে যানজট লেগে গেছিল। যারা বলেন, বাংলা সিনামার দর্শক নেই। জনপ্রিয় নায়ক নেই; মান্না তার ব্যতিক্রম। মান্নাকে শ্রদ্ধা জানানোর দিন শহরজুড়ে হাজার হাজার মানুষের শোক মিছিল দেখেছিল ---এই নগরের মানুষ। 

২০০০ সালের দিকে মান্না ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয়। সে সময় প্রিয়মুখ নামের পাক্ষিকে কাজ করি। তার একটা সাক্ষাৎকারের জন্য কাকরাইলের অফিসে গেছিলাম। এখনো মনে পড়ে সেই দুপুর---দু রুমের অফিসের সামনের রুমে বসে আছি। মান্না ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই একজন চোখ বড় বড় করে তাকালেন, আমার দিকে। বললেন, কি বিষয়! 

তার ধারণা আমি নায়ক হওয়ার ধান্ধায় এসেছি। তাই ভুল ভাঙ্গিয়ে দিতে জানালাম, সাংবাদিক। উনি বললেন, বসেন। ভাইজান ব্যস্ত আছেন। কিছুক্ষণ পর আবার তাড়া দিলাম। উনি উঠে গিয়ে বললেন। মান্না ভাইয়ের ডাক পড়লো। ভেতরে যেতেই বললেন, তোমারে বসায়া রাখছে। আমি খুবই সরি। শুরুতেই আপন করে নেয়ার একটা ক্ষমতা তার আছে। আমি মুগ্ধ হলাম। 

বিশাল দেহি মান্না ভাই। বসে আছেন বিশাল একটা চেয়ারে। সামনে বসে থাকা দুজন কে বিদায় করে দিযে বলল, 'ছোডু ভাই তুমি কই পড়।' জানালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। কথায় কথায় অনেক কথা হলো। জানালেন কি সংগ্রাম করে তাকে জনপ্রিয় মান্না হতে হয়েছেন। বললেন, পরিচালকরা আমাকে নিতে চাইত না। এখন নেয়ার জন্য পেছনে পেছনে ঘোরে। জীবনে সবখানেই তুমি প্রতিষ্ঠা পেতে বেগ পাইবা। কিন্তু প্রতিষ্ঠা পাইলে তর তর করে খালি উপরে উঠবা। কিন্তু আমাদের মত নায়কদের একটা সমস্যা আছে। সেটা হলো দর্শক না চাইলে আমি কিন্তু জিরো। 

ঢাকা কলেজে পড়তেন মান্না। সে সময়কার স্মৃতি চারণ করলেন। সিনেমা শিল্পটা যে নিম্ন মানের দিকে ধাবিত হচ্ছে, সেটি তিনি সেই ২০০০ সালেই বলেছিলেন। বললেন, এখানে সবাই টাকা কামাই করতে আসে। কেউ ভালো সিনেমা বানাইতে চায় না, ছোডু ভাই। আবার আর্ট ফিল্ম বানায় যারা ওরা সিনেমা বানায় পুরস্কারের সিনেমা। আমপাবলিকের সিনেমা কেউ বানাইতে চায় না। নিজের সিনেমা নিয়েও বললেন। বললেন, ভালো সিনেমা বানাইতে চাই, পাবলিকের সাপোর্টও আছে। কিন্তু মাঝে মধ্যে মিডিয়া সে ভাবে সাপোর্ট দেয় না। 

নিজের এলাকার বন্ধুদের নিয়ে গল্প শোনালেন। অনেকের নামও বলেছিলেন, এখন তাদের নাম মনে পড়ছে না। বললেন, গ্রামে গেলে বন্ধুরা তাকে আপনি করে বলে। এতেই তার আপত্তি। তাই ওদের ওপর রাগ করেন। তবুও গ্রামে যান। এলাকাতে একটা হসপিটাল করার ইচ্ছের কথা জানিযেছিলেন। শেষ পর্যন্ত এটি করা হয়নি। তবে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন প্রচুর। এটাই বা কয়জনের ভাগ্যে জোটে। হঠাৎ করেই মান্না ভাই মারা গেছেন আট বছর আগে, ২০০৮ সালের এই দিনে! 

তার সাথে গল্প করে বের হওয়ার সময় বললেন, সময় পাইলে চইলা আইসো। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ে কেউ তো সিনেমা সাংবাদিক হয় না। তুমি কেন হইলা সেই গল্প শুনমু নে। সময় নিয়া ফোন দিয়া আইসো। আমি বের হলাম তার রুম থেকে। চা ও মিষ্টি খাইয়ে ছেড়ে দেয়ার আগে বার বার তার সাথে দুপুরে খেতে বলছিলেন। বিনয়ী মান্নাকে সিনেমার পর্দার মান্নার সাথে মেলানো ঢের কঠিন। বিদায়। মান্না ভাই, যেখানেই আছেন, ভালো থাকুন।

পাহাড়ে সেনা তর্ক !!



সাজেক ভ্যালি--- পর্যটন সুবিধা নিশ্চিত করেছে সেনা সদস্যরা। 


পাহাড় কিম্বা সমতলের মানুষ --- আমরা সবাই বাংলাদেশী। এটাই আমাদের আত্ম পরিচয়।  ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিগতভাবে আমাদের মধ্যে ভিন্নতা আছে, বৈচিত্র আছে ; এটাই আমাদের দেশের সৌন্দর্য।  এ বিশ্বাস কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সবারই আছে যে, আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিজয় অর্জন করেছি--- সমতার সমাজ-রাষ্ট্র নির্মাণ করতে।  সে লক্ষ্যেই সব শ্রেণীপেশার মানুষ যুথবদ্ধ ।

তবুও সময় অসময়ে জাতিগত বিষয়কে সামনে রেখে সন্দেহ! এটা নিয়ে বিস্তর আলাপের জায়গা থাকতে পারে। কিন্তু দেশের এক দশমাংশ আয়াতনের পাহাড়ি জনপদে সেনা উপস্থিতি নিয়ে পাহাড়ি নেতাদের মধ্যে উষ্মা আছে। কথিত পাহাডি প্রেমিকরাও উদ্বিগ্ন । এ উষ্মা বা উদ্বেগের কারণ কেউ খোলাসা করেন না। সেখানে অপােরেশন উত্তরণ চলছে বলে যে প্রসঙ্গ সন্তু লারমারা উদ্ধৃত করে থাকেন, সেটি কী কার্যকর? আমার দেখা মতে কার্যকর নয়। তবুও পাহাড়ে সেনা উপস্থিতি নিয়ে বাঁকা প্রশ্ন দুঃখজনক।

বলে রাখি,  ব্যক্তিভাবে আমি সব ধরণের নিপীড়নের বিপক্ষে। সেটি যে কোনো বাহিনীরই। কিন্তু দেশের সামরিক নীতি,  নিরাপত্তা আয়োজনকে প্রশ্ন করতে পারি না। কিছু বিষয় তো এমন যেটা সরলীকরণ করা যায় না। 

স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব  প্রতিরক্ষা বাহিনীর।  সে জন্য কোথায় ঘাঁটি গাঁড়তে হবে, সেটি নির্ধারণ করার দায়িত্বটা  রাজনৈতিকের চেয়ে সামরক নীতির অংশ বলেই মানি। সে হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থাকবে কিনা--- সে সিদ্ধান্তটা আসলে সামরিক কৌশল ঠিক করা লোকদের উপরই ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। 

কিন্তু যারা প্রতিনিয়মত পাহাড়ে সেনা নিয়ে উসখুশ করেন, তারা আসলে কী বোঝাতে চান--- সেটি পরিষ্কার নয়। 

দুর্গম পাহাড়ি জনপদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে  সরকার যে কোনো ধরণের বাহিনীর  সহায়তা নিতে পারে এবং সেটিই যৌক্তিক। কিন্তু  পাহাড়ে সেনা উপস্থতি  কেন থাকবে না!  এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা কি?

সেনা সদস্যরা পাহাড়ে কী করেন--- তাদের না থাকার কারণ কি হতে পারে? এ সব প্রশ্ন  সেখানকার সাধারণ পাহাড়িদের নেই বললেই চলে।  তবে এটা নিয়ে বেশি সোচ্চার বেদিশেী ফান্ড প্রাপ্তরা। বিশেষত বেসরকারি সংস্থা ও নামকাওয়াস্তে গবেষক--- যাদের বেশির ভাগই একটা ইস্যু ধরে রেখে আলোচনায় থাকতে চান।

এক কল্পনা চাকমা অপহরণ অভিযোগ বাদে  উল্লেখ করার মত গুরুতর অভিযোগও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নেই!  বরং সম্প্রীতি রক্ষা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন আর  অপরাধ দমনে তারা সেখানে  বহু বছর ধরেই কাজ করছেন;  এটা সবারই জানান।  অপহরিত বহুমানুষকে উদ্ধারে সেনাবাহিনী সফল হয়েছে।

পাহাড়ি নেতাদের কারো কারো অভিযোগ--- সেনা বাহিনী পাহাড়ে বাঙালিদের  সহায়তা করে! এ অভিযোগ যারা করেন, তাদের নিয়ে বাঙালিদের মনবেতর জীবন যাপন পরিদর্শন করলে-- এ অভিযোগ টিকবেনা ; আমি নিশ্চত করেই এটা বলছি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।

পাহাড়ি জনপদ আর সমতলের মধ্যে তফাৎটা কারো অজানা নয়। মায়নমারের সাথে আমাদের কয়েক দফা সীমান্ত সঙ্ঘাত হয়ে গেছে। দিন দিন সে ঝুঁকি বাড়ছে। সেভেন সিস্টারের সাথে আমারে সীমান্ত আছে। খাগড়াছড়িতে অর্ধশতাধিক কিলোমিটার সীমান্ত অরক্ষিত।এ রকম প্রেক্ষাপটে পাহাড়ে সেনা উপস্থিতি না থাকা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য প্রচণ্ড হুমকি।
তারপরেও চুক্তি মেনে ১৯৯৭ সালের পর থেকে নিয়মতই অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এটি রাষ্ট্র বেশ ঝুঁকি নিয়েই করছে; এতেও পাহাড়ি মানুষ নিয়ে ব্যবসা করা লোকরা অসন্তুষ্ট! এ অসন্তুষ্টি হয়তো তাদের ব্যক্তিগত সুবিধা হচ্ছে; সেটি দেশর নিরাপত্তাকে হুমকি রেখে---
পাহাড়ি ও বাঙালি দু'টো জাতি সত্ত্বা আলাদা হলেও জাতীয়তা অভিন্ন। রাজনৈতিকভাবেই দু'টো জাতি সত্ত্বার সঙ্কট নিয়ে আলোচনা  অব্যাহত রেখে, আস্থার সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে সমস্যার  সমাধান করতে হবে।  বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, সেনা বিরোধীতা আর বাঙালি-পাহাড়ি বিরোধ জিইয়ে রেখে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়!

খবরের কাগজে ১১ ফেব্রুয়ারি  জানলাম---পার্বত্য চুক্তির অংশ হিসাবে  ইতোমধ্যে ২৩২টি অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প থেকে  ১১৯টি ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ১০ ফেব্রুয়ারি সংসদকে জানিয়েছেন, শান্তি চুক্তির আলোকে মোতায়েনরত সেনাবাহিনীর সব অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ছয়টি গ্যারিসন--- দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, রুমা ও আলীকদমে প্রত্যাবর্তনের বিধান রয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, গ্যারিসনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নও চলমান।  রুমা গ্যারিসনের ৯৯৭ একর ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। গ্যারিসনসমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্পন্ন করে সময়োচিতভাবে অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের মাধ্যমে মোতায়েনরত সেনাবাহিনীকে নির্দিষ্ট গ্যারিসনসমূহে প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে।

লাইফ সাপোর্টে কবি রফিক আজাদ





''ভুল করে অন্ধ গলি-ঘুঁজি পার হয়ে, যদি এই
আঁধার প্রকোষ্ঠে আসো
দেখবে উবুড় হয়ে বাংলার এই মানচিত্রে
মুখ থুবড়ে প'ড়ে আছে চলি্লশ বছর. . .
আমার তৃষ্ণার্ত ঠোঁট ঠেকে আছে
পদ্মার ওপর
এবং আমার দু'চোখের অবিরল ধারা বয়ে গিয়ে
কানায়-কানায় ভ'রে দিচ্ছে সব ক'টি শুষ্ক নদী,
এবং দেখতে পাবে
শ্যামল শস্যের মাঠ
আমার বুকের নিচে আগলে রেখেছি. . .''

আমাকে খুঁজো না বৃথা ।।  রফিক আজাদ।



অগুনতি মানুষ প্রেম-ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছে যেই নগরে, সেই নগরের বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে এখন লাইফ সাপোর্টে আত্মসম্মান জাগানিয়া কবি রফিক আজাদ। ।

মানুষের কষ্ট-বঞ্চনা নিয়ে মাথা উঁচু করে কথা বলা দ্রোহের কবি-  রফিক আজাদের ফিরে আসার অপেক্ষায় আমরা!  ফিরে আসুন প্রিয় কবি।

১৪ জানুয়ারী  রাত সাড়ে ১০টার দিকে রফিক আজাদের ‘ব্রেইন স্ট্রোক’ হয়। পরে তাকে প্রথমে বারডেম হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে রাত আড়াইটার দিকে নেওয়া হয় আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানকার আইসিইউতে রাখা হয় তাকে।

১৫ জানুয়ারী বিকাল ৩টার দিকে রফিক আজাদকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল।হয় তাকে।

১৯৪১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার গুণী গ্রামের এক অভিজাত পরিবারে জন্ম রফিক আজাদের। তিনি ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর করে কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষকতায়।

রফিক আজাদ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ‘উত্তরাধিকার’র নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন ১৯৭২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত। এরপর কাজ করেছেন বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন, উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে।


''....অবশেষে যথাক্রমে খাবো : গাছপালা, নদী-নালা
গ্রাম-গঞ্জ, ফুটপাত, নর্দমার জলের প্রপাত
চলাচলকারী পথচারী, নিতম্ব প্রধান নারী
উড্ডীন পতাকাসহ খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর গাড়ী
আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেলনা নয় আজ
ভাত দে হারামজাদা,
তা না হলে মানচিত্র খাবো।''

ভাত দে হারামজাদা।। রফিক আজাদ।

গান শোনেন। আর লম্বা করে শ্বাস নেন। ভালো লাগবে।

: একুশের বইমেলা শুরু অইয়া গেলো--- লেখাগুলো (রায়গুলো) কেউ চাপলো না। পাণ্ডুলিপি পইড়া আছে। গোডাউনে রাইখবার জন্য আবেদন মনজুর করবেন, পিলিচ।
: না আগেই কইছি,অবৈধ মাল গোডাউনে রাখা যায় না।
: আরে দাদা, ভাত ভোজের পরও আপনের রাগ রইয়া গেছে, এইটা কি কতা।
: হুমম। ভাত ভোজ-ভাজ দিয়ে সব হয় না!

: রাখেন রাখেন;এই চিড়ি লন। চিড়ি দিলাম আফনেরে।
: হ, চিড়ি পাইছি। কথা কওনও বিপদ। কম কতা কইতে কইছে। কিন্তু মন যে মানে না!
: মানে না তো কি অইছে! গান শোনেন। আর লম্বা করে শ্বাস নেন। ভালো লাগবে।
: উপদেশ দিচ্ছেন!
: না উপদেশ না; বাসায় ঝামেলা, ঘরদোর পরিষ্কার করার দরকার। তাই মালপত্র আপনার গোডাউনে পাঠাইতে চাই! এই আর কি!


দয়ামুক্তি: এ সংলাপ একান্ত কাল্পনিক। কারো সাথে মিলে গেলে---কাকতাল মাত্র! 

একটি ভাত ভোজের কল্পিত সংলাপ

: চা লন ; ভাতের বন্দোবস্ত আছে ।
: না, মানে আমি রাতে ভাত খাই না ।

: তা না খান ; বাইরে গিয়া কইবেন ভাত খাইতে আইছিলাম।
: আইচ্ছা ।

: সংবিধান লইয়া আপনি একটা আওয়াজ দিছেন । কামডা কী ঠিক অইলো !
: যা শইত্য কইছি; ভুল কিছু তো কই নাই ।

: না , সব ঠিক আছে। কিন্তু সংবিধান তো কালো বিড়ালের কাছে ইজারা আছে । ইজারা থাকা কিছু লইয়া ইজারাদারর অনুমতি ছাড়া কথা কওন কী ঠিক !
: হুমমম । সবই তো ইজারা । তাই বইলা আমারে 'কম কথা' কইবার নির্দেশ দিলো ! এইডা কি ঠিক অইলো ।
: না , মানে । কথা বলা তো আপনার কাজ না । বাণী দেওয়াও আপনার কাজ না ।

: আমার তাইলে কাজ কি ?
: কাজ হৈলো কালো বিড়ালজাতীয় লোকজন যা বলবে; শুনবেন ।।

: ও আচ্ছা । ঠিক আছে ।
কিন্তু একটা কথা ; আমাদের বিভাগটা তো স্বাধীন ।
: আহা স্বাধীন বলে কিছু নাই । সবই অধীন । ভাত নেন।

: না, রুটি খাবো ।

: আয়োজন আছে । ওই বাবুজীকে রুটি দে ।

।।দায়মুক্তি ।।~~~এটি কল্পিত সংলাপ । কারো সাথে মিললে কাকতাল মাত্র~~~ ।।

আন্ডার কন্সট্রাকশন :: নারীর চোখে নারীর কামনা!

রুবাইয়াত এর আগেও একটি সিনামা বানিয়েছেন--- 'মেহেরজান'। তর্কের কারণে সেটি বাতিল করেছিল-সরকার। কারণ ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত সিনামায়  বাঙালির নারী পাকিস্তানি প্রেমিক। তবে ওই সিনামায় সমকামিতার গল্পটা নতুন করে দর্শকের চোখের সামনে বুলিয়ে নিয়েছিল রুবাইয়াত।

আন্ডার কন্সট্রাকশন সিনামাটিকে এক্সপেরিমন্টোল ধাঁছের সিনামা মনে হয়েছে।  এখানে নারীর ভিন্ন রুপ এবং কামনা -বাসনা উঠে এসেছে নারীর চোখে। এটাই একমাত্র সাফল্য বলা যেতে পারে। তবে কিছু বিষয় এখানে একটু ভিন্ন!

বুড়ো মহিলার রেডি হওয়া মানে ব্রা'য়ের ফিতা ঠিক করা নয়! সিনামাটিতে রয়ার মা'কে আমরা দেখি জামাই আসছে- তাই রেডি হতে গিয়ে  ব্রা'র ফিতা ঠিক করছেন!  কেউ হয়্ত বলবেন, তাহলে কি যৌবনবতীর ব্রা'র ফিতা ঠিক করাটা দরকার ছিল? তাও মনে করি না। প্রাসঙ্গিতক নাহলে যে কারো ব্রা'র ফিতা ঠিক করার দৃশ্যায়ন অশোভনীয় ।

সিনামাটিতে পেন্টির অবস্থান তুলে ধরতেও দেখি! এটিও রুবাইয়াত যে ধরণের সিনামা নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হতে চান--- তার সাথে যায় না! ---যদিও সিনামায় যৌনতা একটি কম অনুষঙ্গ। সেটি বিবেচনা করলে ইমতিয়াজের সাথে একাকীত্ব শেয়ার করার চিত্রায়ন দুর্দান্ত হয়েছে!

যেখানে ইমতিয়াজ আর রয়ার আলাপের ফাঁকে হাত মুঠােয় পুরে নেয়ার দৃশ্যায়ন--- অনন্য।  এমনকি ঠোঁটের ওপর হাত বুলিয়ে যাওয়াটাও! রয়ার কামাবেগ; এগিয়ে আসা--- ইমতয়িাজের চাহনি --- চিত্রায়ন অপূর্ব!  

সিনামাটির স্পিরিট যদি হয় কিছু এলেবেলে ভাবনা --- তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু  চলচ্চিত্রের  একটা  বার্তা থাকার কথা--- সে বার্তা বিভ্রান্তির! এখানে কি বলতে চাওয়া হয়েছে সেটিও  ক্লিয়ার না!

নায়িকারা বেশ্যা?
বাচ্চা ফয়দা আর পালন করা নারীর একমাত্র কাজ না?
স্বাবলম্বী নারীর গল্প বলতে চেয়েছেন পরিচালক!
নাকি একটা জীবনে উপরে ওঠার জন্য একটা ব্রেকই সফলতার চূড়ান্ত --- সেটি বোঝাতে চেয়েছেন!

খোলাসে হয়নি! অনেকে বলতে পারেন-- মহাপণ্ডিত দেখি--- সিনামাটি পুরস্কার জিতে এসেছে। আপনি এসেছেন, এটা নিয়ে আলাপ করতে! হতে পারে। তবে পণ্ডিতি নয়; দর্শক হিসাবে এটা আমার নিজস্ব বিশ্লেষণ মাত্র!

নায়িকাদের মানুষ কি মনে করে? --- বেশ্যা-- বার্তাটা সিনামায় মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা থাকলেও সিনামাটি রয়া'র একাকীত্ব আর  ইমতিয়াজ চরিত্র রূপায়নকারী একাকার হওয়া রাতটা এ বার্তাকে  উড়িয়ে দিতে পারে না। সে রাতে সাজগোজটাও! রক্ত করবীর নন্দিনী সেখানে লাল টকটকে শাড়িতে একাকীত্বের বয়ানে হাজির হয়--- ভিন্ন  আবহে।

রবীন্দ্রনাথের রক্ত করবী নাটকটির ফরমেট ভাঙাগড়া নিয়ে সিনামার কাহিনী--- যেখানে রক্তমাংসের সমকালীন এক নন্দিনীকে আবিষ্কার করতে চাইছেন পরিচালক---- সে নন্দিনী নতুন ফরমেটে দাঁড়াবে-- যে নাটকটি  ইউরোপে বছর খানেক প্রদর্শণীতে অংশ নিবে।  রক্ত করবীর নন্দিনী চরিত্র কে করবে? রয়া নাকি মেহজাবিন! এ নিয়ে মনসত্ত্বাতিক দ্বন্ধটাও তুলে আনা হয়েছে!

১২ বছর ধরে নন্দিনী চরিত্র করা তরুণী রয়া ৩৩ বছর বয়সে এসে--- এ সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না। তার এ ব্রেকটা অনেক বড় পাওয়া! তবে এখানে রয়াকে একটা গালিও দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে রয়া সেলফিস! তার বরই বলছে এ কথা!  সেলফিস বটে!

কারণ আমরা রয়া চরিত্রকে সিনামায় দেখি নাটকের ব্রেকের জন্য  ইমতিয়াজের জন্য অপেক্ষা, সঙ্গ দেওয়া এবং  সন্তান নেবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার মত ঘটনাগুলো। এ টুকুও হয়ত ঠিক আছে---

সিনামাটি বলছে--- নারীর কাজ কেবল বাচ্চা ফয়দা করা আর লালন করা নয়। দ্বি-মত মোটেও করছি না। নারী বহু কাজ করতে পারে। করছেন। এতে আমাদের উৎসাহও দিই।

নারীর প্রতি নারীর আচরণ এখানে একটা ভিন্নতা এবং দ্বি-মুখিতা চোখে লাগে। অসুস্থ মা-কে রয়া বলছে ---- 'আমি তোমার মেয়ে না! তুমি আমার কাছে চলো। ভাইয়ার কাছে যাওয়ার আগের ক'টা দিন তুমি আমার কাছে থাকবা।'  এমন আবেগম ময় কথামালায় যে মেয়ে তার মাকে ভাসিয়ে নিতে চায় --- সে একই মেয়েকে আমরা দেখি মায়ের চিকিৎসার  সময় পাশে থাকার জন্য বিদেশ পাড়ি জমাতে অনাগ্রহ! কারণ রক্ত করবী ইউরোপের মঞ্চে যাবে--- এর পরিচালনার ভার তার হাতে।

পরিচালনাই সবচেয়ে  বড় প্রয়োরিটি। একমাত্র কর্তব্য ইমতিয়াজের প্রজেক্ট সাকসেস করা!  এটাই  কী  সিনামার  মূল  কথা ; হতে পারে-- জীবনের অনন্য সুযোগ ! সে সুযোগ হাত ছাড়া হলে একটা জীবন বৃথা!  নাকি কামাবেগ!

এমন স্বার্থপরতার ভেতরও  বিপরীত চিত্র একই নারী মধ্যে ---কাজের মেয়ে ময়নাকে দেখে বস্তি থেকে ফেরৎ আসার সময় তার চোখে! সে পানি কী তাকে ছেড়ে আসার কষ্ট! না , নিজের  ভেতরের চাপা অতৃপ্তি !

মজার  বেপার হলো  রয়াকে এমন একটা জায়গা থেকে থিয়েটারকর্মী হিসাবে দেখি; যেটি  সমাজে বিরল --- সাধারণত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপাটে স্থপতির বউ --- থিয়েটার করেন কি-না সেটাও একটা প্রশ্ন!

সিনামায়  রয়া'র মাকে দেখা যায় কোনো এক নায়িকাকে নিয়ে ভেগে গেলেও তার স্বামীপ্রেম কমেনি। তার ভাবনা- ফিরে আসবে স্বামী!

মায়ের কাছে মেয়ের যুক্তি  বাবা নায়িকা নিয়ে ভেগে গেছে মানে--- মনে করার কারণ নেই --- নায়িকারা বেশ্যা!

রয়া-কে আমরা তাই ভেগে না গিয়ে বরের ফ্লাটেই পর পুরুষ সঙ্গ উপভোগে দেখি ; হয়ত ! যাকে উপরে ওঠার সিঁড়ি হিসাবে দেখছে রয়া!

অন্যদিকে ময়না। রয়া'র গৃহকর্মী।  লিফটম্যানের সাথে বিয়ে পূর্ব যৌনানন্দে সন্তান সম্ভবা ! পরে বিয়ে করে সংসারী হওয়া ময়নার সামনে কেবল সামনের দিনগুলোয়  তার সন্তানের উজ্জ্বল দিন।
তার স্বাবলম্বী হওয়ার ভাবনাটাও এখানে উল্লেখ করার মত--- রয়া যখন ময়ানাকে ফেরৎ আসতে বলল-- তার সোজা উত্তর সারা জীবন কী মাইনষের বাড়িতে কাম কইরা খামু! নিজের একটা সংসার তার চাই!

-- কিন্তু রয়া-- যে সমাজের প্রথাগত ছক ভাঙ্গতে চায়--- তাকে আমরা দেখি ভিন্ন আঙ্গিকে--- কাজের মেয়ে চলে যাওয়ার পর বর কনে মিলে মামা নুডলস চিবোচ্ছে।  বর বলছে--- ময়না চলে গেছে আরেকটা কাজের মেয়ে দেখ! এটাকে অবশ্য পুরুষতন্ত্রের আদেশি বয়ান  বলা যেতে পারে।

একই সাথে দেখা যাচ্ছে রয়া পরিবারের জন্য সময় বের করতে পারছে না। কিন্তু একটা ব্রেকের আশায় ইমতিয়াজের জন্য তার নিজেকে উজাড় করে দেয়া!  রান্না উৎসব!

ইমতিয়াজ অনাবাসি বাংলাদেশি--- তার বাংলাদেশে এসে হোটেলে থাকাটা তাকে কষ্ট দেয়। একাকী মুহুর্ত তাকে ছুঁয়ে যায়। কিন্তু বরের সাথে ঠাণ্ডা সঙ্ঘাতটা চলতে থাকে--- এমনকি  সকালে বরের তৈরি করে দেয়া  চা টাও  টয়লেটে ফ্লাশ করে দেয়া মেয়েটাকে আমরা দেখি---আলোছায়ার খেলার মাঝে  একাকীত্ব নিয়ে গল্প জুড়ে কাছাকাছি আসতে । ইমতিয়াজ --- তার ঠোঁট স্পর্শ করছে। হাতটা পুরে নিচ্ছে মুঠোয়। রয়া এগিয়ে আসে কাছে। এখানে কি বার্তা!

বরের যৌনশক্তির ওপর আস্থা রাখতে পারছে না এই নারী! নাকি একটা ব্রেকের জন্য তাকে  উজাড় করে দিতে হচ্ছে!  সে নিয়ে  শঙ্কা থাকতে পারে !

 তাহলে তার মায়ের বক্তব্য কি ঠিক? সমাজ নায়িকাদের মনে করে বেশ্যা!

আমরা রয়াকে সিনামায় দেখি বর নির্ভর।---বরের কেটে রাখা চেকে তার হাত খরচের যোগান। নন্দন তত্ত্বের চর্চাকে যদি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই ধরে নিই--- তারপরেও মনে হবে  নন্দন যদি জীবনকে অ-আনন্দিত করে--- সেটা বর্জনই শ্রেয়!

তাই রয়াকে তার মায়ের খোঁটাও শুনতে হয়--- পরের টাকায় ফুটানি মারি না। নিজে রোজগার করে চলি।  সত্যি তাই। রয়া'র মা পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্মসংস্থান করেছেন। তাদের হাতের কাজে পণ্য বিক্রি থেকে প্রাপ্ত আয়ের একটা অংশ দিয়েই চলে তার।  রয়া'র মায়ের মধ্যেই আমরা একটা পূর্ণ নারী চরিত্রকে দেখি।

রয়া-কে যে জায়গায় বসিয়ে পরিচালক সমাজকে ভেবেছেন  --- সেটি বিক্ষিপ্ত ভাবনার। কোনো একটা রেখায় তা মিলে না। মানুষের জীবন বিক্ষিপ্ত হলেও একটা লাইনে এসে দাঁড়ায় কখনো কখনো। তবে ব্যতিক্রম  থাকতে পারে। সে ব্যতিক্রম নিয়েও সিনামা হতে পারে। তবে  সেটা সার্বজনীন সিনামা কি-না ? প্রশ্ন থাকে!

রয়া'র এক্সপেরিমেন্টে রবীন্দ্রনাথের নন্দিনী গার্মেন্টকর্মী হিসাবেই ধরা দেয়--- নতুন এক্সপেরিমেন্টে! নিশ্চিতভাবে এটাকে সমর্থন  করি ।  সব বাধা বিপত্তির ভেতর থেকে যে এক রক্তোজ্জ্বল  ফুলের  আলো--- সেটি নিঃসন্দেহে প্রশংসা ও আনন্দের। সমাজের বিবর্তনেও রবীন্দ্রনাথ সার্বজনীন সেটিও আমরা এখানে আওড়াতে দেখি--- তবে এক্সপেরিমেন্টকে উড়িয়ে দিতে চাই না। এটা ম্যাচিউর লেভেলে গেলে ভালো হতো।

 মঞ্চের এ গল্পের সাথে রানা প্লাজার ধ্বসকে কানেক্ট করা হয়েছে। তবে সেটি কোনো পরিণত বার্তা দিতে পারেনি।

পশ্চিমবঙ্গের নচিকেতা কিম্বা বাংলাদেশি ব্যান্ড শির্পী মাকসুদও রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে এর আগে এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। রীবন্দ্র মৌলবাদীরা তাদের ক্ষোভ ঝেড়েছেন। তবে কিছু এক্সপেরিমেন্ট দরকার আছে-- সেটি হয়ত রক্ত করবীর মূল ম্যাসেজ হতো পারতো--- সেটি না হয়ে  রয়ার ভেতরে  চাপা কষ্ট--- বিত্ত ভাঙতে গিয়ে নিজেই পুরনো বৃত্তে বন্দী এবং  একেবারেই খাপছাড়া এক গল্পের ভেতর লুকিয়ে গেলো সিনামাটি! 

সমালোচনা করার সময় তেল দেয়ার বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিৎ!

এরশাদের কোটি সমালোচক আছে। আমি নিজেও তার কট্টর সমালোচক। তবে একটা বিষয় আমার কাছে মনে হয়--- আমরা তাকে নানা ভাবে বাছ বিচার করি।
কিন্তু তার অসহায়ত্বের জায়গাটা অনুভব করি না। একটা মানুষকে কতটা পুলসিরাতের উপ্রে রাখলে সে বার বার কথা পাল্টায়। বুড়া বয়সে লোকটা জেলে যেতে চায় না। এটাই তার মত পাল্টানোর একমাত্র কারণ বলেই আন্দাজ করি।
কারণ আমাদের স্বৈরাচারী রাজনীতি স্বৈরাচারী এরশাদকে জুজুর ভয়ে রাখছে। বিচার করে ল্যাঠা চুকাতে কেউ চায় না। না বিম্পি না আম্লীগ। সবাই লাল দালানের আতঙ্কে রেখে স্বার্থ হাসিল করে। সুতো ধরে টান দিলেই তো কেল্লা ফতেহ!
অনেক বয়োজ্যষ্ঠ সম্বাদিককে তার সমালোচনা করতে দেখি--- তাদেরকে কাউকে স্বচক্ষে দেখেছি সামনে পড়লে স্যার স্যার বলে গলে পড়েন। বলেন, স্যার আপনার সময় অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন বাংলাদেশে হয়েছে--- তার আর কোনো সরকারের সময় হয়নি। সত্য ঘটনা। কিন্তু সমালোচনা করার সময় তেল দেয়ার বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিৎ!